প্রেয়সী পর্ব – ১৫+১৬

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৫

২৮.

—-” চা না কফি?”

আমি পানির বোতলটা হাতে নিয়ে খুলতে খুলতে বললাম,

—-” কনফিউজড!”

আদ্রিতা আপু মুচকি হাসলেন। চুলোর উপর কফির জন্য পানি চাপিয়ে বললেন,

—-” আমাকে নিয়েও কি নিধি একটু আধটু কনফিউজড?”

আমি আঁড়চোখে তাকালাম। মৃদুস্বরে বললাম,

—-” আমি ভেবেছিলাম তুমি রাহিয়ান ভাইয়ার বউ!”

আদ্রিতা আপু এবার বেশ শব্দ করেই হেসে উঠলো। পানিতে বলক উঠতেই নামাতে নামাতে বললেন,

—-” আমি হলাম হিমাদ্র সাহেবের বউ। রাহিয়ানের বড় চাচার দুই মাত্র ছেলের একমাত্র বউ। শুধু তারই বউ কিন্তু হু। আর বাকি সবার বউমনি। তোমার রাহিয়ান ভাইয়ারও। বুঝলে?”

আমি জিভ কেটে কপালে হাত চাপলাম। আদ্রিতা আপুর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে তার মুখের ভঙ্গিমা দেখে সোজা হয়ে বসলাম। আমতাআমতা করে বললাম,

—-” আম রিয়েলি সরি আপু.. থুরি বউমনি! আসলে সেদিন তোমায় হঠাৎ দেখার পর কারোর না কারোর বউ বলেই মনে হচ্ছিলো। আর তারউপর আমরা রাহিয়ান ভাইয়ারই রুমে ছিলাম। তাই এমনটা ভেবে ফেলেছি। আরও একটা সিক্রেট কি জানো?”

বউমনি আমার দিকে প্রশ্ন সূচক মুখ করে তাকাতেই আমি আবারও বলতে লাগলাম,

—-” তুমি এতোই সুন্দরী যে আমি ভাবছিলাম, বাই এনি চান্স আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে নির্ঘাত আমি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম!”

কথাটা বলা মাত্রই বউমনি হাসতে লাগলো। তার হাসি দেখে এবার আমিও ফিক করে হেসে দিলাম। বলতে সমস্যা নেই, বউমনি সত্যিই ভীষণ সুন্দরী!

বউমনি নাক ডলে বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। অর্থাৎ হাসতে হাসতে তার দম ফুরিয়ে এসেছে। অতঃপর কফি,মিল্ক আর পানি সবকিছু একত্রে কফিমেকারে ঢেলে দিতে দিতে বলল,

—-” আমার বিয়ে হয় আরও চার বছর আগে। এদেশে নয় আমেরিকাতে হয়। আমার শশুড়-শাশুড়ি কিন্তু সব ওখানেই থাকেন। কেবল আমার সোয়ামিজি-ই ওখানে থাকতে পারলেন না। আসলে সে ছোট-মাকে ভীষণ ভালোবাসে তাই বাবা-মাকে ছেড়েই গত তিন বছর ধরে ছোট-মার কাছেই থাকছেন। আর তিনি যেহেতু আমার সোয়ামি সেই সূত্রে আমাকেও তাকেই সঙ্গ দিতে হচ্ছে।”

—-” তাই নাকি? বড়-খালামনির বড়ঝা আমেরিকাতে থাকেন? বাবা কি হাইফাই ব্যাপার গো তোমাদের! আমি তো বাপু বাপের জন্মে কখনো আমেরিকায় যায়নি। আর কখনো যাওয়ার স্বপ্নও দেখি না! কারন কখনো তো যাওয়াই হবে না। অযথা স্বপ্ন দেখে কি লাভ বলো?”

বউমনি সরু চোখে তাকালো। বলল,

—-” যাওয়া হবে না কি বলছো? তুমি ইচ্ছে করলেই যেতে পারো? আজকাল বিদেশ যাওয়া আহামরি কিছুনা।”

কথা কিন্তু বাস্তব। সত্যি দিন দিন দুনিয়াটা খুব সহজ হয়ে উঠছে। আজকাল কঠিন বলে আর কিছু হয় নাকি?

—-” সে দেখা যাবেক্ষন! তারপর বলো? তোমাদের কি লাভ ম্যারেজ নাকি এরেজ্ঞম্যারেজ?”

আমার প্রশ্নে বউমনি লজ্জা পেয়ে গেলো। কানের পাশে চুল গুঁজতে গুঁজতে বলল,

—-” লাভ ম্যারেজ।”

“লাভ ম্যারেজ” শুনতেই আমার মনটা নেচে উঠলো খুশিতে। আমি হাতের উপর ভর করেই কেবিনেটের উপর বেশ আয়েস করে করলাম। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললাম,

—-” রিয়েলি! তাহলে বলো তোমাদের লাভস্টোরি? আমি শুনবো।”

বউমনি আমার কান্ড দেখে হাসতে লাগলো। আমি তার হাসিকে পাশে চাপিয়ে আবারও বললাম,

—-” জলদি বলো?”

” নিধি আপু আপনার ফোন বাজছে।”

উপর তালা থেকে লিয়ার কন্ঠ পেতেই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার। এমন একটা মোমেন্টে কেউ কল দেয়? বেটার নির্ঘাত কোনো টাইমিং সেন্স নেই। ধপ করে কেবিনেট থেকে নেমে বউমনির দিকে তাকালাম। বউমনি মুচকি হাসছে। আমি অসহায় মুখে তাকাতে বউমনি বলে উঠলো,

—-” আগে কথা বলে এসো। তারপর না হয় আমাদের লাভস্টোরি তোমায় শুনাবো। জলদি এসো কেমন? কফি কিন্তু রেডি।”

আমি চোখ ঝাপটে মাথা দুলালাম। উপরের উঠে আসতে আসতে মনে মনে প্রশ্ন জাগলো, “কার কল হবে? হৃদের?”

