ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -২৮+২৯

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৭

আবরন স্পীড বোট টান দিতেই এক টানে বিচ থেকে অনেক দূরে চলে গেল । পূর্ণতার মনে হচ্ছে কলিজাটা লাফ দিয়ে হয়তো বাহিরে বেরিয়ে যাবে । ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে আবরনকে শক্ত করে পেচিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে । আবরন স্পীড কম করে পূর্ণতা কে বলল ,

– ভয় পাচ্ছো কেন ? চোখ খুলে এই দৃশ্য টা উপভোগ করো ? ভুলে যাও যে তুমি মাঝ সমুদ্রে । উপরে তাকিয়ে আকাশটা দেখো একবার , আর এখান থেকে বিচ টা কত ছোট্ট লাগছে দেখতে । দেখোই না একবার !! আমি তো এখন স্পীড কম করে দিয়েছি ।

পূর্ণতা চোখ আস্তে করে খুলতেই দেখল সত্যিই আবরন স্পীড কম করে দিয়েছে । এখন প্রায় ৫ টা ৩০ এর বেশি বাজে । তাই সূর্য টা ডুবে যাওয়ার অবস্থায় ! সূর্যের লাল আভায় সমুদ্রের পানি ও রেড সি এর মতো লাগছে । আর বর্তমান অবস্থান থেকে বিচ টা একদম ছোট্ট লাগছে ।

পূর্ণতা এসব দেখতেই ব্যস্ত আর আবরন পূর্ণতার সাথে থাকা এই মূহুর্তটা ফিল করছে ।

আবরন বলল ,

– কি ম্যাডাম ?? কেমন ফিল হচ্ছে এখন ??

পূর্ণতা একটা গভীর শ্বাস নিয়ে বলল ,

– অস্থিরতা কাজ করছে ।

– তাই নাকি ??

– হুম , আচ্ছা , আরেকটু দূরে যাওয়া যাবে না ??

– উহু , আমরা একদম শেষ সীমানায় , এর বাহিরে স্পীড বোট নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই ।

– ও আচ্ছা ।

আবরন হেসে বলল ,

– হুম , এই একটু আগে তুমি ভয় পাচ্ছিলে আর এখন আরো দূরে যেতে চাইছো ??

পূর্ণতা বলল ,

– সত্যিই , আমার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স এতো টা ভালো হবে আশা ই করি নি ‌। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আবরন বলল ,

– ইটস ওকে । তোমাকে খুশি হতে দেখলে ভালো লাগে !

পূর্ণতা চুপ করে র‌ইল । কি বলবে পাল্টা জবাবে বুঝতে পারছে না ।

আবরন বলল ,

– চলো , সময় শেষ , পাড়ে ফিরতে হবে ।

পূর্ণতা বলল ,

– হুম চলুন ।

আবরন স্পীড বোট বিচের দিকে ঘুরিয়ে যেতে শুরু করলো ।

হঠাৎ বলল ,

– আচ্ছা , এই মূহুর্তে যদি বোটের তেল শেষ হয়ে যায় তাহলে কি হবে বলো তো ??

পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে বলল ,

– আসতাগফিরুল্লাহ !! কি বলছেন এসব ???

– কেন তুমি মুভিতে দেখো নি নায়ক নায়িকা সমুদ্রে ভ্রমন করতে এসে মাঝ সমুদ্রে বোটের তেল শেষ হয়ে যায় বা ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায় ??

– দেখেছি , আপনি ও তাই চান নাকি ??

– ধরো , তাই ই চাই । তারপর তুমি আর আমি এক রাত বোটে ঘুমিয়েই পাড় করে দেব । সকাল হলে দেখবো তুমি আর আমি একটা আইল্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছি ভাসতে ভাসতে ।

– আচ্ছা , তারপর কি হবে ??

– তারপর আর কি হবে ?? আর কোনো উপায় না পেয়ে দুজনে বিয়ে করে নিব , আর ১০০ বাচ্চা পয়দা করে সমুদ্রের মাঝেই আইল্যান্ডে সংসার পাতবো ।
সবাই একসাথে কাজ করবো , খাবো আর ঘুমাবো । আহ , কি শান্তি !!

পূর্ণতা পেছন থেকে আবরনের কপালে – গালে হাত দিয়ে বলল ,

– এই গোধূলি বেলায় আপনার মাথায় ভুতে ভর করলো নাকি ??

আবরন হু হা করে হাসতে লাগল । তার পর বলল ,

– আমি ঠিক আছি । 😆

অবশেষে পাড়ে পৌঁছতেই জিব্রান পূর্ণতা কে আবার ধরে নামাল । তারপর আবরন ও নেমে দাঁড়ালো ।

প্রেনা পূর্ণতা কে বলল ,

– কিরে , ভয় পেয়েছিলি নাকি ??

পূর্ণতা আবরনের দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখে তারপর প্রেনা কে জবাব দিল ,

– উহু , ভয় পাবো কেন ?? একটা অন্যরকম ফিলিংস কাজ করছিল তখন , এই প্রথম তো তাই ।

রুহি বলল ,

– আচ্ছা , তাই নাকি ?? তা স্পীড বোটে উঠে নতুন অনুভূতির সম্মুখীন হলে নাকি আবরন ভাইয়ার সাথে মাঝ সমুদ্রে একা থাকতে পেরে অন্যরকম ফিলিংস কাজ করছিল ??

পূর্ণতা কিছু বলবে তার আগেই আবরন বলল ,

– আরে , ধরে নাও দুটোই । তাই না পূর্ণতা ??

