#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৪
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
আজ চারদিন পর ভার্সিটিতে এসেছে জান্নাত।চার দিকে চোখ ভুলিয়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ইশি কে খুঁজছে।প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত দুইজনে একসাথে পড়েছে।কলেজে দুই বছর দুই জনে আলাদা কলেজে পড়েছে।কিন্তু এখন ভার্সিটি তে আবার দুই জনে একসাথ হয়েছে।
হঠাৎ একটা জায়গায় জান্নাতের চোখ আটকে যায়।ইশি মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।জান্নাত সেইদিকে হেটে গিয়ে ইশির পাশে দাঁড়িয়ে সামনে থাকা ছেলেকে দেখে অ’বাক হয়ে যায়।ছেলেটা আর কেউ না ছেলেটা প্রান্তিক। জান্নাত তাকিয়ে বলে উঠে,
—মিষ্টার ভুক্তভোগী টিউটর আপনি এখানে?
ইশি জান্নাত আর প্রান্তিক এর দিকে তাকিয়ে আছে।প্রান্তিক ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
—তো আমার ভার্সিটি আমি আসবো না নাকি?
—আপনার ভার্সিটি মানে?
প্রান্তিক বলার আগেই ইশি জান্নাত কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
—আরে জানু তোকে তো বলাই হয়নি।প্রান্তিক আমাদের সাথেই এই ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে।প্রান্তিক আর আমি একই কলেজে পড়েছি।বলতে পারিস প্রান্তিক আর আমি ফ্রেন্ড ছিলাম । আর আমরা তিনজনে-ই ব্যাচমেট।কিন্তু তোরা দুই দুইজন কে চিনিস নাকি?
প্রান্তিক বলে উঠে,
—হ্যাঁ শুধু চিনি না।খুব ভালো করে চিনি।উনি তো প্রথম দিন ভার্সিটি তে এসেই আমাকে ইভটিজিং করেছে।
প্রান্তিক এর কথায় ইশি হা হয়ে যায়।জান্নাত তেঁতে উঠে বলে,
—একদম মিথ্যে কথা বলবেন না।কতবার বলেছি আমি ইভটিজিং করিনি।গান গেয়েছিলাম জাস্ট মজা করে।
—ওই একই হলো।
ইশি দুই জনকে চুপ করতে বলে,
—কি তখন থেকে দুই জনে আপনি আপনি করে ঝ’গড়া করে যাচ্ছিস। আজ থেকে তিনজনে ফ্রেন্ড। কোনো আপনি তুমি চলবে না।অনলি তুই।তুই-ই বেটার।
ইশির কথা শুনে প্রান্তিক বলে,
—ঠিক আছে।কিন্তু ওকে বলে দে আমাকে যাতে ভুক্তভোগী টিউটর না বলে।
—ঠিক আছে তাহলে আপনি ও থুক্কু তুই ও আমাকে ইভটিজার বলতে পারবি না।
জান্নাতের কথায় ইশি প্রান্তিক হেসে দেয়।প্রান্তিক হেসে বলে,
—ঠিক আছে।
—কিন্তু জান্নাত প্রান্তিক কে টিউটর কেন বলছিস?
