#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৩
#অদ্রিতা_জান্নাত
গাঁয়ের মধ্যে ঠান্ডা কিছু পরতেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম ৷ আশেপাশে তাকাতেই বুঝলাম সকাল হয়ে গিয়েছে ৷ নিজের দিকে একবার তাকিয়ে আবার পাশে তাকালাম ৷ সঙ্গে সঙ্গে অবশিষ্ট পানি আবার পুরোটা ঢেলে দিলেন আমার গাঁয়ে ৷ তারপর অরূপ ভাইয়া বিরক্তির সাথে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,
“তোমাকে এখানে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঘুমানোর জন্য আনা হয় নি ৷ যাও কাজে যাও ৷”
আমি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,,,,,,,,
“সকাল বেলা আমার গাঁয়ে পানি কেন ঢাললেন?”
“সেটা আমার ইচ্ছা ৷ পানি না ঢেলে কি ধরে ধরে তোমাকে ঘুম থেকে ওঠাবো? তোমার এরকম মনে হওয়াটা একটা বোকামো ৷ কারনটা হয়তো তুমি জানো ৷ এখন যাও ৷”
বলেই সামনে থেকে সরে গেলেন ৷ আমি কিছু না বলে ভিতরে চলে এলাম ৷ ভেজা অবস্থায় থাকতে খারাপ লাগছে এখন ৷ সামনে গিয়ে আলমারি খুলে দেখি বেশ কয়েকটা মেয়েদের জামা কাপড় রয়েছে ৷ সেখানে হাত দিতে গেলেই অরূপ ভাইয়া এসে হাত টেনে ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে রেগে বলতে লাগলেন,,,,,,,,
“আলমারি খোলার সাহস কোথায় পাও তুমি?”
“আমি তো…”
“অধিকার ফলাতে আসবে না বুঝেছো? এই রুম আমার এই রুমের সব জিনিস আমার ৷ আমার জিনিসে হাত দেয়ার পার্মিশানও দেই নি আমি তোমায়৷”
আমাকে বলতে না দিয়ে অরূপ ভাইয়া কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই আমি বললাম,,,,,,,,,
“অধিকার তো আছেই আমার ৷”
উনি ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন ৷ আমি আবার বললাম,,,,,,,,,,
“তিন মাস আপনি না চাইলেও তো আমাকে আপনার বউ হয়ে থাকতে হবে ৷ সেখানে অধিকার কেন থাকবে না?”
“কারণ আমি তোমাকে সেই অধিকার দেই নি ৷ আর কখনো দিবও না ৷ তুমি অন্যের সামনে বউ সেজে থাকলেও আমার সামনে তার কোনো দরকার নেই ৷”
আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে ৷ উনি আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল আচড়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,
“এই খানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো? চেঞ্জ করে নিচে গিয়ে বাড়ির কাজ করো ৷”
“চেঞ্জ করবো কীভাবে? আপনি তো একটা জামাও নিতে দিলেন না ৷ তাহলে কি পরবো আমি?”
“নিজে কি পরবে তার ব্যবস্থা তুমি নিজেই করো ৷ আমি কেন টেনশান করবো এসব বিষয় নিয়ে? যা ইচ্ছা করো ৷ আর হ্যাঁ আজ বাড়ির সব রান্না তুমি করবে ৷”
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি ৷ উফ কি অসহ্যকর একটা ছেলে ৷ এই ছেলেটাকে ভালোবেসেছি আমি? নিজের উপরই রাগ উঠছে এখন ৷ রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগলাম ৷ হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,,,,,,,,,
“কাকে খুঁজছো?”
পিছনে তাকিয়ে আশাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ৷ ওকে দেখে বললাম,,,,,,,,,
“শোনো আমাকে কোনো ড্রেস এনে দিতে পারবে? চেঞ্জ করবো তাই ৷”
আশা আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে বললো,,,,,,,,,,,
“তোমার এরকম অবস্থা কেন? আর এভাবে ভেজা অবস্থায় ঘুরছো কেন?”