পূর্ণতা শুধু মাথা নাড়ল ।

ওদের কথা শুনে সবাই হাসল ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– আমার সব সমস্যার সমাধান সবসময় উনি ই করে দেন । কি করে যে মনের কথা বুঝে ফেলে লোকটা আল্লাহ ই ভালো জানে !

এই ভেবে মনে মনেই হাসলো ।

জিব্রান আবরনকে বলল ,

– সন্ধ্যা তো হয়ে গেল । আরো ঘুরবি নাকি এখন ব্যাক করবি ??

আবরন বলল ,

– ৮ টা পর্যন্ত সব খোলা আছে । আরেকটু থাকি । তারপর ব্যাক করি ।

কি বলিস তোরা ??

সবাই সহমত প্রকাশ করল ।

আয়মান বলল ,

– আচ্ছা , আমরা এবার সবাই একটু আলাদা আলাদা টাইম স্পেন্ড করি এই এক ঘন্টা ?? যদি জিব্রান ভাইয়া আর নাদিরা ভাবি সহমত প্রকাশ করে তাহলে আর কি !!

জিব্রান বলল ,

– ঠিক আছে । তবে সবাই বিচেই থাকবি , কাছাকাছি থাকবি । দূরে যাবি না । ৭ টার দিকে সবাই সবাইকে কল করে পার্কিং ল‍র্ডে ই চলে যাবি , কেমন ??

সবাই বলল ,

– ঠিক আছে ।

এরপর সবাই দুজন দুজন করে আলাদা হয়ে গেল ১ ঘন্টার জন্য । অর্থাৎ জিব্রান – নাদিরা , ফাহিম – রুহি , তাসিন – নীরা , আয়মান – প্রেনা এবং অবশেষে আবরন – পূর্ণতা ।

জিব্রান আর নাদিরা একটা গাছের নিচে বেঞ্চিতে বসল । জিব্রান বলল ,

– আজকের দিনটা কেমন কেটেছে তোমার ??

নাদিরা হেসে জবাব দিল ,

– অনেক ভালো । তোমার জন্য ই তো আজ এতগুলো সুন্দর মূহুর্ত্তের সম্মুখীন হতে পারলাম । এই জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দিব না তবে তোমার জন্য ১ বুক ভরা ভালোবাসা ।

জিব্রান বলল ,

– তোমার ভালোবাসা ই আমার জন্য যথেষ্ট । আর কিছুর দরকার হবে না । সব সবময় এভাবেই হাসি খুশি দেখতে চাই তোমাকে আর আমি নিজেও তোমাকে এভাবেই রাখতে চেষ্টা করবো ।

নাদিরা হেসে জিব্রানের কাধে মাথা রাখল । জিব্রান ও ওকে নিজের হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল ।

………………………………………………..

ফাহিম আর রুহি একসাথে হাত ধরে বিচে হাঁটছে আর কথা বলছে । ফাহিম বলল ,

– তুমি খুশি তো ??

রুহি বলল ,

– খুশি মানে ! অসম্ভব খুশি !

– তাই ??

– হুম । সত্যিই তোমরা সবাই খুব ভালো । সবাই অনেক মিশুক । বিশেষ করে জিব্রান ভাইয়া আর পূর্ণতা , ওরা খুব ভালো ।

– হুম । আমাদের রিলেশন টা এভাবেই অটুট থাকুক ।

– হুম ।

এভাবে কথা বলতে হাঁটছে ওরা ।

…………………………………………….

আয়মান – প্রেনা একসাথে সমুদ্রের ধারে পাথরের ওপর বসে আছে । প্রেনা বলল ,

– আজকে আমি অনেক খুশি । খুব এনজয় করেছি । খুব তাজা লাগছে নিজেকে ।

আয়মান বলল ,

– সব কিছু্ কিন্তু আবরন আর জিব্রান ভাইয়ার ই প্ল‍্যান । ধন্যবাদ টা ওদের ই দেওয়া উচিত ।

– হুম , ঠিক বলেছো । জানো , কখনো ভাবি নি যে তুমি আর আমি এত সময় এক সাথে কাটাতে পারবো !

– আচ্ছা , তাই নাকি ? তাহলে চলো বিয়েটা সেড়ে ফেলি , তাহলে আরো সময় কাটাতে পারবে ।

– সত্যি বলছো ?? চলো তাহলে এক্ষুনি বিয়ে করি ফেলি !!

এই বলে প্রেনা হাসতে শুরু ক‍রল , আর ওর কথা শুনে আয়মান‌ও হাসতে লাগল ।

……………………………………………….

তাসিন আর নীরা বিচের আর রাস্তার সীমানার স্কয়ার পাথর গুলোতে বসেছে । নীরা বলল ,

– তোমার কি মনে হয় আবরন ভাইয়া আর পূর্ণতা কি সত্যিই দুজন দুজনকে ভালোবাসে ??

তাসিন বলল ,

– তোমার কি মনে হয় ওরা শুধুমাত্র লোক দেখাচ্ছে ?? আবরন কি এমন ছেলে ??

– তা অবশ্য ঠিক ।

– হুম , এই প্রথম আব‍রন কাউকে ভালোবেসেছে , তাই ভালোবাসা টা অবশ্যই সত্যি ভালোবাসা ।

– হুম , ওদের দুজনকে বেশ মানিয়েছে । সবসময় দেখি দুজন একসাথেই থাকে ।

– আল্লাহ ওদের একসাথেই রাখুক , সেই দোয়া ই করি ।

– হুম আর তুমি – আমি ও যেন একসাথে থাকতে পারি ।

– আমিন ।

নীরা ও বলল ,

– আমিন ।

………………………………………………..

