” তোকে কতবার বলেছি আমার রুমে নক না করে ঢুকবি না? বুড়ি হয়ে যাচ্ছিস। অথচ এখনও ম্যানারস শিখলি না চন্দ্রিমা! কবে শিখবি তুই?”
ঈষৎ রাগত স্বরে অনেকটা ধম’কে কথাগুলো বললেন প্রোজ্জ্বল ভাই। আমার অ’প’রা’ধ ভদ্র মানুষের মতো রুমে ঢুকার পূর্বে নক না করে অভদ্র মানুষের মতো হুড়োহুড়ি করে রুমে ঢুকে পড়া। অবশ্য এতে আমার দোষ না দিয়ে অভ্র ভাইয়ের দোষ দেওয়া উত্তম। উনার কারণেই মামি আমায় দ্রুত গিয়ে প্রোজ্জ্বল ভাইকে ডেকে আনতে বললেন।
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের রুমে প্রবেশ করতেই দেখলাম উনি শার্ট বিহীন শুধু প্যান্ট পরে পুরো রুমে পায়চারি করছেন। আমায় অকস্মাৎ রুমে প্রবেশ করতে দেখে উনি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। দ্রুত চেয়ারের উপর থেকে টিশার্টটা নিয়ে রাগত স্বরে কথাগুলো বললেন আমায়। আমি উনার ধমকের তোয়াক্কা না করে এক নিঃশ্বাসে বললাম,
” আপনাকে মামি ডেকে পাঠিয়েছেন। অভ্র ভাই কয়েকটা ছেলের সাথে অনেক মা’রা’মা’রি করছেন।”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই প্রোজ্জ্বল ভাই টিশার্ট পরতে পরতে ঝড়ের গতিতে আমায় পাশ কাটিয়ে রুম হতে বেরিয়ে গেলেন। তৎক্ষনাৎ উনার পিছু পিছু আমিও ছুট দিলাম। প্রোজ্জ্বল ভাই বাড়ি হতে বেরিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় গেলেন। যেখানে অভ্র ভাই ছেলেগুলোর সাথে মা’রা’মা’রি করছিলো সেখানে গিয়ে সেকেন্ড কয়েক দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। অতঃপর আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে অভ্র ভাইয়ের সাথে তিনিও মা’রা’মা’রি শুরু করলেন। উনার এ উদ্ভট কাজে আমি ও মামিসহ পাড়া প্রতিবেশী সকলে হায় হায় করে উঠলাম।
প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই ছেলে দুটোকে বেদম আকারে পে’টাচ্ছেন। তাদের এ মা’রপি’টের দৃশ্য দেখতে স্বভাবতই দর্শকের ভূমিকা পালন করছে আশেপাশের মানুষজন।
শুক্রবারে ছুটির দিন হওয়ায় আজ প্রোজ্জ্বল ভাই বাড়িতেই ছিলেন। জুম্মার নামাজ শেষে খাওয়াদাওয়া করে নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছিলেন তিনি। আমি মামির সাথে দুপুরের খাবারের এঁটো থালাগুলো গোছগাছ করছিলাম। কাজের ফাঁকেই হঠাৎ বাইরে শোরগোলের আওয়াজ শুনতে পেলাম আমরা দুজনে। নিমিষের জন্য আমি ও মামি একে অপরের দিকে চোখাচোখি করে থালাগুলো রেখেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম। প্রধান ফটক পার হয়ে কয়েক কদমের রাস্তার দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখলাম অভ্র ভাই দুটো ছেলেকে একা হাতে মারছেন। উনাকে এভাবে মা’রা’মা’রি করতে দেখে মামি তৎক্ষনাৎ আমায় বললেন, প্রোজ্জ্বল ভাইকে ডেকে আনতে। যেনো উনি এই মা’রা’মা’রি থামায়। কিন্তু প্রোজ্জ্বল ভাই এসে মামির আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে উল্টো অভ্র ভাইকে সহায়তা করতে লাগলেন। দুজনের এ মা’রপি’ট দেখে মামির রীতিমতো মাথায় হাত। উনার হায়-হায়কর অবস্থার সাথে মনে হলো উনার ব্লাড প্রেশারও বেড়ে গিয়েছে। মামির এ পরিস্থিতি দেখে আমি মামির দু বাহু চেপে ব্যস্ত কণ্ঠে বললাম,
