বাক্সবন্দী চিঠি পর্ব -১৩ ও এক্সট্রা

গল্প: #বাক্সবন্দি_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব:১৩

এক সপ্তাহ কেটে গেলো অনুর বিয়ের।আজ অনুর ফিরে আসার কথা।
ইতু তাদের ছাদের বসে গান শুনছে।লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে গায়ে ভালো করে ওড়না জড়িয়ে একধ্যানে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে।
এই এক সপ্তাহ আবির তাকে বিরক্ত করেনি।বরং যখনই মুখোমুখি হয়েছে এড়িয়ে গেছে তাকে।আবিরের এমন হঠাত্‍ বদলে যাওয়া ইতুকে ভাবায়।যে মানুষটাকে বলে কয়ে দূরে সরাতে পারেনি সে কিভাবে একরাতের মধ্যে পাল্টে গেলো। যদিও এতোদিন ইতু এটাই চেয়ে এসেছে।কিন্তু কোথাও না কোথাও আবিরের এমন অবহেলা তাকে বড্ড পোড়ায়।
চোখ বন্ধ করে গানের তালে নিজেও গেয়ে উঠলো,
“তোরে রুনুঝুনু করে নুপুরের তালে মাতাবো,
আর আলতা তোরই উঠোনে হাটবো।
কি হলো অবেলায় কেনো এলি বা তুই,
যাস নে গো চলে হায়
মরে যাবো।
আমার আজ তুই,কাল তুই দিবা নিশি তুই।”

“বাহ ইতু! তুমি তো অনেক ভালো গান গাইতে পারো।আগে তোমার এতো গুন কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে?”
ইতু পাশ ফিরে দেখলো পাশের ছাদে আবির,অয়ন আর শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে।শ্রাবণই ওকে কথাটা বলেছে।আবির ফোন নিয়েই ব্যস্ত ইতুর দিকে ফিরে তাকাচ্ছেনা।
ইতু আড়চোখে আবিরকে দেখে শ্রাবণের দিকে মুচকি হেসে বললো,”গুন তো আগেই ছিলো তখন কারোর চোখে পড়েনি তাই যানতেন না।”শ্রাবণ স্মিথ হাসলো।
“তোমার সকল গুনই আমার চোখে পড়ে।তোমার ছোট ছোট বিষয় আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবো।”
চমকে উঠলো ইতু।শ্রাবণের কথার মধ্যে কিছু একটা ছিলো।কেমন যেনো রহস্যময়।
ইতু দেখলো আবির কিছু না বলে হনহন করে সেখান থেকে চলে গেলো।
অয়ন এতোক্ষন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিলো।আবিরকে চলে যেতে দেখে ইতু আর শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে সেও চলে গেলো।
শ্রাবণ ওদের চলে যাওয়াতে ভ্রুক্ষেপ করলো না।
ইতুর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,”ইতু তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে আমার।এমন কিছু আছে যেটা তোমার অজানা।তোমার অগচরে অনেক কিছু হচ্ছে।”
ইতু কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো।শ্রাবণ মুখ খুলতে গেলে কেউ তার কাঁধে হাত রাখলো।
শ্রাবণ পিছন ফিরে দেখলো আবির দাড়িয়ে আছে।
শ্রাবণের দিকে বাঁকা হেসে বললো,”নিচে চল।এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”
শ্রাবণ আমতা আমতা করে চোখ নামিয়ে নিলো।
আবির যেতে যেতে ইতুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
আবিরের এইভাবে তাকালো কেনো বুঝতে পারলো না ইতু। শ্রাবণের কথা গুলো তাকে ভাবাচ্ছে।কি হচ্ছে তার অগোচরে যা সে যানে না? আবিরের ব্যবহারটাও কেমন রহস্যময় লাগছে।
________
বিকালে ছাদ থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ইতু।হঠাত্‍ হেচকা টানে দরফড়িয়ে উঠে বসলো।সামনে তাকিয়ে দেখে অনু মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।কোনো কিছু না বলে আচমকা ইতুকে জড়িয়ে ধরলো।এসবের কিছুই বুঝলো না সে।
