#ভালবাসার_রংধনু
#পর্ব_৭ (শেষ পর্ব)
#Baishakhi_Fariba
আমানের বাবার কাছ থেকে যেভাবেই হোক আমাকে জানতে হবে।ঘরে গিয়ে ফোন ধরলাম।
আমিঃ হ্যালো।
আমানের বাবাঃ নিহু আমান এখন কেমন আছে?
আমিঃ উনি ভালো আছেন।ভোর রাতের দিকে জ্বর কমেছে।এখন জ্বর নেই।
আমানের বাবাঃ আমান কোথায়?
আমিঃ উনি এখনো ঘুমাচ্ছেন।আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?
আমানের বাবাঃ হ্যাঁ নিহু।বলো।
আমিঃ আরাফকে আপনি চিনেন?
আরাফের নাম শুনে আমানের বাবা চমকে যায়।উনি নিহুকে কি করে মিথ্যা বলবে?
আমানের বাবাঃ না মানে চিনিনা আমি।
আমিঃ আংকেল আমি আরাফকে খুব ভালবাসি।আরাফকে খুব ভালভাবে চিনি।আমি আমানের ফোনে আরাফ আর আমার ছবি দেখেছি।আরাফের বাবার ছবি দেখেছি।আংকেল…
আমানের বাবাঃ বলো নিহু,
আমিঃ আমান ই আমার আরাফ তাই না আংকেল? মিথ্যা বইলেন না প্লিজ।আমি আমানের সাথে থাকতে থাকতে এমন অনেক প্রমানই পেয়েছি যা দেখে মনে হয়েছে আমান ই আমার আরাফ।প্লিজ আংকেল বলুন না যে আমান ই আমার আরাফ(কান্না করতে করতে)
আমানের বাবাঃ যদি বলি আমান ই তোমার আরাফ।
উনার কথা শুনে আমি অনেক খুশি হয়ে যাই।আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
আমিঃ আংকেল আপনি সত্যি বলছেন।
আমানের বাবাঃ হুম নিহু আমি সত্যি বলছি।তুমি তো এখন সব জেনেই গেছো।
আমিঃ উনি কেন আমাকে বলেননি যে উনিই আমার আরাফ?কেন আমার কাছ থেকে সব লুকিয়েছে?কেন আমার থেকে এতো বছর দূরে ছিলেন উনি?(কান্না করে)
আমানের বাবাঃ কান্না করিস না মা।আমি আমানকে অনেক বুঝিয়েছিলাম কিন্তু ও আমার কথা শুনেনি।তোর এই প্রশ্নগুলো আমানকেই করিস।তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমান ই ভালভাবে দিতে পারবে।
আমিঃ জানো আংকেল আমি তোমাকে আর আরাফকে অনেক খুজেছিলাম।কিন্তু কোথাও পাইনি।
আমানের বাবাঃ কান্না থামা নিহু।আমি জানি তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস।কিন্তু আমার কাছেও কোনো উপায় ছিল না। আমার বজ্জাত ছেলেকে তো চিনিস ভালো করেই।ও যা বলবে তাই করবে।শুন ও তোকে কষ্ট দিয়েছে,এইবার তুইও ওর সাথে মজা কর।ওকে একটা উচিত শাস্তি দে।
আমিঃ হুম আংকেল।তুমি ঠিক বলেছ।উনাকে তো আমি মাফ করবো না।
আমানের বাবাঃ আমি এখন রাখি নিহু।সামনের সপ্তাহে আমি আসবো।
আমিঃ সত্যি আংকেল?
আমানের বাবাঃ হ্যাঁ।নিজের খেয়াল রাখিস আর আমার বজ্জাত ছেলেটারও।
আমিঃ আচ্ছা।
আরাফ আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন।দশ বছর আগে তো ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।আর দশ বছর পর যখন আমার সামনে আসলেন নিজের আসল পরিচয়ও দিলেন না।আপনাকে তো আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব না।আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় কেয়া।
ঘরে এসে দেখলাম আরাফ ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।আমি যে সব জেনে গিয়েছি আমি তাকে তা বললাম না।
আমিঃ কালকে যে আপনার এতো জ্বর ছিলো আমাকে একবারও বলেননি কেন?
