#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৪
অনার্স ৩য় বর্ষের ছেলেদের এই গ্রুপটার মেইন লিডার হলো রাফি।ছেলেটা চরম লেভেলের বখা’টে।শুধু ও না ওর পুরো গ্যাং টাই এমন।ওদের কাজই হলো ভার্সিটির মেয়েদের জ্বালা’তন করা।আজও তাই করতে এসেছিল।কিন্তু এখন ভয়ে সিটিয়ে আছে।কারন সামনে রুদ্রিক আর ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে।রুদ্রিকের বাঘের ন্যায় ধারালো দৃষ্টি দেখেই ওর ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।তাও নিজের ভয়টাকে প্রকাশ না করে রাফি বলে উঠল,’ রুদ্রিক ভাই আপনি এখানে কেন এসেছেন?আমাদের ঝামেলা আমরা মিটিয়ে নিতে পারব।আপনার এখানে হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই।’
রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে বলে,’ সে তো দেখতেই পাচ্ছি আমি।যে কিভাবে তোরা ঝামেলাটা মিটাচ্ছিস।আগের ডোজটা বুঝি কম হয়ে গিয়েছিল?সমস্যা নেই এইবার ধরলে একেবারে বছর খানিক লাগবে তোর সেরে উঠতে।’
রুদ্রিকের শান্ত কণ্ঠের অপমানে রাফির রাফে ফেটে পরল।রাগি গলায় বলে,’ দেখেন আপনারা আমাদের সিনিয়র, তাই বলে যখন তখন আমাদের গায়ে হাত তুলতে পারবেন নাহ।এইবার কিন্তু ফলাফল ভালো হবে নাহ।আর কি এমন করছি আমরা?ভার্সিটিতে এসে একটু আকটু মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করলে কি এমন হয়?’
ইহান চরমভাবে রেগে গেল রাফির কথায়।রাফির দিকে তেড়ে যেতে যেতে বলে,’ রুদ্রিক তুই অযথা কথা বারাচ্ছিস কেন?এই সা’লাকে পিটিয়ে ওর ফ্লার্ট করার মজা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।’
রুদ্রিক ইহানকে থামিয়ে দিলো।বলল,’ আহ,থাম ইহান।আজ ভার্সিটিতে একটা পোগ্রাম হচ্ছে।অযথা ঝামেলা করিস নাহ।’
সাফাত রুদ্রিকের কথা সম্মতি জানিয়ে বলে,’ হ্যা ইহান।থেমে যাহ।একে পরে দেখে নেওয়া যাবে।’
ইহান শান্ত করল নিজেকে।তারপর বোনের কাছে গেলো জলদি করে।অথৈর গালে হাত রেখে বলে,’ঠিক আছিস তুই?ওরা তো কিছু করেনি তাই নাহ?’
অথৈ শ্বাস ফেলে বলে,’ নাহ ভাইয়া। আমি ঠিক আছি।আর কার এতো সাহস যে জাফ্রিন অথৈকে কিছু করবে।’
বলেই অথৈ ফু দিয়ে সামনের চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে একটু ভাব নিলো।ইহান হেসে দিলো অথৈর কান্ডে।হেসে হেসেই বলে,’ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম শেওড়া গাছের শাক’চুন্নিকে কেউ কিছু করতে পারে নাকি।উলটো না তার ঘাড় মট’কে দিবে।’
ইহানের হাসি দেখে গাল ফোলালো অথৈ।ইহান অথৈর সেই ফুলো গাল ধরে টেনে দিলো।তারপর রিধি আর পিহুর উদ্দেশ্যে বলল,’ তোমরা ঠিক আছ?’
‘ হ্যা ভাইয়া ঠিক আছি।’ বলল পিহু আর রিধি।
রিধি ফের বিরবিরালো,’ ভাইয়ার গুষ্টি কিলা’ই।আপনি তো হবেন আমার ছাইয়া।’
ইহানের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল।প্রিয়ান ওকে রিধিকে হাসতে দেখে ওর কানে কানে বলে,’ যেভাবে দেখছিস, মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলবি।ছিঃ মার্কা নজর তোর।’
রিধি প্রিয়ানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল।দাঁতেদাঁত চিপে বলে,’ আমার ইহানকে আমি চোখ দিয়ে গিলে খাবো নাকি ঠোঁটে চুমু খাবো তাতে তোর কি?’
