ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -২৯

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২৯
#তানিশা সুলতানা

“আপনার চোখ দুটো কেমন চেনা চেনা লাগছে?
হালিজা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বলে।
আবির ঢোক গিলে। এখন ধরা পরে গেলে মানসম্মান থাকবে না।
” আপনার কি বিয়ে হয়ে গেছে? তমা বেগম বিরিয়ানির প্লেট এনে আবিরের সামনে রেখে বলে। আবিরকে অবশ্য হালিজা আর তমা বেগম ধরে বেঁধে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসেছে। এতো লম্বা মেয়ের মুখ দেখেই ছাড়বেন তমা বেগম।
“ইয়ে মানে হ্যাঁ
আবির ইনিয়ে বিনিয়ে বলে।
” তোমার বর কি আপনার থেকেই লম্বা?
“সমান সমান দুজন।
” ভালো
এবার বিরিয়ানি টা খাও
“না মানে আমি খাবো না।
” না খেলে মুখটা দেখাও
স্মৃতি দুর থেকে দেখছিলো ওদের কান্ডকারখানা। খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে আবিরের মুখ এরা দেখেই ছাড়বে।
এরই মধ্যে সেখানে চলে আসে আহাম্মদ চৌধুরী। তার দৃষ্টিও এতোখন লম্বা রমণীর দিকে ছিলো। কিন্তু হুট করেই তো কোনো মহিলাকে জেরা করা যায় না। তাও আবার মেয়ের শশুড় বাড়ির লোক উনি।
“একি আপনি খাচ্ছেন না কেনো?
আহাম্মদ চৌধুরী মেকি হেসে বলে।
” ওয়াশরুমে যাবো।
আবির কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে।
“মুখ না দেখালে এখান থেকে যেতে দেবো না। কড়া গলায় বলে দেয় তমা বেগম।
” ইয়ে আমার এক পেয়েছে না থুক্কু দুই পেয়েছে।
তবুও কেউ যেতে দেবে না।
আবির এবার বুদ্ধি খাটায়।
“আপনার পেছনে সাপ
বলতেই তমা বেগম আর হালিজা লাফিয়ে ওঠে। আহাম্মদ চৌধুরী সাপ খুৃঁজতে থাকে। এই ফাঁকে বোরকা কোমর ওবদি তুলে আবির ভৌ দৌড় দেয়।
” এনা এটা তো ছেলে?
হালিজা বলে ওঠে।
আবিরকে আর পায় কে? এক দৌড়ে চলে যায়।

যখন কষ্ট আসে তখন সব দিক থেকেই কষ্ট আসে। আবার যখন সুখ আছে তো সব দিক থেকেই সুখ সুখ লাগে। আজ নিজেকে ভীষণ রকমের সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে অভির। অথচ এক মাস আগেই জীবনের প্রতি মায়াটা হারিয়ে ফেলেছিলো। আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলো। আজ মনে হচ্ছে সেদিন মরে গেলে এই সুখ গুলো উপলব্ধি করা হতো না।

তানহা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ছেলেটা অভির মামাতো ভাই আকাশ। ভীষণ মিশুক আর বাচাল। তো তানহাও বাচাল। দুই বাঁচালে মিলে কথার ঝুঁড়ি খুলে বসেছে।
তানহা কথার ফাঁকে ফাঁকে অভির দিকে তাকাচ্ছে। অভি জেলাস কিনা এটাই বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু নাহহহ অভি কোনো জেলাস ফিল করছে না। কিন্তু কেনো? আমি অন্য কারো সাথে চলে গেলেও কি লোকটার কিছু আসে যায় না? অবশ্য আমি যাবোও না।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে বারোটা বেজে যায়। যে যারা রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। বাড়িতে প্রচুর মেহমান থাকায় অভির সাথে আকাশ আর রাব্বি ঘুমবে বলে ঠিক করে। তানহার রুমেও কয়েকটা মেয়ে থাকবে বলে ঠিক করেছে। তানহা অপরিচিতদের সাথে থাকতে পারবে না। তাই বালিশ নিয়ে চলে গেছে স্মৃতির রুমে।

