প্রেয়সী পর্ব – ৬+৭

#প্রেয়সী❤️🥀
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ০৬

১১.

—-” আইলা… জ…জাদু!”

টেবিল চেয়ার ছেড়ে সটান হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে এবার নিজেই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম কফি পড়া স্যাঁতস্যাঁতে জায়গার উপর। হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে নয় বেহুঁশ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। যেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে র//ক্তচক্ষু চাহনি দিয়ে আমায় ভ//স্ম করার বদ মতলব করা লোকটা ভাবে নিধি তিনদিনের জন্য কোমায় ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছে। লে নিধি, পুরো প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়া এই লোকের হাতে দাবাং মার্কা একখানা চড় খাওয়ার জন্য।

আধঘন্টা আগে সাদামন নিয়ে লাইব্রেরিতে উপস্থিত হয়েছিলাম। নিউ স্টুডেন্ট বলে কথা। পুরো ভার্সিটির এ টু জেড অব্দি যদি মুখস্থ করে ঠোঁটের আগায় না রাখতে পারি তবে নতুন স্টুডেন্টের ট্যাগটা তো আমৃ//ত্যু থেকেই যাবে। লাইব্রেরিতে ঢুকতেই প্রথমে ফিন্যান্সের একখানা বই নিয়ে বসে পড়লাম লম্বা টুলে। পাশেই বেশ আয়েস করে বসলো রাই। ওর হাতেও বই তবে উপন্যাসের। খুব মনোযোগ দিয়েই দুই বান্ধবী বইয়ের পেইজ উল্টাচ্ছিলাম। এমন সময় এসে হাজির হলো রোগা পাতলা দেখতে একটা ছেলে। হয়তো ক্যানটিনের হবে। আমাদের সামনে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ফিসফাস করে বলল,

—-” আপু কিছু নিবেন চা বা কফি?”

আমি ছেলেটার কথা শুনে রাইয়ের দিকে তাকালাম। রাই আর আমার দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করল না। সে বত্রিশ পাটি দাঁত কেলিয়ে অর্ডার করে দিলো দুটো কফি। বেশ, খানিক বাদেই হাজির হলো দু’কাপ কফি। ততক্ষণে আমি ফিন্যান্সের বই রেখে রাইয়ের মতোই একখানা উপন্যাসের বই নিয়ে বসে পড়লাম। ছেলেটা সুন্দর মতো কফি দুটো দিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেলো। আমিও বেশ মনোযোগের সহিত উপন্যাসে ডুবে পা দুলাতে দুলাতে কফি উঠিয়ে এক ঢোক গিলে নিলাম। ব্যস হয়ে গেলো কাজ। গরম কফি পুরো এক ঢোক গিলে ফেলায় পুরো রুম কাঁপিয়ে মুখ থেকে থুকে ফেললাম কফি। সে কি য/ন্ত্র/ণা!

মুহুর্তেই চোখ দুটো ছলছল করে উঠল আমার। পুরো মুখ আর গলা সমানে জ্বলতে লাগলো। পাশ থেকে রাইকে হাত বাড়িয়ে ডাকতে নিলে তাকে হাতের নাগালে পেলাম না। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে রাইয়ের দিকে তাকালাম এই উদ্দেশ্য নিয়ে যেন ওকে রাম ধমক দিয়ে পুরো লাইব্রেরিকে জানান দিতে পারি যে গরম কফিতে আমার মুখ পুড়ে গিয়েছে। কিন্তু হলো না। রাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে ওর “হা” মার্কা রিয়াকশনে আমায় অগত্যাই ওর দৃষ্টি অনুসরণ করতে হলো। আঁড়চোখে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে যা দেখলাম তাতে বোধকরি এমন কিছু ঘটে যাবে জানলে উনাকে সাক্ষী রেখেই পুরো গরম কফিটা ঢকঢক করে গিলে খেতাম। রাফিদ ভাইয়ার সাদা শার্ট টা আর সাদা শার্ট নেই।

মনে হচ্ছে পানের পিক পড়ে জায়গায় জায়গায় অনেক সুন্দর সুন্দর আকার নিয়েছে। উনাকে সরি বলতেই উঠে দাঁড়াচ্ছিলাম কিন্তু ভাগ্য আমার সঙ্গে আরেক পরিহাস করে বসলো। যা হওয়ার তাই হলো। আমার পরনে সাদা স্কার্টটা উনার শার্টের থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে রূপ পরিবর্তন করে ফেললো। কফির মধ্যে কিছুক্ষণ সাঁতার কেটে উঠতে নিলে কাঁপা কাঁপা হাতে রাই টেনে তুললো আমায়। এগিয়ে এলো আরও একজন ব্যক্তি। সচারাচর চোখে পড়ায় যতদূর মনে হয়েছে উনি রাফিদ ভাইয়ার একটু বেশিই ক্লোজ। হয়তো বেস্ট ফ্রেন্ডও হতে পারে! তবে,উনি এগিয়ে আসতে আসতেই আমি উঠে দাঁড়িয়েছি। রাফিদ ভাইয়া এখনো একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার অনুভূতি আপাতত পরিষ্কার না! ভ/য় পাচ্ছি নাকি মজা পাচ্ছি বুঝতে পারছিনা। রাফিদ ভাইয়ার এমন চাহনীতে বুক ধড়ফড় করতে লাগলো আমার। মাথা নীচু করে কথা বানাতে লাগলাম। কিছু একটা বলে ম্যানেজ দিতে হবে রে নিধি। নয়তো তুই শেষ। পেছন থেকে কর্কশ সরে ধেয়ে আসলো রূপ ভাইয়ার গলা,

—-” এই মেয়ে! সমস্যা কি তোমার? দেখে কাজ করতে পারোনা? সিনিয়রদের গায়ে এভাবে মুখ থেকে কফি উগড়ে দিলে! হাউ ডিজগাস্টিং ইয়ার!”

অরিন আপু রূপ ভাইয়াকে ঠেলে সামনে এসে দাঁড়ালেন! বোধকরি উনার হাতে কোন ছোট চায়ের কাপ ছিলো। অরিন আপু চা টা একপ্রকার উড়িয়ে মারলেন আমার দিকে। চা-টা একটু বেশই গরম ছিলো! আমার গলায় পড়ে জোয়াল দিয়ে নেমে গেলো পুরো শরীরে। আমি আঁতকে উঠে মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে পিছিয়ে গেলাম। টেবিলে বারি খেয়ে চেয়ারের উপর বেসামাল হয়ে পড়ে কাতর কন্ঠে গা ঝাড়তে নিলেই অরিন আপু তেড়ে এসে আমার মুখ চেপে ধরেন। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

—-” রি/ভে/ঞ্জ! আশাকরি মনে থাকবে সুইটহার্ট!”

