#’বাতাসা’❤
|পর্বঃ ১২|
কেটে গেল একটা মাস। প্রতিদিনকার মতো সকালে উঠে নামায পড়ে নিলো দিশা। মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া পেতে চলে এলো বারান্দায়। প্রতিদিনকার মতো বারান্দার ঠিক নিচে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। এটা সেই জায়গা, যেখানে জেন আবেগীয় দৃষ্টিতে প্রথমবার তাকিয়ে ছিল তার দিকে। বারান্দার ঠিক নিচের গাছটার সঙ্গে হেলান দিয়ে। পাশের বেঞ্চটায় রোজ বিকেলে আড্ডা দিতো তারা। অথচ, এখন সবই অতীত। অতীত চাইলেও ফিরে আসবে না। অজান্তেই বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো দিশার। চোখে পানি চকচক করছে। হয়তো গড়িয়ে পরবে এখনই। কিন্তু সেই সুযোগটা দিলো না দিশা। পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই হাত দিয়ে ঘঁষে মুঁছে নিলো।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠল দিশার। রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখলো ফোনের স্ক্রীনে স্পষ্ট ভাসছে জেনের নাম। ‘জেন দ্যা হ্যান্ডসাম বাতাসা’ নামে সেভ করা জেনের নম্বরটি। নামটা অবশ্যক জেনেই সেভ করেছিলো দিশার ফোনে। কেননা, দিশা সবসময় বলতো, ‘জেন, আপনি বাতাসার মতো সুন্দর। একদম সাদা, সাদা!’
ভাবতেই একদফা মলিন হাসলো দিশা। ভাবনার মাঝেই কলটা কেটে গেলো। প্রায় পরপরই আবারো বেজে উঠল ফোনের রিংটোন। দিশা একবার ভাবলো ফোন ধরবে না। মস্তিষ্ক কথাটা বললেও মন কি তা শুনবে? দিশার ক্ষেত্রে তো না। না চাইতেও কাঁপা হাতে কলটা রিসিভ করলো দিশা। কাঁপা গলায় ‘হ্যালো’ বলতেই জেন ব্যগ্র কণ্ঠে বলে উঠল, ‘ অবশেষে আল্লাহ্ রহমতে ফোন ধরেছো তুমি। কে-কেমন আছো? বাসায় সব ঠিকঠাক? ‘
দিশা ছোট্ট করে বলল, ‘ভালো।’
কিছুসময় জবাব এলো না। তবে ওপাশ থেকে স্পষ্ট দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। কিছুক্ষণ পর জেনের মলিন কণ্ঠ শোনা গেল, ‘আমার ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবে না দিইইসা?’
দিশার কণ্ঠনালি থেকে শব্দ বের হচ্ছে না। প্রচন্ড কান্না আসছে তার। কোনোমতে লম্বা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বলল, ‘কেমন আ-আছেন?’
বলতে বলতে কেঁদে দিলো দিশা। কথা বলতে পারছে না সে। তীব্র থেকে তীব্রভাবে কান্নার বেগ বেড়ে গেছে তার। জেনের কন্ঠস্বরও রোধ হয়ে এলো। ঢোক গিলে দ্রুত বলল, ‘দিইইসা প্লীজ জান, প্লীজ কেঁদো না। আ-মার কষ্ট হচ্ছে প্লীজ।’
দিশার কান্না থেমে গেলো তৎক্ষণাৎ। তবে ফুফানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে প্রবল। জেন আবারো বলল, ‘প্লীজ দিইইসা কেঁদো না। দেখো, সব ঠিক হয়ে যাবে। এডুকেশন শেষে তোমাকে একেবারে আমার কাছে নিয়ে আসবো প্রমিস! দ্রুত বিয়ে করবো। প্লীজ কেঁদো না।’
দিশা নাক টেনে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তারপর হঠাৎ-ই শক্ত গলায় বলে উঠল, ‘মিথ্যা আশা দেবেন না জেন। এ এক মাসে কয়বার ফোন দিয়েছেন? বোকা মনে করেন আমায়?’
‘দিইইসা, আমি পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকি। কিন্তু যখনই সময় পাই তোমাকেই ফোন দিয়ে থাকি। তুমিই তো আমার ফোন ধরো না।’
দিশা আগের চেয়েও দ্বিগুণ শক্ত কণ্ঠে বলল, ‘আপনি পাল্টে গেছেন জেন। আর আমিও! আমাদের কিছু হওয়ার নয়। আমাকে আর ফোন দেবেন না। রাখি।’
জেনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলো দিশা। দীর্ঘশ্বাস ফেলার সাথে সাথেই বুক চিঁড়ে কান্না বেড়িয়ে এলো তার। কেন এমন হলো তার সাথে? এত দূরত্ব কেন?
————-
রাতে খাবারের টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিল দিশা এবং তার বাবা, মা। দিশা ঠিক খাচ্ছিল না, বরং হাত দিয়ে নড়াচড়া করছিল ভাতগুলো। সেটা খেয়াল করে দিশার বাবা বলে উঠলেন, ‘দিশা মা? খাচ্ছিস না কেন?’
দিশা অস্পষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘খা-খাচ্ছি তো।’
দিশার বাবা আবারো বললেন, ‘কয়েকদিন ধরে দেখছি মনমরা হয়ে থাকিস। কি হয়েছে?’
দিশা জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে চুপ রইলো। দিশার বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘তোকে বিদেশে পড়াতে চাচ্ছি আমি। রাফসানের সাথে কথা হয়েছে। ওর সাথে ওর ভার্সিটিতে পড়বি তুই। এখন তোর কি মতামত?’
দিশা কিছু বলার আগেই দিশার মা বলে উঠলেন, ‘আরে এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে? ওর তো স্বপ্নই বিদেশে পড়ালেখা করার।’
দিশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো নিজের মায়ের দিকে। পরপরই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল, ‘আমি এখানেই পড়ব। বিদেশে যাবো না।’
বলেই নিজ রুমে চলে গেল দিইইসা।
_______________
চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)