প্রেয়সী পর্ব ৮+৯

প্রেয়সী
প্রেয়সী

৮|
সকলেই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত। বড় চাচ্চু বলছেন,
–‘ কাজ আছে আমার। যেতে পারবো না। তন্ময় আর রবিন যাবে সাথে। বাকি বাচ্চাদের নিয়ে নাও। ‘
বড় মা’র বিরক্তি কন্ঠের জবাব,
–‘ আপনার কখন সময় হয়? আপনার সময় হয়না , আপনার ছেলের সময় হয়না। দিনদুনিয়ার অযুহাত দেখিয়ে রাজি করাতে হয় একেকজনকে। ‘
–‘ ঘরে বসে থাকি? এখন কাজ ফেলে, জন্মদিন মানাতে যাবো তোমার সাথে ? ‘
–‘ আমার সাথে যাবেন কেন? বাহিরে রেখে এসেছেন যাদের, তাদের সাথে যাবেন। ‘
–‘ বাহিরে কাদের রেখে এসেছি? তোমার ভাইদের মতো ভেবে রেখেছ না-কি? একটা ঘরে রেখে বাহিরে আরও দু’চারটে বিয়ে করব। ‘
বড় মা রেগে গেলেন,
–‘ আমার পরিবার নিয়ে কথা তুলবেন না। ‘
থমথমে পরিবেশে শুধু চাচ্চু আর বড় মা’র আওয়াজ। তন্ময় ভাই ছাড়া বাড়ির সকলে উপস্থিত। অথচ কেউই শব্দ করছেন না। বরং চুপচাপ শুনছেন । বড় চাচ্চু কথা বলতে নিচ্ছিলেন, মুহুর্তে তন্ময় ভাই হাজির। সে ফোনে কথা বলতে বলতে আসছেন,
–‘ হ্যাঁ। আসব৷ এখনও বেরোই নি। বেরোবো। ‘
কল কেঁটে সে বড় মা’র দিক তাকালেন।
–‘ তৈরি হতে যাও। সময় নেই। ‘
ব্যস। সে তার রুমের দিক চলে গেলেন। বড় চাচ্চু আর কথা বাড়ালেন না। ধুপধাপ শব্দে বাহিরে চলে যাচ্ছেন। তখনই মা মুখ খুললেন। সে এতক্ষণ যাবত চুপ ছিলেন। কিন্তু তার চেহারায় স্পষ্ট, যে কিছু বলতে চাচ্ছেন।
ছোট গলায় বড় মা’কে অনুরোধ করলেন,
–‘ ভাবী, সুমনা’কে সাথে নেওয়া যায় কী? সমস্যা না হলে আরকি। মেয়েটা যেতে চাচ্ছে। ‘
বড় মা খুবই শান্ত মানুষ এবং ধৈর্যশীল। সে হাসিমুখে জবাব দিলেন,
–‘ সমস্যার কী৷ যাবে যেতে চাইলে। এখনই তৈরি হতে হবে তাহলে।
সন্ধ্যার আগে বেরোতে হবে। ‘
সুমনা মা’র পিছু হতে হেসে ফেলল। সুন্দর চেহরায় তার মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছে৷
–‘ ধন্যবাদ বড় মা। ‘
অতপর, রুবি আপু যখন জানলেন, সুমনা যাচ্ছে। সে তো সেই রেগেছেন। বড় মা ধমকে দিলেন,
–‘ বাচ্চা মানুষ। যাবে যাক। ‘
–‘ বাচ্চা? আর ও? যদি তুমি জানতে। ‘
তারপর, আমার দিক দাঁত কটমট করে বললেন,
–‘ বুঝবি তুই কাঁদতে কাঁদতে। দেখিস। ‘
যাহ? আবারও আমার দোষ? এখন না মা’র দোষ। সে না অনুমতি দিলেন। আমিতো দেইনি। আজীব।

