#বৈধ_সম্পর্ক
#সিজন_২
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz
.
.
.
হ্যাঁ, জায়গা দিয়ে ফেলেছে তার এই মন মুনিরাকে। এতোটা ধৈর্য্যশীল, মায়াবী, শান্ত কোনো মেয়ের প্রতি ভালোবাসা এমনিতেই জন্মে যাবে। সে জায়গায় মুনিরা তার স্ত্রী। তবে এই একটা বছর এক সাথে না কাটালে আফরান কখনো উপলব্ধি করতে পারতোনা মুনিরার প্রতি এই ফিলিংস!
.
এসব ভাবতে ভাবতেই মুনিরার গলার শব্দ কানে আসলো আফরানের-
শুনছেন? তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ। আপু ওয়াশরুমের দরজা খুলছেনা।
.
মুনিরার কথা শুনে এক মুহুর্তও দেরী না করে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো আফরান।
.
.
.
৪দিন পর….
সায়নী বসে আছে নিজের রুমে। মাত্রই হাসপাতাল থেকে বাসায় এসেছে সে।
ওয়াশরুমে অসাবধানতা বশত পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ফলে অজ্ঞান হয়ে যায় সায়নী। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার।
দরজা ভেঙ্গে হাসপাতাল নিতে নিতে অনেকটা দেরী হয়ে যায়।
যার ফলে তার গর্ভের বাচ্চাটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শুধু এটাই নয়, ডাক্তার জানিয়েছেন সায়নী আর কখনো মা হতে পারবেনা।
এর চেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা আর কিইবা হতে পারে!
পুরো খান ম্যানশনে যেনো শোকের ছায়া নেমে এলো।
একটার পর একটা দূর্ঘটনা লেগেই আছে তাদের জীবনে।
এই বাড়ি আলো করে আফরানের অংশ আসবে বলে কতই না আনন্দে ছিলো তারা। কিন্তু নিয়তির এই কি পরিহাস!
সুখ যেনো এই বাড়িতে ধরা দিতেই চায়না।
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে আফরান।
কি থেকে কি হয়ে গেলো! তবে সায়নী যে ঠিক আছে এটাও কম কিসের!
চোখের পানি মুছে রুমের দিকে এগিয়ে এসে আফরান বললো-
সায়নী?
.
আফরানের ডাকে ঘোর কাটলো সায়নীর।
সোফার উপরে পাথরের মতো বসে ছিলো সে। আফরানের ডাকে নড়েচড়ে বসলো।
আফরান তার পাশে বসতেই সায়নী বললো-
বাবা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে তাইনা?
-হু।
-তুমিও পাচ্ছো তাইনা?
.
চুপ হয়ে আছে আফরান। সায়নী তার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বললো-
আমি তোমাদের জুনিয়র আফরানের খেয়াল রাখতে পারিনি আফরান! আমি মা হবার যোগ্য নয়।
.
সায়নীকে বুকে টেনে নিলো আফরান। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো-
তোমার দোষ নেই এতে। সব ঠিক হয়ে যাবে। শান্ত হও। তুমি যে ঠিক আছো আমার কাছে এটাই অনেক।
.
.
.
সায়নীর শরীরটা দূর্বল। তাকে কিছু খাওয়ানো উচিত। তা ভেবে আফরান রান্নাঘরে আসতেই দেখা পেলো মুনিরার।
এক পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছে সে একনাগাড়ে।
-কাঁদছো কেনো?
-আমি আপুকে এভাবে দেখতে পারছিনা। আর কতো কষ্ট আপুকে সহ্য করতে হবে বলতে পারেন! অল্প সময়ে মা বাবা হারিয়েছে। স্বামীর ভাগ অন্য একটা মেয়েকে দিতে হয়েছে। এখন মা হবার সুযোগটাও হারালো! কতো কিছু সইবে আপু আর!
-নিয়তিই হয়তো এটাই। সায়নী সুস্থ আছে এটাই বেশি নয় কি!
-হু। তবে আপুকে খুশি দেখতে চাই আমি। তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-কি?
-ডির্ভোস দিবো আপনাকে। ছিলাম তো একবছর। ভালোবাসার মানুষ হতে পারিনি কারো। কষ্টই দিয়ে এসেছি শুধু।
-এসব কি বলছো তুমি?