চা পড়ে যতটা না জ্ব/ল/ছে তার থেকেও দিগুন জ্ব/ল/ছে অরিন আপুর কথায়। আমি র/ক্তি/ম চোখে উনার দিকে তাকিয়ে ধাক্কা মে/রে উনাকে সরিয়ে দিলাম। ক্ষেপা বাঘিনীর মতো উনার দিকে তাকিয়ে শক্ত চোয়ালে বললাম,

—-” আমি কফিটা উনার গায়ে ইচ্ছে করে ফেলিনি!”

পেছন থেকে হাসতে লাগলেন সবাই, রূপ ভাইয়া, দিপু ভাইয়া,জিয়ান ভাই আর আর অনন্যা আপু। শুধু নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন রাফিদ ভাইয়া আর আরফান ভাইয়া। অনন্যা আপু ঠেস মে/রে বলে উঠলেন,

—-” এই শোন তোরা। ও নাকি কফিটা ইচ্ছে করে ফেলেনি!”

এই কথা বলতে এবার অরিন আপুও সবার সাথে যোগ দিলেন। রা/গে অপমানে আমার গলা জড়িয়ে আসলো। তিক্ত হয়ে নিজেকেই ধিক্কার জানালাম। কেন এলাম লাইব্রেরিতে? আমার তো আগেই ভাবা উচিৎ ছিলো পুরো ভার্সিটি জুড়ে কেবল সিনিয়রদের রাজ। তাই একটু উনিশ বিশ হলেই উনাদের সামনে মাথা ঝোকাতে হবে। আমিই বা কি পা/গ/ল! প্রথম দিন এসেই কত সুন্দর করে এদের সাথে পাল্লা দিয়ে ফেললাম। উনাদের তাচ্ছিল্য করে হাসি আর সহ্য হলো না আমার। লাল স্কার্ফটা দিয়ে ভিজে লেপ্টে থাকা টি-শার্টটা ঢেকে ফেললাম। দু’হাতে চোখ মুছে স্পষ্ট গলায় রাফিদ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,

—-” ক্ষমা করবেন ভাইয়া! আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি এমন কিছু ঘটে যাবে। ক..কফিটা খুব গরম….”

কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারলাম না। তার আগেই রাফিদ ভাইয়ার ভেজা শার্টটা আমার মুখের উপর আঁচড়ে পড়লো। আমি চমকে উঠে মুখ থেকে উনার শার্ট টা সরাতেই আবারও চমকে উঠলাম। উনি আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন। মুখের উপর উনার গরম নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়তেই আমার পুরো শরীর কঁপে উঠলো। উনার আর আমার মধ্যে বোধকরি দেড় ইন্ঞ্চি দূরত্ব। আমি ঢোক গিলে এক পা পিছিয়ে যেতেই উনি রাগী স্বরে বলে উঠলেন,

—-” আগামী কাল ঠিক সকাল ৭ টা বেজে ৩০ মিনিটে শার্টটা আমার চাই! এন্ড অভিয়েসলি নিট এন্ড ক্লিন।”

কথাটা বলেই উনি হাঁটা ধরলেন! আমি গোলগোল চোখে উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম। মন বলছে উনি আবারও হঠাৎ করে এসে আমার সামনে দাঁড়াবেন। কারন উনার কথা পরিপূর্ণ হয়নি। কিন্তু এখনো আরও কি কথা বাকি থাকতে পারে জানা নেই।

উনি হল থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন মনে হতেই কাঁপা কাঁপা হাতে শার্টটা চোখের সামনে তুলে ধরলাম। বুক চিঁড়ে বিশাল আকারের এক দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসলো। মন ভরে নিঃশ্বাস ফেলারও সময় পেলাম না। মনের কথা মনে রেখেই উনি একটা লাল টি-শার্ট পড়ে ভূতের মতো সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে যেতেই উনি আমার দিকে আ/গুনের লাভা ছুঁড়ে বলে উঠলেন,

—-” আমি এখানেই অপেক্ষা করবো। ঠিক ৭ টা বেজে ৩০ মিনিটে।”

আমি এখনো বেহুঁশ হলাম না কেন! সেই আফসোসেই আবারও দীর্ঘশ্বাস আসতে চাইলো। কিন্তু আমিই আর আসতে দিলাম না। চেপে রাখলাম। আমার এই টুকুনি জীবন। তার দশ ভাগের নয় ভাগই যদি থাকে দীর্ঘশ্বাস তাহলে আর রইলো কি জীবনে? কিছুই না?

—-” নিধি!”

একটু দূর থেকে শীতল কণ্ঠে ডাকলেন আরফান ভাই। লে নিধি এবার আরেকদফা বাঁশ খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যা! উনি আমার দিকেই এগিয়ে আসছেন। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে রাইয়ের হাতটা টান মে/রে দ্রুত পায়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেলাম। আজকের জন্য যা হলো সেটাই অনেক বেশি! এরপর আর কিছু হজম করতে পারবোনা আমি।

১২.

আয়নার সামনে অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি। গলার কাছটাতে লালচে দাগ পড়ে গিয়েছে। চিনচিন করে জ্ব/লে যাচ্ছে সেই সকাল থেকে। একবার তো ঔষধ লাগিয়েছি! মনে হচ্ছে আবারও লাগাতে হবে। পাশে রাখা ছোট টুলটা টেনে ওখানেই বসে পড়লাম। নিজেকে বড্ড অদ্ভুত লাগছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম নিজেকে। গত দু’মাসে খুব একটা যত্ন নেওয়া হয়নি নিজের। আমি বরাবরই নিজের যত্ন নিতে কঞ্জুস! বাবার এতো এতো অভিযোগে যেটুকু করা হয়। আচ্ছা আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতো তবে কি আমার জীবনটা এমন হতো? নাকি একটু অন্য রকম হতো? অন্যরকম তো অবশ্যই হতো! মা-কে তো আমি সবচেয়ে আগে এই প্রশ্ন টা করে করে জ্বা/লি/য়ে মা/র/তা/ম যে কেন আমার ডান হাতের নীচে এই কালো তিনটা সবসময় অদৃশ্য থাকে? কেন হঠাৎ হঠাৎ তার দেখা মিলে? মা থাকলে হয়তো এর উত্তর টা আমি অনেকদিন আগেই পেয়ে যেতাম।