ইশির কথায় জান্নাত বলে,
—প্রান্তিক জুরাইন এর নিউ টিউটর।তাছাড়া প্রান্তিক আর আমাদের পাশাপাশি বাসা।আবার প্রান্তিক এর আব্বু আর আমার আব্বু বন্ধু।আবার…
জান্নাত আর কিছু বলবে তার আগেই ইশি থামিয়ে দিয়ে বলে,
—থাম বইন।আর কোনো সম্পর্কের কথা জানতে চাই না।আর কোনো সম্পর্ক ভবিষ্যৎ এ তৈরি হলে আমরা দেখে নিবো নাহয় তখন।এখন থাম।
ইশির কথায় প্রান্তিক, জান্নাত হেসে দেয়।পরে একসাথে তিনজনে ক্লাসে চলে যায়। শ’ত্রু শ’ত্রু ও বন্ধু হয়ে যায়।যেমন প্রান্তিক আর জান্নাত। এতদিন দুইজন দুই জনকে ইচ্ছে মতো জ্বা’লাতো।আর আজ বন্ধু হয়ে গেলো।
🌸🌸
—প্রণয় ভাই রাফসান মির্জা জেনে গেছে আপনি বাড়িতে আসছেন। বাবা মায়ের সাথে থাকেন। আপনি সাবধানে থাকিয়েন বলা তো যায় না কখন আবার লোক পাঠায় তারা আপনাকে মা’রার জন্য।
—তুই চিন্তা করিস না।আমি সাবধানে থাকবো ইনশাল্লাহ। তোরা ও সাবধানে থাকিস। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাস।
—জি ভাই।
প্রণয় সজীবের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়।সজীব প্রণয়ের খুবই বিশ্বস্ত কাছের একজন। পার্টির যেকোনো কাজে বা যেখানেই যাওয়া আসা হয় সজীব প্রণয়ের সাথে যায়।সজীব প্রণয়ের পার্সোনাল গাড়ির ড্রাইভার। তবে প্রণয় কখনো তাকে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে বিচার করে না।ভাই হিসেবেই দেখে।
সুজন আর রিফাত ও প্রণয়ের সাথে সাথে থাকে সবসময়। প্রণয়ের কোনদিন কোন কাজে কোথায় মিটিং বা পার্টির কোনো কাজে সব সময় প্রণয়ের সাথে থাকে।
রাফসান মির্জা বিরোধী দল।রাফসান মির্জা চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রণয় যাতে এমপি পদে দাঁড়াতে না পারে।তাই সুযোগ খুঁজছে প্রণয়ের ক্ষ’তি করার জন্য।রাফসান মির্জা এখন যখন জানতে পেরেছি প্রণয় বাসায় থাকে সবার সাথে।যেকোনো সময় লোক পাঠাতে পারে মা’রার জন্য।সজীব কোনো ভাবে সেটা জানতে পেরে প্রণয় কে জানিয়েছে।
🌸🌸
জুরাইন স্কুল থেকে বাসায় যাচ্ছিলো।হঠাৎ সামনের দিকে চেয়ে দেখে পাখি ও বাসায় যাচ্ছে।তাই দ্রুত হেটে পাখির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
—কেমন আছো পাখি?
হঠাৎ কারো মুখে নিজের নাম শুনতেই পাখি চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে জুরাইন। জুরাইন কে বরাবরই পাখির কাছে ভালো লাগে।গুলুমুলু ছেলেটা।বয়সের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা সে।দেখলে সবাই বলবে হয়তো ক্লাস সিক্সে পড়ে।চতুর্থ শ্রেণির কেউ বলবে না।
পাখি মুচকি হেসে বলে,
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো জুরু?
পাখির মুখোচ্চরিত জুরু ডাক শুনেই জুরাইন খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে।বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে বলে,
—এভাবে বলো না পাখি এখানে লাগে।
জুরাইন এর কথায় পাখি অবাক হয়ে বলে,
—এসব কোথা থেকে শিখলে জুরাইন?
—আমার একটা ফ্রেন্ড আছে।ও ওর আম্মুর মোবাইলে মুভিতে এরকম দেখেছে।পরে স্কুলে এসে আমাদের বলেছে।তাই জানি।
—এসব বলা ভালো না ভাই।তুমি আর ওই ফ্রেন্ডের সাথে থাকবে না।ওগুলো খারাপ ফ্রেন্ড ভাইয়া।
পাখির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে জুরাইন ভ্রুকুটি কুঁচকে চলে যেতে যেতে বলে,
—ভাইয়া ঢেকে মনটাই ভে’ঙে দিলে।
পাখি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।এই পিচ্ছি বাচ্চা ছেলে এসব কি বলে?
🌸🌸
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে।প্রান্তিক জুরাইন কে পড়াচ্ছে জুরাইন এর রুমে।জান্নাত নিজের রুমে বসে ফোন ঘাটছে।হঠাৎ আহ্লাদী এসে বলে,
—আপামণি একটা কথা বলার ছিলো?
