বিষাদময় জীবন পর্ব -০৪

#বিষাদময়_জীবন
#অধরা_ইসলাম
#পর্ব৪

আমি দরজার আড়ালে থেকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে ওই পুরুষটি নয়নার হাতে কি দিয়ে গেছে ঠিক তখুনি কাধে কারো স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে যাই! পেছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পাই নিরব দাঁড়িয়ে আছে।

–“কি করছিলে তুমি? ঘরের বাইরে দঁড়িয়ে ছিলে কেনো?”

—“ওই এসেছিলাম নয়নার কাছে রাতে কি খাবে সোটা জানতে এসেছিলাম। এসে দেখে ও ঘরের ভেতর আছে ঢুকতে যাবো তখুনি তুমি এসে পড়েছো।”

নিরবকে কোনো মতে বুঝ দিয়ে চুপ করে গেলাম। আমি জানি নয়না নিশ্চিত আমার আর নিরবের কথা শুনে প্যাকেটটা লুকিয়ে ফেলেছে তাই এখন যদি আমি নিরবকে এসব বলতাম নিরব তো আমার কথা বিশ্বাসই করতো না উল্টো নয়নার বানিয়ে বলা কথা নিয়ে ঝামেলা হতো যা আমি একবিন্দুও চাচ্ছি না! তবে নয়নার উপর নজর রাখতে হবে যা বুঝেছি ও সুবিধাজনক নয় খুব একটা। ব্যবহারও ঠিক লাগছে না!

রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে। সকালবেলা নামাজ আদায় করে নাস্তা বানিয়ে একটু বাহিরে গেলাম দরকারি জিনিশপত্র কিনতে। নাস্তাতো বানিয়ে দিয়েছি কিন্তু না জানি নয়না আবার কোন ঝামেলা করে! হায়রে মানুষ! নিরব আগে আমার সঙ্গে বেশি কথাও বলতো না আর ঝ’গড়া তো দূরের থাক কারন ওর নাকি এসব ভালো লাগে না! অথচ নয়না কে দু দিনেই দেখে যতোটা বুঝেছি ওর স্বভাব ঝগড়ুটেই কিন্তু নিরবের সেটা ভাল্লাগছে বোধহয়। আফসোস আমি এতো করেও মন পেলাম না। জানিনা কি আছে ভাগ্য! দোকানে যাবার জন্য রোড পার হচ্ছিলাম ঠিক তখুনি একটা কালো গাড়ির সঙ্গে ধা*ক্কা লাগে!

চোখ খুলতেই নিজেকে কেমন অন্য একটা রুমের ভেতর আবিষ্কার করলাম। পুরো রুমটাই অচেনা লাগছে। বুঝে ওঠতে পারছি না কোথায় এসে পড়লাম আমি। তখন রাস্তা পারাপারের সময় একটা গাড়ির সঙ্গে ধা*ক্কা লাগে তারপর তো আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কি করে? কে আনলো আমাকে এখানে? প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পাশে বসে থাকা এক বৃদ্ধ মহিলাকর জিগেস করলাম,,,

—“আপনি কে? আমি এখানে কি করে এসেছি! কে এনেছে আমাকে?”

—“তুমি রাস্তা দিয়ে যাবার সময় আমার ছেলের গাড়ির সঙ্গে ধা*ক্কা লাগে তোমার। তারপর সে তোমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে তখন তুমি অজ্ঞান ছিলে এখন জ্ঞান এসেছে তোমার। তুমি প্রেগন্যান্ট বোধহয়?”