-ঠিকই বলছি। আমার জন্য আপনাদের আর কষ্ট পেতে হবেনা। আমি চলে যাবো। গ্রামে যেতে না পারি। এই শহরের কোনো এক কোণায় নিজের জন্য ঠিকই জায়গা করে নিবো।
.
কথাটি বলেই মুনিরা নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
আফরান নিজেকে উদ্দেশ্য করে বললো-
মুনিরা চলে যাবে শুনে আমার কষ্ট লাগছে। হুম কষ্ট লাগছে। তবে সে এমন একটা সিদ্ধান্ত কেনো নিয়েছে! সায়নী কি চায়না মুনিরা থাকুক?
এই কোন পরিস্থিতি তে পড়লাম আমি! যখন চেয়েছি মুনিরা চলে যাক তখন সে যায়নি আর যখন সবটা আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে এলো তখন আবার এমন একটা মোড় চলে এলো।
আসলেই ভুলটা আমারই। শুরু থেকে আমার। এতদিন এই দুটো মেয়েকে আমি কষ্ট দিয়েছি তাই আমারো পেতে হচ্ছে এখন।
পরিস্থিতির চাপে পড়ে আমার জীবনটা দোটানাময় হয়ে গেলো। এখন কি করা উচিত আমার!
.
.
জগে পানি না থাকায় রান্নাঘরের দিকে এসেছে সায়নী।
আফরানের বলা কথাগুলো শুনে চুপচাপ সে নিজের রুমে চলে এলো।
বসে পড়লো বিছানার উপরে।
এসব কি বলছে আফরান!
নিজের কানে না শুনলে হয়তো বিশ্বাসই করা যেতোনা।
তবে কেনো বলেছে এসব? মুনিরা কি চলে যাবে বলেছে তাদের জীবন থেকে!
আচ্ছা মুনিরা যদি চলে যায়, আদৌ কি সায়নী খুশি থাকতে পারবে?
চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো সায়নী।
ভেসে আসছে মুনিরার সাথে কাটানো দিনগুলি।
আফজাল খান নাতী আসবে বলে কতই না খুশি ছিলেন। আর আফরান! বাবা হবার জন্য উতলা হয়ে পড়েছিলো। জুনিয়র আফরানের জন্য সকলে অপেক্ষায় ছিলো।
আর মুনিরা? নিজের কথা ভাবার আগে সবসময় ভেবেছে সায়নীর কথা।
চোখ জোড়া খুলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সায়নী। তার গর্ভে সন্তান আসার পরে মুনিরাকে দেয়া কথা সে প্রায় ভুলতেই বসেছিলো।
মুনিরা তাকে এসে জানিয়েছিলো সে চলে যাবে। সেদিন সায়নী বলতে পারেনি, যেওনা তুমি। এই বাড়িতে তোমারও সমান অধিকার রয়েছে।
তার এই মনোভাবের জন্যই হয়তো শাস্তি স্বরূপ বাচ্চাটি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো।
প্রথমে আফজাল খানকে না জানিয়ে তার ছেলেকে বিয়ে করা, পাবেল ও তার ইমোশন নিয়ে খেলা করা, প্রয়োজনে মুনিরাকে ব্যবহার করা আর কতো অপরাধের শাস্তি না পেয়ে পার পাবে সে!
মুনিরাই পারে এই অন্ধকার বাড়িটাতে আবার আলোতে ভরিয়ে দিতে।
আফরানকে ভালোবাসে সায়নী। তার সুখের জন্য এতোটুকু সে করতেই পারে।
নাহ, যেতে দেয়া যাবেনা মুনিরাকে। আটকাতে হবে তাকে।
.
সায়নী ছুটে গেলো মুনিরার রুমের দিকে।
সায়নীকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে মুনিরা বললো-
কি হয়েছে আপু?
এই শরীরে এভাবে ছুটছো কেনো?
-আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম অতি সুখে। আমাকে ক্ষমা করে দে মুনিরা। এই বাড়ি ছেড়ে তুই যাস না।
.
