ভালোবাসার-রাত
#রোকসানা রাহমান
পর্ব (১৯)
আজ রিদের জন্মদিন। এই দিনেও মানুষটার রুমটা এমন বাসি থাকবে?? তিল নিজের হাতে রিদের রুমটা গুছাচ্ছে,আজকে ফুল দিয়ে সে তার রিদ ভাইয়ার রুমটা সাজাবে,কিন্তু কি ফুল দিয়ে সাজানো যায়?? উনার কোন ফুল পছন্দ? আমি এটাও জানিনা? এই জন্যই উনি চলে গিয়েছেন। আপনি ঠিকি বলেছেন রিদ ভাইয়া আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্য করেন। তবে আপনি একটা কথা ভুল বলেছেন আপনি আমার জন্য বেস্ট ছিলেন,আমিই আপনার জন্য বেস্ট ছিলামনা!
তিল চোখের পানি মুছতে মুছতে রিদের ওয়াড্রভটা খুলে জামাকাপড় গুছাতে লাগলো। হঠাৎই কিছু কাগজ চোখে পড়ে। হাত দিয়ে সেগুলো বের করে চোখের সামনে ধরতেই বুঝতে পারলো মেডিকেলের কাগজ। পেসেন্টের জায়গায় রিদের নাম লিখা।
তিল কাগজটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করেছে। পুরোটাই ইংলিশে লিখা। এই মুহুর্তে এতো এতো বড় বড় ওয়ার্ডের মিনিং সে কোথায় পাবে?? ইংলিশে দুর্বল হওয়া যে কতটা কষ্টের সেটা তিল আজকে বুঝতে পারলো। পট পট করে ইংলিশ তো পরে ফেলছে কিন্তু কি পড়ছে তা সে কিছুই বুঝতে পারছেনা। এখন সে কিভাবে বুঝবে এটাতে কি আছে?? নাম যেহেতু রিদ ভাইয়ার নিশ্চয় কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কিছুই হবে। আর এতো যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছে মানে ভয়ংকর ইম্পর্ট্যান্ট কিছু হবে। কাকে দেখাবো? বড় আব্বুকে কি দেখাবো? উনি কি কিছু বুঝতে পারবেন??
তিল সবকিছু ফেলে মেডিকেলের কাগজগুলো নিয়ে বড় আব্বুর উদ্দশ্যে বের হয়ে গেলো। কি আছে এতে তাকে জানতেই হবে। কোনো বড় অসুখ নয় তো?? আজ অনেকদিন বাদে তিলের হার্টবিটগুলো কাঁপছে। কেন কাঁপছে? অজানা কোনো তথ্য পাবো বলে কি? নাকি কিছু পাওয়ার প্রবল ইচ্ছেটা মিথ্যে হয়ে যাওয়ার ভয়ে???
রিদের জন্মদিনের উপলক্ষ্যে খুব কাছের কিছু রিলেটিভদেরকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তেমন জাঁকজমকভাবে কিছু করা না হলেও কিছু খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে ছেলেটা যেখানেই থাক যেন ভালো থাকে সে দোয়াতো পাবে!
রিদের ছোটবেলার কিছু বন্ধুবান্ধবকেও দেখা যাচ্ছে। অনেকেই তিলের সাথে খুটিনাটি কথা বলে আটকাচ্ছে। তাদেরকে হাসিমুখে সাদরে গ্রহন করেই তিল বড় আব্বুর রুমের দিকেই এগুলো। দরজার কাছটাতে গিয়েই বড় আম্মুর কান্নার শব্দ পেলো তিল। সাথে অভিমান আর রাগ মিশ্রিত বড় আব্বুর কথাও কানে আসছে।
“” কার জন্য কাঁদছো তুমি? তোমার ছেলে কি একটাবার আমাদের কথা ভেবেছে?? সবসময় নিজে যা মনে হয় তাই করবে। অমন ছেলের জন্য তুমি কেন চোখের পানি ফেলছো রিদের মা? আমার ক্ষুধা লাগছে যাও ভাত বারো।””
“” তুমি আরেকটু খুজে দেখলে ঠিক পেতে। তুমি কি বুঝবে মায়ের খালি বুকের কি বেদনা!””
“” হ্যা,হ্যা তাহলে তুমি এভাবে চোখের পানি না ফেলে কোমড়ে শাড়ির আচল গুজে বের হয়ে যাওনা,নিজের ছেলেকে খুজে আনো। যত্তসব!””
আমির সাহেব রাগে গজগজ করতে করতে বের হয়ে গেলেন। তিল আটকাতে গিয়েও থেমে গেলো। যাহ! বড় আব্বুও তো বের হয়ে গেলো। তাহলে এখন কাকে দেখাবো???
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে এলো কিন্তু বড় আব্বুর আর ফেরার কোনো নামগন্ধ নেই। আর কতক্ষন ওয়েট করবে সে? কাগজটার দিকে তাকিয়ে তিলের ভীষন কান্না পাচ্ছে সে কেন ইংলিশটা মন দিয়ে পড়লোনা? কেন বড় বড় ওয়ার্ডগুলোর মিনিং শিখলোনা??? তিলের ইচ্ছে হলো এখনি সে ডিকশনারীটা নিয়ে তুরি মেরে সব শব্দের অথ মুখস্ত ঠুটস্থ করে ফেলতে!
তিল আর ওয়েট করতে পারলোনা। কি আছে এতে জানার জন্য মনটা ছটফট করছে। ভালো হোক আর মন্দ হোক জানলেই তো ছটফটানি বন্ধ হবে। তারপর কি করা যাবে ভাবা যাবে আপাতত এই ছটফটানি থেকে নিজেকে শান্ত করতে হবে। তিল ওড়নাটা গলায় পেচিয়ে কাগজপত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে একটা প্রাইভেট হসপিটালের দিকে এগুতে লাগলো। সেবার তো এখানেই উনার সাথে আমিও এডমিট হয়েছিলাম। তিল দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে সামনে এগুতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেলো! তিল নিজেকে সামলে নিলেও ছেলেটি নিজেকে সামলাতে পারেনি। হাতের আবদ্ধে থাকা সব কাগজপত্র নিচে পড়ে গেছে। ছেলেটি সেদিকে ভ্রক্ষেপ না নিয়ে বলে উঠলো,
“” তিয়ামতী?””
তিল নিজের নাম শুনে সামনে তাকিয়ে দেখে সিজাত। বেশ অবাকই হয়। এভাবে উনার সাথে দেখা হবে কখনো ভাবেনি।
“” আপনি এখানে?””
“” কিছু রিপোর্টস নিতে এসেছিলাম।””
“” কিসের? কার রিপোর্টস?””
তিলের প্রশ্নকে যেন এড়িয়ে গেলো সিজাত। বেশ তাড়াহুড়ো ভাব দেখিয়ে পড়ে যাওয়া কাগজপত্রগুলো তুলতে থাকে।
তিল নিজেও উত্তরের আশা না করে সিজাতকে হেল্প করতে হাত লাগায়। ততক্ষনে সিজাত সব গুছিয়ে নিয়েছে। তিল নিজের কাছটাতে একটা কাগজের টুকরো নিতেই ওখানে চোখ পড়ে তিলের। এটাতেও পেশেন্টের জায়গায় রিদের নাম লেখা। তিলের মনে হলো ও যে রিপোর্টসগুলো নিয়ে এসেছে কিছু জানার জন্য এটাও তারই একটা অংশ! কিন্তু এটা সিজাতের কাছে আসলো কিভাবে?? তিল অস্থির হয়ে সিজাতকে প্রশ্ন করতে উঠে দাড়াতেই দেখে কেউ নেই। চারপাশে চোখ বুলিয়েও সে সিজাতকে পেলোনা। গেলোটা কোথায়? মাত্রইতো এখানে ছিলো এর মধ্যে নাই হয়ে গেলো? আর এভাবে না বলেই বা কেন চলে গেলো? উনি কি আমার থেকে পালিয়ে গেলেন? কিন্তু কেন??
তিল নানা প্রশ্ন নিয়ে সামনে এগুতে এগুতে বার কয়েক পিছনে তাকিয়েছিলো যদি সিজাতকে দেখতে পায়!
