বড্ড ভালোবাসি পর্ব ২৫+২৬

গল্প :- বড্ড ভালোবাসি
পর্ব :- ২৫ এবং ২৬
Writer :- Labiba Islam Roja
:
:
:
আম্মুর চেঁচামেচি শুনে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। তাহলে আম্মু আমাকে আর উনাকে এক সাথে দেখে নিয়েছেন।এবার কি হবে উনি তো বলেছিলেন উনি সকালের আগে চলে যাবেন তাহলে।পাশে তাকিয়ে দেখি উনি নেই তারমানে চলে গেছেন এটা ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি যেখানে ঘুমিয়েছি সেখানে নেই।আরে আমি এখানে কি করে আমি তো উনার মাথার পাশে আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে ছিলাম তাহলে এখন ঠিকঠাক শুয়ালো কে।।তার মানে উনি হুম তাই হবে। আম্মু চেঁচামেচির মাএা বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু এই সাত সকালে তার চেঁচামেচির কারন অবশ্য আমি আবিষ্কার করতে পারছিনা।
.
ঘুম থেকে উঠে আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুমে গেলাম সেখানে ভাইয়া আর আব্বু নিরব দর্শক হয়ে দাড়িঁয়ে আছে।কিন্তু আম্মু কাকে এত ঝারছে বুঝতে পারছিনা।তাই ব্যাপারটা বুঝার জন্য আমিও দর্শক সারিতে যোগ দিলাম।আম্মু আমাকে দেখে আরো ক্ষেপে গেলেন
.
এই যে নবাবজাদী এখন আপনার উঠার সময় হলো কলেজ যাবেন কখন।এই মেয়েটা কোনো কর্মের নয় তিশাকে দেখ প্রতিদিন ঠিক টাইমে কলেজ যায় আর নবাবজাদীর জন্য তারও লেইট হয়।মাগো তিশাকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারো।তিশার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৩২ দাঁত বের করে কেলাচ্ছে।এইটা নাকি আমার বান্ধবী আম্মু আমায় বকছে আর ও হেসেই চলেছে।আমি চোঁখ বড় বড় করে তাকাতেই হাসি বন্ধ করলো ফাজিল মাইয়া আজ তোর জন্য আমার এত বকা শোনা লাগলো আজকে কলেজ চল তোর খবর আছে ।কেন রে মা একটু সকাল সকাল উঠলে কি হয়।সামনেই যে তোমার ভাইয়ের বিয়ে সেই হুশ কি তোমার আছে।এত কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে রাজি করালে আর এখন তুমি তোমার ঘুম নিয়েই বিজি।এবার একটু ঘুম ছেড়ে ভাইয়ের বিয়েতে নজর দাও।
.
এতক্ষণে বুঝলাম আম্মুর আগ্নেয়গিরির রূপ ধারন করার কেন্দ্রবিন্দু আমি।ভাইয়া আর আব্বুর দিকে করুন চোঁখে তাকালাম। ভাইয়া আব্বু ইশারা করে বলল চুপচাপ রুমে চলে যেতে কারন আমি এখানে যতক্ষণ থাকবো আম্মুর মুখ চলবেই আমি এখান থেকে গেলে তবে অফ হওয়ার চান্স আছে।এটা আমরা সবাই জানি আম্মু যার উপর রাগে তাকে যতক্ষণ চোঁখের সামনে দেখবে ততক্ষণ বকবে ক্লানিও আসবে না। আর আব্বুও এখন কিছু বলতে পারবেন না কারন এতে হিতে বিপরীত হবে।তাই নিরব থাকাটাই বেটার।
.
রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় ঘেষে থাকা টেবিলের উপর চোঁখ গেল।গ্লাস দিয়ে ঢাকা একটা কাগজ হাতে নিয়ে দেখলাম একটা চিরকুট। এই ফোন আর ম্যাসেজিং এর যুগে আমাকে চিরকুট লিখল কে ভাবতে ভাবতে চিরকুট খুললাম।চিঠির ফার্স্ট লাইন দেখেই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
.