আমানঃ আসলে আমি ভেবেছিলাম সিরিয়াস কিছু না।তাই আর বলিনি।তোমাকে বললে তুমি টেনশন করতে তাই আরো বলিনি।
আমিঃ জ্বরে তো শরীর পুড়ে যাচ্ছিল। হাত দেওয়াই যাচ্ছিল না।নিজের খেয়াল তো রাখেন ই না।সারারাত আপনার সেবা করা লেগেছে।
আমানঃ স্বামীর সেবা করবে না তো কার সেবা করবে?
আমিঃ ঢং……যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
উনি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন আর আমি নিচে চলে গেলাম।উনার জন্য সুপ বানিয়ে নিয়ে এলাম।
আমিঃ নিন সুপটা খান।
আমানঃ খাইয়ে দাও।
আমিঃ নিন হা করুন।
নিহু আমানকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছে।আমান নিহুর ব্যবহারে চমকে গেল।আজকে নিহুকে খাইয়ে দিতে বলায় কিছুই বলল না। আমান ভেবেছে অসুস্থ হওয়ার কারণে নিহু কিছু বলেনি।নিহু আমানকে খাইয়ে দিয়ে নিচে চলে গেল।
উপরে এসে দেখলাম উনি রেডি হচ্ছেন।মনে হয় অফিসে যাবেন। খুব রাগ হলো আমার।
আমিঃ কোথায় যাবেন?
আমানঃ অফিসে।
আমিঃ অসুস্থ শরীর নিয়ে অফিসে যাবেন কেন?
আমানঃ আমি তো এখন ঠিক আছি।
আমিঃ আজকে যেতে হবে না।
আমানঃ কিন্তু…
আমিঃ কোনো কিন্তু নয়।আপনি যাবেন না মানে যাবেন না।
আমান নিহুর কাছে এসে নিহুর কোমড় জড়িয়ে ধরে। নিহুর অনেক কাছে এসে পড়ে।নিহুর হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। আমানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে নিহু।একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো অজানা দেশে হারিয়ে যাচ্ছে দুজনে।আমানের নজর গেলো নিহুর হালকা লাল ঠোঁটগুলোর দিকে।আমান নিহুর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মেলাতে যাবে এমন সময় পিহু এসে পড়ে।
পিহুঃ আপু, এই আপু।
পিহু চিল্লিয়ে উঠে। পিহুর সামনে নিহু আর আমান দুইজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
পিহুঃ সরি সরি আমি কিছু দেখিনি।
আমিঃ কিছু বলবি?
পিহুঃ আসলে আমি স্কুলে যাচ্ছি। তাই তোমাকে বলতে এসেছি।
আমিঃ সাবধানে যাস।
নিহু আজকে আমানকে অফিসে যেতে না করেছে তাই আমান আজকে অফিসে যাবে না।নিহু ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।আমান ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।আমান দেখলো নিহু কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে।আমানের অনেক রাগ উঠলো। আমান বারান্দায় চলে গেলো।আমানকে দেখে নিহু ফোনটা কেটে দিল।
আমানঃ কার সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলছো তুমি? আমার সাথে তো কখনো হেসে কথা বলো না।(রেগে বললো)
আমিঃ আমি কার সাথে কথা বলবো তা আপনাকে বলবো কেন?
আমানঃ নিহু সাট আপ।বলো কার সাথে কথা বলছিলে?
