#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব – ২
ধ্রুব সবেমাত্র অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। গরমে তার পুরো শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। একটু ঠান্ডা পানি খাওয়া দরকার। ধ্রুব ফ্রিজ খুলে একটা বোতল হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা পানি শেষ করে ফেললো। আহ! এবার একটু শান্তি লাগছে। এবার একটু শাওয়ার নিতে হবে। ধ্রুব ঘরের দিকে এগুতেই সামনে রূপাকে দেখতে পেল। এদিকে ধ্রুব কে দেখতেই পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল রূপার। নিজেকে সামাল দিয়ে সে এগুলো রান্নাঘরের দিকে।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ধ্রুব গোছলের জন্য যখন টাওয়েল খুঁজে পাচ্ছিলো না। তখন তার রাগে উঠে গেল সপ্তম আসমানে। রাগে গজগজ করতে করতে সে রূপার উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। আজ ওই মেয়েটাকে কে বাঁচাবে তার হাত থেকে?
আজ দুইদিন হলো রূপা রান্না ঘরে আসেনি। আজ কি রান্না যায়? আচ্ছা মাছ ভাজি করলে কেমন হয়? হুম! এটাই ঠিক হবে। রূপা মনের সুখে মাছ ভাজছে। আজ মনটা তার খুব ভালো। হবেই বা না কেন? আজ যে সে তার বাবার সাথে কথা বলতে পেরেছে। এ’কদিন খুব কষ্টে দিন পার করেছে সে। একদিকে দ্বীপকে না পাওয়ার কষ্ট, আর অন্যদিকে বাবা, বোনের সাথে কথা বলার তীব্রগম্ভীর কষ্ট যেন তার শরীরের সাথে এতদিন গেথে ছিল। তবে আজ তার বাবার সাথে কথা বলতে পেরে মনটা কিছুটা হলেও ভালো হয়েছে। বাবার কাছ থেকে অনেক কথা শুনেছে সে। তার সৎ মা আর তার মেয়ে নাকি তাকে অনেক কোটু কথা বলে গালি দিয়েছে। কিন্তু এতে কোনো ক্ষোভ নেই রূপার। তিনি যায় বলুক না কেন? সে তো তার মা! হোক না সে সৎ মা। এতবছর ধরে তো তিনিই ওদেরকে আগলে রেখেছেন। এইটুকুও বা কে কার জন্য করে?(লেখক মাহমুদ)
হঠাৎ চুলে টান পড়লে পিছন ঘুরে তাকাল রূপা। ধ্রুবকে এমন রাগান্বিত চোখ দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল তার। এবার কি ভুল করলো সে? তার জানা মতে তো সে কোনো ভুল করেনি। তাহলে কেন এতটা রেগে আছে ধ্রুপ তার উপর?
রূপা ভয়ে আমতাআমতা করে বললো
– ‘ইয়ে মানে, আপনার কি কিছু লাগবে?’
ধ্রুব কোন উত্তর দিল না। রূপার চুল আরো শক্ত করে ধরলো সে। রূপা চুলের ব্যাথায় কেঁকিয়ে উঠলো। ধ্রুব রাগী কন্ঠে বললো,
– ‘তোর কি এখনও কোনো আক্কেল জ্ঞান হয়নি? তুই কোন সাহসে আমার জিনিস পত্রে হাত দিতে যাস? এত সাহস তুই পাস কোথায়? আমি তোকে বলেছি না? আমার কোনো জিনিসে হাত দিবি না। তবুও কেন তোর আমার জিনিসপত্রে হাত দিতে হয়?’
ধ্রুবের কথাগুলো শুনে কিছুটা অবাক হলো রূপা। উনি কোন জিনিসের কথা বলছেন? সে তো আজ তার কোন জিনিসে হাত দেইনি। তাহলে কিসের কথা বলছেন উনি?
– ‘জি, আমি তো আজ আপনার কোনো জিনিসে হাত দেইনি। আপনার মনে হয় কোথাও ভুল….’