সত্যিই জীবনটা অন্যরকম হতো। আমাদের ছোট্ট সংসারটা একদম গোছালো পরিপূর্ণ থাকতো। বাবা মায়ের খুনসুটি থাকতো। তাদের মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া থাকতো। ঝগড়া করে যখন মা বাবার উপর ভীষণ ক্ষেপে থাকতো তখন আমি দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী সুরে মায়ের মন গলাতাম। না বুঝলে বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বকা দিতাম। মায়ের সাপোর্ট করে বলতাম “হ্যাঁ মা,তুমিই ঠিক।” সত্যি মা থাকলে আমাদের জীবনটা অন্যরকমই থাকতো।

আয়নার মধ্যে থেকেই নিজেকে দেখে বুঝতে পারলাম মাকে ছাড়া নিধি মাঝে মধ্যে বড্ড বেশিই অসহায় হয়ে পড়ে। মাকে ভাবলেই নিধির ঠোঁটের কোনে তৃপ্তিময় হাসি আসে আর চোখ জোড়া ছলছল করে। আনমনেই হেসে ফেললাম। আয়নার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলাম,

—-” আজকাল নিধি মাকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছে!”

টুল ছেড়ে উঠে পড়লাম। এখানে বসে বসে ভাবনার জগতে হাতড়ে বেড়ালে চলবে না। ৫ টার দিকে হৃদের সাথে মিট করতে যাবো। অলরেডি ৪ টা বাজে। নিতু আপুকেও তো বলতে হবে। আস্তেধীরে চলে গেলাম নিতু আপুর কাছে। দরজাটা হাট করে খোলা। বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়লাম ওর রুমে। আশেপাশে নজর দিয়ে ওকে কোথাও আবিষ্কার করতে পারলাম না। গলা উঁচিয়ে ডেকে উঠতে ওয়াশরুম থেকে জবাব এলো,

—-” নিধি, আমি চেঞ্জ করছি ভেতরে। কিছু বলবি তুই?”

নিতু আপুর রুমের দেয়ালে টানানো বড় ঘড়িটার দিকে তাকালাম। ৪টা বেজে ১০ মিনিট অতিক্রম করে ফেলেছে ঘড়ির কাঁটা। আমি ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,

—-” আমি একটু বেরোবো আপু।”

—-” কোথায় যাচ্ছিস?”

ভেতর থেকে আবারও ভেসে আসলো আপুর গলা। আমি আবারও বলে উঠলাম,

—-” দোয়েল চত্বর থেকে একটু সামনেই। হৃদ আসবে। মিট করতে যাবো।”

—-” এই দাঁড়া দাঁড়া….”

নিতুর আপুর ব্যস্ত কন্ঠ ভেসে আসতে আমি চিন্তিত মুখে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। নিতু আপুর হঠাৎ ব্যস্ততার কারন বুঝতে পারলাম না। কট করে শব্দ করে দরজা খুললো আপু। চেয়ারের উপর হাতের তোয়ালেটা ছুঁড়ে ফেলে পরনে জামাটা টানতে টানতে এগিয়ে এলো আমার দিকে। ঘড়ির দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে বলল,

—-‘ আমিও ঐদিকেই যাচ্ছি। এলিফ্যান্ট রোডের দিকে।তোর রাফিন ভাইয়া আসবে। চল একসাথেই যাই?”

—-” এলিফ্যান্ট রোড! কিন্তু আপু আমি তো ঐদিকে যাবো না। দোয়েল চত্বরের কাছেই যে কফি শপ আছে ওখানেই বসবো।”

—-” আরে বোকা তোকে এলিফ্যান্ট রোড যেতে বললাম নাকি? বললাম আমরা একসাথেই বের হতে পারি। তুই ওখান থেকে নেমে পড়লি আর আমি ঐ দিকে চলে গেলাম!”

—-” ওকে। কিন্তু রাফিন ভাইয়া হঠাৎ এলিফ্যান্ট রোডে কি করছেন? তোমরা তো অলওয়েজ এদিকটাতে মিট করো?”

নিতু আপু স্মিত হাসলো। আলমারি খুলে পার্স আর ওড়না বের করে আমার পাশে রেখে বলল,

—-” ওর কোনো এক ফ্রেন্ড নাকি গেট টুগেদারের আয়োজন করেছে। সেখানেই যাবো।”

—-” তুমি একাই এলিফ্যান্ট রোড থেকে যাবে নাকি ভাইয়া তোমায় নিতে আসবে?”

—-” বলেছে তো নিতে আসবে যদি ফ্রেন্ডদের সাথে আঁটকে না পড়ে। আর আঁটকে পড়লে আমিই চলে যাবো সমস্যা তো নেই!”

আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। বললাম,

—-” সমস্যা তো নেই তবে একটু চিন্তা হয় বুঝলা!”

আমার কথা শুনে আপু ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বলল,

—-” চিন্তা? কিসের চিন্তা?”

আমি মুখ কুঁচকে বললাম,

—-” এই যে এতো সাজছ? রাস্তা ঘাটে মানুষ গুলো তাদের কাজ বাজ ভুলে না আবার তোমার পেছনে ছুটতে থাকে সেই চিন্তা বুঝলা!”

নিতু আপু হেসে ফেললো। চোখে আই লাইনার দিতে নিয়ে আবারও থেমে গেলো। আমাকে তাড়া দিয়ে বলল,

—-” এতো চিন্তা করতে হবেনা। এবার জলদি গিয়ে রেডি হয়ে নে।”

আমি স্মিত হেসে মাথা দুলালাম। নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলে নিতু আপু আবারও বলে উঠলো,

—-” নিধু আজ তুই মেরুন রঙটা পড়িস।”

আমি ভ্রু বাঁকিয়ে বললাম,

—-” মেরুন?”

নিতু আপু মাথা নেড়ে বলল,

—-” হু। তোকে জম্পেশ মানায় রঙটায়।”

—-” হাওয়া দিচ্ছ?”

আমার কথায় আপু গাল ফুলিয়ে বলল,

—-” আমি তোকে হাওয়া দিবো? এটা তুই ভাবতে পারলি?”

আমি আর জবাব দিলাম না। মুখে বাঁকা হাসি এঁটে নিজের রুমে চলে এলাম। আপুর সাথে গপসপ দিতে দিতে আরও পনেরো মিনিট অতিবাহিত করে ফেলেছি। এবার আর লেট করা যাবেনা। আলমারি থেকে মেরুন রঙের স্কার্টটা বের করে ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে। ফটাফট চেঞ্জ করে সোজা এসে দাঁড়ালাম ড্রেসিং টেবিলের সামনে। চুলগুলো ছেড়ে দিতেই পিঠের উপর ঝেকে বসলো সবাই। বাতাসের তালে তালে তাদের চুল-ছেঁড়া ঝগড়া দেখে মনে মনে হেসে ফেললাম আমি। চোখের নীচে সরু করে কাজলের রেখা টেনে দিলাম। কানে দুটো গোল গোল এয়ারিং ঝুলালাম। একহাতে একগাদা চুড়ি আর অন্য হাতটা পুরোই শূন্য রাখলাম। এটাই আজকালকার ফ্যাশন সবাই বুঝেনা! নিতু আপুর মতে মেরুন রঙটা আমার উপর জম্পেশ মানালেও আমার মন বলছে এই রঙটা রাফিদ ভাইয়াকেই বেশি ফুটিয়ে তুলে। সেদিন তার পরনে এই রঙের শার্ট টায় কতটা মারাত্মক লাগছিলো ভাবলেই…..

আর ভাবতে পারলাম না। মনের মধ্যে কামড় মে/রে মনে পড়ে গেলো উনার সাদা শার্ট টার কথা! এই রে, শার্ট টা তো এখনো ধোঁয়াই হলো না! এখনো না ধুয়ে দিলে ঐ দাগ তো কখনোই উঠবেনা বাচ্চে। এবার আমি কি করবো? সময় যে পেরিয়ে যাচ্ছে! বাইরে যাবো নাকি রহিমার মায়ের মতো বসে বসে উনার শার্ট কাচবো?

ইয়েস…. আইডিয়া! শার্ট টা তো আমি রানিকে দিয়ে গেলেই পারি। ও ঠিক সুন্দর করে দাগ উঠিয়ে দিবে। যতক্ষনে আমি বাসায় ফিরবো ততক্ষণে তো উনার শার্ট শুঁকিয়ে মচমচ করবে। আহা নিধি এতো বুদ্ধি কই রাখিস রে তুই? যেই ভাবা সেই কাজ। রানিকে ডেকে দিয়ে দিলাম শার্ট টা। বলেছি ভালো করে দাগ গুলো উঠাতে পারলে গিফ্টস্ও পাবে। ও তো খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো। এবার ঠিকই ভালোমতো ধুয়ে দিবে।

ফোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজে খুশির জোয়ারে ভাসা বাদ দিয়ে ফোনটা নিয়ে বসে পড়লাম। হৃদই হবে, এই ভেবে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই মস্তিষ্ক চিৎকার পেড়ে বলে উঠলো,

—-” নিধি নিঃশ্বাস ফেলিস না পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।”

আমি ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছি। স্ক্রিনে ভাসছে সেই অপরিচিত নাম্বারটা! লোকটার কথা তো আমি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ভুলেই গিয়েছিলাম! মনটা সায় দিচ্ছে না কল টা রিসিভ করতে। আবার কাটতেও পারছিনা! তাই চুপচাপ পাশে ফেলে রাখলাম ফোনটা। একের পর এক কল বেজেই যাচ্ছে। হাতের মধ্যে নিশপিশ করছে রিসিভ করতে। আঁটকে রাখা নিঃশ্বাসটা ছেড়ে দিয়ে ফোনটা কানে তুললাম এবার। অত্যন্ত বিনয়ী সুরে বললাম,

—-” এবারও যদি পরিচয় না দিয়ে কলটা কেটে দেন তবে পরের বার কল করতে আর এই সিমটা ইউজ করতে পারবেননা। কেননা, কল টা কেটে যাওয়ার ঠিক কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আপনার এই সিমটার জন্য আমার কন্টাক্টের ব্লক লিস্টে সবচেয়ে সুন্দরতম জায়গাটা তার হবে।”

কথা গুলো একনাগাড়ে বলে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটলো যেন। এবার নিঃশ্চই বেটায় ব্লক খাওয়ার ভয়ে পরিচয়টা দিয়ে দিবে। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো শব্দ এলোনা। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অধৈর্য্য গলায় বলে উঠলাম,

—-” পরিচয় না দিলে সমস্যা নেই। থাকুন আপনি। আমি আপনাকে ব্লক করে দিচ্ছি।”

—-” তুমি একজন মুক্তি যোদ্ধা জানা ছিলো না তো!”

—-” অ্যা….(বোকা গলায় প্রশ্ন করলাম আমি)

—-” এই যে ফোন রেখে যুদ্ধে চলে যাও। এতোবার করে কল দিয়েও তোমার খোঁজ পাওয়া যায়না! বলি একজন এসিস্ট্যান্ট রাখলেও তো পারো। তাহলে তো তোমার কাজে হেল্প হয়ে যায়!”

আমি ফুঁসে উঠলাম। ঝাঁঝাল কন্ঠে বললাম,

—-” এই এখানে কি ফাজলামো হচ্ছে হ্যাঁ? আপনি কে ঠিক করে বলুন তো?”

—-” আমি?(শীতল কন্ঠে)”

—-” হ…হ্যাঁ আপনি! বলুন ঠিক করে? কে আপনি?”

—-” খুব জ্বা/লা করছিলো তাই না?”

—-” অ্যা…. জ..জ্বা/লা করছিলো! জ্বা/লা করছিলো মানে কি?”

আমার প্রশ্নের জবাবে ওপাশে আবারও নীরবতা। আমি রে/গে গিয়ে আবার কিছু বলতে নিলে উনি গলা খাঁকারি দিয়ে আবারও আকর্ষণীয় গলায় বলে উঠলেন,

—-” ঔষধ টা লাগিয়ে নিও। একবার নয়, জ্বা/লা না কমলে বারবার লাগাবে। ভুল যেন না হয়। আব….আর পারলে নিজের একটু যত্ন নিও। অনেক তো হলো জীবন নিয়ে অবহেলা!”

লোকটার কথা গুলো আমার মাথার ঠিক কয়েক হাত উপর থেকে ছুটে গেলো। বুঝতে পারলাম না। ভেবেছিলাম বেটাকে ধমকে উনার পরিচয় আদায় করবো। কিন্তু উনার তিন তালের কথা শুনে নিজেই তো সবটা গুলিয়ে ফেললাম। নাহ্, এটা একটু বেশি বেশি হচ্ছে! উনার পরিচয় আমায় বের করতেই হবে। গলা ঝেড়ে বেশ আয়েস করে ফোনটা আবারও কানে তুললাম। চোখে মুখে রাগ ফুটিয়ে তুলে যেই মাত্র হ্যালো বলবো ওপাশ থেকে বিকৃত ভাবে ফোন কাটার তিনটা শব্দ ভেসে আসলো। ব্যস আমার নিঃশ্বাস আবারও আঁটকে গেলো। লোকটা তো বেশ পাঁজি! উনার কথা শেষ হতেই মুখের উপর কলটা এভাবে কেটে দিবে? দাঁড়া বেটা… বিরক্তের শীর্ষে পৌঁছে ডায়েল করলাম নাম্বারে। আজ তো উনাকে আমি দেখেই নিবো। কিন্তু কোথায় কি? আমার আশায় এক বালতি জল ঢেলে গতকালের মতোই সেই মহিলা রুক্ষ স্বরে বলে উঠলো,

—-” দুঃখিত! আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না! Sorry! The number you dialled is currently unreachable!”

বুক চিঁড়ে তপ্ত নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসলো। আত্মসম্মান নামক বস্তুটিতে বেশ ধারালো ভাবে সুচ ফুটালো। লোকটার কার্যকলাপে বেশ গুরুতর ভাবে আঘাত হানলো মনে। মনে মনে তো ঠিকই করে ফেললাম আরকবার কল দিক না লোকটা, এবার আমিই উনার মুখের উপর কল কেটে দিবো।

#চলবে_________________

[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ০৭

১৩.

হৃদের সাথে দাঁড়িয়ে আছি “তাজ রেস্টুরেন্ট” এর সামনে। আমাদের কফি শপে যাওয়ার কথা হলেও সেখানে আর যাওয়া হলো না। নিতু আপুই যেতে দিলোনা। আমাদের সাথে নিতু আর রাফিন ভাইয়াও দাঁড়িয়ে আছেন। বারবার ভেতরে যাওয়ার কথা হলেও কোনো এক উহ্য কারনে দাঁড়িয়ে আছেন রাফিন ভাই। আর ফর্মালিটির কারনে আমাকে আর হৃদকেও অগত্যাই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তার সাথে।

—-” ওকে ওকে। আমরা আসছি!”

কারোর সাথে ফোনে কথা বলে কল কাটলেন রাফিন ভাই। নিতু আপু আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

—-” ভেতরে সব কাজ কমপ্লিট সো আমরা যেতে পারি। নিধি, অর্নব কাম। নিতু এসো।”

এই বলে নিতু আপুর হাত ধরে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে লাগলেন রাফিন ভাই। নিতু আপুও রাফিন ভাইয়ের পা ফেলার ধাপে ধাপে পা ফেলছে। হৃদ বেশ বিরক্ত! চোখে মুখে তা বেশ স্পষ্ট হয়েই আছে। হৃদের বিরক্তির কারন অবশ্য এই রেস্টুরেন্টটা। বিশাল বড় একটা রেস্টুরেন্ট। সাথে বেশ নাম করাও। হৃদের বেশি বড়োলোকিপানায় সর্বদা এলার্জি। লাইফ ইজ সো সিম্পল। আজ আছি তো কাল নেই। তাতে এতো সাহেবিয়ানা না করে সিম্পল জীবন অতিবাহিত করাই তার অভ্যাস।

রাফিন ভাইকে আসার পথে হৃদ অবশ্য বলেছিলো সে আসবে না! কিন্তু রাফিন ভাই শুনলেন না। একপ্রকার জোর করেই সাথে নিয়ে এলেন আমাদের। আমি হৃদের মন পড়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,

—-” দাঁড়িয়েই থাকবেন জনাব? ভেতরে যাবেন না?”

হৃদ কাচুমাচু মুখে তাকালো আমার দিকে। আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়েও নিলোনা। এক অদ্ভুত বিড়ম্বনা দেখা যাচ্ছে ওর মুখে। রেস্টুরেন্টের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো হৃদ। কিছু একটা ভেবে গম্ভীর গলায় বলল,

—-” চলো।”

দু’জন আহত পথিকের মতো আস্তেধীরে সিঁড়ি ভেঙে দো’তলায় চলে গেলাম। বাইরের দরজাটা টান দিতেই হাট করে খুলে গেলো সেটা। আমি খানিক থতমত খেয়ে হৃদের দিকে তাকালাম। হৃদ ইশারায় আমায় ভেতরে যেতে বলল। আমিও সাদা মনে পা বাড়ালাম, কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই চোখ আমার চড়কগাছ। চারপাশে পুরোই হুলস্থূল কান্ড। ম্যাক্সিমাম কাপেলেই গিজগিজ করছে চারপাশ! সেই সাথে লাইটিং এর তীব্র নি/র্যা/ত/নে চোখ ধাঁধিয়ে আসছে আমার। চেয়ার টেবিল বাদ রেখে একদম কর্নার সাইডে কিছু অল্প বয়সী ছেলে-মেয়ে সফ্ট মিউজিকে বল ডান্স করছে। সত্যি বলতে এদের আমোদিত পরিবেশে আমার একটু বেশিই অস্বস্তি হচ্ছে। অস্বস্তি তে মনে হচ্ছে রীতিমতো কেউ আমার গলা চে/পে ধরেছে। বড্ড উদ্ভট লাগছে পরিবেশটা।

চারপাশে নজর দিতে দিতে খেয়ালই করা হয়নি, ইতিপূর্বে আমার সঙ্গে হৃদ দাঁড়িয়ে থাকলেও, এই মুহুর্তে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি। এতো অস্বস্তির মাঝে হৃদকে হঠাৎ কোথাও চোখে পড়ছেনা! চারপাশে লাল,নীল,হলুদ মানুষ গুলোর মাঝে হৃদকে চাতক পাখির মতো নজর ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলাম! কাপলগুলোর মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের আশেপাশে খুঁজতে যেন আরও বেশি অস্বস্তিতে ঘীরে ধরলো আমায়।

এখানে প্রত্যেকটা মানুষই তাদের প্রিয় মানুষ টার সাথে নিজেদের মতো করে আলাদা প্রাইভেসি নিয়ে আছে। সেখানে আমি বোকার হদ্দ হয়ে কি করে হস্তক্ষেপ করতে পারি! ভাবলেই তো ভীষণ অকওয়ার্ড লাগছে। কিন্তু এই হৃদ টা হঠাৎ কোথায় গেলো। এখন এমন একটা জায়গায় কোথায় কোথায় হাতড়ে খুঁজবো তাকে? আচ্ছা হৃদ কি এখানের এই সিচুয়েশন দেখে চলে গেলো? এটা কোনো কথা? না বলে চলে গেলো? আমি তো ওর সাথেই দাঁড়িয়ে ছিলাম? হাউ ইরেস্পন্সিবেল!

