প্রেয়সী পর্ব – ১৭+১৮

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃmoumita
#পর্বঃ১৭

৩৩.

—-” এতোটাও বেখেয়ালি হওয়া ঠিক নয়, যেখানে নিজের সম্মান খোওয়াতে হয়! ড্রেস টা চেঞ্জ করে তবেই রুম থেকে বের হবে!”

তিড়িং মে/রে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলাম! অস্বস্তিতে শরীরের মধ্যে যেন বিদ্যুৎ ছুটতে লাগলো। আয়নার সামনে গিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখতেই চোখে পড়লো টি-শার্টটার পেছনের হুক গুলো বেকায়দা ছিড়ে গেছে! একদম নাজেহাল অবস্থা। লোকটার আচরণ টা খারাপ থাকলেও উনি আমার জন্যই এসব কিছু করছেন! আমার বেখেয়ালির জন্যই এতবড় শা/স্তি দিয়ে গেলেন! নিজের এহেম অবস্থায় কান্না পেয়ে যাচ্ছে আমার। এতোটা অন্যমনষ্ক আমি কি করে হতে পারি? আর ঢং করে পিঠের উপর ঝেকে থাকা চুলগুলোও সামনে এনে রেখেছি! না জানি কে কে দেখলো আমার এই করুন দশা!

এটা তার দুই নম্বর চিরকুট। স্কার্টের সাথেই ঝুলছিলো। প্রথমে না দেখলেও পরে চোখে পড়লো। রুমের ভেতর পায়চারি করতে করতে বারবার পায়ে বেঁধে খোঁচা লাগছিলো। তাই বিরক্ত হয়েই বেডের উপর বসে দেখতে লাগলাম কি বাঁধছে পায়ে? অতঃপর এই কাহিনী। প্রথমেই খোলা দরজাটার দিকে তাকিয়ে কারোর থাকার খোঁজ চালালাম! নাহ্, কেউ নেই!

চটজলদি দরজাটা লাগিয়ে একটা সাদা রঙের চুরিদার নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেলাম! চেঞ্জ করতে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপত্তি। যা চোখে পড়লো তা যে কখনো দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি! গলার কাছে হাত লাগছেই মরিচের মতো জ্ব/লে উঠলো! বড় কৌতুহল নিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই স্পষ্ট কামড়ের দাগ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। তৎক্ষনাৎ নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো আমার। একি অবস্থা হলো? দেয়ালের সাথে লেপ্টে গিয়ে খিঁচে থাকলাম কতক্ষণ। আমার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে আসতেই মুখ চেপে ধরে কেঁদে উঠলাম! এই মুহুর্তে নিজেকে যে কতটা ঘৃ/ণ্য লাগছে তা কেবল আমিই জানি! কাউকে সাহায্য করার জন্য কেউ এমন পথ কি করে বেছে নেয়? কতটা বাজে লোক সে!! আমার গলার এই অবস্থা যদি কেউ বিন্দু মাত্র আচ করে তবে আমাকে নিয়ে তাদের ধারনা কতটা নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসতে পারে!! ছিঃ____

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেলো! পারছিনা ব্যাপার টা মেনে নিতে! এই অবস্থায় সবার সামনে কি করে যাই? না যাবো না! নিজের রুমেই বসে থাকবো। কিছুতেই কারোর সামনে যেতে চাই না আমি। তাছাড়া কে এমন কাজ করলো সেটাও আমি জানি না! এতো গুলো মানুষের মধ্যে কে সে? আজ তো বাড়িতে কত মানুষ! রাহিয়ান ভাইয়ার সব ফ্রেন্ডস্-রা আজ উপস্থিত! তবে কি তাদের মধ্যে কেউ? কিন্তু কে?

এখানে বসে কাঁদলেও যে চলবে না! চোখে মুখে ভালো করে জল ছিটিয়ে বাইরে এলাম। গলায় কামড়ের দাগ নিয়ে যেভাবে কারোর সামনে যাওয়া যাবে না সেভাবেই নিজের রুমে বসে থাকলেও চলবে না! মানুষ টা কে খুঁজে বের করতে হলেও যে বাইরে বের হতে হবে। তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসলাম! অল্প সল্প মেকাপের নীচে দাগটা ঢেকে ফেলার তীব্র প্রচেষ্টা চালালাম। এক পর্যায়ে ঢেকেও গেলো দাগটা। কিন্তু মনের দাগটা কিছুতেই মেটাতে পারছিনা! বারবার মনে হলেই কান্না এসে যাচ্ছে। চিরুনি নিয়ে অর্ধেক চুল এনে দাগের উপর রেখে মেকাপের জায়গাটাও ঢেকে ফেললাম! আর বাকি চুল গুলো পেছনে ছেড়ে দিলাম! কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটোতে লাল মরিচের মতো আভা ফুটেছে। জানি রঙটা ধীরেধীরে উঠে যাবে তবে বেশ সময় নিয়ে। তাই চোখের নীচে গাঢ়ো করে কাজলের রেখা দিলাম! ঠোঁটে বসালাম হালকা লিপস্টিক। ব্যস আর কিছুই দিতে ইচ্ছে হলো না। নিজেকে আয়নার মধ্যে থেকে দেখে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা নিয়েই বের হয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলাম। এতকিছুর মাঝে তখন কলের কথা পুরোপুরি ভুলেই গেলাম! ছাদের দরজায় পা রাখতেই প্রথমে চোখ পড়লো আরফান ভাইয়ার দিকে। মনেমনে ঠিক করলাম যার চাহনিতে লোভাতুর ভাব থাকবে তবে সেই হবে আসল কালপ্রিট। আরফান ভাই আমাকে দেখতেই মুচকি হাসলেন। আমাকেও হাসতে হলো জোরপূর্বক। আমি উনাকে উপেক্ষা করে নিতু আপুদের দিকে যেতে নিলেই উনি ডেকে উঠলেন পেছন থেকে। আমাকে অগত্যাই দাঁড়াতে হলো,সেই সাথে মুখে রাখতে হলো অনিচ্ছাকৃত হাসি।