অভির বেশ বিরক্ত লাগছে। এদের সাথে কিছুতেই রুম শেয়ার করবে না। আর অভি কি এখন সিঙ্গেল না কি? বউ আছে ওর। কই রাফিদের রুমে তো কেউ গেলো না ঘুমতে। তাহলে ওর রুমেই কেনো? অবশ্য ওদের বিয়ের কথা তো কেউ জানে না।
“তোরা অন্য রুমে যা।
অভি কপালে চুলকে বলে।
” কেনো ভাই? তুই তো একাই থাকবি। তো পবলেম কি ইয়ার।
আকাশ আয়েশ করে শুয়ে বলে।
রাফিদ আসে সেই সময়।
অভি রাফিদের দিকে তাকায়।
“রাফিদ ওদের থাকার ব্যবস্থা কর অন্য কোথাও।
” কিন্তু ভাই বাড়িতে
অভি কটমট চোখে তাকায় রাফিদের দিকে। রাফিদ চুপসে।
“তোরা ঠিকঠাক ভাবে শুতে পেরেছিস?
আনিকা বেগম বলতে বলতে রুমে ঢোকে। আনিকা বেগমের পেছনে তানহা।
তানহা আনিকা বেগম আর ওর মায়ের সাথে থাকবে। অভিদের রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছে তাই দেখে যাবে।
” মা আমি কারো সাথে রুম শেয়ার করতে পারবো না।
অভি কাঠকাঠ বলে দেয়।
“সে কি কেনো? কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার বাবা।
” ভাই বলছি
রাফিদ আবারও কিছু বলতে যায়।
“মা আমি তোমাকে তো বলেদিলাম। আমি এখন একা ঘুমতে পারবো না।
আমতাআমতা করে বলে অভি। তানহা গোলগোল চোখ করে তাকায় অভির দিকে। নিলজ্জ লোক। ছি ছি কি বলছে এসব? লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তানহার।
” লে খোকা
একবার বলছিস কারো সাথে রুম শেয়ার করবি না। তো আবার বলছিস একা ঘুমতে পারবি না। পাগল পাগল হলি না কি?
আকাশ গালে হাত দিয়ে অধশোয়া হয়ে বলে।
আনিকা বেগম মুখ চেপে হাসে।
অভির মুখটা থমথমে হয়ে যায়।
“এখান থেকে সরছি না আমরা। এখানেই থাকছি আজকে।
আকাশ সোজাসাপ্টা বলে দেয়।
” অভি আজকের রাতটা
অভি আনিকা বেগমকে থামিয়ে বলে ওঠে
“মা রাফিদের রুমটাতে ওরা থাকুক। মায়া তোমার সাথে থাকবে।
অভির কথায় রাফিদ অসহায় ফেস করে তাকায় অভির দিকে।
” আমি ওর সাথেই থাকবো। ইটস ফাইনাল।
তানহার দিকে তাকিয়ে বলে অভি।
তানহা মাথা নিচু করে আছে। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কেমন লজ্জায় ফেলে দিলো তানহাকে। এভাবে মায়ের সামনে কেউ বলে “আমি বউকে ছাড়া থাকতে পারবো না?” নিলজ্জ বেহায়া লোক একটা।
মনে মনে অভিকে হাজারটা গালি দিতে থাকে তানহা।
“কেসটা কি?
আকাশ চিন্তিত হয়ে বলে
” তোকে আমি বুঝিয়ে বলবো। এখন চল তোরা।
রাফিদ বাংলার প্যাচের মতো মুখ করে বলে।
“আসছি আমি
আনিকা বেগম তানহার কাঁধে হাত দিয়ে বলে। তানহা মাথা তুলে তাকায় না।

সবাই বের হতেই অভি দরজা বন্ধ করে এসে খাটে বসে। ঘেমে গেছে। মনে হয় এতখন যুদ্ধ করেছে।
” ওদের তাড়ালেন কেনো?
তানহা কোমরে হাত দিয়ে অভির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে
“তোমার সাথে থাকবো বলে।
হাই তুলে বলে অভি।
” এমন ভাবে বললেন যেনো বউকে চোখে হারান। কিন্তু এদিকে বউকে কখনো ছুঁয়েও দেখেন নাই। সবাই উল্টাপাল্টা ভাবলো।
মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
“একটু আগেও না ছুঁয়ে দিলাম।
অভিকে কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে।
তানহা নিজের চুল নিজে টানতে টানতে অন্য দিকে চলে যায়।
অভি মুখ টিপে হাসে।
” লাইট অফ করে দিয়ে এসে শুয়ে পড়ো। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমার।
অভি শুতে শুতে বলে।
“আপনার ঘুম পাচ্ছে আপনি ঘুমান। আমার ঘুম পাচ্ছে না আমি ঘুমবো না।
” ওকে। তাহলে শুধু লাইট অফ করে দাও।
কম্বল মুরি দিয়ে বলে অভি।
“আস্ত একটা নিরামিষ।
তানহা বিরবির করে বলে।
” বুঝলাম না হঠাৎ রেগে গেলো কেনো? অভি মনে মনে বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here