অনু নিজেই খুশিতে আপ্লুত হয়ে বললো,”আই এম সো সো সো হ্যাপি ফর ইউ।”
ইতু ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি হয়েছে বলবি?এইভাবে ঘুম ভাঙ্গালি কেনো? আর কিসের জন্য এতো হ্যাপি তুই।”
অনু উত্তেজনা কিছু একটা বলতে নিলেই শারমিন বেগম তাকে থামিয়ে দেন।
“আরে নতুন বিয়ে হয়েছো তাই এইসব বলছে।”
শারমিন বেগম চোখ দিয়ে ইশারা করতেই অনু থতমত খেয়ে গেলো।
ইতু সরু চোখে তার মাকে আর অনুকে দেখছে।তাদের ইশারা ইঙ্গিত তার চোখে ধরা পড়েছে।সে বেশ বুঝতে পারছে তার থেকে কিছু লুকানো হচ্ছে।
“তোমরা কি লুকাচ্ছো আমার থেকে?অনু ব্যাপরটা কি রে?তোর এইভাবে আসা আমাকে জড়িয়ে ধরা তার উপর আম্মু তোকে কিছু একটা ইশারা দিলো। কাহিনি কি?অনু তাড়াতাড়ি মুখ খুল বলছি।পরে যদি আমি কিছু যানতে পারি তোর জামাইকে বিধবা বানাবো।”
অনু ফাকা ঢোক গিলে শারমিন বেগমের দিকে তাকালেন।শারমিন বেগম পারছেনা দৌড়ে পালাতে।কথাটা ইতুর কানে গেলে যে একটা একটা ঝামেলা হবে তিনি ভালো করেই যানেন।শারমিন বেগম চুলার তরকারির কথা বলে কেটে পড়লেন।
অনু নখ কামড়াতে কামড়াতে উঠে দাড়ালো।
“অনু সত্যি কথা বল বলছি।আম্মু এইভাবে পালালো কেনো?তোর মুখের রং উড়ে গেছে মনে হচ্ছে।সত্যি করে বল কি চলছে বাড়িতে?”
অনু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
“তোর দুলাভাই বাসা ওয়েট করছে আমি আসি।”
ইতু ধরার আগেই কথা বলে অনু দৌড় দিলো।
ইতু বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।সবাই কেমন অদ্ভুদ ব্যবহার করছে তার সাথে।
ইতু ফ্রেশ হয়ে আবিরদের বাড়ি গেলো।বিয়ের পর প্রথম কুয়াশা শ্বশুড় বাড়ি এসেছে।শ্বশুড় গেছে বাজার আনতে।শ্বাশুড়িকে এইভাবে রান্নার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে।আবির পাশে বসেছিলো এতোক্ষন কল আসায় রুমে চলে গেছে।
কুয়াশা নিজের বউর দিকে তাকালো।মেয়েটা সোফায় উপুড় হয়ে গেম খেলছে।কে বলবে মেয়েটার বিয়ে হয়েছে সামনে তার স্বামী বসে আছে।এখানে আসার পর থেকেই অনুকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করছে।কুয়াশা তার বউয়ের পাগলামির কথা ভেবে মনে মনে হাসলো।এই এক সপ্তাহ মেয়েটা খুব জ্বালিয়েছে তাকে। আজকের পর অনেকদিন তার থেকে দূরে থাকতে হবে ভেবে বুকের ভিতর ধক করে উঠে।কিন্তু অনুর কোনো হোলদোল নেই।মেয়েটা এখনো অবুঝই রয়ে গেলো।
কুয়াশা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
“কি ব্যাপার দুলাভাই? আসার পর থেকেই দেখছি বউকে একেবারে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন।বউ তো আপনারই।পুরো এক সপ্তাহ আপনার কাছে ছিলো তাও বুঝি মন ভরেনি?”
ইতুর কথা শুনে কুয়াশা হাসলো।
অনু উঠে দৌড়ে পালালো।একে তো ইতুর কথায় লজ্জায় কান লাল হয়ে গেছে তার উপর ইতু এখানে মানে তাকে জেরার মুখে পড়তে হবে।
কুয়াশা অনুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হেসে ইতুকে বললো,”আসলেই ওকে সারাজীবন দেখতে থাকলেও আমার মন ভরবে না।আমার তো ওকে এখানে রেখে যেতেও ইচ্ছা করছে না।”
ইতু দুষ্টু হেসে বললো,”এক কাজ করুন দুলাভাই,ঘর জামাই হয়ে যান তাহলে আর কষ্ট করে অনুকে এখানে রেখে যেতে হবে না।”
“এমন সুযোগ পেলে তো অবশ্যই থাকতাম।তুমি একবার আপিল করে দেখবে নাকি?”