পড়াশুনা বাদে সেভাবে কখনো একা একা চলা হয়নি তিলের। আর হসপিটাল তো দুরে থাক। এখানে কোথায় কি হয় কিছুই জানেনা। কার সামনে গিয়ে সে রিপোর্টের ব্যাপারে জানবে তাও জানেনা। কিন্তু তাকে তো জানতেই হবে! সাতপাঁচ ভাবা বন্ধ করে একটা মেয়ে ডক্টরের কেবিনে ঢুকে পড়লো।
তিল পলকহীন ভাবে তার সামনে বসে থাকা ডক্টরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। উনি যা বলছেন তা বিশ্বাস করবে নাকি বুঝতে পারছেনা। কানগুলো যেন কেমন অবশ হয়ে আসছে,চোখটাও সেই জন্যই হয় তো পাপড়িগুলো নড়ছেনা। নিশ্বাসটা নিতে ইচ্ছে করছে না। ডক্টরের বিপরীতে সে কি বলবে তাও খুজে পাচ্ছেনা। শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে তিল। সে ঠিকঠাক লোকের কাছেই আসছে তো? উনি আসলেই ডক্টর তো? উনি ঠিকঠাক মতো ইংলিশ পড়তে পারেন তো?? তিল ভালো করে উনাকে পরোক্ষ করে দেখছে,মাঝবয়সীর মহিলা। হয় তো উনিও আমার মতো ইংলিশ না পরেই ডক্টর হয়ে গেছেন। আমি যদি ইংলিশে টেনেটুনে পাশ করে A+ আনতে পারি তাহলে কি উনি ডক্টর হতে পারেননা? অবশ্যই পারেন। উনি ঠিক বুঝতে পারছেন আমি এতোকিছু বুঝিনা তাই এমন ভুলভাল বলছেন!
তিলের মাইন্ডে হাজারও সন্দেহ থাকলেও তার মন ঠিকই মেনে নিয়েছে ডক্টর তাকে এক ফোঁটাও ভুল বলেনি তাই হয়তো চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি বাড়ি যেতে পারবো তো? এমন ভুলভাল কথা শুনেও শরীরটা এমন দুর্বল হয়ে আসছে কেন????
তিল বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলেও সিজাতের বাড়ির সামনে এসে পৌছিয়েছে। মনের অজান্তেই দরজায় নক করতে থাকে। দুবার কলিংবেল টিপতেই সিজাত দরজা খুলে দিলো।
“” তিয়ামতী,তুমি এখানে??””
তিল সিজাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার যে অনেককিছু জানার আছে,অনেক প্রশ্ন করার আছে। এতক্ষনে সে ঠিকই বুঝে গেছে তার না জানা তথ্যগুলো রিদ বাদে যদি আর কেউ জেনে থাকে সে হলো সিজাত। তিল কোন প্রশ্নটা আগে করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। সিজাতের দিকে তখনো তাকিয়েই রয়েছে। সবকিছু কেমন যেন গোলমেল লেগে যাচ্ছে। যা জানার জন্য মন এমন ছটফট করছে অথচ তার মুখোমুখি হতেই হাত পা কাঁপাকাঁপি করছে,মনের ভেতর ভয়েরা উকি দিচ্ছে।
“” তোমাকে এমন লাগছে কেন তিয়ামতী? তুমি কি অসুস্থ?””
তিল নিজের হাতের কাগজটা সিজাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললো,
“” রিদ ভাইয়া কোথায়?””
সিজাত কাগজে চোখ বুলিয়ে বেশ অবাক হয়েই তিলকে বললো,
“” আমি জানিনা,তিয়ামতী। তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছ……””
সিজাত নিজের কথা শেষ করার আগেই তিল অজ্ঞান হয়ে দরজার সামনে পড়ে যেতেই সিজাত ওকে ধরে ফেলে।
জ্ঞান ফিরতেই তিল নিজের পাশেই সিজাতকে দেখতে পায়। বেশ অস্থিরতা নিয়েই বলে উঠলো,
“” তুমি ঠিক আছো তো? শরীরের কি হাল করেছো বলোতো? এভাবে হুট করে অজ্ঞান হয়ে গেলে,আমার তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা””
“” রিদ ভাইয়া কোথায়?””
তিলের মুখে পুনরায় একি কথায় বেশ বিচলিত হয়ে যায় সিজাত। বেশ শক্ত কন্ঠে বললো,
“” তুমি এখন অনেকটাই সুস্থ তিয়ামতী,চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে…””
“” আমি কোথাও যাবোনা। আমি জানতে চাই আমার রিদ ভাইয়া কোথায়? তখন থেকে একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছি আপনি শুনতে পারছেননা? বলছেননা কেন আমার রিদ ভাইয়া কোথায়? কোথায় আমার রিদ ভাইয়া?””
তিলের চিৎকার করা কথাতে সিজাতও চিৎকার করে বলে উঠে,
“” আমি জানিনা। না জানলে কিভাবে বলবো?””