রুমে ঢুকে দেখলাম বিছানা ফাঁকা পড়ে আছে। রিম্মি আপু হয়তো আমার ফোনের টোনেই উঠে পড়েছে। ইশশ, কি বাজে ব্যাপার। বেচারি কত আরামে ঘুমচ্ছিলো…

আমার ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিছানার উপর আমার ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। আমি বিরক্তি ভরা চোখে তাকালাম ফোনটার দিকে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে ফোনটা হাতে তুলে নিতে হৃদের নামটা দেখে আরও একরাশ বিরক্তি চেপে বসলো আমার শরীর মন জুড়ে। হাজারও বিরক্তি আর অভিমান পাশে রেখেই ফোনটা কানে তুললাম আমি,

—-” লক্ষি? কেমন আছো তুমি? আঙ্কেল এখন কেমন আছে?”

আমি ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিলাম। বুক ভরে নিঃশ্বাস আসতেই টলমল চোখে তাকালাম ফোনটার দিকে। এই মানুষ টা সত্যি সত্যি আমায় ভালোবাসে তো? বাবার অসুস্থতা আজ দু’দিন ধরে আর সেটা হৃদ জানা সত্যেও আজ দু’দিন বাদে কল করে জানতে চাচ্ছে যে বাবা কেমন আছে? কি করে পারছে এতোটা নি/ষ্ঠু/র হতে?

আমি চোখ থেকে জল গড়াতে দিলাম না। ঢোক গিলে কান্না গুলো একপ্রকার গিলেই নিলাম। কঠিন স্বরে বললাম,

—-” এই মুহুর্তে তোমার কলটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলো হৃদ।”

হৃদ থমকালো বুঝি। অসহায় কন্ঠে বলতে লাগলো,

—-” আমার ভীষণ চাপ যাচ্ছে নিধু! আমি চেয়েও তোমায় একমিনিটের জন্য কল দিতে পারছিনা। বিশ্বাস করো আমার ভীষণ চাপ যাচ্ছে! ফ্যামিলির কারোর সাথেই আমি কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। লাস্ট ফিফটিন ডেস যাবৎ। এখন তুমিই বলো না আমি কি করবো?”

—-” কি এমন ব্যস্ততা তোমার?”

হৃদ আবারও থমকালো। আমতাআমতা করে বলল,

—-” প..পড়াশোনার চাপ। ফাইনাল চলছে তুমি তো জানো?”

—-” মিথ্যে বলছো তুমি।”

আমার শক্ত কথায় হৃদ বারবার দমে যেতে লাগলো। আমি আবারও বলে উঠলাম,

—-” কল দিতে চাচ্ছো না ইট’স ওকে হৃদ। আমার তাতে বিন্দু মাত্র সমস্যা নেই। আমি তোমায় কল দিলে তুমি কল তুলো না সেটাও ঠিকাছে। কিন্তু তাই বলে মিথ্যে বলতে হবে? তুমি আমায় মিথ্যে বলছো আমি তো ভাবতেও পারছিনা! তুমি বলছো তোমার নাকি ফাইনাল চলছে? কেবল কি তোমারই ফাইনাল চলছে? কই রাহিয়ান ভাইয়ার তো ফাইনাল চলছে না, তোমার বন্ধু ইরহাম ভাইয়ার তো ফাইনাল চলছে না! সেতু আপু, রুবিনা আপু, সাদি ভাইয়া এদের কারোরই তো ফাইনাল চলছে তবে তোমার একার কি করে ফাইনাল চলে? জবাব দাও?”

হৃদ থতমত খেয়ে কলটা কেটে দিলো। আমি ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম! হৃদের ব্যাপার টা যে কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার। ও জানে আমি মিথ্যে একদম সহ্য করতে পারিনা তবুও কেন মিথ্যে বলছে? কি এমন দরকার পড়লো যে ওকে মিথ্যে বলতে হচ্ছে?

গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। আমি ফোনটার দিকে না তাকিয়েই উঠে বসলাম। টেনে বার কয়েক বড় বড় দম ফেলে নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা চালালাম। উদ্দেশ্য কলটাকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করা। কিন্তু হাতে গোনা দশ সেকেন্ডের বেশিও নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না! হৃদের নামটা এবার না পড়েই কানে তুললাম ফোনটা। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে উঠলাম,

—-” তুমি যদি আবারও ভেবে থাকো আমায় মিথ্যে বুলি দিয়ে ভোলাবে তাহলে ভালোতে থেকেই কল টা কেটে দাও প্লিজ! অন্যথা তুমি আর কখনো আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার মুখ অব্দি দেখতে পাবেনা!”

—-” হাউ কিউট! একদম আপনি সোজা থেকে তুমি তে? বিলিভ মি নীলাদ্রিতা আমি আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এই একটা চিমটি কাটবে আমায়?”

থতমত খেয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলাম আমি! এটা কে? নাম্বারটায় চোখ বুলালে চিনতে পারলাম না! কিন্তু ভয়েস টা…. আরে ইয়ার এটা তো সেই অপরিচিত লোকটা!

—-” হ্যালো… হ্যা…লো? হ্যালো? নীলাদ্রিতাআআআ….”