ইতু হোহো করে হেসে উঠলো।
“সত্যি দুলাভাই আপনি দেখছি পুরো বউ পাগল হয়ে গেছেন।আমাদের অনুটার যাদু করেছে মনে হয়।”
কুয়াশা মাথা চুলকে হেসে বললো,”তোমার বান্ধবিটা সত্যি যাদু যানে।কিন্তু দেখো আমি যে একটু পর চলে যাবো তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।ওর বিরহে আমি দেবদাস হওয়ায মতো অবস্থা আর তাকে দেখো।”
প্রতিউত্তরে ইতু কিছু বলতে যাবে তার আগেই কণা আফরোজ এগিয়ে এসে ইতুর কপালে চুমু খেয়ে বললো,”কখন এলি মা?”
ইতু অবাক হয়ে বললো,”কিছুক্ষন আগে এসেছি।কিন্তু আমি আসাতে তুমি এতো খুশি হচ্ছো কেনো?আজ কপালে চুমু ও খেলে?আদর একটু বেশি হয়ে গেলো না?”
কণা আফরোজ ইতুর মাথায় গাট্টা দিয়ে বললো,”আমি কি তোকে আদর করি না?তুই আসলে খুশি হই না?”
“হও।কিন্তু আজ একটু বেশি বেশি লাগছে।ঠিক হজম করতে পারছিনা।”
“যাহ তোকে আর আদরই করবো না।বেশি ভালোবাসলে তখন আর কদর থাকে না। মেয়ে আমার আদর নিয়ে সন্দেহ করছে।”
ইতু কণা আফরোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,”ঠিক আছে মামনি আমারই ভুল।আসলে আজ সবাই কেমন অদ্ভুদ ব্যবহার করছে তো তাই একটু…”
“হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।চল তো মা আমাকে একটু কাজে হেল্প করবি।একলা সব করে উঠতে পারছিনা।”
“চলো।
আর দুলাভাই আপনি আপনার বউ কাছে যান।বেচারি ভয়ে পালিয়েছে।আমি যতোক্ষন আছি আমার সামনেও আসবে না।”
“কেনো কি করেছো তাকে?”
“কাজ শেষ করে এসে বলবো।”
“আচ্ছা।”

ইতু কিচেনে কণা আফরোজকে রান্নায় সাহায্য করছে।কুয়াশা ডিনার করেই চলে যাবে।
কিছুক্ষন পরেই আবিরের বাবার বাজার নিয়ে ঢুকলেন কিচেনে।কণা আফরোজ বাজার সব দেখে নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন,”এই তোমার চোখের সাথে কি কানটাও গেছে?”
হঠাত্‍ বউ এমন ধমকে তিনি চমকে উঠলেন।
“কি হয়েছে?চেঁচাচ্চো কেনো?”
“চোখে তো এমনিতেও দেখতে পাওয় না এখন কি কানটাও গেছে তোমার?তোমাকে আনতে বললাম পেঁয়াজ আনছো টমটো।খাসি আনতে বললাম মুরগিনিয়ে আসছো। তার উপর কিসব হাবিজাবি জিনিস।ডিম কেনো আনলা?বাসায় অলরেডি দুই কেস ডিম পড়ে আছে।এতোগুলো ডিম দিয়ে কি করবো?তোমায় মাথায় ভাঙ্গবো?”
আবিরের বাবা মুখ কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে।আসলে মেয়ের জামাই প্রথম আসার খুশিতে তার বউ বলেছে তা বাজারে গিয়েই ভুলে গেছে।তাই নিজের ইচ্ছা মতো বাজার করে নিয়ে এসেছেন।কিন্তু বাসায় এসে যে বউয়ের তোপের মুখে পড়তে হবে তার খেয়াল ছিলো না।ইতুর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঠোঁট চেপে হাসি আটকানো যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।শেষে কিনা এই পিচ্চি মেয়ের সামনে সম্মানহানি হলো।
কণা আফরোজ রেগে আরো কিছু বলতে নিলে আবির উপর থেকে চেঁচিয়ে বললো,”তাড়াতাড়ি এক কাপ কফি দাও মাথা ধরেছে।”
কণা আফরোজ স্বামী দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় ইতুকে বললো,”ইতু কড়া করে এককাপ কফি করে আবিরকে দিয়ে আয় তো আমি আজ এই লোকটার এইসব হেয়ালিপনা ছুটাবো।ঘরে নতুন জামাই এসেছে সে এখন এমন একটা কান্ড করে বসলো?