—-” আধঘন্টা ধরে তোমার নিখোঁজ হওয়ার খবর যেন ছাদটাও দিচ্ছিলো বারবার! হঠাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলে?

আরফার ভাইয়ের কন্ঠ খুবই স্বাভাবিক। যেমনটা হলে সন্দেহ বাতিক হবেনা! আমি বিরস মুখে জবাব দিলাম,

—-” একটা কল এসেছিলো। তাই রুমে গিয়েছিলাম!”

—-” মুড অফ মনে হচ্ছে?এভরিথিং ইজ ফাইন?”

—-” হু!”

—-” বাই দ্য ওয়ে একটা কথা কিন্তু না বললেই নয়! হোয়াইটে তোমায় ভীষণ কিউট লাগছে!”

আমি আঁড়চোখে উনার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করলাম! নাহ্ ঠিকই আছে। আমি নড়েচড়ে উঠে মাথা দুলিয়ে জবাব দিলাম,

—-” ধন্যবাদ ভাইয়া।”

আমার কথায় হাসলেন আরফান ভাই। আমি বিরস মুখে চেয়ে থেকেই ভাবতে লাগলাম,

—-” কাউকে ধন্যবাদ দিলে যে কেউ হাসে সেটা প্রথম দেখা আমার নিষ্পাপ চোখ!”

পেছন থেকে কথা বলতে বলতে হাজির হলেন রূপ ভাইয়া আর জিয়ান ভাইয়া। আমাকে আরফান ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারাও হাসি মুখে কথা বললেন। জিয়ান ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন,

—-” নিধি কেমন আছো? তোমার বাবা এখন কেমন আছেন?”

রূপ ভাইয়া বললেন,

—-” সব ঠিকঠাক তো নিধি?”

আমি মাথা নাড়লাম। “হু,হা” করে দু’জনেরই প্রশ্নের জবাব দিয়ে ছাদের শেষ মাথায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মনটা বিষন্ন ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে যেন। যদি সবার মুখের ছাপই খুব স্বাভাবিক থাকে তবে কে করলো এমন কাজ?

—-” কোথায় চলে গিয়েছিলিস রে? কতক্ষণ ধরে খুঁজছি তোকে! বউমনি, নিতু আপু, রিম্মি আপু সবাই খুঁজছিলে তোকে।”

রাইয়ের কথা গুলোতে বিশেষ ভাবাবেগ ঘটাতে পারলাম না নিজের। চুপ করেই রইলাম। রাই হয়তো বুঝলো কিছু। তাই গলার স্বর কোমল করে আমার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,

—-” মুড অফ?”

—-” না!”

—-” তবে এভাবে আছিস কেন? দেখ দোস্ত, তোর মুখ থেকে কারনে হোক বা অকারণে, দু-চারটা বকা না খেলে যেন মনেই হয়না তুই জীবিত আছিস! কি অদ্ভুত না বল?”

—-” হু!”

—-” কি রে বলনা না?”

—-” হু বললাম তো!”

—-” কি হয়েছে বলতো নিধু? সব ঠিকাছে তো? অর্নব ভাইয়ের সাথে কোন ঝা/মে/লা??”

আমি সোজা হয়ে রাইয়ের দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। হৃদের ব্যাপারটা রাইকে বলা হয়নি! বললে হয়তো অন্তত ওর ব্যাপারে কোন সমাধান আসতো। আমাকে সিরিয়াস মুডে দেখতে রাইও নড়েচড়ে দাঁড়ালো। চিন্তান্বিত কণ্ঠে বলল,

—-” সব ঠিক নেই তাই না? মনেই হচ্ছিল এমন কিছু! অর্নব ভাইয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে?”

আমি মাথা নাড়লাম। রাই অসহায় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

—-” কি হয়েছে?”

৩৪.