আমিঃ আরাফের সাথে।জানেন আজকে আমি অনেক খুশি। দশ বছর পর আমি আরাফের সাথে কথা বললাম।আমি যে কতটা খুশি আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না।
নিহুর কথা শুনে আমান অনেক অবাক হয়ে যায়।
“আরাফ ওকে কিভাবে ফোন করবে।আরাফ তো আমি।আর আমি তো ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।তাহলে কে এসব করছে।আমাকে জানতেই হব.”.(মনে মনে)__আমান
আমানঃ আরাফ তোমাকে ফোন করেছে মানে কি?আরাফ কিভাবে ফোন করবে?নিহু কেউ তোমাকে মিথ্যা বলছে।যে ফোন করেছিলো সে আরাফ না।
আমিঃ কে বলেছে আপনাকে?একদম মিথ্যা কথা বলবেন না।আরাফকে তো আপনি সহ্য করতে পারেন না তাই এমন বলছেন।অনেক বছর পর আরাফকে আমি পেয়েছি।আমাকে ভুল ভাল বোঝাবেন না।
বলে ঘরে চলে এলাম।এখন দেখুন কেমন লাগে।বারান্দায় গিয়ে আমি ফোনে কথা বলার অভিনয় করছিলাম।এবার উনি বুঝবেন।আলমারি থেকে একটা নীল কালারের শাড়ি নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেলাম।
আমান ঘরে এসে দেখে নিহু একটা নীল কালারের শাড়ি পড়েছে। নিহুকে খুব সুন্দর লাগছে।কিন্তু নিহু শাড়ি পড়েছে কেন হঠাৎ?
আমানঃ কোথাও যাচ্ছো নাকি তুমি?
আমিঃ হুম,আরাফের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
নিহুর কথা শুনে আমানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
আমানঃ আরাফের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো মানে কি? নিহু আমার কথা শুনো।ওই ছেলেটা আরাফ নয়।মিথ্যা বলেছে তোমাকে।
আমিঃ ওই ই আমার আরাফ।আপনি মিথ্যা বলছেন।
আমান দেখলো নিহু শাড়ি পড়েছে কিন্তু ওর পেটটা দেখা যাচ্ছে। এটা দেখে আমান অনেক রেগে যায়।
আমানঃ (নিহুর কোমড় জোরে চেপে ধরে নিজের কাছে এনে) তুমি পেট বের করে শাড়ি পড়েছ কেন?
আমিঃ আরাফ আমাকে এইভাবে পড়তে বলেছে।ছাড়ুন আমাকে।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমানঃ নিহারিকা ও আরাফ নয়।(চিল্লিয়ে)
আমিঃ আমি জানি ওই আমার আরাফ।
আমানঃ ও আরাফ কি করে হতে পারে।কারণ আরাফ তো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি এটাই চেয়েছিলাম যে উনি যেন নিজের মুখে স্বীকার করে যে উনিই আমার আরাফ।তাই উনাকে আমি রাগিয়ে দিয়েছি।
আমানঃ আমিই তোমার আরাফ নিহুপাখি।
আমিঃ জানি আমি।কালকেই আমি সব জেনে গিয়েছিলাম।
আমানঃ কিভাবে?
