বাতাসা❤
০৭.
সেদিন রাতের পর দু’দিন কেটে যায়। এ দু’দিন দিশা জেনের সামনে আসে নি। নিজের রুমেই খাওয়া-দাওয়া, বাকি সব কাজ করেছে সে। প্রয়োজন ব্যতীত কেউ তাকে তার রুম থেকে বের হতে দেখেছে কিনা সন্দেহ। আর যদি সেই প্রয়োজনের সময় জেন বাসায় থাকে, তাহলে তো প্রয়োজনেও বের হয় নি দিশা। এতে বেশ মন ক্ষুণ্ণ হয় জেন। সেদিন রাতের জন্য সে অনুতপ্ত। কিন্তু তার মনে হয় না সে কোনো ভুল বলেছিলো। তবুও দিশার জন্য মনে জোড় দিয়ে সেটাও বিশ্বাস করছে জেন। দিশার কাছে ক্ষমা চাইতে চাইছে। দিশা কি তাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও দেবে না? একটা বার সামনে আসলে কি এমন ক্ষতি হবে দিশার?
অনুতাপটা ধীরে ধীরে ক্রোধে পরিণত হলো জেনের। দিশা সকালে কলেজের জন্য বের হতেই পথ আটকে দাঁড়ায় জেন। দিশা ঢোক গিলে তাকায় জেনের দিকে। তীব্র ভয় কাজ করছে তার মধ্যে। জেন কি এই মাঝরাস্তায় তার সাথে অসভ্যতামি করবে? প্রশ্নটা বেশ ভাবে ভাবাচ্ছে তাকে। যদি এমন হয়? তাহলে তার বাবার, ভাইয়ের, পরিবারের সম্মান আর থাকবে না। কিচ্ছুক্ষণ চুপ থেকে শুকনো গলায় দিশা বললো,
— “জেন ভা..ভাইয়া। প্লীজ রাস্তা ছাড়ুন। কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।”
জেন প্রসস্থভাবে হাসে। দিশার হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে ওঠে দিশা,
— “সমস্যা কি আপনার জেন ভাইয়া? হাত ছাড়ুন আমার। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
জেন যেন শুনেও শুনলো না। একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চৌরাস্তার মোরে এসে দাঁড়ালো। তবে হাত ছাঁড়লো না। দিশা হাত ছাড়াতে নিলেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— “ডোন্ট ইউ ডেয়ার দিইইসা। আদার ওয়াইস আই উইল হাগ ইউ!”
জেনের দ্বারা বিশ্বাস নেই। এমন করেও ফেলতে পারে সে। তাই চুপ রইলো দিশা। বারবার ঢোক গিলছে সে। তবুও যেন ভয় কমছে না তার। জেন ঠিক কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে তাকে? বুঝে উঠতে পারছে না দিশা। ওদিকে জেন রিকশা ঢাকার চেষ্টা করছে। আশেপাশে একবার তাকিয়ে নিয়ে অন্যদের দেখাদেখি হাত উঁচিয়ে রিকশা চালককে ডেকে বলল,
— “এহ্ই যে বাইয়া। যাহ্ বেন?”
রিকশা চালক বুঝলো না জেনের কথা। তিনি ভ্রু কুঁচকে জেনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করছেন। ব্যর্থ হয়ে রিকশা চালক বললেন,
— “কিয়া কইছেন? বুঝি নাই।”
জেন অসহায় ভাবে মাথা চুলকালো। সেও যে বুঝতে পারছে না রিকশা চালকের কথা। দু’জনের এমন অবস্থা দেখে হাসি পেলো দিশার। কিন্তু হাসলো না সে। শক্ত কণ্ঠে জেনকে বলল,
— “শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছেন কেন? আমার ক্লাস আছে। যেতে দিন আমায়।”
জেন সে কথায় পাত্তা দিলো না। অসহায় কণ্ঠে বলল,
— “আমি উনার কথা বুঝতে পারছি না দিইইসা। তুমি একটু উনাকে বলবে আমাদের যেন একটা ভালো পার্কে নিয়ে যায়, প্লীজ?”
দিশা খেয়াল করলো অতিরিক্ত চিন্তা আর রোদে দাঁড়িয়ে থাকায় জেনের সারা মুখ লাল হয়ে গেছে৷ এতে জেনের ক্ষতি হতে পারে ভেবে আর কথা বাড়ালো না সে। রিকশা চালককে বলল,
— “মামা, আমাদের একটু সামনের পার্কটায় নামিয়ে দেবেন?”
রিকশা চালক মুচকি হেসে নম্র ভাবে বললেন,
— “ও এই কতা। উনার কতা এত্তক্কন বুঝি নাই তো… আহেন, আহেন, বহেন!”
দিশা একরাশ বিরক্তি নিয়ে জেনের দিকে তাকালো। তারপর উঠে বসলো রিকশায়। দিশার দেখাদেখি জেনও বসলো দিশার পাশে। যথারিতি রিকশা চলতে শুরু করলো। আর বিপত্তি ঘটলো তখনই। জেন শক্ত করে দিশার হাত ধরে আছে৷ তার মনে রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার প্রবল ভীতি আছে। বারবার দিশাকে বলছে,
— “আমি পড়ে যাবো দিইইসা।”
একটু থেমে আবারো বলে,
— “আমাকে শক্ত করে ধরো। ছেড়ে দিও না।”
দিশা চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। অস্বস্তি আর রাগ দু’টোই কাজ করছে তার মধ্যে। মনে মনে ভাবছে, ‘এ কোন মুশিবতে আটকে গেলাম?’
_________________
চলবে…
আর