মাই পেত্নী

তোমাকে এই মিষ্টি মাখা রোদের মিষ্টি সকালের শুভেচ্ছা। আন্টি সরি শাশুমায়ের ডাকাডাকিতে নিশ্চয়ই এখন ঘুম ভেঙেছে।আমি তোমার কাছে এসেছিলাম ঘুমাবো বলে কিন্তু তুমি এতই ঘুম কাতুরে আমাকে ঠিকমত ঘুম না পারিয়ে বাচ্চাদের মতো তুমিই ঘুমিয়ে পরলে এজন্যই তোমাকে আমি বাচ্চা বলি।তোমাকে বলেছিলাম আমার জন্য তোমার দিকে কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে না আমি আমার কথা রেখেছি সকাল হওয়ার আগেই চলে এসেছি।রোজ বেবি একদম বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে ঘুমাও কেন হুম।এই বাচ্চা মেয়েটাকে রেখে আসতেই মন চাইছিলো না তবুও মন খারাপ করে আসতে হলো।এবার আপনি কলেজ এসে আমার মনটা ভালো করে দিলে কৃতার্থ হবো।

ইউর রিহান
.
কলেজ প্রাঙ্গণে বসে আছি আর তিশা অপরাধীর মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।রাস্তায় আসার সময় কোনো কথা বলিনি এমনকি কলেজেও দুইটা ক্লাস কমপ্লিট এখনও আমি চুপচাপ। তিশা অবশ্য কথা বলতে চাইছে কিন্তু আমি কথা বলবো না।কেন বলব বলব না কথা।তিশা আর পারছে না তাই এবার আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল
.
রোজ তুই আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?কি করেছি আমি বলনা রে।
.
আমি এমন ভাব করছি যেন কথাগুলো আমার কানেই ঢুকে নি।
.
রোজ কি করেছি বল নাাা।
(চিৎকার করে)
.
ওই বান্দরনি তুই জানিস না তুই কি করছিস।আমাকে সকাল সকাল মায়ের কাছে এত বকা খাওয়ালি আর এখন না জানার ভান করছিস?
.
আমি আমি কি করলাম। আন্টিকে কি আমি বলছিলাম নাকি তোকে বকতে।
আন্টি তো নিজেই বকলো
.
তুই বলিস নাই কিন্তু যখন আম্মু আমায় বকলো তখন হুহু করে দাঁত বার করে হাসছিলি কেন?তখন তো আম্মুকে থামাতে পারতি তা না করে মজা নিচ্ছিলি।
.
আন্টি বকলো তার কোনো দোষ নাই আর আমি হাসলাম বলে আমার দোষ।
.
হ দোষ যা আমার সামনে থেকে আর আমার সাথে কথা বলবি না।
.
কই যামু ওই রোজ কথা ক না।আর কতক্ষণ এভাবে চুপ কইরা থাকবি।
.
আমি তোর লগে কথা কমু না তুই যা সর এখান থাইক্কা।
.
ওই সরি।এবার বাদ দে।
.
যা এইবারের মতো বাদ দিলাম আর কখনও এমন করলে তোর বারোটা বাজাইয়া ছাড়মু।
.
কলেজ আসার পর থেকে আমার চোঁখ কন্টিনিউয়াসলি রাক্ষস কে খুঁজে চলেছে কিন্তু তার দেখা নেই।লাইব্রেরিতে বসে আছি আর রাক্ষসকে খোঁজচ্ছি।আমার ধারনা ছিলো হয়তো লাইব্রেরীতে থাকবে কিন্তু এখানেও নেই গেলেন কোথায়।আমাকে কলেজ আসতে বলে উনারই কোনো খোঁজ নেই।এমন সময় আবির ভাইয়া আর রিহান ভাইয়া এসে হাজির।রাক্ষস আবির ভাইয়ার কাধেঁ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর দুজনে ফিসফিস করে কি যেন বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।এদের এই মূহুর্তে আমার সামনে দেখে আমি চরম বিরক্ত।তার উপর এদের হাসি নিতে পারছি না তাই দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছি।পাশ থেকে আবির ভাইয়া বলে উঠলেন
.
