#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ০৯
#লেখাঃনুসরাত মাহিন
গত দুইবছর ধরে কত খোঁজা খুজি করলাম নাবিলাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। নাবিলা তুমি আমাকে মাফ করে দাও আমি কেন আগে বুঝতে পারলাম না তুমি মারজিয়া। আমি প্রতিদিন তোমার ইউনিভার্সিটির গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকি অপেক্ষা করি। যে চোখের প্রেমে পড়ে আমি অন্ধ ছিলাম অথচ সেই চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারিনি। আমি জানি তুমি আমার আশে পাশেই আছো। আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয়ে থাকে তোমাকে আমার কাছ থেকে আল্লাহ কেড়ে নেবে না। নাবিলা তোমাকে ফিরে আসতেই হবে।
প্রতি নিয়ত শিখছি..
বেঁচে থাকার কায়দা..
কখনো জানলাতে চোখ রেখে..
কখনো বা মেঘটা কে দেখে..
তোমার রূপকে আড়াল করার ক্ষমতা আমার নেই…
কিছুক্ষণের জন্যও তুমি শুধু আমার…
— দিপা আন্টি কোন সমস্যা হইছে তুমি রাতে না ঘুমিয়ে পাইচারি করছো কেন.??
— বাসা থেকে আমার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। মেঝআপুর দেবরের সাথে আমার বিয়ে কথা চলছে।এখন আমি কী করবো নাবিলা…?
— তোমাকে কিছু করতে হবে না যা করার আমিই করবো। মামা কে দুইদিনের মধ্যে ঢাকায় আসতে বলতেছি। মামা বেকার ছিল তাই এতদিন আমি চুপ করে ছিলাম কিছু বলিনি। এখন তো চাকরি পাইছে মামা বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আশা করি তোমার ফ্যামিলি থেকেও কোন আপত্তি করবে না।
— নাবিলা আমার না খুব ভয় করছে।
— কীসের ভয়..??
— যদি তানভীর আমাকে ফিরিয়ে দেয়।
আমার মামা অমানুষ না মামা যখন জানবে তুমি মামাকে পছন্দ কর ভালোবাস আমার বিশ্বাস মামা তোমাকে বুকে টেনে নেবে।
দিপা আন্টি তোমার মোবাইল বাজে।
— এত রাতে কে আবার কল দিছে…?।
বাড় ভাইয়া রাত তিনটার সময় কল দিল কেন কোন সমস্যা হয়নিতো।
— আন্টি তুমি ফোন দিয়ে দেখ।
— হ্যালো আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
— দিপা আমার বিন্দু, আমার বিন্দু।
— বিন্দুর কী হইছে।
— বিন্দুর খুব অবস্থা আমার বিন্দু মনে হয় বাঁচবে না।
— কী বল বিন্দুর কী হোইছে তোমরা কোই আছ..? এখন…??
— ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজে নিয়ে আসছি। দিপা আমি কী করব এখন তোর ভাবি পাগলের মতো করছে।
— ভাইয়া কান্নাকাটি না করে আল্লাহকে ডাক আর ভাবির দিকে খেয়াল রাখ। আমি বাড়িওয়ালাদের গাড়িটা ম্যানেজ করে এখনি রোয়ানা দিচ্ছি।
— রিস্ক নিয়ে তোর এতরাতে আসা লাগবে না তুই সকালে আয়। তোর ভাবিতো আমাকে সহ্যই করতে পারছে।
— আমারে নিয়া চিন্তা করা লাগবে না। ভাবি তোমাকে কী সহ্য করবে ভাইয়া ভাবির সাথে তুমি যে অন্যায় করছো তা ক্ষমার যোগ্য না। ভাবির উপরে আম্মা যে অত্যাচার করেছে তুমি কোনদিন প্রতিবাদ করনি। আম্মার অন্যায় কাজ গুলোকে তুমি সাপোর্ট দিয়েছো ভাইয়া।
আমি রাখছি,, আল্লাহ হাফেজ।
নাবিলা বিন্দু খুব অসুস্থ আমি এখনি বাড়িতে যাবার জন্য রওনা দেব।
— আন্টি আমি ও যাব তোমার সাথে। আমাকে নেবে তোমার সাথে..??