আবরন পূর্ণতার চোখ বেঁধে ওর হাত ধরে ওকে নিয়ে হাঁটছে । পূর্ণতা বলল ,

– সেই কখন থেকে হাঁটছি । আমার চোখ কেন বেঁধেছেন তা ও বলছেন না , আর কোথায় কোথায় যাচ্ছি তা ও বললেন না !!

আবরন বলল ,

– উফফফ , তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন ? হ্যাভ আ রিল্যাক্স !!

– আমাকে নিয়ে আপনি মেবি রোড পার হয়ে বিচ ছেড়ে অন্য কোথাও নিয়ে গিয়েছিলেন তাই না ?? এখন আবার বোধয় বিচে ব্যাক করছি !!

– হুম , ঠিক‌ই ধরেছো । আর ২ মিনিট হাঁটলেই পানির ধারে পৌঁছে যাবো ।

পূর্ণতা বলল ,

– এই আপনি আমাকে পানিতে ডুবিয়ে মারতে নিচ্ছেন না তো ??

– বাহ , বুঝলে কি করে ??

আবরনের কথা শুনে পূর্ণতা দাঁড়িয়ে গেল । তারপ‍র বলল ,

– এই এই , কি বলছেন কি ??

আবরন ওকে আবারো হাত ধরে টানতে টানতে বলল ,

– উফফ , সবসময় বাচ্চাদের মতো করবে না তো । এখন বড় হয়েছো , ম্যাচুয়ারিটির দরকার আছে ।

পূর্ণতা রেগে মনে মনে ভাবল ,

– হুহ , তো কে বলেছে আপনাকে আমার সাথে ঘুরতে , যান না !! অন্য কারো সাথে ঘুরুন !

আবরন হঠাৎ হাঁটা থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– আমরা চলে এসেছি । এখন আমি তোমার চোখ থেকে কাপড় টা খুলে দিচ্ছি কিন্তু তুমি কোনো কথা বলবে না , শুধু ফিল করবে আমি যেভাবে যেভাবে বলবো ঠিক সেই ভাবে । ওকে ?? প্রমিজ করো !

পূর্ণতা আবরনের এত নরম স্বরে কথা বলা শুনে রাগ কে দূরে ঠেলে আবরনের কথায় সায় দিয়ে মাথা নেড়ে বলল ,

– প্রমিজ ।

আবরন আস্তে করে পূর্ণতার চোখের বাঁধন টা খুলে দিল ।

পূর্ণতা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো । দেখলো জায়গাটা অন্ধকার । তবে ঘুটঘুটে অন্ধকার না , বিচে থাকা দোকান পাটের লাইটের আলোয় কিছুটা দেখা যায় ।

পূর্ণতা দেখল আবরন ওর দিকে তাকিয়ে আছে । পূর্ণতা কোনো কথা বলল না কারন ও আবরনকে প্রমিজ করেছে ।

আবরন একটা জিনিস নিজের হাতের তারায় নিয়ে পূর্ণতার দিকে বাড়িয়ে দিল ।

পূর্ণতা দেখল এটা সেই সাদা ঝিনুকটা যেটা তখন বার্মিজ মার্কেট থেকে কিনেছিল । পূর্ণতা ঝিনুকটা হাতে নিতেই আবরন আস্তে করে বলল ,

– এখন নিচে হাঁটু গেড়ে বসে এটা কানের কাছে ধরে চোখ বন্ধ করে ফিল করতে চেষ্টা করো কিন্তু নিঃশব্দে । দেখবে এর ভেতর থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ধ্বনি ভেসে আসছে ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে আবরনের কথা মত ঝিনুকটা কানের সামনে তুলে নিল । তারপর ইশারায় আবরনকেও বসতে বলে নিজে চোখ বন্ধ করে নিল ।

আবরন পূর্ণতার পাশে হাঁটু গেড়ে বসল ।

দুজনেই নিঃশব্দে বসে আছে । কিছুক্ষণ ফিল করার পর পূর্ণতর মনে হতে লাগল ঝিনুক থেকে ঢেউয়ের ধ্বনি ভেসে আসছে । পূর্ণতা আরো মনোযোগ দিয়ে শুনতে চেষ্টা করছে ।

এদিকে আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে এই বিশেষ মূহুর্তটা ফিল করছে ।

পূর্ণতা এখন পরিষ্কার ঢেউ এর ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে । খুশি হয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে আবরনকে বলল ,

– সত্যিই অসাধারণ । আমি শব্দ শুনতে পেয়েছি । আপনি ও শুনুন ।

এই বলে পূর্ণতা আবরনের দিকে ঝিনুকটা বাড়িয়ে দিল ।

পূর্ণতা কে এভাবে খুশি হতে দেখে আবরনের মনটাও খুশিতে নেচে উঠল । আবরন পূর্ণতার হাত থেকে ঝিনুকটা হাতে নিয়ে কানে দিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– আরে চোখ তো বন্ধ করুন ।

আবরন চোখ বন্ধ করে নিল ।

পূর্ণতা বলল ,

– ওকে , নাউ ফিল ইট ।

আবরন তা ই করল । ও মনোযোগ দিয়ে সমুদ্রের এই মিষ্টি ধ্বনি শুনতে চেষ্টা করছে । আর এদিকে পূর্ণতাও আবরনের কানের কিছে গিয়ে ঝিনুক বরাবর নিজের কান রাখল ।

