#বর্ষণের সেই রাতে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩০
.
সব সত্যিটা জানার পর ও ঠিক করে থাকবেনা এখানে আর ও। ও কিছুতেই ওর বাবার খুনির ছেলের সাথে থাকতে পারবেনা আর তারচেয়েও বড় কথা রিক খুব খারাপ ব্যবহার করে ওর সাথে। ওর কথার নড়চড় হলেই অমানুষের মতো মারে। একটু সাজার কারণে মুখে গরম জল ঢেলে দেওয়া, ছেলেদের সাথে কথা বলেছে বলে পিঠে গরম শিক চেপে ধরা, এসব সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছিলো ওর কাছে। অনিমা সেদিন রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রচুর কেঁদেছিলো। এটা ভেবে যে ওর নিজের মামা মামী ওর সাথে এরকম করেছে। সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পরার পরেই ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো ও কিন্তু ও জানতোনা যে রিকের লোকেরা ওর ওপর নজর রাখছিলো। ও বেড়িয়ে যেতেই ঐ লোকেরা রিক কে খবরটা দেয়।
অনিমা রাস্তা দিয়ে একপ্রকার দৌড়চ্ছে, ও চায়না আর এই নরকে থাকতে । হঠাৎ ওর সামনে কালো একটা গাড়ি থামে। গাড়িটা দেখেই ওর আত্মা শুখিয়ে যায় কারণ গাড়িটা রিকের। রিক গাড়ি থেকে নেমে ওর সামনে এসে দাড়ায়। রিককে দেখে অনিমা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে ভয়ে একদম সিটিয়ে আছে। রিকের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। রিক সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমাকে। থাপ্পড়টা এতোই জোরে ছিলো যে ও নিচে পরে গেলো। রিক অনিমার হাত ধরে টেনে তুলে চুলের মুঠি ধরে বলল,
— ” খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা? পালাতে যাচ্ছিলে?”
অনিমা কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় বলল,
— ” প্লিজ যেতে দিন আমাকে। আমি হাত জোড় করছি, প্লিজ।”
অনিমার এই কথায় রিকের করুণা হওয়ার পরিবর্তে রিকের রাগ আরো বৃদ্ধি পেলো। ও অনিমার চুল আরো জোরে টেনে ধরে বলল,
— ” যাওয়াচ্ছি তোমাকে। চলো।”
বলে অনিমাকে টেনে গাড়িতে তুললো তারপর ওকে বাড়িতে এনে অনিমার রুমে নিয়ে ওর সামনে দাড় করিয়ে বলল,
— ” আমার হাত থেকে পালাতে চাও? আমার হাত থেকে।”
বলে আবারো চড় মারলো ওর গালে। ‘আমার অনুমতি ছাড়া আর বেড়োবে বাড়ি থেকে? বলো?’ এরকম নানা কথা বলতে বলতে একটার পর একটা চড় মারতে শুরু করলো। এদিকে অনিমার ঠোটের কোণ ফেটে রক্ত পরছে, গালে রক্ত জমাট বেধে গেছে সেই নিয়ে রিকের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আর যতোক্ষণ ওর রাগ না কমেছে ততোক্ষণ মেরেছে মেয়েটাকে। আর রিক চলে যাওয়ার পর ওর মামীও মেরেছে ওকে। মানুষ কতোটা নির্মম হতে পারে তা অনিমা নিজের সাথে ঘটা ঘটনা দিয়েই বুঝতে পারছে।
এভাবেই দিন কাটছে। অনিমার ওনার্স ফাইনাল ইয়ারের এর ফাইনাল এক্সামও দিয়ে ফেলেছে। শুরুতে ও কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ওর মামা মামীর জন্যে পারেনি, ওইদিনের পর রিক ওর মামা মামীকে হুমকির স্বরে বলে দিয়েছে যাতে পালাতে না পারে আর চেষ্টা করলেও যাতে ওকে জানানো হয়। অনিমা যতোবার পালানোর চেষ্টা করতো ওর মামা মামী ওকে আটকে রিককে বলে দিতো, আর রিক ততোবার এসে শাস্তির নাম করে অনিমার সাথে অমানুষের মতো ব্যবহার করতো। একপর্যায়ে অনিমা নিজেই সেই চেষ্টা থামিয়ে দিয়েছে কারণ তাতে কোণো লাভ হয়নি বরং ওকে আরো টর্চার সহ্য করতে হয়েছে। এদিকে অর্কের মাথায় অন্যকিছু চলছে। অনিমার অনার্স শেষ হয়ে গেছে এখন তো রিক ওকে নিয়ে যাবে। যেখানে অনিমা ওর হওয়ার কথা ছিলো সেখানে এখন ঐ রিককে দিতে হবে? টাকার লোভও সামলাতে পারেনি তাই রাজি হয়েছে। রিকের ভয়ে এই দুই বছর অনিমার সাথে আগের মতো অতোটা বাজে ব্যবহার করে নি। কিন্তু ওর তো অনিমাকে চাই সেটা এক রাতের জন্যেই হোক না কেনো? আর রিক থোরিই জানতে পারবে এসব? এগুলো চিন্তা করে সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল ও। একদিন রাহেলা বেগমের বাড়ির এক অনুষ্ঠানে ওনারা সকলেই চলে গেলো। কিন্তু অনিমাকে নেয় নি, কখনো নেয়ও না ওকে, ও তো ছিলো ঐ বাড়ির ফেলনা বস্তু যেটাকে এক কোণে ফেলে রাখা হয়। রাতে অনিমা একা একাই নিজের রুমে গুটিসুটি মেরে বসে আছে? কারণ বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে আর বাজ পরছে যার ফলে কারেন্টও নেই, মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। ওর আব্বুর খুন হওয়ার সেই রাতের পর থেকে বাজ পরলে খানিকটা ভয় লাগে ওর। মনে হয় এই বাজ পরা ওর জন্যে অশুভ বড্ড বেশিই অশুভ। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ শব্দে চমকে তাকালো অনিমা। উঠে দাড়িয়ে দেখে অর্ক রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করছে। অনিমা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
— ” ভাইয়া তুমি এখানে? তুমি যাও নি?”
অর্ক বাকা হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” ভাবলাম তুই এখানে একা একা বোর হচ্ছিস তাই তোকে একটু কম্পাপি দেই।”
এটুকু বলে অনিমার দিকে বাকা হেসে এগোতে লাগল অনিমা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ওর মতলব টা কী, কিন্তু ও কী করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা, শুধু পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্ক ওর কাছে আসতেই ও ছিটকে দূরে গিয়ে বলল,
— ” ভাইয়া কী করছো এসব? প্লিজ এরকম করোনা?”
অর্ক অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলল,
— ” কেনো? রিক যদি করতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবোনা?”
অনিমা নিজেকে ছাড়নোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
— ” পাগল হয়ে গেছো তুমি? কীসব বলছো? ছাড়ো আমাকে।”
অর্ক একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,
— ” ছাড়ার জন্যে ধরেছি নাকি?”
অর্ক অনিমার কাছে আসতে নিলেই অনিমা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে পালাতে চাইলো কিন্তু তার আগেই রিক ওর কুর্তির স্লিভ ধরে টান মারলো, ফলসরূপ ওর স্লিভ ছিড়ে গেলো আর তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো। অনিমা বসে বসেই হালকা পিছিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— ” ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে এসোনা, যেতে দাও আমায়।”
অর্ক ওর কথা কানে না নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই অনিমা অনেক কষ্টে উঠে আবারো পালাতে নিলে অর্ক ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো আর অনিমা বেডের ওপর পরে গেলো।
___________________
মাদার একটা শ্বাস নিলেন কারণ ওনার গলা ধরে আসছে, উপস্থিত সকলের চোখ দিয়েই জল গড়িয়ে পরছে। মানুষ কতোটা নির্মম, নোংরা আর খারাপ হতে পারে সেটা অনিমার অতীত না জানলে বুঝতেই পারতোনা ওরা। ওরা ভাবতেও পারছেনা ঐ মেয়েটা এতোকিছু সহ্য করে বেঁচে ছিলো? কতোটা নির্মম এই পৃথিবী। প্রত্যেকেরই বুকের ভেতর ভার ভার হয়ে আসছে, চাপা কষ্ট হচ্ছে একটা। তবে একজনের চোখে তেমন জল নেই শুধু চোখ দুটো হালকা ছলছল করে উঠছে, তবে যেটা আছে সেটা হলো রাগ। তীব্র রাগে ফেটে পরছে ও, চোখ লালচে হয়ে আছে, সারাশরীর থরথর করে কাপছে , যেনো এক্ষুনি সব শেষ করে দেবে, আর সেটা হলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওখানের সবাই চমকে উঠলো, সাথে ভয়ও পেয়ে গেলো। মাদার আদ্রিয়ানের কাধে হাত রেখে বলল,
— ” কুল ডাউন মাই চাইল্ড। শান্ত হও।”
আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। রাইমা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— ” অর্ক কী সেদিন ওর সাথে…”
রাইমা নিজেও আর কিছু বলতে পারলোনা ওর গলা ধরে আসছে । আদ্রিয়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে, এরপরে কী হয়েছিলো সেটা কল্পনাও করতে চাইছেনা উপস্থিত কেউ। মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
— ” এরপর অর্ক..”