তিল বিছানা ছেড়ে সিজাতের সামনে এসে চোখ রাঙিয়ে বললো,
“” আপনি সব জানেন। সেদিন আপনার ফোনেই রিদ ভাইয়া আমাকে ফেলে এসেছিলো। বলুন সেদিন কি হয়েছিলো?””
“” আমি বলতে পারবোনা।””
তিল এবার অসহায়ের মতো কেঁদে কেঁদে হাতজোর করে বললো,
“” প্লিজ!””
সিজাত তিলের হাতদুটো নামিয়ে বললো,
“” সেদিন আব্বু হঠাৎ করেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। উনাকে হসপিটালে এডমিট করানো হয়। ডক্টররা চেকআপ করে জানায় ইমিডিয়েটলি অপারেশন করতে হবে এবং রক্তের ব্যবস্থা করে রাখতে,যাতে প্রয়োজনে ছুটোছুটি করতে নাহয়। আমার আব্বুর ব্লাড গ্রুপ এবি(-) ছিলো। তুমিতো জানোই এই গ্রুপের ব্লাড কত ডিমান্ডেড। আমার তখনি মনে পড়ে যায় রিদের কথা। ওর ব্লাড গ্রুপ ও এবি(-)। এক সাথে পড়াশুনা চলাকালেই জানা হয়েছিলো। আমি সাথে সাথেই ওকে কল দেই। যদিও তখন আমাদের মধ্যে তোমাকে নিয়ে ঝামেলা চলছিলো তবুও বাবার জীবনের কথা ভেবে সেদিন সব ভুলে গিয়েছিলাম আর রিদও। ও খুব রাগী হলেও ও যে খুব ভালো মনের মানুষ আমি এটাও জানতাম। আর জানা থেকেই ওকে সাহস করে কল দিয়েছিলাম। জানতাম ও ফেরাবে না আর তাই ই হলো। বাবার অপারেশন শুরু হওয়ার আগেই ও হাজির। ও ব্লাড দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো কিন্তু তখনি একজন নার্স এসে জানালো ব্লাড দেওয়ার আগে কিছু টেস্ট করতে হবে। রিদ উনার সাথে চলে যায়। কিছুক্ষন পর নার্স এসে আমাকে জানায় ওর ব্লাডে এইচ আই ভি ভাইরাস পাওয়া গেছে। এ ব্লাড নেওয়া যাবোনা। আমি যেন অন্য কোনো ডোনার ব্যবস্থা করে রাখি। রিদ তখন আমার পাশেই দাড়িয়ে ছিলো। নার্সের কথায় আমি যতটা অবাক হই তার থেকে হাজারগুন বেশি অবাক হয় রিদ। রাগে ক্ষোবে ও নার্সের কলার চেপে ধরে। আমি ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,এরকম ভুলভাল রিপোর্ট৷ হতেই পারে রিদ,তুই আবার পরীক্ষা কর! তিল নার্সকে ছেড়ে দিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে যায়। তারপর কি হয়েছে আমি জানিনা। আমি অনেকবার ওকে কল দিয়েছি কিন্তু ওর ফোন অফ পেয়েছি,ওর বাসায় ও গিয়েছিলাম কিন্তু ও কোনোভাবেই আমার সাথে কন্টাক্ট করেনি। তার বেশকিছুদিন পরে হুট করেই আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। এটাও রিদের নাম্বার,তবে এটা ও ইউকে থাকতে ইউস করতো। আমি বেশ অবাক হয়েই ওর কল রিসিভ করি। খুব চিৎকার করে কান্না করছিলো ও। ওর সাথে আমার ৭ বছরের পথচলা,এর মাঝে ওকে কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি। কি হয়েছে জানতে চাওয়াই কিছু বলেনি আমাকে শুধু বলেছে ওর কিছু ইম্পর্ট্যান্ট রিপোর্টস হারিয়ে গিয়েছে সেগুলো হসপিটাল থেকে কালেক্ট করে ওকে পাঠাতে। কিন্তু যতই হোক আমার খুব কাছের ফ্রেন্ড ছিলো ও। তাই আমি ওর রিপোর্ট কালেক্ট করে খোজখবর নিতেই জানতে পারি সেদিনের ঐ নার্সের বলা কথা ভুল ছিলোনা। আর তাই সে ব্যাপার নিয়ে ওকে জেরা করতেই ও সব খুলে বলে। ওর এই মুহুর্ত….””