অর্থাৎ এক‌ই ঝিনুক থেকে দুজন‌ই সমুদ্রের কথা শোনার চেষ্টা করছে । দুজন‌ই একসাথে শব্দ শুনে খিল খিল করে হেসে উঠল । পূর্ণতার হাসি শুনে আবরন চোখ খুলে তাকালো আর পূর্ণতাও আবরনের হাসি শুনে চোখ খুলে তাকালো । দুজন এখন একদম কাছাকাছি , দূরত্ব শুধুমাত্র ঝিনুকটার আয়তনের ।

দুজন‌ই দুজনের দিকে পলক হীন ভাবে তাকিয়ে আছে । রাতের আবছা আলোয় দুজনকেই সুন্দর লাগছে ।

আবরন নিজেকে সামলে নিতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না । ওর মন চাইছে ঝট নিজের মনের মধ্যে চেপে রাখা কথা গুলো সব পূর্ণতা কে জানিয়ে দিতে ।

পূর্ণতা সব ভুলে শুধু আবরনকেই দেখছে ।

আবরন ঝিনুকটা কান থেকে নামিয়ে পূর্ণতার দিকে মাথা এগিয়ে নিতেই পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে ফেলল । হঠাৎ ওর শরীরটা থরথর করে কাপতে শুরু করল । সমুদ্রের পারের ঠান্ডা বাতাস ওকে যেন বরফের মতো জমিয়ে দিচ্ছে । আবরন নিজেকে কন্ট্রোল করে পূর্ণতার কানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

– সারপ্রাইজ টা কি পছন্দ হয়েছে ??

আবরনের বলা প্রতিটা শব্দ পূর্ণতার কানে এসে বারি খেতেই পূর্ণতা আর নিজেকে মানাতে পারলো না , ঝট করে আবরনকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল ।

এভাবে হঠাৎ করে পূর্ণতা জড়িয়ে ধরাতে আবরনের কেমন যেন মনে হচ্ছে । ও মনে মনে ভাবছে ,

– তুমি কাছে থাকলে এমনিতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না , আর তুমি যদি নিজ থেকেই এমন করো তাহলে তো আমি মরেই যাবো !!

নো আবরন নো , নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখো । এর‌ই নাম হয়তো ভালোবাসা । দুজনেই দুজনকে এত ভালোবাসি কিন্তু কেউ কাউকে মুখ দিয়ে বলছি না । হয়তো বলা হবে না কিন্তু এভাবেই একে অপরকে ভালোবেসে যাবো । আমি তোমাকে #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️ মুখ দিয়ে ভালোবাসি কথাটা বলি না । হয়তো না বলাটাই ভালো হবে , তাহলে দুজন‌ই দুজনের ভেতরে থেকে ভালোবাসি কথাটার অপেক্ষা করতে করতে এভাবেই ভালোবেসে যেতে থাকবো , আর এর ফলে আমাদের ভালোবাসা টাও কখনো শেষ হয়ে যাবে না ।

পূর্ণতা এখনো আবরনকে জড়িয়ে আছে । ওর মনে হচ্ছে , আবরনের কাছেই ও সবচেয়ে বেশি সেইফ । ওর মন চাইছে বাকিটা জীবন এভাবেই আবরনকে জড়িয়ে কাটিয়ে দিতে ।
পূর্ণতা মনে মনে বলছে ,

– আমি সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে । কিন্তু বলবো না এই কথাটা । এভাবেই যেন চলতে থাকে আমাদের জীবনটা । আর ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️ এমন চিন্তা মাথায় আসছে । এটাই তার প্রমাণ মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরন ।

এই ভেবে আরো শক্ত করে আবরনকে পেঁচিয়ে ধরল । আবরন‌ও পূর্ণতা কে নিজের দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল ।

………………………………………………..

জিব্রান আর নাদিরা পার্কিং লর্ডের সামনে গিয়ে দেখল সেখানে আয়মান , প্রেনা , তাসিন , নীরা , ফাহিম আর রুহি দাঁড়িয়ে আছে ।

আয়মান জিব্রান আর নাদিরাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো ,

– এ কি ? আমরা সবাই এখানে তো আবরন আর পূর্ণতা কোথায় ??

জিব্রান বলল ,

– ওরা কোথায় মানে ? তোদের সাথে কথা হয় নি ??

ফাহিম বলল ,

– আমরা তো কেউ ই কারো সাথে যোগাযোগ করি নি । ৭ টা বাজতেই সবাই এখানে নিজ থেকে চলে এসেছি ।

নাদিরা বলল ,

– কল দিলেই তো হয় !

তাসিন বলল ,

– আমি কল দিচ্ছি আবরনকে !

