#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ০৮
#লেখাঃনুসরাত মাহিন
দু’হাত দিয়ে শক্ত করে জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরে আছি। প্রেমে পড়লে মানুষ নাকি বেহায়া হয়ে যায়। জুনায়েদকে ভালোবেসে আমিও বেহায়া হয়ে গেছি লজ্জা সরম সব ভুলে জুনায়েদকে জড়িয়ে ধরেছি। আমার শরীরের সাথে জুনায়েদের সমস্ত শরীর লেপ্টে আছে। জুনায়েদ বার বার আমাকে ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে।
তোমার দুয়ারে এসেছি আমি আজ ভালোবাসার ভিক্ষা নিতে। তুমি ফিরিয়ে দিয় না আমায় খালি হাতে।
আমার ধ্যান,জ্ঞ্যান, কল্পনা সবকিছুতেই তুমি শুধু তুমি তুমিতে তুমিময়।
জুনায়েদ আমি আপনাকে ভালোবাসি। এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম হয়তো আপনি বুঝবেন নিজে থেকে ভালোবাসি কথাটা বলবেন।
— নাবিলা দয়া করে আমাকে ছাড়ুন। আমি ও আপনাকে ভালোবাসি তবে প্রেমিক হিসাবে না বন্ধু হিসাবে। আমি একজন কে ভালোবাসি।
— জুনায়েদ আমি আপনার পা ধরি প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আমি আপনাকে ছাড়া কোন কিছুই ভাবতে পারি না আমার ধ্যান, জ্ঞ্যান, কল্পনা সব কিছুতে আপনি। আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না জুনায়েদ।
— আবেক দিয়ে জীবন চলে না নাবিলা। মুখ দিয়ে হাজার বার চিৎকার করে বলা যায় বাঁচব না কিন্তু বাস্তবে মরে যাওয়াটা অনেক কঠিন। আমি আপনাকে ভালোনাসি না। আর যাই হোক জোড় করে কখনো ভালোবাসা হয় না। আমার মনের মধ্যে শুধু একজনি বাস করে অন্য কাউকে আমি মানের ভুলেও চিন্তাও করিনা। আমি আপনার কাছে অনেক কৃতগ্য আপনি আমার যে উপকার করেছেন তার ঋন আমি কোন দিন শোধ করতে পারব না। আমার ভালো রেজাল্ট করা, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া পুরোটাই আপনার অবদান।
আপনাকে ফিরিয়ে দিতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমি নিরুপায়। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি সারাজীবন আপনার বন্ধু হয়ে পাশে থাকতে চাই।
আমি আল্লাহ কাছে হাত পেতে সব সময় দোয়া করবো অনেকে অনেক ভালো রাখে। আমার থেকে অনেক ভালো কোন ব্যক্তিকে আপনার জীবন সঙ্গী হিসাবে মিলিয়ে দেয়। ভালো থাকবেন আমি আসি তাহলে।
— জুনায়েদ আমার এই চেহারা আপনাকে আর কখনো দেখাব না। আজকের পর আর কোনদিন আপনার সামনে আমি আর আসবো না। আমিও দোয়া করি আপনিও অনেক অনেক ভালো থেকেন। যাকে মন থেকে ভালোবাসা যায় তাকে কখনো অভিশাপ দেওয়া যায় না।
কান্না তুমি আসলেই বড়ো অদ্ভুৎ,
তুমি সবার জন্য আসো না
কিন্তু যার জন্য আসো সে তুমার মর্মই বুঝে না।
***
গত সাত দিন ধরে তার কোন খোঁজ পাচ্ছি না।প্রতিদিন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটির গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকি আমার ভালোবাসার মানুষেটার অপেক্ষায় কিন্তু সে কোথায়। আমার বোরখা পরা প্রেয়সী যার চোখ দেখে আমি প্রেমের অতলে ডুবে গেছি। আমি জানি না সে দেখতে কেমন তার চেহারা কখনো আমি দেখিনি শুধু নামটাই জানি মারজিয়া জান্নাত । প্রতিদিন ইউনিভার্সিটি থেকে রিকশায় করে বাসায় দিয়ে আসতাম।
মারজিয়া যে বাসাতে থাকতো সে বাসাতে ও খোঁজ নিয়েছি ওই বাসা চেইঞ্জ করে চলে গেছে। এতদিন আমি তোমার যোগ্য ছিলাম না তাই ভয়ে ভালোবাসার কথা বলতে পারিনি। মারজিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কোথায় প্লিজ ফিরে এসো। মারজিয়া প্লিজ কাম ব্যাক। আমি নিজেকে তোমার যোগ্য করে গড়ে তুলেছি আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ তে চান্স পেয়েছি।
এদিকে নাবিলার ও কোন খোঁজ পাচ্ছি না ফোন বন্ধ সাত দিন ধরে কোচিংএ ক্লাস নিতে যায় না।
আল্লাহ এখন আমি কী করবো..?