সায়নী কি বলতে চায়ছে বুঝতে অসুবিধে হলোনা মুনিরার।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সে বললো-
তোমার জায়গায় তুমি ঠিক আছো আপু। কিন্তু এবার আর আমাকে আটকাবে না। আমি একটা অলক্ষী বলেই বারবার এসব হচ্ছে।
-তুই যতবারই চলে যেতে চেয়েছিস ততবারই খারাপ কিছুনা কিছু হয়েছে। তুই এই ঘরের লক্ষী মুনিরা। একমাত্র তুই পারিস, বংশধর এনে বাবা আর আফরানের মুখে হাসি ফোটাতে।
-তা আর সম্ভব নয় আপু। যেখানে তোমাদের ভালোবাসাই পাইনি সেখানে আর…
-আমি তোকে ভালোবাসিরে পাগলি। কিছু সময়ের জন্য মনটা স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু দেখ তোর সায়নী আপুই আমি। যে তোকে বোনের জায়গা দিয়েছে। আফরানের মনে জায়গা তৈরী করতে সাহায্য করেছে। আমার একটা ভুলের জন্য এভাবে শাস্তি দিবি সবাই কে?
-তুমি বুঝতে পারছোনা আপু। উনিই তো আমাকে ভালোবাসেনা। শুধুই তোমাকে বাসে।
-তোকেও বাসে। তাইতো আমি যেদিন ওকে প্রশ্ন করেছিলাম আমাদের মাঝে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে বলা হলে সে কি করবে, উত্তর দিতে পারেনি সে। দুইটা পশু পাশাপাশি থাকলে একজন আরেকজনের উপর মায়া জন্মায়। সেখানে তুইও ওর বিবাহিতা আদর্শ স্ত্রী। তোর প্রতি ভালোবাসা জন্মাবেই না কেনো!
.
সায়নীর কথা শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো মুনিরা। সায়নী যা বলছে সত্যি বলছে তো!
.
সায়নী আবারো বললো-
জানিস মুনিরা? আল্লাহ কে বলেছিলাম তোকে আমাদের মাঝে রাখার কোনো মাধ্যম বের করে দিতে। যাতে আমার মনে তোকে নিয়ে কোনো সংশয় না থাকে। আল্লাহ সেই মাধ্যমের পথ আজ দেখিয়ে দিয়েছেন। এই যে তুই হবি আফরানের বাচ্চার মা।
তোর মাধ্যমে আমিও আফরানের অংশ কে ছুঁতে পারবো, কোলে নিতে পারবো, আগলে রাখতে পারবো।
বিশ্বাস কর তোর ডিসিশন কে আমি সম্মান জানাতাম, যদি আফরান তোকে মেনে না নিতো৷ এখন আফরানও তোকে চায়।
আমিও আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তুই চলে গিয়ে আমাদের হাসিটাও নিয়ে যাস না মুনিরা। আজ প্রয়োজনে আসিনি, তুই প্রিয়জন বলেই এসেছি।
.
.
.
সায়নী রুমে আসতেই তাকে দেখে আফরান বললো-
কোথায় গিয়েছো? কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি আমি।
-ভালোবাসো মুনিরাকে?
.
সায়নীর প্রশ্ন শুনে চুপ হয়ে গেলো আফরান।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
সায়নী তার পাশে এসে হাত ধরে বললো-
তুমি এতো ভালো কেনো? প্রথমে আমি তোমাকে বলেছি ওকে ডিভোর্স দাও, রাজী হয়েছো। পরে বলেছি দিওনা, রাজী হয়েছো। এর পর বলেছি সম্পর্ক আগাও রাজী হয়েছো। এক মুখে এতো কথা বলার পরেও কখনো তুমি আমাকে মুখ ফুটে কিছু বলোনি। এই যেমন বুঝতে পেরেছিলে আমার মনে কিছু চলছে। অথচ তুমি আমাকে বলতে পারতে, আমার কথা শুনেই মুনিরার দিকে এগিয়েছো তুমি তাহলে কেনো আমি আবার ঝামেলা পাকাতে চাইছি।
.
সায়নীর হাতের পিঠে চুমু খেয়ে আফরান বললো-
তোমার জায়গায় যেকোনো মেয়ে থাকলে এটাই করতো। এতো সহজ ছিলোনা তোমার পক্ষে এসব৷ তবুও তুমি পরিস্থিতি সামলাতে, ভুল শোধরাতে, মুনিরার প্রতি ভালোবাসার জন্য স্বামীর ভাগ দিতেও প্রস্তুত ছিলে। কয়টা মেয়ে পারে এসব! তোমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছি আমি। তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা সায়নী। আমি না বুঝলে কে বুঝবে তোমাকে?
