প্রেমের পরশ পর্ব -০৯

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়া খুব ভয় পেয়ে আছে। কারণ এই মুহুর্তে আমান তার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমান ছোয়াকে ধমক দিয়ে বলে,
‘এত পাকনামি করতে কে বলেছিল তোকে? যদি আজ আমি পুলিশকে সঠিক সময় না নিয়ে আসতাম তাহলে তো ঐ জাহিদ নামক জা’নোয়ারটা তোকে,,,’

পুলিশ জাহিদকে গ্রেফতার করে। তাকে নিয়ে যেতে থাকে। তখন জাহিদ চিৎকার করে বলে,
‘তোদের আমি এত সহজে শান্তিতে থাকতে দেবো না। আমি আজকের দিনটা এত সহজে ভুলব না। একদিন না একদিন ঠিকই জেল থেকে মুক্তি পাবো। সেদিন তোদের দেখে নেব।’

জাহিদের এমন হুমকিতে ছোয়া ভয় পেয়ে গেলেও আমানের কোন ভাবাবেগ ছিল না। বরঞ্চ আমান খুব স্বাভাবিক ভাবে ছোয়াকে বলে,
‘অনেক নাটক দেখা হয়ে গেছে। এখন আর বেশি সময় নষ্ট করিস না। বাড়িতে এখনো তোর পালিয়ে আসার কথা কেউ জানে না। তাই চল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাই।’

ছোয়া বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। অতঃপর আমানের সামনে কাচুমাচু হয়ে বলে,
‘ক্ষমা করে দিয়েন আমান ভাইয়া। আমি আসলে,,মানে জানতাম না আপনি আমাকে প্রটেক্ট করার জন্য এত কিছু করেছেন। আপনাকে বিশ্বাস না করেই আমি,,,,’

ছোয়ার পুরো কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে আমান বলে,
‘থাক আর কিছু বলতে হবে না তোকে। তুই আমার উপর যে ভরসা করিস না সেটা আমি বুঝতে পেরে গেছি। চল এখন।’

ছোয়ার খারাপ লাগে আমানের কথায়। মনে হয় সে আমানকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। এমন ভাবনা মাথায় আসতেই ছোয়া আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে।

১৭.
বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে ছোয়া। বাড়িতে এসে সে লক্ষ্য করে সবাই খুব অদ্ভুতভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এতক্ষণে বাড়িতে তার পালিয়ে যাওয়ার কথাটা জানাজানি হয়ে গেছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গেলে ছোয়া। আমান ছোয়ার হাত ধরে ছিল। ছোয়া ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরে আরো শক্ত করে হাতটা আকড়ে ধরে।

মতিয়া বেগম আচমকা ছুটে এসে ছোয়ার গালে থা’প্পর বসিয়ে দেন। ছোয়া ছলছল নয়নে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। মতিয়া বেগম ছোয়াকে গালমন্দ করে বলে,
‘এইভাবে পালাইয়া গেলি কেন? আমাদের মান-সম্মানের কোন দাম নাই তোর কাছে? আইজ তোর জন্য সমাজের মানুষ কথা শুনাইতে দশবার ভাবছে না। কেন পালাইলি তুই?’

আমান বলে,
‘চাচি এত রেগে যাচ্ছ কেন? যার সাথে ছোয়ার বিয়ে ঠিক করে ছিলে সে তো খারাপ মানুষ। তাকে পুলিশ,,’

আমান নিজের কথা সম্পূর্ণ করার আগে মতিয়া বেগম বলেন,
‘হেইডা আমিও জানি। কিন্তু আসল কথা হইলো, ছোয়া পালাইয়া গেল কেন? গেরামের নানান মানুষ নানান কথা বলতেছে এখন। আমাগো তো সমাজের মধ্যেই থাকতে হইবে। এই মাইয়ার জন্য কাউরে মুখ দেখাইতে পারুম না।’

আমান তখন মতিয়া বেগমকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘তুমি সবকিছু গুছিয়ে নাও চাচি। তোমাদের কাউকেই আর এখানে থাকতে হবে না। তোমরা আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে গিয়ে থাকবে।’

মতিয়া বেগম চমকে যান আমানের কথা শুনে। আপত্তি করে বলেন,
‘না এমনডা হয়না। এইহানে আমাগো সবকিছু আচে। এই গেরাম ছাইড়ে যাইতে পারমু না।’

আমান কিছু বলার আগেই আমানের বাবা আব্দুল হোসেন বলেন,
‘তুমি আর জেদ করো না। আমার ভাইটা মৃত্যুর আগে তোমাদের আমার কাছে আমানত হিসেবে রেখে গেছে। তোমাদের যদি কোন বিপদ হয় তাহলে আমি আমার ভাইয়ের কাছে কি জবাব দেব? আর তুমি জানো আজকে ছোয়াকে ঐ জাহিদ তুলে নিয়ে গিয়ে ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। আমান সব বলেছে আমায়। তুমি কি চাও তোমার মেয়ের কোন বিপদ হোক?’