সকলে তৈরি আমরা। আপাতত শুধু সুমনা’র বাকি।
আমি তৈরি থাকায় গাড়ির সামনে চলে আসলাম। তন্ময় ভাই,
রবিন ভাই, দীপ্ত আর রুবি আপু দাঁড়িয়ে। ফোন নিয়ে কথা বলছেন। আপাতত শুধু সুমনা আর বড় মা আসলেই হবে। দুটো গাড়ি বের করেছেন। নিশ্চয়ই একটা তন্ময় ভাই , আরেকটা রবিন ভাইয়া চালাবেন। ভাবলাম দ্রুত রবিন ভাইয়ের গাড়িতে বসে পড়ি। সাধারণত ব্ল্যাক’টা রবিন ভাই ব্যাবহার করেন। তো আমি কানে ইয়ারফোন গুঁজতে গুঁজতে, পেছনে আলগোছে বসে পড়লাম। পরপর রুবি আপু আর দীপ্তও বসলো পাশে। কান থেকে ইয়ারফোন খুলে ফেলল৷ এদের নিয়ে শান্তি নেই পৃথিবীতে।
রুবি আপু গাড়ির জানালা খুলে, রবিন ভাইকে ডাকলেন,
–‘ ভাইয়া। তুই বড় মা আর সুমনা’কে নিয়ে আয়। ‘
রবিন ভাইয়ের হয়তো সমস্যা নেই। সে আরামসে চাবি দিয়ে দিলেন।
–‘ তো বেরিয়ে যা। আমিও আসছি। ‘
তন্ময় ভাই গাড়ি স্টার্ট দিয়েছেন,
–‘ দীপ্ত সামনে আয়। ‘
দীপ্ত লক্ষী বাচ্চার মতো সামনে বসলো। তখনই সুমনা আর বড় মা বেরিয়েছেন। সুমনা দ্রুত দৌঁড়ে এসে বলছে,
–‘ আমি অরুদের সঙ্গে যাব। ‘
রবিন ভাইয়ের জবাব,
–‘ যায়গা নেই ওটাতে তেমন। এটা খালি। ‘
ততক্ষণে গাড়ি চলছে। রুবি আপু হাসছে,
–‘ ক্লিংগি একটা৷ ক্রিঞ্জ বিহেভিয়ার। ধুর। ‘
দীপ্ত আমার ফোনে গেমস খেলছে। আঁড়চোখে তাকালো,
–‘ মনে হয়, সুমনা আপু তন্ময় ভাইকে পছন্দ করেন। ‘
তন্ময় ভাই এমন ভাবে তাকিয়েছেন দীপ্তর দিক, যে দীপ্ত দ্রুত ফোন সরিয়ে ফেলল,
–‘ আররে আমি একা বলছি। রুবি আপুও বলছিল। মেয়েটা তোমার সাথে.. ‘
দীপ্ত চুপ হয়ে গেলো। আমি জানালার বাহিরে তাকালাম। সত্যি বলতে, ইদানীং তন্ময় ভাইয়ের নামের পাশে, অন্য মেয়েদের নাম কেমন সহ্য হয়না৷ আবার তন্ময় ভাইয়ের আশেপাশে আমি থাকতে পারিনা। সব দিক দিয়ে জ্বালা। এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি।

যেখানে যাচ্ছি, সেটা হচ্ছে তন্ময় ভাইয়ের নানু বাড়ি। বিশাল সেই বাড়িতে থাকেন তন্ময় ভাইয়ের চার মামা , তাদের বউ, বাচ্চা। আর নানু। হ্যাঁ তন্ময় ভাইয়ের নানী এখনও জীবিত। তার নানা মারা গিয়েছেন আজ চার বছর হচ্ছে। তখন তন্ময় ভাইয়ের যা অবস্থা ছিলো, তা নাইবা বা বললাম।