-বুঝোই যদি এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আটকাও মুনিরাকে। এবার আর কোনো সংশয় নেই আমার মনে। তোমার মনেও থাকুক আমি চাইনা। আমি কখনোই মনে করবোনা, আমার বাচ্চা হবেনা বলে তুমি তাকে রেখেছো। কেননা আগেই আমি জেনেছি তোমার মনে মুনিরার জন্যও জায়গা তৈরী হয়েছে। এটাই তো হওয়ার ছিলো তাইনা? মুনিরা মেয়েটাই যে এমন। আফরান আমি এটাও জানি তুমি আমার জায়গা ওকে কখনো দিতে পারবেনা। কেননা ও আমার জায়গা দখল করেনি। নিজেই একটা জায়গা তৈরী করে নিয়েছে।
আজ কোনো চাপ নেই আফরান। নিজের মনের কথা শুনো। মন যা চাই করো। আমি তোমার সাথে আছি। তোমার উপর বিশ্বাস আছে আমার।
যাও আফরান আটকাও মুনিরাকে। এই বাড়ির লক্ষীকে যেতে দিওনা।
.
.
.
সায়নী কি বলেছে! আফরান তাকে ভালোবাসে? কই? কখনো তো বললো না।
ভাবতে ভাবতেই আফরানের গানের গলা কানে আসলো মুনিরার-
তোকে বলবো ভাবি কিছু অল্প কথায়
তুই স্বপ্নে ছিলি, ছিলি গল্প কথায়
আজ তোর নামে রাত নামে
দিন কেটে যায়…
আমার মন তোর পাড়ায়
এসেছে তোরি আস্কারায়,,
আমার মন তোর পাড়ায়
এসেছে তোরি আস্কারায়…
.
স্তব্ধ হয়ে আফরানের গান শুনছিলো মুনিরা। আফরান থামতেই তার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরতে লাগলো।
আফরান তার দিকে এগিয়ে এসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো-
আজ আমি তোমাকে বলছি, কোথাও যাবেনা তুমি।
মায়াবতী যে এই মনে জায়গা করে নিলে।
.
এবার কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো মুনিরা।
মুখে হাসি সাথে কান্নাও।
তার এই অবস্থা দেখে আফরান বললো-
সায়নী ঠিকই বলে, তুমি বাচ্চাই রয়ে গেলে একদম।
.
.
.
সায়নীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আফজাল খান। নরম স্বরে তিনি বললেন-
তোরা দুজনেই অনেক কিছু হারিয়েছিস। তাই হয়তো তোদের দুজনের ভাগ্য এক সুতোয় গাঁথা। যা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে চলাটায় উত্তম। মুনিরা মন থেকে সবটা মেনে নিলেও তোর মনে যে সংশয় ছিলো এটা আমার অজানা ছিলোনা সায়নী। আর এটা নিয়ে আমি ভয়ে ছিলাম। আমি বেঁচে থাকতে মুনিরার মতো মেয়ের দুঃখ সহ্য করতে পারতাম না। আজ তুই আমার সকল চিন্তা, ভয় দূর করে দিলি মা। জুনিয়র আফরান কে দেখতেও সহজ করে দিলি।
আল্লাহ তোকে ভালো রাখবে সবসময়।
.
আফজালের মুখে হাসি দেখে সায়নীর মুখেও হাসি ফুটলো।
তার করা সব অন্যায়ের যেনো প্রায়শ্চিত্ত করতে পারলো সে।
.
.
.
দেড় বছর পর…..
মুনিরা প্রেগন্যান্ট আজ ৯মাস ১০দিন হলো প্রায়।
তার যত্নের কোনো অভাব হয়না। এই বাড়ির সকলের ভালোবাসা সে পেয়েছে।
আর আফরান? সে দুজনের প্রতিই তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
সায়নী একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেছে।
মুনিরার দেখাশোনার জন্য হাসির মা তো আছেনই।
সব কিছুই ভালোই চলছে, জুনিয়র আফরান বলে কথা!
.
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো মুনিরার।
মুনিরার আম্মার ফোন।
-হ্যালো আম্মা?
-আমি কালই আসবো মুনিরা।
-হুম আম্মা এসো।
-তোর সতীন তো তোর দেখাশোনা করার ভয়ে কলেজে পড়ানো শুরু করছে।
-কি যে বলোনা আম্মা! আপু চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছিলো। কতো ডিমান্ড জানো আপুর? সুযোগ পেয়েছে কাজে লাগাবেই না কেনো!
