ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ১২

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_12
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

বেলকনির দোলনায় বসে টেবিলে পায়ের উপর পা তুলে স্পর্শ সিগারেট টানছে ।আর ভাবছে আজকে রিসোর্টে কাটানো মুহূর্তগুলো ।বিশেষ করে নাফিয়ার কথা ।না চাইতেও বারবার তার চোখে ঐ বোকাসোকা মেয়েটার চেহারা ভেসে আসছে ।স্পর্শ আগে কখনো এত বোকা আর ভীতু টাইপের মেয়ে দেখেনি ।আজকালকার ডিজিটাল যুগের মেয়েরা অনেক স্মার্ট আর বুদ্ধিমতি ।তারা যেমন ঘর সামলায় তেমনি বাহির-ও সামলায় ।কিন্তু নাফিয়া !তার মনে হয় ওকে যদি ভুল করে কেউ ঢাকার রাস্তায় একা রেখে চলে যায় তাহলে হয়ত দেখা যাবে রাস্তায় বসেই মেয়েটা কান্নাকাটি করে গড়াগড়ি খাচ্ছে ।ভাবতেই স্পর্শ ফিঁক করে হেঁসে দিল ।সিগারেট টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে গ্যালারিতে ঢুকল ।গ্যালারিতে ঢুকতেই নাফিয়ার কতকগুলো পিক চলে এল যেগুলো সে নাফিয়ার অগোচরে তুলেছিল ।নাফিয়ার একটা পিকে তার চোখ আটকে গেল ।ঠোটে মুচকি হাঁসি , কানে গুজা কাঠগোলাপ আর চেহারায় একফালি রশ্নি নাফিয়াকে অপরুপ লাগছে ।আলো ছায়ার মাঝে পিকটা তুলাতে নাফিয়াকে হলুদ পরী মনে হচ্ছে ।তার কি হল সে জানেনা মনের অজান্তেই সে নাফিয়ার পিকটাতে টুপ করে চুমু খেয়ে বসল ।পরোক্ষনে নিজের কাজে সে নিজেই হতভম্ব হয় ।সে চোখমুখ খিঁচে মাথাটা দুইতিনবার ঝাকিয়ে নাফিয়ার সবগুলো পিক ডিলেট করে দিল ।নাহলে দেখা যাবে আজকে রাতে আর ঘুম হবে না তার ।একটু আগে যে অপত্যাশিত কাজটা করল তা প্রত্যাশিত রূপ ধারন করার আগেই পিকগুলো ডিলেট করাই ঠিক মনে হল তার ।আর ভাববেনা সে ঐ বোকা মেয়েটাকে নিয়ে ।বেলকনি থেকে রুমে এসে এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দিল ।স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও এতক্ষণ ঘামছিল প্রচুর সে ।বিছানায় শুয়ে চোখবুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু তার অশান্ত চোখজোড়ায় ঘুম যে ধরা দিচ্ছেনা …।
মোবাইল থেকে নাহয় কারো ছবি সহজেই ডিলেট করা যায় কিন্তু চোখের সামনে যে চাহারাটা বারবার ভাসে সেই চেহারা কি আদৌ ডিলেট করা যায় ?
_____________________

সকালের সূর্যের তীর্যক রশ্নী সারা চেহারায় পরতেই নাফিয়া চোখ কুঁচকে বিছানা ছেড়ে উঠে বসল ।পাশে রিয়াকে শোয়া দেখতে পেলনা ।তারমানে অনেক বেলা হয়ে গেছে ।সে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিল কয়টা বাজে জানার জন্য ।সময় দেখতেই তার চোখ কপালে উঠে গেল ।সে চোখ বড়বড় করে বিরবির করে বলল হা…….দশটা বিশ বেজে গেছে ।ইয়া আল্লাহ এত ঘুম কিভাবে ঘুমাইলাম ? পরোক্ষণে নাফিয়া ভাবে অবশ্য এতবেলা করে ঘুমানোর-ই কথা কারন কালকে রাতে তিন্নি ফোন করেছিল আর ওর সাথে অনেকরাত পর্যন্ত কথা বলেছিল ।যার ফলে বিছানায় শুতে অনেক রাত হয়ে যায় ।নাহলে আজকেও সে তাড়াতাড়ি করেই ঘুম থেকে উঠত ।নাফিয়া আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রইংরুমে এল ।কিন্তু ড্রইংরুমে কাউকে দেখতে পেলনা ।গেল কই সবাই ? এদিকে ক্ষুধায় পেট জ্বলছে তার ।অন্যর বাড়িতে কাউকে না বলে খাবার খাওয়াটা কেমন যেন দেখায় !তাই সে রান্নাঘরে গিয়ে দুইগ্লাস পানি খেয়ে রুমে চলে যেতে নিলেই কেউ পেছন থেকে তাকে ডাক দেয় ।ডাক শুনে সে পেছন ফিরে তাকায় । নাফিজ আঙ্কেলকে দেখতে পেয়ে সে মেকি হাঁসি দিয়ে বলল