ফোনটা পূনরায় কানে উঠাতে উঠাতে উনার চেঁচানো কন্ঠ কানের পর্দায় এসে বারি খেতেই আমি ঝাঁঝ মেশানো গলায় বলে উঠলাম,

—-” ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন?”

কথাটা বলতেই ওপাশ থেকে কাশির শব্দ ভেসে আসলো। কাশতে কাশতে বেচারা কিছু বলতে নিলেই আমি আবারও অ/গ্নিমূ/র্তি রূপ নিয়ে বললাম,

—-” যক্ষা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র নীলাদ্রিতার নাম্বার নয়। নেক্সট টাইম আমাকে কল করার আগে অবশ্যই চিকিৎসা কেন্দ্রে কল করে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে আসবেন।”

এটুকু বলেই কল টা উনার মুখের উপরই কেটে দিলাম আমি। হৃদের রা/গ টা অপরিচিত মানুষ টার উপরই পুরালাম। কি করবো? লোকটা মাঝেমধ্যে কই থেকে যে উদয় হয় আর আমাকে জ্বা/লি/য়ে মা/রে কে জানে?

ক্ষিধেয় যেন পেটের মধ্যে ইঁদুরের পঞ্চম বি/শ্বযু/দ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে! না, আর এখানে বসে থেকে এদের সাথে ঝ/গ/ড়া করে বকাবকি করা চলবে না। আগে জরুরি ভিত্তিতে কিছু খাওয়া দরকার। নীচে তো বউমনি অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি বরং নীচেই চলে যাই। ফোনটা পাশে রেখে উঠতে যাবো ঠিক তখনই আবারও কল আসলো অপরিচিত লোকটার। বেটার শিক্ষা হবে না জীবনে! এবার তো উনাকে বকা দিয়ে উনার পুরো গুষ্ঠি পরিবার উদ্ধার করবো। হাতে তুলে ফোনটা কানে চেপে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ওপাশ থেকে তার মোহনীয় স্বরটা জাদু ছড়ালো আমার চারিপাশে। সাথে কিছু মন জুড়ানো বাক্য,

—-” তুমি, বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড
অখণ্ড প্রকৃতির প্রশমন~
তুমি, নিপুণ হাতে গড়ে তোলা
অবুঝ মনের সবুজ বাগিচা |
তুমি, ছোট্ট শিশুর প্রাণচঞ্চল
অবিকল মায়াবী হাসি ~~
তুমি,তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা
জৈষ্ঠ্যের রসালো ফল।
তুমি, তুমি প্রেয়সী আমার প্রেয়সী।”

🥀 প্রেয়সী (অংশবিশেষ) 🥀

২৯.

ভেবে ভেবে হয়রান হয়ে মাথার গিলু অব্দি গুলিয়ে ফেলছি আমি! তবুও বুঝে উঠতে পারছিনা কে এই আজনাবি। ফাল্গুন মাস। চারপাশের সমস্ত গাছপালা তার শরীরটাকে উজাড় করে তার শরীরের প্রত্যেকটা পাতা ঝড়িয়ে দিচ্ছে। কতটা সুন্দর সেই মনোরম দৃশ্য। এসব অহেতুক ভাবনা বাদ দিয়েই মন ডুবালাম প্রকৃতিতে। গার্ডেনটা শুকনো পাতা গুলো দিয়ে ভরে আছে। আমি তার মধ্যে দিয়েই হাঁটছি। সময় টা এখন খুব সম্ভবত ৪টা কিংবা ৫ টা। ঘন্টা দুয়েক আগেই দুপুরের খাবার খাওয়া হলো। খেয়ে দেয়ে ঘন্টাখানিক রেস্ট নিয়েই বের হয়ে এলাম এখানে ৷ এ-বাড়িতে আসা মাত্রই এই গার্ডেনটা নিয়ে আমার খুব কৌতুহল। কখন এখানে আসবো আর কখন ঘুরেফিরে সবটা দেখবো সেই ভাবনাতেই আঁটকে ছিলাম।

—-” নিধি? কি করছো এখানে একা একা?”

পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকাতে দেখলাম আরফান ভাইয়া ওরফে আবির ভাইয়া দাঁড়িয়ে। আমি স্মিত হেসে জবাব দিলাম,

—-‘ জ্বী। এই তো তেমন কিছুই না ঘুরেফিরে দেখছিলাম সব।”

উনিও হাসলেন আমার ন্যায়। বড় বড় ধাপ ফেলে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখতে দেখতে বললেন,

—-” আন্টিদের গার্ডেনটা বরাবরই মা/রাত্মক সুন্দর। আমার ভীষণ পছন্দের!”

—-” সত্যিই মা/রাত্মক সুন্দর। আমার তো সবটা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে আসছে বারবার। আমি তো তখন থেকে এটাই ভাবছি যে কারোর বাড়ির গার্ডেন কি করে এতোটা সুন্দর হতে পারে?”

আরফান ভাইয়া আমার পেছনের দিকে সুইমিংপুলটার দিকে ইশারা করে বলল,

—-” সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে এই যে সুইমিংপুলটা।”

আমি সুইমিংপুলের নীল পানিতে তাকিয়ে বললাম,

—-” একদমই তাই।”

—-” তারপর বলো, বাবা এখন কেমন আছেন? কথা হয়েছে বাবার সাথে?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।

—-” বড় খালামনির সাথে কথা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। বাবা আগের থেকে বেটার। আজ রাতে বাবার লাস্ট মেজর অপারেশন টা হবে। ডক্টর বলেছেন অপারেশন সাকসেসফুলি হতেই বাবা ঠিক আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে।”

—-” গ্রেট নিউজ। সত্যি বলতে তোমার বাবাকে নিয়ে সেদিন থেকেই ভীষণ টেনশনে ছিলাম! ভেবেছিলাম তোমার নাম্বারটা নিয়ে নিবো। মাঝেমধ্যে কল করে না হয় তোমার বাবার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিলাম?”

