#ভালোবাসা_তুই
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_সাদিয়া_আক্তার
_______________________
আমির আর ইরার সামনে এসে দাড়লো তূর্য। ইরা কিছু বলার আগেই তূর্য বলে উঠে,
—–আমার সাথে বাহিরে চল।
এমন কথা শুনেই কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে দেখে ইরা বলে,
—–কেনো? বাহিরে কেনো যাবো?
—–কিছু কথা আছে তাই।
—–যা বলার এখানেই বলেন।(রেগে)
—–না।এখানে বলাটা ঠিক হবে না।
—–তাহলে আপনি আসতে পারেন।
তাদের কথোপকথনের মাঝে আমির শুধু শুনেই যাচ্ছে।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।তবে চেষ্টারত আছে।
ইরার পাল্টা উত্তরগুলো শুনে এবার তূর্যের বেশ রাগই চড়ে উঠছে।তূর্য একটু জোর গলায় বলে,
—–বেশি বেয়াদবি করবে না।যেতে বলছি বেস যাবে।
—–আপনি এমন কে যে আমার আপনার কথা শুনতে হবে?(ভ্রু কুচকিয়ে)
এবার আমির আর কিছু না বুঝলেও এই ছেলেটি ইরাকে ডিস্টার্ব করছে তা ইরার কথা আর চাহনি দেখে বুঝার বাকি রইলো না। তাই এত শত না ভেবে আমির তূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে,
—–উনি আপনার সাথে যেতে চাচ্ছেন না তবুও জোর কেনো করছেন?
আমিরের কথা যেনো তূর্যের এক কান ভেদ করে অন্য কান দিয়ে চলে গেলো। আমিরের দিকে না তাকিয়েই ইরাকে আবার তার সাথে যাওয়ার জন্যে বলছে।ইরা শুনছেই না তাই রাগে এবার ইরার হাত ধরে টান মেরে নিয়ে যেতে গেলে আমির এবার বেশ ক্ষেপে যায়।
—–আরেএ আজব তো!এত সাহস হয় কিভাবে আপনার উনার হাত ধরার?ছাড়ুন এখুনি।( আমির)
—–এক্সকিউসমি।আপনি কে যে আপনাকে আমার সাহসের পরিচয় দিতে হবে?(তূর্য চোখ রাঙিয়ে)
—–হ্যা দিতে হবে।আপনি উনার(ইরা)সাথে এভাবে জোর করতে পারেন না।
—–আমি কি জোর করতে পারি আর না পারি সেইটা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না।আমাদের রাস্তা থেকে সরেন।নয়তো ভালো হবে না বলে দিলাম।
—–কি ভালো হবে না?তুই কি করবি শুনি।
—–কি করবো।বলেই তূর্য আমিরকে হিট করে বসে ।তা সহ্য করতে না পেরে আমিরও তূর্যেকে পাল্টা হিট করে।ইরা এসব দেখে ভয়ে কাঁপা কাঁপা অবস্থা।কিন্তু ইরা দেখতে পারে তূর্যের হাতের ব্যান্ডেজের অংশগুলো মারামারির কারণে খুলে তা থেকে হালকা করে ব্লাড বের হচ্ছে।তা দেখে চোখে জল এসে পরে নিজের অজান্তেই।ইরা জোরে চিৎকার দিয়ে বলে,
—–প্লিজ।আপনারা থামবেন?এইরকম পাবলিক প্লেসে সিন ক্রিয়েট করা বন্ধ করেন প্লিজ।
ইরার চেচানো শুনে দুইজনই থমকে দাড়ায় মারামারি বন্ধ করে দেই।ইরা রাগে গজগজ করে বাহিরে বের হয়ে রাস্তায় হাটা দেয়।তূর্য ইরার পিছনে ছুটতে থাকে।”ইরা, ইরা। দাড়াও প্লিজ।আমার কথাটা শুনো একবার”–তুর্য।ইরা শুনছে না।হঠাৎ ইরার মনে পড়ল তূর্যের হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ব্লাড বের হচ্ছিলো তখন।এই ভেবে দাঁড়িয়ে পিছনে ঘুরে তূর্যের হাতের দিকে তাকায়।দেখছে ব্যান্ডজ আরও খুলে যাচ্ছে।তাই ইরা আস্তে আস্তে হাটা শুরু করে আবার।তূর্য ইরার মতিগতি কিছু বুঝতে না পেরে সেও পিছন পিছন হাটছে।একটা ফার্মেসী দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ইরা কিছু এন্টিসেপ্টিক আর ব্যান্ডেজ কিনে নিলো।আবার হাটা দিয়ে কিছুদুর সামনে একটি পার্কে গিয়ে একটি বেঞ্চে বসে পরল।তূর্য কিছু বুঝতে পারছে না ইরার কাহিনী দেখে।