” মামি, আপনি ঘরে চলুন। আপনার ব্লাড প্রেশার আবারো বেড়ে যাবে। ”
মামি আমার কথা শুনলেন না। আমার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে এক হাত কোমড়ে ও অপর হাত মাথায় রেখে অস্থির গলায় বললেন,
” আল্লাহ আমাকে উঠায় নাও। এইগুলোর যন্ত্রণায় আর পারি না আমি। ঐটাকে ডেকে আনলাম যেনো মা’রপি’ট থামায়। কিন্তু গাধার দলের সদস্যটা এসে মা’রপি’ট তো থামালোই না উল্টো পুরো শক্তি দিয়ে মারপিট করতে লাগলো। কে বলবে, এই গু’ন্ডা দুইটা ডাক্তার! আল্লাহ, আমাকে ধৈর্য্য শক্তি দাও। ধৈর্য্য দাও আল্লাহ। ”
এই বলে মামি কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিরতি নিলেন। পুনরায় একই উদ্যমে বললেন,
” খোদেজা ভাবী আমাকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলো তার দামড়াটাকে সামলাতে। কিন্তু আমি কিভাবে সামলাবো ঐটাকে! আমার বাড়িতেও যে একটা দামড়া আছে! এই দুই বাড়ির দামড়া মিলে আমার জীবনটাকে জলে ডুবিয়ে দিলো। আয়, আজ দুইটা বাড়িতে আয়, তারপর দেখ আমি কি করি। ”
এই বলে মামি হাঁক লাগালেন প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাইয়ের উদ্দেশ্যে। কিন্তু দুজনের একজনও মামির ডাক কানে তুললেন না। এদিকে এমন তীব্র সঙ্কটাবস্থায়ও মামির কথা শুনে আমি পিছনে মিটিমিটি হেসে চলছি। কোনো প্রতিবেশি মামি যেনো আমার এ অসময়ের হাসি না দেখে ফেলে এজন্য রীতিমতো ওড়নায় মুখ লুকিয়ে হাসছি আমি। ওদিকে প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাইয়ের মা’রামা’রি থামাতে আমাদের এলাকার কেউই এগিয়ে আসেনি। কারণ এলাকার প্রত্যেকেই এই দুজনের দাপটতা সম্পর্কে অবগত। আবার ছেলেগুলোও বিনা প্রতিবাদে উনাদের দুজনের কাছ থেকে মা’র খেয়ে চলছে। অবশ্য প্রতিবাদ স্বরূপ পাল্টা আক্রমণ করলে শুকনো ক্যাঙারু গোছের ছেলে দুটো এই গাট্টাগোট্টা এই দুজনের কাছে টিকতে পারতো বলে মনে হয় না। এজন্য নিজেদের অবস্থার আরো অবনতি না ঘটাতেই তারা নীরবে মা’র খেয়ে চলছে।
হয়তো ছেলেগুলোর শারীরিক অবস্থার উপর রহম করেই কিছুক্ষণের মাঝে প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাইয়ের মা’রামা’রি থেমে গেলো। তাদের হাত হতে কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো ছেলে দুটো। তারা চলে যেতেই প্রোজ্জ্বল ভাই ও অভ্র ভাই একত্রে হেঁটে মামির সামনে এলেন৷ দুজন ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। পরনের পোশাক ঘামে ভিজে প্রায় জবজবে অবস্থা। কপাল ও গাল বেয়ে টুপটুপ করে ঘাম ঝড়ছে। অল্পবিস্তর হাঁপাচ্ছে দুজনেই৷ কিন্তু দুজনের চেহারায় তখন বীরত্বের একটা ভাব৷ যেনো এইমাত্রই বড়সড় একটা যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে তারা। তাদের মুখশ্রীতে রয়েছে আত্মতুষ্টির ছাপ। সেই আত্মতুষ্টি বজায় রেখেই প্রোজ্জ্বল ভাই কপালের ঘাম মুছে যে-ই না মামিকে কিছু বলতে যাবেন, অমনিই মামি উনার ঘাড়ের উপর দুটো উদম কেলানি বসিয়ে দিলেন৷ তীব্র অভিযোগের সুরে কর্কশ গলায় বললেন,
” তোকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম অভ্রকে থামাতে। কিন্তু তুই কোন আক্কেলে ওখানে গিয়ে মা’রামা’রি করতে লাগলি?”