জিব্রান বলল ,

– আই হোপ ওরা একসাথেই আছে । তবুও আমি পূর্ণ কে কল করি ।

আবরন আর পূর্ণতা দুজনকে জড়িয়ে আছে এর‌ই মধ্যে দুজনের ফোন‌ই একসাথে বেজে উঠল ।

ফোনের শব্দে দুজন‌ই দুজনকে ছেড়ে দূরে সরে বসল । তারপ‍র জলদি জলদি কল রিসিভ করতেই ওরা জানালো যে সবাই পার্কিং লর্ডে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে , ওরা যেন জলদি সেখানে পৌঁছায় ।

জিব্রান আর তাসিনের কথা মতো দুজন‌ই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেদিকে র‌ওনা হলো । তবে যেতে যেতে পথে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে নি । দুজন‌ই নিশ্চুপ ভাবে হেঁটে পার্কিং লর্ডের দিকে চলে গিয়েছে ।

পার্কিং লর্ডে পৌঁছাতেই জিব্রান গাড়ির দরজা টেনে আবরন আর পূর্ণতা কে ঢুকতে ইশারা করলো । আবরন আর পূর্ণতা চুপচাপ কোনো কথা না বলে পেছনে উঠে বসলো । ওরা বসতেই বাকিরা এক এক করে গাড়িতে বসে পড়তেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে র‌ওনা হলো চট্টগ্রামে শহরে নির্মিত আবরনদের ফার্ম হাউজের দিকে । যাওয়ার পথে সবাই চিল করলেও ফেরার পথে সবাই কিছুটা টায়ার্ড ফিল করছে । তাই হৈ হুল্লোর করছে না কেউ । তবে কাপলরা নিজেদের মধ্যে খুঁটি – নাটি বিষয়ে কথা বলছে ।

কিন্তু আবরন আর পূর্ণতা কোনো কথাই বলছে না । আবরন ফোনে স্ক্রলিং করছে আর পূর্ণতা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ।

দুজনের মধ্যেই একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে । আজ প্রথম হঠাৎ এভাবে কাছে আসা নিজেদের মধ্যেই যেন অন্যরকম অনুভূতি টা ডেকে নিয়ে এসেছে ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে বার বার সেই এক‌ই মূহুর্ত গুলো ফিল করছে আর মনে মনে নিজেকে বোঝাচ্ছে ,

– এর নাম‌ই ভালোবাসা পূর্ণ , তুই ও কাউকে ভালোবাসলি অবশেষে । ভাবতে পারছিস ?

আর এদিকে আবরন ফোনে স্ক্রলিং করে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে । যত‌ই চেষ্টা ক‍রছে নিজেকে ব্যস্ত রাখার তত‌ই মনে মনে ভাবছে ,

– ইশশ , পূর্ণতা আর আমার মাঝে ভালোবাসা এ কি রূপ ধারন করল ? এখন তো দুজন চোখা চোখি হলেও কেমন যেন লাগছে । এর‌ই কি নাম ভালোবাসা ! Hayeee mai marjavaan !

দুজনের‌ই ভাবনার মাঝে ফাহিম বাম হাত ঢুকিয়ে বলে উঠল ,

– কিরে ?? তোদের কি কিছু হয়েছে ??

ফাহিমের প্রশ্ন শুনে যেমন আবরন আর পূর্ণতা ভ্রু কুচকালো ঠিক তেমনি বাকিরাও পেছনে ফিরে ভ্রু কুচকে তাকালো ।

আবরন আর পূর্ণতা একে অপরের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ফাহিমের দিকে তাকালো ।

সবাই ওদের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।

আবরন বলল ,

– কি হবে ?? নাহ , কিচ্ছু হয় নি তো । পূর্ণতার মাথা ব্যথা করছে তাই ওকে ডিষ্টার্ব করছি না । এই আরকি !

পূর্ণতা বলল ,

– হু , মাথা ভীষন ব্যথা করছে ।

সবাই উত্তর পেয়ে ঠান্ডা হলো । ওরা দুজন যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো ।

………………………………………………..

রাত পৌনে দশটার দিকে ওদের গাড়ি গিয়ে ফার্মহাউজে পৌঁছালো । রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল । ট্রাফিক সিগন্যাল তো আছেই ।

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই ৩ জন কেয়ার টেকার ওদের জিনিস পত্র গুলো নামাতে চলে এলো ।

ওরা একে একে সব ভেতরে ঢুকতেই একজন কেয়ার টেকার বলল ,

– আপনারা ফ্রেশ হয়ে আসুন , আমি ডিনার সার্ভ করছি ।

ওরা মাথা নেড়ে উপরে যার যার রুমে চলে গেল ।

……………………………………………….

পূর্ণতা ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকতেই ওর মনে পড়ল …………..
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৮

পূর্ণতা ব্যাগ থেকে একটা লং টপস আর প্লাজো বের করে নিজের টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে ।

সব হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে টায়ার্ড ফেসটা নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আজকের ঘটনা গুলো বার বার মনে পড়তে শুরু করল ।

চুল গুলো খুলে আবার জট ছাড়িয়ে খোপা করে নিয়ে মুখ ধুবে বলে ওয়াল র‍্যাক থেকে হাত বাড়িয়ে ফেস‌ওয়াশ টা নিতে গিয়ে খেয়াল করলো টুথ ব্রাশ টা । ফেস ওয়াশ রেখে পূর্ণতা টুথ ব্রাশটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ আনমনে সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের অজান্তেই হাসল । ওর মনে পড়ল আজকে সকালে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা । তারপর নিজেই নিজেকে মনে মনে জিজ্ঞেস করল ,

– সত্যিই তুই এত বোকা কেন রে পূর্ণ ?? কিভাবে পারলি মিষ্টার শাহরিদ আহনাফ আবরনের ব্রাশ দিয়ে নিজের দাঁত ঘষতে ?? তোর একবারো মনে পড়লো না ??

এই বলে নিজেই স্বজোরে হেসে উঠল ।

হাসির মধ্যেই বাহির থেকে প্রেনার গলা শোনা গেল ।

– ঐ কিরে ?? রাতের বেলা পাগল হলি নাকি ?? এভাবে হাসছিস কেন ??