আমি আঁড়চোখে আরফান ভাইয়ের মুখের এক্সপ্রেশন দেখলাম। নাহ্, স্বাভাবিকই আছেন। কোনো রকম
শ/য়/তা/নি ছাপ নেই মুখে। আর থাকারও কথা নয়। কেননা সে রাহিয়ান ভাইয়ারই তো ফ্রেন্ড।

আমি মৃদু হেসে বললাম,

—-” হ্যাঁ নিশ্চয়ই।”

আমার সহমত পেতেই উনি ফোন বের করে আমার সামনে ধরলেন। মুখের হাসিটা খানিক প্রশস্ত করে বললেন,

—-” এই নাও এটায় তোমার নাম্বারটা তুলে একটা মিসড্ কল দিয়ে রাখো!”

আমি ঘাড়টা হালকা কাত করে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আবারও বলে উঠলন তিনি,

—-” তোমার ফোন নেই সাথে?”

আমি আমার শূন্য হাতের দিকে একনজর তাকিয়ে বললাম,

—-” না রুমে রেখে এসেছি।”

আমার জবাবে উনি হতাশ কন্ঠে বললেন,

—-” ওকে নো প্রবলেম। আমার নাম্বারের লাস্ট টু ডিজিট হলো সিক্স, নাইন। সেভ করে নিও?”

আমি জোরপূর্বক হেসে মাথা দুলালাম। ফোনটা উনার হাতে তুলে দিয়ে বললাম,

—-” সেদিন আপনি আর রাহিয়ান ভাইয়া বাবার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। তার জন্য আপনাকে বিশেষ একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু পরে তো আপনার আর দেখাই মিলল না!”

আরফান ভাই স্মিত হেসে বললেন,

—-” ধন্যবাদ দিলে তো আমি শুনছি না!”

আমি উনার কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে বোকা গলায় প্রশ্ন করলাম,

—-” জ্বী… মানে?”

আমার প্রশ্নের জবাবে আরফান ভাই মুচকি হাসলেন। মাথা চুলকে মিনমিনে গলায় বললেন,

—-” তোমায় দেখলেই আমার মনটা উৎসাহ নিয়ে বলে উঠে তোমার হাতের রান্নার সাধ অসাধারণ হবে। আর আমি একদিন তোমার হাতের রান্নার সাধ নিতে চাই। প্লিজ, না করো না।”

আমি শুঁকনো মুখে তাকালাম। গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,

—-” হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”

—-” ফ্রী-ই আছো না? চলো না সামনের রোডটা একটু হেঁটে আসি?”

—-” অ্যা?”

—-” সামনের রোডে কিছুদূর যেতেই একটা টি-স্টল আছে… চলো যা….”

আরফান ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কোত্থেকে উদয় হলেন রাহিয়ান ভাইয়া। কোনো কথা বার্তা না বলেই আমার হাতটা টেনে নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা ধরলেন। প্রথম দফায় উনার মুখটাও দেখতে পেলাম না। পরক্ষণেই উনার রা/গা/ন্বি/ত মুখটা দেখে ভড়কে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম। আরফান ভাই হা করে দাঁড়িয়ে আছেন। রাহিয়ান ভাইয়া আরও দুই কদম এগোতে পেছন থেকে আরফান ভাইয়া ডেকে উঠলেন,

—-” রাফিদ, নিধিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”

রাহিয়ান ভাইয়া জবাব দিলেননা আরফান ভাইয়ার কথার। আরফান ভাইয়ার মতো আমারও একই প্রশ্ন! আমাকে নিয়ে উনি এভাবে করে কোথায় যাচ্ছেন?
কিন্তু উনার আ/গ্নে/য়/গি/রি/র মতো জলজল করা মুখটার দিকে তাকিয়ে আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না আমি।

#চলবে____________________#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৬

৩১.

কই মাছের প্রান আমার! যেকোনো মুহূর্তে তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারে! দেয়ালের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট দশেক হতে চলল। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখে সেই যে দোয়া দুরূদ পাঠ করে যাচ্ছি তো করেই যাচ্ছি। ভ/য়ের দরুন চোখ জোড়াও খুলতে পারছি না! এ-কি রূপ রাহিয়ান ভাইয়ার? আমি বিস্মিত, সঙ্কিত! আজ যেন সব কিছুর উর্ধ্বে উঠেও হাসফাস করছি। উনার
র/ক্তি/ম চোখ জোড়া সেকেন্ডই আমাকে ভ//স্ম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এসবের পেছনে মূখ্য কারন টা কি সেটাই তো বুঝতে পারছিনা! কে বলতে পারে এই লোক এমন ভ/য়ং/ক/র ভাবে এতোটা রে/গে আছে কেন?

—-” আবির তোমার নাম্বার কেন নিলো?”

উনার তপ্ত নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর আঁচড়ে পড়লো। সেই সাথে বের হওয়া শান্ত হু/ম/কি সরূপ কথাটায় আমার ভেতরকার ভ/য়/টা আরও দশগুন বাড়িয়ে দিলো! ভুলে গেলাম আবির ভাইয়া মানে, আরফান ভাইয়া আমার থেকে নম্বর কেন নিলেন? কিসের উছিলায় নিলেন!

