#গল্পঃবসন্ত এসে গেছে
#লেখাঃনুশরাত জেরিন
#পর্বঃ২৩
,
,
খুব ভোরে ঘুম ভাঙে অপুর।
পাশফিরে দেখে নোমান শুয়ে আছে।নোমান কাল রাতে ওভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর কখন ফিরেছে অপু জানেনা।
নোমানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে খেয়েদেয়ে অপু ঘুমিয়ে পরেছিলো।তারপরে হয়তো নোমান এসেছিলো।
নোমানের মুখের দিকে বেশ কিছুসময় তাকিয়ে থাকে অপু।
জোড়া ভ্রুর পাশের তিলটায় হাত বুলায়।মাথার এলোমেলো চুলগুলো কপালের কাছ থেকে সড়িয়ে হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়।আবার কি মনে করে এলোমেলো করে।
নিজের এমন বাচ্চামোতে নিজেই হাসে।
কুঁচকে যাওয়া শাড়ি হাত দিয়ে ঠিক করে খাট থেকে উঠে দাড়ায়।
ওয়াশরুম থেকে ফিরে নামাজ পরে নেয়।কিছুক্ষন এদিক সেদিক হাটাহাটি করে জানালার কাছে দারায়।
এই রুমটা অপু যতোবার দেখে ততোবারই মুগ্ধ হয়।
চারদিকে কাচের মতো সচ্ছ দেয়াল।
নিচের প্রকৃতি দেখা যায় কি সুন্দর ভাবে।
মোটা পর্দা টানানো চারিদিকে।
অপু একটা পর্দা সরিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে।
পর্দা সরানোর ফলে রুমে তীর্যক ভাবে আলো ঢোকে।
নোমানের চোখে পরে সে আলো।
নোমান চোখ মুখ কুঁচকায়। ঘুমের ঘোরেই মোচড়ামুচড়ি করে।
অপু সেদিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি পর্দা টানায়।
সিড়ি বেয়ে নিচে নামে।
কিচেনে অনেক মানুষের টুংটাং আওয়াজ পেয়ে সেদিকে যায়।
কয়েকজন একরমক ড্রেসআপ পরা লোককে কাজ করতে দেখে।
একটা মানুষের সেবায় এতোলোক নিয়োজিত ভেবেই অপুর হাসি পায়।
একজন বয়স্ক বৃদ্ধ লোক অপুকে দেখে এগিয়ে আসে।
বলে,
—আপনার কিছু কি লাগবে ম্যাডাম?
—কিছু লাগবেনা এমনি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।
অপু সবাইকে লক্ষ করে বিরক্ত হয়।কেমন রোবটের মতো কাজ করছে সবাই।
মনে হচ্ছে ব্যাটারি চালিত রোবট।
পাশে একটা মেয়ে কফি বানাচ্ছে।
বয়স ১৯/২০ হবে হয়তো।
সে খুব উঁকিঝুকি করছে।
তাকে দেখতে সবার মতো লাগছে না।
মনে হচ্ছে সে রোবট হয়ে চলাচল করায় অভ্যস্ত না।
অপুর ভাল লাগে,মনে হয় যাক একটা মানুষ তো আলাদা আছে।
—-সকালে নাস্তা করে নোমান অফিসে চলে যায়।অপু বাড়ি বসে একা একা কি করবে ভেবে পায়না।
তারচেয়ে ভার্সিটি যাওয়ার কথা ভাবে।
ভাবনা মতো ঝটপট রেডি হয়ে নেয়।
নীল একটা সুতির শাড়ি পরে নেয়।
এতোদিন ভার্সিটিতে সেলোয়ার-কামিজ পরে গেলেও আজ তাকে শাড়ি পরে যেতে হচ্ছে।
কেননা এ বাড়িতে একটাও সেলোয়ার-কামিজ নেই।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে অপু রিকশা নেয়।
কিছুসময় বাদে রিকশা ভার্সিটির গেটের সামনে দাড়ায়।
চালককে তার মজুরি দিয়ে গেটে ঢুকতে যেতেই অপুর হাতে টান লাগে।
পেছন ঘুরে দেখে রায়হান ভাই।
গোছানো পরিপাটি মানুষটার আজ এক অন্যরুপ দেখে অপু।
কেমন এলোমেলো লাগে দেখতে।
কুচকানো এলোমেলো শার্টের একহাত গুটানো আরেক হাতা ছাড়ানো।চোখমুখ কেমন শুঁকনো শুঁকনো ভাব।
অপু নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রায়হানের হাতের বাধনে তার হাত আটকে আছে।
অপু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।মোচড়ামুচড়ি করে।
কিন্তু পারেনা।
রায়হান হাতের বাধন আরও শক্ত করে ধরে।
অপু ভীতি চোখে রায়হানের দিকে তাকায়।বলে,
—আমার হাত ছাড়েন রায়হান ভাই।
রায়হান সে কথার কর্নপাত করেনা।
নিজের মতো করে বলে,
—এতোদিন আসোনি কেনো রুপা? কেনো আসোনি তুমি?
