#ভ্রান্তির_অগোচরে
#পার্ট_১০_১১
লেখা আশিকা জামান
” সবুজ!!
তুই?? রাতুল আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছেনা। এই প্লিজ আমারে কেউ চিমটি কাট?”
ভুত দেখার মতো চমকে উঠে রবীন মিনমিনিয়ে কথাটা বলেই ফেললো।
সবুজ বাকী সবার মুখের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলো। সবার চোখেমুখে একি এক্সপ্রেশন। ওর বড্ড বিরক্ত লাগতে লাগলো। কালকে থেকে সবাই ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান লাগিয়ে দিয়েছিলো এই বারে আসার জন্য। আর এখন কি অদ্ভুতভাবেই না তাকাচ্ছে।
হ্যা ও ওদের মতো আগে কখনো এইসব ছাইপাঁশ খায়নি। তাই বলে যে জীবনেও খাবেনা এর কি কোন মানে আছে? তাছাড়া আগে এরকম অনেক কিছুই ও করেনি যা এখন করছে। হ্যা করবেইতো, এই দুদিনপর ও কানাড়া চলে যাচ্ছে। ওখানেতো এইসব ন্যাচারাল ব্যাপার। ওকেতো এইসব শিখতে হবে নইলেতো ওকে অসামাজিক ভাববে সকলে। নাহ্ এ হতেই পারে না। হঠাৎ মনের কোনে বিষাদ উকিঁ দিল খলবিলিয়ে। সত্যিইকি এইজন্যেই ও এখানে এসেছে
?” আপনাকে দেখলে আমার অসহ্য লাগে। প্লিজ আপনি আমার আর মেঘের জীবন থেকে অনেদূরে সরে যান। ”
মিমের দেয়া চিঠির এই অংশটুকো মনে হতেই সবুজ এক নাগাড়ে মদের গ্লাস তুলে নিতে লাগলো। ওর বন্ধুরা কোনভাবেইই ওকে থামিয়ে রাখতে পারলো। একপর্যায়ে ওর নেশা হয়ে যায় আর আবুলতাবুল বকতে থাকে। বন্ধুদের অনুশোচনা হতে থাকে ওকে এইরকম যায়গায় ডেকে আনাতে।এখন মধ্যরাত। প্রায় সাড়ে বারোটা বাজতে চললো। সবাই হয়তোবা এতোক্ষণে ঘুমে অচেতন। কেবল মিমের চোখেই বোধ হয় ঘুম নেই। কলমের হেড কামড়াতে কামড়াতে এখনো ঠাই পড়ার টেবিলেই বসে আছে । সামনে লাস্ট সেমিষ্টার এক্সাম! এখন না পড়লেই নয়। কিন্তু ও যে ঠিক কি কারণে এখন অব্দি পড়ার টেবিলে বসে কলম কামড়াচ্ছে এটা বোধ হয় ওই ভালো জানবে। সব পড়া মাথার উপড় দিয়া যাচ্ছে সাথে সাথে বিরক্তির রেশটাও ঘনীভূত হচ্ছে। চিঠিটা পাওয়ার পর সবুজের কি রিএকশন হবে এটা ভেবে ভেবে ওর মাথা আরো খারাপ হতে লাগলো।
সব জল্পনা কল্পনার অবসান তখনি ঘটলো। বেকার বসে অহেতুক চিন্তাভাবনা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আপতত ওর নেই। সহসায় উদ্ধত ভঙ্গিতে দরজার কিল আর ঘুষির শব্দ শোনা গেল। ব্যাপারটা বোঝার জন্য মিম তড়িঘড়ি করে দরজা খোলার জন্য ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ওপাশের মানুষটা যে দরজা খোলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকবে এটা কে জানতো! অজানা ভয় আর শিহরণে মিমের দম যায় যায় অবস্থা। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকার দুঃসাহস বোধ হয় মিমের আর অবশিষ্ট নেই।
দ্রুত পা চালিয়ে মিম উল্টোদিকে ঘুরতে নেয়। সবুজ হয়তোবা এই মুহুর্তে সেই সুযোগটা ওকে দিবেনা।
মুঠোয় ভরে দুহাত শক্ত করে ধরে ফেলে সবুজ, সাথে দেয় রোমীয় স্টাইলের হ্যাচকা টান। আর কোথায় যাবে! হুড়মুড়িয়ে সবুজের বুকেই আপাতত ঠাঁই হয় মিম পাগলির। মিম বুঝে উঠতে পারেনা ওর সাথে এসব কি হচ্ছে? ও কি স্বপ্নেবিভোর নাকি কল্পনায়?