রাত ১০ টা বেজে ২০ মিনিট। পুরো ছাদ টা আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় বিশেষ হয়ে আছে। প্রকৃতির ঝিরিঝিরি বাতাসে মনে এক অন্যরকম শান্তি স্থাপিত করে যাচ্ছে। ছাদের অধিকাংশ ফুলের গাছ গুলো থেকে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। ইশশ! মাতাল হতে যে বড্ড ইচ্ছে করছে। সবাই পাটির উপর এলোমেলো হয়ে বসেছে। রূপ ভাইয়া, দিপু ভাইয়া আর জিয়ান ভাইয়া তিনজনে তেড়ে বেঁকে শুইয়ে পড়েছে। তাদের পাশ থেকেই আরফান ভাইয়া আর রাহিয়ান ভাইয়া আসন পেতে বসেছে। রাহিয়ান ভাইয়ার গা ঘেঁষেই আবার অরিন আপু আর অনন্যা আপু বসেছেন। তারপর হলো আমাদের পারিবারিক লাইন, মানে ফাহিম ভাইয়া,আসিফ ভাইয়া, রিম্মি আপু, বউমনি, আমি আর রাই। রাইকে জোর করে রাখা হয়েছে। আমিই রেখে দিয়েছি। ও থাকলে মনে বেশ জোর জোর একটা ভাব থাকে। অন্যথা প্রায় সময়ই নিজেকে এক অসহায় কালা কাউয়া বলে ঠাহর হয়।

আমি প্রকৃতির গন্ধ নিতে ব্যস্ত আছি। এই মুহুর্তে যে কতটা ভালোলাগা উপভোগ করছি তা কেবল আমিই জানি! মন ভরে নিঃশ্বাস নিলেই যেন জীবনের সব দুঃখ কষ্টগুলো চাপা পরে যাচ্ছে। সেই দুঃখ গুলোকে ছাপিয়ে আত্মা শান্তি নিয়ে ছোটাছুটি করতে পারছে। সে এক অদ্ভুত ভালোলাগা মনে বাসা বেঁধে নিয়েছে। আমি অনুভব করতে পারছি।
আমার ভাবনার জগতে হাতছানি পড়লো রাহিয়ান ভাইয়ার গিটারের টুংটাং আওয়াজে। আমার চোখ জোড়া আপনাআপনিই উনার চোখের উপর পড়লো৷ মুহুর্তেই চোখ বুঁজে নিলেন উনি। আমি শঙ্কিত মনে উনার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। পাশ থেকে বউমনি আর আসিফ ভাইয়া বলে উঠলেন,

—-” রাহিয়ান একটা গান ধরো!”

উনাদের কথা রাহিয়ান ভাইয়ার কান অব্দি পৌঁছতেই উনি চোখ মেলে তাকালেন। মৃদু হেসে বললেন,

—-” খাওয়া দাওয়া বেশি হয়ে গিয়েছে বউমনি। এখন গান! পসিবল হচ্ছে না গো!”

আসিফ ভাইয়া মেনে গেলেও বউমনি মানলো না। রাহিয়ান ভাইয়ার বক্তব্য নেহাতই অযুহাত ভেবে বউমনি বারবার বলতে লাগলো গান গাওয়ার কথা। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়া উনার বক্তব্যে স্থির। গাইবেন না মানে গাইবেন না। ব্যাস! পাশ থেকে সবাই খুব করে জোরাজোরি করতে লাগলো কিন্তু উনি কারোর কথাই কানে তুললেন না। তাই সবাই অধৈর্য্যে হয়েই হাল ছেড়ে দিলেন। দিপু ভাই আরফান ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

—-” ওকে ছাড়, তুই একটা গান ধর!”

আরফান ভাই দিপু ভাইয়ার প্রস্তাব শুনে যেন চমকে গেলো। অসহায় কন্ঠে বারবার না করতে থাকল। বিরক্ত কন্ঠে রাই বলে উঠলো,

—-” ধুর! কাউকে গান করতে হবেনা! গল্প করছিলেন তাই বরং করেন।”

রাই এভাবে মোটা স্বরে কথা বলে উঠবে কেউ ভাবতেও পারেনি! রূপ ভাইয়া রাইয়ের এমন গুনে মোহিত হয়েই বলল,

—-” একদমই তাই। রাই কিন্তু ঠিকই বলেছে।”

রূপ ভাইয়ার কথায় সবাই গোলগোল চোখে তাকালো তার দিকে। এক শ/ত্রুপক্ষ অন্য শ/ত্রুপক্ষ কে সাপোর্ট করে ফেললো। কথাটা যতক্ষণ রূপ ভাইয়ার মাথায় ঢুকলো ততক্ষণে দিপু,জিয়ান,অরিন সবার হাতেই কম বেশি কয়েক ঘা খেয়ে পেঁচার মতো মুখ করে বসলো।

আমি তাদের কান্ড দেখে না হেসে পারলাম না। আমি ফিক করে হেসে ফেলতেই বাকিরাও পুরো ছাদ কাঁপিয়ে হেসে উঠলো।

—–” তোর চোখ গুলো এতো বাচাল কেন?
নীরবে অনর্গল কথা বলে!
এতো মাতাল হয় কিভাবে?
শুধু জাদুর মতো আকর্ষণ করে!”

বুকের ভেতর টা ছ্যাঁত করে উঠলো। লোকটা কি সারাদিনই এসব কবিতা নিয়ে পড়ে থাকে?

—-” না, মাঝেমধ্যে গানও গাই! আজ ভীষণ ইচ্ছে করছে গান গাইতে। যদি তুমি পারমিশন দাও তবে একটা গান নিশ্চিত গাইবো।”

আবারও মনে হলো বুকের ভেতরটায় ধরাম করে বারি বসালো কেউ। লোকটা ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে আর আমি মনে মনে কথা বলছি! তবুও সে আমার প্রশ্ন মোতাবেক উত্তর কি করে দিচ্ছে?

