#ভালো_থাকুক_ভালোবাসা
#অন্তিম_পর্ব
#লেখক_দিগন্ত
লিলি সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে যায়। আজ তার বৌভাত। লিলি রান্না বসিয়ে দেয়। কাজের মেয়ে এসে তাকে সাহায্য করছিল। লিলি কোন ভাবনায় বুদ ছিল। লিলিকে কোন ভাবনায় বুদ থাকতে দেখে কাজের মেয়ে বলে,
-“কি হয়েছে আফামনি? আপনাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?”
লিলি বলে,
-“না না কিছু না। আমি আসছি একটু তুমি রান্না করতে থাকো।”
লিলি নিজের রুমে চলে আসে। বিহান কাল রাত থেকে বাড়ি ফেরেনি। লিলির এখন খুব চিন্তা হচ্ছে বিহানকে নিয়ে।
আয়াতও রুমে আসে। লিলিকে দেখে বিরক্তিভাব চলে আসে তার মুখে। আয়াত ফিরে যেতে নেয় তখন লিলি জিজ্ঞাসা করে,
-“আয়াত তোমার ভাইয়া কোথায় জানো?”
আয়াত বলে,
-“না আমি জানি না কিছু। কাল রাতে কথা হয়েছিল তারপর আর কথা হয়নি।”
-“আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হবে।”
আয়াত লিলির কথা শুনে বিরক্ত হয়। বিড়বিড় করে বলে,
-“যা খারাপ হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। আর কি খারাপ হবে?”
-“কিছু বললে?”
আয়াত না বলে চলে যায়। লিলি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
____
দুপুর হয়ে গেছে। রোদের তীব্রতা বেড়ে গেছে। বরকত ইসলাম আয়াতকে ডেকে বলে,
-“তোর ভাইয়ার কি খবর? লোকজন সবাই আসছে। সবাই তো এবার সন্দেহ করবে।”
আয়াত বিহানকে ফোন করে কিন্তু ফোনটা নট রিচেবেল বলছে। আয়াত বারবার ফোন করে কিন্তু কোন লাভ হয়না।
কিছুক্ষণ পর লিলির পরিবারের সবাই চলে আসে। লিলি নিজের মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তারা লিলিতে শান্তনা দিয়ে বলে,
-“চিন্তা করিস না মা। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
লিলি চোখের জল মুছে সবাইকে বসতে বলে। আয়াতের কাছে লিলির সবকিছু ন্যাকামো মনে হয়।
লিলিকে কেন জানি তার একদম সহ্য হচ্ছেনা।
এরমধ্যে বরকত ইসলামের ফোনে একটি কল আসে। বরকত ইসলাম ফোন রিসিভ করতেই শুনতে পান,
-“আপনার ছেলের খুব বড় একটি এক্সিডেন্ট হয়েছে কাল রাতে। ডাক্তাররা তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারলাম না। আপনারা হসপিটালে সসে তার লাশ নিয়ে যান।”
কথাটা শুনে বরকত ইসলামের পায়ের তলার মাটি সরে যায়। তার পুরো শরীর কাপতে থাকে। নিজের ছেলের মৃত্যুর খবর কোন বাবাই বা সহ্য করতে পারে। বরকত ইসলামের পুরো শরীর অবশ হয়ে আসে। আয়াত তার এই অবস্থা দেখে কাছে এসে বলে,
-“কি হয়েছে আব্বু? তুমি এভাবে কাপছ কেন?”
বরকত ইসলাম বলেন,
-“তোর ভাইয়া…”
পুরো কথা শেষ করার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বরকত ইসলাম। আয়াত আব্বু বলে চিৎকাত করে। লিলিও ছুটে আসে।
_____
হাসপাতালে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে আয়াত। একে তো নিজের ভাইয়ের মৃত্যু তার উপর বাবার শরীরের এইরকম অবস্থা। সবমিলিয়ে আয়াতের অবস্থা এখন বেশ শোচনীয়। লিলি পাশে বসে আছে। সেও কাঁদছে। লিলির বাবা আফসোস করে বলেন,
-“আমার মেয়েটার ভাগ্য এত খারাপ ছিল ভাবতেও পারিনি।”
আয়াতের কেমন অসহ্য লাগছিল সবাইকে। এমন সময় ডাক্তার এসে তাকে এমন একটা খবর দেয় যেটা শোনার জন্য সে একেবারে প্রস্তুত ছিলনা।
-“Sorry to say, your father is no more.”