রিধির এমন লাগামছাড়া কথায় শুনে প্রিয়ান ‘ আসতাগফিরুল্লাহ! আসতাগফিরুল্লাহ!’ বলতে বলতে সরে গেল।আহিদ,পিহু হাসতে হাসতে শেষ।
এদিকে রাফিদের এখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক শক্ত কণ্ঠে বলে,’ যাচ্ছিস না কেন?’
রাফি রুদ্রিকের এমন শক্ত কণ্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে গেল।তারপর চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।নীল রাগি গলায় বলে,’ এটাই লাস্ট ওয়ার্নিং তোদের জন্যে।নেক্সট টাইম এমন কিছু চোখে পরলে তোরা আর জীবনেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবি কিনা সন্দেহ হবে।সো বি কেয়ারফুল।’
রুদ্রিক,সাফাত,নীল,অনিক হেটে চলে গেল ইহানের কাছে।রাফি ওদের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’ এই অপমানের বদলা তো আমি নিবই নিবো।আজ ওই মেয়ের কারনে আমাকে এইভাবে অপমান অপদস্ত হতে হলো।ছাড়বো না ওই মেয়েকে।সাথে ওর বন্ধুদেরও।আর রুদ্রিকদের কথা নাহয় বাদই দিলাম।ওদেরও ছাড়ব নাহ।’
———
ইহান কথা বলছিল মানে কথা বলছিলো বললে ভুল হবে।অথৈকে রাগাচ্ছিলো নানান কথা বলে।আর অথৈ রেগেও যাচ্ছে ইহানের কথায়।সাফাত অথৈর রাগি মুখশ্রী দেখে হেসে এগিয়ে গিয়ে বলে,’ কিরে ইহান তোর বোন আর তার ফ্রেন্ডসদের সাথে আমাদের পরিচয় করাবি নাহ?’
অথৈর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে সাফাত।সাফাতকে দেখে অনিক রুদ্রিকের কানে কানে বলে,’ এই সালা ইহানের বোনের উপর ফুললি ক্রাশ খেয়ে উলটে গিয়েছে।’
রুদ্রিক অনিকের কথা শুনে সাফাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকল।
ইহান সাফাতের কথা শুনে বলে,’ আরে কি বলিস না যে তুই।পরিচয় তো অবশ্যই করাবো।এখন যেহেতু ওরা এই ভার্সিটিতে পড়ালেখা করে। তাহলে তোদের সাথে পরিচয় হতেই হবে।ভালোমন্দের কথা বলা যায় নাহ।আমি না থাকলে তোদের কাছেই তো আসবে সাহায্যের জন্যে।’
ইহান এইবার অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান,আর আহিদের পরিচয় করিয়ে দিলো।সাফাত পরিচয় শেষ হতেই সাফাত মুচকি হেসে বলে,’ হাই,আমি সাফাত।তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগল।’
ওরা সবাই ধন্যবাদ জানালো।বলল,’ আমাদের ও ভালো লাগল।’
নীল এগিয়ে এসে বলে,’ আমি নীল।ভালো লাগল পরিচয় হয়ে।’
অনিক বলল,’ আমি অনিক।নাইস টু মিট ইউ গাইস।’
রুদ্রিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।নীল তা দেখে বলে,’ কিরে তুইও নিজের নাম বল?নাহলে ওরা তোকে চিনবে কিভাবে?’