“চেঞ্জ করবো দেখেই তো ড্রেসের কথা বললাম ৷ তুমি একটু ব্যবস্থা করো না ৷ এভাবে থাকতে ভালো লাগছে না আমার ৷”
“আচ্ছা ওয়েট আসছি আমি ৷”
বলেই আশা চলে গেল ৷ কিছুক্ষন পর আমার হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,
“তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিচে আসো ৷”
আমি মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে এলাম ৷ চেঞ্জ করে এলোমেলো করে রাখা রুমটা গুছিয়ে নিচে চলে গেলাম ৷ আশেপাশে কোথাও অরূপকে দেখতে পেলাম না ৷ না জানি কোথায় আছে ৷ বলে তো গেলো আমাকে রান্না করতে ৷ কিন্তু করবো টা কীভাবে? কিচেনের দিকে যেতেই দেখি নয়না আন্টি কাজ করছে ৷ আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে উনি আমাকে এক পলক দেখে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,
“তুই এখানে কেন? যা একটু কষ্ট করে নিয়ে খেয়ে নে ৷ আচ্ছা দাঁড়া আমি আশাকে বলছি ৷”
বলেই উনি আশাকে ডাকতে নিলে আমি বললাম,,,,,,,,,
“আরে থাক না ৷ আমি খাবো না ৷ ইচ্ছে করছে না প্লিজ৷”
“এটা বললে হবে বল?”
“আই সোয়ার আমার একটুও খিদে পায় নি ৷ প্লিজ আন্টি জোর করো না ৷”
উনি একপলক আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে কাজ করতে করতে বললেন,,,,,,,,
“আমি তোর এখনো আন্টি হই?”
দাঁত দিয়ে জিভ কেটে একটু হেসে বললাম,,,,,,,
“ওহ সরি সরি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ৷ আর বলবো না ৷ কিন্তু কি বলে ডাকবো?”
“আমি কি তোর মা হতে পারি না?”
“সেটা কেন হবে? তুমি তো আমার ভালো মা ৷”
বলেই তাকে একসাইড দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম ৷ মা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,,,,,,,,
“অরূপ কোথায় রে?”
“উনি কোথায় আমি তো জানি না ৷”
“সে কি তোকে বলে যায় নি?”
“তোমার ছেলে আমাকে বলে যাবে? এতো ভালো সে? আমাকে তো পাত্তাই দেয় না ৷ বলবে কি?”
“দেখ অরূপের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তাই সবকিছু ঠিক করে নেওয়ার দায়িত্বও তোদের ৷ অরূপকে বোঝা ৷ ছেলেটা জেনে শুনে কেন বিপদ বাড়াতে চাচ্ছে বুঝছি না ৷”
“আচ্ছা ওসব বাদ দাও তো ৷ আর বলো আজ বাড়িতে কী কী রান্না হবে?”
“কেন তুই রাঁধবি নাকি?”
“হুম চেষ্টা করবো ৷ ভাইয়া বলেছে যে ৷”
আমি আনমনেই বলে উঠলাম ৷ মা শব্দ করে হেসে বলে উঠলো,,,,,,,,
“পাগলি মেয়ে ৷ স্বামীকে ভাইয়া বলছিস?”
“উফ তোমরা না ৷ একটু তো সময় লাগবে আমার নাকি? আর তোমার ওই গুণধর ছেলে আমাকে তো মানেই না যে আমি তার বউ ৷”
“মেনে যাবে একদিন দেখিস ৷ আর শোন তোকে রাঁধতে হবে না ৷ হাত পা কেঁটে পরে বসে থাকবি ৷ তার থেকে ভালো তুই নিজের রুমে যা ৷”
“না আমি রান্না করবো ৷ তুমি বলোই না ৷ পারবো বললাম তো ৷ কেন এরকম করছো?”