বড় মা হচ্ছেন সে বাড়ির চার ভাইয়ের একমাত্র বোন। খুবই সৌখিনতায় বড় করা তাকে। সে পাইনি এমন কিছুই নেই। এখন,
বড় মা’র বদলে সে বাড়িতে আদর পাচ্ছেন তন্ময় ভাই। সে প্রচুর প্রিয় ব্যক্তি সেখানে। সাধারণত তার নানু। সে তন্ময় ভাইয়ের পাগল।
তন্ময় ভাই ঢাকা হতে ফিরলে, আগে তাকে তার, নানুকে দেখে আসতে হয়। নাহলে নানু নিজেই কল করে আসতে বলবেন। মাঝেমধ্যে নিজে রেঁধে তন্ময় ভাইকে খাওয়াবেন।
এখনও সে তন্ময় ভাইকে কপালে চুমু খান। আর জড়িয়ে ধরলে তো ছাড়বেনই না। তারপর তার মামাতো ভাই-বোন গুলো। এদের নিয়ে যাই বলব কম। এক একটা খুবই অদ্ভুত। আজকে যাচ্ছি এদের রুপ দেখতে।

গাছগাছালী ছাড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ভেতরে। বলা যায়, তাদের বাড়ির অবস্থান, এক জঙ্গলের ভেতরে। যেখানে আশেপাশে দোকান, স্টল বা অন্য কোনো বাড়ি নেই। বিশাল যায়গা নিয়ে তাদের এই বিশাল বাড়ি। বাড়িটি সম্পুর্ন পুরনো আমলের। তাও বাড়িতে কোনো পরিবর্তন আনেননি বা পুনরায় তৈরী করার সিদ্ধান্তও নেননি।
বিশালত্ব গেইট দিয়ে বাড়ির চারপাশ সম্পুর্ন নিরাপদ করা। অথচ, বাড়ির ভেতরে বর্তমান যুগ অনুযায়ী সৌখিনতায় ঘেরা।
বাড়ির সামনে রয়েছে চিকন রাস্তা। যেখানে শুধু একবারে একটা গাড়ি চলাচল করতে সক্ষম। সেই রাস্তার দু পাশেই ঘন গাছের সারি৷ বাহির থেকে দেখলে অনেকটা, ভুতুড়ে বাড়ির অনুভূতি পাওয়া যায়। কিছুটা ভয়ংকর ভীতু পরিবেশ।
রাস্তা সম্পুর্ন অন্ধকার। শুধু বাহিরে গাড়ির লাইটের আলো।
দীপ্ত বলল,
–‘ ওইযে পেছনে রবিন ভাইয়ের গাড়ি। তারাও চলে এসেছে। ‘
কিছুক্ষণের মাঝে আমরা আলোর দেখা পেলাম। তারমানে চলে এসেছি। বাড়ির সামনে লাইটস ব্যবহার করা। ধুমধাম গানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। চেঁচামেচি তো আছেই।
আমাদের গাড়ি পৌঁছাতেই, অনেকে দৌঁড়ে দরজার সামনে। একজন আরেকজনকে চেঁচিয়ে ডাকছে।
আমি, রুবি আপু আর দীপ্ত, দেরি করে বেরোলাম। বেরোতেই আইরিন সামনে। বলেছিলাম না, মেয়েটা চমৎকার ভালো। আজ দেখতেও মাশাল্লাহ লাগছে। গরজিয়াস গ্রাউন্ পড়া, সাথে মাথায় ক্রাউন। তারপর গরজিয়াস মেকওভার। মোট কথা অনেক প্রিটি দেখতে। আমাদের সাথে ওর যায় ভালো। কয়েকটা প্রচন্ড অহংকারী বাবাহ। ওইযে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে, আমাদের দিক তাকিয়ে। এদের ভাবসাব অন্যরকম। কিন্তু ব্যবহার ভালো। তেমন ক্লোজ ভাবে মেশা হয়না, যেমনটা আইরিনের সাথে হয়।