আমার সাথে এমন কঠিন স্বরে কেউ কখনো কথা বলে না! কিন্তু উনি বলছেন! আর তাই একটা সিম্পল কথা সিম্পল ভাবেও বলতে ক/ষ্ট হচ্ছে আমার। উষ্ণ-শীতল পরিবেশেও ঘামছি আমি। আজ ঘরের মধ্যে এসির পরিবর্তে ফ্যান ঘুরছে। তবে আজ এসির দু/র্গ/ন্ধে আমার গা না গোলালেও উনার অ/গ্নি/মূর্তি রূপে আমার হাত-পা ভে/ঙে আসছে। ঢোক গিললাম। কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছি না!

—-” কি হলো বলো? কেন নিয়েছে নাম্বার? আর কেন ও তোমার হাতের রান্না খেতে চাচ্ছে? তোমাদের এতো মধুর আলাপনটা কিসের আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা! বলো?”

উনার কঠিন স্বর ব্যক্ত রেখেই ভ/য়ং/ক/র রা/গ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন। আমি কেঁপে উঠে খামচে ধরলাম আমার ওড়না। উনাকে এতোটা ভ/য় পাওয়ার কোনো সঠিক কারন আমার জানা না থাকলেও এই মুহুর্তে এই মানুষটা কে পৃথিবীর সমস্ত ভ/য়ং/ক/র প্রানীর চেয়েও ভ/য়ং/ক/র লাগছে। খুব বাজে ভাবে ভ/য় পাচ্ছি উনাকে। এমন সময় যে চোখ তুলেও তাকাতে পারছিনা উনার দিকে। কেবল কাঁপছি আর হাসফাস করছি।

আমার চুপ থাকা উনাকে শান্ত করতে নয় বরং উনার রা/গে/র আ/গু/নে আরও ঘি ঢালার মতো কাজ করলো। উনি আমার বাহু চেপে ধরে উনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমি ব্যা/থা সহ্য করতে না পেরেই কুকিয়ে উঠে উনার টি-শার্ট খামচে ধরলাম। বড় করে টেনে নিঃশ্বাস ছেড়ে আহত নয়নে উনার দিকে তাকানোর দুঃসাহসও করে ফেললাম!

উনি রীতিমতো আ/গু/নে/র লা/ভা গলিয়ে ছাড়ছে চোখ থেকে। উনার চোখের ভাষা যেন বাংলার চর্যাপদের চেয়েও কঠিন। আমার ছোট্ট মাথায় ধারন করা সম্ভব হলো না! তবে অনেক হয়েছে। উনার এই রু/ঢ় বিহেভিয়ার অকারনে নিধি কিছুতেই সহ্য করবেনা! আরফান ভাইয়া যে কারনেই আমার থেকে নাম্বার চান না কেন? তার কৈফিয়ত নিশ্চয়ই আমি উনাকে দিবো না! একদম দিবো না! আমার আত্মসম্মানে আ/ঘা/ত করছেন উনি! খুব বাজে ভাবে, খুব বি/শ্রি ভাবে আ/ঘা/ত করছেন!

কথা গুলে ভাবতেই আমার আত্মসম্মান বোধ যেন মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠলো। আমি উনার কঠিন রূপকে সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করেই ঝাঁ/ঝা/লো কণ্ঠে বলে উঠলাম,

—-” আমার সাথে এভাবে কথা বলার কোনো অধিকার আপনার নেই! আমার বাবাও আমার সাথে কখনো এমন ভাবে কথা বলে না! আর আপনি? ছাড়ুন আমায়… আমার লাগছে! ছাড়ুন….(উনার বিপরীতেই চেঁচিয়ে উঠলাম)

উনার চাহনী কোমল হয়ে এলো। হাতের বাঁধনও আলগা হয়ে গেলো তৎক্ষনাৎ। উনার চোখে মুখে অপরাধ বোধের ছাপ ভাসতে লাগলো। আমাকে ছেড়ে দিয়েই উনি দু-পা পিছিয়ে গেলেন। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে হাত তুলে বাহুতে মালিশ করতে লাগলাম। উনার এমন আচরণের পর আর উনার দিকে মুখ তুলে তাকানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে জাগলো না মনে! মোটেই না!

আর দাঁড়িয়ে থাকা বোধহয় উনার ইগো তে আঁটকে এলো। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে গটগট করে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। আমি শেষ মুহুর্তে উনার যাওয়ার পানে তাকালাম। উনার প্রতি কোনো অনুভূতিই কাজ করছেনা আমার! কেবল মাথার মধ্যে একটা কথাই বেজে যাচ্ছে, উনার আচরন খুবই বাজে ছিলো!

—-” নিধি, কি গো কোথায় চলে গিয়েছিলে? কখন থেকে তোমাকে ডেকে ডেকে সবাই হয়রান হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তোমার তো দেখা মেলাই ভার। কোথায় ছিলে? আর রাহিয়ান বাবু কই? ও না তোমাকে ডাকতে গিয়েছিলো?”

বউমনি এক নাগাড়েই কথা গুলো বলতে বলতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি দৃষ্টি মাটিতে বিদ্ধ করে কিছুক্ষন আকাশ পাতাল ভাবলাম। অতঃপর মুখে জোরপূর্বক হাসির ছাপ ফেলে বললাম,

—-” আমি গার্ডেনেই ছিলাম। ওখানে আরফা.. আই মিন, আবির ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিলো। উনার সাথেই কথা বলছিলাম!”