ইরা বলে,
—-এখানে বসেন।(বেঞ্চে পাশের জায়গায়টি দেখিয়ে)
তূর্য কিছু না বুঝলেও ইরার কথামতো বসে পরল।
—-আচ্ছা।কিছুই তো বুঝতে পারছি না তোমার কাজ দেখে।(তূর্য)
—-আপনার বুঝার দরকার নেই।দিন হাতটা,, দিন।
তূর্য হাতটা এগিয়ে দিলো।ইরা তূর্যের হাতের ব্যান্ডেজটি খুলে তুলো দিয়ে অতিরিক্ত বের হওয়া ব্লাডগুলো মুছে নিচ্ছে।কিছু এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে যতটা সম্ভব ব্যান্ডেজটা পেচিয়ে ক্ষত স্থানটা ডেকে দিচ্ছে।আর এইসব কাজের মাঝে তূর্য পুরোটা সময় জুরে শুধু ইরার দিকেই তাকিয়ে ছিলো তাই হয়তো এন্টিসেপ্টিক লাগানোর সময় ব্যাথাটা ফিলই করেনি।ব্যান্ডেজ লাগানোর কাজ শেষ হতেই ইরা উঠতে নিলে তূর্য বলে,
——কাল আমার বাসায় এসছিলে?
——হুম।(অন্যদিকে তাকিয়ে)
——তাহলে এভাবে চলে কেনো গেলে?আমার সাথে একবারও দেখা না করে?
——যা দেখেছি তাতেই শখ মিটে গেসে দেখা করার(মনে মনে)।ইচ্ছে হয়নি তাই।
——ওয়াট ডু ইউ মিন বাই ইচ্ছে হয়নি?(একটু রেগে)
——জানি না।আমি এখন আসি।তিথি আপনার জন্যে আই থিংগ ওয়েট করছে।সো আমাকে না আটকিয়ে নিজের কাজে যান।
——তিথি আমার জন্যে ওয়েট কেনো করবে?তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।ক্লিয়ার করে বল।
—–ক্লিয়ার করে বলার কি আছে?
—–না বল।
——কালকে তো দেখলাম কি রকম যত্ন নিচ্ছে আপনার।ভালোই।
কিছুটা চোখে পানি চলে আসে ইরার।আর কিছু বললে হয়তো চোখের পানিগুলো ধরে রাখতে পারবে না।তাই দৌড় দিয়ে পার্কের বাইরে একটা রিকশা দেখে কিছু না বলেই উঠে চলে যায়।তূর্য ইরার কোনো কথায় যেনো আজ বুঝতে পারলো না।সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
🍁
সেইদিনের ঘটনার পর থেকে ইরা চারদিন যাবৎ ভার্সিটি যায়নি।তূর্যকে ভালোবেসে যে কষ্ট পেয়েছে তা ভুলে নিজেকে শক্ত করার জন্যেই মূলত ইরা ভার্সিটি যাচ্ছে না।গেলে হয়তো তূর্য আর তিথিকে একসাথে কাপল হিসেবে দেখে মেনে নিতে পারতো না।তাই নিজেকে সে শক্ত করার চেষ্টা করছে।ফোনটাও অফ রেখেছে।এরমধ্যে একবার অন করেছিল চৈতীর সাথে যোগাযোগের জন্যে।ফোন অন করতেই তূর্য অনেকবার কল দিয়েছিল।বাট ইরা কল রিসিভ করেনি।হয়তো করলে নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যেত।আবার অফ করে দেয় ইরা চৈতীর সাথে কথা শেষ হতেই।তূর্য ইরার ফোন অফ পেয়ে অনেকবার বাসার সামনে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল।বাট ইরার দেখা পাইনি।আমিরও ইরার খোঁজে তার বাসায় আসে।