এদিকে সুমনা খুবই মিশুক। কি সুন্দর ওদের সাথে কথা বলছে। অথচ, এটা কিন্তু ওর প্রথম দেখা সকলের সাথে৷ যেটা বোঝাই যাচ্ছে না। ইমপ্রেসিভ।

এর মাঝে, আমি কতবার তন্ময় ভাইয়ের দিক তাকিয়েছি তা বলার বাহিরে। আমি তাকাই আঁড়চোখে। আর সে তাকালে তাকিয়েই থাকেন। আমার মতো আঁড়চোখে তাকান না। ব্যাপারটা মজার।
কিন্তু, আপাতত কিছুই মজার না। আইরিনের বন্ধুবী আছে এখানে, অনেক গুলো। সবগুলো তন্ময় ভাই আর রবিন ভাইয়ের দিক তাকিয়ে। রবিন ভাই কথা বলছেন কয়েকটার সাথে। আর কয়েকটা তন্ময় ভাইয়ের আশেপাশে। কিন্তু সে কথা বলছেন না। মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে।
রুবি আপু আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,
–‘ আইরিনের বন্ধুবী গুলোকে দেখ। আর সুমনা’কে দেখ, কী বেশরম।
তন্ময়ের সাথে সাথে হাঁটছে, কথা বলছে। আর তুই? তোর না ওর সাথে থাকার কথা। তোর হবু জামাই। অথচ, তুই? ‘
অনুভূতি আর লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,
–‘ আমি কি করব। ‘
–‘ মানে? তুই ওরে বলবি না তোদের ব্যাপারে? বেশিকিছু না তন্ময়ের ফোনের লকস্ক্রিন দেখিয়ে দিস। বুঝে যাবে। তারপরও যদি না শুধরোয়, তো এমন অপমান করবো যে…!
–‘ থামো। ও জানে না বিদায় এমন করছে। আর ও সত্যি তন্ময় ভাইকে খুব পছন্দ করেন। ‘
–‘ কী সুন্দর। তো ওর সাথে বিয়েটা দিয়ে দি তন্ময়ের?’
আমি বড়সড় চোখ করে তাকালাম।
–‘ কী জবাব দেস না কেন? থাপ্পড় একটা দিয়ে, কান ঝালাপালা করে ফেলবো। ‘
কথাটা বলেই রুবি আপু চেঁচালেন,
–‘ তন্ময়। ‘
তন্ময় ভাই আসলেন।
–‘ কী হয়েছে? ‘
রুবি আপু অসহায় গলায় বললেন,
–‘ অরু ভয় পাচ্ছে। বেচারি। ‘
সে আমার দিক তাকালেন। দীপ্ত কর্কশ কন্ঠে বলল,
–‘ চুন্নি মিথ্যে বলছে। অরু আপু তেমন কিছুই বলেনি। ও উল্টো অরু আপুকে শেখাচ্ছে, কীভাবে তোমার পাশে থাকা প্রোয়জনীয় । ‘
তখন রুবি আপুর মুখ দেখার মতো ছিলো। ভয়ংকর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন দীপ্তর দিক। এরা এখানে এসেও থামছে না। অবশ্য আমি বেশ লজ্জা পেলাম। কী ভাববেন এখন?