—-” পারমিশন পাওয়া যাবে?”

কি ঢং দেখো? যেন আমার অনুমতির জন্য তিনদিন ধরে পেট শুঁকিয়ে ম/র/ছে। আমি বিরক্ত হয়েই টাইপ করতে লাগলাম,

—-” আপনার মন আপনার ইচ্ছে! আমাকে কেন ঢং করে প্রশ্ন করছেন পারমিশন মিলবে কিনা? আপনি যা খুশি করবেন তাতে আমার কি হ্যাঁ?”

—-” মিল গায়া পারমিশন!”

লেখাটা পড়তেই হাসি পেয়ে গেলো আমার। লোকটা সত্যি পাগল বটে। ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে সবার আড্ডায় যোগ দেওয়ার জন্য তৈরি হলাম। এমন মুহুর্তে রাহিয়ান ভাইয়া গলায় সুর তুললেন। গিটারে টোন তুলে কিছুক্ষণ গুন গুন করে হঠাৎ গেয়ে উঠলেন,

—-” Dil,
badal bane….
Aankhein,
behne lagein….
Aahein,
aise uthein…..
Jaise,
Aandhe chale….
Toh phir aao,
Mujhko sataao….
Toh phir aao,
Mujhko rulaao….
….ooo ooo ooo….
Aabhi jaao,
Aabhi jaao.
Aa bhi jaao,
Aa bhi jaao.
Aa bho jaao,
Aa bhi jaao.
Aa bhi jaao,
……ooo ooo ooo…..
Gham,
Le ja tere….
Jo bhi,
Tu ne diye….
Ya phir,
Mujhko phir
In ko,
Kaise sahein….
Toh phir aao….
Mujhko sataao….
Toh phir aao
Mujhko rulaao
…ooo ooo ooo…
Aa bhi jaao,
Aa bhi jaoo
Aa bhi jaao,
Aa bhi jaao
Aa bhi jaao,
Aa bhi jaao
Aa bhi jaao,
….ooo ooo ooo….

Aab to,
Iss manjar se
Mujhko,
Chale jana hain….
Jin raahon,
Pe mera yaar hai…
Unn raahon ko,
Mujhe paana hai…

Toh phir aao,
Mujhko sataao….
Toh phir aao,
Mujhko rulaao….

….ooo ooo ooo….
Aabhi jaao,
Aabhi jaao.
Aa bhi jaao,
Aa bhi jaao.
Aa bho jaao,
Aa bhi jaao.
Aa bhi jaao,
……ooo ooo ooo…..

গান শেষ হতেই করতালিতে ধ্যান ভাঙলো আমার। আঁড়চোখে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। গান গাইলো না মুক্ত ঝড়ালো তা নিয়ে আমার মস্তিষ্ক বেশ টানাপোড়নে আঁটকে গেলো। এতক্ষণ মানুষটা চোখ বুঁজেই গাচ্ছিলো! উনি চোখ মেলতেই উনার চোখে চোখ পড়লো। বেশিক্ষণ চেয়ে থাকার দুঃসাহস আমার হলো না! তৎক্ষনাৎ মাথা নীচু করে নিলাম! পাশ থেকে সবাই উনার গানের গলার প্রশংসায় পঞ্চমুখ! রাই আমাকে সমানে খোঁচাতে লাগলো। আমি বিরক্ত হয়ে ওর দিকে ফিরে তাকাতেই ও ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

—-” কি মা/রাত্মক গাইলো দোস্ত! আমি তো ফিদা।”

#চলবে____________________#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৮

৩৫.

হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই আমার ফোনটা হাতে তুলে নিলাম! কিছুক্ষণ আগে অপরিচিত লোকটার নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজ গুলো পূনরায় স্ক্রল করতে লাগলাম! ভেতরটা ক্রমশই অস্থির হচ্ছে। ম্যাসেজ গুলো স্ক্রল করেও যেন শান্তি হচ্ছে না! তাই উত্তেজিত হয়েই টাইপ করলাম তার নাম্বারে।

—-” আপনার হঠাৎ গান গাইতে কেন ইচ্ছে হলো?”

সেন্ড অপশনে ক্লিক করে আঁড়চোখে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম! এখন শুধু দেখার বাকি উনি ফোনটা হাতে তুলেন কি না! অস্থিরতায় হাসফাস করছে মনের ভেতর। টানা দুই মিনিট পেরিয়ে যেতেও যখন দেখলাম রাহিয়ান ভাইয়া ফোনটা বের করছেন না তখন অধৈর্য্য হয়েই নিজের ফোনটা চেক করলাম! ম্যাসেজ টা গেলো কি গেলো না? নাকি উত্তেজনার বসে অন্য কাউকে সেন্ড করে দিয়েছি! একদম নিখুঁতভাবেই অপরিচিত লোকটার নাম্বার টা চেক করলাম! আর তার সাথে ম্যাসেজ গুলোও। সবই ঠিকঠাক। ম্যাসেজও সময় মতো গিয়েছে তবুও কেন উনি ফোনটা হাতে তুলছেননা! আমার ভাবনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে উনি নিশ্চিত ফোনটা বের করবেন।