—-” তোমাদের গার্ডেনে দেখা হয়েছিলো? আমি আরও ভাবলাম তোমার সাথে আবিরের কথা বলিয়ে দিবো! আচ্ছা তুমি এখানে হলে রাহিয়ান কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পেলাম না!”

—-” র..রাহিয়ান ভাইয়া? উনার ঘরেই হবেন?”

—-” ঘরে নেই। তাইতো তোমায় রুমে এলাম। ভাবলাম হয়তো এখানে থাকতে পারে!”

—-” না.. নেই এখানে!”

—-” আচ্ছা যাক ছাড়ো! নীচে চলো… নীচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। খানিক বাদে আসিফ আসবে। তোমার সাথে তো ওর এখনো আলাপ হয়নি।”

—-” আসিফ?”

—-” রিম্মির হবু হাজবেন্ড।”

—-” রিম্মি আপুর হাজবেন্ড? মানে আমার একমাত্র দুলাভাই?”

বউমনি মুচকি হেসে বলল,

—-” হু! তোমার একমাত্র দুলাভাই! এসো এসো?”

বউমনি আমার হাত ধরে নীচে নিয়ে এলেন। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। জমিয়ে আড্ডা হচ্ছে। আমি নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে নিলাম। রাহিয়ান ভাইয়া সত্যি নেই এখানে। বউমনি বলল,নিজের রুমেও নাকি নেই সে! তবে গেলো টা কোথায়?

—-” নিধি কাম কাম।”

হাত উঁচিয়ে ডাকলেন আরফান ভাই। উনার ডাক পেতেই বুকের মাঝখানটায় ধুক করে উঠলো। আচমকাই যেন রাহিয়ান ভাইয়ার অ/গ্নি/মূ/র্তি রূপটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে। কোনোমতে ঢোক গিলে ভেজা বেড়াল হয়ে রিম্মির আপুর পাশে গিয়ে বসলাম। আরফান ভাই এখনো তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি তার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হসার চেষ্টা করে চোখ ঝাপটে বোঝালাম “আমি এখানে বসে নিয়েছি।” আর ডেকে ঝামেলা বাড়াবেন না!”

ব্যস আমার মনের কথা মনেই রইলো। পাশ থেকে ভেসে আসলো রাহিয়ান ভাইয়ার নাকি সুরে কথা,

—-” এখানে দেখছি চোখে চোখে কথা হচ্ছে!”

আকষ্মিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। কথাটা কি উনি আমাকে মিন করলে? সবাই সবার দিকে ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছে। মূলত কৌতুহল মেটানোর দায়ে যে, ” এখানে কে কার সাথে চোখে চোখে কথা বলছে?”

আমি এখনও স্থীর হয়ে আছি। কোনো ভাবে নড়ছিও না। আর বাকি সবার দিকে তাকানো তো একদমই না!

বউমনি কি বুঝলো সঠিক বুঝলাম না। সে রাহিয়ান ভাইয়ার কথার প্রতিউত্তরেই জবাব দিলো,

—-” কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আবির কখন থেকে ওয়েট করছে তোমার। আর তুমি না নিধিকে ডাকার জন্য গিয়েছিলে? তারওর হঠাৎ কোথায় উধাও হলে?”

আমি ঢোক গিলে আঁড়চোখে তাকালাম উনার দিকে। উনি ভালো-মন্দ কোনো কথাই বললেন না। কেমন একটা নিশ্চুপ হয়ে আছেন। ধীরপায়ে এগিয়ে এসে আরফান ভাইয়ের পাশে বসলেন। কারোর দিকে কোনো রকম না তাকিয়ে বলে উঠলেন,

—-” একটা কল এসেছিলো ইম্পরট্যান্ট। মা/রা/মা/রি হয়েছে নাকি চৌরাস্তার মোড়ে। রূপ কল করে জানালো!”

“মা/রা/মা/রি/র” কথা শুনতেই বিচলিত হয়ে উঠলেন আরফান ভাই। বললেন,

—-” জাফরদের সাথে আবারও মা/রা/মা/রি? কি যে
ঝা/মেলা ওদের বুঝিনা আমি!”

—-” রাত্রি কে নিয়ে ওদের ক্ষো/ভ মিটেনি। তাই রি/ভে/ঞ্জ নেওয়ার তালে আছে। তাই বারবার আমাদের দলের লোকদের বিপাকে ফেলে ঝা/মে/লা করতে চায়। বড় ধরনের গ্যা/ঞ্জা/ম করতে চায় আরকি।”

—-” তুই একদম ওদের নিয়ে মাথা ঘামাবি না রাফিদ। আমি বুঝতে পারছি ওরা কি চায়? ওরা তোর সাথে ঝামেলা করার জন্যই এসব করছে। তুই বুঝতে পারছিস?”

রাহিয়ান ভাইয়া আবারও নিশ্চুপ রইলেন। জবাব দিলেননা। মনে হচ্ছে উনি আরফান ভাইয়ের বলা কথা গুলো মোটেই গায়ে মাখাতে চাচ্ছেন না। উনার মন বলছে,”যা হবার হবে! ওরা যদি ঝা/মে/লায় পড়ে ম/র/তে চায় তবে তাই হোক।”

বউমনি দু’জনের কথা থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

—-” এই অনেক হলো বাইরের কথা। কি যে বলছো ঠিক শুনতেও পারছিনা। রাখো তো তোমাদের প/লি/টি/কা/ল কথাবার্তা। এই রিম্মি?”

—-” হ্যাঁ বউমনি?”

—-” আসিফ কতদূর গো? আর ফাহিমটাই বা কোথায়? সেই কখন বের হলো, এখনো ফিরছেনা কেন বলো তো?”