আয়াতের মাথায় বর্জ্যপাতের মতো শব্দগুলো ঘুরতে থাকে। এমনটা কিছুতেই হতে পারে না। ভাগ্য এতটা খারাপ হতে পারে না। আয়াতের মুখের সব ভাষা আজ হারিয়ে গেছে। বলার মতো কিছু আর খুঁজে পাচ্ছেনা। সবকিছু কেমন মুখে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।
লিখন হোসেন এগিয়ে এসে বলেন,
-“শক্ত হও মা। এখন ভেঙে পড়লো চলবে না।”
ডাক্তার বলেন,
-“আপবার বাবার এর আগেও একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এইবারেও ওনার অবস্থা খুব ডিটারিয়েট হয়ে গিয়েছিল। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু…”
আয়াত অনুভূতিশূন্য হয়ে গিয়েছিল। কোথা থেকে কি হয়ে গেল সে বুঝতে পারছে না। ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর বাবা আর ভাইকে অবলম্বন করে বেঁচে ছিল বেচারি মেয়েটা। এখন এভাবে সবাইকে হারিয়ে ফেলে তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।
আয়াত না পারছে চিৎকার করে কাঁদতে আর না পারছে কিছু বলতে। চুপচাপ বসে রয়েছে।
______
নিজের বাবা আর ভাইয়ের লাশের সামনে বসে আছে আয়াত। তার দৃষ্টি তার মৃত বাবা আর ভাইয়ের দিকে। তার যেন এখনো কিছু বিশ্বাসই হচ্ছিল না। ভাগ্য এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে না। তার মনে হচ্ছে সবকিছু যেন স্বপ্ন।
জানাজার জন্য লাশগুলো নিয়ে যাওয়া হবে। আয়াত শেষবারের মতো তার বাবা-ভাইকে দেখে নেয়। আর কখনো হয়তো দেখতে পারবে না।
____
পুরো একটা দিন বাবা আর ভাইকে ছাড়া কা’টিয়ে দিল আয়াত। এখনো সে স্বাভাবিক হয়নি। লিলিকে ওর বাবা-মা নিয়ে গেছে। আয়াতকে নিয়ে যেতে চাইলে সে যায়নি। নিজের বাড়ি ছেড়ে যেতেও চায় না।
পুরো বাড়িতে নিঃশব্দে বিচরণ করছে আয়াত। পুরো বাড়িটা আজ ফাঁকা৷ অথচ কিছু দিন আগেও ভাই-বোনের খুনশুটিতে মুখর থাকত পুরো বাড়ি। আয়াত স্মৃতির গহীনে ডুব দেয়। সবকিছু তো কত সুন্দর আর স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল। এভাবে নিজের বাবা ভাইকে হারানোর পর আয়াত এখন এই পুরো পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা।
______
এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। আয়াত খবর পায় লিলির নাকি আবার বিয়ে হয়েছে। তাও আবার তার প্রেমিক শুভ্রর সাথে। সবাই ভালো আছে, ভালো নেই শুধু আয়াত। আয়াতের জীববে সবকিছু এলোমেলো। তবুও আয়াত চায় ভালোবাসা ভালো থাকুক, ভালোবাসার মানুষগুলো ভালো থাকুক।
আয়াত ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখত কোন রাজপুত্র পক্ষীরাজ ঘোড়ায় করে তার জীবনে আসবে।
আয়াত জানে না এমন কিছু হবে কিনা। কিন্তু তার খুব প্রয়োজন এখন এমন কাউকে। যার হাত ধরে সে সব কষ্ট ভুলে যেতে পারবে।
_____
দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে,
আয়াত তার বাবা ও ভাইয়ের রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। এখন সে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছে। আগের থেকে ভালোই আছে আয়াত।
জীবনে শুধু আপন মানুষের অভাব। আশেপাশে খুব কাছের মানুষকে নিয়ে কতো সুখে আছে। অথচ আয়াত এখনো একা। তার সব ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেছে তার জীবন থেকে।
এসব ভেবে অবচেতন মনে হাঁটছিল আয়াত। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দিতে যাবে তখনই কেউ এসে তাকে সরিয়ে দেয়। কঠোর গলায় বলে,
-“দেখে চলতে পারেন না? আরেকটু হলে কি হতো ভাবতে পারছেন?”
আয়াত তাকিয়ে দেখে একজন সুদর্শন যুবক অনর্গল তাকে বকাবকি করে চলেছে। আয়াত চোখ নামিয়ে নেয়। হয়তো বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে প্রেমে পড়ে যাবে। আয়াত কিছু না বলে চলে আসতে নিলে যুবকটি বলে,
-“কতো অকৃতজ্ঞ। আমি বাঁচালাম আর সামান্য থ্যাংকস টুকু বলল না।”
আয়াত পিছনে ফিরে থ্যাংকস বলে। যুবকটিও তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াত একটি মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে চলে যায়।
এখান থেকেই হয়তো শুরু হবে কোন নতুন ভালোবাসার গল্প। আবার হয়তো নাও হতে পারে। পরিশেষে যাইহোক ভালো থাকুক ভালোবাসা ❤️
(সমাপ্ত)
[