প্রোজ্জ্বল ভাই তৎক্ষনাৎ চোখমুখ কুঁচকে খানিক বিরক্তির সহিত মামিকে বললেন,
” ইশ,আম্মা! সবার সামনে এভাবে মারার দরকার কি? আমার মান সম্মান বলেও একটা জিনিস আছে তো….”
” মান সম্মান? এখন মান সম্মানের কথা মনে পড়ছে? বুড়ো দামড়া হয়ে এলাকার সবার সামনে যখন মারামারি করছিলি তখন মান সম্মান কোথায় ছিলো? বেল তলায় ঘুরতে গিয়েছিলো না কি?”
মামির হেন কথা শুনে আমি ও অভ্র ভাই মিটিমিটি হেসে উঠলাম৷ মন চাইছে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে উঠি। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সে ইচ্ছে আপাতত বিসর্জন দিতে হলো। মামি এবার প্রোজ্জ্বল ভাইকে ছেড়ে অভ্র ভাইয়ের সম্মুখে দাঁড়ালেন৷ উনাকে নিজের দিকে অগ্রসর হতে দেখা মাত্রই অভ্র ভাই হুট করে ঠোঁট চেপে হাসি বন্ধ করলেন। মামি পুর্বের ন্যায় বললেন,
” এতো হাসি আসে কোথা থেকে? তোকে তো ধরে আচ্ছামতো শায়েস্তা করার দরকার। এবার আসুক খোদেজা ভাবী, তোকে যদি আচ্ছামত মার না খাইয়েছি তবে আমার নামও পারভীন না।
আচ্ছা একটা কথা বল। তুই মা’রপি’ট শুরু করেছিলি কেনো? এই দিনে দুপুরে শুধু শুধু ছেলেগুলোকে মা’রছিলি?”
মামির প্রশ্ন শুনে প্রোজ্জ্বল ভাইও প্রশ্নাতুর চাহনিতে অভ্র ভাইয়ের পানে চেয়ে রইলেন। ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমারও সেম প্রশ্ন। তুই ছেলেগুলোকে মা’রছিলি কেনো?”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এহেন প্রশ্ন শুনে এবার আমি ও মামি দুজনেই অবাক হলাম। মনে করেছিলাম, প্রোজ্জ্বল ভাই হয়তো ছেলেগুলোকে চিনেন এবং অভ্র ভাইয়ের মারার কারণটাও জানেন। কিন্তু এ দেখছি শত্রু না চিনেই আঁধারে তীর মারার সামিল! প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের এ কান্ড দেখে মামি গালে এক হাত রেখে বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” মানে কি! তুই না জেনেই ওখানে গিয়ে মা’রামা’রি শুরু করে দিয়েছিলি! ”
” তা নয়তো কি? ঐ ক্রিটিকাল মোমেন্টে কি আদৌ মা’রামা’রির কারণ জানা সম্ভব ছিলো?”
” তাই বলে কারণ না জেনেই এভাবে পাগলের মতো মা’রামা’রি করবি?”