জান্নাত তাকিয়ে আছে আহ্লাদী এর দিকে। আর ভাবছে আজকে আবার কোন আজগুবি পাউডার এর নাম শুনাই আল্লাহ ভালো জানে।জান্নাত তপ্ত নিশ্বাস ফেলে মোবাইল একপাশে রেখে বলে,
—বল কি বলবি?
—কালকে আমাকে একটু সুন্দর করে সাজাই দিতে পারবেন আপামণি?
—কেন?কই যাবি তুই?
—কালকে আমার বেবিট্যাক্সি এর সাথে দেখা করতে যামু আপামণি।
—বেবিট্যাক্সি? এটা আবার কি নাম?
—আসলে আপামণি ওর নাম বেবিট্যাক্সি না।ওর নাম হলো শাকিল।ও তো মূর্খ।পড়াশুনা কিছুই করিনাই আমরা দুই জনে।গ্রামে একদিন এক শহরের শিক্ষিত আপা আইছে কি দরকারে। লগে জামাই ও আইছে ওই আপার।ওই আপা তার জামাইরে নাকি বেবি কইয়া ডাকছিলো। শাকিলে এটা শুনে একদিন আমারে ও বেবি বলে ডাকছে।এটা শুনে ফেলছে আমাদের পাশের ঘরের লিটন।লিটনে পুরো গ্রাম করছে এই কথা যে শাকিল আমারে বেবি বলে ডাকছে।সেই থেকে শাকিলরে সবাই বেবিট্যাক্সি বলে ডাকে।সেই জন্য মাঝে মাঝে আমার ও মুখ ফসকে বেবি ট্যাক্সি নামটা চলে আসে।
আহ্লাদী এর কথা শুনে জান্নাত হাসি চেপে রাখতে না পেরে হেসে দেয়।এই মেয়েটা এইসব আজগুবি কথার ঝুলি কই থেকে বের করে।ও পুরো মানুষটা আস্তো কমিডি।
জান্নাত কোনো মতে হাসতে হাসতে আহ্লাদী কে বলে,
—ঠিক আছে যা সাজিয়ে দিবো।
বলেই আবার হাসতে থাকে।আহ্লাদী জান্নাতের ঘর থেকে চলে যায়।জান্নাত হাসতে হাসতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
🌸🌸
রিফাতের সাথে আগামীকাল কের পার্টির মিটিং এর কথা ফোনে বলতে বলতে বেলকনিতে আসে প্রণয়। হঠাৎ কারো খিলখিল হাসির ধ্বনি কানে এসে বাজাতেই পাশের বাসার বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখে গত পরশু রাতের মেয়েটা একা একা হাসছে।
প্রণয় কথা শেষ করে ফোনটা কে’টে দিয়ে জান্নাত কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—এই যে,মিস.! একা একা হাসছেন কেন?
হঠাৎ কারো কথা শুনতে পেয়ে জান্নাত কথার উৎস এর দিকে ফিরে দেখে পাশের বেলকনি তে প্রণয় দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি ফেলে।
জান্নাত হাসি থামিয়ে বলে,
—কিছু না।এমনি একটা কথা মনে পড়েছিলো বার বার তাই হাসছিলাম।
জান্নাতের কথায় প্রণয় মুচকি হাসে।কি অমায়িক সে হাসে।ঠোঁটের কোণে হাসিটা লেগে আছে।
জান্নাত প্রণয় কে বলে,
—তা আপনি এখানে?মানে এই সময় বেলকনিতে?
—দরকারি একটা কল এসেছিলো। তাই কথা বলতে এখানে আসা।না আসলে তো দেখতে পেতাম না কেউ এখানে হাসছে সুন্দর করে।
শেষের কথাটা প্রণয় বিড়বিড় করে বলে।জান্নাত সেটা দেখে বলে,
—কিছু বলেছিলেন??
প্রণয় থতমত খেয়ে যায়।তবে সেটা প্রকাশ না করে বলে,
—নাহ কিছু না।বাই দ্যা ওয়ে!আপনার নামটা জেনো কি?
—জান্নাত! জান্নাত আজমী।
—জান্নাত। মাশাল্লা। নামটা সুন্দর আপনার।
—আপনার নাম শাহরিয়ার প্রণয়! এম আই রাইট?