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ৷ নে এপ্রোনটা পরে নে ৷ তারপর আমি দেখিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি ৷”
বলেই একটা কুকিং এপ্রোন আমার দিকে এগিয়ে দিলো ৷ আমিও পরে নিলাম ৷
“বউ ভাতের আয়োজন করতে পারি নি ৷ অরূপ মানা করে দিয়েছে ৷ রাগ করিস না মা ৷”
“রাগ করবো কেন? আমার ভাগ্যে যা আছে তাই তো হবে ৷ বাদ দাও তো তুমি ৷ কি কি করতে হবে বলে দাও আমায় ৷”
সে বেশ কয়েকটা খাবারের নাম বলে দিলো তারপর যা যা লাগবে সেগুলোও এগিয়ে দিলো আমার দিকে ৷ কীভাবে কি করবো সবটা বলে দিলো আমাকে ৷ সে অনুযায়ী কাজ করতে লাগলাম আমি ৷ বাড়িতে কখনোই নিজের হাতে পানির গ্লাস অবধি নিয়ে খাই নি আমি আর সেই আমাকে আজ এতোগুলা রান্না করতে হচ্ছে ৷ সত্যি মূহুর্তের মধ্যেই সব কিছু বদলে যায় ৷ কাল সকাল পর্যন্ত আমি ছিলাম অবিবাহিত ৷ কিন্তু আজ হয়ে গেছি এই বাড়ির বউ ৷
বেখেয়ালী ভাবে কাজ করতে গিয়েই হাতের এক প্রান্তে ছুরি লেগে কেটে গেল ৷ শাড়ির আঁচল দিয়ে সেই জায়গাটা চেপে ধরলাম ৷ তারপর আবার কাজে মন দিলাম ৷ হাতে বেশি সময়ও নেই অলরেডি ০১ টা বেজে গেছে ৷ রান্নাগুলা তো শেষ করতে হবে আগে ৷ তাই হাতের বিষয়টা নিয়ে সময় নষ্ট না করে কাজ করতে লাগলাম ৷
_______________________
রান্না শেষে রুমে এসে বিছানায় বসে পরলাম ৷ মাথাটা প্রচুর ঘুরাচ্ছে ৷ কেটে যাওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতটা ধুয়ে নিলাম ৷ এই বাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স আদো আছে কি না জানা নেই আমার ৷ ভালো মাকে বলতে গেলে ব্যস্ত হয়ে পরবে ৷ তার দরকার নেই ৷ নিচে যেতেই দেখি অরূপ বাড়িতে এসে পরেছেন ৷ কিন্তু ছিলটা কোথায় এতোক্ষন? কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলেন ৷
একটু পর নিচে নেমে উনি চেয়ার টেনে টেবিলে বসে পরলো ৷ আমি এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ একে একে সবাই এসে বসলো ৷ দীপ্ত আঙ্কেল মানে বাবা, অরূপের চাচী মানে ছোট মা আর আশা ৷ ভালো মা আমাকে চেয়ারে বসতে বললে অরূপ বলে উঠলেন,,,,,,,,
“ও কেন বসবে?”
“কেন বসবে মানে? খাবে না ও?”
মায়ের কথায় উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,,
“ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে সবাইকে খাবার সার্ভ করে গিলতে বসো ৷”
সবার সামনে এভাবে না বললেও পারতেন ৷ তবুও কিছু বললাম না আমি ৷ মাকে ইশারায় বসতে বলে একে একে সবাইকে খাবার বেড়ে দিলাম ৷ অরূপ আমার দিকে তাকালেনও না একবারো ৷ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছেন উনি ৷ সবাইকে খাবার দেয়া শেষ হলে মা আমাকে টেনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে প্লেটে খাবার দিতে দিতে বললো,,,,,,,,,,,,,,
“খেয়ে নে ৷ সকালে কিছু খাস নি ৷ অসুস্থ হয়ে পরবি ৷”
আমি একপলক অরূপের দিকে তাকালাম ৷ উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ৷ চোখাচোখি হয়ে গেল এতে ৷ সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিলাম ৷ আলতো হাতে প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করে যাচ্ছি ৷ তখনি একটা কথা শুনে চোখ তুলে তাকালাম অরূপের দিকে ৷ উনি আবার বললেন,,,,,,,,
“খাবার কে বানিয়েছে?”
