#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
২১
প্রতিদিন তূবা ওবাড়ি যায়। সারাদিন থেকে আগের মতোই বিকালে চলে আসে। এখন প্রতিদিন তূবা কে আহফিন অফিস যাওয়ার সময় দিয়ে আসে আর ফিরার সময় বাসা থেকে গাড়ি যায় তূবা কে আনতে।
তুসি কে এখন আরো শুকনো লাগছে। শরীর শুকিয়ে কি অবস্থা! তূবা প্রতিটা মিনিট তুসি কে বুঝায় সাহস দেয় কিন্তু এসব তুসির মনে নেয় কিনা বুঝা যায় না। যতক্ষণ তূবা ওবাড়ি থাকে ততক্ষণ তুসি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।
আজ আসার সময় তূবা কে আহফিন বলে দিয়েছে “আমি আজ দুপুরে বাড়ি চলে আসব। তুসির সাথে অনেক দিন গল্প করা হয় না।” তূবা মুচকি হেসে বলেছে যেন তাড়াতাড়ি আসে।
—-
ডালিম আর আঙ্গুল নিতে তূবা বাজারে যাবে। তখন তুসিও বলল
“আপা আমাকেও একটু নিয়ে যাও না। সারাক্ষণ ঘরে থাকতে ভালো লাগে না।”
“আচ্ছা চল।”
ফল কিনে যখন বাড়ি ফিরবে তখন তুসি বলল “আপা আমার একটা আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে।”
“আমিও খাবো চল তাহলে।”
“চলো” খুশি হয়ে বলল তুসি।
আইসক্রিম নিয়ে ফিরার সময় তুসি আবার তূবা কে ডাকল।
“আপা?”
“কি?”
“রনি।”
তূবা সামনে তাকিয়ে দেখে আসলেই রনি। মুখটা কেমন পাণ্ডুর হয়ে গিয়েছে। শরীর কি চিকন! রনি কে দেখে তূবা বুকটা বারি দিয়ে উঠল। মায়া নামক একটা পাখি উড়ে এসে বসল ডালে। তূবা কে দেখে রনির চোখে পানি চলে এসেছে।
“তূবা রে তোর দুইডা পায়ে পড়ি আমারে তোর হাতে রাইন্ধা একটু খাওয়াইবি? যদি মইরা যাই। এই ইচ্ছাডা একটু রাখ আমার। তোর পায়ে পড়ি।”
বলতে বলতে রনি সত্যিই তূবার পায়ের উপর পড়ে গেল। তূবা কি করবে জানে না। একটা মানুষ কতটা ইচ্ছা থাকলে এভাবে চাইতে পারে তা তূবার জানা নেই। রনি কে উঠতে বলে বলল সে খাওয়াবে। এখন যেন রনি চলে যায় এখান থেকে। রনি চোখের পানি মুছে তূবার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর চলে গেল। তূবার সাথে এবার তুসিরও খারাপ লাগল। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের জন্যে এতটা পাগল কি করে হতে পারে? তুসি জানে না এর উত্তর।
আড়াল থেকে আহফিন ঠিকি দেখল ঘটনা। গাড়ি খারাপ হওয়াতে গেরেজে দিয়ে হেটেই এসেছে সে। তখনি তূবার পায়ে রনি কে পড়তে দেখা গেল। যেতে চেয়েও কি মনে করে আহফিন তখন যায় নি।
গম্ভীর মুখ করে আহফিন বাসায় ঢুকল। তূবা এগিয়ে গেল তার দিকে।
“বাব্বাহ সত্যি সত্যিই ব্যস্ততার মহারাজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।”
“বাজারে কেন গিয়ে ছিলে?”
তূবা আহফিনের বলার ধরণ দেখে ভয় পেয়ে যায়। তাহলে নিশ্চয় রনির সাথে দেখা হয়েছে এটাও দেখেছে তাই জিজ্ঞেস করল এটা। তূবা আমতাআমতা করে বলল
“আ আসলে রনি..”
আহফিন হাত ইশারা করে তূবা কে থামিয়ে দিল। তারপর বলল “আমি ওসব শুনতে চাই নি তোমার কাছে। বেশ গরম আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।” এটা বলে আহফিন চলে গেল। তূবা ভয়ে গুটিশুটি করে দাঁড়িয়ে রইল। আহফিন কি আবার তাকে সন্দেহ করছে?
তূবা ফ্রিজের পানি দিয়ে আহফিনের পছন্দের লেবুর শরবত বানিয়েছে। তার স্পেশাল শরবত আহফিনের ভীষণ পছন্দের। শরবত নিয়ে সে নিজের রুমে গিয়ে দেখে আহফিন ফোন টিপছে।
“আপনার জন্যে শরবত এনেছি।”
“ইচ্ছা হচ্ছে না রেখে দাও।”
“…..
“কিছু বলবে দাঁড়িয়ে আছো যে?”
তূবা শরবত রেখে জিজ্ঞেস করল
“কি হয়েছে আপনার?”
“নাথিং।”
“আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?”
“সন্দেহের মতো তুমি কিছু করেছো নাকি যে এটা মনে হচ্ছে আমি তোমায় সন্দেহ করছি?”
“দেখুন রনি আমাকে..”