আরফান ভাইয়া, রূপ ভাইয়া,অরিন আপু আর রাহিয়ান ভাইয়া চারজন মিলে কোনো এক জরুরী আলাপে ব্যস্ত আছেন দেখা যাচ্ছে। বাকিরা সবাই যে যার মতো করে কথা বলছেন! মনে হচ্ছে না রাহিয়ান ভাইয়া ফোনটা বের করবেন! উনি যদি এই মুহুর্তে ফোন বের নাও করেন অথবা ম্যাসেজের রিপ্লাই নাও দেন তবুও আজ অনেক ধোঁয়াশা কেটে যাবে। হয়তো এটাও হতে পারে যে উনি ফোন বেরই করলেননা অথচ ম্যাসেজের রিপ্লাই ঠিকই আসলো! নিজের ভাবনাকেই যেন ধীরে ধীরে বাস্তবতায় রূপ পেতে দেখছি।

—-” নিধিইইইই ওঠ না এবার! জলদি আমার সাথে রুমে চল! আয়….”

রাইয়ের হাঁকে চমকে উঠলাম। মেয়েটা ঠিক সময় মতো হারিকেনের আলো নিভিয়ে দিতে ওস্তাদ! গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে ওকে ধমক দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত হলাম ঠিক এমন সময়ই আমার ফোন ভাইব্রেট করলো। চোখ জোড়া আমার আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো। অপরিচিতর ম্যাসেজ এসেছে। খুশিতে মনটা নেচে উঠতে চাইলেই আমি গলা চেপে ধরে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়া তো এক ভাবেই বসে আছেন। তার নির্বিকার ভঙ্গিতে ক্ষনিকের জন্য হতাশ হলেও পরক্ষণেই আবারও খুশিতে মনটা নাচ পাড়লো। মনে স্বস্তি নিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! মনকে শান্তনা দিয়ে বেঝালাম, “অপরিচিত লোকটা তবে উনি নন।”

—-” নিধু উঠবি প্লিজ!”(চিল্লিয়ে)

রাইয়ের চিল্লানিতে লাফ মে/রে দাঁড়িয়ে গেলাম! বাকি সবাইও অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো। আমি ওর মুখ চেপে ধরে সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে সোজা রুমে চলে এলাম! রুমে ঢুকেই গেট টা লক করতে করতে অপরিচিতর ম্যাসেজে চোখ বুলালাম!

—-” তুই ভালোবাসা মাখানো শেষ দৃষ্টি,
আমি প্রতিটি ক্ষনে অপেক্ষার প্রহর গুনি ভালোবেসে মাতাবো বলে…..!
ইহা আমার কল্পনা স্রোত শুধু,
তবুও চলতে থাকুক অবিরত।

কি ভাবছো? ছেলেটা ভীষণ পাগলাটে টাইপের? কবিদের মতো শুধু কবিতা শুনিয়েই যাচ্ছে তোমাকে! জানো আমি নিজেই বড্ড বেশি অবাক! এর আগে আমি কখনোই কবিতা আবৃত্তি করিনি! কিন্তু এখন! রোজ…তিনবেলা শুধু কবিতাই লিখে চলেছি! কি এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে আমার মাঝে! আমি তোমাকে তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছি নীলাদ্রিতা।”

আমি নীরব দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকালাম! আমার সমস্ত অস্থিরতা কেটে গিয়ে পূনরায় সেই অস্থিরতা গুলো আবারও আমার শরীরের মাঝে বিচরণ করে চলেছে! মানুষটা অদ্ভুত। ভীষণ অদ্ভুত!

—-” নিধি!”(চিল্লিয়ে)

মেয়েটা আজ বড্ড বেশি চেঁচাচ্ছে। রে/গে গিয়ে ওর কটমট চোখে তাকাতেই চুপসে গেলো রাই। কাচুমাচু করে বলল,

—-” মা কল দিচ্ছে বারবার। বাবার নাকি প্রেশার বেড়েছে! আমার বাসায় ফিরতে হবে!”

—-” কি বলছিস?”

—-” হ্যাঁ রে! এই যে দেখ.. এখনও কল দিয়ে যাচ্ছে! কি করি বলতো? ভাইয়াও যে বাসায় নেই! মা ভীষণ চিন্তা করছে রে! আমাকে যেতেই হবে!”

আমি করুন চোখে তাকালাম রাইয়ের দিকে। এই মুহুর্তে ওকে আঁটকানো কিছুতেই ঠিক হবে না! কিন্তু এতো রাতে ওকে একাই বা ছেড়ে দেই কি করে? রাই অস্থিরতায় হাস ফাঁস করছে! আমার মুখ চেয়ে কিছু বলছে না পাছে আমি বকে দেই এই ভেবে! বাবার চিন্তা যে কতটা মা/রা/ত্ম/ক তা আমার চেয়ে আর কে ভালো বলতে পারবে!

—-” আচ্ছা তুই এখানে বস আমি তোর যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করছি!”

আমি যেতে নিলে রাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমায় কোথাও যেতে বারন করে বলল,

—-” তোর কোনো ব্যবস্থা করতে হবে না! আমি এই সামনে থেকেই একটা সিএনজি ধরে ঠিক চলে যাবো!”