নাকি পুরোটাই অতিবাস্তব!
কিন্তুর বুকের ওই ডিপডিপ শব্দ! ঘনঘন নিঃশ্বাস! কাছে আসার ব্যাকুলতা, আর অগ্নিসম উত্তাপ সারা শরীরের সমস্ত কোষ থেকে মস্তিষ্কের নিউরণে পরিচিলিত হচ্ছে! এই এতো এতো অজানা অপরিচিত অনুভুতির কি নাম দিবে ও….
কোন বাক্যবিনিময় না করে সবুজ মিমের নরম তুলতুলে চিবুক দুটো শক্ত করে উপরে তুলে ধরে। দুচোখের দৃষ্টিতে অনেক নাম না জানা ভাষা আঁকিবুঁকি করে উড়তে লাগলো। যার হদীস এতোদিনেও ওরা পায়নি।
উত্তেজনায় মিমের ঠোটদুটো থরথর করে কাপঁতে লাগলো। সারা শরীরে এক বিদ্যুৎসম অদ্ভুত দ্যোতনায় দুজনেই বারবার শিহরিত হতে থাকলো।
সবুজ তার উষ্ণ ঠোট দুটো দিয়ে মিমের ঠোট দখল করে নিলো। গভীর থেকে গভীরতম চুমোতে দুজন অজানায় হারিয়ে যেতে লাগলো।
কিছুকাল পর সবুজ হাপিয়ে উঠে মিমকে ছেড়ে দিলেও। ভালোলাগার রেশ কাটতে না কাটতেই সবুজ মিমকে পাঁজাকোলা করে বিছানার দিকে যেতে থাকে। গাড় গভীর নিঃশ্বসে মিম মূর্ছা যেতে লাগলো বারবার। সবুজের ঈষৎ লালচে দৃষ্টি আর রক্তজবার মত ঠোট মিমকে বুঝিয়ে দিতে লাগলো এখন কি হতে যাচ্ছে? লজ্জায় আর অদ্ভুত ভালোলাগায় মিম সবুজের গলা জড়িয়ে ধরে দু হাতের আলতো স্পর্শে।
মিমকে বিছানায় ফেলে সবুজ ওর সমস্ত ভর সমর্পন করতে যাবে, ঠিক তখনি মিম লজ্জা পেয়ে সরে যেতে লাগলে সবুজ ওর ঘাড়ে আলতো করে ঠোটের ছোঁয়া একে দেয়। মিম নিজেকে না সামলাতে পেরে বিদু্্যৎ গতিতে সবুজের গলা জড়িয়ে ধরে। এক হাত কানের ঠিক নিচে নরম চুলে ভেতর রেখে অন্য হাত দিয়ে মিমের ঠোটে স্পর্শ করতে থাকে সবুজ। মিমও বাধ্য মেয়ের মতো আদর আর ভালবাসায় লুটোপুটি খেতে লাগলো। সীমাহীন ভালোলাগা আর ভালোবাসার মিশেলে অদ্ভুত এক ঘোরের মাঝে সারারাত পার করলো দুই কপোত কপোতি।
পুব আকাশে ঈষৎ লালচে আভা আবছা থেকে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। খুব কাছে কোথাও নাম না জানা পাখির কিচিরমিচির শোনা যাচ্ছে। ব্যালকনিতে রাখা হাস্নাহেনার ফুলের সুবাসে পুরো ঘর ম,ম করছে। সকালের মিষ্টি রোদ পর্দার ফাঁক গলে সবুজের চোখেমুখে পড়তেই চোখ মুখ বাচ্চাদের মতো কুচকাতে থাকে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে মিমের ঘরে আবিষ্কার করে বিস্ময়ে ফেটে পড়ে সবুজ। হঠাৎই শরীর জুড়ে কারো স্পর্শ অনুভব করতে পারে। বাচ্চাদের মত গুটিসুটি মেরে এক হাত ওর কাধে রেখে বুকের ঠিক মাঝখানে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে মিম ঘুমুচ্ছে।
কয়েক সেকেন্ড হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থেকে কালকের রাতের কথা আরো একবার মনে করার চেষ্টা করে সবুজ। ফ্লোরে পড়ে থাকা কাপড়চোপড় সবুজের চিন্তার বেগ আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে। ছিঃ কালকে মিমের উপর জোড় করে এইসব করা ওর মোটেও ঠিক হয়নি। ঘুম থেকে উঠে মিম যখন রাতের কথা তুলবে তখন ও কি জবাব দেবে?