—ইয়্যাহ।
—প্রণয় নামের অর্থ কি জানেন? ভালোবাসা।
—হ্যাঁ।
—আপনাকে বরং আমি মিষ্টার ভালোবাসা বলেই সম্বোধন করি?
—মিষ্টার ভালোবাসা?
—হ্যাঁ। তবে শুধু নাম হিসেবে। কোনো কেমিস্ট্রি নেই কিন্তু এর মাঝে।
জান্নাতের কথায় প্রণয় সেই অমায়িক হাসিটা ঠোঁটের কোণে ফুটে তুলে বলে,
—আচ্ছা।
প্রণয়ের কথার বিপরীতে জান্নাত এক চিলতে হাসি উপহার দেয়।আর প্রণয় তাকিয়ে থাকে জান্নাতের নাকের সেই লালছে কালো তিল টার দেখে।ওই তিল টায় যেন মুখশ্রীর অর্ধেক সৌন্দর্য ধরে রেখেছে।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤#প্রেমের_হাতেখড়ি
#পর্ব:৫
#ফাতেমা_জান্নাত (লেখনীতে)
—তাহলে আপনি এমপি পদে দাঁড়াবেন -ই??
রাফসান মির্জার কথায় প্রণয় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
—জি ইনশাল্লাহ দাঁড়াবো।বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
প্রণয়ের এতো শান্ত কথা রাফসান মির্জার পছন্দ হয়নি।তাই তীব্র বিরক্ত নিয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,
—ঠিক আছে বেস্ট অফ লাক। দেখা যাক আপনি জিতেন কিনা?
—জি ইনশাল্লাহ।
বলেই প্রণয় হেসে দেয়।রাফসান মির্জা চেয়ার ছেড়ে উঠে বেরিয়ে যায়।যাওয়ার সময় কেবিনের দরজাটা ঠা’স করে বন্ধ করে যায়।যেন সব রা’গ দরজার উপর দিয়ে গেছে।
প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।রাফসান মির্জা আজকে পার্টি অফিসে এসেছে প্রণয় কে বলতে যাতে নির্বাচনে না দাঁড়ায়। কিন্তু প্রণয় সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে বলেছে সে নির্বাচনে দাঁড়াবে।
প্রণয়ের কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রিফাত নক করে বলে,
—প্রণয় ভাই আসবো?
প্রণয় সেই দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
—আয়।
প্রণয়ের অনুমতি পেয়ে রিফাত,সজীব,সুজন ভিতরে ঢুকে।তিনজনে এসেই সামনে দাঁড়ায়। সুজন কিছু একটা বলতে চাইছে।প্রণয় বুঝতে পেরে অভ’য় দিয়ে বলে,
—সুজন কিছু বলবি?
প্রণয় থেকে অভ’য় পেয়ে সুজন বলে,
—প্রণয় ভাই আমাদের দলের জামিল এর লা’শ পাওয়া গেছে।
প্রণয় চেয়ারে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। সুজন এর কথা শুনে ছট করে চোখ খুলে সেই দিকে তাকিয়ে বলে,
—মানে?জামিল এর লা’শ পাওয়া গেছে মানে কি?কোথায় পাওয়া গেছে ওর লা’শ?
—গতকাল আমাদের পার্টি অফিসের পিছনে।
—তোরা আমাকে আজকে কেন বলছিস? গতকাল কেন বলিসনি?
প্রণয়ের কথায় সজীব বলে উঠে,
—ভাই আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম যখন জামিল এর লা’শ পেয়েছিলাম।কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিলো।
—ওহ! আমি ল্যাপটপে একটা মিটিং ছিলাম তখন।তাই ফোন বন্ধ ছিলো। লা’শ টা দেখেছে কে আগে?