—-” আসিফ অন দ্যা ওয়ে বউমনি। আর মিনিট দশেক হয়তো!”

—-” আচ্ছা এবার তবে ফাহিমকে কল করো? জিজ্ঞেস করো কোথায় আছে? দুপুরে খেয়েছি কি?”

রিম্মি আপু মাথা দুলিয়ে ডায়াল করলো ফাহিম ভাইয়ার নাম্বারে। আমি সবার কথা গিলছি বসে বসে। নিজের মুখে আর কিছুই বলছি না। মূলত ধ্যান করছি.. হঠাৎই ফোনে ম্যাসেজের টোনে চমকে উঠলাম আমি। ম্যাসেজের নোটিফিকেশন পুরো পাঁচ সেকেন্ড নিয়ে বাজলো। আমি কোনো মতে নোটিফিকেশন অফ করে সবার কথায় মনোযোগ দিবো কি? এর মাঝেই যেন ম্যাসেজ দাতার নম্বরটা দেখে চোখ আমার রসগোল্লা হয়ে গেলো। আজনাবির ম্যাসেজ!

—-” মিনতি ভরা আঁখি,
কে তুমি ঝড়ের পাখি~~
কি দিয়ে জুড়াই ব্যাথা~~
কি করে কোথায় রাখি!

চোখ ঝাপটে আবারও পড়লাম লেখাটা। লোকটা কবিতা লিখলো নাকি মনের দুঃখের বহিঃপ্রকাশ করলো?

৩২.

সন্ধ্যার দিকে নিতু আপুদের সাথে রাইও এলো। বাবার
অ/সু/স্থ/তা,বাবাকে হসপিটালাইজড করা ইভেন বাবাকে ইন্ডিয়া পাঠানো কোনো কিছুই রাই জানেনা। আমিও ওকে জানাতে পারিনি। হঠাৎ কার থেকে শুনে সোজা এখানে চলে এলো সে আন্দাজও আমার পক্ষে করা সম্ভব হলো না। আমাকে দেখতেই ইমোশনাল হয়ে গেলো! আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবার কথা বলে দু’ফোটা চোখের জলও বিসর্জন দিলো। সন্ধ্যা হতেই সবাই ছাদে উঠলো। আজ নাকি ছোট খাটো একখানা পিকনিকের আয়োজন করেছেন বাড়ির সবাই। আমি তো জানতাম-ই না! আর এই পিকনিকের খাতিরেই রাহিয়ান ভাইয়ার বাকি ফ্রেন্ডসরাও উপস্থিত হলেন এ-বাড়ি তে। ছাদে উঠতে উঠতে ভাবলাম সবাইকে হাতে হাতে সাহায্য করে দিবো। কিন্তু উঠে দেখি এ কি কান্ড! সব আয়োজন শেষ! বিকেল থেকে তো প্রত্যেকটা মানুষ নীচতলাতে থেকেই গল্পের আসর জমিয়েছে তবে এই আয়োজন কখন হলো?

রাই চারপাশ দেখছে আর চোখ জুড়াচ্ছে। সেই সাথে খানিক্ষন পর পর আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব কিছুর বর্ননা দিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি রাইকে শুনছিনা! আমার দৃষ্টি রাহিয়ান ভাইয়াকে ঘীরে আবদ্ধ। উনি সেই বিকেল থেকেই এখনও অব্দি আমার সাথে ‘অ থেকে আ’ অব্দি বলেননি! এমনকি চোখ তুলেও তাকাননি পর্যন্ত। আমি কতবার উনার সামনে,পেছনে, আশে-পাশে থেকে এসেছি গিয়েছি কিন্তু উনি এককথায় ভ্রুক্ষেপহীন! এমন একটা হাবভাব করে রেখেছেন যেন নিধি নামের কোনো মানুষ এই দুনিয়াতেই নেই! নেই নেই নেই! উনার এমন ইগনোর করা বিহেভিয়ারে আমার মেজাজ তুঙ্গে চড়ে যাচ্ছে। আরে বাবা উনাকে কে বোঝাবে যে উনি আমার সাথে যে আচরনটা করেছেন সেটা মোটেই সঠিক ছিলো না! ভুল ছিলো! আর আমি তার জন্যই তো উনার উপর রিয়াক্ট করেছি! তাহলে উনার এমন তোতাপাখির মতো মুখ বুঁজে থাকার মানে টা কি?

—-” কি মানে টা কি?”

রাইয়ের হাতে ঝাঁকুনি খেয়ে প্রান পাখিটা ছুটি নেওয়ার ঘোষনা করে দিলো। চমকে উঠে দু’হাতে কোনো মতে চেপে ধরে লক করে দিলাম কলিজাটা। বুকে দু’তিনবার ফু দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে দিলাম এক ধমক!

—-” কি সমস্যা কি তোর হ্যাঁ?”

আমার ধমক খেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো রাই। ইশশ, খামখা নিজের দোষে বেচারিকে ধমকাচ্ছি! নিমিষেই গলার স্বর কোমল করে নিলাম। রাইয়ের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আদুরে গলায় বললাম,

—-” কি হয়েছে বলনা?”

—-” ছাড় আামর হাত! অকারনে ঝাড়ি মা/র/ছিস তুই! যা কথা নেই তোর সাথে!”

—-” না না! সরি সরি কলিজা। এভাবে রা/গ করিস না! আমি তো এক বিশেষ ভাবনায় আঁটকে ছিলাম! আর হঠাৎ করে তুই ডেকে উঠলি তাই না বুঝেই বকে….”

—-” রাই? ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এদিকে এসো না?”