—-” কি বলছিস কি? পাগল হয়ে গেলি নাকি? আমি এই রাতে তোকে একা ছেড়ে দিবো তুই ভাবছিস কি করে বলতো? আবার বলছিস সিএনজি করে চলে যাবি! হাউ ষ্টুপিড!”

রাই বুঝতে পারলো বুঝি! তাই আবারও মাথা নীচু করে নিলো। আমি চটজলদি দরজা খুলে সোজা ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম! কিন্তু ছাদ অব্দি পৌঁছানোর আগেই পেছন থেকে ডাক পড়লো বউমনির। বউমনিকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই আমি একই স্পিডে ফেরত গেলাম তার কাছে। খানিকক্ষণ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বউমনির হাত ধরে বললাম,

—-” আমি তোমাকে খুঁজতেই ছাদে যাচ্ছিলাম গো!”

বউমনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আমাকে খুঁজতে?”

—-” হু! একটা প্রবলেম হয়েছে গো বউমনি! একটা আর্জেন্ট হেল্প দরকার!”

—-“কি হয়েছে? সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?”

বউমনি বিচলিত হয়ে উঠতেই আমি তাকে শান্ত করে রাই এর ব্যপারটা খুলে বললাম! বউমনি সবটা শুনে তৎক্ষনাৎ সলিউশনও বের করে দিলো। কিন্তু এই সলিউশনটা আমার প্রথম দফায় পছন্দ না হলেও পরক্ষণে রাইয়ের কথা ভেবে মেনে নিতে হলো। রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে রাইকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু রাই বাঁধালো আরেক বিপত্তি! সে বলছে “এতখানি পথ আমি একা রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে যেতে পারবো না!আমার প্রচুর আনইজি লাগবে!” তাই বাধ্য হয়ে বাধ্য মেয়ের মতো আমিও উঠে পড়লাম তার গাড়িতে। মেয়েটা সত্যি বড় তার ছিঁড়া। কবে যে একটু বুঝবে কে জানে!

৩৬.

রাইয়ের বাসায় ওকে নামিয়ে দিয়ে ফিরতে ফিরতে আমাদের রাত ২-টা বাজলো। ফিরতে ফিরতে বলতে এখনো মাঝপথেই আছি! বাড়ির গেট দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়ে উঠেনি! তখনকার আকাশটা তাঁরাদের মাঝে বেশ ঝকমক করলেও এখন বেশ মেঘলাটে হয়ে আছে! চোখের সামনে দূরবীন রাখলেও একটা তাঁরারও দেখা মিলবে না! সেই সাথে বারে বারে দমকা হাওয়ারও আচ পাচ্ছি। চুপচাপ কোনো কথা না বলেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন মহাশয়। সেই দুপুরের পর থেকে এখনো অব্দি একটা কথাও আওড়ালেন না আমার সাথে! আচ্ছা উনি কি রাগ করে আছেন আমার উপর? একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো? ধুর বাবা! আমি জিজ্ঞেস করলেই বা কি? উনি কি ধিতাং ধিতাং ধিন-তানা করে আমাকে বলবেন, “হ্যাঁ নিধি আমি তোমার উপর মা/রা/ত্ম/ক রেগে আছি!ইউ স্যুড এপ্যোলাইজ টু মি”

উফফ! না বললে নাই! উনার কথা বলার ধরন শুনলেই তো আমি আচ করতে পারবো যে উনি রেগে আছেন কি নেই!

—-” উহুম উহুম!”

গলা টা ভালো করে ঝেড়ে নিচ্ছি! আসলে তেমন কিছুই না! এমন করার মানে হলো আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই,আর এই মুহুর্তে আমি উনার ফুললি এটেনশনও চাই তাই সংকেত দিচ্ছি! উনি যদি বুঝেন তাহলে তো আর নেক্সট পদক্ষেপ নিতে হবেনা আর যদি না বুঝেন তবে যে নেক্সট পদক্ষে….

—-” কিছু বলবে?”

গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন উনি! আমি তো অবাক। না দেখেও বুঝতে পারলাম অবাক-খুশিতে আমার চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির আকার নিয়েছে। আমি চোখ ঝাপটে উনার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে বললাম,

—-” আ..আপনি কি… না মানে! আ..আমি কি… স..সরি সরি! (ইশশ কি যা তা বকছি! শাটআপ নিধি!) বলছিলাম যে,…”

—-” হোয়াট!”

উনার হোয়াট বলার ভঙ্গি যেন ইট তুলে ছুঁড়ে মা/রা/র মতো লাগলো! আমি চমকে উঠে গাড়ির সিটের সাথে লেপ্টে গেলাম! অকারনেই আবারও ভ/য় পাচ্ছি এই লোকটাকে! কি যে হচ্ছে! যেন নিজের উপর কোনো কন্ট্রোলই নেই! চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম! নিজের এমন আচরণে যে আমি নিজেই চরম বিরক্ত! বিরক্ত বিরক্ত বিরক্ত!

—-” এনিথিং রঙ?”

আমি ঝড়ের বেগে দু’পাশ করে মাথা ঝাঁকালাম। আমতাআমতা করে বললাম,

—-” এভরিথিং ইজ ফাইন!”