– ‘তোর এত বড় স্পর্ধা? আমার মুখের উপর তর্ক করছিস? মুখে খুব বলি ফুঁটেছে না? দাঁড়া! তোর মুখের বলি এখনই ছেটাচ্ছি।’
বলেই টগবগে হয়ে উঠা গরম তেলের ভিতরে রূপার হাত চুবিয়ে দিল ধ্রুব। রূপা গরম তেলের তাপ সহ্য না পেরে চিৎকার দিয়ে কেঁকিয়ে উঠল। ধ্রুব তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো,
– ‘চিৎকার দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আজ বাড়িতে কেউ নেই। কেউ আজ তোকে আমার হাত থেকে বাচাতে পারবে না। এর আগে বেশ কবার তোকে বলেছি আমার মুখের উপর তর্ক করলে ভয়ানক ভয়ানক শাস্তি ভোগ করতে হবে। সেদিনের কথা মনে নেই? তোকে বাইক থেকে নিচে ফেলে দিয়েছিলাম। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সবকিছু ভুলে গেছিস? নাকি আরো মনে করিয়ে দেবো?’
রূপার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। সে সাথে হাতটাও জ্বলতে জ্বলতে ছায় হয়ে যাচ্ছে। রূপা ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ধ্রুব ওর হাতটা ছেড়ে দিল। রূপা আর এক মুহূর্ত দেরী না করে ঠান্ডা পানিতে হাত চুবিয়ে দিল। ধবধবে সাদা হাতটির কী করুণ অবস্থা নাই না করেছে ধ্রুব। রূপার হাতের চামড়াগুলো বেশ খানিকটা ফুলে গিয়েছে। সাদা হাতটি লালে ধারণ করেছে। আচ্ছা সে জীবনে কী দোষ করেছিল যার শাস্তি তার এমন তীলে তীলে পেতে হচ্ছে?
– ‘একটা কথা সারাজীবন মনে রাখবি। ধ্রুব মাহমুদ এর সাথে তর্কে লাগা মানে নিজের জীবন নিজেই বলি দেয়া। এতক্ষণে কিংবা এতদিনে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিস আমি কী কী করতে পারি?’
কথাগুলো বলেই চলে যাচ্ছিলো। কি মনে করে আবারও থেমে গিয়ে বললো,
– ‘টি টেবিলের উপরে এক পাতা ব্যাথার ঔষধ আর মলম রাখা আছে।’
বলেই একমুহূর্ত দাঁড়াল না সে। হনহন পায়ে চলে গেল ঘরের দিকে।
রূপা তার পোড়া জায়গায় মলম দিচ্ছে, আর বার বার ফু দিচ্ছে। হাতের যন্ত্রণায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার। ধ্রুব কেন তার সাথে এমনটা করে সেটা সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। তার সাথে তো কোনো ওর পারসোনালি শত্রুতা নেই। তাহলে কেন তাকে এতটা অত্যাচার করে? মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা এখানেই শেষ করে ফেলি। কিন্তু দ্বীপ! ওর কথা ভেবে আর এই স্টেপ নিতে পারি না। আচ্ছা আমি কী মানুষ না? আমার কী কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছা নেই? কেন আমার বাবা মায়ের কথা শুনে এই লোকটার সাথে বিয়ে দিলো? আমার ইচ্ছার কী কোনো মূল্য নেই? দ্বীপ কী খারাপ ছেলে ছিল? একদমই না। সে তো আমাকে খুব ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসলে ভুল হবে। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে সে আমাকে। এটা জেনেও কেন বাবা এমন একটা পদক্ষেপ নিলো? তার কাছে একবার মতামত নিলে কী কোন ক্ষতি হয়ে যেত? আমি কী মানুষ নই?