-যাই বলিস না কেনো। শুরু থেকে যদি তুই এসব মেনে না নিতিস তাহলে আফরান আজ শুধুই তোরই থাকতো। বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে তার সাথে সুখে থাকতে পারতিনা বল? একটা ভুলের জন্য এই সতীন টাকে সহ্য করতে হচ্ছে তোর। যাই হোক আমি কাল আসছি। এখন রাখলাম।
.
কি বললো তার মা? শুরু থেকে এসব না মানলে আফরান তারই থাকতো? আজ এই বাচ্চাটা নিয়ে তারাই সুখে থাকতো। ভাগ দিতে হতোনা সায়নীকে।
.
এসব ভেবে মুনিরা দাঁড়িয়ে পড়লো। কি ভাবছে টা কি মায়ের কথা শুনে এসব সে! যার মনে কিনা কোনোদিন খারাপ কিছু আসেনি সায়নীকে নিয়ে আজ তার মনে এসব আসলোই বা কিভাবে!
এই বাচ্চাটি কি তার মনে সংশয় সৃষ্টি করে ফেলবে? বাধ্য করবে সায়নীকে দূরে ঠেলে দিতে?
.
.
বিকেলে কলেজ থেকে বাড়ি এসেই সায়নী উপরে উঠতে লাগলো।
মুনিরার এই অবস্থায় নিচে নামা বারণ।
তাকে দেখে না আসলে যেনো সায়নী শান্তিতে বসতেই পারবেনা।
কয়েক সিড়ি পা দিতেই হাসির মাকে ছুটে আসতে দেখলো সায়নী।
আতঙ্কিত হয়ে বললো-
কি হয়েছে খালা?
-মুনিরার ব্যাথা উঠছে।
.
কি করবে এখন সায়নী! এই সময় আফরানও বাসায় নেই। অফিসের কাজে চট্রগ্রামের বাইরে আছে সে।
.
আর না ভেবে হাসির মায়ের উদ্দেশ্যে বললো-
ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলো খালা। মুনিরাকে নিয়ে আসছি আমি।
আর বাবাকে বলে দিও, আফরানকে যেনো ফোন দিয়ে জানায়।
.
.
.
অপারেশন থিয়েটারে মুনিরা।
কোরিডোরে পায়চারী করছে সায়নী।
ডাক্তার জানিয়েছে মুনিরার বাচ্চার পজিশন ঠিক নেই।
তাই সিজার করাতে হবে।
চিন্তায় সায়নীর মাথা যেনো ফেটে যাচ্ছে। ঘামছে সে অনবরত। আর মনেমনে আল্লাহ কে ডাকছে।
.
কিছুক্ষণ পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এলেন নার্স।
সায়নীর উদ্দেশ্যে বললেন-
রোগী বড্ড বায়না করছে আপনার সাথে কথা বলার জন্য। যদিও ডাক্তারের ও আপনাকে কিছু বলার আছে। প্লিজ ভেতরে আসুন।
.
কি বলবে ডাক্তার! সব ঠিক আছে তো!
ছুটে ভেতরে এলো সায়নী।
মুনিরা তাকে ডেকেই বলে উঠলো হাত ধরে-
আপু ডাক্তার রা বলাবলি করছেন হয় আমাকে বাঁচাতে পারবে তারা নাহয় আমার বাচ্চাকে। আমার বাচ্চাকে বাঁচাতে বলেছি আমি। কেননা তাদের মতে আমার আর বাচ্চা নেয়া সম্ভব না। তাই আমি চাই বাচ্চাটি আসুক দুনিয়াতে। ওর দায়িত্ব তোমাকে দিয়ে গেলাম।
-এসব কি বলছিস তুই!
-হুম আপু। এই বাচ্চা নিয়ে তোমার জন্য এক মুহুর্তের জন্য হলেও সংশয় সৃষ্টি হয়েছিলো আমার মনে। দেখো তার পরেই আল্লাহ আমাকে কোন জায়গায় পৌছে দিয়েছে। যে তোমার জন্যই সব পাওয়া সেই তোমাকে নিয়ে আমি…
.
কষ্ট হচ্ছে মুনিরার। হাঁপিয়ে যাচ্ছে সে। তবুও বললো-
আমার বাচ্চাটাকে দেখো। ওকে উপহার দিয়ে যাচ্ছি তোমাকে।
.
.
.
(চলবে)
.
বিকরি।