বিবাহিত বর পর্ব ২

#বিবাহিত_বর
#২য়_পর্ব
#অনন্য_শফিক



জুয়েল নিজেকে স্থির করে বললো,’অস্হিরতার জন্য সব সময় মেয়েরা বেশি ঠকে।তারা কোন কিছু ঝটপট করে ফেলতে চায়।শুনেও ফেলতে চায় ঝটপট।’
আমি তখন রাগত স্বরে বললাম,
‘আমি আপনার দার্শনিক মার্কা কথাবার্তা শুনতে চাচ্ছি না।আমি চাচ্ছি আপনার স্ত্রীকে কেন তালাক দিয়েছেন সেই কথা শুনতে।’
জুয়েল বললো,’তুমি তো বেশ প্যাঁচালো মানুষ।আমি বারবার বলছি সবকিছু সময় করে বলবো কিন্তু তোমার এক্ষুনি শুনতে হবে।আমি এখন কিছুই বলতে পারবো না।আমি চাই না একটা সুন্দর এবং পবিত্র রাতকে কুৎসিত করতে!’
প্রতারণা করে আমায় বিয়ে করেছে আর এ বিয়ের বাসর রাতকে সে পবিত্র এবং সুন্দর বলছে ,ওর মুখ থেকে এই ভালো মানুষী কথাটা শুনে আমার মেজাজ একেবারে বিগড়ে গেলো।
আমি তখন চেঁচিয়ে উঠে ওকে বললাম,
‘মা ছেলে মিলে আমার সাথে শয়তানী করে আমায় বিয়ে করেছেন আবার বড়ো বড়ো কথা বলছেন এখন!প্রতারক কোথাকার!’
আমাদের ঘর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পেয়ে আমার শাশুড়ি দ্রুত আমাদের ঘরের দরজার কাছে এসে বললেন,’অত চিৎকার চেঁচামেচি কিসের! মেয়ে মানুষের গলা হইবো নরম। নিজের ঘরের বাইরে তার গলার আওয়াজ যাইবো না। তুমি নতুন বউ হইয়া এমনে গলা মেলাইছো কেনো? মানুষ তো তোমার গলা শুইনা ভাববো না জানি আমরা তোমার উপর কী নির্যাতন চালাইতেছি!’
আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার শাশুড়ির কথার উত্তর দিয়ে বসলাম। বললাম,’প্রতারণা করে আপনার ছেলের জন্য আমাকে বিয়ে করিয়েছেন।এটা কী নির্যাতন না?’
আমার শাশুড়ি তখন আমায় এমন ধমক দিলেন!ধমক দিয়ে বললেন,’সাহস কত বড়ো! শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে।চুপ হইয়া যাও এক্কেবারে কইতাছি!’
রাগে আমার শরীর তখন কাঁপছে। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে কেমন!
আমি জোর গলায় বললাম,’আপনার মুখে এমন ভালো ভালো কথা মানায় না।নিজে অনৈতিক কাজ করে এখন আসছেন পুত্রবধূকে নৈতিক শিক্ষা দিতে!’
আমার শাশুড়ি তখন জুয়েলকে ডাকলেন।ডেকে বললেন,’মেয়ে মানুষ হইলো বাঁকা ত্যাড়া জিনিস। এদেরকে হাতুড়ি পিঠাইয়া সোজা রাখতে হয়। শুরু থাইকা হাতুড়ি না পিটাইলে মাঝে এমন বাঁকন বাঁকবো তখন আর সোজা করন যাইবো না!’
শাশুড়ির মুখ থেকে এমন অসভ্য একটা কথা শুনে আমার বলতে ইচ্ছে করছিলো, আপনাকেও কী তবে আপনার স্বামী হাতুড়ি পিটিয়ে সব সময় সোজা করে রাখতেন?
কিন্তু জুয়েলের জন্য বলতে পারিনি।
সে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বললো,’শুনো।যা হয়ে গেছে তা তো আর বললেই ফিরে আসবে না। চিৎকার চেঁচামেচি করলেও বিয়ে ভেঙে যাবে না। সমাজের মানুষেরা জেনে গেছে তুমি এখন বিবাহিতা। তুমি যদি এখন আমায় ছেড়ে চলেও যাও তবুও তো কোন লাভ হবে না। বরং মানুষের চোখে তুমি নিন্দিত হবে। মানুষ তোমায় নিয়ে কু কথা ছড়াবে ওরা চারদিকে।তোমায় নিয়ে সাত রকমের গল্প বানাবে তারা।’
আমি কেঁদে ফেললাম তখন। কাঁদতে কাঁদতে কম্পমান গলায় বললাম,’আমার অতবড়ো ক্ষতিটা করে কী লাভ হলো আপনার?কেন এমন করলেন আমার সাথে?’
জুয়েল আমার মাথায় হাত দিয়ে স্পর্শ করলো। হয়তো মায়া দেখাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি ওর কাছ থেকে সড়ে গেলাম অনেকটা।সড়ে গিয়ে বললাম,’এখন মায়া দেখাতে হবে না।আমি সোইসাইড করবো।সোইসাইড করে আপনাকে আর আপনার মাকে ফাঁসাবো!’
জুয়েলের মুখটা ভয়ে কেমন শুকিয়ে গেলো সোইসাইডের কথা শুনে।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,’না না এমন কথা বলো না। মৃত্যু তো সবকিছুর সমাধান নয়!’
‘তাহলে আপনি বলুন আপনার আগের স্ত্রীকে কেন তালাক দিয়েছিলেন!’
জুয়েল এবার বিপদেই পড়ে গেল।না বলে উপায় নেই দেখে সে এবার মুখ খুললো।সে বললো,’আমার আগের স্ত্রীর নাম জবা।জবা ছিল আমার ছোট ফুপির মেয়ে।তার সাথে আমার সংসার জীবন ছিল সাড়ে চার বছরের। এই সাড়ে চার বছর সে আমার—–

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here