” অভ্র ছেলেগুলোকে মা’রছিলো। তাহলে নিশ্চয়ই কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছিলো। আর প্রাণের বন্ধু এভাবে লড়াই করছিলো আর আমি চুপচাপ ওখানে দাঁড়িয়ে এসব দেখতাম না কি!”
” দাঁড়িয়ে দেখার কথা বলে আনিনি তোকে। অভ্রকে থামানোর জন্যই তোকে ডেকেছিলাম। আর তুই কি না…..নাহ! তোর আচরণ দিন দিন আমার চিন্তার বাইরে হয়ে যাচ্ছে। ”
মামির কথার রেশ ধরে প্রোজ্জ্বল ভাইকে একটু খোঁচা দিতে সাথে সাথেই ফিসফিস করে বললাম আমি,
” আপনার ছেলেকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন মামি। তার মাথার তার দিনকে দিন লুজ হয়ে যাচ্ছে। ”
আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই প্রোজ্জ্বল ভাই আমার দিকে কটমট চোখে তাকালেন। অর্থাৎ আমার ফিসফিসিয়ে বলা কথাটি মামি না বুঝলেও উনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। আমি এসব ক্ষেত্রে প্রোজ্জল ভাইয়ের শ্রবণশক্তি দেখে ভীষণ অবাক হই। প্রায়ই এমন হয় যে, আমি উনার কানের কাছে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের তুলনায় খানিক উচ্চস্বরে কথা বললেও উনি শোনেন না। অথচ দূর হতে আমার ফিসফিসানি বা ঠোঁট নাড়ানোর ভঙ্গি দেখে উনি ঠিকই বুঝতে পারেন আমি কি বলছি। উনার এ কান্ড দেখে আমি অনেকটা নিশ্চিত উনি ইচ্ছে করেই প্রথম ক্ষেত্রে আমার কথা অগ্রাহ্য করে।
প্রোজ্জ্বল ভাই দাঁতে দাঁত পিষে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বললেন আমার উদ্দেশ্যে। কিন্তু উনার মতো অতি জ্ঞানী না হওয়ায় উনার ‘লিপ সিঙ্কিং’ দেখেও কথা বুঝতে পারলাম না ঠিক।
মামি এবার পুনরায় বললেন,
” তোদেরকে পরে দেখছি৷ তো অভ্র, বল। কি কারণে মারছিলি ওদের?”
অভ্র ভাই ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” আর বলেন না চাচি, আমি দোকান থেকে আসার সময় দেখলাম একটা মেয়েকে ঐ ছেলে দুটো ডিস্টার্ব করছে৷ মেয়েটার উদ্দেশ্য নানারকম খা’রাপ প্রস্তাব দিচ্ছে৷ এসব দেখে আমি ঐ ব’দমা’ইশ দুইটাকে ওয়ার্নিংও দিয়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি, ওরা সোজা কথার মানুষ না। এজন্য বসিয়ে দিয়েছি কয়েকটা। ”
অভ্র ভাইয়ের কথা শেষ হওয়া মাত্রই এতোক্ষণ দর্শকের ভূমিকা পালন করে আসা প্রতিবেশি তিনজন মামি এগিয়ে এলেন। তন্মধ্যে ফাতেমা মামি কৌতূহলের সহিত জিজ্ঞেস করলেন,
” পোলাগুলা এই এলাকার?”
অভ্র ভাই জবাব দিলেন,
” জি চাচি। ”
” আর ঐ মাইয়া?”