বৃদ্ধ মহিলার কথা শুনে ভেতরটা আৎকে ওঠলো! আমার বাচ্চা? সে ঠিক আছে তো! ওর জন্যই তো আমার এতো লড়াই ও ঠিক না হলে কি করে হবে।

—“আরে আরে ব্যস্ত হয়ো না। আমার ছেলে তোমাকে ডাক্তার দেখিয়েছে তুমি তোমার বাচ্চা দু’জনেই সুস্থ আছো কিচ্ছু হয়নি কারো।”

মহিলার কথা শুনে যেনো থরে প্রান এলো। সস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তৃষ্ণা পেয়েছিলো,খুব পাশে থাকা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে নিলাম একটুখানি। ঘড়ির দিকে তাকালাম ইশশ কতো বেলা হয়ে গেছে! বেরিয়েছিলাম তো সকালে আর এখন হয়ে গেছে দুপুর। নিশ্চয়ই নিরব এতক্ষণে আমাকে খুঁজছে! খুঁজবে কি আদৌ? সে তো মজেছে অন্য নারীতে। আমার কথা কি আর থোরাই মনে থাকবে তার? কিন্তু নিরবের জন্য না হলেও আমার বৃদ্ধ শশুড়মশাইয়ের কথা তো আমাকেই ভাবতে হবে। বৃদ্ধ মানুষটা কি করছে কে জানে! নয়না যে উনার সেবা যত্ন করবে না এটা ভালো বুঝেছি। তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই একটা মিষ্টি ফুট ফুটে বাচ্চা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো!

–“মিষ্টি আন্টি তুমি চলে যাচ্ছো? থাকবে না আর আমাদের বাড়িতে?”

আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। বৃদ্ধ মহিলাটি বোধহয় বুঝলো আমার কৌতুহল তাই উনিই বলতে লাগলেন,

—“তুমি ডখন অজ্ঞান হয়ে শুয়ে ছিলে এই যে আমার এই নাতনি ওর নাম হচ্ছে আকাশ ও তোমাকে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষন করছিলো জানোতো? তোমার চেহারার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে তুমি নাকি খুব মিষ্টি দেখতে তাই তোমার নাম দিয়েছে সে মিষ্টি আন্টি।”

–“হ্যাঁ তুমি কি মিষ্টি দেখতে তাই তোমার নাম মিষ্টি আন্টি বুঝলে তো? আমি তোমাকে মিষ্টি আন্টি বলেই ডাকবো।”

ছেলেটার কথা শুনে মুখে হাসি ফুটে ওঠলো আমার। কি সুন্দর ছেলেটা এক দেখাতেই আমাকে তার মিষ্টি আন্টি বানিয়ে দিয়েছে। ছেলেটাও খুব মিষ্টি দেখতে।

–“আচ্ছা এবার বলো তো মেয়ে তোমার বাড়ি কোথায়? আর তোমার স্বামীই বা কোথায়? দেখে তো মনে হচ্ছে তোমার প্রায় ভরা পেট সাত আট মাসের প্রেগন্যান্ট তুমি। এই সময় তো স্বামীরা মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে কোথাও বেরোতেও দেয় না আর তুমি কিনা এই সময় একা রাস্তা দিয়ে বাজার করে নিয়ে যাচ্ছিলে! তোমার স্বামী কোথায় হ্যাঁ?”

–“স্বামী? হাসালেন গো চাচী! স্বামী নামক ব্যাক্তি তো এখন তার নতুন বউতে মজেছে যে আমার দিকে তাকানোর সময় কো*

আর কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। কি থেকে কি বলে ফেলছি নিজেও জানি না। চুপ করা উচিত ছিলো আমার এভাবে অপরিচিতো মানুষকে এসব বলা ঠিক না সে যতোই উনি প্রশ্ন করুক না কেনো আমার উচিত ছিলো চুপ করে থাকা।

–“কি গো থেমে গেলে কেনো? ওহ্ বুঝেছি গো বুঝেছি স্বামীর কীর্তির কথা বলে ওঠতে পারছো না! তোমার স্বামীর জীবনে দিত্বীয় নারীর আগমন ঘটেছে যে এখন তোমার সতীন। আর তোমার স্বামীরও মন মজেছে সেই মেয়েতে এই তো বলো?”

মহিলাটি বুঝে গেলেন আমার অর্ধেক না বলা কথা। আমি আর অস্বীকার করলাম না! জেনেই যখন গেছে আর লুকিয়ে কি লাভ হবে? যা সত্যি তাই তো বলেছেন উনি,,,,,

–“হ্যাঁ চাচী আপনি ঠিকই বলেছেন। বিয়ের কয়েক মাসের মা’থায় স্বামীকে পরনারীতে আসক্ত হতে দেখে সে ক্ষমা চেয়ে ঠিক হয়ে যাবে বলেছিলো। মেনেও নিয়েছিলাম জীবন চলছিলো সুন্দর মতন, কিন্তু আমার শ্বাশুড়ি মা মা-রা যাবার পর ওর ব্যবহার বদলাতে থাকে! এইতো দিন দুয়েক আগে মানে পরশু দিন সে হুট করে বিয়ে করে এসে হাজির হয় ওই সেই মেয়েটিকে! ওহ্ বলা বাহুল্য আমি খুবই গরীব ঘরের মেয়ে। সৎ মা তাড়াহুড়ো করে পরের বাড়ি পাঠিয়েছে। শাশুড়ি মা নিজে পছন্দ করে আমাকে এনেছিলেন কিন্তু তার ছেলের বোধহয় পুরোপুরি পছন্দ ছিলো না আমাকর সেজন্যই তো পরনারীর মোহে আকৃষ্ট হয়েছে সে। এখন তার নতুন বউকে নিয়ে থাকছে, যাবার জায়গা নেই আমার আর নতুন মা কাঠ গলায় বারন করে দিছে উনার ঘরে যেনো না যাই। পেটে তো একজন আছে তার কথা ভুলে যাই কি করে? সেজন্যে তো পড়ে রয়েছি এখনো।”

–“একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করো?”

–“হ্যাঁ বলুন দেখি।”

—“শোনো তবে, এই যে আমাকে দেখছো না? আমিও ভালোবেসে বিয়ে করি আকাশের দাদুর সঙ্গে কতো সুখের দিন পেরিয়েছি আমরা কিন্তু তাও ক্ষনিকের জন্যই। আকাশের দাদু এতিমখানা, ভিবিন্ন ধরেনের এনজিও তে গরিব মানুষদের নিয়ে কাজ করতো। যে মেয়েদের এভাবে অ”’ত্যা’চা’রি’ত হতে হতো উনি সেই সংস্থায় তাদের কাজ দিয়ে নিজ পায়ে দাঁড় করিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত দিতো। একদিন সে চলে যায় নিশ্চুপে আমাকে ছেড়ে! তখন আকাশের বাবা মানে জাহিদ সবে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তো। ছেলে নিয়ে দি’শে ‘হারা হয়ে যাই আমি। পরে নিজেকে শক্ত করি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ওই সংস্থা, সব কাজ আমিই শুরু করি। নিজের ছোট্ট একটা কাপড়ের দোকান দিয়ে ছিলাম বাড়িতে সেটা থেকেও কিছু পেতাম। অভাব এসেছিলো৷ আমার দজায় কিন্তু আমি জাহিদের বাবার স্বপ্ন অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করা সেটা ভুলে যাইনি আমি ফলস্বরুপ আজকে জাহিদকে প্রতিষ্ঠিতো করে আরো দু’টো এতিমখানা দিয়েছি। যেই সংস্থা ছিলো? সেটা আরো বড়ো হয়েছে এখন সেখানে মেয়রা তাদের সৃজনশীল মূলক কাজ করে আর সেগুলো বড়ো মালিকদের কাছে বিক্রি করে মেয়রদেরকেও অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী করেছে আমার ছেলেটা। এই সব দিকও যেমন দেখে তেমনি আবার নিজের চাকরিও দেখে সে। আমি যদি সেদিন শক্ত না হতাম না বলো? তাহলে আজকের এই এতোকিছু কিছুই হতো না। তাই বলছি আমার জীবন কাহিনী থেকেই অনুপ্রেরণা নেও না হয় ঘুরে দাঁড়াও বুঝলে? এই নাও এটা আমাদের সংস্থার কার্ড যখুনি বিপদে পড়বে এসে পড়বে কেমন?”

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here