“কে আবার? তোর বউ ৷ তুই বলে গেছিস আর ভাবি তোর কথা অমান্য করবে সেটা হয়?”
আশা বললো ৷ ওর কথায় উনি বললেন,,,,,,,,,
“তুই চুপ করে খা ৷ তোকে জিজ্ঞেস করি নি ৷ আর শ্রেয়া রান্না করেছে? এতো ভালো খাবার ও কীভাবে রাঁধবে?”
আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,,,,,,,,
“কেন না পারার কি আছে? আমি রান্না করতে পারি না? যদি সেটা ভেবে থাকেন তো দেখিয়ে দিলাম ৷”
“একা একা করো নি জানা আছে সেটা ৷”
বলেই খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন ৷ আমি চুপ করে রইলাম ৷ কাঁটা হাতের জন্য খেতেও পারছি না ৷ শুধু সাদা ভাত নাড়াচ্ছি ৷ আবার খেতেও ইচ্ছা করছে না ৷ তাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেই সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো ৷ আমি একটা শুকনো হাসি দিয়ে বললাম,,,,,,,,,,
“পেট ভরে গেছে তাই ৷”
বলেই উপরে রুমের দিকে চলে এলাম ৷
এদিকে অরূপ শ্রেয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে খেতে লাগলো ৷ ওকে এরকম শান্ত থাকতে দেখে ওর বাবা ওকে বললো,,,,,,,,,,,,,
“তোমার মাথায় কি চলছে বলো তো?”
অরূপ মাথা তুলে ওর বাবার দিকে তাকালো ৷ কিছু বুঝতে না পেরে বললো,,,,,,,,,
“মানে? কী চলবে?”
“সেটা তো তুমি বলবে ৷ কোথায় গিয়েছিলে সকালে? আর বউ ভাতের আয়োজনও করতে দিলে না ৷ কি চাও তুমি?”
অরূপ রেগে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,
“তোমাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য নই আমি ৷ আমার চাওয়ার কোনো গুরুত্ব দিয়েছো তোমরা? ওই মেয়েটাকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছো ৷ আর কি করতে হবে আমায়?”
“ঠিক ভাবে কথা বলো ৷ ও এই বাড়ির বউ তোমার বউ ৷ তাই এভাবে লাগাম ছাড়া কথা দ্বিতীয়বার মুখে আনবে না ৷ আরেকটা কথা কি যেন বললে? তোমার চাওয়ার কোনো গুরুত্ব দেই নি আমরা তাই না? তো মায়ার সাথে তোমার বিয়েতে রাজি কেন হয়েছিলাম?”
অরূপ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে রাগে ফুসতে লাগলো ৷ অরূপের বাবা খাবার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,,,,,,,,,,
“যা ইচ্ছা করো ৷ কিন্তু মায়াকে এই বাড়িতে আমি আর এলাউ করবো না ৷”
#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__০৪
#অদ্রিতা_জান্নাত
অরূপের বাবার বলা সব কথাই শুনেছি আমি ৷ উনি ঠিক ওনার দিক থেকে ৷ অরূপও ঠিক তার দিক থেকে ৷ কাউকে ভালোবাসলে কি তাকে ভুলে যাওয়া এতোই সহজ? মায়া আপু কোথায় তুই? সত্যি কি তুই বিয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিলি? নাকি তোকে সরানোর পিছনেও কেউ আছে? শুধু শুধু তুই কেন পালাবি? কোথায় তুই? উফ কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না আমার ৷ গতকাল থেকে কোনো খোঁজ খবর নেই ওর ৷ গেলটা কই? তখনি রুমের মধ্যে অরূপ আসলো ৷ আমাকে একপলক দেখে একটা ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে কাজ করতে লাগলো ৷ আহা কি ভাব? যেন সব কাজ ওনার কপালেই আছে ৷ সকালে কই গেলো? আবার এখন এখানে এসে কাজ শুরু করে দিলো ৷ একটু ভালো করেও কথা বলে না আমার সাথে ৷ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে খাটে ধপ করে বসে পরলাম ৷
উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার কাজে মন দিলেন ৷ আমি একটু জোরে কেশে বললাম,,,,,,,,
“সকালে গিয়েছিলেন কোথায়?”
ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখেই বললেন,,,,,,,
“কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি ৷”
আমি কিছু বলবো তার আগেই আমার ফোনটা বেজে উঠলো ৷ অরূপের থেকে চোখ সরিয়ে ফোন রিসিভ করে কোনো কথা বলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো,,,,,,,,,,,,
“তুমি বিয়ে করে ফেলেছো সেটা জানানোর কোনো প্রয়োজনবোধ করলে না? এটা কি করলে শ্রেয়া? আমি তো জানতাম তোমার বোনের বিয়ে সেখানে তোমার বিয়ে কীভাবে কি? শ্রেয়া কি করলে এটা?”
আমি কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম ৷ কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না ৷ ননসেন্স মার্কা সব কথা বার্তা এই ছেলের মুখ থেকেই শুনতে হবে আমায় ৷ অর্ধেকটা জেনে আসছে এখন গোয়েন্দাগিরি করতে ৷ আমি বিরক্তি সুরে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,
“কি করেছি আমি? বিয়ে তো সবারই হয় ৷ আমারও হয়েছে ৷ এখানে এতো প্রশ্নের কি আছে? ভালো লাগছে না রাখি আমি ৷”
বলেই ফোন কেটে দিলাম ৷ সামনে তাকিয়ে দেখি অরূপ আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ৷ এভাবে তাকানোর কি হলো? তার মধ্যে আবার ফোন বেজে উঠলো ৷ উফ কি এক জ্বালা ৷ না ধরা পর্যন্ত দিতেই থাকবে ৷ রিসিভ করে একপ্রকার ঝাঝালো গলায় বললাম,,,,,,,,,,
“তুহিন আপনার সমস্যাটা কি?”
“তুমি বিয়ে করেছো এটাই আমার বিরাট সমস্যা ৷”
এই ছেলের সাথে পরিচয় হয় আমার মায়ের মাধ্যমে ৷ আমার মায়ের বান্ধবীর ছেলে ৷ বেশ ভালো আর ভদ্র স্বভাবের কিন্তু মাঝেমধ্যে উদ্ভট সব কথা বার্তা বলে ৷ যার জন্য একে পুরাই বিরক্ত লাগে আমার কাছে ৷ নিজেকে শান্ত করে বললাম,,,,,,,,,,
“আমার বিয়ে হয়েছে এখন এক কাজ করুন আপনিও বিয়ে করে নিন ৷”
“তুমি কোথায় আছো বলো? এক্ষুনি আসছি আমি ৷”
কিসের মধ্যে কি বলছে ৷ রেগে বললাম,,,,,,
“বিয়ে করবেন আপনি ৷ সেখানে আমাকে দিয়ে কি করবেন?”
” বা রেহ যাকে বিয়ে করবো তাকে লাগবে না?”
“কিইই?” (চেঁচিয়ে)
অরূপের দিকে তাকালাম আমি ৷ সেইম স্টাইলে তাকিয়ে আছেন উনি ৷ চোখ সরিয়ে তুহিনকে আবার বললাম,,,,,,,,
“নেশা টেশা করেছেন নাকি? পাগলের মতো কি বলছেন এসব? ধূর একদম আর ফোন দিবেন না আমায় ৷”
বলেই ফোনটা কেটে ফোন বন্ধ করে দিলাম ৷ রুম থেকে চলে যেতেই পিছন থেকে অরূপ ডেকে বলে উঠলো,,,,,,,,,,
“কার সাথে কথা বলছিলে?”