পূর্ণতা হাসি বন্ধ করে জিহ্বে কামড় দিয়ে জবাব দিল ,

– আরে এমনি হাসছি । তোর ভালো না লাগলে তুই কানে তুলো গুঁজে থাক ।

প্রেনা মনে মনে ভাবছে ,

– ওর মাথা সত্যিই যায়নি তো !!

পরে ভাবলো ,

– ধুর , এসব ভেবে কাজ নেই ।

পূর্ণতা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখল প্রেনা ড্রেস চেঞ্জ করে বসে আছে ফ্রেশ হবে বলে । পূর্ণতাকে বের হতে দেখে প্রেনা বলল ,

– তুই নিচে যা , আমি একাই আসছি ।

পূর্ণতা বলল ,

– আমার প্রচুর মাথা ব্যথা করছে । আমি কিছু খাবো না । তোরা খেয়ে নিস । আমি একটা ঘুম দিব ।

প্রেনা কাছে এগিয়ে পূর্ণতার কপালে গালে হাত দিয়ে বলল ,

– বেশি খারাপ লাগছে ?? জ্বর আসে নি তো ??

পূর্ণতা বলল ,

– আরে না , তেমন কিছুই না । চিন্তা করিস না । যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে ।

প্রেনা বলল ,

– ঠিক আছে । আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখছি কি করা যায় !

– হুম ।

পূর্ণতা ফোনটা পার্স থেকে বের করে চার্জে লাগাতেই দেখল উপরে আবরনের নামে একটা ম্যাসেজ ভেসে আছে ।

ম্যাসেজ টা হোয়াটস‌অ্যাপে এসেছে আরো ৬ মিনিট আগে ।

পূর্ণতা ফোন আনলক করে হোয়াটস‌অ্যাপে ঢুকতেই আবরনের কল এলো ।

পূর্ণতা কল রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে আবরনের ঝাজালো গলা শোনা গেল ।

– সমস্যা কি ?? এতক্ষন লাগে কলটা রিসিভ করতে ?? ম্যাসেজ ও তো চেক করছো না ।

পূর্ণতা বলল ,

– ফ্রেশ হচ্ছিলাম ! কি হয়েছে বলুন !

– নিচে এসো ।

– কেন ?

– আসতে বলেছি আসবে !!

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– এহ , সমস্যা কি উনার ? হঠাৎ রাগ দেখাচ্ছে কেন ??

– কি হলো কথা বলছো না যে ? নিচে এসো ।

পূর্ণতা বলল ,

– পারবো না । আমার মাথা ব্যথা করছে ।

– ওকে , ফাইন । তাহলে আমি ই উপরে আসছি ।

এই বলে আবরন কল কেটে দিল ।

পূর্ণতা ফোনটা রেখে জলদি জলদি এসি টা অফ করে কমফোর্ট ব্ল‍্যাঙ্কেট গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল ।

২ মিনিটের মধ্যেই আবরন উপরে এসে বাহির থেকে নক করতেই পূর্ণতা বলল ,

– দরজা খোলা আছে । আসুন ।

আবরন দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল ,

– প্রেনা কোথায় ??

পূর্ণতা বলল ,

– ওয়াশরুমে ।

আবরন বলল ,

– কি হয়েছে তোমার ??

– কিছুই না । আপনি বলুন ।

আবরন কিছু না বলে সোজা পূর্ণতা কে পাজকোলা করে তুলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা সিড়ির দিকে হাঁটা ধরল ।

পূর্ণতা আবরনকে বলছে ,

– আরে কি হচ্ছে টা কি ?? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ??

আবরন কিছুই বলছে না । ওর চোখে মুখে রাগ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ।

পূর্ণতা ভয়ে চুপসে গিয়েছে । পুনরায় আবরনকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস ও পাচ্ছে না ।

আবরন সরাসরি ওকে ফার্ম হাউজের ছাদে নিয়ে গেল । সেখানে নিয়ে গিয়ে ওকে নামিয়ে দিয়ে বলল ,

– যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো ।

পূর্ণতা ভয়ে কাপতে কাপতে বলল ,

– হু বলুন ।

– তুমি এখন আর বাচ্চা ন‌ও । তোমাকে যা বলতে চাইছি সেটা বাধ্য হচ্ছি তোমাকে বলতে । কারন এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যা অন্য কাউকে বলার মতো মুখ আমার নেই ।

পূর্ণতা বলল ,

– কি বলতে চাইছেন ?

আবরন পূর্ণতার দিক থেকে মুখ ঘুরে ছাদের রেলিংয়ের দিকে যেয়ে বলল ,

– বিষয়টা তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর আর আমার ফ্রেন্ডের মধ্যে ঘটেছে ।

পূর্ণতা বলল ,

– সোজাসুজি বলুন । আমি কিছু বুঝতে পারছি না ।

– তুমি আর আমি একটা ভুল করেছি অনেক বড় । আর এর সমাধান এখন আমাদেরকেই করতে হবে ।

পূর্ণতা বিরক্ত হয়ে বলল ,

– আরে আপনি কখন থেকে কথা ঘোরাচ্ছেন !! বলুন কি হয়েছে ??

আবরন বলল ,

– তোমার মনে আছে গত কাল রাতে প্রেনা আর আয়মানকে এক রুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ??

– হু । তো ??

