#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৯
___________________
– কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে সান্ড্রা দৌড়ে এসে মীরা কে ধরলো।
-মীরা আস্তে-আস্তে চোখ খুলে তাকালো।
মীরা চোখ খুলে দেখলো বেডে শুয়ে আছে।
মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে, পুরো শরীর ব্যাথায় একদম জর্জরিত। মীরা আস্তে উঠে বসতে চেষ্টা করলো।
-সান্ড্রা মীরা কে আরাম করে বসিয়ে গরম গরম স্যুপ খাওয়াতে খাওয়াতে বললো, এতো বিচলিত হওয়ার কিছু নেই মা’ই ডটার্স। সময়মত তুমি তোমার সব পরিচয় জানতে পারবে।
” মীরা সান্ড্রার কথায় মুখে কিছু না বলে এক নজর নিরব দর্শকের ন্যায় সান্ড্রার দিকে চেয়ে রইল। মীরা মনে মনে সান্ড্রার কথা সমর্থন করলো।
সময়ের উপর মীরা সকল কিছু ছেড়ে দিলো।”
– মীরা সান্ড্রার যাওয়ার পানে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো।
মীরা বেশ কিছুক্ষণ ভেবে বারান্দায় পা বাড়ালো।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে প্রায়।
অনেক বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে মীরার। ইংল্যান্ডে ঠান্ডা টা হয়তো হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে মীরার কাছে তাই মনে হচ্ছে।
চারদিকে জ্বলজ্বল করে আলো জ্বলছে।
মীরার মনটা আজ বড্ড বেশি বেপরোয়া হয়ে আছে।
যে দিকে তাকাচ্ছে মীরার মনটা কেমন কেমন যেনো ছন্দ হারা হয়ে আছে।
দূরদেশে এসে মীরার আজ বড্ড বেশি একা একা লাগছে। আজ অনেকদিন হলো বাবার সাথে কথা হয় না মীরার।
তাই মীরা ফোন টা বের করে বাবার নাম্বার টা বের করে কল দিলো।
প্রথম কল দেওয়া সাথে সাথে মীরার বাবা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো। মূহুর্তেই মীরার মনে খুশির বন্যা বয়ে গেলো।
-মীরা সালাম দিয়ে বাবার শরীরের কথা জিজ্ঞেস করলো।
– মীরার বাবা হঠাৎ এমন প্রশ্ন করাতে মীরা থমকে গেলো।
মীরাও ভেবেছিলো মীরার বাবা কে ঠিক একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে।
কিন্তু তাঁর আগেই উনি মীরাকে জিজ্ঞেস করলেন,ইংল্যান্ডে মীরার কাছে কোনো কিছু পরিবর্তন মনে হচ্ছে কি-না?
-মীরা গভীর মনে ভাবছে, মীরার কাছে তো সবকিছুই পরিবর্তিত মনে হচ্ছে।
কেননা মীরার শারীরিক পরিবর্তন, দেখার পরিবর্তন, কোনো কিছুর বিচক্ষণতায় পরিবর্তন সব কিছুতেই যেনো পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগে আছে।
মীরা মোবাইল টা আরেক কানে নিয়ে বলতে লাগলো, বাবা আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো সাধারণ মানুষ নয়।
আমি….ই …একজন…
– শুন মা তুই এতো বিচলিত হলে কি হবে?
তুই কি তা তুই নিজেই বুঝবি।
কেউ কিছু বললেই তুই যা তা কখনো পরিবর্তন হবে না।
বিধাতা প্রতিটা মানুষ কে অশেষ কাজে এই দুনিয়ায় পাঠান, নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ঠিক তেমনি তোকেও হয়তো অশেষ উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন।
– মীরা বাবার বলা কথাগুলো শুনে মনে বেশ সাহস পেলো।
– মীরার বাব আবার বলতে লাগলো, তুই যা-ই হোস না কেনো তুই আমার রাজকন্যা।
– মীরার বাবার কথা শুনে প্যালেসের ঐ দু’জন রাজা-রানীর ছবি মীরার চোখে ভেসে উঠলো।
মূহুর্তেই মীরার চোখে জল চলে আসলো।
– মীরার বাবা আরো বেশ কিছু মীরা কে বুঝিয়ে বললো।
-মীরা বাবার সাথে কথা শেষ করে, ব্যালকনির এক কোণে বসে কাঁদতে লাগলো। মীরা হাঁটু ভাজ করে বসে বসে মুখ গুঁজে কাঁদছে। আর বিষন্ন মনে ভাবছে কখন শেষ হবে এতোসব রহস্য।
” হঠাৎ কেউ মীরার শরীরে চাদর জড়িয়ে দিলো।
মীরার কপালের চুলগুলো ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিলো।”
– মীরা কারো ফুঁ য়ের স্পর্শে কেঁপে উঠল।
– কেউ তাঁর শীতল ঠোঁট দিয়ে মীরার কপালে চুমু এঁকে দিলো।
– মীরা নিজেকে আর সামলাতে না পেরে সামনে থাকা কেউ একজন কে জড়িয়ে ধরলো।
– মীরা চুলে কেউ বিলি কেটে দিতে দিতে বললো, “প্রিন্সেস ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড। ”
___________________
– এ কথা শুনবার সাথে সাথে মীরা চমকে তাকালো।
কারণ মীরা জানে এই কথা বলার ব্যাক্তি টা কে?
