ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব -০৫

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ০৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অধরা দরজার ওপারে দেখতে পেলো তার সব চাইতে প্রিয় একটা মুখ। অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়নকে দেখতে পেয়ে অধরা মোটেও খুশি হয়নি বরং অবাক হয়ে গেছে। এই সময় অধরা কোনো ভাবেই আশা করেনি অয়ন এখানে আসবে। যদিও অয়নের আশার কোনো কারন নেই। অধরা না থাকলে অয়নের জীবনে তবেই অয়ন ভালো থাকবে। অয়ন কে ভালো থাকতে দিতেই তো অয়নের থেকে দূরে চলে আসা। অয়ন দরজার ওপারে বেশ শান্ত লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে অধরার সৎ মা বেশ চেঁচিয়ে উঠে বলল

— কিরে কে এসেছে? দরজা খুলতে গিয়ে কি পাথরের মুর্তি হয়ে গেছিস? নাকি কারো সাথে আবার লটরপটর করা শুরু করেছিস?

অধরার মা এর চিৎকার অয়নের কানে ভেসে আসতেই অয়ন চোখের উপর থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে নিলো। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে অয়নের। দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অধরার পিছন থেকে চেঁচামেচি করতে করতে তার সৎ মা দরজার কাছে আসতেই অবাক হয়ে যায়। অয়নকে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওনার রাগি মুখে হাসি ফিরলো। দাঁত কেলিয়ে উনি অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আরে অয়ন বাবা তুমি এসেছো? বাহিরে কি করছো? ভিতরে এসো বাবা। আমার মেয়েটার কোনো আক্কেল নেই। জামাই এসেছে তাকে বাড়ির ভিতরে না নিয়ে এসে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।

রেহেলা বেগম মুখ কুঁচকে অধরাকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল। কথাটা শেষ করে উনি অয়নের হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির ভিতরে নিয়ে এলো। বড়লোক জামাই বলে কথা। খাতির যত্ন না করলে সার্থ উদ্ধার হবে কেমন করে? অয়ন এসেছে কথাটা অধরার বাবার কানে আসতেই উনি নিজের রুমে থেকে বেরিয়ে বসার রুমে চলে আসে। অয়ন অধরার বাবাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরার বাবা মাথা নেড়ে অয়নকে বসতে বলল

— অয়ন কেমন আছো বাবা?

— জ্বি, আমি ভালো আছি। আপনারা সবাই কেমন আছেন?

— হুম ভালো। তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা ছিলো।

— জ্বি বাবা বলুন।

— অধরার সাথে তোমার কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। শুধু বলবো বাবা আমার মা মরা মেয়েটাকে কষ্ট দিও না। তুমি ছাড়া ওর কষ্ট কেই বা বুঝবে?

অধরার বাবার কথা শেষ হতেই অয়ন ভিশন চিন্তায় পরে যায়। “আসলে উনি কি সবটা জেনে ফেলেছে? অধরা কি ওনাকে কিছু বলেছে? বলে থাকলে কথার ধরণ এমন হতো না। হয়তো বলেনি”। আপন মনে কথাটা ভাবতে লাগলো অয়ন। অয়নকে উদ্দেশ্য করে অধরার মা বললেন

— অয়ন বাবা নাও কিছু মুখে তুলে নাও। ওনার কথায় কিছু মনে করো না তুমি। বলি অয়ন কি বাচ্চা ছেলে নাকি? আমাদের অধরার খেয়াল ও রাখবে। কি বাবা ঠিক বললাম তো?

অয়ন অধরার সৎ মা এর কথা শুনে মৃদু তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে বলল

— হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই। আপনাদের থেকে বেশি ওর খেয়াল রাখবো।

— হুম, বাবা। নাও‌ কিছু মুখে নাও।

— সরি। আমার হতে সময় নেই। আমি অধরাকে নিয়ে যেতে এসেছি।

— ওহহহ। তা তো নিয়ে যাবেই বাবা।‌ আসলে বড় ব্যবসায়ীদের এই এক সমস্যা। সময় করে উঠতে পারে না।

— জ্বি।‌

অয়ন অধরার দিকে তাকাতেই অধরা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— বাবা আমি আর ও বাড়িতে ফিরতে চাই না।

অধরার কথা শেষ হতেই অয়ন অধরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অধরার বাবা অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— দেখ মা ঝগড়া সব সময় স্বামী স্ত্রীর মাঝে হয়ে থাকে। তাই বলে নিজের সংসার ফেলে চলে আসতে নেই।

— বাবা আমি ঝগড়া করে নয়। এই নিচু……….