— তাড়াতড়ি রেডি হ।
দিপা আন্টিদের বাসায় বসে আছি। আন্টির ভাইয়ের মেয়েটা ভোর পাঁচটার সময় মারা গিয়েছে। আমার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। যেই মানুষটার মুখোমুখি হবনা দেখে পালিয়ে বেরাচ্ছি সেই মানুষটা আমার সামনে দাঁডিয়ে আছে।
একটা হিসাব মিলাতে পারছি না জুনায়েদ এখানে কী করছে,, জুনায়েদ কী দিপা আন্টির রিলেটিভ হয়..?? কিন্তু জুনায়েদকে আন্টি তো বেশ কয়েক বার দেখেছে। আন্টির রিলেটিভ হলে তো আমাকে বল তো।
তানভীর মামা কিছুক্ষনের মধ্যে ময়মনসিংহ পৌছেয়ে যাবে। জুনায়েদ যেভাবে আমার চারিপাশে ঘোরাঘুরি করছে মামা দেখলে কী ভাববে আমি এই ভয়েই আছি।
দিপা আন্টির ভাবির কান্নায় আকাশ ভারী হয়ে গেছে। ভাবির কান্না দেখে এখানকার প্রতিটা মানুষ কাঁদছে। দিপা আন্টি ভাবিকে সামলানোর চেষ্ঠা করছে ভাবি কিছুতেই থামছে না।
— ভাবি শান্ত হও।
— দিপা আমার বিন্দুকে ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । আমার বিন্দুকে আমি নিতে দেব না।
— ভাবি বিন্দুকে তুমি কীভাবে কাছে রাখবে বিন্দু তো আর বেঁচে নেই মারা গিয়েছে।
— আমার বিন্দু মারা যাইনি ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। তোমার মা ভাই মিলে আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে। তোমার মা আমার মেয়েটাকে চিকিৎসা করাতে দেইনি। কতবার অনুরোধ করেছি ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য কেউ আমার কোন কথস শোনেনি।
বিন্দু আমার মা আমি যাবো তোর সাথে।
আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছিস মা…?
আমি তোকে ছাড়া একা কীভাবে থাকবো…?
আমারে তোর সাথে করে নিয়ে যা মা ।
দিপা আমার মেয়েটা অন্ধকার খুব ভয় পায়। ওই অন্ধকার ঘরে ও একা কিভাবে থাকবে।
দিপা মেয়েটাই যখন নেই আমি এখানে থেকে কী করবো। শুধু আমার বিন্দুর মুখের দিকে চেয়ে শত কষ্টের মধ্যে আমি এখানে পরে ছিলাম। সব অন্যায় অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করেছি। আমি তোমার ভাইয়ের সাথে আর সংসার করবো না। তোমার ভাইকে আমি তালাক দেব এইরকম ভদ্র স্বামীর আমার আর প্রয়োজন নেই। আমি কাজ করে খাব তবুও তোমার ভাইয়ের সাথে আমি আর থাকতে পারবো না।
— ভাবি প্লিজ তুমি শান্ত হও। তুমি যেমন বিন্দুর মা ভাইয়া ও বিন্দুর বাবা। তুমি তো চিৎকার করে কাঁদতে পারতেছো ভাইয়া তো তা ও পারছে না। দেখ ভাবি সন্তাহ হারানো কষ্টে ভাইয়া শরীরটা কেমন নীল হয়ে গেছে। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সব থেকে ভারি বস্তু। আমার ভাইটা ছোটবেলা থেকেই খুব শান্ত ছিল । কষ্টে মরে গেলেও কোনদিন মুখ ফুটে বলেনি।
ভাবি তুমি ভাইয়ার উপরে রাগ হোইয়া না।
— দিপা আমি আর এখানে থাকবো না। আমি আমার বাবার সাথে ঢাকা চলে যাব।
তিন দিন হয়ে গেছে দিপা আন্টির ভাইয়ের মেয়েটা মারা গেছে আজ মিলাদ শেষ করে ঢাকা চলে যাব।
জুনায়েদ দিপা আন্টির ভাবির বাবার সাথে এখানে এসেছে। শুনেছি দিপা আন্টির ভাবির বাবা-মাকে জুনায়েদ দেখাশুনো করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি রিকশা চালিয়ে ওনাদের সংসার চালায়।
তিন মাস পর….