অথচ তন্ময় ভাইয়ের জবাব ছিলো,
–‘ ও কী ফিটার খায়? অন্যদের বুঝাতে হবে কেন। ‘
কথাটা বলেই ইশারা করলেন ভেতরে যেতে। আর সে চলে গেলেন।
কথা বলতে বলেছে কে এটাকে? শয়তান।

চলবে
® নাবিলা ইষ্ক
৯|
তন্ময় ভাইয়ের নানু এসেছেন। কন্ঠে মধুরতা,
–‘ সমস্যা হচ্ছে না তো কোনো? ‘
রুবি আপু উঠে, হেসে জবাব দিলেন,
–‘ সমস্যা হচ্ছেনা নানু। ‘
–‘ মাশাল্লাহ। দীপ্ত বড় হয়েছে দেখছি৷ বিয়ে-শাদি দিতে হবে নাকি ছোট সাহেবের? ‘
দীপ্তর বড় গলার জবাব,
–‘ এহ। এখনও অনেক দেরি। আরও বড় হতে হবে। তন্ময় ভাই, রবিন ভাইদের মতো। তখন বিয়ে করবো। ‘
–‘ আচ্ছা? আর প্রেম? প্রেম কয়টা করবে? ‘
দীপ্ত লজ্জা পেলো। আমতাআমতা করলো,
–‘ করতে তো এখনই ইচ্ছে হয়। ‘
নানু আবারও প্রশ্ন করলেন,
–‘ আটকাইছে কে? ‘
দীপ্তর অসহায় কন্ঠ,
–‘ আমি ছোট। মেয়ে ভালো লাগে বড়। ‘
রবিন ভাইয়ের থাপ্পড় পড়লো দীপ্তর ঘাড়ে। হঠাৎ ভাইয়াকে দেখে দীপ্ত ভরকে যায়। দ্রুত নানুর পেছনে চলে যায়। নানু আর রুবি আপু হাসছে। আর আমার তো হাসতে হাসতে ব্যালেন্স হারিয়ে গিয়েছে।ছেলেটা এতো পাকনা।
রবিন ভাই চোখ রাঙালেন,
–‘ এগুলো কই শিখেছিস? ‘
–‘ তোমার থেকে। তুমি না প্রেম করো। বড়বড় আপুদের সঙ্গে। ‘
মানইজ্জত খেয়ে দিল। আমি আর রুবি আপু আঁড়চোখে তাকালাম। এটাই হচ্ছে কারণ, যে কেউ দীপ্তর সাথে লাগতে যায়না। এই ছেলে সকলের সব জানে। এবং হুট করে সব বলেও দেয়। নানু তন্ময় ভাই’কে কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার আগেই রবিন ভাই রফাদফা। হাহা।

আরিফ, তন্ময় ভাইয়ের বড় মামার বড় সন্তান। এর সাথে কথা আমার ইহকালেও হয়নি। কখনও চোখে-ই পড়েনি। পড়বে কীভাবে? আমার অর্ধেক বয়স গিয়েছে, তন্ময় ভাইকে বকতে বকতে। আশপাশ পর্যবেক্ষণ করার, সময় কোথায় পেলাম?
অথচ, সেই আরিফ আজ কথা বলতে এসেছে।
–‘ কী অবস্থা অরু? ‘
ইতস্তত গলায় জবাব দিলাম,
–‘ আলহামদুলিল্লাহ, ভাইয়া। আপনার? ‘
–‘ ভালো নেই। কিন্তু ভালো থাকব। যদি তুমি আমাকে একটা সাহায্য করো। ‘
–‘ সামর্থ্য থাকলে..’