কেমন আছো রোজ?আজকাল তো আমাদের সাথে কথাই বলো না।কি করেই বা বলবে এখন তো দিন নেই রাত নেই একজন কে নিয়েই ব্যস্ত।
.
উনার কথায় আমি আকাশ থেকে ধপাস করে মাটিতে পরলাম।দিন নেই রাত নেই মানে!তাহলে কি উনি জানেন কাল রাতের কথা ছিঃছিঃ এই রাক্ষসের জন্য কি আমি কলেজে মুখও দেখাতে পারবো না।রাক্ষসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি মুচকি মুচকি হাসছেন তার মানে আবির ভাইয়া সব জানেন।কোনো মতে বললাম জ্বি ভালো (জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)
.
রিহানঃকি ব্যাপার রোজ তুমি আজ এতো চুপচাপ? অন্যদিন তো মুখে খই ফুটে আজ কি হলো।আমি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে তিশা বলল
.
ভাইয়া আজ রোজের মন ভালো নেই।আর কথা বলার অবস্থাতেও নেই।
.
আবির+রিহানঃরোজেরও মন খারাপ হয় সিরিয়াসলি তা কেন কি হয়েছে(আগ্রহ নিয়ে)
.
এরা দুই বন্ধু আমায় কি মনে করে খোদা জানেন।আশ্চর্য আমি কি যন্ত্র নাকি আমার কোনো অনুভূতি থাকবে না।মানুষ তো নাকি ভালো লাগা মন্দ লাগা দুইটাই কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক না কি।।আপনারা এমনভাবে বলছেন যেন আমি কোনো মানুষ নই ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্র।
.
হুম তেমন কিছু না ভাইয়া প্রতিদিন দেরিতে ঘুম থেকে উঠে বলে আন্টির কাছে ঝার খেয়েছে।(হেসে)
.
আবিরঃতোমাকে মানুষ হতে যাবে কেন?তুমি হলে রোজ মানে গোলাপ। আর গোলাপ কোনো মানুষের জাতের মধ্যে পরে না।গোলাপ তো ফুলের জাতের মধ্যে পরে।
তাই আমরা তোমাকে ফুল বলেই মনে করি।আর গোলাপ হলো ভালোবাসার প্রতীক সব ভালো কাজেই ব্যবহার হয় তাই গোলাপের আর যাইহোক কখনও মন খারাপ হতে পারে না তাই না রিহান।(ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে)
.
হুম একদম! তাই বলো তাহলে আজকে রোজের মুড অফ না কথাটা হবে মুখ অফ।বলে সবাই হা হু করে হাসতে লাগলো।
.
এরা আমার এত সুন্দর একটা নামের যে এই রকম রূপ দিতে পারে সেটা আমার কল্পনাতীত ছিলো।কি সুন্দর দুজনে মিলে আমাকে মানুষ থেকে ফুলে রূপান্তর করে দিলো। এদের একেকটাকে এখন ধরে আচার মারতে ইচ্ছে করছে।কাছাকাছি লবন মরিচ পেলে চিবিয়ে খেতাম।
.
জানো তিশা আমি কিন্তু এতে খুব খুশি আন্টির ঝারি খেয়েও যদি উনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেন।আর আমি তো বলবো উনাকে শায়েস্তা করার জন্য হলেও উনার সাথে এমন করা উচিৎ।
.
আমার আম্মুর আমার সাথে কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয় সেটা তাকে বুঝতে দিন কষ্ট করে আপনার ওই কুমরোর মতো নাগ গলাতে হবে না।
.