“রনি কে নিয়ে আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি এখন আসতে পারো।”
তূবা এতক্ষণ মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেও এখন আর পারছে না। রেগে গিয়ে সে বলল।
“দেখুন আপনি কিন্তু শুধুশুধু এমন করছেন। আমি রনির সাথে তেমন কোনো কথা বলি নি। লোকটা আমার পায়ে পড়ে অনুরোধ করছিল শুধু। তখন কি করে আমি চলে আসতাম ওখান থেকে? আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন না? যদি করতেন তাহলে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এমন করতেন না। আর মোট কথা আপনি রনি কে পছন্দই করেন না।”
আহফিন দাঁত কিড়িমিড়ি করে তূবার বাহু ধরে বলল
“তুমি করো? তুমি রনি কে পছন্দ করো?”
“ছিঃ আপনি কি সব বলছেন?”
“তাহলে ওর সাথে কথা কেন বলেছিলে? আমি না করেছিলাম তূবা ওর সাথে কথা বলতে। আমাকে কথা দিয়েও কিভাবে ভাঙ্গতে পারলে? তারপরেও বলছো আমি তোমায় ভুল বুঝছি? কি করে?”
“আস্তে কথা বলুন প্লিজ।”
“….
রাগে আহফিন লম্বা লম্বা নিশ্বাস ফেলছে।
“আচ্ছা ভুল হয়ে গিয়েছে সরি। এবার শরবত টা খেয়ে নিন।”
আহফিন বিছানা থেকে কোট টা নিয়ে হনহন করে চলে গেল তূবার সামনে দিয়ে। তার মনে হচ্ছে আহফিন এখন বেশি করছে। মনবতা বলতেও একটা জিনিস আছে যা আহফিন বুঝতেই চাইছে না। তূবা আহফিনের উপর রেগে গিয়েছে। যাই হয়ে যাক সে রনির এই শেষ ইচ্ছাটা রাখবে তারপর নিজেই আর রনির সাথে দেখা বা কথা বলবে না। রনি যেন আর তার সামনে না আসে তা বলে দিবে সে। আহফিন কে জানালে যেহেতু রাগ করবে ঝামেলা হবে তাই না জানিয়েই করবে এটা।
একটু পরই তূবার ফোনের ম্যাসেজ টোন টা বেজে উঠল। ম্যাসেজ ওপেন করে দেখতে পেল “সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে।”
তূবাও রিপ্লে করল।
“দুই দিন পর তুসির অপারেশন আমি এখন কি করে বাড়ি ফিরব? আপনি চলে গেছেন কেন?”
“যা বলেছি তাই যেন হয়। আমাকে কঠিন হতে বাধ্য করো না।”
“আপনি এখন একটু বেশিই করছেন না? একেতো নিজে রাগ দেখিয়ে না খেয়ে চলে গেছেন তার উপর রাগ দেখিয়ে আমাকে চলে যেতে বলছেন। আমি আজ বাড়ি ফিরতে পারব না। যদি মনে হয় এখানে চলে আসতে চলে আসবেন।”
“তুমি আমার বিয়ে করা বউ। ওখনো ও বাড়ির মেয়ে নও। আমার সংসার রেখে ওবাড়িতে থাকতে পারো না। যদি আজ না ফিরো তবে আর কখনো ও বাড়িতে যেতেও পারবে না। চিন্তা করে দেখো কি করবে। যদি আমার এসে তোমাকে নিয়ে যেতে হয় তবে সেটা খুব ভালো হবে না তূবা।”
রাগে তূবা ফোন টা ছুড়ে ফেলল। আহফিনের ব্যবহার গুলি তার রাগকে রাগিয়ে দিচ্ছে। বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে এমন কাটা দেওয়া কথাতে।
শিরিণ বেগম এসে তূবা কে জিজ্ঞেস করল “কিরে জামাই কই?”
“ওর কাজ আছে তাই চলে গেছে।”
“না খেয়েই চলে গেল?”
“বাদ দাও। তুমি ভাত আনো তুসি কে খায়িয়ে দিয়ে আমিও খেয়ে নিব। আমাকে আবার বিকেলে বাসায় যেতে হবে।”
“তুই না বললি দুই দিন থাকবি।”
“কাল এসে থাকব।”
—-
সারাটা রাস্তা রাগে ফুঁসেছে তূবা। আহফিনের এসব আর নেওয়া যাচ্ছে না। এভাবে তো আর চলা যায় না। বিহিত তো কিছু একটা করতে হবে। আহফিনের সাথে সরাসরি এই বিষয় নিয়ে কতা বলা দরকার।
তূবা গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে ভেতরে ঢুকল। গিয়ে যা দেখল তা নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস করাতে পারছিল না। তূবার চোখের পাতা নড়ছে না। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। হাত থেকে ব্যাগটাও দুপ করে নিচে পড়ে গেল..
চলবে♥
(গল্প কাল থেকে একদিন পর পর দিতে হবে। কারণ আমি কাল নেত্রকোনা চলি যাচ্ছি। ভেবেছিলাম এটা শেষ করে নতুন গল্পের কয়েকটা পার্ট এখানে থেকে নিয়মিত দিব। কিন্তু হলো না😒 দোয়া করবেন..)