❤বসন্তের ছোঁয়া❤
লিখাঃ Ayesha Ariya Afiya
পর্বঃ ২০/শেষ
,
,
সারা হতভম্ব রাজের সেন্সলেস হওয়া দেখে তাড়াতাড়ি করে পানি এনে চোখে মুখে দিতেই সেন্স ফিরে রাজের।
সারাঃ রাজ রাজ কি হয়েছে তোমার?
,
রাজঃ ( উঠে বসতে বসতে) স্যরি সারা আসলে আমি তোমার মুখের দিকে তাকাতেই একটা নূরের তাজাল্লি দেখতে পায়। আর দেখেই সেন্স হারিয়ে ফেলি।
,
সারাঃ( গালে হাত দিয়ে) এখন ঠিক আছো তো আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
,
রাজঃ( মুচকি হেসে) পাগলী এই ভাবে কেউ ছুটাছুটি করে যদি ব্যাথা পেতে আর এই ভাবে কাঁপছো কেন?
,
সারাঃ তোমাকে এই ভাবে দেখে ভেবেছি দাদা ভাইয়ের কথাটা সত্যি হয়ে যাবে ( চোখ মুছে)
,
রাজঃ তুমি এখনো বিশ্বাস করো আমি তোমার সাথে অভিনয় করছি। সারা তুমি।
,
সারা( ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে) রাজ চৌধুরী বাসর রাতে তার বউকে দেখে সেন্সলেস হয়ে গেছে এই খবরটা যদি লোক সম্মুখে প্রচার হয় তোমার কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছো টুনটুনির আব্বু।
,
রাজঃ সারা ওসব কথা বাদ আমার একটা ছোট্ট রাজ চাই( ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে)
,
সারাঃ( লজ্জা পেয়ে) মানা করেছি নাকি।
,
রাজঃ সত্যি ( খুশি হয়ে)
,
সারাঃ তাহলে কি মিথ্যা আমি মেনে নিয়েছি মন থেকে।
,
রাজঃ তাহলে আবার বলো ভালোবাসি।
,
সারাঃ You are my Heart Raj I love you.( গলা জরিয়ে ধরে)
,
রাজঃ I love you too my টুনটুনির আম্মু . ( ঠোঁটে চুমু দিয়ে) Can I.( কানে কানে)
,
সারা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো । ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিবে একজন আরেজনকে।
আজ সত্যি সারার জীবনে বসন্ত এসেছে। আজকের পর থেকে শুরু হবে ওদের দুজনের জীবনের নতুন এক অধ্যায়।
,
,
,
মাত্র ই আফজালের ঘুমটা ভেঙেছে কিন্ত নড়তে পারছে আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলো রেহেনা আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
,
আফজালঃ এই যে ম্যাম কোল বালিশ ভেবে দিব্বি আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন। ঘুম হয়ে থাকলে এবার ছাড়েন দয়া করে আমি উঠবো ( কানে কানে ফিসফিসিয়ে)
,
রেহেনাঃ ( আড়মোড়া ভেঙ্গে) স্য,,,রি।
,
আফজালঃ ( মৃদু হেসে) ইটস ওকে।
,
রেহেনাঃ( ইশশ এটা কি করলাম লোকটাকে এই ভাবে কোল বালিশ ভেবে জড়িয়ে ধরেছি ছি ছি মনে মনে বোধ হয় কি না কি ভাবছে) ( মনে মনে)
,
আফজালঃ( ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মাথা মুছতে মুছতে) আমি কিছু মনে করিনি এমনকি কিছু ভাবিনি আমি আপনার স্বামী তাই ঘুমাতেই পারেন কোল বালিশ ভেবে ( মৃদু হেসে)
,
রেহেনাঃ লজ্জা দিচ্ছেন( অসহায়ের মতো তাকিয়ে)
,
আফজালঃ আমার কথায় তাই মনে হচ্ছে আজান এখনো দেয়নি আমি নামাজ পড়তে গেলাম আপনিও গোসল করে পড়ে নিন।
,
রেহেনা কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো আফজাল রুম থেকে বেরিয়ে আবারও তাকালো মুচকি হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বেরিয়ে গেলো ফজরের নামাজের উদ্দেশ্য।
,
,
,
জেমস্ঃ Hello! Hello beautiful, how are you?
,
সারাঃ I am fine, Mister jems.
,
জেমস্ঃ Wow! Oh my god! You looking Very hot.( মৃদু হেসে)
,
সারাঃ Thank You mister jems( বিরক্তি নিয়ে)
,
জেমস্ঃ ওয়াইন। ( দেখিয়ে)
,
সারাঃ No Thanks.
সারা বিরুক্তি নিয়ে লোকটার সাথে কথা বলছে । ওরা বর্তমানে প্যারিসে আছে। একটা ডিলের জন্য রাজ সারাকে নিয়ে গেছে। একটা গ্রাউন পড়ে দাড়িয়ে আছে পার্টিতে রাজ যে সাথে এসে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো সারা আর খুঁজেও পায়নি। হঠাৎ করে লাইট অফ। আবার হঠাৎ করে জ্বলে উঠলো দেখলো মিস্টার জেমস্ রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে। সামনে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি রেখে দাঁড়িয়ে আছে রাজ।এটা যে রাজের কাজ সারার বুঝতে এক মিনিটি লেট হয়নি।
,
দুজন খালি পায়ে বালির উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো নীল পানির ঢেউ গুলো দুজনের পা স্পর্শ করছে অপরুপ দৃশ্য কিন্ত রাজের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সারা। যা রেগে আছে পার্টি থেকে সবার সামনে দিয়ে বেরিয়ে এসেছে।
,
সারাঃ( ভয়ে ভয়ে) লোকটাকে এই ভাবে না মারলে ও পারতে?
,
রাজঃ ( কপালের রগ খাড়া করে) আমার কলিজায় যে হাত দিতে চাইবে তাকে আমি ঠিক এই অবস্থায় করবো। ঐ কুকুরের সাহস কি করে হয় তোমাকে হট বলার।
,
সারাঃ( ছলছল চোখে) এত ভালোবাসো আমায়?
,
রাজঃ( কোমর চেপে ধরে) সন্দেহ আছে।
,
সারাঃ উহুম।
রাজ তার মুখটা সারার কাছে নিতেই গড়গড় করে বমি করে দেয়। রাজের টি শার্ট ব্লেজার ভরে গেছে। এতে ওর কোনো প্রব্লেম নেই। কিন্তু সারার বমি কিছু তেই কমছে না দেখে দ্রুত সমুদ্রের পাড় থেকে ক্লিনিকে নিয়ে যায়। একজন ডাক্তার হাসছে বললো” কংগ্রেস আপনি বাবা হবেন” এটা বাংলদেশ না যে আজকে টেস্ট দিলে রিপোর্ট তিনদিন পর দিবে বাহিরের দেশে রিপোর্ট এক দুই ঘন্টা পরই দিয়ে দেয়।
কথাটা শোনে রাজের খুশি দেখে কে কিন্ত সারা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
,
রাজঃ( দুহাত ধরে) সারা আজকে আমি কতটা খুশি হয়েছি ভাবতে পারবে না।
,
সারাঃ কিন্ত আমি খুশি হয়নি।
,
রাজঃ( চোখে মুখে চিন্তার ছাপ) কেন?
,
সারাঃ তুমি আর আমায় আগের মতো ভালোবাসবে না। শুধু বাবুকে ভালোবাসবে আমায় না তাই।
,
রাজঃ( মুচকি হেসে) তাই ঠিক আছে বাবুনিকে অর্ধেক আর তোমাকে অর্ধেক তাহলে হবে। ( কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে)
,
সারাঃ হবে( রাজের বুকে মুখ লুকিয়ে)
,
,
,
কেটে গেলো ৫ বছর
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। পাতা ঝরা বৈরাগ্য আর থাকে না। গাছের ডালে কচি কিশলয় উঁকি দেয়। পত্র পল্লবে ভরে যায় বৃক্ষের শাখা। মুকুলিত বৃক্ষের শাখায় মৌমাছিদের গুজ্ঞন, কোকিলের কুহু তানে ভরে যায় হৃদয়। বসন্তের প্রকৃতি খুবই মনোরম। নানা বর্নের ফুলের সৌরভে বাতাস আমোদিত হয়। শিমুলের লাল থোকা থোকা ফুলের আড়ালে নেচে উঠে শালিক,ময়না,টিয়ে। ঘন বর্নের আড়ালে লুকিয়ে কু- উ করে ডেকে উঠে কোকিল। বৌ কথা কও পাখির গানে মানুষের মনও প্রকৃতির সাথে আত্মলীন হয়ে যায়। তেমনি সারার জীবনে এসেছে বসন্ত হয়েছে এক নতুন জীবনের সূচনা।
মনে পড়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের গান-
” আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়”
গানটা বরাবর ই মনে পড়ে বসন্তের সময়ে
সারা কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে কাজ করছে এমন সময় রাজ এসে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে পেটে স্লাইড করছে সারা কিছু বলছে না বললেও লাভ নেই তাই। বাড়িতে সার্ভেন্ট মোট ২৫ জন সারা প্রেগনেন্ট হওয়ার পর রাজ নিয়োগ দিয়েছে আজকে ফ্রাইডে তাই সারা নিজে রান্না করবে।
,
রাউফঃ বাবাই বাবাই তুনি তি তরছো মাম্মাের সাতে( বাবাই বাবাই তুমি কি করছো মাম্মাের সাথে)
রাজ সারা পেছন ফিরে তাকালো গুটিগুটি পায়ে পিচ্চি রাউফ এসে কথাটা জিজ্ঞেস করলো রাজকে।মাত্র ৪ বছর বয়স পুরো পুরি রাজের মতো দেখতে। রাউফ হলো রাজ সারার ভালোবাসার উপহার ওদের ছেলে।
সারাঃ আমার বাবুনি কখন ঘুম থেকে উঠেছে আপনি খেয়াল করেননি যদি পড়ে যেত বেড থেকে।
,
রাজঃ ( কোলে নিয়ে আদর করে) বাবাই তুমি কেন উঠলে আরেকটু ঘুমাতে আর আমি তোমার মাম্মাকে আদর করছিলাম বুঝলে ( সারার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে)
,
রাউফঃ তাত আনিও আতর তরব মাম্মামতে( তাই আমিও মাম্মা কে আদর করবো)।
কথাটা বলে দৌড়ে গিয়ে সারার পেটে চুমু দিয়ে আবারও রাজের কাছে চলে আসে উপস্থিত সকলে শকড সারা আরো বেশি আজকালকার বাচ্চারা যা করে আরকি। সারার মা ফুপি মুচকি মুচকি হাসছে। রেহেনাও আফজাল হাসছে ওদের একটা ছেলে হয়েছে নাম আয়মান ওর সাথে খেলতে গিয়েছে রাউফ।
সারা প্রচুর লজ্জায় পড়েছে। তবে আজকে বসন্তের প্রথম দিন। রাজ নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে সারাকে এমনকি শাড়ি টাও। অতপর বেরিয়ে এলো সাদা প্যান্ট সাদা পাজ্ঞাবী রাউফকেও একই রকম পোশাক পড়িয়েছি । রাউফকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে একগুচ্ছ লাল গোলাপ এগিয়ে দিয়ে সারার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।
,
রাজঃ আমি জানি না কিভাবে প্রপোজ করতে হয় সারা তবে আজকে আবারও বলছি এই বাতাস গাছপালা আসমান জমিন কে স্বাক্ষী রেখে আমি তোমায় খুব ভালোবাসি সারা। খুব ভালোবাসি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তোমাকে প্রতি বসন্তে ঠিক এই ভাবেই প্রপোশ করে যাব আই লাভ ইউ।
রাউফঃ( রাজের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসে) আত লাত ইত মাম্মম( হাতে থাকা ফুল এগিয়ে দিয়ে)
,
সারা হাসবে না কাঁদবে বাবা ছেলের পাগলামো দেখে
,
সারাঃ আই লাভ ইউ টু মাই টু হার্টস এবার অন্তত পক্ষে উঠুন কার টাও আনেননি বাড়ি যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
,
রাজঃ হুম চলো।
ওরা হাঁটছে রাস্তা দিয়ে রাউফ কোলে সারা রাজের ডান হাত বাম হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে আছে।
সামনে এসে দাঁড়ালো একটা কার এটা আর কেউ না অনিক এবং তার স্ত্রী ইভা। মাফ করে দিয়েছে সারা রাজ দুজনে মানুষ মাত্রই তো যেখানে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করতে পারে ওনার পাপিষ্ঠ বান্দা বান্দীকে সেখানে আমরা মানুষরা কেন পারবো না কিছুক্ষণ কথা বলে চলে আসলো।
বাড়ি পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো। সারা রাজকে আপনি বলে ডাকে তুমি বলে না। সারা বলেছিল নতুন জীবন দান করবে রাজকে সেটাই হয়েছে।
তুমি আমার জীবনে বসন্ত ছিলে সারা। তুমি আমার লাইফে না আসলে বুঝতেই পারতাম না। ভালোবাসা কাকে বলে সত্যি তুমি শ্রেয়। শ্রেয় নারী জাতি আমাকে শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছো তুমি আমার সন্তান রাউফ। খুব ভালোবাসি তোমায় হ্যা খুব ভালোবাসি।
এতটুকু একটা ডায়েরি তে লিখে সারাকে জরিয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
অপেক্ষা নতুন একটা সকালের আবারও সূর্য উঠবে সকাল হবে আবারও সন্ধ্যা হবে রাজ সারার জীবনে এসেছে নতুন এক অনাকাঙ্ক্ষিত বসন্ত। ফুলে ফুলে যেমন ভরে যায় শিমুল গাছ তেমনই ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় ভরে উঠেছে রাজ সারার জীবন।
এভাবেই কাটতে থাকলো দিনগুলো রাজ সারা কে প্রপোজ করে আর সারা শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদে রাজের ভালোবাসা ও পাগলামো দেখে। অবশেষে বসন্তের ক্ষণ এসে উঁকি দিলো দুজনের জীবনে।
( ভালোবাসা- ভালোবাসাই হয়)
সমাপ্ত