অয়ন অধরাকে থামিয়ে দিয়ে কিছুটা চিৎকারের সুরে বলতে লাগলো

— অধরা ঝগড়া সব পরিবারে হয়। তাই বলে কি কেউ বাপের বাড়ি থেকে যায় নাকি। আমি আগে যদি জানতাম তুমি অভিমান করে এখানে চলে আসবে। বিশ্বাস করো তোমাকেও আমি আসতে দিতাম না। খুব অভিমান হয়েছে তোমার! সরি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর ঝগড়া করবো না।

অধরা অয়নের মুখে এতো মিষ্টি মধুর কথা শুনে একদম থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। এটা আদু অয়ন নাকি অন্য কেউ বোঝা দায় হয়ে পরেছে। অধরা যাস্ট ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। চোখের পলক নড়ছে না তার। অয়ন সবাইকে উদ্দেশ্য করে মৃদু মিনতির কষ্টে বলে উঠলো

— আসলে বাবা আমি অধরার সাথে একটু একান্তে কথা বলতে চাই। যদি অনুমতি দিন তো..!

— আচ্ছা ঠিক আছে বলো কথা। আমরা উঠছি।

— না বাবা আপনারা এখানেই বসুন। আমি আসছি।

অয়ন কথাটা শেষ করেই অধরা দিকে এগিয়ে আসলো। অধরা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন দুম করে অধরার হাত শক্ত করে চেপে ধরে। অধরা হাতের ব্যথ্যায় কিছুটা ফুঁপিয়ে ওঠে। অয়ন রহস্যময়ী এক হাসি ঠোঁটের কোণে এঁকে অধরাকে টানতে টানতে অধরার রুমে নিয়ে যায়। অধরা অয়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে ভিশন। বার বার অয়নকে বলছে সে

— প্লিজ হাতটা ছেড়ে দিন। আমার হাতে লাগছে। প্লিজ!

অধরার অনুরোধ যেনো অয়নের কানে পৌঁচ্ছাছে না। অয়ন অধরাকে টানতে টানতে রুমে এনেই এক ধাক্কায় অধরাকে বিছানার দিকে ফেলে দিলো। অধরা বিছানার উপর থেকে উঠে দাঁড়াতেই অয়ন দরজাটা বন্ধ করে দিলো। অধরা অয়নকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অয়ন দৌড়ে এসে অধরার বাহু জোড়া শক্ত করে চেপে অধরাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— কি ভেবেছো এখানে সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে? আমাকে ওখানে রেখে এখানে নতুন করে জীবন শুরু করবে, সুখে থাকবে! অসম্ভব। এটা আমি কোনো দিন হতে দিচ্ছি না। আমার থেকে দূরে অন্য কারো সাথে তোমার থাকা হচ্ছে না। আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার মুক্তি নেই।

অধরা অয়নের এমন বাহু চেপে ধরায় বেশ ব্যথা অনুভব করছে। অধরা দাঁতে দাঁত চেপে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— প্লিজ অয়ন হাত ছাড়ো আমার লাগছে।

— তাই সোনা। লাগছে তোমার। আরো লাগুক। ২য় বার যেনো আমাকে ছেড়ে যাবার কথা মাথায় আসলে এই কষ্টের কথা মনে পরে। এটাতো যাস্ট একটা ড্যামো। পিকচার এখনো বাকি আছে।

— অয়ন প্লিজ! ছাড়তে বললাম না।

অধরা প্রচন্ড রেগে গিয়ে অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে। অয়ন আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে ভিশন ঘৃণ্য কন্ঠে বলছে

— এসব নাটকের কারন কি অয়ন? সত্যিটা আমিও জানি আর তুমিও। আমি তোমাকে সন্তুষ্ট করতে পারি নাই। তাই তো ২য় নারীতে আসক্ত হয়েছো তুমি? অর্পা ভালো মেয়ে। তোমাকে ভালো রাখবে। আমি আমার অধিকার ছেড়ে দিয়েছি। যাও অর্পাকে নিয়ে ভালো থাকো। আমি আসবো না তোমাদের ভালো থাকাটা নষ্ট করতে। চলে যাও। এখানে কেনো এসেছো? আর কি নাটক বাকি আছে? বলো আমায়!