– পাঠিয়েছিলাম তো এই ভেবে যে ওরা দুই রুমে থেকে দুইজন দুইজনের সাথে গল্প করছে , তার চেয়ে বরং এক রুমে থেকে সারারাত গল্প করুক ।

– হুম । এখন কি হয়েছে ??

– ওদের এক রুমে পাঠানো উচিত হয় নি পূর্ণ । ওরা কালকে গল্প করতে করতে নিজ ইচ্ছাতেই দুইজন দুইজনের অনেক ক্লোজে চলে গিয়ে অনেক বড় একটা ভুল করে বসেছে ।

পূর্ণতার চোখ দিয়ে এই কথা শুনে টুপ করে এক ফোঁটা পানি পড়ে গেল ।

– ওরা কাউকে বিষয়টা বলেও নি !! আজকে তো পুরো দিন পার হয়ে গিয়েছে । আয়মান এখন এসে আমাকে এই কথা বলছে । ওরা নাকি আজকের দিনটা নষ্ট করতে চায় নি । কিন্তু ওরা আজকের দিন বাঁচাতে গিয়ে বাকি জীবন টা কেন নষ্ট করলো ???

পূর্ণতা কাদতে কাদতে আধো আধো স্বরে বলল ,

– আ..আমা..কে .. একটু নি..চে.. নিচে নিয়ে যাবেন ?? আ…মার খুব ক..কষ্ট হচ্ছে !!

পূর্ণতার এমন স্বর শুনে আবরন পিছু ঘুরে জলদি পূর্ণতা কে এসে জড়িয়ে ধরল । আবরন জড়িয়ে ধরাতে এবার আর পূর্ণতা নিজেকে সামলাতে পারলো না । ভিতরের সব কষ্ট কে এক সাথে কান্নার মাধ্যমে বের করে দিল ।
কাদতে কাদতে বলল ,

– এটা কি করলো ওরা ?? কেন করল ?? কি হবে এখন ?? ভাইয়াকে কি জবাব দিব এই ব্যাপারে ?? বলুন না , চুপ করে আছেন কেন ???

আবরন শক্ত করে পূর্ণতা কে চেপে ধরে বলল ,

– তুমি এভাবে কাদলে আমরা এটার সমাধান কি করে করবো ?? এতে দোষ কিন্তু আমাদের‌ও আছে । সমস্যার সমাধান ও কিন্তু আমাদেরকেই করতে হবে । তুমি কান্না বন্ধ করো প্লিজ । আর আমি বলা না পর্যন্ত তুমি কাউকে এ কথা জানিও না কেমন ?? এমনি প্রেনাকে ও না । কালকের দিনটাই তো সবাই এক সাথে আছি । তারপর তুমি আর আমি মিলে একটা ডিসিশন নিব । তুমি শক্ত হ‌ও । ভেঙ্গে পড়ো না ।

পূর্ণতা কেদেই যাচ্ছে । আবরন বলল ,

-তুমি প্রমিজ করো আমাকে তুমি কাদবে না আর বিষয়টা কাউকে জানানো তো দূরের কথা কাউকে বলবেও না । প্রমিজ মি !

পূর্ণতা কাদতে কাদতেই মাথা নেড়ে বলল ,

– প্রমিজ ।

আবরন নিজের বুক থেকে পূর্ণতার মাথা তুলে ওর চোখ গাল নিজের আঙ্গুল দিয়ে মুছে নরম কন্ঠে বলল ,

-হুম । আর কেদো না । একটা ব্যবস্থা হবেই । আমরা কি জানতাম নাকি ওরা এত বড় অঘটন ঘটাবে ?? তুমি আর আমিও তো একসাথে ছিলাম । আমাদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে ?? কিছুই তো হয়নি । ওরা শয়তানের পাল্লায় পড়ে ভুল করেছে । এখন আপাতত ভুলে যাও ।

তোমাকে এখন জানাতাম না , কিন্তু না জানালে আমি নিজেই এ কথা পেটে চেপে রাখতে রাখতে মরে যেতাম । হঠাৎ মনে হলো , মরলে একা মরবো কেন ?? তোমাকে সাথে নিয়েই মরি !!

পূর্ণতা ঠোঁট উল্টিয়ে আবরনের বুকে দুই চারটা কিল ঘুষি মেরে বলল ,

– এমন একটা সিচুয়েশন এ ও আপনি মজা নিচ্ছেন ??

আবরন নিজের দুই হাত পূর্ণতার গালে রেখে বলল ,

– কি করবো তাহলে বলো ?? তোমাকে না জ্বালালে তো আমার পেটের ভাত হজম হয়না । তাই আরকি !!

পূর্ণতা নিজের গাল থেকে আবরনের হাত ছাড়িয়ে বলল ,

– ধুর ! খারাপ লোক একটা !!

এই বলে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন পেছন থেকে হাত টেনে বলল ,

– যাক , এখন মনে হচ্ছে তোমার বিয়েটা আগে হচ্ছে না । আয়মান আর প্রেনার বিয়েই আগে হবে ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে ঘুরে বলল ,

– ওদের বিয়ে পড়িয়ে দেবেন ??

– তাহলে কি করবো আর ?? কিন্তু এখন বিয়ে পর্যন্ত কথা কিভাবে এগিয়ে নিব সেই চিন্তাই করতে হবে ।

– হুম ।

– আচ্ছা বাদ দাও । চলো ।

এই বলে আবরন পূর্ণতা কে আবারো পাজকোলা করে নিল । পূর্ণতা বলল ,

– আরে আপনি যখন তখন এভাবে কোলে তুলেন কেন ? ভয় লাগে তো আমার !