কালকে ওই নেশার ঘোড়ে যে কাজগুলো ও করেছে মিম কি স্বাভাবিক ভাবে নেবে?
মিমের কাছে কতোটা ছোট হয়ে গেছে ও? আর কিছু ভাবতে পারছেনা ও। হঠাৎ মিমের নিষ্পাপ মুখের দিকে চোখ পড়ে যায়। সমস্ত ভাবনাগুলো কোথাও যেন নিমিষের মাঝ হারিয়ে যায়। অনন্তকাল তাকিয়ে থাকার সুপ্ত বাসনা হৃদয়পটে উকিঁ দিতে থাকে।
কপালে আলতো করে চুমো একে দিয়ে সবুজ চোরের মত বিছানা থেকে উঠে আসে।
এরপরের কয়েকটা দিন মিমের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলো সবুজ। মিমের সামনে পড়ার ভয়ে নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে নিলো ও। এরমধ্যে কানাডা যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসলো হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে গেলেও মুখে টু শব্দটুকু করতেও ভুলে গেলো সবুজ। অধিকার ছেড়ে দিয়ে পুনরায় অধিকার আদায় করার মাঝে কোন সুখ নেই। জোড় করে কাউকে বেধে রাখাটাও ওর নীতির বাইরে।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সবুজ শেষবারের মতো মিমের সাথে দেখা করতে যায়।
” মিম, আমি চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো।”
#পার্ট_১১
নীলচে আকাশ সহসাই মেঘে ছেয়েঁ গেলো। যেকোন সময় বর্ষন শুরু হতে পারে। কোথা থেকে যেন দমকা বাতাস এসে চারপাশ লণ্ডভণ্ড করে দিতে লাগলো। বাতাসের বেগ এমনি যে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকাটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিম ব্যালকনির গ্লাসটা লাগিয়ে দিয়ে রুমে এসে পড়লো। রুমে ঢুকেই টেবিলের উপর চোখ পড়লো। প্লেটে ভাত তরকারি ঢাকা আছে। জরির মা বোধ হয় রেখে গেছে। এতোবার করে বলার পরো ও খাবার কেন নিয়াসলো। ওর যে খেতে ইচ্ছে করছে না এটা কি ও বূঝেনা।
“জরির মা, এই জরির মা…”
মিম বেশ উচ্চ্বস্বরেই কেকিয়ে উঠলো।
ইদানীং হুট করে মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
” জে আফা আইতাছি। খালারে ওষুধটা খাইয়ে দিয়াই আসতাছি।”
জরির মা নিচ থেকে শিউলি চৌধুরীর রুম থেকেই উত্তর কাটলেন।
” কি হয়েছেরে? ওইভাবে চিল্লাচ্ছে কেন?”
বিছানায় শোয়ে শোয়েই ভ্রুকুচকে জরির মায়ের দিকে তাকায় শিউলি।
” ঘরে খাবার দিয়া আসছি দেইখা,বোধ হয় আফা চেতছে?”
” তোকে নবাবজাদীর জন্য রুমে খাবার কে নিয়া যাইতে বলছে। দুপুরেওতো দেখলার খাবার নষ্ট করলো। এতো খাবার আসে কোথেক্কে?”