শুভ সকাল আঙ্কেল ।

নাফিজ রহমান জবাবে বললেন শুভ সকাল ।সেকি তুমি নাস্তা না করে চলে যাচ্ছিলে কেন? তোমার আন্টি তোমার জন্য নাস্তা রেখে পাশের বাড়িতে গেছে ।একটু পর-ই এসে পরবে ।তুমি টেবিলে গিয়ে বসো আমি রান্নাঘর থেকে তোমার
নাস্তা এনে দিচ্ছি ।

নাফিজ আঙ্কেলের কথায় নাফিয়া খুব অবাক হল ।সে ভাবে কই তার বাবা তো কোনোদিন তাকে এভাবে বলেনি উল্টো সে যদি মনের অজান্তেও কোনো ভুল করে ফেলত তাকে উল্টো না খায়িয়ে রাখতো তার বাবা ।এটা শুধু তার বেলাতেই না বাড়ির প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য এই নিয়মটা তার বাড়ির পুরুষরা তৈরি করেছে ।

কি হলো মা যাও ।টেবিলে গিয়ে বসো আমি নাস্তা এনে দিচ্ছি ।

নাফিজ আঙ্কেলের কথায় সে সংবিৎ ফিরে পেল ।সে তড়িৎগতিতে বলল

না না আঙ্কেল আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা ।আমি নিজে খেয়ে নিতে পারব ।

কিন্তু তুমি তো নাস্তা না করেই চলে যাচ্ছিলে ।না না তোমায় আর আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা মা পরে যদি তুমি আর না খাও ।নাফিজ রহমান এবার নাফিয়ার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসাল ।তারপর তিনি রান্নাঘরের উদ্দেশ্য ছুটল ।নাফিয়া অপলোক চোখে তাকিয়ে আছে নাফিজ রহমানের যাওয়ার দিকে ।তার চোখজোড়া থেকে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে ।গলাটা ভারী হয়ে আসছে ।এত ভালোবাসা ! তার নিজের জন্মদাতা পিতা-ও তার সাথে কোনোদিন ভালোভাবে দুটো কথা বলেনি কিন্তু যার সাথে মাত্র দুদিনের পরিচয় এই লোকটা কত মায়া , স্নেহ দিয়ে তার সাথে কথা বলছে ভাবতেই তার চোখের পানি উপচে পরছে ।এই মুহূর্তে সে কোনোভাবেই নিজের কান্না আটকে রাখতে পারছেনা ।

সে কি মা তোমার চোখে পানি কেন ? কিছু হয়েছে ? নাফিজ রহমান চিন্তিত হয়ে বললেন ।

নাফিয়া নিজেকে সামলে মুচকি হেঁসে বলল না না আঙ্কেল আমি ঠিক আছি ।আপনি চিন্তিত হবেন না প্লিজ ।

নাফিজ রহমান নাস্তার প্লেট টা নাফিয়ার সামনে রেখে মুচকি হেঁসে বলললেন

তাহলে তুমি নাস্তা করে নাও ।আমি একটু বের হচ্ছি ।একটু পরেই তোমার আন্টি এসে পরবে আর রিয়াও এসে পরবে ।ও ওর বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গেছে চলে আসবে একটু পর ।ভয় পেয়োনা ঠিক আছে ।

নাফিয়া মাথা হালকা কাত করে বলল ঠিক আছে ।আপনি চিন্তা করবেন না আঙ্কেল ।নাফিজ রহমান প্রত্যুত্তরে মুচকি হেঁসে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
নাফিয়া তার বাবা , চাচা , আর ভাইদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভাবত এই দুনিয়ার সব পুরুষরা-ই খারাপ তার বাবা , চাচা , ভাইদের মত কিন্তু আজকে নাফিজ আঙ্কেলকে দেখে তার ধারনা পাল্টে গেল ।হ্যাঁ সব পুরুষ খারাপ হয়না কিছু কিছু পুরুষ আছে যারা মেয়েদেরকে সম্মান , ভালোবাসা , মায়ায় জড়িয়ে রাখে ।
নাফিয়া মুচকি হেঁসে চোখজোড়া মুছে খাবার খেতে লাগল ।
__________________