নাক যখন আছে গলাতেই তো হবে।দেখি নাকটা গলিয়ে একটু ছোট করতে পারি কিনা বলেই অট্রহাসিতে ফেটে পরলো সবাই।
.
আর সহ্য হচ্ছে না ব্যাটা রাক্ষস ফাজিল এই ছিল তোর মনে।আমাকে কলেজ আসার কথা বলে এখন সবকয়টা মিলে আমায় পঁচাচ্ছিস। ফাজিল মাইয়া তুইও ওদের দলে যোগ দিলি ঠিক আছে থাক তোরা আমি গেলাম।
.
কাউকে কিছু না বলে আচমকা ব্যাগ কাধেঁ নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গেলাম। পেছনে সবাই ডাকছে কিন্তু আমি শুনবো না কেন শুনবো এখন এতক্ষন ধরে এতকিছু করে এখন আবার ডাকবি ফাজলামো পাইছিস।
.
রাক্ষস পেছন পেছন রোজ রোজ বলে দৌড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।আমি তাকে পাশ কাটিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলাম।সে আবারও আমার সামনে এসে দাঁড়ালো….রোজ শোন এত রাগ করছো কেন?আমরা তো জাস্ট মজা করছিলাম……
:
:
Part :- 26
:
:
রাগ করবো কেন?আমি কারো সাথে রাগ করিনি।
.
সত্যি রাগ করোনি
.
না(গাল ফুলিয়ে)
.
তাহলে অভিমান হয়েছে।
.
নাা।কোনো টাই না।আমার সাথে একদম কথা বলবেন না।এতক্ষণ ধরে সবাই মিলে আমাকে পঁচাইয়া শান্তি লাগে নাই এখন আবার আসছেন যান দূর হোন আমার সামনে থেকে।
.
এত জোরে চিৎকার করছো কেন আমি কানে শুনি তোমার মত কাঁলা না।দূরে যাব বলে কাছে আসিনি।এমন বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রেখো না।আমরা তো জাস্ট ফান করেছি।
.
কি বললেন আমি কাঁলা।(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
কই না তো! আমি আমার কথা বলছিলাম আমি কাঁলা আমার বউ কাঁলা ফিউচার বাচ্চা কাচ্চাগুলোও কাঁলাই হবে।আচ্ছা বাদ দাও এদিকটায় চলো একটু বসি।
.
উনার কথা শুনে হাসি থামাতে পারলাম না।হুহা করে হেসে দিলাম।যার বিয়েই হয়নি সে ফিউচার বাচ্চা কেমন হবে তা ভাবছেন।নাহ আমি বাসায় যাব।
.
অবাক হয়ে দেখছি কত সুন্দর হাসিটা।হাসলে আরও মায়াবী লাগে।আমাকে পাগল করার জন্য এই হাসিটাই যথেষ্ট ।ওকে যত দেখি ততই মুগ্ধ হই। এইভাবে হেসো না এখানটায় লাগে(বুকের বা পাশটা দেখিয়ে) হুম আমি পৌছে দেব চল একটু বসি।
.
উনার কথাশুনে হাসি থামিয়ে বললাম না আমি এক্ষুণি যাবো।
.
জেদ করো না রোজ চল তো।জোর করেই নিয়ে গেলেন।দুজনেই নীরব উনার দৃষ্টি আমার উপর স্থির।উনার এই চাহনিতে অস্বস্তি হচ্ছে আৃার তাই নিরবতা কাটিয়েই আমি বললাম
.

আচ্ছা আবির ভাইয়া তখন দিনরাত বলতে কি বুঝালো। কালকের ব্যাপারে কি কিছু জানে।
.
ওর কথায় বাস্তবে ফিরলাম ওকে দেখে দেখে কল্পনার জগতে ভাসছিলাম। এইই একটা চেহারা যার দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকলেও অনীহা আসে না । কেন জানবে না আবির তো আমার সাথেই ছিলো।
.
