#বিষাদময়_জীবন
#অধরা_ইসলাম
#পর্ব৩
সামনে থাকা ডাক্তারকে দেখে আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। এই তো সেই মানুষ রাহুল। এর জন্যই তো আমাকে বাবা এতো তাড়াতাড়ি করে বিয়ে দিয়ে দিলো। সে বহু পুরনো কথা যখন আমি বাপের বাড়িতে ছিলাম এই রাহুল ছিলো আমাদের এলাকারই। আমি বাজারে বা বাহিরে বেরোলে ওর সঙ্গে আমার দেখা হতো,টুকটাক কথাও হতো উনি বেশ ম’জা’র’ মানুষ ছিলেন যা উনার কথা বার্তায় বোঝা যেতো। এমনি করে প্রায় তিন চার মাসেকের মতন ওকে দেখি আমি। তখন শুধু চোখের দেখা দেখলে কথা বলতাম দু’জনে। ব্যস আর কিছু ছিলো না। এর পরেই কয়েকদিনের ভেতর ও আমার বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর শুরু করে। আমি বুঝতে পারি ও আমার পিছু পিছু এসেই আমার বাড়ির ঠিকানা অব্দি পেয়েছে। মাঝে মধ্যে ওকে দেখতে পেতাম ও আমাকে দেখে বিপরীতে মুচকি হাসি দিতো, এরকমই করতো প্রায় আর এটা আমার বাবার নজরে না পড়লেও আমার নতুন মায়ের নজরে ঠিকি পড়েছিলো সেজন্যই তো আমার নতুন মা বাবার কানে ইনিয়ে বিনিয়ে আমার নামে কতোগুলো মি’থ্যা কথা বলতে লাগলো। বাবাকে কতো করে বলেছিলাম বাবা বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি। বাবাও বোধহয় আমার কথা বিশ্বাস করেছিলো সেজন্য আর কিছু বলেনি। বেশ ভালোই যাচ্ছিলো আবার আগের মতন সব দিন। তার পর থেকে বেশ ভালোই চলছিলো চুপচাপ। কিন্তু তার দু মাসের ভেতরই এই রাহুলকে আবারো দেখতে পাই আমি! তখন আশেপাশে না একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ায় বোধহয় উনি বুঝতে পেরেছিলেন আমার পরিবারে উনাকে নিয়ে কোনো গ’ন্ড”গো’ল হয়েছে, কারন উনি আমার নতুন মায়ের আচরন, ব্যবহার সম্পর্কে একটু আধটু জানতো, যখন উনি সামনে এসে দাঁড়ালের আমি তখন কি করবো বুঝে ওঠতে না পেরে চুপ করে থাকি। সরে যেতে নিলে উনি বলে আমার থেকে পাঁচ মিনিট সময় নেবে তারপর আর আমার সামনে আসবেই না। আমিও ভাবি পাঁচ মিনিটই তো বলেছে বেশি সময় তো আর না আজকে দাঁড়ালে তো আন আসবেই না আমি দাঁড়াই ওনার কথা শোনার জন্য উনি সবে বলা শুরু করেছিলেন তখন বলেছিলেন, আর দু তিনটে বছর যদি উনার জন্য আমি অপেক্ষা করি উনি আমাকে বিয়ে করবে। ভালোবাসে বলেনি সোজা বলেছিলো বিয়ে করবে কিন্তু আমি জবাব দেবার আগেই আমার নতুন মা দেখে ফেলে! শেষ যা হবার হয়ে যায় তখুনি! আবারো বাবার কাছে যায় তবে এবার বলে যে আমি নাকি পালিয়ে যাবার চিন্তা করছি উনার সঙ্গে আর উনি সেটাই শুনেছেন।
ব্যস আগের বার বাবা আমার কথা শুনলেও এবার আর শুনলেন না কোনো কথা! উনার মনে তখন একটা ভ’য়ই ঢু’কি’য়ে দিয়েছিলো নতুন মা যে আমি পালিয়ে গেলে উনার মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাবে। আমি পা’লিয়ে যাবো রাহুলের সঙ্গে। তাহলে বাবা আর এলাকায় মুখ দেখাতে পারবে না বাবাও সেটারই ভয় বেশ ভালো করেই পেয়েছিলেন। তারপর থেকে আমার সমন্ধ দেখা শুরু করে আর পরিশেষে নিরবের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় আমার। সব ঠিক ছিলো বিশেষ করে আমার শাশুড়ির মতন মানুষকে দেখে বাবা নির্ভয়ে তুলে দিছিলেন আমাকে। আপাততো বর্তমানে রাহুলকে দেখে আমার একটা কথাই মনে হচ্ছে উনি যদি সেদিন এসব না করতো তাহলে বোধহয় এতো তাড়াতাড়ি আমার বিয়েটা হতো না আর বিয়েটা না হলে বোধহয় আজকের এইসব দেখতে হতো না। বাপের বাড়িতে থেকে নতুন মায়ের কথা, কাজ কর্ম সব করা তাও ভালো ছিলো কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা কি করে মেনে নিবো! এ যে মেনে নেওয়া অসম্ভব একেবারে। তবুও কিছু করার নেই মেনে নিতে হবে যে আমার ভেতরের একজনের জন্য।
ডাক্তার মানে রাহুল আমাকে চেক করে বললো আমার শরীরে পু’ষ্টির অ’ভা’ব। দু’র্বল আছি আমি বেশি সেজন্য ওরকম লাগে খালি ভালো মতন খাওয়া দাওয়া আর যত্ন করলে ঠিক হয়ে যাবো। রাহুল নিজের জিনিশপত্র গোছাচ্ছে তখুনি একবার আমাকে বললো…..
—“কেমন আছো তুমি? দেখে তো মনে হচ্ছে ভালো নেই। ভেবেছিলাম আর বুঝি তোমার সঙ্গে দেখাই হবে না আমার কিন্তু দেখো? ভাগ্যে আবারো তোমার সঙ্গে দেখা করালো।”
উনার কথায় আমি কি বলবো বুঝে ওঠতে পারছি না। তবে একবার তাকালাম ভালো করে বেশ পরিবর্তন হয়েছেন উনি। এখন চোখে চশমা দেয় যদিওবা চশমা আগে থেকেই পড়তো। আগের থেকে একটুখানি চিকন হয়ে গেছে বোধহয়। যাকগে সেদিকে আর না দেখে উত্তর দিলাম……
–“আমি ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন তো?”
—“হ্যাঁ দেখতেই তো পাচ্ছো খুব করে ভালো আছি আমি।”
—“ভালো থাকুন এটাই ভালো।”
—“ভালো রাখার জন্যই তো চলে গেছিলে ভালোই আছি আমি ম’ন্দ তো নয় আর।”
উনার কথা মানে বুঝলাম না। তবে খুব করে বুঝতে পারছি উনি কথাটা অন্য ইঙ্গিতে বলেছে। কবে যাই হোক না কেনো এসব নিয়ে ভাবতে চাই না আমি। উনি চলে গেলেন। আমি নিজের রুমে গিয়ে বসলাম একটুখানি। তখন ব”মি করার ফলে পে’ট’টা খালি হয়ে আছে কিছু নেই। আবারো একটু ফ’ল নিয়ে বসলাম খাবার জন্য। খাবার পর কি করবো কিছু খুঁজে না পেয়ে একটু হাটাহাটি করি। বারান্দায় গিয়ে দেখছি সুন্দর আকাশ একবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে যেনো। তখুনি বাড়িতে ঢুকতে দেখলাম নয়নাকে কিন্তু নিরব নেই ওর সঙ্গে।
–“তুমি একা এলে যে? নিরব কোথায় নয়না?”
—“সেই উত্তর কি তোমাকে দিতে হবে নাকি? নিরবের যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবে তোমার এতো ”না”ক গলাতে হবে না।”
নয়নার কথা শুনে কিছু বললাম না আর। বুঝলাম না মেয়েটা এরকম কেনো। এই মেয়ের প্রতি যে নিরব কি করে আকৃষ্ট হলো আল্লাহই ভালো জানে। কলির কাছে গিয়ে একটু বোসলাম একলা একলা যেনো একাকীত্ব গ্রাস করছে আমাকে সেজন্য গেছিলাম কিন্তু কলিও চলে গেলো কোনো একটা দরকারে। পুরো বাগিতে আমি আর নয়না এখন একা আছি। নিরব এখনো আসেনি। আমার ঘর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ড্রয়িং রুমে কে আসলো আর কে গেলো। রুমে বসে ছিলাম ঠিক তখুনি দেখতে পেলাম ড্রয়িং রুমের দরজার কাছে কোনো পুরুষের অবয়ব। প্রথমে ভুল ভেবে উড়িয়ে দিলেও একটু পরই দেখতে পেলাম নয়না পা টি পে টি পে এগোচ্ছে ড্রয়ির রুমের সেই দরজার দিকে। পুরো বাড়িতে আর কেউ নেই এখন নয়না কেনো কোনো পুরুষকে ডাকতে যাবে? তাও এরকম চুপিচুপি ভাবেই ডাকবে বা কেনো? মনে কৌতুহল জমা নিলো সবটা জানার জন্য। কিন্তু এই মুহুর্তে আমি ওখানে যেতে পারছি না যদি আমার কোনো ক্ষতি করে দেয়? এই সন্তানটার জন্যই তো আমি আছি এখানে। বাধ্য হয়ে খাট ছেড়ে আমার রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করলাম কি বলছে। কথাও বলছে খুব আস্তে আস্তে ফলে আমি কিছু বুঝলাম না কিন্তু দেখতে তো পেলাম। ওই পুরুষটা নয়নার হাতে কিসের একটা প্যাকেট দিলো আর নয়না সেই প্যাকেট নিয়ে দরজা বন্ধ করে নিরবের রুমে যেতে লাগলো সিড়ি বেয়ে! আমার মনে কৌতুহল যেনো থামছেই না। আমিও সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওঠলাম নিরবের রুমের কাছে। কিন্তু গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ করা আছে উপায়ন্তর না দেখে দরজা ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে রইলাম শুনতে পেলাম নয়না ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছে তাহলে কি সেই পুরুষটিকেি কল করছে? কি করতে চাইছে কি মেয়েটা! কিছুই তো বুঝে ওঠতে পারছি না আমি। এসব ভাবনার মধ্যেই হুট করে আমার কাঁধে কারো স্পর্শ পেলাম!
#চলবে