— মামা একটা সুখবর আছে দিপা আন্টির বিয়ে ঠিক হয়েছে ছেলে সরকারি কলেজের শিক্ষক।
— আলহামদুলিল্লাহ্
— তুমি মনে হয় অনেক খুশি হয়েছ।
— এত বড় একটা সুখবর খুশি হবো না।
— মামা তুমি কী সত্যি খুশি হয়েছ। আচ্ছা মামা তুমি নাকি মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারো। মানুষের চেহারা দেখলে বলে দিতে পার সে সুখে আছে নাকি দুঃখে আছে।
— হ্যা বলতে পারিতো।
— না মামা তুমি কিছুই বলতে পারনা তাহলে তো দিপা আন্টির চোখের ভাষা বুঝতে পারতে। দিপা আন্টি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তুমি কী বুঝতে পেরেছ। প্রতি নিয়ত তোমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে কোই তার চেহারা দেখে তুমি তো কিছুই বলে দিতে পারনি।
— আমি জানি দিপা আমাকে ভালোবাসে। আমি অপেক্ষায় ছিলাম সব ভয়, বাধাঁ,জড়তা ভেঙে ও আমাকে নিজে থেকে বলুক। গাধীটা নিজে তো মুখ ফুটে বলতে পারল না আমি যে ওকে ভালোবাসি তাও বুঝল না। তোর আন্টিকে বলবি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে কারার চিন্তা করতে আমি ওরে খুন করে ফেলবো। আমি আজকের নাইটের ট্রেনে ঢাকা আসতেছি। নাবিলা আমি যে আসতেছি দিপাকে বলবি না সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়।
— ভালো হয় থ্যাংকিউ মামা। মামা আই লাভ ইউ।
— ইউ মোস্ট ওয়েলকাম,, আই লাভ ইউ ঠু।
***
সকাল বেলা কলিং বেলের শব্দ শুনে ঘুম ঘুম চোখে চ দরজা খুলে দেখি তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। ভেবেছি ভুল দেখেছি যখনি দরজা আটকাতে যাব আমার হাত ধরে এক টান দিয়ে বুকের ভিতরে জড়িয়ে ধরেছে।
— তানভীর কী করছিস কেউ দেখে ফেলবে আমাদের দু’জনকে খারাপ ভাববে
— দেখুক যে যা ইচ্ছে ভাবুক আমার হবু বোউকে আমি জড়িয়ে ধরেছি তাতে কারকি। দিপা বিয়ে করবি আমাকে…???
— আমার একজন ভেঙে যাওয়া মানুষ দরকার ।
যাকে ভীষণ ভালোবেসে নিমর্মভাবে ছেড়ে দিয়েছিল কেউ। যাকে ভালোবেসে এ জীবন দিয়ে দিতে পারবো। এক সাথে কাটিয়ে দেব সারাজীবন।
— যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করছে ওই বেটারে খবর দে। বিকেল পাঁচটা কোন একটা রেস্টুরেন্টএ দেখা করার কথা বল। তোর কানা মাস্টারকে জনমের বিয়ে করার সাধ ভুলিয়ে দেব।
হারামজাদা মাস্টার গুলা পাইছে কী। এক মাস্টার আমার আমার প্রথম প্রেমের মানুষকে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে আর এক মাস্টার এখন আবার আসছে আমার শেষ ভালোবাসার মানুষটাকে কেড়ে নিতে।
বিকেল পাঁচটায় বাবু খাইছো রেস্টুরেন্ট এ বসে আছি আমি, মামা, আর দিপা আন্টি। অপেক্ষা করছি দিপা আন্টির সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে গাউছুল আজম সাহেবের জন্য।
বাবু খাইছো রেস্টুরেন্টর দরজা দিয়ে একজন ভদ্র লোক ভিতরে ঢুকতেছে। দিপা আন্টি আমাকে ইশারা দিয়া বুঝাল ওইটাই ওনার হবু বর।
লোকটাকে সামনা সামনি দেখেই আমার মুখ থেকে আচমকা বেরিয়ে গেল…
মামা শাকিল মাস্টার
চলবে…