–‘ বাবাহ, এতো কঠিন কিছু না। সিম্পল। লিসেন, ওইযে হোয়াইট ড্রেসের মেয়েটি দেখছ? সি’জ মাই গার্লফ্রেন্ড। রেগে আছে। ফোন রিসিভ করছেনা। আর ওখান থেকে নড়ছেও না। আর তুমিতো জানো, আমার চাচারা আশপাশে। ওর সাথে এখানে কথা বলা ইম্পসিবল। নাউ, ইউ হ্যাভ টু ডু ইজ, ওকে গিয়ে একটা ম্যাসেজ দিবে। পারবে? ‘
সিম্পল তো। কারও কাজে আসা ভালো। হেল্প করা সওয়াব।
–‘ আচ্ছা। কী বলব? ‘
আরিফ ভাইয়া একটু কাছে আসলেন। ধীরে বললেন,
–‘ আরিফ বাড়ির পেছনে, অপেক্ষা করছে। দ্রুত না আসলে সে চলে আসবে। এভাবে বললেই হবে। ‘
লাগাতার মাথা দোলালাম। সাহস নিয়ে 8প সেই সাদা ড্রেসের দিক। সামনে সুমনা হাজির।
–‘ তন্ময় ভাই কোথায় অরু? ‘
–‘ আমি তাকে নিয়ে বসে? সে কী আমায় বলে যাওয়ার মানুষ? এখন যা, কাজ আছে। ‘
বলতে বলতে ওঁকে চাপিয়ে, মেয়েটির দিক আসলাম। আমাকে দেখে অবাক হলো। পরক্ষণে হাসলো,
–‘ হেই। ইউ আর? ‘
–‘ আরাবী। হাও এবাউট ইউ? ‘
–‘ লিজা। নাইস টু মিট ইউ। ‘
–‘ ইয়েস। আমি একটি ম্যাসেজ নিয়ে এসেছি, আরিফ ভাই হতে। ‘
সাথে সাথে আপুটা মুখ ফোলালেন। চোখ কুঁচকে নিজ মনে বকতে লাগলেন,
–‘ শালা সয়তান। নাইজেরিয়ার উগান্ডা। ভীতু বিলাই। নিজে আসেনি। এতো ভয় পেলে প্রেম করতে বলেছে কে, ওকে? বলদা একটা। কী দেখে এর সাথে আজ, পাঁচ বছর যাবত রিলেশনশীপে আছি? আল্লাহ মালুম। ‘
আমার দিক চোখ পড়তেই হাসলেন। তারপর অভিমানী কন্ঠে জবাব দিলেন,
–‘ বলো। দেখি সয়তানের কী বলার আছে। ‘
–‘ বলেছেন, সে বাড়ির পেছনে। এখনই আপনার যেতে হবে। নাহলে সে চলে আসবেন এখানে। ‘
–‘ তাও মাফ চাইবে না। দাঁড়াও যাচ্ছি। আজ ব্রেকআপ হবেই। বাড়িতে গিয়ে ব্রেকআপ ড্যান্স দিব। ‘
মেয়েটা চলে গেলো। দেখতে মাশাআল্লাহ। ব্যবহারও সুন্দর। আরিফ ভাইয়ের সাথে খুবই সুন্দর মানাচ্ছেন।

ডাক শুনতেই পেছনে ফিরলাম। রুবি আপু। সে আমার হাত ধরলেন শক্ত করে। কড়াকড়ি কন্ঠে বলে দিলেন,
–‘ আমার হাত থেকে গেলেই, মাইর। যতক্ষণ থাকব। আমার সাথে থাকবি। ‘
–‘ এখানেই আছি। কোথায় যাব। আজীব। ‘
নিজের পাশে বসিয়ে, তারপর হাত ছাড়লেন। আমি আবারও বললাম,
–‘ হঠাৎ। হয়েছে কী? ‘
দীপ্ত আইসক্রিম খাচ্ছে। লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,
–‘ তন্ময় ভাই বলেছেন তোমাকে রুবি আপুর সাথে সাথে থাকতে।
আরেকবার এদিকসেদিক দেখলে, সোজা ড্রাইভার দিয়ে পাঠাই দিবে বাড়ি। ‘
–‘ তো পাঠাক। এভাবেও আমি থাকতে চাচ্ছিনা। ‘