এ যে আর কেউ নয় স্বয়ং কালো হুডি পরিহিত ভ্যাম্পায়ার টা।
-মীরা ভয় পেয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।
– কালো হুডি পরিহিত অবয়ব টা মীরার কাছে আস্তে করে এগুচ্ছে আর বিকট শব্দ করে হাসছে আর বলছে
বাহ তুমি দেখছি বড্ড চালাক হয়েছ।
চোখ বন্ধ করেও তুমি আমায় চিনতে ভুল করো না দেখছি।
– মীরা মনে মনে বললো, আপনাকে চেনা একদমই সহজ, আপনার মুখে প্রিন্সেস কথা টা শুনলে তখনই পুরো পৃথিবী আমার কাছে এলোমেলো লাগে, যেনো পৃথিবী টা একটা গোলকধাঁধা।
আপনার বলা প্রিন্সেস ভাষাটায় কেমন যেনো কলিজা কাঁপানো অনূভুতি হয়। নিজেকে তখন সামলাতে বড্ড কষ্ট হয়। মীরা তখন সব ভুলে আপনার সব কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
ভ্যাম্পায়ার টা মীরার কাছে আসতে আসতে একসময় দেয়ালে চেপে ধরলো আর বললো, কোথাও পালাতে পারবে না তুমি,
যেখানে তুমি সেখানেই আমি। তুমি আমার ডার্ক ডায়মন্ড তোমায় ছাড়া জীবন আমার অচল।
– কারো শীতল নিঃশ্বাসে মীরার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। নিজেকে সামলাতে মীরা কে বড্ড বেশি লড়াই করতে হচ্ছে।
হঠাৎ মীরা কালো হুডি টা সরাতে যে-ই হাত দিলো, ভ্যাম্পায়ার তাঁর চোখের পলকে মীরার হাত টা খপ করে ধরলো।
– নো প্রিন্সেস নো এতো তাড়া কিসের?
আমিও তোমার জন্য সেই কতো যুগ ধরে অপেক্ষা করে আসছি কখন তুমি পঁচিশে পা দিবে আর আমি তোমায় নিজের করে পাবো।
আমিও একা একা অনেক বছর কাটিয়েছি, বিরহের প্রহর গুনেছি শুধু তোমাকে পাবার আশায় মরীচিকার ন্যায় অপেক্ষা করে আছি।
তোমাকেও করতে হবে আমার মতো মহৎ তপস্যা।
আমার ভালোবাসা সৎ ছিলো বলেই তোমায় পেয়েছি আমি।
তুমি ঠিক আগের মতোই আছো প্রিন্সেস একদম আগের মতো।
সেই চোখ যে চোখের প্রেমে পড়েছি আমি, সেই গোলাপের ন্যায় ঠোঁট যাঁর নেশায় আমি ছিলাম দিশেহারা, তোমার সেই কাজল কালো রেশমি চুল, যাঁর এলোমেলো বাতাসে আমি ছিলাম পথহারা।
বিধাতা তোমায় আবার পুনঃজন্ম করে পাঠালেও তুমি সেই আমার আগের প্রিন্সেস টিই আছো।
কালো হুডি পরিহিত অবয়ব টা মীরার হাত নিজের বুকের বামপাশে আলতো করে রেখে বললো, প্রিন্সেস দেখো এ বুকে আছে হাজার আকুতি ভরা ব্যাকুল ভালোবাসা।
যাঁর অন্তর্যামী একমাত্র তুমিই প্রিন্সেস।
– মীরা যেনো কোনো এক দুঃস্বপ্নে ডুবে আছে। এ স্বপ্ন ভাঙতে মীরার যেনো ইচ্ছে করছেনা।
মীরার হাত যেনো ঠান্ডা হয়ে আসছে, শীতল বুকের শীতল স্পর্শে।
– হঠাৎ মীরা অবয়ব টার বুক থেকে হাত টা সরাতে চাইলেও পারলোনা।
কালো হুডি পরিহিত অবয়ব টা মীরার হাত তাঁর বুকে আরো বেশি চেপে ধরে বললো, প্রিন্সেস এ বুকে যতো ব্যাথা শুধু তোমারি জন্য।
আগামীকাল তোমার পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে, খুব সতর্ক থাকতে হবে তোমায়।
– ভ্যাম্পায়ার টার কথা শুনে মীরা চমকে তাকালো ভ্যাম্পায়ারের ঠোঁটের দিকে ঘোর নেশায় তাকিয়ে থাকলো।