নিজের মেয়ের বিপদের কথা শুনে মতিয়া বেগমের বুক কেপে ওঠে। তিনি মা হিসেবে যতোই কঠোর হোন না কেন, দিনশেষে নিজের সন্তানের ভালোই চান। তাই তিনি বললেন,
‘আমার মাইয়ার কোন বিপদ হউক এইডা আমি চাই না। হের লিগা যদি এই গেরাম ছাড়ি যাইতে হয় আমি তাও রাজি।’

মতিয়া বেগমের কথায় সবাই স্বস্তি পায়। আমান ছোয়াকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুই আর দাড়িয়ে না থেকে যা নিজের যা দরকারি জিনিসপত্র আছে রেডি করে নে। খুব তো পড়াশোনা করার শখ তোর তাইনা? শহরে গিয়ে পড়। এবার কিন্তু আমাদের বাড়িতেই থাকতে হবে। তবে চিন্তা করিস না, আমি আর তোকে অপমান করব না।’

ছোয়া মৃদু হেসে বলে,
‘আমার ভরসা আছে আপনার উপর।’

ততক্ষণে নাদিয়াও ছোয়ার সামনে আসে। অতঃপর ছোয়াকে কি’ল মে”রে বলে,
‘ডা’ইনি আজ জানিস তোর জন্য সবার সামনে আমি কত বড় ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। সবাই যখন দেখল আমি বউ সেজে বসে আছি তখন তো সবাই আমাকে পুলিশের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। সেই মুহুর্তে আমার তো নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল।’

ছোয়া নাদিয়াকে থামিয়ে বলে,
‘বন্ধুর জন্য এটুকু তো করাই যায়।’

নাদিয়া কটমট চোখে তাকায়।

১৮.
আমানদের সাথে তাদের বাড়িতে চলে আসল ছোয়া এবং মতিয়া বেগম। শহরে এসে ছোয়ার জীবন পুরানো ছন্দে ফিরতে লাগল। আবার সে ভার্সিটি যাওয়া আসা শুরু করল। মতিয়া বেগমও ছোয়ার পড়াশোনা নিয়ে আর আপত্তি করলো না।

এইরকমই একদিন ছোয়া ভার্সিটির জন্য বের হতে যাবে এমন সময় দেখল আকাশ অনেক মেঘলা। ছোয়ার কিছুটা ভয় হতে লাগল। সে পুনরায় বাড়িতে ফিরে একটি ছাতা নিয়ে নিলো। অতঃপর বাড়ি থেকে বের হতে যাবে এমন সময় আমানের সাথে ধা’ক্কা খেল। আমান বিরক্ত হয়ে বলল,
‘দেখে চলতে পারিস না তুই?’

ছোয়া বলে,
‘আপনিও তো দেখে চলতে পারেন আমান ভাই। আপনার চোখে তো আর চশমা নেই।’

‘কি বললি তুই?’

‘যা আপনি শুনেছেন।’

‘তুই বেশি বাড় বেড়েছিস। তোকে তো আমি,, ‘

আমান নিজের কথা শেষ করার আগেই ছোয়া বলে উঠল,
‘কি করবেন? ভার্সিটিতে যেরকম মা’রামারি করেন, আমাকেও সেভাবে মা”রবেন?’

ছোয়ার এহেন কথায় আমান রেগে গিয়ে বলে,
‘চুপ। তোকে বলেছি না এসব কথা বাসায় কাউকে বলবি না।’

ছোয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘এসব রাজনীতি ফাজনীতি কি ছেড়ে দেওয়া যায়না? ছাত্রজীবন লেখাপড়া করার জন্য,,এসবের জন্য নয়।’

আমান বেশ স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেয়,
‘জীবনে তিনটি জিনিস আমি ছাড়তে পারবো না, এক:সিগা’রেট, দুই:রাজনীতি আর তিন,,,’

বলেই থেমে যায়। ছোয়া কৌতুহলী হয়ে জানতে চায়,
‘কি?’

আমান উত্তর দেয়,
‘সেটা এমন একটা জিনিস যেটা পেলে আমি সব বাজে স্বভাব ছেড়ে দেব।’

ছোয়া কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বলে,
‘সেটা নিশ্চয়ই কোন মেয়ে হবে। কারণ প্রেমের পরশ পেলেই তো মানুষ বদলে যায়।’

আমান তখন মনে মনে বলে,
‘তাহলে নিজের প্রেমের পরশ দিয়ে বদলে দে না আমায়।’

কিন্তু প্রকাশ্যে বলে,
‘আকাশ অনেক মেঘলা। যদিও আজ আমার ভার্সিটি যাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না কিন্তু তুই যখন যাচ্ছিস তাহলে চল তোকে আমি পৌছে দিয়ে আসি।’

ছোয়া দ্বিমত করল না। আমানের বাইকে করে ভার্সিটিতে চলে গেল। ভার্সিটি পৌছাতে পৌছাতে টিপটিপ বৃষ্টি পড়া শুরু হলো। আমান ছোয়াকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
‘সাবধানে যা। ছাতাটা ধর’

ছোয়া বলে,
‘আমাকে ছাতা দিলএ তুমি তো ভিজে যাবে!’

‘চিন্তা করিস না আমার বৃষ্টিতে ভেজার অভ্যাস আছে।’

বলেই আমান বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

দূরে দাড়িয়ে আমান ও ছোয়ার উপর পূর্ণ দৃষ্টি রেখেছিল তোরাব। যে আমানের একসময়কার বন্ধু হলেও বর্তমানে রাজনীতিতে দুইজন বিপরীত পক্ষে থাকায় শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তোরাব তার একজন বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে,
‘ঐ মেয়েটা কে রে? যাকে আমান পৌছে দিয়ে গেল?’

তোরাবের সেই বন্ধু বলে,
‘ও তো ছোয়া। আমাদের ভার্সিটিতে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। আমানের চাচাতো বোন।’

তোরাব বাকা হেসে বলে,
‘ইন্টারেস্টিং,,,ভেরি ইন্টারেস্টিং।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

>>আসসালামু আলাইকুম। রোজা থেকে প্রতিদিন গল্প দেওয়া পসিবল হচ্ছে না। তাই একদিন পরপর গল্প দিবো। সবাই কষ্ট করে একটু মানিয়ে নিন। ঈদের পর আবার নিয়মিত গল্প দিবো ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here