—-” হ্যালললো গাইজ।”

খনখন শব্দ করে কারোর গর্জনে আচমকা ধড়ফড়িয়ে উঠলাম আমি। কিছুক্ষণের জন্য মনের মধ্যে মনে হলো কেউ ঠাস ঠাস করে বেতের বারি বসিয়ে দিয়ে গেলো। উফফ,বুকটা এখনো ধড়ফড় করছে। কে বে? কোন দেশের গাঁ/জা খেয়ে এতো মোটা স্বরে মাইক নিয়ে চেঁচাচ্ছে? মে/রে বালিশ চা/পা দিয়ে দেওয়া উচিৎ।

—-” আই হোপ অল অফ ইউ গাইজ আর এঞ্জয়িং দ্যাট মোমেন্টসস!”

আবারও চেঁচিয়ে উঠলো লোকটা। আমি ক্ষেপা চোখে তাকালাম। এতো ছোট জায়গায় লোকটা কোন দুঃখে যে এমন বিকৃত গলা নিয়ে মাইক দিয়ে চিল্লাচ্ছে বুঝতে পারছিনা!

আর বোঝাবুঝির সুযোগ পেলাম না। পুরো হল কাঁপিয়ে প্রত্যেকটা মানুষ চেঁচিয়ে উঠলো। “ইয়েস ইয়েস” ধ্বনিতে ঝনঝন করে কাঁপছে রুমটা। মানুষ গুলো বড্ড অদ্ভুত! আমি এদের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিনা! খুব বেশি অস্বস্তি হচ্ছে। হৃদটাও না বলে চলে গেলো! আমিও থাকবো না, আমাকেও যেতে হবে।

—-” অর্নব! ইয়া রাইট। দেখেছিস আমিও কি মনভুলো হয়েছি! অর্পার সাথে রুমডেটে…..”

পেছন মুড়ে হাঁটা ধরতেই বাতাসের সাথে সুর মিলিয়ে ভেসে আসলো কথাটা। পুরো কথাটাও শুনলাম না। মাঝপথেই আবার মিলিয়ে গেলো। “অর্নব” নামটা শুনতেই না চাইতেও থেমে গেলো আমার পা। চটপট পেছন তাকিয়ে নাম নেওয়া মেয়েটাকে খুঁজতে লাগলাম! এই এক্ষনি যারা আমার পেছন দাঁড়িয়ে ছিলো তারাও এখন নেই। মানুষ গুলো সব জটলা হচ্ছে মিউজিকের জায়গাটায়। বোধহয় কাপল ডান্স হবে এখন। যে মেয়ে টা অর্নবের নাম নিলো তার গলাও আর শুনতে পাচ্ছি না! চারপাশে চাতক পাখির মতো দৃষ্টি দিলেও ঠাহর করতে পারলাম না ঠিক কোন মেয়ে নাম টা নিলো?

ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে কিছুক্ষণ মনের সাথে যু/দ্ধ করলাম। মেয়েটার আলোচনার মূল টপিকের অর্নব আর আমার অর্নব এক জন নয় তারই যু/দ্ধ। মন পরাজিত হলো আর মস্তিস্ক হেরে গেলো। মনের মধ্যে প্রশান্তির বাতাস বইতেই আবারও ঘুরে দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্য এখান থেকে চলে যাওয়া। ফের হৃদকে নিয়ে কোনো এক কফিশপে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে একদম বাসায়।

বের হওয়ার দরজাটা আবারও বাইরে ঠেলে দিতেই হাট করে খুলে গেলো। এবার আর থতমত খেতে হলো না আমায়! আমি নির্দ্বিধায় বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই যেন বাতাসের তীব্র গতিতে ভেতরে ঢুকে এলাম। চমকে উঠে পরিস্থিতি বোঝার জন্য আশেপাশে তাকাতে বিশেষ কাউকে চোখে পড়লো না। পরমুহূর্তেই ঠাহর হলো যে কেউ হাত ধরে হেঁচকা টানে নিয়ে এসেছে আমায়। বুকের ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে ধড়ফড় করতে লাগলো। মন বলছে কেউ হাত ধরে হেঁচকা টান মে/রে ভেতরে ঢুকিয়েছে কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে না, এমন কাউকে তো আমার থেকে দশহাত দূরেও তো দেখছি না। কেননা, তার কাছে এক্সট্রা কোনো পাওয়ার নেই যেটা থেকে সে চোখের পলকে স্থান পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু মস্তিষ্কের ভাবনা ঠিক হলো না! মনের ভাবনাই ঠিক হলো, কেউ আমায় হেঁচকা টান দিয়েই ভেতরে নিয়ে এসেছে। আর তার প্রমাণ সরূপ আমার বাম-হাতের ভাজে নীল রঙের ছোট একখানা চিরকুট।

চারপাশে রঙ বেরঙের লাইটিং এর মাঝে সফ্ট মিউজিক আর তার মাঝে আমি দাঁড়িয়ে! হাতে একটা চিরকুট নীল কাগজে মোড়ানো আর তার মাঝে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা! শরীরে অদ্ভুত রকমের রোমাঞ্চকর ভঙ্গিতে কাঁপুনি হচ্ছে। কপালের মাঝে কিছু চিন্তারা দৌড়াদৌড়ি করার দরুন বিন্দু বিন্দু ঘামের সূচনা ঘটছে। নিঃশ্বাস আপনাআপনিই ঘন হয়ে এসেছে। না চাইতেও নিঃশ্বাস বার বার আঁটকে যাচ্ছে আবার সেই সাথে কিছুক্ষন পেরোতেই লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস আসছে।

” তোমায় নিয়ে ভাবতে বসলে যে ভাবনারাও কুল কিনারা হারিয়ে ফেলে। বিরক্ত হয় আমার প্রতি,তিক্ত হয়। ধৈর্য্য হারায়,অতিষ্ট হয়! তবুও মন পাত্তা দেয়না। মনের সাথে তাদের তুমুল যু/দ্ধ লেগে যায়! কেন? কেন মন শুধু তোমাকেই ভাবতে বলে? ভাবতে চায়! মন খুব শক্ত গলায় বলে, ভাবতে হবে। শুধু এবং শুধু তোমাকেই ভাবতে হবে! আর ভাবনারা কি বলে জানো??”

আমায় প্রশ্ন করলো? ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করলাম আমি। লেখাগুলো পড়ার পর আমার মাথার উপর দু-তিন টা করে ঠা/ডা পড়ে আমি ম/রে গেলেও খুব বেশি একটা অবাক হবো না। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠতে ইচ্ছে করছে। কে করলো এই কাম? কে দিলো চিরকুট? আমি সিউর বেটা এখানেই আছে। এদের মাঝেই কেউ একজন এই চিরকুটদাতা। এই হাতের লেখার মালিক! কিন্তু কে সে?

১৪.