রিয়া বান্ধবীর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে কেউ তার পেছন পেছন আসছে ।সে ঢোক গিলে পেছন ফিরে তাকাল ।তবে সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেল না ।মনের ভুল ভেবে সে আবার হাঁটা ধরল ।চিঁপা গলিতে পা রাখতেই হ্ঠাৎ করে কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াল ।
নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই রিয়ার চোখজোড়া বড়বড় হয়ে যায় ।আকষ্মিক এমন ঘটনায় রিয়া চমকে উঠে ।রিয়া তার বামপাশে তাকিয়ে দাঁত কিড়িমিড়িয়ে বলে

আয়ান ভাই এতক্ষণ আপনি আমায় ফলো করছিলেন ?

আয়ান বলল হ্যাঁ করছিলাম ।কেন তুমি ভয় পেয়েছো নাকি ?

রিয়া মুখ ভেংচি দিয়ে বলল ভয় পাবোনা ?বলা নেই কওয়া নেই এমনভাবে ভূতের মত কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় ?

আয়ান বলল আমি না বলে কয়েই আসি ।তুমি ভয় পেলে আমার কি ? যাইহোক তোমাকে যেকথা বলতে আসছিলাম…
আমার রিপ্লাই কই ?

রিয়া ঢোক গিলে বলল , ক্ কিসের রিপ্লাই ?

আয়ান চোখজোড়া কুঁচকে বলল কালকে যে প্রপোজ করলাম তার রিপ্লাই দাও এখন ।

রিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরদিন ওদের সামনে এসে দাঁড়াল ।সে এই গলি দিয়েই আসছিল দূর থেকে রিয়া আর আয়ানকে কথা বলতে দেখে সে ভ্রু
কুঁচকে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় ।
রিয়া আর আয়ান আরদিনকে দেখে থতমত খেয়ে গেল ।আরদিন দুজনকে চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল

কি ব্যাপার ? তোরা কি কথা বলছিস ? তাও এখানে !

আয়ান রিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে আরদিনকে জবাবে বলল
তোর বোন একা একা বাড়ি ফিরছিল ।আমি তাকে বললাম তার বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেই কিন্তু সে রাজী হচ্ছিল না ।উল্টো আমার সাথে ঝগড়া করছিল ।

রিয়া মনে মনে বলল মিথ্যুক একটা ।

আরদিন বলল ও যেতে পারবে সমস্যা নেই ।চল আমরা ক্লাবে যাই স্পর্শ আমাদের জন্য ওয়েট করছে বলেই আরদিন রিয়াকে বলল বাড়ি চলে যেতে ।রিয়া সামনে পা বাড়ালে তারা দুজন-ও ক্লাবের উদ্দেশ্য চলে গেল ।
______________________

রাতে নাফিয়া বিছানায় বসে একটা গল্পের বই পড়ছে ।খুব মনোযোগ দিয়ে সে গল্প পড়ছে ।যেন সে একেবারে গল্পটাতে ঢুবে গেছে ।এই মুহূর্তে একমাত্র গল্প পড়া ছাড়া কোনোকিছুতেই খেয়াল নেই তার।

মা তোমার সাথে কিছু কথা ছিল !

নাফিয়া বই থেকে মাথা তুলে সামনে তাকাতেই খুব অবাক হল ।আন্টি , আঙ্কেল , রিয়া আপু আর আরদিন সবাই চিন্তাগ্রস্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।হ্ঠাৎ কি হল সবার ? সবাইকে এত চিন্তিত দেখা যাচ্ছে কেন ?আর তাকেই বা কি বলতে চায় ? ভয় হচ্ছে খুব ওকে কি আর থাকতে দিবেনা এই বাড়িতে ?এটাই কি সবাই তাকে বলতে এসেছে ।ভয়ে নাফিয়ার গলা শুকিয়ে আসছে ।মাথায় আঝেবাঝে চিন্তাভাবনা আসছে ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here