জরির মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর আমতা আমতা করে বলতে থাকে,
“আসলে আফার মনটাতো ভালা না। জামাই বিদ্যাশ বুঝেননা ক্যা। তাইতো ওমুন করে। হুটহাট মন মেজাজ খারাপ হয়া যায়। কি আর করবো বেচারি। ”
আর কিছু হয়তোবা বলতে চাইছিলো জরির মা কিন্তু শিউলি ওকে থামিয়ে দেয়।
” চুপ থাক। আমার ছেলে চলে গেছে এতে যা ক্ষতি হবার আমার হইছে। ওতো বেশ খুশিই হইছে। এখন এইসব না খাওয়ার নাটক করে আমাকে ভুলানো যাবে নাহ্। ”
” কিন্তু খালাম্মা… ”
” তোর কাজ শেষ হলে যা এখান থেকে। আর তোকে সাবধান করে দিচ্ছি মিমের হয়ে কিছু আমাকে বলতে আসবিনা।”
জরির মা চুপচাপ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। এইসব বড়লোকেদের এতো প্যাচগোচ ওর মাথায় ঢুকে না।
” এই তোকে আমি না করেছিলাম নাহ্ খাবার নিয়াসতে। বলেছিলাম না খাবোনা। শুনিস নাই কেন? এই খাবারের প্লেট এখানে কি করছে”
মিম হাতের সামনে তরকারির বাটি চোখের পলকের মাঝেই ফ্লোরে ছুড়ে মারে। ভাতের থালা ছুড়ে মারার আগেই জরির মা ধরে ফেলে।
” আফা প্লিজ ফালাইয়েন না। আমি নিয়া গেতাছি। আমার ভুল হয়ে গেছেগা। ”
মিম আর জরির মায়ের মধ্যে খাবার নিয়ে একদফা ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।
ধস্তাধস্তি শেষটা হয় শিউলি চৌধুরীর আগমনে।
এসেই গমগম করে বলে উঠে,
” মিম এটা ভদ্রলোকের বাড়ী। এইরকম ছোটলোকের মতো চিল্লাচিল্লি করবানা।
আর তোমার এইসব নাটক এইবার বন্ধ করোতো। অনেক হইছে..।”
” কিসের নাটক। আমি নাটক কেন করবো?”
মিম মিনমিনিয়ে কথাটা বললো।
” এই একদম মিনমিনিয়ে কথা বলবিনা। আমার ছেলেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েতো তোর শখ মিটেনি। নাকি আরো ক্ষতি করার বাকী আছে?
তুই যদি আমার ভাইয়ের মেয়ে না হতি তোকে আমি একদম দেখে নিতাম।”
মিম নিঃশ্বব্দে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ছোট থেকেই ঝগড়া করতে খুব খারাপ লাগে । হয়তোবা ওর সময়টাই খারাপ। তাই একটারপর একটার ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে।
মিম দৌড়ে ছাদে যাওয়ার সিড়ির দিকে পা বাড়ায়।
” দেখছিস কেমন বেয়াদব, আমাকে রুমের ভেতর রেখে ড্যাংড্যাং করে ছাদে চলে গেলো!”
” খালাম্মা, আপনারেতো আফা এইহানে আসতে কয় নাই। আফনে নিজ ইচ্ছায় আসছেন। আফার ঝগড়া করতে ইচ্ছা হইতাছেনা দেইখাই না ছাদে গেলো। ”
” জরির মা, তুই বেশি বাড়ছোস!”
শিউলি চৌধুরী আরো কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু জরির মা রাগে ফুসতে ফুসতে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
নিঃশব্দে চোখের জল ফেলা ছাড়া মিমের আর কিছু করার নাই। ভুলের মাসুলতো দিতেই হবে তাইনা।
সবুজের শেষ কথাটা মনে হতেই হাটু গেড়ে ছাদে বসে গেলো মিম।
চিঠির ব্যাপারটা নিয়ে পুনরায় ভাবনায় ডুবে গেলো মিম। ফ্ল্যাশব্যাকে সবুজের সাথে ওইদিনের কথোপকথন মনে পড়ে গেলো।
সমস্ত দ্বিধা উপেক্ষা করে ঢোক গিলে নিয়ে সবুজের দিকে প্রশ্নটা ছুড়েই দেয় মিম,
” শোনোন আপনি কি আমার চিঠিটা পান নি?”
” হ্যা পেয়েছি। ভেবেছিলাম যাওয়াটা বোধ হয় হবেনা কিন্তু না চিঠিটা পাওয়ার পরতো এখানে থাকা আর চলেনা। তুমি খুব ভালো মেয়ে। দেখো জীবনে অনেক বড় হবে। আর মেঘ তোমাকে খুব হ্যাপি রাখবে । তোমার সমস্ত অপূর্নতা মেঘ কানায় কানায় পূর্ন করে দিবে। আর কখনো কিছু নিয়ে আফসোস করতে হবে না।”
যথাসম্ভব দৃষ্টি অবনত রেখে কোনরকমে ধরা গলায় কথাটা বলেই নিঃশ্বব্দে সবুজ ওর সামনে থেকে প্রস্থান করে।
কিছুক্ষণ মিম স্তব্ধ হয়ে যায় । নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেনা। এখানে যে মেঘের কারসাজি আছে এ ও ভালো করেই বুঝতে পারছে।
সবুজকে আটকানোর কোন ভাষা ওই মুহুর্তে ওর ছিলোনা।
তবে মেঘকে ও দেখে নিবে।
বদমাইশটার মোটিভ ওকে জানতেই হবে?