রুদ্রিক তাকিয়ে ছিলো অথৈ আর সাফাতের দিকে।সাফাত নানানভাবে অথৈর সাথে কথা বলে ভাব জমাতে চাচ্ছে।বিরক্ত লাগছে রুদ্রিকের।সাফাতের সাথে অথৈর এইভাবে হেসে হেসে কথা বলা ওর সহ্য হচ্ছে না একদম।কিন্তু কেন ওর এমন লাগছে?ওর বন্ধু একজনকে পছন্দ করেছে।তার পছন্দের মানুষের সাথে সে কথা বলতে চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই নাহ?তাহলে ঠিক কি কারনে ওর এতো রাগ হচ্ছে?জানা নেই রুদ্রিকের।নিজের উপরেই নিজে বিরক্ত।নীলের কথা শুনে সে নড়েচড়ে দাঁড়ালো।গম্ভীর স্বরে বলল,’ আমি আরিহান রুদ্রিক।ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা বা ঝামেলায় পরলে। অথবা কেউ তোমাদের বিরক্ত করলে আমার অথবা আমার বন্ধুদের কাছে এসে জানাবে।বাকিটা আমরা সামলে নিব।’
থেমে গিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,’ আমি যাচ্ছি।তোদের হাসি ঠাট্টা শেষ হলে চলে আসিস।পোগ্রাম শুরু হতে যাচ্ছে।’
এই বলেই আরও একপলক সাফাত আর অথৈকে দেখে হনহন করে চলে গেল।
অথৈ পিহুর কানে কানে বলে,’ ইস,দেখ ছেলের কি এটিটিউট।মনে হচ্ছে সে একেবারে কাজ করে উলটে ফেলে দিচ্ছে।এমন একটা ভাব করল।’
পিহু অথৈর কথায় মাছি তারানোর মতো করে বলে,’ হুর,কি বলিস এসব?রুদ্রিক ভাইয়াটা কি জোস।তাকে দেখতে পুরো চকোলেট বয়দের মতো লাগে।আর তার কথাবার্তা চালচলন তো পুরাই জোস।’
‘ হয়েছে থাম তুই।তোর কাছে কিছু বলা আর নিজের কপাল নিজেই দেয়ালে ঠুকা একই ব্যাপার।’
ইহান অথৈদের উদ্দেশ্যে বলে,’ অথৈ তুই আর তোর ফ্রেন্ডসরা আমাদের সাথে আয়।আমাদের সাথে থাকলে কোনো সমস্যা হবে নাহ।’
অথৈ না বলতে যাবে তার আগেই রিধি ওর হাত খামছে ধরল।ব্যথা পেয়ে রাগি চোখে তাকাল অথৈ।রিধি জিভে কামড় দিয়ে হাত ছেড়ে দিল।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলতে লাগল,’ সরি দোস্ত।আসলে ইহান উনাদের সাথে যেতে বলছে।কিন্তু তুই মানা কর দিতি আমি জানি।এইজন্যেই থামালাম।প্লিজ দোস্ত মানা করিস নাহ।দেখ তোর ভাইয়ের সাথে যতো বেশি সময় থাকবো ততই তো ভালো আমাদের জন্যে তাই নাহ?’
অথৈ শ্বাস ফেলে বলে,’ ঠিক আছে বুঝলাম।কিন্তু আমার হাতের এই বেহাল দশা বানানোর জন্যে তোকে আমি ছারছি নাহ।’
‘ আচ্ছা সেটা নাহয় পরে দেখা যাবে।এখন চল।’
প্রিয়ান এসে ওদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেল।বলল ‘ এই তোরা সারাদিন কি এতো ফাসুরফুসুর করিস?আমরা যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটাও তোদের চোখে পরে নাহ?’
পিহু দুম করে কিল বসিয়ে দিলো প্রিয়ানের পিঠে।প্রিয়ান ব্যথা পেয়ে একলাফে আহিদের কাছে চলে গেল।কাঁদো কণ্ঠে বলে,’ দোস্ত মারল।’
আহিদ হেসে বলে,’ একদম ঠিক আছে।শুধু শুধু বা হাত ঢুকাতে কেন গেলি?’
‘ তাই বলে এইভাবে আমার মতো একটা আলাভোলা মাসুম ছেলের উপর দুমদাম কিল মেরে অত্যাচার করবে।’
প্রিয়ানের কথা অথৈ বুকে দুহাত ভাজ করে হেসে বলে,’ তোর জন্মই হয়েছে আমাদের মার খাওয়ার জন্যে।’
সবাই হেসে দিলো।অতঃপর ইহান তারা দিতেই ওরা চলল আরেক ইহানদের সাথে।
#চলবে______________#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৫
রুদ্রিকের সামনে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে।আসল কথা একটু আগেই মেয়েটা গোলাপ ফুল দিয়ে রুদ্রিককে প্রেম নিবেদন করেছে।রুদ্রিক শান্ত দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।অনিক বলল,
‘ কিরে রুদ্রিক! চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?মেয়েটা তোকে প্রপোজ করল।মেয়েটাকে রিপ্লাই দিবি নাহ।’
রুদ্রিক অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তোর এতো মায়া লাগলে তুই কেন এক্সেপ্ট করে নিচ্ছিস নাহ?’
‘ আরে ধুর কি বলিস এসব?’