রূপা কথাগুলো বলছে আর হাতে মলম লাগাচ্ছে। হাতের যন্ত্রণা কিছুতেই কমছে না তার। এখন কী দিলে জ্বালাপোড়া কমবে? ভাবতে ভাবতেই বরফের কথা মনে পড়লো তার। রূপা ফ্রিজ খুলে কয়েক টুকরো বরফ হাতে নিলো। এরপর পোড়া জায়গায় বরফগুলো রেখে দিলো। হাতে বরফ দিয়ে কিছুটা হলেও যন্ত্রণা কমেছে ওর।
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুললেই দেখতে পেল ফারজানা বেগম আর নিলু এসেছে। রূপা ঠোঁটের কোণায় হাঁসি ফুঁটিয়ে বললো,(লেখক মাহমুদ)
– ‘মা এসেছেন? কোথায় গিয়েছিলেন? আমি তো আপানাকে বাড়ির কোথাও খুজে পায়নি।’
ফারজানা বেগম ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
– ‘আরে পাগলি মেয়ে আমি তো বাজারে গিয়েছিলাম। সামনে তো ঈদ। তাই ভাবলাম তোদের সবার জন্যে কিছু কিনে আনি।’
– ‘কী দরকার ছিল মা? শুধুশুধু টাকা……’
– ‘বাহ! আমার মেয়েটা তো দেখছি চটজলদি সংসারীক হয়ে গিয়েছে। আমি তো এমন একটা মেয়েকেই ছেলের বউ হিসেবে চাচ্ছিলাম। তবে তুই যায় বলিস না কেন, তোদেরকে বিয়ের সময় কিছুই দিতে পারিনি। অবশ্য তখন আমাদের ভালো অবস্থা ছিল না। তোর শ্বশুর তখন মারা গিয়েছিলেন। বাড়ি চালানোর মত টাকা ছিল না। কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। ধ্রুব এখন চাকরিবাকরি করে। বলতে গেলে এখন আর কোনো অভাব নেই আমাদের। আর তুইও আমাদের ঘরের লক্ষি হয়ে এলি আর আমার ছেলের বিজনেসটারও এখন খুব উন্নতি হয়েছে। সত্যিই তোরা দুজনই আমার ঘরের আলো।’
নিলু বললো,
– ‘ওহ! আর আমি কিছুই না?’
– ‘আর তুই তো আমার চোখের মনি।’
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঘরের বাইরে পাইচারী করছে রূপা। মনে মনে ভাবছে কিভাবে সে তার ঘরে যাবে? ওই রুমে তো ধ্রুব আছে। এখন ওকে দেখলেই হয়তো রেগে যাবে। এখন কি করবে সে? রাত তো আর কম হয়নি। চোখটা লেগে আসছে। আজকের রাতটা কি সে গেস্ট রুমে কাটাবে?
– ‘কি রে মা? এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
রূপা হাত মুচরাতে মুচরাতে বললো,
– ‘না মা আসলে…..’
হঠাৎ ফারজানা বেগমের চোখ পড়ল রূপার হাতের দিকে। রূপার কথা কেড়ে নিয়ে তিনি বললেন,
– ‘একি! হাত পুড়লো কিভাবে? মলম লাগিয়েছিস?’
– ‘ও কিছু না। ওই একটু সামান্য….’
– ‘মেয়ে বলে কী? এটা তোর কাছে সামান্য মনে হচ্ছে? আমি তো দেখতে পাচ্ছি বেশ খানিকটা হাত পুড়েছে। এমন খাম খেয়ালি হলে কী হয়?’
– ‘আসলে…..’
– ‘চুপ থাক! আর মিথ্যা বলতে হবে না।’
– ‘……………’
– ‘ধ্রুব থাকলে হয়তো এমনটা হতেই দিত না।’
ফারজানা বেগমের কথার প্রতিত্ত্যুরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রূপা। দুনিয়াটা সত্যিই অদ্ভুত! আর তার থেকে বেশি অদ্ভুত হলো পৃথিবীর মানুষগুলো। মা যদি জানতেন তার সুপুত্রই ওর হাতের এমন নাজেহাল অবস্থা করেছে! তাহলে কখনোই এই কথাটি তিনি বলতেন না। এখনও তার কানে ফারজানার বেগমের কথাগুলো বাজছে, ‘ধ্রুব থাকলে হয়তো এমনটা হতেই দিত না।’ অবশ্য মা জানেন না যে ধ্রুব তার সাথে কতটা ভয়ানক ভয়ানক অত্যাচার করে? কারণ ধ্রুব তার মায়ের সামনে রূপার সাথে ভালোভাবে কথা বলে। আবার কখনো গালে তুলে ভাত খাইয়ে দেয়। রূপা বুঝতে পারে না ধ্রুব তার মায়ের সামনে এমন নাটক কেন করে? মা জানলে হয়তো রূপার প্রতি এমন অত্যাচার হতে দিতেন না। কিন্তু…. আর ভাবতে পারছে না রূপা। এসব নিয়ে ঘেটে তার লাভ কী? তার যে মুক্তি চাই! মুক্তি!(লেখক মাহমুদ)
– ‘বউমা! বাইরে না দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে যা। আমি ধ্রুবকে বলে দিচ্ছি হাতে মলম লাগিয়ে দিতে!’