আমার কথার মাঝপথেই লম্বা দেখে একটা বাঁশ এঁটে দিলো রাহিয়ান ভাইয়া। রাইকে ছলেবলে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ধান্দায়!

—-” হ্যাঁ ভাইয়া যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই আমার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো রাই। আমি অসহায় মুখ করে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ওকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু রাই আর ফিরে তাকাল না। সব হয়েছে এই লোকের জন্য! উনাকে নিয়ে ভাবছিলাম বলেই তো রাইয়ের উপর ধমকে উঠলাম! আর এখন আবার উনি এলেন বলেই রাইকে মানাতে পারলাম না! সব জায়গায় এসে বাগড়া দিয়ে চলেছে।

প্রচুড় রা/গ হচ্ছে উনার উপর। এই মুহুর্তে রাইয়ের জন্য হলেও উনাকে দুই এক কথা শুনিয়ে দিতে হবে। হবেই হবে। বেশ দম নিয়েই উনার দিকে তেড়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেলাম। কিন্তু উনি আবারও টাইমিং করে আমার হাতেই আমাকে চড় খাওয়ার পায়তারা করে আমার সামনে থেকে চলে গেলেন! গেলেন তো গেলেন” কিন্তু কোথায় গেলেন? মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাওয়া! এটা কি মানুষ না জ্বীন!

আমার ফোন বাজছে! কিন্তু ফোন তো আমার হাতে না! বাজছে কোথায়? চারপাশে চাতক পাখির মতো চোখ বুলালাম। কিন্তু নজরে বিশেষ কিছুই এলো না! চটপট করে নীচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি অব্দি আসতেই লোডশেডিং হয়ে গেলো। চারপাশে সঙ্গে সঙ্গে ভূতুড়ে পরিবেশের মতো হয়ে উঠলো। আমি ভ/য়ে ছাদের দরজার সাথে সিঁটিয়ে গেলাম। আশেপাশে, সামনে, পেছনে কোথাও একটা মানুষ দেখছি না। শুধু তাদের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভ/য়ে আমার হাত পা কাঁপছে! কাউকে যে ডাকতেও পারছিনা! আর ওদিকে মনে হচ্ছে যেন আমার ফোনটা এখনো বেজেই যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে! ম/রা/র ঘাট_____ সব দোষ ঐ কলদাতার! বেটা একবার যদি কলটা পিক করতে পারি তবে তোকে আজ খাইছি আমি….

আর ভাবার সময় মিললো না আমার। প্রিয় প্রান পাখিটা এক টানে বেরিয়ে এসে হাতের ভাজে আঁটকে গেলো। কারোর হাতে হেঁচকা টান খেয়ে স্কার্ট সামলে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। ভ/য়ে/র দরুন ঘাম ছুটে গেলো! হাত পা খুব বিশ্রী ভাবে কেঁপেই যাচ্ছে। দোয়া-দরুদ যা ছিলো সবই পড়া শেষ কিন্তু প্রশ্ন হলো এমন অমানবিক কাজটা সামনে থেকে করছে কে? ধরাম করে বারি খেয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেলাম! নিজের হার্টবিটের শব্দে যেন কানটা এবার খসে পড়বে আমার। চোখ জোড়া খোলার সাহস না হলেও মুখ খোলার সাহস আছে! এমন দুঃসাহসিক ব্যাক্তিরও তো বোঝা উচিৎ সে কাকে নিয়ে এসেছে!

বিসমিল্লাহ বলে যেই না চেঁচাবো ওমনি দেওয়াল ভেঙে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার দশা হলো। মানুষ টা আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো! আমি কেঁপে উঠে দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরলাম আমার স্কার্ট। রা/গে, ঘৃ/না/য় চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে গাল ভেজালো মানুষ টার। সঙ্গে সঙ্গে সে ছেড়ে দিলো আমায়। আমি রা/গে ফুঁসতে ফুঁসতে হাত চালিয়ে দিলাম অন্ধকারেই! কিন্তু আমার হাত তার শরীরে লাগার আগেই সে ক্ষপ করে ধরে নিলো। আমায় হাত ধরে তার দিকে টেনে নিয়ে আবারও যেতে লাগলো কোথাও একটা। আমি অন্ধকারে পা বাড়ালেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছি। কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ ঝলমল করে উঠলো মহল। হঠাৎ আলো এসে চোখে পড়তেই চোখে সহ্য হলো না! একহাতে চোখ আড়াল করতেই মনে হলো মানুষ টার কথা! চোখ থেকে হাত সরিয়ে তার দিকে তাকাতেই ভেতরটা ধুক করে উঠলো! চারপাশ শূন্য হয়ে আছে।

আমি ব্যতীত এপাশ ওপাশে একটা মশাও নেই!! হঠাৎ হাতের দিকে চোখ পড়তেই ছোট একখানা চিরকুটের দেখা মিললো। বড় কৌতুহল নিয়েই মেলে ধরলাম চিরকুট টা! কিন্তু আমাকে হতাশ করে দিয়ে চিরকুট টা কেবল ফাঁকাই রয়ে গেলো। উল্টো দিকে ঘুরিয়ে আবিষ্কার করলাম ছোট একটা সেন্টি খাওয়া ইমোজি! এটা আবার কি ধরনের ফাজলামি?

রেগেমেগে জায়গা ত্যাগ করে নিজের রুমে চলে এলাম। মানুষ টা কতটা বিকৃত মস্তিষ্কের ভাবতেই রা/গে পুরো দুনিয়া ওলট-পালট কর ফেলতে ইচ্ছে করছে।

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here