রুদ্রিক শান্ত কণ্ঠে সামনে ফুল হাতে দাঁড়ানো মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,
‘ দেখুন!এইসব প্রেম ভালোবাসা আমার জন্যে নাহ।আর আপনিও পড়ালেখা ছেড়ে এইসব বেহুদা কাজে নিজেকে জড়াবেন নাহ।সময়টা এসব ছাইপাশ করে ব্যয় না করে।কাজে লাগান।ভবিষ্যতে আপনার জন্যেই ভালো হবে।’
রুদ্রিকের কথা শুনে মেয়েটার মুখ মুহুর্তেই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল।ক্রদনরত কন্ঠে বলে উঠল,
‘ কিন্তু আমি তো আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি।’
রুদ্রিক গম্ভীর গলায় বলে,
‘ এটা ভালোবাসা নাহ।আপনি জাস্ট আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।আমার বাহিরের রূপটাকে আপনার ভালো লেগেছে।ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক নাহ।’
‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে এইভাবে ফিরিয়ে দিবেন নাহ।আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।তবুও আমায় ফিরিয়ে দিয়েন নাহ।’
রুদ্রিকের রাগ লাগছে।রাগ কন্ট্রোল করার জন্যে এদিক ওদিক তাকাল।বাম পাশের ভ্রু চুলকে ক্রোধ সংবরন করার চেষ্টা চালাল।অতঃপর বলে,’
‘ আমি যা বলব তাই করতে পারবেন?’
মেয়েটা হকচকিয়ে গেল।তবে তা বুঝতে দিল নাহ রুদ্রিককে।বলে উঠল,
‘ হ্যা পারব।’
‘ আচ্ছা আমি যা বলব তা যদি করতে পারেন।তাহলে আমি আপনার প্রেম নিবেদন গ্রহন করব।’
এদিকে রুদ্রিক আর ওই মেয়েটার কথপোকথন শুনে নীল ইহানের কানে কানে বলে,
‘ কিরে এই রুদ্রিক কি করতে চাচ্ছে?সা’লায় আবার কি বুদ্ধি পাকাচ্ছে ওর ওই ড্যাঞ্জারাস মাথায়।’
ইহান বাঁকা হেসে বলে,
‘ দেখতে থাক কি করে রুদ্রিক। প্রচুর বিনোদন পাবো মনে হচ্ছে।’
°°°°
‘ সাতার জানেন?’
রুদ্রিকের এহেন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল মেয়েটা।মেয়েটা আসলে সাতার জানে নাহ।আমতা আমতা করে বলল,
‘ আমি সাতার জানি নাহ।’
‘ এসেন আমার সাথে।
রুদ্রিক গটগটিয়ে হাটা ধরল সামনের দিকে।মেয়েটা পিছনে ফিরে ওর ফ্রেন্ডসদের দিকে তাকাল।ওর ফ্রেন্ডসরা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অল দ্যা বেস্ট জানালো।
মেয়েটা যেন সাহস পেলো।রুদ্রিকের পিছনে পিছনে হাটা ধরল।ইহান হেসে দিল।সাফাতের কাধে চাপড় মেরে বলে,
‘ চল দেখে আসি।খেলা এবার জমবে।’
সাফাত ইহানের চাপড় মারা জায়গায় হাত ঢলতে ঢলতে বলে উঠল,
‘ উহু সালা! মারোস ক্যান? এমনেই তো যাবো বা*।’
ইহান সাফাতের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে চলে গেল।ওকে যেতে দেখে বাকিরাও চলল।
°°°°°
ভার্সিটির পিছনে একটা পুকুর আছে।সেখানে এসে থামল রুদ্রিক।মেয়েটাও থেমে গেল ওকে থামতে দেখে।রুদ্রিক পুকুরের সচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে ভরাট গলায় বলে উঠল,
‘ আমি যা বলব তাই করবেন বলেছেন যেহেতু।এখন আমি বলছি আপনি যদি আমায় সত্যিই ভালোবাসেন।তাহলে এখন এই মুহূর্তে এই পুকুরে ঝাপ দিন।যদি এটা করতে পারেন তাহলে আমি আপনার প্রেম নিবেদন গ্রহন করব।’
মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল।ও তো সাতার জানে না।এখন কি করবে?কিন্তু রুদ্রিকও আবার বলছে এটা করলে ওর প্রেম নিবেদন গ্রহন করবে।মেয়েটা শুকনো ঢোক গিলে বলে,
‘ এটা করা কি জরুরি?’