আদ্রিয়ান মাদারকে থামিয়ে দিয়ে কাঁপা গলায় বলল,
— ” আমি আর শুনতে চাইনা।”
আদ্রিয়ান নিচের দিকে তাকিয়েই বলল কথাটা, এখনো কাঁপছে ও, এরপরে কী হয়েছে সেটা শোনার সাহস ওর নেই। মাদার আদ্রিয়ানকে আশ্বস্ত করে বলল,
— ” রিল্যাক্স। সবসময় যে খারাপ কিছুই হবে সেটা ভাবাও ঠিক না তাইনা?”
আদ্রিয়ান ছলছলে চোখ নিয়ে তাকালো মাদারের দিকে। মাদার আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” কিন্তু সেদিন অনিমা নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। মেয়েদের সম্মান তাদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা আবার সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাও। যখন সেখানেই কেউ হাত দেয় তখন মেয়েদের মধ্যে এমনিতেই এক শক্তি চলে আসে। অনিমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অর্ক ওর কাছে আসার আগেই ও টি টেবিল থেকে ফ্লাওয়ার ভাস নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করেছিলো রিকের মাথায় , এতে অর্কর তেমন কিছু না হলেও কিছু সময়ের জন্যে ঘায়েল হয়ে গেছিলো। সেই সুযোগেই অনিমা দৌড়ে রুমটা বাইরে থেকে লক করে বাইরে বেরিয়ে যায়। ওর সমস্ত ধৈর্য আর সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছিলো সেদিন। আর ও ঠিক করে নিয়েছিলো যে ও আর কখনো ফিরবেনা ওই নরকে তাতে যাই হোক না কেনো। ওই হয়তো প্রথম মেয়ে যে ঝড় বৃষ্টির রাতে বাড়ি থকে রাস্তায় বেরিয়েছিলো নিজেকে বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু আমাদের সমাজ তো আর এতো সহজ নয়। একটু বেশিই নিষ্ঠুর। রাস্তাতেও কিছু মাতাল ছেলেদের পাল্লায় পরতে হয়েছে ওকে। ওদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে রাস্তাতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায় ও, এতো কিছু সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো ওর মস্তিস্কের আর ছিলো না। কিন্তু সৌভাগ্যবসত সেদিন ঐ রাস্তা দিয়েই সিলেট থেকে ফিরছিলাম আমি, এটাই হয়তো জিজাসের ইচ্ছে ছিলো, যদি সময়মতো ঐ দিন আমি না পৌছাতাম তাহলে হয়তো..”