“” আমি রিদ ভাইয়ার কাছে যাবো।””
তিলের এমন আবদারে সিজাত থমকে যায়। তিলের থেকে সরে এসে বললো,
“” না,তিল। আমি রিদকে কথা দিয়েছি।””
সেদিন তিলের আবদারের কাছে হার মানতে হয়েছিলো সিজাতকে। প্লেনে তার সিটের পাশেই তিলকে জায়গা করেও দিতে হয়েছিলো। হয়তো আল্লাহ চান তিল আর রিদের দেখা হোক। নাহলে এমন সময়ে কেন তিলের সাথেই সিজাতের দেখা হলো? আল্লাহর চাওয়া খন্ডন করার শক্তি কি মনুষ্যজাতির আছে???? তাহলে সিজাত কিভাবে পারবে???
দরজা খুলে অন্ধকার রুমে ঢুকে সুইচে হাত দিলো রিদ। লাইটের আলো তার একদম ভালো লাগেনা,শুধু লোভ জাগে। বাচাঁর লোভ। নিজেকে লোভী ভাবতে রিদের একদম ভালো লাগেনা তাই অন্ধকারেই থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু আজ রুমে ঢুকেই কেমন জানি অনুভব হচ্ছে,মনে হচ্ছে তার গন্ধ ছাড়াও অন্য কারো গন্ধে পুরো রুমটা মুখরিত,তার নিশ্বাস ছাড়াও অন্য কারো নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে,তার অস্তিত্ব ছাড়াও অন্য কোনো অস্তিত্বের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। এই আজব অনুভূতিকে ধুলিসাৎ করতেই লাইটের সুইচটা চাপ দেয় রিদ। লাইটের আলোতে রিদের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে,অসহ্য লাগছে। তবুও চোখ মেলে সামনে তাকাতেই রিদ অবাক হয়ে যায়।
তার রুমের ছোট্ট বেডটাতে নীল বেনারশী জড়িয়ে একটা মেয়ে বসে আছে,ঘোমটা টানা তাই চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। কে সে? আর তার রুমে এমন বউ সেজে কে বসে আছে? যার বসে থাকার কথা ছিলো তাকে তো সে বাংলাদেশে ফেলে চলে এসেছে। তাহলে এ কে?
রিদ বেশ তিক্ত কন্ঠেই চিৎকার করে উঠে,
“” কে আপনি? আমার রুমে কি করছেন?””
আর সাথে সাথেই ঘোমটাটা পড়ে যায়। তার মাঝখান থেকে লাইটের আলোতে তিলের মুখটা জ্বলজ্বল করে উঠে।
“” তিল! তুই?””
তিল মুগ্ধ নয়নে রিদকে দেখছে,চোখ বড় বড় করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে,আজ এতোগুলো দিন পর তার রিদ ভাইয়াকে পেয়েছে,মন ভরে দেখতে হবে নাহলে কি তার ক্ষিধে মিটবে? ভালোবাসার মানুষকে দেখার ক্ষিধে?
রিদ শুকিয়ে গেছে,এতো বেশি শুকিয়ে গিয়েছে যে রিদের শার্টটা ঢিলে হয়ে ঝুলে আছে,চুল দাড়ি সব অগোছালোভাবে পড়ে আছে,দীর্ঘদিন চিরনির ছোয়া পায়নি,শেভও তো করেনি অনেকদিন,দাড়ির সাথে সাথে তাল মিলিয়ে মোচটাও বড় হয়ে ঠোটের অনেকাংশই ঢেকে ফেলেছে,মুখ শুকিয়ে গালের নিচের দিকে গর্তের ছাপ পড়ে গেছে,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে,চোখের চাহনিটাও যেন শুকিয়ে গেছে,কেমন নেতানো চাহনি। ১ বছরেই মানুষটা এতো বদলে গেলো? তিলের হৃদয়টা কেঁপে উঠলো। শুকনো আত্মাটা পানির জন্য ছটফট করছে। তিলের চোখটাও ভিজে আছে,কিন্তু এটা রিদ ভাইয়ার কষ্টের জন্য না তাকে এতোদিন পর দেখতে পারার সুখের!
তিলের ইচ্ছে হলো দৌড়ে গিয়ে রিদকে জড়িয়ে ধরে তার শুকনো আত্মাকে ভিজিয়ে নিতে। তিল বিছানা ছেড়ে এসে রিদের সামনে দাড়ালো। কিন্তু রিদকে জড়িয়ে ধরার বদলে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো,রিদের ডানগালে।
চলবে