‘ আপনিই তো বললেন আমি যা বলব তাই করতে পারবেন।তাহলে এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?’
‘ কো…কোথায় ভয় পাচ্ছি?আমি কোনো ভয় পাচ্ছি না।আমি ঝাপ দিচ্ছি গো।এখনি দিচ্ছি।’
মেয়েটা কাঁপা কাঁপা শরীরে এগিয়ে গেল পুকুর পাড়ের দিকে।গভীর পুকুরের পানির দিকে তাকালেই গলা শুকিয়ে আসছে ভয়ে।মেয়েটা চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়ে ঝাপ লাগাল পুকুরে।ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করা রাখা তার।হঠাৎ অনুভব করল সে পুকুরে পরেনি।কেউ তার হাত ধরে আছে।জলদি চোখ মেলে তাকাল মেয়েটা।অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল রুদ্রিক ওর হাত ধরে আছে।মেয়েটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রুদ্রিক।রুদ্রিক এক টানে মেয়েটাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল।তারপর প্রায় একপ্রকার ছুড়ে মারল মেয়েটাকে।মেয়েটা উপুর হয়ে পরে গেল মাটিতে।ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল মেয়েটা।অনিক দ্রুত এসে টেনে তুলল মেয়েটাকে।চিৎকার করে বলল,
‘ পাগল হয়ে গিয়েছিস রুদ্রিক?এইভাবে মেয়েটাক ছুড়ে মারলি ক্যান?’
মেয়েটা কাঁদছে।রুদ্রিকের একটু সহ্য হচ্ছে না মেয়েটাকে।এইসব ন্যাকা কান্না জাস্ট ওর অসহ্য লাগে।রুদ্রিক ভয়ানক রেগে বলে,
‘ একে বল আমার সামনে এমন ন্যাকা কান্না যেন না করে।নাহলে এই মেয়েকে আমি জাস্ট খু’ন করে ফেলব।’
রুদ্রিকের কথায় মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘ কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন আমি পুকরে ঝাপ দিলে আপনি আমার সাথে রিলেশন করবেন।তাহলে এখন আমাকে আটকালেন ক্যান?’
রুদ্রিক উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে উঠল,
‘ সাট আপ।জাস্ট সাট আপ।একটা কথাও আপনি বলবেন নাহ।’
রুদ্রিক ভয়ানক রেগে এদিক সেদিক তাকাল।তারপর হুট করে মেয়েটার হাত টেনে নিয়ে পুকুরের সামনে আনল।তারপর মেয়েটাকে পুকুরের দিকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মতো করলে মেয়েটা ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।তারপর কান্না করে দেয়।রুদ্রিক টেনে মেয়েটাকে উঠিয়ে আবার ধাক্কা মারল।অনিক ধরে ফেলল মেয়েটাকে।রুদ্রিক চিৎকার করে বলে,
‘ এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?ম’রার খুব শখ তাই নাহ?আমাকে ভালোবাসে মর’তেও রাজি ছিলেন।তাহলে এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?বলুন এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?’