—-” আই থিংক এভরিথিং ইজ নট ফাইন! গলার মধ্যে লাভ বাইট নিয়ে ঘোরাঘুরি করছো দেখছি।”

আমার দম আঁটকে এলো। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কিছুক্ষণ চুপসে থাকার পর মনে পড়লো হাতটা মুখে নয় গলায় চাপলে বেশি কার্যকর হবে! তৎক্ষনাৎ ফড়িংএর মতো তিড়িং বিড়িং করে ওড়না টা টেনে চেপে ধরলাম গলায়। উনি যেন আর বুঝতেই না পারে তার জন্য চুলগুলোও সব একপাশে নিয়ে এলাম! ভেতরটা ক্রমশই ধড়ফড় ধড়ফড় করে চলেছে! দাগটা আর কারোর চোখে পড়তে পারলো না শুধু এই মানুষটার চোখেই পড়তে হলো! কেন?

—-” ঢেকে কি হবে? কলঙ্ক যদি ঢেকেই মুছে ফেলা যেতো তবে চাঁদ কেন তা করেনি?”

আমার ভেতরটা জ্ব/লেপু/ড়ে যাচ্ছে! “কলঙ্ক”! সত্যিই যে কলঙ্কের দাগ পড়েছে আমার শরীরে।

—-” বয়ফ্রেন্ড এসেছিলো বুঝি?”

উনি কেবল বলেই চলেছেন! কিন্তু একটা কথারও যে জবাব আমি দিতে পারছি না!

—-” বেশ তো! তবে একটুই কেন কলঙ্কিত হলে? পুরোটাই হতে পারতে! জানো-তো এসব মানুষ গুলোই আমার ভীষণ অপছন্দের। বিশেষ করে ছেলেগুলো! মনে করো সম্পর্কের একমাস যেতে না যেতেই শুরু হয়ে যাবে তাদের আসল পরিচয় দেওয়া। মেয়ে গুলোকে এমন ভাবে ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলবে যে সে যা-ই বলবে সেটাই মেয়েটার কাছে মধুর স্বাদ লাগবে। এম আই রাইট অর রঙ?”

আমার গলায় কম্পন ধরেছে তা বেশ বুঝতে পারলাম! উনি সামান্য একটা দাগ দেখে আমাকে কোন কাতারে ফেলে দিয়েছেন ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। হৃদ আর আমার সম্পর্কটা কখনো এমন পর্যায়ে আসেইনি যেখানে এমন কিছু হতে পারে আর….

আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি! গলার মধ্যে ব্যাথা করছে হঠাৎ। কান্নারা সব দলা পাকিয়ে গলাতেই এসে আঁটকে পড়েছে! ক/ষ্ট হচ্ছে! উনার আড়ালেই চোখের জল ফেললাম। সম্পূর্ণ অসহ্য একটা লোক! আমি কিছুতেই আর উনার গাড়িতে উনার সাথে পাশাপাশি বসে যেতে চাই না! কিছুতেই না!

—-” গাড়ি থামান!”

—-” কেন?”

—-” আমি বলেছি তাই! গাড়ি থামান।”

—-” বয়ফ্রেন্ড আসবে বুঝি? রুমডেট নিশ্চয়ই! তুমি কিন্তু সেই বুদ্ধিমতি নিধি! সময়টা কিন্তু একদম পার্ফেক্ট। আব.. তুমি চাইলে আমি তোমাদের জন্য স্পেশাল রুম বুকিং করে দিতে পারি! ধানমন্ডিতে কিন্তু এই সময়ে স্পেশাল রুমের বুকিং হয়! উইথ টুয়েন্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট। কি? করবো নাকি?”

আমি নির্বিকার! আমার কান্না পাচ্ছে কি না সে কথাও ভুলে গিয়েছি আমি। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে! কেননা, আমি যে কথা বলতেও ভুলে গিয়েছি!

বড় একটা হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামালেন উনি! গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। আমি ঘৃ/না/য় তাকাতে পারছিনা উনার দিকে! চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। এই মানুষটা কে খু/ন করে তার লা/শ/টাকে কুটিকুটি করে কে/টে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে উনি আমার বড়-খালামনি ছেলে!

আমাকে বসে থাকতে দেখে হেঁচকা টেনে বের করে আনলেন উনি! আমি ঘৃ/ণি/ত চোখে উনার দিকে তাকালেও উনি ভ্রুক্ষেপহীন। আমার দিকে একবার তাকানোরও প্রয়োজন মনে করছেন না! কিছুদূর এক ভাবেই টানতে টানতে নিয়ে গেলেন! আমি চেঁচাবো বলে ঠিক করেই ফেলেছি এমন মুহুর্তে উনি বলে উঠলেন,

—-” কি টেনশন হচ্ছে? কেউ জানবে কি না? আরে বোকা মেয়ে যেখানে রাহিয়ান রাফিদ স্বয়ং তোমায় হেল্প করছে সেখানে বারো যুগেও এসব কারোর জানা সম্ভব নয়! কাকপক্ষীতেও টের পাবে না! ট্রাস্ট মি!”

—-” ছাড়ুন আমায়! আপনি যে এতোটা বি/কৃ/ত ম/স্তি/ষ্কে/র মানুষ আমার ধারনাও ছিলো না! আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে চাই না! ছেড়ে দিন আমার হাত! আমি এই মুহুর্তে আমার নিজের বাড়ি ফিরে যাবো। আর কখনো আপনার বাড়িতে পা রাখবোনা! আপনার মতো এমন খারাপ মানুষের মুখ আমি আর কখনোই দেখবো না! ছাড়ুন আমায়!”