অধরার কথা শেষ হতেই অয়ন অধরাকে ছেড়ে দিয়ে নোংরা এক হাসি দিলো। হাসিটার শব্দ অধরার কানে এসে বিঁধছে। অয়ন হাসতে হাসতে বলতে লাগলো

— আরে নাটক তো এখনও শুরু করি নাই। আরো নাটক আছে। ২য় নারীতে নয়। আমি হাজার নারীতে আসক্ত হবো। জীবন নরক করে দিবো আমি। আর আমি কোনো ভালো‌ মানুষ না। প্লে বয় আমি। আর এই মানুষটাকেই সহ্য করতে হবে তোমায়। আমার লাইফে ২য় অপশন থাকলেও তোমার লাইফে তা শূন্য। আর এই যে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে কথাটা মাথায় এনেছো। তার পাছাটা পরে দিবো। এখন ভালোয় ভালোয় আমার সাথে যাবে কি না?

— আমি কোথাও যাবো না।

— তাই। কি চাও তোমার বাবা ওখানে মরে পরে থাক?

অয়নের রহস্যময় কথাটা শেষ হতেই অধরার চোখ কপালে উঠে যায়। “বাবা মরে পরে থাকবে মানে”? চিৎকার করে বলে উঠলো অধরা। অয়ন কোমর থেকে একটা গান বের করে অধরার দিকে তাক করে বলল

— মানেটা হলো আমার সাথে যদি তুমি না যাও তবে সারা জীবনের মতো নিজের বাবাকে তুমি হারাবে। আর তার জন্য তুমি দায়ী হবে।

— মানুষ তুই? তুই আদু মানুষ? তোর মধ্যে মনুষ্যত্ব বলে কিছু আছে? আমার বাবা তোর কি ক্ষতি করেছে? যার জন্য তুই এমন করছিস?

— আমি মানুষ না জানোয়ার। হয়েছে শান্তি? আর কিছু বলার আছে? যদি থাকে তবে শোনার মতো সময় আমার হাতে নেই। যাস্ট উত্তর চাই। যাবে নাকি বাবাকে বলি দিবে?

— জানিস আমি অয়নকে ভালোবেসেছিলাম। তবে আগের অয়ন কে। এই অয়নকে কখনও আমি ভালোবাসিনি। যেই অয়নের মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই। তুই সাইকো হয়ে গেছিস।

— ওহহহ শাট আপ। আমি গাড়িতে যাচ্ছি। পাঁচ মিনিট পরেও যদি আমার পাশের সিটে তোমায় না দেখি তো কি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসছি।

* অয়ন কথাটা শেষ করতেই রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। অধরা বিছানার উপর ধপাস করে বসে পরে। চোখ জোড়া দিয়ে টপটপ করে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। একটা মানুষ চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমার কপাল এতোটাই খারাপ যে কোনো মানুষ পেলাম না। একটা ভালোবাসার হাত চেয়েছি। কখনও আমার বাবা মা এর রক্তে রাঙানো হাত চাইনি।

অয়নের বলা কথা গুলো মনে আসতেই অধরা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। অধরা কাঁদছে এমন সময় গাড়ির বিকট হর্ণ অধরার কানে ভেসে আছে। অধরা চোখ মুছে নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে আসে বাবা মা কে বিদায় জানিয়ে। কষ্টে বুকটা ফেটে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু এই নোংরা জঘন্য লোকটার সাথে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অধরা গাড়িতে উঠে বসতেই অয়ন গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে যায়। অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করছে। অধরা নিশ্চুপ হয়ে চোখের জল ফেলছে। অয়ন বিষয়টা লক্ষ্য করে গাড়িটা আচমকা ব্রেক করলো। গাড়ি থামিয়ে অয়ন কোমর থেকে গানটা বের করে অধরার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো

— বোবার মতো বসে থাকলে আমার ভালো‌ লাগে না। যদি তুই বোবার মতো বসে থাকিস তবে সত্যি বলছি তোকে একদম চুপ করিয়ে দিবো আমি।

অধরা অয়নের‌ দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নের হাত থেকে এক ছু মেরে গানটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। অধরা চিৎকার করে বলছে

— তুই কি গুলি করবি? আমি নিজেকে নিজে শেষ করবো। তোকে মুক্তি দিয়ে নিজে শান্তিতে থাকবো।

কথাটা শেষ করতেই অধরা গানটা নিজের মাথার ঠেকিয়ে একটা চাপ দিলো। অয়ন হাত বাড়িয়ে অধরাকে আটকাতে গিয়েও পারলো না। অধরা স্টিগারে চাপ দিতেই……………………..

#চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here