আমি পিছনে একবার ঘুরে তার দিকে তাকিয়ে তাকে ব্যাঙ্গ সুরে বললাম,,,,,,,,,,,
“কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি ৷”
বলেই রুম থেকে বাইরে চলে এলাম ৷ এখন দেখুক কেমন লাগে হুহ!
___________________
রাত ০৮ বাজে ৷ অরূপ বাহির থেকে নিজের রুমে এসে দেখে রুমের চারপাশ পুরো অন্ধকার ৷ আলোর কোনো ছিটফোঁটাও নেই ৷ ওর বাবার সাথে ঘন্টা খানিক আগে অফিসের বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল ৷ ওর বাবা ওকে অফিসে জয়েন হতে বলেছে ৷ সেই ব্যাপারেই কথা বলছিলো ৷ কিন্তু রাতের বেলা রুমের মধ্যে অন্ধকার দেখে অবাক হলো ও ৷ ভিতরে গিয়ে লাইট অন করলো অরূপ ৷ কিন্তু আশেপাশে কোত্থাও শ্রেয়াকে দেখতে পেল না ৷ রুমের চারপাশে চেক করে ওয়াশরুম চেক করেও পেল না শ্রেয়াকে ৷ রুম থেকে বের হতেই ওর চোখ গেলো ব্যালকনির দিকে ৷ কিছু একটা আছে মনে হচ্ছে ৷ সামনে এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনির গ্লাস খুলে দেখে শ্রেয়া নিচে শুয়ে আছে ৷ মেঝেতে একটা চাদর বিছিয়ে বালিশের উপর মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে ৷ খানিকটা অবাক হলো ও ৷
‘এতো তাড়াতাড়ি তাও এখানে এভাবে ঘুমানোর কি হলো? পরক্ষনেই ভাবলো যা ইচ্ছা করুক গিয়ে তাতে আমার কি? এখানে ঘুমিয়েছে ভালোই করেছে আমাকে কিছু বলতে হয় নি ৷’ ঘুরে যেতে নিয়েও কিছু একটা ভেবে শ্রেয়ার সামনে এসে এক হাঁটু ভাজ করে বসলো ৷ ভালোভাবে ওকে দেখে ডাকতে লাগলো,,,,,,,,,,
“শ্রেয়া? এই শ্রেয়া? শ্রেয়া?”
কিন্তু ও একটু নড়াচড়া অবধি করলো না ৷ অরূপ শ্রেয়ার হাত ঝাকিয়ে ডাকতে গেলেই বুঝলো ওর গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অতিরিক্ত ৷ ওর গালে হাত দিয়ে ওকে ডাকতে লাগলো ৷ তবুও কোনো রেসপন্স করলো না ও ৷ চারপাশে একবার তাকিয়ে অরূপ শ্রেয়াকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ডাক্তারকে কল করে আসতে বললো ৷ তারপর ও নিচে গিয়ে একটা বাটি করে পানি আর ছোট্ট কাপড়ের টুকরা নিয়ে আসলো ৷ পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শ্রেয়ার পাশে বসে ওর কপালে জলপট্টি দিতে লাগলো ৷ হঠাৎ ওর নজর যায় শ্রেয়ার হাতের দিকে ৷ ওর হাতটা নিয়ে ধরে দেখে ওর হাতের তালুতে বেশ গভীর ভাবে কাঁটা একটা দাগ রয়েছে ৷ রক্ত জমাট বেঁধে পুরো জায়গাটা কালো হয়ে রয়েছে ৷ ধবধবে ফর্সা হাতের তালুতে কাঁটা জায়গাটা একদম চোখে লাগছে ৷ অরূপ ওর হাত দিয়ে শ্রেয়া কাঁটা জায়গায় হাত বুলিয়ে দিল ৷ না চাইতেও কষ্ট হচ্ছে ওর ৷
দরজায় নক করার আওয়াজ পেয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে দেয় ও ৷ ডাক্তার ভিতরে এসে শ্রেয়ার চেকআপ করিয়ে দিল ৷ হাতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে একটা কাগজে ওষুধের নাম লিখতে লিখতে অরূপকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,
“হাতের কাঁটাটা কিন্তু একটু আগের মনে হচ্ছে না ৷ তবে এটা বেশ পুরাতনও না ৷ আজ কালের মধ্যেই কেঁটেছে ৷ তোমার উঁচিত ছিল ওর হাতটা ক্লিন করে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া ৷ নাহলে ইনফ্যাকশান হতে পারতো ৷ এতোটা কেয়ারলেস কীভাবে হলে অরূপ?”