– মীরা তাকিয়ে দেখলো ঠোঁটগুলি বড্ড বেশি কাছে টানছে মীরা কে। এমন সুন্দর ঠোঁট মীরা আগে কোথাও যেনো দেখেছে কিন্তু এখন মনে করতে চাইছে না কিছুতেই।
-হঠাৎ কারো ডাকে মীরার ঘোর ভাংলো।
-আগামীকাল তোমার মধ্যে এক আশ্চর্যজনক পরিবর্তন হবে।
যা তুমি নিজেও জানে না।
ভ্যাম্পায়ার টা মীরা হাত নিজের শীতল হাতে মুঠো করে বললো, ভয় পেয়ো না প্রিন্সেস, তুমি তোমার আসল পরিচয় আগামীকাল জানতে পারবে।
তোমার অনেক কষ্ট হবে প্রিন্সেস খুব কষ্ট, নিজেকে ধৈর্য ধরে সামলাতে হবে।
কারণ তোমার উপর নির্ভর করছে প্যালেসের মহা দায়িত্ব। নেকড়েদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের প্যালেস।
নয়তো আমাদের সবাই কে পরতে হবে মহাবিপদে।
-কথাগুলো বলে হঠাৎ ভ্যাম্পায়ার টা উলটো হয়ে দাঁড়ালো।
– ভ্যাম্পায়ার কে থেমে যেতে দেখে মীরা অবাক চোখে তাকালো।
– ভ্যাম্পায়ার টা মীরার দিকে তাকিয়ে বললো, আগামীকাল তুমি তোমার এ-ই সৌন্দর্য দেখতে পাবে না, তোমার সৌন্দর্য ফিরে পেতে তোমাকে এক প্রহর অপেক্ষা করতে হবে।
– ভ্যাম্পায়ারের কথা গুলো মীরার কানে যাচ্ছে আর মাথা ঝিমঝিম করছে, বিশ্বাস করতেও বড্ড দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে।
মীরা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে লাগলে ভ্যাম্পায়ার টা চোখের পলকে মীরা কে ধরে ফেললো।
– প্রিন্সেস সামলাও নিজেকে।
তুমি সাধারণ কোনো মানুষ নও যে এভাবে ভেঙে পড়বে।
তাছাড়া আমাদের কে এই জগতের সৃষ্টি কুলে’র মঙ্গলের জন্যই পাঠানো হয়েছে।
যাতে নেকড়ে রা এই মহামানব জাতিকে শাসন করতে না পারে। নেকড়ের দল কে এবার স্বজাতি সহ ধ্বংস করতে হবে।
– মীরা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
– ভ্যাম্পায়ার যেতে গিয়েও আবার ফিরে এসে মীরা কে বললো, প্রিন্সেস আগামীকাল আমি আসবো না, তোমার সাথে আমার দেখা করা নিষেধ।
তুমি তোমার পূর্ণ রূপ না পাওয়া পর্যন্ত আমাকে আর দেখতে পাবে না। জানি আমার কষ্ট হবে, তবুও তোমায় পেতে হাজার কষ্ট পেতে রাজি আমি।
তোমার যখন খুব কষ্ট হবে তখন মনে রাখবে এ পরিবর্তন তুমি তোমার স্বজাতি কে রক্ষা করবার পরিবর্তন, এ পরিবর্তন তুমি তোমার প্রিয়জনদের রক্ষা করবার পরিবর্তন।
ভ্যাম্পায়ার টা মীরার হাত নিজের হাতে রেখে বললো, এখন আসছি প্রিন্সেস খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো বলে ভ্যাম্পায়ার টা মূহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলো।
– মীরা থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। ভ্যাম্পায়ারের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলো।
#চলবে——
বিদ্রঃ আজকের পর্ব খুব সিরিয়াসলি হয়ে লিখতে হলো। মিরার মতো আমারও মাথা ঝিমঝিম করছে।
আগামীকাল আবার গল্প আসবে।
গল্প টায় সাড়া কম পাচ্ছি সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, আজ প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি নায়ক টা আনুমানিক কে হবে?