#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-২১
___________________
– সান্ড্রা নিজের হাত থেকে রক্ত পরতে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
” মীরা সান্ড্রার দিকে এক নজর তাকিয়ে কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে নিজের সূচালো দাঁত দিয়ে সান্ড্রার হাতের রক্ত গুলো চুষে খেতে লাগলো।”
– সান্ড্রার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে।
যেনো তাই হওয়ারই ছিলো।
– হঠাৎ কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে সান্ড্রা চোখ বন্ধ রেখে চোখ খুলে তাকিয়ে ভীষণ অবাক।
মীরা ফ্লোরে অবচেতন হয়ে পড়ে আছে।
মীরার ঠোঁট বেয়ে রক্ত বেয়ে পরছে।
সান্ড্রা নিজের হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখলো মীরার দাঁতের দাগ একদম বসে গেছে।
সান্ড্রা আর দেরি না করে মীরাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে খুব গভীর নয়নে তাকিয়ে রইলো।
।
।
– সান্ড্রা আগেই জানতো এমনটা হওয়ারই ছিলো।
সান্ড্রা কে আগে থেকেই সব বলে দেওয়া হয়েছিলো মীরা ঠিক কি কি করতে পারে।
কারণ মীরা তাঁর শারীরিক পরিবর্তনের সময় নিজেই নিজেকে চিনতে পারবেনা, নিজের হিতাহিত জ্ঞান সব ভুলে থাকবে।
।
– মীরার জ্ঞান ফিরছে না দেখে সান্ড্রা কেউ একজন কে চোখ বন্ধ করে স্মরণ করতে লাগলো। কিন্তু কোথাও তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। সান্ড্রা আবার চেষ্টা চালালো অবশেষে সফলও হলো।
_______________
মীরার মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করছে। চোখ গুলো যেনো কেউ চেপে রেখেছে কিছুতেই খুলতে পারছে না মীরা।
আস্তে করে মীরা চোখ খুলে যাকে দেখলো, পৃথিবী টা যেনো তাঁর চারপাশে ঘুরতে লাগলো। মীরা যেনো স্বপ্ন দেখছে।
মীরা মনে মনে ভাবছে এ হয়তো স্বপ্ন।
উনি এখানেই বা আসবে কেনো?
মীরা সামনে থাকা ব্যাক্তিটি কে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলো।
– হঠাৎ মীরা আঁতকে উঠল।
এযে স্বপ্ন নয় সত্যি সত্যি।
– মীরা শোয়া থেকে উঠে জড়িয়ে ধরলো।
রুদ্র ভাই আপনি এসেছেন?
আমি জানতাম আপনি ঠিক আসবেন।আমার কষ্ট দেখে আপনার নিশ্চয়ই সহ্য হচ্ছে না আর।
– কেউ হঠাৎ মীরার কানে ফিসফিসিয়ে বললো, প্রিন্সেস ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড। ”
মীরা আই এম এন্ড্রে মেথিস এন্ড ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স।
– মীরা মেথিস কে ছেড়ে দিয়ে বললো স্যার আপনি?