বলেই উনি অরূপের দিকে তাকালেন ৷ অরূপ আমতা আমতা করে বললো,,,,,,,
“আআসলে আঙ্কেল আমি তো জানতামই না ৷ মাত্র দেখলাম ৷”
“তোমার ওয়াইফ আর তুমি জানবে না? দেখা উচিত ছিল তোমার ৷ আর মেয়েটা দুই একদিন যাবত ঠিক মতো খাচ্ছে না ৷ তাই ও অনেকটা দুর্বল ৷ আর সেই জন্যেই ঘুমের ঘোরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে ৷ সঙ্গে জ্বরও এসেছে ৷ একটা ঘুমের ইনজ্যাকশান দিয়ে দিয়েছি আমি ৷ একটু পর ওকে জাগিয়ে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিবে তুমি ৷ আর খেয়াল রাখবে ওর ৷”
“আচ্ছা ৷”
“হুম আমি আসছি এখন ৷ কোনো প্রবলেম হলে বলো ৷”
বলেই উনি মেডিসিনের পেপারটা অরূপের হাতে দিয়ে চলে গেলেন ৷ অরূপ একটা ছেলেকে ডেকে সেই ওষুধ গুলো আনতে বলে দিলো ৷ তারপর ও নিজে নিচে গিয়ে একটা প্লেটে খাবার বেড়ে সেই প্লেটটা নিয়ে রুমে চলে এলো ৷ পানিতে কাপড় ভিজিয়ে উল্টে পাল্টে শ্রেয়ার কপালে দিতে লাগলো ৷ শ্রেয়ার জ্ঞান ফিরেনি এখনো ৷ তবে ফেরাতে হবে এখন ৷ নাহলে না খেয়েই সারা রাত কেঁটে যাবে ৷ ও শ্রেয়াকে হালকা ভাবে ডাকতে লাগলো ৷ বেশকিছুক্ষন এরকম করার পরও চোখ খুললো না ৷ হালকা নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো ৷ অরূপ শ্রেয়াকে ধরে ধরে বেডের সঙ্গে হেলান দিয়ে বসালো ৷ শ্রেয়া বসা অবস্থায়ই ঢলে পরছে বারবার ৷
টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে শ্রেয়ার মুখে কয়েকটা ছিটা দিয়ে ওকে পানি খাওয়ালো ৷ হালকা চোখ খুলে আবার চোখ বুজে নিলো শ্রেয়া ৷ অরূপ আবার ঝাকাতে শ্রেয়া বলে উঠলো,,,,,,,,
“সমস্যাটা কি? ঘুম পাচ্ছে তো ৷”
“আগে খেয়ে নাও ৷ তারপর মন ভরে ঘুমিও ৷ তোমার জন্য আঙ্কেল আমাকে কেয়ারলেস বললো ৷”
বলেই খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে ভাত মাখতে শুরু করলো ৷ শ্রেয়া কিছু বলবে তার আগেই ও শ্রেয়ার মুখে খাবার ঢুকিয়ে বললো,,,,,,,,,
“চুপচাপ খাও ৷”
“এভাবে কেউ কাউকে খাওয়ায়? একটু আদর করেও তো খাওয়াতে পারে নাকি? গোমরামুখো একটা ৷”
কথাগুলো বিড়বিড় করে বললেও অরূপ শুনতে পেলো ৷ কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ার দিকে ৷ শ্রেয়া হালকা হেসে খাবার চিবাতে চিবাতে লাগলো ৷ বাকিটা খাবার চুপচাপ শেষ করলো শ্রেয়া ৷ অরূপের হাতে খেতে খারাপ লাগে নি বরং ভালোই লেগেছে ৷ এই প্রথম ও একটা ছেলের হাতে খেলো ৷ আর সেই ছেলেটাই ওর স্বামী ৷ তৃপ্তি নিয়ে পুরো খাবারটা শেষ করলো ও ৷ অরূপ হাত ধুয়ে এসে শ্রেয়ার সামনে একটা গ্লাস ধরলো আর ওর হাতে কয়েকটা ট্যাবলেট দিয়ে বললো সেগুলো খেতে ৷ চোখ মুখ কুচকে পানিসহ ওষুধ গুলো গিলে ফেললো ও ৷ ওর কাছে ওষুধ খাওয়ার চেয়ে দ্বিতীয় কোনো কঠিন কাজ পৃথিবীতে নেই ৷ শ্রেয়াকে এমন করতে দেখে অরূপ বললো,,,,,,,,,,