নাবিলা আমি তোকে বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে ভেবেছিলাম কিন্তু এখন দেখি তুই একটা বোকা মেয়ে।
একটা ছেলের জন্য নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলি। ব্লেট দিয়ে হাত কাটতে একবারো তোর বুক কাঁপলো না। কীভাবে পারলি তানভীর যদি জানে কত কষ্ট পাবে। আমি না টের পেলে হাসপাতালে না নিয়ে আসলে ও দিনই শেষ হয়ে যেতি।
— আমি স্যরি আন্টি আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার মাথা ঠিক ছিল না কী থেকে কী করেছি আমি নিজেও জানি না। জুনায়েদ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে আমি মানতে পারছিলাম না।
— সব সময় একটা মনে রাখবি তোর ভালোবাসা যদি সত্যি হয় আজ হোক কাল হোক তোর ভালোবাসা তোর কাছে ফিরে আসবেই।
— দিপা আন্টি প্লিজ তুমি মামাকে কিছু বইলো না।
—এরোকম ভয়ংকর ডিসিশন নিলি ইহকাল পরকাল দুই’টাই হারাতে যাচ্ছিলি। মানুষ আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে শয়তানের ধোঁকায় পরে। আত্নহত্যার পথ বেঁছে নেয়।
আত্নহত্যা ইসলামে নিষিদ্ধ মহান আল্লাহ তালা বলেন..
তোমারা নিজেদের কে হত্যা করো না নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমারদের
প্রতি মেহেরবান। কেউ সীমালঙ্ঘন বা অন্যায়ভাবে এরুপ করলে তাঁকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
অথচ বহু নিবোর্ধ লোক শেষ পর্যন্ত আত্নহত্যা করে বসে।
মুসলমানের চরিত্র হচ্ছে বিপদ আসলে ধৈর্যধারণ এবং সেই ধৈর্যের জন্য সাওয়াব পাওয়ার আশা পোষণ করবে। বিভিন্ন রোগ-শোক, আপদ- বিপদ ও দুঃখ – মসিবতের মত ছোট পরিসর থেকে মুক্তির জন্য আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়া মারাত্নক ভুল।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাসলীমা বলেন.. যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করে সে জাহান্নামে ঝাঁপ দিবে এবং অনাদি অন্তকাল সেখানে থাকবে।
কেউ বিষ পান করে আত্নহত্যা করলে হাতে বিষ নিয়ে জাহান্নামেও তা পান করতে থাকবে সেখানে চিরজীবনের জন্য বিষ ক্রিয়ায় শাস্তি পাবে।
যে যেভাবে আত্নহত্যা করবে জাহান্নামে অনাদি – অন্তকাল পর্যন্ত সেই ভাবে শাস্তি পাবে।
অন্য পাপি মুসলমান নিজ নিজ পাপের শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে আসতে পারবে। কিন্তু আত্নহত্যাকারী মুসলমান কোনদিন জন্নাত পাবে না। পবিত্র কুরআনেও একটি আয়াত আছে ( সুরা আন-নিসা -৯৩)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক জনন সাহাবি খায়বার যুদ্ধে অংশগ্রহন করে মরনপন যুদ্ধ করে আহত হয়ে পরে। কষ্ট সয্য করতে না পেরে নিজ তলোয়ারের গোড়া মাটিতে ও বাকী অংশ বুকের মধ্যে চেপে ধরে আত্নহত্যা করে।
নবী করিম (সাঃ) ঐ সাহাবির সালাতে জানাযা পড়েননি।
আত্নহত্যা মহা পাপ অথচ আমারা ইমানহারা হয়ে এখন এই কাজটি বেশি করি। সামান্য কোন ঘটনা ঘটলে আমারা আত্নহত্যার পথ বেছে নেই।
আমাকে দেখ আমি কী মরে গেছি আট বছর ধরে একজনকে পাগোলের মতো ভালোবাসি কিন্তু সাহস করে বলতে পাচ্ছি না। আমি মরে গেছি যাইনি অপেক্ষায় আছি। আমার ভালোবাসা সে একদিন বুঝবে ই
নাবিলা তোর মামা যেমন নিসা নামের মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে আমিও তেমনি তোর মামাকে আমার জীবনের থেকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
চলবে….