রিফাত ছলছল চোখে বলে উঠে,
—টোকাই ময়লা কুড়াতে এসে দেখে চি’ৎকার করে উঠে তখন আমাদের একজন গার্ড আর দারোয়ান গিয়ে দেখে জামিল এর লা’শ একটা সাদা পলিথিন এ পেছিয়ে ফেলে রেখেছে।ওকে খুব বিভৎস ভাবে মে’রেছে প্রণয় ভাই।ওর চেহারা টা পর্যন্ত বুঝা যাওয়া যাচ্ছিলো না ঠিক মতো।ওর ঠোঁটসহ সারা মুখে ব্লে’ড দিয়ে কা’টা হয়েছিলো। মাথায় রডের আ’ঘাত ছিলো অনেক।হাতের প্রতিটা আঙুল এর হাড্ডি ভে’ঙে দিয়েছিলো।
রিফাত আরো কিছু বলার আগেই ফুঁপিয়ে উঠে।জামিল ছিলো তার সব থেকে কাছের বন্ধুর মতো একজন। দুই জনে সবসময় একসাথে থাকতো।ছেলেটার পরিবারে কেউ নেই।একাই ছিলো। শেষে এখন নিজেও চলে গেলো দুনিয়া থেকে।
প্রণয় উঠে এসে রিফাত কে জড়িয়ে ধরে।প্রণয় জানে রিফাত আর জামিল দুই জনে বন্ধু ছিলো।আর সেই বন্ধু চলে যাওয়াতে কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রণয় রিফাত কে চেয়ারে বসিয়ে পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,
—খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা কর জামিলকে কে বা কারা মে’রেছে?
সজীব বলে উঠে,
—ভাই আমার ধারণা রাফসান মির্জার লোক জামিল কে মে’রেছে।
—হয়তো। তবে নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করেই প্রমাণ ছাড়া কিছু বলা যাবে না সজীব। জামিল কে কে বা কারা মে’রেছে এবং কেনো মে’রেছে?তার প্রমাণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।তবে খুবই সাবধানতার সাথে।এই কথাগুলো যাতে আমাদের চারজন এর বাইরে কেউ জানতে না পারে।
—জি ভাই।
সুজন এর কথার বিপরীতে প্রণয় তাদের জিজ্ঞেস করে,
—জামিল এর জানাজা, দাফন হয়েছে?
রিফাত নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,
—না ভাই।আজ বাদ যোহরে জামিল এর জানাজার নামাজ। তারপরেই দাফন।
—আচ্ছা।ঠিক আছে।তোরা গিয়ে ওর জানাজা দাফন কাজের ব্যবস্থা কর।আমি একটু পরেই আসছি।
ওরা তিনজন বেরিয়ে যেতেই প্রণয় আবার চেয়ারে মাথা এলিয়ে দেয়।বার বার মাথায় আসছে হয়তো জামিল কিছু একটা জানতে পেরেছে কারো ব্যাপারে।হয়তো তো সে সেটা জানতে পেরেই জামিল কে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে।কিন্তু কি?
🌸🌸
—এই শিশি চল আজ ফুচকা খাবো।
প্রান্তিক এর মুখে নিজের নামের বিকৃতি শুনে ইশি ধুম করে প্রান্তিক এর পিঠে একটা কি’ল বসিয়ে দিলো।ব্য’থা পেয়ে প্রান্তিক চোখ কুঁচকে পিঠে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে ইশির চুল টেনে দিয়ে বলে,
—ইশির বাচ্চা শিশি।তোর এই হাতুড়ি মার্কা হাড্ডি দিয়ে একদম আমাকে মা’রবি না।কি খেয়ে হাড্ডি গুলো এমন লোহার বানাইচত?
ইশি প্রান্তিক এর হাত থেকে নিজের চুল ছাড়িয়ে প্রান্তিক এর চুল টেনে ধরে বলে,
—আমার নাম ইশি।তুই শিশি কেন বলছ যতদিন যতবার শিশি বলবে।ততদিন মা’র খাবি আমার হাতে।
জান্নাত এদের দুই জনের চুল চুলাচুলি দেখে অ’বাক। একটা মেয়ে ছেলে কিনা চুল নিয়ে টানাটানি করে?দুইটা মেয়ে হলেও তো মানা যেতো।
জান্নাত চি’ৎকার করে উঠে বলে,
—থামবি তোরা?কি শুরু করেছিস এসব?সতীনে সতীনে বোধহয় এত ঝ’গড়া করে না।তোরা যেই পরিমাণ ঝ’গড়া করছ।ভার্সিটি তে পড়ছ অথচ এখনো ঝ’গড়া করছ বাচ্চাদের মতো।
ইশি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
—প্রান্তিক এর বাচ্চা আমাকে শিশি কেন বলে?ওকে কয়দিন বলছি আমার নাম ইশি।
—ওই!আমার কোনো বাচ্চা কাচ্চা নেই।আমি পিউর সিংগেল।
প্রান্তিক এর কথায় ইশি মুখ বেঁকিয়ে প্রান্তিক এর কথা ভেঙিয়ে বলে,
—পিউর সিংগেল হুহ!
প্রান্তিক আরো কিছু বলবে তার আগেই জান্নাত বলে উঠে,
—ঠিক আছে তোরা দুই জন ঝ’গড়া কর।আমি যাই।একদম আমার সাথে আসবি না দুই জনে।
বলেই জান্নাত হাঁটতে শুরু করে।প্রান্তিক আর ইশি দুইজনে দুই জনের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়েই জান্নাতের পিছন পিছন দৌড়াতে শুরু করে।জান্নত দুই জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
🌸🌸
ফুচকা স্টল এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে জান্নাত, ইশি,প্রান্তিক। তিনজনে তিন প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়ে তিনটা চেয়ারে বসে আছে ফুচকা আসার অপেক্ষায়। হঠাৎ জান্নাতের ব্যাগের ভিতরে ফোন বেজে উঠতেই ফোন নিয়ে উঠে একপাশে এসে দাঁড়িয়ে কথা বলে।
কথা বলা শেষ করে ফোন ব্যাগে ঢুকাবে তার আগেই দেখে তার সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।জান্নাত ছেলেটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ছেলেটা ও নির্লিপ্ত চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।জান্নাত এবার নিজ থেকেই বলে উঠে,
—কিছু বলবেন?
ছেলেটার থেকে কোনো উত্তর ফেলো না।এবার একটু জোরেই জান্নাত বলে,
—কিহ? কিছু বলবেন?
ছেলেটা এবার মুখে কিঞ্চিত হাসি ঝুলিয়ে বলে,
—তোমাকে খুব চেনা চেনা লাগছিলো। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না।তাই কাছে আসা পরিচিত হওয়ার জন্য।
জান্নাত আলতো হেসে বলে,
—গোলাকার পৃথিবীতে কোনো মানুষের সাথে বার বার রাস্তায় বা অলি গলিতে দেখা হওয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক না।তা আপনার যাদের কেই চেনা চেনা লাগে তাদের সবার সাথেই কি পরিচিত হতে কি কাছে যান?
লোকটা জান্নাতের কথায় থতমত খেয়ে যায়।মেয়েটা শান্ত কথায় তাকে অপমান করলো না তো?লোকটা জান্নাতের কথার বিপরীতে বলে উঠে,
—নাহ তা না।আসলে তোমাকে একটু…
লোকটা পুরো কথাটা শেষ করার আগেই জান্নাত বলে উঠে,
—খুব বেশি পরিচিত মানুষরা ও প্রথম দেখাতে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে।আর সেখানে আপনার কাছে আমাকে চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু আপনি আমাকে ‘তুমি ‘ করে সম্বোধন করছেন। বিষয় টা দৃষ্টিকটু না?
বলেই জান্নাত চুপ করে নিজের ফোনের দিকে তাকায়।লোকটা জান্নাতের দিকে ডান হাত এগিয়ে দিয়ে বলে,
—সরি!বাই দ্যা ওয়ে আমি রাফসান মির্জা।
জান্নাত এবার লোকটার দিকে একবার তাকায়।শুধু ছোট্ট করে “ও আচ্ছা” বলেই সেখান থেকে প্রান্তিক আর ইশির কাছে চলে আসে।
রাফসান মির্জা এখনো থম মে’রে দাঁড়িয়ে আছে।আর ভাবছে মেয়েটা কি তাকে অপমান করলো।খুবই শান্ত কথায় অপমান করে গেলো মেয়েটা তাকে।
🌸🌸
জান্নাতের বেলকনিতে বসে বসে জুরাইন কান্না করছে আর টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছে।তার একটাই কষ্ট আজ আবার পাখি তাকে ভাই বলেছে।পাখি কেন তাকে ভাই বলবে এই কষ্টে তার চোখ ফেটে কান্না আসছে বার বার।জান্নাত বার কয়েক জিজ্ঞেস করে গেছে কেন কান্না করছে কিন্তু জুরাইন স্বীকার করেনি।নিজের ঘরে মায়ের কারণে শান্তিমত কাঁদতে পারবে না বিধায় বোনের ঘরে বেলকনিতে বসে কান্না করছে।
জান্নাত এক দৃষ্টিতে ভাইয়ের কান্না দেখে যাচ্ছে।এবার মুখ খুলতে বাধ্য হলো।
—তোর কি হয়েছে বলবি?গত এক ঘন্টা থেকে ফ্যাচফ্যাচ করে যাচ্ছিস। যার মধ্যে ১৫ মিনিট চোখ থেকে পানি পড়েছি কিনা সন্দেহ। বাকি সময় গুলো তো এমনেই কান্নার ভাব করে ফ্যাচফ্যাচ করে যাচ্ছিস আর টিস্যু দিয়ে চোখ মুচ্ছিস।টিস্যু তো ভিজেই না পানিতে। উল্টা টিস্যু নষ্ট করছিস।
বোনের কথায় তীব্র রে’গে গিয়ে জুরাইন বলে উঠে,
—এই আপু একদম আমার কান্না কে অপমান করবি না।পানি না আসলে আমার কি দোষ?আমি তো কাদঁতে চাইছি কিন্তু চোখ থেকে পানি আসছে না,না আসলে আমি কি করবো?
—তো কান্না করার কারণ টা কি?সেটা তো বলবি?
—একদম আমাকে বিরক্ত করবি না।যা তো এখান থেকে।শান্তি মত কান্না করতে দে একটু। থাক তুই যাওয়া লাগবে না।আমিই যাচ্ছি। কোথাও একটু শান্তিতে কাদঁতে পারিনা।
বলেই গটগট করে জুরাইন বেলকনি থেকে চলে গেলো। জান্নাত এখনো অ’বাক হয়ে চেয়ে আছে ভাইয়ের যাওয়ার দিকে।সে কি এমন বললো যে জুরাইন এমন করলো?আর ও কাঁদছে ও বা কেন?
—মিস.জান্নাত এভাবে চেয়ে আছেন কেন ওই দিকে?
প্রণয়ের কথা কানে আসতেই জান্নাত পাশের বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রণয় তার দিকেই তাকিয়ে আছে।জান্নাত সম্বিৎ ফিরে এসে সুধাল,
—নাহ কিছুনা। ভাবছিলাম আরকি
—তা কি ভাবছিলেন?
—বলা প্রয়োজন?
—আপনি বললে অপ্রয়োজন ও প্রয়োজন।
কথাটা প্রণয় বিড়বিড় করে বলে।যা জান্নাতের কর্ণকুহরে এসে পৌছায় নি তাই জান্নাত বলে উঠে,
—কিছু বলেছিলেন?
প্রণয় আনমনেই বলে উঠে,
—এত তাড়াতাড়ি কি সব বলা যায়?
প্রণয়ের কথায় জান্নাত কিছুটা অ’বাক হয়।তাই একটু ভ্রু কুঁচকে বলে,
—মানে?
প্রণয় সম্বিৎ ফিরে আসে জান্নাতের কথায়।বুঝতে পেরে যায় আনমনে কি বলে ফেলেছিলো। তাই পরিস্থিতি সামলাতে একটু গলা খাকাড়ি দিয়ে বলে,
—নাহ কিছু না।সব মানে বুঝার বয়স এখনো আপনার হয়নি।
বলেই প্রণয় নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।জান্নাত থম মে’রে দাঁড়িয়ে আছে।এসবের মানে কি সে সেটাই বুঝতে পারছে না।কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই কেন সবাই বলে তার এখনো বয়স হয়নি?তাহলে বয়স হবে টা কবে?দশ বছরের জুরাইন ও তাকে বলে সব বুঝার বয়স হয়নি এখনো তার।আর আজ প্রণয় ও বললো।
চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