“এতো বড় মেয়ে এখনো ট্যাবলেট খেতে পারো না ৷ তোমার জন্য সিরাপের ব্যবস্থা করবো?”
শ্রেয়া পানির গ্লাস পাশে রেখে মুখ ফুলিয়ে বললো,,,,,,,,,,,
“অপমান করবেন না একদম ৷ নিজে বুঝি সব কিছু পারেন ৷”
বলেই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলো শ্রেয়া ৷ অরূপ চলে যেতে নিলেই শ্রেয়া ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো,,,,,,,,,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
অরূপ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,,,,,,,,,,
“তুমি ঘুমাও ৷ আমার কাজ আছে ৷”
“এখন আবার কি কাজ আপনার?”
“তুমি অসুস্থ তাই তোমাকে কিছু বলছি না ৷ এই জন্য ভেবো না যে তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি আমি ৷”
“সেটা তো হতেই পারেন… না? প্রবলেম কি তাতে?”
অরূপ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,,,,,,,
“অনেক প্রবলেম আমার ৷ আর সব প্রবলেম হচ্ছো তুমি ৷ সব প্রবলেমের কারনও তুমি ৷ আজ দয়া করেছি দেখে ভেবো না সারাজীবন এভাবেই দয়া করবো ৷ চুপচাপ ঘুমাও ৷”
বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ অামি একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম ৷ এই ছেলেটা কখনো বুঝবে না আমায় ৷ কেন বুঝে না আমায়? আমি কি সত্যিই অনেক খারাপ? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না? ভাগ্যই আমাদের এক করলো ৷ আর এই ভাগ্যই আমাদের দূরে করে দিবে ৷ কপালে কারো ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম ৷ অরূপ আমার কপালে ভেজা কাপড় উল্টে পাল্টে দিচ্ছেন ৷ মুচকি হাসলাম আমি ৷ যতই দূরে সরে যেতে চান না কেন আমার ভালোবাসার টানে ঠিকই একদিন আমার কাছে চলে আসবেন আপনি ৷ সেই দিনটারই অপেক্ষা করছি আমি ৷ অধীর আগ্রহে বসে আছি আপনার মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটা শোনার জন্য ৷ মরার আগে অন্তত এটুকু শুনলেই শান্তি ৷
আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,,,,,,,
“তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করো ৷”
“আমি ঠিক আছি ৷ আপনি শুয়ে পরুন ৷ আমার জন্য কষ্ট করতে হবে না আপনাকে ৷”
“এতো কথা বলতে বলেছি আমি তোমায়? এটা আমার দ্বায়িত্ব ৷ তুমি চুপচাপ ঘুমাও এখন ৷”
আমি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,
“হুম ৷ আমাদের সম্পর্কটা শুধু মাত্র একটা দ্বায়িত্বের, কোনো ভালোবাসার নয় ৷”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,