হাহ। কই এই নবাবজাদা। কোথার থেকে দেখছে। আশপাশে চোখ বোলালাম। এতো মানুষের মাঝে, কই সে তো নেই।
দীপ্তকে ধীরে প্রশ্ন করলাম,
–‘ সে কীভাবে দেখলেন আমায়? ‘
–‘ তোমার বাম সাইড ফিরে, মাথা উঁচু করে ফেলো। ‘
আমি দ্রুত সেদিক তাকালাম। তন্ময় ভাই দাঁড়িয়ে। হাতে গ্লাস। সাথে তার কাজিন আরও কে কে। সে এদিকই তাকিয়ে। আমার দিক। সে কী এতক্ষণ এভাবে তাকিয়ে ছিলো? আমার গলাটা শুঁকিয়ে আসছে। চুপচাপ নড়াচড়া বন্ধ করে ফেললাম। শক্ত হয়ে বসে রইলাম। রুবি আপু হাসলেন,
— চাপ নিস না। কিছু বলবেনা তোকে। ‘
বলবেনা? হ্যাঁ, কিছু বলবেনা। কিন্তু করবে। হাড্ডিগুস্ত আলাদা করে দিবে। পুরো অনুষ্ঠানে আমি বসে রইলাম। মাঝেমধ্যে গানের সঙ্গে নিজেও তাল মেলালাম।

যখন জন্মদিনের কেক কাঁটা হলো। তখনও তন্ময় ভাই নিচে নামেননি। সেখান থেকেই কেক কাঁটার জন্য বললেন। আইরিন জানে, সে আসবে না। তাই অনুরোধ তেমন করেনি। বরং নিজে গিয়ে খাইয়েছে আবার খেয়েছে।
এখানে আমি ভাবছি, কখন এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব। রুবি আপু অবশ্য এঞ্জয় করছেন। আমারই ভালো লাগছেনা। লাগবে কীভাবে? আমাকে তো এঞ্জয় করতেই দিলো না। কীভাবে তাকিয়ে তখন থেকে। কেউ তাকিয়ে থাকলে, নিজেকে নিয়ে ফুর্তি করা যায় ? আমার তো মনে হয়না। অস্বস্তিকর চাপে আমি শুধু দাঁড়িয়ে হেসেছি।
কিছুক্ষণের মাঝে, বড় মা আসলেন। সকলকে আলাদা নিলেন, ভেতরের ডাইনিং এ। রুবি আপু, রবিন ভাইয়া, সুমনা, দীপ্ত। আমাদের একাই বসিয়েছেন। সুমনা প্রশ করলো,
–‘ তন্ময় ভাইয়া? সে ডিনার করবে না? ‘
–‘ ওর কথা বলিও না। ডেকে এসেছি। খাবে না। কি আবর্জনা খাচ্ছে কখন থেকে। ‘
সুমনার জবাব,
–‘ আমি যাবো? ‘
–‘ আসবেনা। তুমি খেতে শুরু করো। ‘
খাওয়া শেষ হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নেওয়া হলো। আপাতত যাবার পালা। কখন বেরোবো , সেই চিন্তায় মাথাটা ভার। খুবই ক্লান্ত লাগছে। ঘুমাবার জন্য চোখ লাফাচ্ছে। বাড়ি গিয়ে আগে হবে এক ঘুম। তারপর অন্যকিছু।

যাবার পথে তন্ময় ভাইয়ের নানু বাড়ির, কেউই যেতে দিবেন না।

সকলেই বারবার বলছেন,
–‘ কাল যা। রাত হইসে অনেক। ‘
বড় মা বললেন,
–‘ আমিতো থাকতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু, বাড়ি খালি। বাচ্চারা সব সাথে। তন্ময়ের বাবা রাগবেন। খালি বাড়ি সে একদম পছন্দ করেন না। ‘
রবিন ভাইয়ের জবাব,
–‘ তাহলে থেকে যাও। কাল বড় চাচ্চু এসে নিয়ে যাবে। ‘
–‘ আসবেন না৷ ‘
তন্ময় ভাইয়ের মুখ খুলল,
–‘ আসবে কাল। যাচ্ছি আমরা। ‘