হোয়াটটট?আপনার সাথে ছিলো মানে!(অবাক হয়ে)
.
মানে আবিরকে আমার সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম।আমি যখন উপরে তোমার কাছে গিয়েছিলাম তখন ওকে নিচে পাহাড়া দিতে রেখে গেছিলাম।আমি যতক্ষণ তোমার রুমে ছিলাম ও ততক্ষণ নিচে দাঁড়িয়ে ছিলো।
.
উনার কথায় আমি ৪০০ ভোল্টের শক খেলাম বলে কি?এত রাতে আবির ভাইয়াকে আপনি এভাবে একা রেখে দেই দেই করে চলে গেলেন।আর উনিও মুখ বুঝে মেনে নিলেন।
.
আসলে আমাদের বন্ডিংটাই এরকম।ও আমাকে সবার থেকে বেশি বুঝে।আমার কি চাই না চাই সব বুঝে ফেলে।আমি যখন ওকে ডাকি তখন ওর যত সমস্যাই থাকুক না কেন ও আমার ডাকে সাড়া দেবেই।তুমি তো শুধু কালকের কথা জানলে এ পর্যন্ত যতদিন তোমাদের বাসায় এসেছি সবসময় আবির সাথে এসেছে।ও কখনও আমাকে একা ছাড়বে না।আমার জন্য নিজের জীবন দিততেও পিছ পা হবে না।
.
উনার কথাগুলো অবাক হয়ে শুনছিলাম।।বন্ধুত্বের জন্য উনি এতকিছু করতে পারেন।এই রাতের বেলা এত মশার কামড় উপেক্ষা করে বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিতে এতটুকুও কুন্ঠাবোধ করেন না।প্রার্থনা করি এই বন্ধত্ব যেন আজীবন অটুট থাকে।আচ্ছা আপনি বলেছিলেন আপনি আমায় একটা বার্থ ডে পার্টিতে দেখেছিলেন সেটা কি আবির ভাইয়ার বাড়িতে।কিন্তু আমি তো আবির ভাইয়াকে এ কলেজে আসার আগ পর্যন্ত কোনো দিন দেখেছি বলে মনে পরছে না।
.
উনি মুচকি হেসে বললেন….এটাও ধরতে পারলে না পাগলি!ওটা তিয়াশের বোনের বার্থডে পার্টি ছিলো।তিয়াস কে আর তিয়াসের বোন কে সেটা নিশ্চয় জানো।
.
তিয়াস ভাইয়ার বোন মানে তিশা….(অবাক হয়ে)
.
হুম তিশা….ওর কাছ থেকেই তোমার সম্পর্কে জানতে পারি আর বিগত দুই বছর ধরে তিশাই তোমার কাছ থেকে লুকিয়ে তোমার সব খবর আমাকে দেয় তাই ওকে আমি একটা নাম দিয়েছি “ডিটেক্টিভ”।
.
তার মানে ওই শাকঁচুন্নি প্রথম থেকে সব জানে।তাহলে আমাকে কখনও বলল না কেন?
.
আমি মানা করেছিলাম।প্রথমে তেমার ব্যাপারে কিছু বলতে চায় নি কিন্তু পরে আমার আর তিয়াসের অনুরোধে বলেছে।রোজ বেবি তোমার সম্পর্কে জানতে আমার বহু কাঠখড় পুরাতে হয়েছে।
.
যাই হোক বলেছে তো।মনে মনে ওই তিশাকে তো আমি ছাড়বো না।এতদিন সব জেনেও চুপ মেরে ছিলো।এমনিতে তো কোনো কথা হজম হয় না আর এই কথা দুই বছর চেপে গেলো।
.
.
তিশার বাসায় এসে ওর বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি।আমাকে দেখে তিশা ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে।চুপচাপ বসে আছি আর ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সম্ভবত আমি হঠাৎ কেন ওর বাসায় এসেছি সেটা বুঝার চেষ্টা করছে।কারন এই দুই বছরে আমি ওর বাড়িতে দুই তিনবার এসেছি তাও আবার কোনো না অনুষ্ঠানে তাই আমার আসার কারন আবিষ্কার করতে ওরর বেশ কষ্ট হচ্ছে।।আমাকে এভাবে চুপচাপ দেখে তিশাই বলে উঠলো।
.
কি রে তুই আজ আমাদের বাসায়।সূর্য আজকে কোন দিকে উঠলো।
.
আমি ভ্রু কুচঁকে তাকাতেই আবার বলল না
মানে তুই তো আমাদের বাসায় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তবে আসিস কিন্তু আজ তো আমাদের বাসায় কোনো প্রোগ্রাম আছে বলে আমার মনে হয় না।তাই বলছিলাম আর কি….
.
প্রোগ্রাম নেই তোকে কে বলল…আজকে তোর লাইফের স্পেশাল দিন।আর তুই ভুলে গেলি।
.
আমার লাইফের স্পেশাল দিন কই আমার তো মনে পরছে না।আমার বার্থডে তো সবে গেলো।আরর আরর(গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে)
.
শুধু কি বার্থডেই স্পেশাল হয়রে জলহস্তী ম্যারেজ ডেও স্পেশাল হয়(মাথায় টোকা দিয়ে)
.
ম্যারেজ ডে!আজকে কার ম্যারেজ ডে? (চিন্তিত হয়ে)
.
কেন তোর
.
হোয়াটটট
.
হুম আজকে তোর বিয়ে।আমার কথা শুনে তিশা হাইভোল্ডেজের শক খেলো।হুম আন্টি নিজে আমাকে কল দিয়ে বলল হঠাৎ করে সব ঠিক হয়ে গেছে।ঘরোয়াভাবেই অনুষ্ঠান হবে কাউকে বলা হয়নি তেমন আমি যেহেতু তোর বেস্ট ফ্রেন্ড সেহেতু আমাকে না বললে নাকি উনার খুব খারাপ লাগবে।
.
আর ইউ ক্রেইজি আমার বিয়ে আর আমি জানি না।ওহহ রিয়েলি
.
নো ডিয়ার!আমি কি করে বলবো আন্টি তোকে বলেনি।এমন ভাব করছিস যেন সত্যি তুই জানিস না।
.
সিরিয়াসলি বলছি দোস্ত আমি এসবের কিছুই জানিনা।(কাঁদো কাঁদো মুখ করে)তুই সত্যি সত্যি বলছিস নাকি ফান করছিস।
.
নারে দোস্ত এরকম একটা সিরিয়াস সাবজেক্ট নিয়ে আমি মজা করব নো ওয়ে সত্যি বলছি।(ন্যাকা কান্না করে)। কি আর করার কান্না থামা আর ফটাফট রেডি হয়ে যা এক্ষুণি তোর জামাই চলে আসবে।(মুচকি হেসে)
.
এটা কি হচ্ছে আব্বু আম্মু আমার সাথে এটা করতে পারে না।আমি এই বিয়ে করবো না।চিনিনা জানিনা এভাবে বিয়ে হয় নাকি আমার বিয়ে কত স্বপ্ন সেগুলোকে এভাবে ভেঙ্গে যেতে দেব না।রোজ তুই একটা কিছু কর না প্লিজ(হাত জোর করে)
.
সরি দোস্ত আমি আর কিছু করতে পারব না।অলরেডি একবার আন্টিকে বলেছি তার এক কথা সে আজ তোর বিয়ে দেবেই আর চজ তাকে কেউ আটকাতে পারবে না ইভেন আঙ্কেলও না।
.
না এ কিছুতেই হতে পারে না।আমি এক্ষুণি আম্মুর সাথে কথা বলবো।আম্মুুুু আম্মু
.
তিশার মুখটা দেখে আমার অদ্ভুদ শান্তি লাগগছে।আমাকে লুকিয়ে আমা খবর ট্রান্সফার করা তাও আববার আমার কাছ থেকে লুকিয়ে এবার মজা টের পাবে সোনা।
.
আম্মু আমি এ বিয়ে করবো না। আমাকে তোমরা এভাবে নদীতে ভাসিয়ে দিতে পার না।আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য নেই তোমাদের কাছে।আন্টিকে গড়গড় করে কথাগুলো বলে দিলো।
.
আহ কি শান্তি মায়ের সামনে মেয়ের এমন নির্লজ্জপনা দেখে আমার আত্মা জুড়িয়ে গেলো।মিটিমিটি হাসছি আর তিশার কান্ড দেখছি। তিশার কথাশুনে আন্টি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।হওয়ারই তো কথা যার বিয়ের কোনো চিন্তাই বর্তমানে তার মাথায় নেই সে এখন বিয়ে করবে না বলে কাঁদছে হাউ ফানি। উনার মাথায় এখন একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো না তো।
.
আন্টি তিশাকে ধমক দিয়ে বললেন তুই কি পাগল হয়ে গেলি।কি যা তা বলছিস কিসের বিয়ে কার বিয়ে?কোন বিয়ে তুই না করার কথা বলছিস।
.
কেন তেমরা আমার জন্য যে বিয়ে ঠিক করেছো সে বিয়ের কথা বলছি।
.
কি বলছিস আমরা কখন তোর বিয়ে ঠিক করলাম।(অবাক হয়ে)
.
এবার তিশা আহাম্মক ভনে গেল।আমার দিকে তাকাতেই ইশারা করলাম দোস্ত বুঝ ঠেলা।আর হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছি।
.
আন্টি তুমি যাও ওর মাথার ঠিক নেই কি বলছে না বলছে নিজেই জানে না।তিশা আমার দিকে বড় বড় চোঁখ করে তাকালো।এখন পারলে আমাকে চিবিয়ে খেতো।প্রথমে ব্যাপারটা না বুঝলেও এখন বুঝতে পাররছে আমার কথা বিশ্বাস করে ফাঁসান টাই না ফেঁসেছে।
.
তুই আমার সাথে এমন করলি কেন?আম্মুর সামনে আমার মান সম্মান শেষ করে বেহায়া নির্লজ্জ বানিয়ে দিলি।কেন রে আমি তোর কি ক্ষতি করেছিলাম।
.
অনেক বড় ক্ষতি করেছিস।আর তার জন্য এটা তোর পানিসমেন্ট ছিলো।
.
পানিসমেন্ট!কিসের
.
গত দুই বছর ধরে আমার সব খবর আমাকে লুকিয়ে মিঃরিহানের কাছে পাঁচার করার জন্য আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য ছোট খাটো একটা শাস্তি।
.
এটা ছোট খাটো এর থেকে বড় শাস্তি আর কিছু হতে পারে।আমি তো উনাকে বলতে চাইনি পরে বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছে।এই ছোট্র একটা কারনে তুই আমার সাথে এমন করলি।
.
তোর কপাল ভালো তাই বেশি কিছু করিনি তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষণে আরো কি কি করতাম তোর কোনো আইডিয়াও নেই।
.
শয়তান মাইয়া তুই আমায় এভাবে বেইজ্জত করলি।বেশ করেছি রিহান ভাইয়াকে বলেছি আরো বলবো হুহ
.
তবে রে ওর দিকে তেড়ে যেতেই তিশা দৌড়ে পালালো আমিও ওর পেছন পেছন যাচ্ছি। ।দুজনে মিলে পুরো বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছি এসব দেখে আঙ্গেল আর আন্টি হাসছে আর বলছে এরা আর বড় হলো না সেই ছোট্রটি রয়ে গেলো।
.
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here