আদ্রিয়ানের চোখে থেকে ওর অজান্তেই এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো, আজ খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে ওর। মাদার একটু থেমে বললেন,
— ” ওকে সেদিন আমি আমার কাছে নিয়ে আসি। হসপিটালে এডমিট করার একদিন পর জ্ঞান ফিরেছিলো ওর। আর একসপ্তাহ পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি ও একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। যেনো ওর মধ্যে কোনো অনুভূতিই কাজ করছেনা। ওকে এভাবে দেখে বুক ফেটে যাচ্ছিলো আমার। যেই মেয়েটা সবসময় দুষ্টুমি খুনসুটি করে বেড়াতো তার এভাবে চুপ হয়ে যাওয়া দেখে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। আমিতো ভেবেছিলাম মামা বাড়িতে হয়তো ভালো আছে কিন্তু ভাবতেও পারিনি যে ও এইরকম ভালো থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে ও সুস্হ হলো কিন্তু আগের মতো আর হলোনা একেবারে চুপচাপ, শান্ত হয়ে গেছিলো, অল্পেই ভয় পেয়ে যেতো, সবাইকে এড়িয়ে চলতো। আর ওর সবচেয়ে বড় ভয় ছিলো বজ্রপাত আর ঝড়। এগুলো দেখলেই ও ভয়ে সিটিয়ে যেতো, ঐ সময় ওর মনে হতো ওর সাথে আবার এসব হবে। ”
মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার দিকে তাকালেন সবার মুখই অন্ধকার আচ্ছন্ন। মাদার আবার বললেন,
— ” ওর সব সার্টিফিকেট আর বায়োডেটা গুলো জিডি করে তারপর ওকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেই মাস্টার্স কম্প্লিট করার জন্যে। ওখানেই তীব্র আর অরুমিতার সাথে আলাপ হয় ওর। এরপর এখানে থেকেই ওর স্টাডি কম্প্লিট করে জব জয়েন করে, তিনজন একই সাথে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো আর তিনজনেরই হয়ে গেছে। আর জব পাওয়ার পর অনিমা আর আশ্রমে থাকেনি ওর মতে ও আমার ওপর বোঝা হয়ে থাকছে, সত্যি বলতে আমারও কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু ওতো আমার মেয়ের মতো, সেইজন্যে ওকে নিজের কাছে আগলে রেখেছি। কিন্তু ও তো ওই, ফ্লাট ভারা নিয়ে ওখানেই থাকতে শুরু করলো। কিন্তু একটা কথা বুঝলাম না স্টুডেন্ট লাইফে ওকে খুজে না পাওয়ার কারণ আছে কিন্তু জার্নালিস্ট হবার পরে তো ওকে খুজে পেয়ে যাওয়ার কথা যদি খুজে থাকে তো। না খুজলে পেতোনা কারণ এতো এতো জার্নালিস্টদের মধ্যে কজনকেই বা মন্ত্রী মিনিস্টাররা দেখে বা চেনে? কিন্তু না খোজার কারণ কী? হঠাৎ করেই বা কীকরে পেয়ে গেলো? সেটাই প্রশ্ন। ”
আদ্রিয়ান ঠান্ডা গলায় বলল,
— ” কেউ হয়তো অনিমাকে না খুজে নিজের স্বার্থ খুজছিলো।”
উপস্থিত কেউ ওর কথা বুঝলোনা, কী বলতে চাইলো আদ্রিয়ান? মাদার অবাক হয়ে বললেন,
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান হালকা হেসে বললো,
— ” কিছুনা মাদার। থ্যাংকস আ লট। এভাবে হেল্প করার জন্যে। আমরা উঠছি তাহলে আজ।”
মাদার উঠে দাড়িয়ে বললেন,
— ” আরে এখনি চলে যাবে কিছু খেয়ে যাও।”
আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল,
— ” না মাদার মেয়েটা একা আছে এপার্টমেন্টে। যদিও রুমে খাবার দিয়ে এসছি। কিন্তু যেয়ে হয়তো দেখবো কিছুই খায়নি।”
মাদার হেসে দিয়ে আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” আমি জানিনা ঐ ভয়ংকর প্রাণীগুলোর সাথে লড়ার ক্ষমতা তোমার কতোটুকু আছে কিন্তু আমার কেনো জানিনা মনে হচ্ছে একমাত্র তুমিই পারবে অনিমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে।”
আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” পারতেতো হবেই মাদার কথা দিয়েছি তো। যাই হোক আসছি।”
বলেই আদ্রিয়ান বেড়িয়ে গেলো আর মাদারকে বিদায় দিয়ে ওর পেছন পেছন বাকিরাও বেড়িয়ে গেলো। অনিমার অতীত সকলের মনেই একটা দাগ কেটে দিয়েছে আজকে। এইসব ঘটনা যেনো ওদের কল্পনারও উর্ধ্বে ছিলো। তীব্র আর অরুমিতা অনেককিছু আগে থেকে জানলেও আজ নতুন করে কষ্ট হচ্ছে ওদের। মাদার তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার পথে। আদ্রিয়ান ছেলেটার কথায় এতো রহস্য কেনো? কেনো জানি মনে হয় এমন অনেক কিছুই আছে যেটা সবার অজানা।
_____________________
তীব্র গাড়ি ড্রাইভ করছে। ফ্রন্ট সিটে স্নেহা আর ব্যাক সিটে অরুমিতা বসে আছে। অরুমিতার মনটা ভার হয়ে আছে, কারণ অনিমার সাথে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পরছে বারবার আর আশিস আজকে ওকে পুরো এভোয়েট করেছে। আশিসের ঐ জ্বালাতনেই ও অভ্যস্ত হয়ে গেছে, এখন সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবকিছুই ওর কাছে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অরুমিতাকে নামিয়ে দিয়ে তীব্র ওর গাড়ি সোজা ট্যাক্সি স্টান্ডে নিয়ে থামালো। স্নেহা অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই তীব্র বলল,
— ” এখান থেকে ট্যাক্সি ধরে বাড়ি চলে যাও।”
স্নেহা তো চরম অবাক হলো, কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
— ” মানে?”