সেদিনই মেঘকে ও দেখে নিতো কিন্তু জুচ্চোরটা সেদিনই বাড়ি থেকে চলে গেছে। বদমাইশ টার সেদিনই ছোট চাচ্চুর বাসায় যাওয়ার সখ হয়েছে। মনে মনে সীমাহিন তিক্ততা নিয়ে মিম চুপ করে যায়।
” সবুজ তুমি ছাড়া যে আমি অপূর্ন এটা তুমি কেন বুঝলেনা। মেঘের কথায় এভাবে ভুল বুঝতে পারলে?
অন্তত একমাস ধরেতো একটা খোজ নিতে পারতে। এইভাবে পর করে দিলে?”
মিমের কিছু ভালোলাগছেনা। হঠাৎ করে শরীর খারাপ লাগছে। চোখে কেমন যেন ঝাপসা দেখছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীটা ওর মাথার উপর প্রবল বেগে ঘুরছে। উড়ে দাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতেই ধপাশ করে পড়ে গিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। ভাগ্যভালো জরির মা পিছন পিছন ঠিক ছাদে এসেছিলো। চিল্লানি দিয়ে বাড়ি মাথায় করে তুলে। শিউলি এসে চোখেমুখে পানি দিতেই মিমের সেন্স ফিরে।
নিজেকে শাশুড়ির কোলে আবিষ্কার করতেই তাড়াহুড়ো করে ঠিক করে উঠে বসে ও।
” তুই কি ভেবেছিস? এইভাবে না খেয়ে অসুস্থ হয়ে আমাকে জ্বালাবি? এ আমি কিছুতেই হতে দিচ্ছিনা। জরির মা, তুই খাবার দে ওকে কিভাবে খাওয়াতে হয় সেটা আমি দেখছি।”
জরির মা টেবিলে খাবার দিয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে।
মিম চেয়ারে বসে একবার শাশুড়ির দিকে আরেকবার খাবার দিকে তাকায়। না চাইতেই চোখ দিয়ে নিঃশ্বব্দে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
শিউলি চৌধুরী মিমের মাথায় আংগুল দিয়ে গুঁতো দিয়ে ওর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকায়।
” কিরে এতো পিরীতি এতোদিন কোথায় ছিলো? ছেলের সামনেতো একবারো দেখাতে পারোস নাই। আমার সামনে চোখের পানি ফেইলা কোন লাভ হবেনা।”
মিম এইবার দ্বিগুন জোড়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো।
শিউলির মনে হচ্ছে মেয়েটাকে জাস্ট থাপ্পড় দিতে। কেমন বেয়াদব ভাতের প্লেট সামনে নিয়া চোখের পানি ফেলতেছে।
” এই শোন এই ভাতের প্লেট নিয়া কান্না করতাছিসতো দেখিস একদিন এই ভাতের জন্যে কেমন হাহাকারটাই না করতে হয়। সেদিন বুঝবি। এর আগে না।”
দাতে দাত চেপে কথাটা বলেই শিউলি জোড় করে মিমের থুতনি ধরে ভাত খাওয়াতে যায়। কয়েকদফা জোড় করে গিলানোর পর মিমের পেটের নাড়ী ভুড়ি উলটে আসতে লাগলো। ও গড়গড় করে বমি করে দিলো।
শিউলি চৌধুরী চরম আক্রোশে ফেটে পড়লেন।
” এই মেয়ে ইচ্ছে করে আমার উপড়ে বমি করে দিলো। কেমন বেয়াদবরে বাবা। জরির মা আমার সামনে থেকে ওরে সরা। ও যেন ভুলেও আমার সামনে না আসে।”
রাগে গজগজ করতে করতে শিউলি চৌধুরী ওয়াশরুমের দিকে যায়।
চলবে।।