অনিক রুদ্রিককে বোঝানার জন্যে বলে,
‘ আহ রুদ্রিক।হয়েছে তো থাম নাহ।মেয়েটা বুঝতে পারেনি।থেমে যাহ।’
রুদ্রিক রাগি গলায় বলে,
‘ বুঝতে পারেনি মানে?আরে নিজের ভালো তো পাগ’লও বুঝে।আর এ তো সুস্থ্য পুরোপুরি।এরপরেও এই কিসব স্টুপিট ভালোবাসি ভালোবাসি করে আমি যা বললাম তাই করল। যেই মেয়ে নিজেকেই ভালোবাসতে জানে নাহ।সেই মেয়ে আমায় কিভাবে ভালোবাসবে?আর তুই বলছিস আমায় শান্ত হতে? একে যেতে বল আমার সামনে থেকে।নাহলে কিন্তু বা’জে কিছু ঘটে যেতে পারে।’
অনিক রাগান্বিত রুদ্রিকের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর মেয়েটাকে বলে,,
‘ তুমি চলে যাও।রুদ্রিক ভয়া’নক রেগে আছে।’
মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল ওর ফ্রেন্ডসদের কাছে।ওর ফ্রেন্ডসগুলো মেয়েটাকে শান্তনা দিতে লাগল।এমন সময় ভার্সিটিতে এসে পৌছায় অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদ।অথৈ দূর থেকে মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে দ্রুত পায়ে সেখানে এসে পৌছালো।সাথে আসল বাকি চারজনও।প্রিয়ান পিহুর কানে কানে বলে,
‘ আরে এটা তো সেইদিনের মেয়েটাই নাহ?যেই মেয়েটাকে কয়েকজন বখাটে ছেলে মিলে হ্যারেস করেছিল মাঝ রাস্তায়।আর আমাদের অথৈ সুপার উইমেন এর মতো হেব্বি ক্যালিয়েছিল ছেলেগুলোকে।’
পিহু প্রিয়ানকে এইভাবে বিস্তারিতভাবে সব বলতে দেখে বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আরে বা* তোরে এমন টকিং মেশিনের মতো এক্সপ্লেনেশন দিতে কে বলছে? তুই কি ভুলে গেছিস আমিও সেদিন ওখানেই ছিলাম।’
প্রিয়ান থাপ্পড় মারল পিহুর মাথায়। পিহু রাগি চোখে তাকালে প্রিয়ান বলল,
‘ তুই যেই ভুলাক্কার।সব তো আটা ময়দা মাখতে মাখতে ভুলে যাস।’
রিধি এদের দুটোকে ঝগড়া করতে দেখে রেগে বলে,
‘ তোরা দুইটা থামবি?অলওয়েজ একটার সাথে একটা খুচাখুচি করতেই থাকিস।’
প্রিয়ান নাক মুখ কুচকে বলে,
‘ এগলা কি কস?এমন আস্তাগফিরুল্লাহ মার্কা কথা কছ ক্যান?কিয়ের খুচাখুচি করুম আমরা?ভালো হইয়া যা রিধি তুই।ভালো হইতে পয়সা লাগে নাহ।’
রিধি বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল।কথা বাড়ালেই কথা বাড়ে।তাই আর কিছু বলল নাহ রিধি।প্রিয়ান ওকে জ্বালাতে আরও কিছু বলবে তার আগেই আহিদ ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আর কিছু বলিস নাহ।চুপ যাহ।দেখছিস এখানে সিরিয়াস কিছু হচ্ছে।তাও তুই তোর ফাইজলামি বন্ধ করলি নাহ।’
প্রিয়ান বিরক্ত হলো আহিদের কথায়।রাগি গলায় বলে,
‘ কিসের সিরিয়াসন্যাস হ্যা?এই মেয়ে ন্যাকা মেয়েদের না কেঁদে পারে না নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে। পারে না কিছু করতে।শুধু ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদে।আমাদের অথৈ,রিধি,পিহুকেই দেখ।যতোই ন্যাকামি,আহ্লাদি হোক না কেন।পরিস্থিতি বুঝে তারা রণচণ্ডী রূপ ধারন করতে পারে।নিজেদের সাথে কোনো অবিচার হলে নিজেরাই রুখে দাঁড়াতে পারে।’
আহিদ শ্বাস ফেলে বলে,
‘ সেটা তো বুঝলাম।কিন্তু আমাদের এই তিন রমনীর মতো কজনেই বা হয় বল?’
‘ হবে না কেন?হতে হবে।একবার যেহেতু দেখেছে ওর সাথে এমন বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে।তখন আমরা গিয়ে ওকে হ্যাল্প করলাম।অথৈদেরও দেখলো কিভাবে মারামা’রি করছিল।তো এখন দ্বিতীবার এমন হলে কেন পারল না প্রতিবাদ করতে?এখানে এসে ভ্যা ভ্যা করছে।’
‘ আচ্ছা শান্ত হো।কিছু না জেনে আগেই মানুষকে নিয়ে ভালোমন্দ বলা ঠিক নাহ।আগে শুনে নেই কি হয়েছে?তারপর নাহয় মেয়েটাকে দু চারটে কথা শুনিয়ে দিস উপদেশ হিসেবে।’
আহিদের কথায় প্রিয়ান চোখ উল্টিয়ে বলল,
‘ আ`ম নট ইন্টেরেস্টেড এট অল।’
প্রিয়ানের এক্সপ্রেশন দেখে হেসে দিল আহিদ।
#চলবে___________