– এটা কোনো কথা বললে ?? কোলে চড়লে আবার ভয় কিসের ! ভয় তখন পেতে পারো যখন আমি তোমাকে ঠেলে ধাক্কিয়ে ফেলে দিতে চাইবো , কিন্তু আমি কি সেটা করি ?? So , here is nothing to be afraid .

পূর্ণতা হেসে বলল ,

– হয়েছে এখন লেকচার বন্ধ করে চলুন আর নাহলে আমাকে নামিয়ে দিন । আমি নিজেই হেঁটে চলে যাচ্ছি ।

আবরন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বলল ,

– থাক , আর কষ্ট করতে হবে না ।

পূর্ণতা হাসলো ।

রাতের ডিনার সবাই একসাথেই টেবিলে বসে করেছে কিন্তু আবরন আর পূর্ণতা স্বাভাবিক আচরন করেছে । কাউকে কিছু জানায় নি ।

প্রেনার সাথেও পূর্ণতা রুমে গিয়ে স্বাভাবিক আচরন করেছে । ওকে কিছুই বুঝতে দেয় নি ।

রাতে সবাই প্রথম রাতের মতো যার যার রুমেই ঘুমিয়েছে ।

………………………………………………..

সকাল ৯ টা ,

পূর্ণতা ঘুমুচ্ছে । হঠাৎই স্বজোরে ফোন বেজে উঠল । সাইড টেবিল থেকে ঘুমের চোখেই ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে আবরনের গলা শোনা গেল ।

– গুড মর্নিং । এখনো ঘুমাও ??

পূর্ণতা বলল ,

– হু । সাত সকালে কল দিয়েছেন কেন ?

– আর ইউ সিরিয়াস ? এখন সাত সকাল ??

– তাহলে ??

– এখন সকাল নয়টা বাজে । জলদি উঠো ।

– কেন ?

– বাহিরে যাবো ।

– এখন কেন ??

– কেন মানে ?? কালকে যে আমার ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করে ব্রাশের ১২ টা বাজিয়েছো ! তোমার কি মনে হয় আমি সেই ব্রাশ দিয়েই আজকে নিজের দাঁত মাজবো ?

– মাজতেও পারেন , এটা কোনো ব্যাপার হলো ! আমি পারলে আপনি পারবেন না কেন ?

– আমি কি তোমার মতো মাথা ফুলা নাকি ??

পূর্ণতা উঠে বসে রেগে বলল ,

– এই আপনি আমাকে মাথা ফুলা বলছেন ?

– আয়হায় , এতক্ষন শুধু মাথা ফুলা ভেবেছি এখন তো দেখছি তুমি ধ্যান্দাও আছো বটে ।

– এই , এই !! সমস্যা কি আপনার ?? সাত সকালে অপমান করতে কল দিয়েছেন ? রাখুন বলছি ।

– জি না । আপনি চলুন আমার সাথে । নতুন ব্রাশ কিনতে হবে ।

– আমার ফুলা মাথায় ই একটা দারুন বুদ্ধি এসেছে জানেন ??

আবরন বলল ,

– কি সেটা ?? 🤨

– টয়লেটে একটা বড় ব্রাশ রাখা আছে দেখুন । সেটা দিয়ে মেজে ফেলুন । কাল দেখেছিলাম । দেখে আন ইউজড ই মনে হলো । so , কষ্ট করে বাহিরে গিয়ে নতুন না কিনে , সেটা দিয়ে মেজে নিলেই তো হয় !! 😂

আব‍রন রেগে বলল ,

– ছি……. সকাল সকাল কি বললে ? ধুর , তোমাকে ফোন দেয়াই ভুল হয়েছে ।

পূর্ণতা ,

– 🤣

১০ টার দিকে ব্রেকফাস্ট সেড়ে একে একে সবাই রেডি হয়ে নিচে মেইন করিডোরে উপস্থিত হয়েছে । উদ্দেশ্য চট্টগ্ৰাম শহরের শপিং মল গুলো ঘুরে দেখা এবং কিছু পছন্দ হলে কেনা ।

আজকে সবাই জোড়ায় জোড়ায় সেইম কালার পড়েছে । পূর্ণতা আর আবরন ও সেইম কালার পড়েছে । আবরন স্কাই ব্লু পাঞ্জাবি আর পূর্ণতা স্কাই ব্লু ড্রেস পড়েছে ।

আবরন বলল ,

– লিসেন গাইজ , আজকে কোনো গাড়ি নিয়ে বের হবো না । সবাই রিকশায় ঘুরি । তোমার মতামত কি জিব্রান ভাইয়া ??

জিব্রান বলল ,

– হু , তাহলে তো রিক্সায় হাওয়া খেতে খেতে ঘুরতে পারবো । তাই না নাদিরা ?

নাদিরা বলল ,

– হুম । মজা হবে তাহলে ।

সবাই বলল ,

– ওকে , তাহলে চলো সবাই ।

টোটাল ৫ টা রিকশা ঠিক করা হয়েছে । সবাই একে একে রিকশায় উঠে বসলো । অবশেষে আবরন আর পূর্ণতা রিকশায় উঠবে ।

আবরন পূর্ণতা কে রিকশায় উঠতে বলল । পূর্ণতা রিকশায় উঠে একপাশে চেপে বসে আবরনকে উঠে বসার জন্য জায়গা করে দিল ।

যেতে যেতে পথে …………………..

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here