জানো কি অবস্থা হয়েছিলো আমার?তোমাকে না দেখতে পেলে আমার কেমন লাগে জানো তুমি?
কেনো বোঝোনা তুমি?কেন বুঝতে পারোনা আমায়?কেন এতো কষ্ট দাও?
অপু কাঠ হয়ে দাড়িয়ে থাকে।
হাত ছাড়ানোর জন্য বারংবার হাত মোচড়ায়।
বলে,
—আপনি এমন কেনো করছেন?হাত ছাড়েন আমার।
রায়হান হাত ছাড়েনা, উল্টো আরও এগিয়ে আসে।
—ছাড়বোনা আমি হাত।সারাজিবন ধরে রাখতে চাই এ হাত।দেবে সে সুযোগ রুপা?
নইলে যে আমি মরে যাবো।
—এমন পাগলামো কেনো করছেন আপনি?কেনো বুঝতে চাইছেন না?
—কি বুঝবো আমি বলো?কি বুঝবো?
তুমি কেনো বুঝতে চাও না আমাকে?কেনো ভালবাসা যায় না আমায় রুপা?আমি কি এতোটাই খারাপ?এতোটাই অযোগ্য তোমার?
–আপনি অযোগ্য নন।আপনি খারাপ ও নন।কিন্তু আমার কথাটা তো শুনুন।
অপুর কথা শেষ হওয়ার আগেই রায়হান বলে,
—কিচ্ছু শুনতে চাইনা আমি।কিচ্ছু না।
আমি তোমাকে যেমন ভালবাসি তুমিও আমাকে ভালবাসবা।ব্যাস!
—আমি আপনাকে ভালবাসতে পারবোনা রায়হান ভাই।
—কিন্তু কোনো?
অপু শক্ত গলায় জবাব দেয়,
—আমি বিবাহিত রায়হান ভাই। আমি আমার স্বামীকে ভালবাসি।
রায়হান চমকে অপুর মুখপানে তাকায়।
হাতের বাধন আলগা হয়ে যায়।
হতবাক মুখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
অপু সেদিকে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
দ্রত পায়ে হেটে গেট দিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে।
ক্লাসে গিয়ে ধপ করে বসে পরে।
মাথা ঘোরে খুব।
ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খায়।
পিহু এসে পাশে বসে বলে,
—কি হয়েছে অপু?তোকে এমন কেন দেখাচ্ছে?
–না না কিছুনা,কিছুনা।
পিহু হেসে গলা জড়িয়ে নেয়।
রাহুল আর তার খুনসুটিময় প্রেমের গল্প শোনায়।
অপু তা শুনে হাসে কিন্তু মনে মনে ঠিকই খারাপ লাগে।
রায়হানকে সে কখনো ঐরকম নজরে দেখেনি।রায়হানকে কষ্ট দেওয়ারও তার কোন ইচ্ছে ছিলোনা।
কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো অপু নিজেও বুঝতে পারেনা।
—-
ক্লাস শেষে গেটের সামনে আবার রায়হানকে দেখে অপু।
পাশ কেটে এড়িয়ে যেতে চায় তাকে।কিন্তু পারেনা।
রায়হান অপুর সামনে এসে দাড়ায়।
পিহু রাহুল আগেই চলে গেছে।
অপু আশেপাশে চেনা মুখের সন্ধানে তাকায়।
কাউকে পায়না।
রাস্তায় একটা গাড়ি দাড় করানো দেখে মুখ চোখ খুশিতে ঝলমল করে।
এক পলকেই সে বুঝে ফেলে, ওটা নোমানের গাড়ি।
,
,
চলবে……