তারপর নিহু আরাফকে সব বলে।নিহু কান্না করে দেয়।
আমিঃ আরাফ কেন করলেন আপনি আমার সাথে এরকম?কি দোষ ছিল আমার?দশটা বছর আমার থেকে দূরে ছিলেন আপনি আর দশ বছর পর যখন আপনাকে পেলাম আপনি নিজের আসল পরিচয়টাও দিলেন না। কেন আরাফ কেন?(কান্না করে)
আরাফঃ আই এম সরি নিহুপাখি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি নিহুপাখি।দশ বছর আগের সেই ঘটনার কারণে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিলাম না তখন।
দশ বছর আগে__
আরাফ আর নিহু দুই তলা একটা ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল।ছাদটা পুরো খোলা ছিল।নিহু খোলা ছাদ দেখে আসতে চাই নি।আরাফ তাকে জোর করে নিয়ে যায়। নিহু এক জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল।আরাফ পিছন থেকে এসে নিহুকে ভয় দেখায়।নিহু অনেক ভয় পেয়ে যায়। নিহু ছাদের কিনারেই দাঁড়িয়ে ছিল।হঠাৎ ভয় পাওয়ার কারণে ছাদ থেকে নিচে পড়ে যায়। আরাফ নিহুকে ধরতে গিয়েও ধরতে পারেনি।নিহুর মাথা থেকে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে।নিহুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।ডাক্তার বলেছিলেন বাঁচার চান্স খুব কম।সেদিন আরাফ নিহুর এ অবস্থার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি।নিহু বেঁচে যায় সেদিন।নিহুর ঠিক হতে ছয় মাস লেগে যায়। আরাফ সিদ্ধান্ত নেয় সে আর কখনো নিহুর সামনে এসে দাঁড়াবে না।তার জন্য নিহুকে এতো কষ্ট পেতে হলো।
বর্তমান____
আরাফঃ আই এম সরি নিহুপাখি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমিঃ আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন।একবারও বলেননি যে আপনিই আমার আরাফ।
নিহু রাগ করে কান্না করতে করতে ছাদে চলে যায়।ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে। আর আরাফ ভাবতে থাকে কিভাবে তার নিহুপাখির রাগ ভাঙাবে।
নিহু অনেক্ষণ পর চেঞ্জ করার জন্য ঘরে আসে।নিহুর অনেক অভিমান হয় আরাফ তাকে একবারের জন্যও নিয়ে যেতে আসেনি।
আমি ঘরে এসে দেখি পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে আছে।ঘরে ঢোকার সাথে সাথে কেউ আমাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আমি বুঝতে পারি আরাফই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।আমি তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে সে আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
আরাফঃ প্লিজ নিহুপাখি আমাকে মাফ করে দাও।আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না।দেখো কানে ধরছি।আমাকে মাফ করে দাও জান।তুমি একা কষ্ট পাওনি, আমিও তো কষ্ট পেয়েছি নিহু।
আমিঃ (কান্না করতে করতে) জানেন আমি কত কষ্ট পেয়েছি।আপনাকে আমি অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।প্রতিদিন আপনার কথা মনে পড়তো।আমি যেখানেই যেতাম আপনাকে খুঁজতাম শুধু।আমি আপনাকে খুব মিস…
আর বলতে পারলাম না।আরাফ আমার ঠোঁট জোড়ায় উনার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলেন।
আরাফঃ আমি সব জানি নিহুপাখি।আই এম সরি।মাফ করে দাও নিহুপাখি।
নিহু কিছুই বলছে না।আরাফ ভেবেছে নিহু তাকে মাফ করেনি।আরাফ তার হাতের বাধন আগলা করে দেয়।নিহু বুঝতে পারে।নিহু হালকা করে আরাফের ঠোঁটে চুমু খায়।
আমিঃ আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি আরাফ।
আরাফঃ খুব ভালবাসি তোমাকে নিহুপাখি।
আমিঃ আমিও আপনাকে অনেক ভালবাসি।
আরাফঃ নিহুপাখি আমি তোমাকে নিজের করে নিতে চাই।আমার ভালবাসার রংধনু দিয়ে তোমাকে রাঙিয়ে দিতে চাই।
আরাফের কথা শুনে নিহু লজ্জা পেয়ে যায়। আরাফ নিহুত উত্তরের অপেক্ষায় থাকে।নিহু শক্ত করে আরাফকে জড়িয়ে ধরে।আরাফ তার উত্তর পেয়ে যায়। নিহুকে কোলে তুলে নেয়।নিহু লজ্জায় আরাফের বুকে মুখ লুকায়।
সমাপ্ত-
(এটা আমার লেখা প্রথম রানিং গল্প ছিল।ধৈর্য ধরে গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে)