প্রেমের পরশ পর্ব -০৮

#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ছোয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটু দূরে চলে আসে। এমন সময় শুনতে পায় তাদের বাড়িতে শোরগোল পড়ে গেছে। ছোয়া বুঝতে পারে তার পালিয়ে আসার ব্যাপারটা ইতিমধ্যেই জানা জানি হয়ে গেছে। তাই সে একটু ভয় পেয়ে যায়। ছোয়া দ্রুত পায়ে হাটতে থাকে। এখন তার লক্ষ্য এবং গন্তব্য একটাই! যত দ্রুত সম্ভব গ্রাম থেকে বেরিয়ে যাওয়া। কিন্তু কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এক্ষেত্রেও ঠিক তাই হলো। ছোয়া গ্রাম থেকে পালানোর জন্য দ্রু পায়ে হাটতে গিয়ে ধরা খেল জাহিদের কাছে। জাহিদ ছোয়ার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছিল। ছোয়া জাহিদকে দেখে ভয়ে ঢোক গেলে। তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনি এখানে কি করছেন?’

জাহিদ ছোয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
‘চুপ, একদম চুপ। আমার পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে এখন নাটক করা হচ্ছে।’

ছোয়া বিস্ময়ের সাথে জাহিদের দিকে তাকায়। জাহিদের কথা শুনে ভীষণ পরিমাণে অবাক হয়ে গেছে সে। অতঃপর জাহিদকে জিজ্ঞেস করে,
‘এসব কি বলছ তুমি? আমার তোমার পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছি মানে?’

জাহিদ রাগী গলায় বলে,
‘নাটক হচ্ছে আমার সাথে? কি ভেবেছিস তুই এসব নাটক করে বেচে যাবি? তুই নিজের চাচাতো ভাই আমানকে আমাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করতে বলিস নি? আর সে তো আমার গোপন নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবসার ব্যাপারে সব প্রমাণ সংগ্রহ করে পুলিশকে দিয়েছে। এখন পুলিশ আমাকে খুজছে।’

ছোয়া অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। তবে সে এটা বুঝে গেছে যে আমান তাকে কোন মিথ্যা আশ্বাস দেয়নি। বরং আমান ঠিকই তার ভালোর জন্য অনেক বেশি ঝুকি নিয়েছে। আর সেখানে ছোয়া আমানকে বিশ্বাস না করে তাকে ভুল বুঝেছে। ছোয়ার এবার অনেক বেশি আফসোস হতে থাকে। ছোয়া জাহিদকে বলে,
‘ছাড়ুন আমার হাত। আপনি একটা খারাপ মানুষ। ভালো হয়েছে আপনার সব সত্য সামনে এসেছে। আপনাকে তো আমি এমনিই বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না। এখন তো আরো নই।’

জাহিদ আরো শক্ত করে ছোয়ার হাত ধরে বলে,
‘তোর রাজি নারাজিকে কে গুরুত্ব দেয়? আমি ভেবেছিলাম তোকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে নিয়ে যাবো। কিন্তু তুই যেটা করলি তারপর আর আমি তোকে সুযোগ দেব না। আমার সাথে শত্রুতার ফল এবার তুই পাবি।’

কথাটা বলেই ছোয়াকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে। ছোয়া চিৎকার করার চেষ্টা করলে আরো জোরে তার মুখ চেপে ধরে। ছোয়া জাহিদের শক্তির সাথে পেরে ওঠে না। অসহায়ের মতো নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে।

১৫.
বিয়ে বাড়িতে হুলস্থুল পড়ে গেছে। একটু আগেই জানা জানি হয়েছে যে, জাহিদকে গ্রেফতার করার জন্য তার বাড়িতে পুলিশ এসেছে। যার পরেই জাহিদ পালিয়ে গেছে। ব্যাপারটা জানাজানি হতেই সবাই সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে। অনেকে তো আবার ছোয়াকে অপয়া বলছে। তাদের ভাষ্যমতে ছোয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার জন্যই এই অঘটন ঘটেছে। তবে এসব কিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে মতিয়া বেগমের আহাজারি। তিনি নিজের মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। কত করে ভেবে রেখেছিলেন আজকে মেয়ের বিয়ে দেবেন। আর কোথা থেকে কি কি হয়ে গেল।

আলিয়া, নিলিমাসহ ছোয়ার কিছু কাজিন ছোয়ার রুমে তার সাথে কথা বলতে যায়। আলিয়া বউ সেজে বসে থাকা নাদিয়ার পাশে বসে বলে,
‘জানো আপুনি তোমার হবু বরকে নাকি পুলিশে খুজছে। সে নাকি পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

নাদিয়া এসবের কিছু বুঝতে পারছিল না। তার এখন কি করা উচিৎ এই নিয়েই সংকোচে ছিল। কারণ ছোয়া তো তাকে কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকতে বলেছিল যাতে ছোয়ার বিয়েটা না হয়। কিন্তু এখন তো নাদিয়া শুনছে বিয়েটা এমনিতেই নাকি ভেঙে গেছে। তাহলে এখন আর বউ সেজে বসে থাকবে কিনা সেটা নিয়েই ভাবছিল নাদিয়া।

এমন সময় আমানের আগমন ঘটে রুমে। আমান নাদিয়ার সামনে এসে বলে,
‘আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি। তোর বিয়ে আটকে গেছে। এবার তুই খুশি তো?’

নাদিয়া কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করে ছিল।

আমান কোন উত্তর না পেয়ে এগিয়ে এসে নাদিয়ার মুখ থেকে ঘোমটা সরিয়ে দেয়। নাদিয়ার মুখটা দেখামাত্রই চমকে যায় আমান। অতঃপর বলে ওঠে,
‘কে আপনি? এখানে কি করছেন? আর ছোয়া কোথায়?’

নাদিয়া ভীষণ ভয় পেয়ে যায়, এখন সে কি করবে? নাদিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আরো বেশি রেগে যায় আমান। নাদিয়াকে ধমক দিয়ে বলে,
‘কি হলো চুপ করে আছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।’

নাদিয়া ঘাবড়ে গিয়ে সব সত্য উগলে দিতে থাকে।
‘আমি না,,নাদিয়া। ছোয়ার ফ্রেন্ড। আজকে ছোয়া আমাকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছিল। তারপর আমি এখানে আসার পর আমাকে বউ সাজে বসিয়ে রেখে পালিয়ে গেছে এখান থেকে।’

নাদিয়ার কথা শুনে আমান বুঝতে পারে ছোয়া তার উপর ভরসা রাখতে না পেরে এমন কাজ করেছে। এই মুহুর্তে খুব রাগ হয় তার। আমান দেয়ালে ঘু’ষি মে’রে বলে,
‘ড্যাম ইট ছোয়া। এটা কি করলি তুই? আমার উপর একটু বিশ্বাস রাখলে কি ক্ষতি হতো? ঐ জাহিদ তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যদি তোর কোন ক্ষতি করে দেয় তাহলে কি হবে?’

অতঃপর আমান সবাইকে কড়া নির্দেশ দিয়ে বলে,
‘ছোয়া যে পালিয়ে গেছে এই কথাটা যেন ঘরের বাইরে না যায়৷ নাহলে সমস্যা হতে পারে। তোরা এদিকটা সামলা। আমি দেখছি ছোয়াকে খুজে পাই কি না।’

১৬.
ছোয়াকে নিয়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে এসেছে জাহিদ। ছোয়াকে বাড়িতে এনে অতঃপর জোরপূর্বক ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। ছোয়া চিৎকার করে ওঠে। জাহিদ ছোয়ার এমন করুণ আর্তনাদে যেন পাশবিক আনন্দ খুজে পায়। ছোয়ার চুলের মু’ঠি শক্ত করে ধরে বলে,
‘আরো জোরে চিৎকার কর। এখানে কেউ তোকে বাচাতে আসবে না। আমার সাথে পাঙা নেওয়ার ফল এবার তুই টের পাবি।’

ছোয়া জাহিদকে অনুরোধ করে বলে,
‘প্লিজ আমার কোন ক্ষতি করবেন না। আমাকে যেতে দিন,,,’

ছোয়ার আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে জাহিদ বলে,
‘আমার যা চাই আমি ঠিকই সেটা আদায় করে নেব। কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।’


আমান দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছোয়াকে খুজে চলছিল। তার মধ্যে অজানা ভয় কাজ করছিল। খুজতে গিয়ে রাস্তায় আচমকা ছোয়ার হাতের একটা ভাঙা চুড়ি দেখতে পায়। আমান সেই চুড়িটা হাতে নিয়ে বলে,
‘চুড়িটা এভাবে পড়ে আছে কেন? এটা তো ছোয়ার চুড়ি মনে হচ্ছে।’

অতঃপর ছোয়া রাস্তার দিকে তাকায়। গ্রামের রাস্তা হওয়ায় ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে যে এখান থেকে কাউকে জোরপূর্বক টেনে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমানের অন্তরাত্মা কেপে ওঠে। সে আর সময় নষ্ট করে না। সেই দাগকে অনুসরণ করে এগোতে থাকে আর বলতে থাকে,
‘আমি পৌছনোর আগে যেন কোন বিপদ না হয়ে যায় ছোয়ার। ওর কিছু হয়ে গেলে আমি,,,আমি নিজেও শেষ হয়ে যাব।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨

>>আসসালামু আলাইকুম। গতকাল গল্পটা দিতে পারিনি। কারণ রোজা থেকে প্রতিদিন গল্প লেখা সম্ভব না। রোজা থাকলে এমনিতেই ক্লান্ত লাগে শরীর। তার উপর গল্প লেখা কত চাপের সেটা বুঝতেই পারছেন। এইজন্য মাঝে মাঝে গল্প নাও দিতে পারি। সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন ✨ আপনাদের গঠন মূলক মন্তব্য দেখে গল্প লেখার এনার্জি পাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here