– ‘না না মা। তার কোনো দরকার নেই। মলম দিয়েছি। আর উনি নিজের হাতেই মলম লাগিয়ে দিয়েছেন।’
– ‘ওহ, ভালো করেছে। আর শুন, কাল তোকে রান্না করতে হবে না। আর সকালে তাড়াহুড়ো করে উঠারও কোনো দরকার নেই। একটু রেস্ট নে। শরীর ভালো হয়ে যাবে।’
– ‘জি।’
– ‘হুম। এবার শুতে যা। রাত তো কম হয়নি।’
– ‘হু……’
– ‘কি হু? না যেয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’
– ‘জি যাচ্ছি।’
– ‘এখনও দাঁড়িয়ে আছিস? শুতে যা বলছি।’
বলেই ফারজানা বেগম রূপাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিলেন। ঘরে ঢুকেই রূপা ভয়ে ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ তুলে উপরের দিকে তাকানোরও কোনো সাহস পাচ্ছে না সে। নিশ্চয় আবারও ধ্রুব তাকে কোনো একটা কারণে শাস্তি দিবে। কিন্তু রূপার গায়ে যে আজ কোনো শক্তি নেই। খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। দাঁড়াতেও খুব কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা! উনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন? হয়তো! ধ্রুবের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিছানার দিকে চোখ নিক্ষেপ করলো রূপা। হুম, ধ্রুব ঘুমিয়ে পড়েছে। ভাবতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল রূপা। এবার একটু ঘুম দিতে হবে। শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে।
রূপা যখন শোবার জন্য বিছানা থেকে বালিশ আর কাঁথা নিচ্ছিলো, তখন তার চোখ আটকে গেল ধ্রুবের নিষ্পাপ চেহারাটিতে। এটা কি কখনো সম্ভব? একটা ভয়নক মানুষের চেহারাতে নিষ্পাপ প্রবণতা থাকতে পারে! ধ্রুবকে দেখে মনে হচ্ছে যে সে কারো সাথে খারাপ আচরণ করতেই পারে না। ধ্রুব কি আদৌ খারাপ? নাকি এখানে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? হুহ! কিসব ভাবছে সে? রূপা একবার ফেসবুকে পড়েছিল, ‘লবণ আর চিনির রং যেমন একই রকম হয়, ঠিক তেমনি অমানুষ গুলোও হুবাহু মানুষের মতো দেখতে হয়।’ আর সে লবণকে চিনি, আর চিনিকে লবণ ভেবে ভুল করতে যাচ্ছিলো। তবে আর যাইহোক, রূপার বিশ্বাস দ্বীপ তাকে এই নরগ থেকে একদিন বের করে নিয়ে যাবে।
দ্বীপ তুমি কোথায়? আমার কথা কি তোমার একটুও মনে পরে না? এত সহজে আমাকে কিভাবে ভুলে গেলে? তুমি না বলতে আমাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না? দেখো, আমাকে ছাড়া আজ তুমি ঠিকই বেঁচে আছো। শুধু বেঁচে নেই আমি। এক জান্ত লাশ হয়ে পড়ে আছি পৃথিবীতে! এই কষ্টের কি কখনো অবসান ঘটবে না?
সকালেবেলা হঠাৎ মুখে পানি পড়াতে হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো রূপা।
– ‘কে কে?’
বলেই প্রলাপ করতে লাগলো সে। চোখমুখ কুঁচলাতে কুঁচলাতে যখন ধ্রুবকে সামনে দেখতে পেল তখন ভয়ে তার বুক থরথর করে কাঁপতে লাগলো। এই রে! আজ যে উঠতে দেরী হয়ে গেছে। এখন নির্ঘাত মাইর খেতে হবে তার। ভাবতেই ভয়ে কুকড়ে যেতে লাগল রূপা। ধ্রুব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
– ‘বাব্বাহ! মেহেন সাহেবের আজ এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাংলো?’
– ‘………..’
– ‘বুঝতে পারছি রাতে ঠিকভাবে ঘুম হয় নি না? আহারে! কি কষ্ট।’
বলেই রূপার মুখ টিপে ধরলো ধ্রুব। বললো,
– ‘নিজে তো বেশ করে আরামে ঘুমাচ্ছিস, আর ওইদিকে যে আমার মা রান্না করতে করতে মরে যাচ্ছে সেসব কি তোর চোখে বাঁধছে না? বাঁধবেও বা কেন? কাল রাতে তো মাকে মিথ্যা কথা বলে রাঁধতে বলেছিলি। যাতে আরামে ঘুমাতে পারিস। কী ভেবেছিস আমি জানতে পারবো না? তোকে কি আমি আরাম করে ঘুমানোর জন্য বিয়ে করেছি? নেক্সট টাইম যদি মাকে কোনো কাজ করতে দেখি তাহলে তোকে আমি একদম খুন করে ফেলবো!’
কথাগুলো বলেই রূপার মুখ ছেড়ে দিলো ধ্রুব। বললো,
– ‘আর হ্যা মাকে রান্না করতে নিষেধ করে দিয়েছি। আজ বাড়িতে মেহমান আসবে। কমপক্ষে ২০ জন মতো আসবেই। এটা কনফ্রম। আর তুই এই ২০ জনের জন্য একাই রান্না করবি। কেউ তোর সাহায্য করবে না। অনেক ঘুমিয়েছিস, অনেক আরাম করেছিস। কিন্তু আর নাহ! আজ এক দুই রকমে আইটেম হলে হবে না। কমপক্ষে ১০-১২ টা আইটেম তো করতেই হবে। এখন আর বসে না থেকে রান্না বসিয়ে দে। ওরা এল বলে। আর তোর হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই।’
কথাগুলো বলেই হনহন পায়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল ধ্রুব। এতশত আইটেমের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে রূপা। তার মাথায় কোনো কাজ করছে না। এতকিছু সে একা কিভাবে করবে? আল্লাহ আমাকে বাঁচাও। যেখানে এক ভাগের তরকারি রাঁধতে ১ ঘন্টারও বেশি লাগে সেখানে এত আইটেম রাধবে কিভাবে? আজ যে কাজ করতে করতে মরেই যাবে সে। নাহ! আর ভেবে কোনো লাভ নেই। তাকে এমনিতও করতে হবে। আর ওমতিতেও করতে হবে। তাহলে এতশত ভেবে সময় নষ্ট করার কী দরকার?
রূপা ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে চুল খোপা করতে করতে রান্নাঘরের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। এখন কি রান্না করবে সে? ধ্রুব তো একটু বলে দিতে পারতো! না থাক। তার কোনো দরকার নেই। এটা ওর কাছে নতুন কিছুই না। এমন প্রতিনিয়ত তার সৎ মা ওকে দিয়ে রান্না করাতো। সামান্য তরকারি লবণ কম হলেই এলপেথারি মারধর শুরু করে দিতো। পরে আস্তে আস্তে গিয়ে ঠিকঠাক ভাবে রাধতে শুরু করলো ও। রূপা আর সময় নষ্ট না করে ভাত বসিয়ে দিলো। আর অন্য চুলোয় মাংস। বেশকিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিলো সে।(লেখক মাহমুদ)
হঠাৎ কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছন ঘুরে তাকালো রূপা। নিলু এসেছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে। রূপা বললো,
– ‘তুমি! এখানে! কিছু লাগবে?’
– ‘উঁহু…. তোমাকে রান্নায় একটু হেল্প করতে আসলাম। আমি কি করবো ভাবি? যেকোনো একটা কাজের কথা বলো তো।’
– ‘আরে না না তোমাকে কিছুই করতে হবে না ননদিনী। তুমি গিয়ে বসো তো। আর এইতো আমার রান্না প্রায় শেষের দিকে।’
– ‘কচু… এখনো তো কিছুই হয়নি। প্লিজ ভাবি আমাকে যেকোনো একটা কিছু করতে দাও।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ……’
– ‘আচ্ছা বাবা।’
– ‘থ্যাংকইউ ভাবি। এবার বলো আমি কি কাজ করবো?’
– ‘তোমার বেশি কিছু করতে হবে না। তুমি একটু মাংসটা দেখো। হয়ে গেলে আমাকে ডাক দিও।’
– ‘ওকে ভাবি।’
– ‘তাহলে আমি এই ফাকে মাছটা কুটে ফেলি। ঠিকাছে?’
– ‘অবশ্যই অবশ্যই।’
রূপা নিচে বসে বসে মাছ কুটছে। আর নিলু মাংস নড়াচড়া করছে। এমন সময় ধ্রুব রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। রূপার জায়গায় নিলুকে রান্না করতে দেখে রাগ উঠে গেল তার সপ্তম আসমানে। এই মেয়েটা বার বার তার কথার খেলাপ করছে! বার বার তাকে রাগিয়ে তুলছে। আজ তার সহ্যের সীমার বাধ ভেঙে গেছে।
রূপা নিজেও জানে না যে আজ তার কপালে কি লেখা আছে?
চলবে,,,,,,,,,
লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