এই তুমি এক্ষুনি রুমে আসো।”
ইতু অসহায় মুখ করে কিচেনে দাড়িয়ে আছে।সব সময় এমন পরিস্থিতি তাকেই কেনো পড়তে হয় সে বুঝতে পারে না।এখন আবিরের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে যেতে হবে ভেবেই কান্না পাচ্ছে।না পারছে এখান থেকে পালাতে না পারছে আবিরের কাছে যেতে।
~~
ইতু কফি বানিয়ে আবিরের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।ভিতরে ঢুকতে এক প্রকার অস্বস্তি কাজ করছে।আজ এতোদিন আবির তাকে ইগনোর করে গেছে এখন যদি ইতু কফি নিয়ে তার সামনে যায় আবির কি ছ্যাচড়া ভাববে?
ইতু দোটানায় ভুগছে।পরে ভাবলো আবির যদি তাকে কিছু বলে তাহলে সে বলবে মামনি তাকে জোর করে পাঠিয়ে।ইতু সিধান্ত নিয়ে দরজায় নক করলো।দুইবারের মাথায় আবির ভিতর থেকে বললো,”কাম ইন।”
ভিতরে ঢুকেই ইতুর চোখ ছানাবড়া।আবির শুধু একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে আছে।গালি গায়ে আবিরকে দেখে ইতু জমে গেলো।বুক মাঝখানটায় কিছু লোম ছাড়া পুরো শরীরে কোথাও লোম নেই।বুকের কাছটায় বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।ইতু একবার সেদিকে তাকিয়ে ঝট করে উল্টো দিকে ফিরে গেলো।আবির এতোক্ষন ইতুকে পর্যবেক্ষন করছিলো।ইতুকে এইভাবে উল্টো দিকে ফিরতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।পরক্ষনেই মুখে গম্ভীর ভাবটা ফুটিয়ে তুলে বললো,”তুই এখানে কি করছিস?”
ইতু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,”তো…মার ক…ফি।”
“তুই কেনো কফি এনেছিস?আম্মু কোথায়?”
কথা বলতে বলতে আবির ইতুর দিকে এগিয়ে এলো।ইতুর ঠিক পিছনে দুই ইঞ্চি জায়গা রেখে দাড়ালো।
আবিরের প্রতিটা নিঃশ্বাস ইতুর চুলে লাগছে।আবিরের শরীর থেকে একটা গ্রাণ এসেও ইতুর নাকে ধাক্কা খাচ্ছে।গ্রাণটা নাকে থেকে সোজা বুকে শিহরণ তৈরি করছে।ইতুর এখন ভয়ংকর কিছুর করার ইচ্ছা জাগছে।ঠোঁট কামড়ে হাত দিয়ে ওড়না চেপে ধরে শ্বাস নিতে লাগলো।হঠাত্‍ গরম নিঃশ্বাস ইতুর কানে এসে লাগলো।ইতু চমকে সরে যেতে চাইলে আবির তার কোমড় চেপে ধরলো।ইতুর মনে হচ্ছে সে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে।এক্ষুনি দম আটকে মরে যাবে।পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেলো ইতুর।আবিরের হঠাত্‍ আক্রমনে ইতুর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
চলবে।গল্প: #বাক্সবন্দী_চিঠি
লেখক: Ninika Jaman Noor
পর্ব: #এক্সট্রা_পার্ট

আবির ফিসফিস করে বললো,”কফি দিয়ে এখান থেকে বিদায় হয়।তোর চেহারা দেখতেও ইচ্ছা করছে না।”
আবিরের কথাশুনে মুহুর্তেই ইতুর কাঁপুনি থেমে গেলো।পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত জ্বলে উঠলো।
একহাতে কফির মগ শক্ত করে ধরে অন্যহাতে আবিরের পেট বরাবর কনুই দিয়ে জোরে গুঁতো দিলো।আবির চোখ মুখ কুঁচকে পেটে হাত দিয়ে “আহহহ” করে উঠলো।ইতু রেগে দিশাহারা হয়ে কফি ছুরে মারলো।কফি গিয়ে সোজা পড়লো আবিরের বুকে।রেগে আগুন হয়ে আছে মেয়েটা।
ইতু দাঁত কিড়মিড় করে বললো,”তুমি একটা উচ্চমাত্রার অসভ্র আর ইতর।তুমি আমার মুখ দেখবে কি আমিই তোমার মুখ দেখতে চাই না।”
ইতু দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
আবির হতভম্ব হয়ে গেছে।এটা কোন ইতুকে দেখছে সে।এতো রাগ ইতুর মধ্যে কোনোদিন দেখেনি।রাগ ছিলোনা এমন না কিন্তু আবিরকে এই রাগের মুখোমুখি হতে হয়নি কোনোদিন।ইতুর রাগটা ঠিক হজম করতে পারছেনা আবির।নিজের বুকটা যে জ্বলে যাচ্ছে সে দিকে কোনো খেয়াল নেই তার।ইতু নতুন রুপেই ডুবে আছে আবির।এই রাগটাই ভালোলাগছে তার।
কথায় আছে না প্রেমে পড়লে প্রিয় মানুষের খারাপ গুনগুলো ও ভালোলাগে।আবিরের হয়েছে সে দশা।ছলছল চোখে সিঁডি দিয়ে নামছে ইতু।আবির তাকে আবার অপমান করেছে।
“কেনো বারবার অপমান হতে যাস তুই এই লোকটার কাছে?কোনোদিন ভালোকথা বলেছে তোকে?কি আশা করছিলি এই অসভ্রর কাছে?ইতর,লুইচ্ছা,নিম্নশ্রেণী প্রানী।”
“কিরে কি বিরবির করছিস নিজে নিজে?চোখ মুখ এমন করে আছিস কেনো?”
কণা আফরোজ এর কথায় ইতুর চোখের বাঁধ ভেঙ্গে পড়লো।
“তোমার কথায়,শুধুমাত্র তোমার কথা রাখতে আমি কফি বানিয়ে তোমার ছেলে জন্য নিয়ে গেছি।সে কি করেছো যানো?”
“কি করেছে?”
“সে….”
“কিরে বল? সে কি করেছে?”
ইতু থতমত খেয়ে দাড়িয়ে আছে।কণা আফরোজকে কিভাবে বলবে আবির তার কোমর ধরে কাছে টেনেছিলো।অনুভূতিগুলোকে আকাশ সমান করে একধাক্কায় নিচে ফেলে দিয়েছে।
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললো,
“সে বলছে কফি রেখে বিদেয় হতে।আমার চেহারাও দেখতে চায় না।”
“আবির তোকে এইসব বলেছে?আমার তো বিশ্বাস হয় না।আবির এটা তোকে জীবনেও বলতে পারেনা।আবির তো তোকে…”
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না? ওহহ তোমার আদরের ছেলে বলে কথা।ধোঁয়া তুলসি পাতা।”
“আম্মু ইতু আমার গায়ে গরম কফি মেরে দিয়ে চলে এসেছে।আর বলেছে আমি নাকি অসভ্য,ইতর।ওর হাতের কফি নাকি আমি ডিজার্ব করি না।দেখো বুকটা কেমন লাল হয়ে গেছে।”
আবির সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাগুলো বললো।
ইতু ও অবাক।আবির তাকে পুরোপুরি মিথ্যেবাদী বানিয়ে দিয়েছে।
কণা আফরোজ হায়হায় করে ছেলের কাছে গেলেন।
“অনেকটা পুরে গেছে আবির?চল তোকে মলম লাগিয়ে দি।”
“আমি লাগিয়ে নিবো তুমি অস্থির হচ্ছো কেনো?”
কণা আফরোজ অগ্নিচোখে ইতুর দিকে তাকালেন।
ইতু একটা ফাঁকা ঢোঁক গিললো।
“মা…মনি তোমার ছেলে মিথ্যে বলছে।আবির ভাই আগে আমাকে ওইসব বলে রাগিয়ে দিয়েছিলো।”
“তাই বলে তুই ছেলেটার গায়ে গরম কফি ছুড়ে মারবি?তুই কি দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছিস?এক্ষুনি শারমিন আর কাদের ভাইকে ডাকছি আমি।”
ইতু ভয়ে চুপসে গেলো।
“কপালটাই খারাপ আজ।মা যদি শুনে আমি তার আদরের আবিরকে গরম কফি ছুড়ে মেরেছি আমাকে তো গরম কফিতে চুবিয়ে মারবে। মাই গড! ভাবতেই গা জ্বলে যাচ্ছে।”
ইতু আড়চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো কণা আফরোজ সোফায় বসে তাকে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর আবির তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।
ইতুর ইচ্ছা করছে আবিরের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।বকা যখন শুনতে হবে তাহলে মাথা ফাটিয়ে শুনলে তো সমস্যা নেই।ইতু আশে পাশে তাকিয়ে কিছু আছে কিনা খুঁজতে লাগলো।
আবির সরু চোখে ইতুকে পর্যবেক্ষন করছে।ইতুর হাবভাব তার ভালো লাগছেনা।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here