– মেথিস মীরার পানে ঘোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো প্রিন্সেস আমিই তোমার ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স। যাকে তুমি এতোদিন কালো হুডির নিচে লুকায়িত দেখেছিলে।
আমার পুরো পরিচয় তোমার কাছ থেকে লুকায়িত রাখতে হয়েছিলো।
তাঁর একটাই কারণ আমাদের মুনস্টোন রক্ষার্থে।
আর তুমি ভ্যাম্পায়ার প্যালেসের আমার প্রিন্সেস।
– মেথিস মীরার গালে নিজের শীতল হাত দিয়ে আলতো করে ধরে বললো, প্রিন্সেস তুমি সাধারণ কোনো ভ্যাম্পায়ার নও, তুমি অতীব শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার।
– মেথিসের বলা শেষ কথা টা শুনে মীরা চমকে তাকালো। মীরার কাছে সব যেনো ধোয়াশার ন্যায় মনো হলো। এতোদিন তাহলে মীরার অনেক কিছুই অজানা ছিলো। চোখে যেনো মীরা ঝাপসা দেখছে সবি। ধূলোপড়া ডায়েরির সব স্বপ্ন মিছে হতে চলেছে।
।
হঠাৎ নিজের হিংস্র চেহারার কথা মনে পরলো মীরার। মীরা ছুটে গিয়ে নিজেকে একবার আয়নায় দেখলো।
আয়নার নিজেকে একদম বিবৎসা দেখে চিৎকার করতে লাগলো , সেই আগের কার মতোই সূচালো দু’টো দাঁত বের হয়ে আছে, ঠোঁটের চারপাশে লাল রক্ত লেগে আছে।
মীরা হাত দিয়ে মুখের রক্ত মুছে ফেললো।
– আয়নার দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে ফেললো।
।
– হঠাৎ ঘাড়ে কারো শীতল হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠল মীরা।
মীরা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো মেথিস কেমন ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– মেথিস তাঁর শীতল হাতের আদর মাখা স্পর্শে চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বললো, প্রিন্সেস প্লিজ এভাবে কেঁদো না।
সত্যি যতোটা কঠিন হোক না কেনো তোমাকে তা মেনে নিতেই হবে।
তাছাড়া তোমাকে এতোটা কষ্ট পেতে দেখে আমার নিজেরও ভালো লাগছে না।
মেথিস মীরার হাতে নিজের শীতল ঠোঁট দিয়ে চুমু খেয়ে বললো, প্রিন্সেস হয়তো তুমি অবাক হবে কতটা তপস্যা করে তোমায় আমি আবার পুনরায় ফিরে পেয়েছি।
– মীরা মেথিসের দিকে তাকিয়ে দেখলো, নীল বর্নের চোখের মায়া মীরা কে যেনো এক গভীর প্রেমে ডুবিয়ে দিচ্ছে। অজানা জগতে মীরা যেনো তলিয়ে যাচ্ছে।
এ তাকানোর ঘোর ভাঙতে হলে মীরা যেনো নিজেকে নিজে খুন করতে হবে।
“হঠাৎ কপালে কারো শীতল ঠোঁটের ছুঁয়া পেয়ে মীরার ঘোর ভাংলো।”
।
– প্রিন্সেস এভাবে ভেঙে পড়লে হবে না। আমাদের কে আরো বেশি কঠিন হতে হবে।
তোমাকে নেকড়েদের সাথে এক শক্তিশালী যুদ্ধের আহ্বান করে তাদের কাছ থেকে আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্যালেস উদ্ধার করতে হবে।
মুনস্টোন পুনরায় জাগ্রত করতে হবে।
আর তা পারবে একমাত্র তুমি।
তোমার ২৫ বছর আজ পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে আমাদের মুনস্টোনও আজ আরো শক্তিশালী হয়েছে।
ভ্যাম্পায়ারের মুনস্টোন কোথায় লুকায়িত করেছিলে তা কি তোমার মনে আছে?
।
– মীরা অবাক হয়ে মেথিস কে জিজ্ঞেস করলো আমার?
– ইয়েস তোমার!
আর তুমিই তো মুনস্টোন লুকায়িত করে নিজেকে সমাধি দিয়েছো, যাতে ভ্যাম্পায়ারদের কেউ বিনাশ করতে না পারে।
কিন্তু…
-মীরা বিচলিত হয়ে মেথিসের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-মেথিস আবারো বলতে শুরু করলো, কিন্তু ফাদার তোমাকে যা বলেছিলো তা ছিলো সম্পূর্ণ ভুল।
যিনি তোমাকে এসব করতে বলেছিলেন তিনি আমাদের ফাদার ছিলেন না, তিনি ছিলেন নেকড়েদের গড ফাদার।
আর উনিই আমাদের ফাদারের রূপ নিয়ে তোমাকে ধ্বংস হওয়ার জন্য বলেছিলেন, যাতে তুমি ধ্বংস হলে আমাদের মুনস্টোন তাঁর পূর্ণাঙ্গ শক্তি হারিয়ে ডার্ক স্টোনে পরিণত হয় এবং আমাদের ভ্যাম্পায়ারের প্যালেস নেকড়ে দের দখলে চলে যায়।
।
– মেথিস লম্বা একটা দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো, প্রিন্সেস তোমার উপরেই নির্ভর করছে আমাদের ভ্যাম্পায়ার প্যালেসের পূর্ণাঙ্গ শক্তি।
মুনস্টোনের খোঁজ না করতে পারলে আমরা কখনো নেকড়ে দের বিনাশ করতে পারবোনা।
,- মীরার তো কিছুই মনে আসছে না, কিন্তু মুনস্টোনের কথা মীরার আবছা আবছা কিছু মনে আছে কিন্তু পুরোপুরি ভাবে নয়।
– মেথিস মীরাকে ঝাঁকিয়ে বললো, প্রিন্সেস
হুঁশে ফিরে আসো। আমাদের হাতে খুব বেশি সময় যে নেই। খুব দ্রুত মনে করতে চেষ্টা করো।
।
-মীরার মাথাটা হঠাৎ ঝাঁকিয়ে উঠলো।
মীরা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে মেথিস মীরা কে ধরে ফেললো এবং বললো, ঠিক আছে তোমাকে এখন এতোটা স্ট্রেস নিতে হবে না, কিছু সময় যাক, এ-ই গ্রহ প্রহর কাটুক, তাহলেই হয়তো তোমার সব মনে পড়বে।
– মীরা মেথিসের দিকে এক নজর তাকিয়ে দৃষ্টি নিচু করে মাথা নত করে রাখলো।
” প্রিন্সেস তাকাও আমার দিকে।”
-মীরা তাঁর মনের জড়তা ভেঙে মেথিসের দিকে এক নজর তাকালো।
মীরার হঠাৎ অনুভূতি রা জানান দিচ্ছে মীরার কলিজা কেমন কেমন ডিপ ডিপ করছে। মীরা নিজের গাম্ভীর্য মন কে শান্ত করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
– মেথিস, মীরার কানে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো, প্রিন্সেস তোমাকে কিন্তু বেশ লাগছে ঠিক আমার ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসের মতো। তবে চিন্তা করো না, এ-ই চন্দ্র প্রহর কেটে গেলে তুমি তোমার মানুষের রূপ ফিরে পাবে। ভয় পেয়ো না আমি কোথাও যাচ্ছি না, তোমার আশেপাশেই আছি সারাক্ষণ বলে মেথিস তাঁর পাখা দু’টো বের করে মীরার দিকে একনজর তাকিয়ে উড়ে গেলো।
।
মীরার এখন একটাই চিন্তা কিভাবে সে তাঁর ভ্যাম্পায়ার প্যালেস ফিরিয়ে আনবে নেকড়ে দের কাছ থেকে।
তাছাড়া মেথিস বার-বার করে বলে দিয়েছে
মুনস্টোন ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়।
তাই মীরা আর সময় নষ্ট না করে চোখ বন্ধ করে মনে করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো।
মীরার কেমন জানি ক্লান্ত লাগছে।
তাই মীরা ব্যালকনির চেয়ারে গিয়ে বসে দুলতে থাকলো।
মীরার চোখ টা লেগে আসলো।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো পোশাকে ঢাকা কেউ একজন পুরুষ কন্ঠে বলে উঠলো,
“আকাশে সমুদ্র, মাটিতে ঝড়,
ঐখানে লুকায়িত মুনস্টোন ”
হঠাৎ সাদা আবে চারদিক ঢেকে গেলো।
অচিরেই পুরুষ কণ্ঠটা মিলিয়ে গেলো।
#চলবে—