তন্ময় ভাই বেরিয়ে গেছেন। সে যেহেতু বলেছে, বড় চাচ্চু আসবেন। তাহলে সত্যিই আসবেন। নানু সকলের হাতে বড়বড় বাড়ি ধরিয়ে দিলেন। বড় মা বললেন,
–‘ সাবধানে যাস। ‘
আমি মাথা দোলালাম।
–‘ আচ্ছা। আসি। ‘
গাড়িতে উঠতে গিয়ে আরেক ঝামেলা। রুবি আপু সুমনা’কে উদ্দেশ্য করে বলল,
–‘ সুমনা, তুমি কি ভীতু? মানে অন্ধকার ভয় পাও? ‘
–‘ আররে না। ‘
–‘ আহ, বাঁচা গেলো। আমি আর রবিন প্রচন্ড ভীতু। সাহসী, তুমি থাকলে ভয় কম পাব। ‘
বলতেই সে সুমনা’কে এক প্রকার, জোরপূর্বক গাড়িতে বসিয়ে দেন।
তন্ময় ভাইকে দুষ্টু হেসে বলল,
–‘ সাবধানে আসিস। ‘
আমার শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হওয়ার জোগাড়। রবিন ভাই সেই গাড়িতে ঢুকছেন। তারমানে, তারা আমাকে একা পাঠাচ্ছেন? তন্ময় ভাইয়ার সাথে? পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে, আমি রুবি আপুর হাত ধরলাম।
–‘ না। প্লিজ। সবাই মিলে ভাগাভাগি করে যাই।
তাই না? প্লিজ। ‘
রুবি আপু বড়সড় না করে দিলেন।
–‘ প্লিজ। ‘
এতো ভয় পাচ্ছিলাম বলার বাহিরে। পছন্দের ব্যাপারটা নিয়ে, আমি এখনও ঝটকায়। তারউপর তন্ময় ভাইয়ের সাথে থাকলে, আমি পর্যাপ্ত শ্বাস নিতে অক্ষম। নির্ঘাত শ্বাস আটকে মরে যাব। নাহলে হার্টঅ্যাটাক ।
রুবি আপু আমার দিক মাথা আনলেন। ধীর আওয়াজে বললেন,
–‘ সুমনা’কে একা তন্ময়ের সাথে পাঠাই দি? তোর যেহেতু এতো সমস্যা। ‘
ধীরে বলেছেন? উঁহু। এতটা ধীরে বলেননি। নির্ঘাত তন্ময় ভাই শুনেছেন। আমার কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে, বিরক্তিকর শ্বাস ফেললেন আপু,
–‘ আজীব অরু। দু ঘন্টার রাস্তা। আর আমরা আগপাছ যাব। পাশাপাশি। ‘
ব্যস। আপু চলে যাচ্ছে। আমার এতো অনুরোধ, কিছুই গায়ে নিলেন না। আমারও দিন আসবে। জ্বালিয়ে মারব।
এদিকে তন্ময় ভাই কোনো কথা বলছেন না। একভাবে দাঁড়িয়ে।
তার কী ইচ্ছা অনিচ্ছা কিছুই নেই? সে বললে কি এমন করতো?
সাহস পেতো?
ওদিকে ভেতর থেকে সুমনার আওয়াজ,
–‘ ওদের সাথে যাই। তিনজন তিনজন হবে। ‘
রুবি আপুর মিষ্টি জবাব,
–‘ অরুর সাথে আমার লেগেছে। আর তোমাকে আমার অনেক ভাললাগে। তা তো জানোই। একটু কথা শেয়ার করব।
শুনবে না? ‘
সুমনা’র না বলার রাস্তা আপু রাখলেনই না।

এতো ঝামেলা যাকে নিয়ে, তার মাথা ব্যাথা নেই। একদম শান্ত। অথচ সুমনা তো তার জন্যই এমন করছে। তার দ্বায়িত্ব নেই?

চলবে
® নাবিলা ইষ্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here