আমির ইরার ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ছেলে শুনে ইরার ভাই ফাহিম,মা, বাবা তাকে সাদরে আমন্ত্রিত জানিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করে।কিন্তু আমির তো শুধু ইরার জন্যে এসেছে।কিন্তু ইরা রুমের দরজা বন্ধ রাখায় আমিরও ইরাকে দেখতে পাইনি।ভিতরে ভিতরে আমিরও পুড়ছে।কষ্ট হচ্ছে ইরাকে না দেখতে পেয়ে।এই নিরাশা মুখ আর ব্যাথিত মন নিয়ে আমিরও ফিরে আসে তার বাসা থেকে।ইরাকে তো ভার্সিটি যেতেই হবে।আজ নয়তো কাল নয়তো পরশু।প্রায় পাচঁদিন পর ইরা আজ ভার্সিটি ঢুকে।কোনোরকম ক্লাস করেই খুব দ্রুত বেরিয়ে যায় যাতে তূর্যের সামনে পরতে না হয়।বাসায় চলে আসে ইরা।তূর্য খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ইরা আজ ভার্সিটি এসেছিলো। কিন্তু তার আবাশও পেলো না।এবার তূর্য বুঝতে পারছে কিছুতো হয়েছে একটা ইরা তাকে ইগনোর কেনো করছে তবে এভাবে?নাকি ইরা আসলে তাকে ভালোইবাসে না।সেদিন আমিরের সাথে এভাবে দেখার পর এখন তূর্য ভাবতে শুরু করলো নাকি সে আমিরকে লা…..না না এইটা হতে পারে না।এই বলে তূর্য কি করবে বুঝতে পারছে না।কালই ইরাকে সব বলতে হবে।
🍁
কাল ইরা আবারও কোনোরকম তূর্যের চোখ পাল্টি দিয়ে ক্লাসে ঢুকে যাচ্ছিলো তা দেখেই তূর্য পিছন থেকে ইরাকে জোরে জোরে ডাকছে।ইরা তা শুনে ক্লাসে না গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।ক্লাসে ঢুকলে হয়তো তূর্য স্যারকে বলে তাকে নিয়ে যেতে পারতো নিজের সাথে কিন্তু লেডিস ওয়াশরুমে গেলে তূর্য ঢুকবে না।তাই ইরা সেখানেই যায়।ইরা বেসিং এ নিজের চোখগুলো মুছে ঠিক করে নিচ্ছে।এত দিন কান্না করে, না খেয়ে ফেইছ কিছুটা শুকিয়ে চোখের নিজে দাগ পরে গেছে ইরার।হঠাৎ পাশে তিথিকে দেখতে পেলো সে নিজের কাপড় ঠিক করছে।ইরার কেনো যেনো রাগ উঠছে তিথিকে দেখে তাই কিছু না বলেই নিজের কাজ করছে।হঠাৎ তিথির ফোন বেজে উঠে। তিথি ফোন রিসিভ করেই বলে—“হ্যালো, বলো জান।একটু ওয়াশরুমে এসেছি।হ্যা আসছি।”
এগুলো শুনে ইরার যেনো রাগ চঙে এখন।বের হতে নিলেই তিথি ফোনে আবারও বলে,”আচ্ছা দাড়াও না রনি।আসছি তো বাবা।” এই কথা শুনে ইরা একটু থমকে দাড়ায়। তিথি ইরাকে দেখে জিজ্ঞেস করে বলে,
——কেমন আছো ইরা?
——হুম।ভালো আপু।
ইরা কিছুই বুঝতেই পারছে না।বুঝার জন্যে তিথির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
——রিলেশন কতদিনের আপনাদের আপু?
তিথি লজ্জা পেয়ে কিছুটা মুচকি হেসে বলে,
——তিনবছরের।কি আর বলবো ইদানীং বাসা থেকেও বিয়ের জন্যেও খুব প্যারা দিচ্ছে।রনিকে বলছি তবুও কথা বুঝতে চাইছে না আমার।শুনো তোমাকে বলি তুমি যদি রিলেশন করো অন্তত বুঝে করবে।কোনো বেক্কলের সাথে যেও না।
—–হুম।ইরা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে।তাহলে কি তিথির সাথে উনার কোনো সম্পর্ক নেই?তাহলে সেদিন ওইটা কি ছিলো আমি যেটা দেখলাম।তাহলে কি আমি ভুল ভেবেছি।আচ্ছা জিজ্ঞেস করেই দেখি তিথি আপুকে।(মনে মনে বলছে)
—–তূর্য ভাইয়ার সাথে আপনার ফ্রেন্ডশিপ কবে থেকে?