ঘড়িতে রাত ১০ টা। না খেয়েই শুইয়ে পড়েছি আজ। রোজ ঘড়ি ধরা ঠিক ১০ টা বাজে বাবা বাসায় ফিরে আসে। আর আমরা বাবা মেয়ে ১১ টার মধ্যে ডিনার কমপ্লিট করে ফেলি। কিন্তু আজ সন্ধ্যা ৭ টা বাজতেই বাবা বাসায় এসে হাজির। চোখে মুখে কিছু অপ্রাপ্তির ছাপ! হতাশায় ঘেরা ছিলো তার মন। হয়তো বাবার শরীর ঠিক নেই আজ! বাসায় ফিরে আমার সাথে ভালোমন্দ কোনো কথাই বলল না। শুধু আমি যা বলেছি তাতেই কেবল “হু, হা” করে গিয়েছে। বাবাকে খাইয়ে দাইয়েই এসে শুয়ে পড়লাম।

বাবার প্লেট গোছাতে গিয়ে দেখলাম বাবা ঘরের লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছে। যা আগে কখনোই করেনি! সবসময় নিয়ম মেনে আমার ঘরেই বাবা আড্ডা দিতো রাত ১ অব্দি। আর তারপর আমাকে ঘুম পারিয়ে তবেই বাবা নিজে এসে ঘুমোতো। মনটা খুব ছটফট করছে। বাবার ঘরে একবার যাওয়া উচিৎ। বাবার কি হয়েছে আমার জিজ্ঞেস করা উচিৎ! মাথার মধ্যে ধপধপ করছে আমার। শুয়ে থেকেও যেন শান্তি পাচ্ছি না। ধাপ করে উঠে বসলাম। উদ্দেশ্য বাবার রুমে যাওয়া। যদিও পাঁচ-সাতবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছি,

“বাবা তোমার কি হয়েছ?” কিন্তু উত্তরে বাবা একটা শুঁকনো হাসি দিয়ে বলেছে, “কিছুনা রে মা। তুই খেয়ে শুয়ে পড়। আজ আর বোধহয় আড্ডা হবেনা। অফিসের সামান্য কাজ আছে। ওটা নিয়েই বসতে হবে!”

কিন্তু কোথায় কি? বাবা যা বলে গেলো তা কিছুই করলো না। চুপচাপ গম্ভীর মুখে রুমে ঢুকে আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেলো!

বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে অগোছালো চুল গুলোকে হাত খোঁপায় পেছিয়ে একখানা বিদঘুটে রূপ দিলাম। অগোছালো চুলে খোঁপা বাঁধা সেটা বরাবরই আমার কাছে বিদঘুটে লাগে। সচারাচর আমার চুল এভাবে অযত্নে অগোছালো হয়ে পরে থাকেনা। আমার সব কিছুর অনিয়ম হলেও চুলের অযত্ন কোনো কালেই হয়না। কিন্তু এই মুহুর্তে চুল গুলোকে গোছালো করার চেয়ে বেশি জরুরি বাবার কাছে যাওয়া। বাবাকে সময় দেওয়া। হয়তো বাবা কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে একটু বেশিই চিন্তিত। বালিশের পাশ থেকে ওড়নাটা হাতে নিতে গিয়ে ফোনটার দিকে চোখ পড়লো।

বাসায় ফিরে হৃদকে কম করে হোক ১০ বারের উপর কল দিয়েছি। কিন্তু সে রেসপন্সই করলো না! ইদানীং একটু বেশিই ব্যস্ততা বুঝি তার। বুক চিঁড়ে দীর্ঘনিঃশ্বাসের ঘনঘটা মিলতেই মনে হলো প্রিয় মানুষটার প্রতি মনের আকাশে অভিমানের সুর তুলেছে। ধোঁয়াটে ধোঁয়াটে মেঘ গুলো জড়সড় হচ্ছে। অভিমানে বিষন্ন হয়ে এলো মন। কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিলাম না। ফোনটা কে ওভাবেই অসহায় করে ঘোষণা দিয়ে হাঁটা ধরলাম। কিন্তু ধাপ বেশি পেরোলো না। হাতে গোনা তিন ধাপ ফেলতেই ফোনের রিংটোনে মনের আকাশের সব মেঘ কেটে গিয়ে রোদের ঝিলিক তুললো। ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা প্রসারিত করে ধপ করে বিছানায় বসে ফোনটা রিসিভ করে কানে তুললাম। মনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা আর চেপে রাখতে না পেরেই অভিযোগের সুরে বলে উঠলাম তাকে,

—-” এতক্ষণে মনে হলো কল দিতে? জানো কতবার কল করেছি? দেখোনি বুঝি? নাকি দেখেও না দেখার ভান করেছো?”

আবারও খানিক অভিমানেরা উপচে এলো মনে। ভারী কন্ঠে আবারও বলে উঠলাম,

—-” আজকাল অকারনে তোমায় একটু বেশিই মিস করছি হৃদ! কিন্তু দেখো,এতো মিস করেও সঠিক সময়ে হাত ধরার মানুষ হিসেবে তোমাকে খুঁজে পাইনা। খুব বিজি থাকো! জানি সামনেই তোমার ফাইনাল। অনেক পড়াশোনা কিন্তু কি করবো? সব ভেবেই তো সারাদিন আর রাত মিলিয়ে তোমায় তিনবার কল দেই। তাতেও মনে করো দুই বেলা আশা করলে এক বেলা কথা হয়। মাঝে মাঝে তো সেটাও হয়না! আজকাল বড্ড একা লাগে নিজেকে। তোমায় ভীষণ দরকার হৃদ। বাবাও আজকাল খুব অন্যমনস্ক হয়ে থাকে! আগের মতো বাবার কন্ঠে আর উচ্ছ্বাস পাইনা। আর আজতো বাবা তার মেয়েকে রেখেই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। যা এ কালে কোনে দিনও হয়নি! তুমি তো সবই জানো।”

এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে তবেই ক্ষান্ত হলাম আমি। কেন জানিনা মনে হচ্ছে ওপাশের মানুষ টা হৃদ নয়! হৃদের কল ভেবে কলটা রিসিভ করে কানে তুলেই তো বকবক করলাম! নাম্বারটাও তো দেখা হলো না! মনের মধ্যে কামড় দিলো! ফোনের ওপাশে হৃদ না হলে তবে কার সাথে এতো গুলো কথা বলে ফেললাম? ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নিবো এমন সময় ওপাশের নিস্তব্ধতা ভেঙে সেই মোহনীয় স্বরটা ভেসে আসলো,

—-“আজ দিনটা আমার জন্য খুব বেশিই স্পেশাল ছিলো নীলাদ্রিতা। কিন্তু আমি সেটাকে কিছুতেই স্পেশাল করে নিতে পারছিনা! ভেতরটা খামখাই ভীষণ হা-হুতাশ করছে। আহত হয়ে র/ক্ত/ক্ষরণ হচ্ছে। কিন্তু আমি জানি এখানে হা-হুতাশ করার কিছুই নেই! তবুও করছে! কি করবো বলো? মন তো! কারোর বারন তার পায়ের ধুলোও ছুঁতে পারে না। বারবার হাহাকার করেও ম/র/ছে সে! বলছে আমি আ/হ/ত হচ্ছি! আমি ছি/ন্ন বিচ্ছি/ন্ন হচ্ছি! আরও কত অভিযোগ তার!”

ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার। লোকটার কন্ঠে সর্বদাই এতো মোহনীয়তা কেন বুঝতে পারিনা আমি। আজ হঠাৎ তার মনটা আ/হ/ত হওয়ার কারনটা খুব করে উদঘাটন করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু না! আমি তো এই লোকের সাথে কথাই বলতে চাইনা! তবুও কেন কলটা না কেটে চুপ করে তাকে শুনে যাচ্ছি। কেন মনের অজান্তে গুনে যাচ্ছি তার থেকে থেকে ফেলা নিঃশ্বাস গুলোর পেছনে ঠিক কতটা অভিমান লুকিয়ে আছে? তার অভিমানে কেন আমার মনটাও ভারী হয়ে যাচ্ছে?

—-” নীলাদ্রিতা, পৃথিবীর হাতে গোনা স্রেফ কিছু মানুষই বরাবর কেবল আনকমন খুঁজে। আর সেই হাতে গোনা মানুষ গুলোর মাঝে আমিও একজন অন্যতম। আমি তোমার মাঝে বরাবরই শুধু আনকমন টা খুঁজে পাই! আর যা আমায় খুব বাজে ভাবে আহত করে! আমি আহত হই তোমার হাসিতে। লন্ডভন্ড হই তোমার র/ক্তি/ম আভায় ঘিরে থাকা সেই চাহনীতে। আমি… আমি আজও আ/হ/ত হয়েছি নীলাদ্রিতা! এখনও হচ্ছি! খুব বি/শ্রী ভাবে আমি আ/হ/ত হচ্ছি! তুমি কি ফিল করতে পারছো তা?”

লোকটার কথা শুনে আমি কথা বলতে ভুলে যাচ্ছি। কথাগুলো গোছাতে ব্যর্থ হয়ে কপট রা/গ দেখিয়ে বললাম,

—-” শুনুন মি. আবেগি ম্যান! আপনি কি বলছেন আমি তার একটা শব্দও ঠিক করে বুঝতে পারছিনা! কারন আপনি মানুষ টা সব আনকমন খুঁজলেও আপনার সো কল্ড ডায়লগ গুলো খুব বেশিই কমন! সো, আমি এগুলা শুনতে ইন্টারস্টেড নই! নই মানে একদমই নই! আমি আপনার নাম্বারটা না দেখেই রিসিভ করে ফেলেছি! কারন আমি ভেবেছিলাম আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে কল দিয়েছে। সেজন্যই তখন হঠাৎ করে ওসব কথা বলে ফেলা। দয়াকরে আমাকে রোজ রোজ এভাবে কল করে এসব অবান্তর কথা বলে কনফিউজড করবেননা! আমি জানিনা কে আপনি? আর জানতে চেয়েও আমার বিশেষ উপকার হবে বলে মনে হয়না! আর আমি এও খুব ভালো করে জানি যে আপনি কখনোই আপনার পরিচয় আমাকে দিবেন না! না দিন সমস্যা নেই! নেক্সট টাইম প্লিজ আমাকে এভাবে কল করে ডিস্টার্ব করবেন না। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন!”

—-” বাবা আজ সাথে খায়নি বলে এতো মন খারাপ? আচ্ছা, বাবার মিষ্টি মেয়েটা কি জানে? বাবা মাঝে মাঝে একটু অনিয়ম করে ফেললে মেয়েকেও অনিয়ম করে বসে থাকতে হয়না! বরং নিয়ম মাফিক সবটা করে নিজের মনটাকে ভালো রাখা উচিৎ! বাবা একদিন অনিয়ম করে একটু বেশিই দুঃখ দিয়েছে মিষ্টি মেয়েকে কিন্তু মিষ্টি মেয়ে হয়তো জানেনা, বাবা তার মিষ্টি মেয়েটাকে দুঃখ দিয়ে একদন্ডও শান্তি পান না! তার মিষ্টি মেয়ে মন খারাপ না করে একটু অপেক্ষা করুক, বাবা খানিক বাদেই খাবার নিয়ে আসলো বলে!”

কথা গুলো শেষ হতেই লাইনটা কেটে গেলো। কল কাটার শব্দে আমি নিঃশ্বাস আঁটকে ধরলাম! লোকটার অভ্যাসই খুব খারাপ! নিজের কথা সম্পূর্ণ হলেই হলো লাইনটা মুখের উপর কেটে দিবে! অদ্ভুত।

—-” নিধি মা?”

দরজার পাশ থেকে বাবার গলা ভেসে আসতেই চমকে উঠলাম আমি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার পানে তাকাতেই যেন ধাক্কা খেলাম! বাবা খাবারের প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ফেনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে এগিয়ে গেলাম বাবার কাছে। বাবার হাত থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে বাবার হাত ধরে ভেতরের নিয়ে এসে অভিযোগের সুরে বললাম,

—-” এখনো ঘুমোওনি কেন? আর হঠাৎ খাবার নিয়ে আমার ঘরে? কাহিনি কি?”

বাবা বাচ্চাদের মতো করে কান ধরে বলল,

—-” মেয়েটাকে ছাড়াই কেমন স্বার্থপরের মতো খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম! কিন্তু এদিকে মেয়েটা যে রোজ বাবার হাতের প্রথম লোকমা না খেয়ে খাবার খেতে পারেনা!! সেই কথা মনে হতেই আবারও ছুটে এলাম রে মা।”

আমি মলিন হাসি দিয়ে বললাম,

—-” দিন দিন একটু বেশি বুঝে ফেলছো। শরীর খারাপ নিয়ে সেই আবার উঠে এলে। তবে আগে খেয়ে আগে শুয়ে হলোটা কি?”

বাবা ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাত মাখালো। ভাতের প্রথম লোকমা আমার মুখের সামনে দিয়ে বলল,

—-” মনটা বড্ড অশান্তি করছে রে মা! কাছের মানুষ গুলো থেকে একটু সাবধানে থাকবি!”

#চলবে_________________

[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেনে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here