অভ্র ভাই তৎক্ষনাৎ জবাব দিলেন না৷ উনার চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝলাম, উনি ক্ষণিকের জন্য কিছু ভাবলেন। অতঃপর ছোট্ট করে জবাব দিলেন,
” চিনি না চাচি।”
ফাতেমা মামি তৃতীয় প্রশ্ন করার অবকাশ পেলেন না। উনার বাড়ির ভেতর হতে উনার শ্বশুর হাঁক ছাড়লেন। ফলে গল্প রেখেই চলে গেলেন তিনি। ধীরে ধীরে সবাই চলে যেতেই আমরাও নিজেদের বাড়িতে চলে এলাম।
—————-
অপরাহ্নের আবছা আলোয় ধীরেধীরে রাঙায়িত হচ্ছে পশ্চিমাকাশ। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারপাশ। হয়তো দিনশেষে তারা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আনন্দে উল্লাসধ্বনিতে মত্ত হয়েছে!
প্রকৃতির এ স্নিগ্ধ সাধারণ রূপ দেখতে দেখতে কফির মগে চুমুক বসলাম আমি। ওমনিই বাড়ি কাঁপিয়ে নিজের রুম থেকে আমার উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন প্রোজ্জ্বল ভাই,
” চন্দ্রিমা? ঐ চন্দ্রিমা? আমার জন্য এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগলে খবর আছে তোর।”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের হুকুম শোনামাত্রই আমার ফুরফুরে মেজাজটা চরম আকারে বিগড়ে গেলো। যেকোনো মনোরম ও সুন্দর মুহূর্তগুলো মুহূর্তেই বিগড়ে দিতে আনায় আনায় পারদর্শী প্রোজ্জ্বল ভাই৷ এজন্য মামির কাছেও কম বকা শোনেন না সে! তবুও কি শুধরানোর পাত্র উনি! মামির নিকট শুনেছিলাম, প্রোজ্জ্বল ভাই ছোট বেলায় মোটেও এমন ছিলেন না। আমায় খুব আদর করতেন তিনি। কিন্তু ধীরেধীরে যতই তিনি বড় হতে লাগলেন তার আর আমার মাঝের মিষ্টি সম্পর্ক রূপান্তরিত হতে লাগলো ‘দা কুমড়ো’র সম্পর্কে।
আকাশ সমান বিরক্তিকর অনুভূতির সহিত হাতে কফির মগটা নিয়েই উঠে এলাম ব্যালকনি থেকে। দোতলা থেকে নামতে নামতে মগের অবশিষ্ট কফিটুকুও খেয়ে ফেললাম। এরপর নিচে এসে রান্নাঘরে ঢুকে দ্রুত পাতিলে পানি বসিয়ে মগে কফি বানানোর সব শুকনো উপকরণগুলো ঢাললাম। তারপর পানি গরম হয়ে আসতেই মগে পানি ঢেলে কোনোরকমে চামচ দিয়ে নেড়ে দ্রুত তা নিয়ে উপরে চলে এলাম। প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের রুমের সামনে এসে দরজায় কড়াঘাত দিতেই উনি ভেতর থেকে বললেন,
” চলে আয়।”
উনার অনুমতি পেয়ে কফি নিয়ে রুমে ঢুকলাম আমি। চেয়ারে বসে থাকা প্রোজ্জ্বল ভাই সাথে সাথে আমার হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন,
” আজ যা করেছিস তার জন্য পানিশমেন্ট পেতে মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড হয়ে যা চন্দ্রিমা। ”
এই বলে উনি কফির মগে এক চুমুক দিলেন। উনার এরূপ কথা শুনে আচমকা আকাশ হতে পড়লাম যেনো আমি। বিস্ময়ের সহিত ভাবতে লাগলাম, আজ কি-ই বা এমন করলাম যার জন্য উনি আমায় শাস্তি দিতে চাইছেন! তবে আমার কি কাজের জন্য উনি আমাকে শাস্তি দিবেন এ নিয়ে ভাবার পরিবর্তে উনি কিরূপ শাস্তি দিবেন তা ভাবতেই পেট মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।
®সারা মেহেক
#বিরহ_শ্রাবণ
#পর্ব_১
#লেখিকা:সারা মেহেক
( /