—–আরে ওই ছাগলটা?ওই ছাগলটার কথা আর বলোই না।আমাদের ফ্রেন্ডশিপ অনেকদিনের।
হঠাৎ তূর্যকে ছাগল বলাই ইরার চাহনিক দেখে তিথি আবারও বলে উঠে,
—–তূর্য আমার ভাইয়ের মত।সে যেনো কার প্রেমে পরে মাতোয়ারা হয়ে আছে আর তাকে বলতেই পারছে না তাই ছাগল বলেছি ওই তূর্যটাকে।বলেই হি হি করে হাসতে থাকে।
এবার ইরার কাছে সবই পরিষ্কার। হায়রে!তিথি আর তূর্য ভাই বোনের মতো আর আমি কি ভেবে বসেছি?এইটা কি করলি ইরা।বলেই নিজের জ্বিহব্বায় কামড় দিলো।আর আফসোস করছে।ইরা আর কিছু না ভেবে তূর্যের খোঁজে দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে আর কিছু না বলে।তিথি কিছুটা অবাক হয় ইরার কান্ড দেখে।
🌷
তূর্য সেই কখন থেকেই ইরাকে খুঁজে যাচ্ছে বাট পাচ্ছে না।দুর থেকে দেখতে পেলো ইরা তো তার দিকেই আসসে তাও পায়ের গতি বারিয়ে।তা দেখে তূর্যও ইরার দিকে ছুটে যায়।তূর্য ইরাকে এতোদিন পর দেখতে পেয়ে আর কিছু না ভেবেই হাপাতে হাপাতে বলে,
—–আই লাভ ইউ ইরা।আই লাভ ইউ সো মাচ।
হঠাৎ তূর্যের মুখে এভাবে শুনে ইরার চোখ কপালে উঠে যায়।ভাবি নি তূর্য তাকে এভাবে আচানাক বলে দিবে।লজ্জায় ইরা লাল হয়ে যাচ্ছে।তূর্য ইরার উত্তর না পেয়ে কিছুটা ভয়ের স্বরে আবারও বলে,
—–তুমি কিছু বলবা না?তার মানে আমি কি ধরে নিবো “না”?
-ইরা লজ্জায় কিছুই বলতে পারছে না।চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছে ঠাই মেরে এখনো।
—–হুম।বুঝতে পেরেছি।(মন খারাপ করে)।আর কখন আমাকে দেখতে পাবে না আজকের পর থেকে।অনেক জালিয়েছি তোমাকে আর জালাবো না।বলেই চলে যেতে নিলে ইরা তূর্যেকে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
—–না।প্লিজ যাবেন না।
তুর্য প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
—–কেনো
—–কারণ আমিও।
তূর্য ইরার একটু কাছে গিয়ে বলে,
—–আমিও মানে?
ইরা আস্তে করে বলে,
—-আমিও আপনাকে ভালোবাসি।
তূর্য শুনতে পেলেও একটু দুষ্টমি করে বলে,
—-কি বললে শুনতে পায়নি?(কানটা ইরার মুখের কাছে এনে)
—–হয়েছে।আর পারবো না বলতে।আমি জানি আপনি খুব ভালো করেই শুনেছেন।
তূর্য হেসে ইরাকে জড়িয়ে ধরতে নিবে কিন্তু সামনে থেকে রনি,তিথি,চৈতী, রিয়াদের হাসির শব্দে ঘোর কাটে ইরা আর তূর্যের।সবাই হাসাহাসি শুরু করে দেই।তা দেখে ইরা আর তূর্য দুইজনেই লজ্জা পেলেও তূর্য কিছুটা রেগে যায় তাদের এই সুন্দর মোমেন্টটাও নষ্ট করতে চলে এল তার বদমাশ ফ্রেন্ডগুলো।
__________________
চলবে🌷