তীব্র সামনে তাকিয়ে হু কেয়ারস ভাব নিয়ে বলল,
— ” তোমাকে বাড়ি অবধি পৌছে দেবার মতো ফাল্তু টাইম নেই আমার কাছে। নিজে চলে যাও।”
স্নেহার চোখ এবার ছলছল করে উঠলো। দেড় বছর আগেও এই ছেলেটা ও একা কোথাও বেড়োলেও রাগ করতো। এতোটাই অপছন্দের হয়ে গেছে ও তীব্রর কাছে এখন? স্নেহা কেদে দিয়ে বলল,
— ” আমাকে তুমি আর একটুও ভালোবাসোনা তীব্র?”
তীব্রর রাগ আরো বেড়ে গেলো এই প্রশ্নে। ওর ভালোবাসা কী এতো সস্তা নাকি যে দুদিন পরেই উবে যাবে? সবাইকে নিজের মতো ভাবে নাকি ও? তীব্র তাই রাগে গজগজ করে বলল,
— ” নাহ ভালোবাসিনা। আর বাসার কোনো কারণও নেই।”
তীব্রর কথা স্নেহার বুকে গিয়ে লাগল। কতো সহজে বলে দিলো কথাটা? তাই নিজেকে সামলে বলল,
— ” ঠিকি বলেছো কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমি বাসি এখনো ভালোবাসি। আর সেইজন্যেই ঐ ছেলেকে রিকোয়েস্ট করে এনগেইজমেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছিলাম।”
তীব্র অবাক হয়ে তাকালো স্নেহার দিকে। স্নেহা চোখ মুছে বলল,
— ” আব্বুকে বললে আব্বু ঘরে আটকে রেখে দিতো তখন চেয়েও কিছু করতে পারতাম না। তাই বাধ্য হয়ে করেছিলাম এনগেইজমেন্ট। কিন্তু পরে ওই ছেলেকে বলে সেটা ভেঙ্গেও দিয়েছি। কিন্তু এসব তোমাকে কেনো বলছি? তুমিতো আমাকে আর ভালোই বাসোনা রাইট?”
এটুকু বলে স্নেহা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেলো, তীব্র আটকাতে গিয়েও থেমে গেলো। এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে ওর। এতোটা খারাপ ব্যাবহার করাও ঠিক হয়নি কিন্তু ওই বা কী করতো, স্নেহাকে অন্য কারোর সাথে যে ও সহ্য করতে পারেনা, সেখাতে এনগেইজমেন্ট এর কথা শুনে নিজেকে ঠিক কীকরে রাখতো?
___________________
আদ্রিয়ান কার ড্রাইভ করছে। চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে ওর। ওই সবগুলোকে জ্যান্ত জালিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে ওর। আর নিজের ওপরেও রাগ হচ্ছে। কেনো আরো আগে খুজে পেলোনা অনিমাকে? মেয়েটাকে কী কী সহ্য করতে হয়েছে ভাবলেও ওর রক্ত গরম হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে, সব। আর এখন সেদিন রাতে অনিমার অবস্হা, রিকের ফোন, অনিমার ভয় সব পরিষ্কার হচ্ছে ওর কাছে। এসব চিন্তা করতে করতে ওর এপার্টমেন্টে ঢুকে ওর রুমের যেখানে অনিমাকে রেখেছে তার লক খুলে ভেতরে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে আদ্রিয়ানের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।
.
#চলবে…