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলতেই উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে তেড়ে আসলেন আমার দিকে। আমি ভ/য়া/র্ত দৃষ্টিতে উনার র/ক্ত/চক্ষু চোখ জোড়া দেখে লেপ্টে গেলাম দেয়ালের সাথে। উনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন দেয়ালের সাথে। অতঃপর গলার আওয়াজ নীচু করে বললেন,

—-” শশশ! এই হোটেলে কিন্তু কেউ কাঁদতে কাঁদতে ঢোকেনা! সবাই উল্লাস, উনমাদনা নিয়ে আসে! দিনশেষের ক্লান্তি ঝাড়তে এখানেই আসে। এটা কোনো পতিতালয়ের থেকে কিন্তু কম নয়! এভাবে চেঁচামেচি করো না! লোকে কি ভাববে?”

আমি চুপসে গেলাম! আমার হাত-পা সমানে কাঁপতে লাগলো। শরীরটাও যেন অসার হয়ে আসছে। সামনে যা দেখছি কেবল ঘোলাটে আর অন্ধকার।

উনি আবারও আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। কাউন্টারে এসে ম্যানেজারের সাথে আস্তে আস্তে কিছু কথাও বললেন যা আমার কান অব্দি পৌঁছালো না! ম্যানেজার আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে উনার হাতে একটা চাবি তুলে দিলেন! চাবিটা হাতে নিয়ে উনি বিজয়ের হাসি হাসলেন! আমার দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত নরম সুরে বললেন,

—-” নো টেনশন! আজ যা হবে ভালোর জন্যই হবে! চলো।”

“১৩০৪” নম্বর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি দু’জনেই! উনি আমার দিকে তাকিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাবিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” শুভ কাজটা তুমিই করো!”

নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলো না! চোখের জল অঝোরে ঝড়িয়েই স্ব-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম উনার গালে! থাপ্পড় খেয়ে উনি দু’পা পিছিয়ে গেলেন! গালে হাত রেখে আমার দিকে তাকাতেই আমি তেড়ে গিয়ে উনার শার্টের কলার চেপে ধরলাম! রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,

—-” অনেকক্ষণ ধরে আপনার বাজে বকবকানি শুনে যাচ্ছি! কি মনে করেন নিজেকে? আপনি যা খুশি তাই বলে যাবেন আর যা খুশি তাই করে যাবেন সেটা আমি চুপচাপ সহ্য করবো? আপনাকে কিছুই বলবো না? আমাকে দেখে আপনার পতিতালয়ের মেয়ে মনে হয়? আমার গলায় একটা সামান্য দাগ দেখে আপনি কিছু না জেনে,না বুঝে সেটাকে তিল থেকে তাল করে ফেললেন? আপনার একটুও মুখে বাঁধলো না! খারাপ লাগলো না? একবারও মনে হলো না আপনার এই থার্ড ক্লাস কথাবার্তায় আমার মনের উপর কতটা আঘাত পরতে পারে? আপনাকে আমি কতটা ভালো এবং সৎ ভেবেছিলাম আর আপনি? আ…আপনি কতটা নীচু মনমানসিকতা পোষণ করেন আমার তো ভাবতেই ক/ষ্ট হচ্ছে!!”

কথা গুলো বলে উনাকে ধাক্কা মে/রে সরিয়ে দিয়ে নিজেই কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়লাম! উনি নিজেকে সামলে নিয়েই দৌড়ে এলেন আমার দিকে। আমাকে নীচে পড়তে দেখে আমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরে সটান হয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন! রা/গে উনার চোখ দুটো আ/গু/নে/র মতো জ্ব/ল/ছে। তবুও সে নীরব।

আমি আবারও চেতে উঠলাম! কিন্তু এবার আর কিছু বলার সুযোগ হলো না! উনি আমাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলেন। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালাতেই আরও শক্ত করে জাতাঁকলে পি/ষে নিলেন আমায়। আমার দম ব/ন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। কিন্তু উনি অনুভূতি শূন্য। আমাকে নিয়েই রুমের দরজার লক খুললেন! লকটা খুলে যেতেই এক লাত্থি মেরে দরজাটা খুলে দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন ভেতরে। আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই চোখ পড়লো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে মুড়িয়ে থাকা বিছানার উপর। আর তারউপর অ/র্ধন/গ্ন হয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা দুজন অপ্রত্যাশিত মানুষের উপর! মুহুর্তেই আমার নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। থমকে গেলো আমার সাজানো গোছানো ছোট্ট পৃথিবী টা। সামনে ভেসে থাকা সত্যটাকে মেনে নেওয়ার থেকেও বি/ষপান করা বেশি সুখকর বলে মনে হচ্ছে।

—-” হৃদ!!”

না চাইতেও কাঁপা কাঁপা স্বরে ডেকে উঠলাম তার নামটা! হায় রব! এমন দৃশ্য দেখার পূর্বে আমার চোখ জোড়া পঁচে গেলো না কেন?

#চলবে____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here