#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৬৮
জামান হোসেন হাতে থাকা বইটির থেকে চোখ সরিয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন।
“জায়িনকে ছবিটা দেখিয়েছিলে?”
সুমনা উত্তর করলেন না। নিজের পছন্দের মেয়ে নিজেই তাহলে ছেলের সাথে কথা বলুক। তাকে দিয়ে বলানোর কী আছে।
“কিছু জিজ্ঞেস করছি। জায়িনের সাথে কথা বলেছিলে?”
“তোমার ছেলে তুমি কথা বলো। আমাকে বলতে বলছো কেন?”
অকারণ স্ত্রীর রাগ দেখে জামান হোসেন থতমত খেয়ে গেলেন। বইটা রেখে সোজা হয়ে বসে চশমা খুলে বললেন,
“অকারণ রাগ দেখাচ্ছ কেন?”
“রাগ দেখানোর কারণ পাই না তাই অকারণ রাগ দেখাচ্ছি। তোমার কোন সমস্যা?”
“আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছ। সমস্যা তো আমারই হবার কথা।”
“কথা বোলো না তো।”
“তুমি যে কারণে রাগ করছো সেটা কোনদিনও সম্ভব না। এখন এটা জেনেও তুমি রাগ করে থাকলে আমার কিছু করার নেই। যত খুশি রাগ করতে পারো।”
…..
মুবিন তিন দিনের শো শেষ করে আজ বাড়ি ফিরেছে। বেচারা ভীষণ ক্লান্ত। নিজের রুম পর্যন্ত যাওয়ার শক্তি পেলো না। ড্রয়িংরুমে পা রেখেই সোফায় গা ছেড়ে দিয়ে মা’কে ডাকতে লাগল।
“মা। ও মা। ছেলে বাড়ি ফিরেছে একটু তো হালচাল জিজ্ঞেস করো।”
সুমনা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মুবিনের মাথার উপর দাঁড়িয়ে বলল,
“এখন থেকে নিজের কাজ নিজে করে খা। নিজে করতে না পারলে বিয়ে করে বউকে দিয়ে করা। আমি আর এই সংসারের বোঝা টানতে পারব না।”
মুবিন মাথা উলটিয়ে মা’কে দেখে বুঝে গেল নিশ্চয় বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে। সেই রাগ তাকে দেখাচ্ছে।
“বাবার রাগ তুমি আমাকে দেখাচ্ছ কেন? আমি তো বাবার আদরের ছেলে না। এই রাগ তুমি ভাইয়ার জন্য রেখে দাও।”
“কেউই আদরের না। আদরের হলে তো ছেলেদের কথা ভাবতোই।”
“তা ঠিক বলেছ। তোমার পতিদেব কোনদিন আমার কথা ভাবে না। ভদ্রলোকের সব ভাবনা বড় ছেলেকে নিয়ে।”
“কচু।”
সুমনা ফুঁসতে ফুঁসতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। মুবিন ধড়াম করে উঠে বসল। মা’র কথা শুনে মনে হচ্ছে বাবা মায়ের রাগ ভাইয়া ঘটিত কোন বিষয় নিয়ে। মীরার সাথে ভাইয়ার সম্পর্কটা তাহলে বাবা জেনে গেছে? নইলে ভদ্রলোক সামান্য কারণে জীবনেও বড় ছেলের উপর রাগ করবেন না। সে মায়ের পেছনে ছুটে বলতে লাগল।
“ভাইয়াকে নিয়ে কিছু হয়েছে? বাবা কি কিছু শুনেছে আম্মু? বলো না। ভাইয়া বাবাকে কিছু বলেছে?”
“কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করিস না তো মুবিন। বাইরে থেকে ফিরেছিস ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। রান্না হয়ে গেলে আমি ডাকব।”
মুবিন মা’কে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“রাখো তো রান্না। আমি তোমার জন্য কাজের লোক রেখে দেব। তুমি আগে বলো বাড়িতে কি কিছু হয়েছে? বাবা ভাইয়াকে কিছু বলেছে?”
“কী ছাতার কথা বলছিস বারবার! তোর বাবা জায়িনকে কিছু বলবে কেন?”
“তাহলে কী হয়েছে? তুমি কেন রেগে আছো?”
“তোর বাপ তোর ভাইয়ের বিয়ের কথা ভাবছে। মেয়েও ঠিক করে ফেলেছে।”
“কিহ!”
অবিশ্বাস্যে মুবিন চেঁচিয়ে উঠল। মুবিনের এই ওভার রিয়েক্ট দেখে সুমনা মুখ বাঁকাল।
“তোর বিয়ে তো ঠিক করেনি। তুই কেন এরকম আঁতকে উঠেছিস!”
“তোমার স্বামীর মাথায় হঠাৎ আমার ভাইয়ের বিয়ের ভূত চাপল কেন? তিনি মেয়েও ঠিক করে ফেলেছেন! আমাদের কারো মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করল না। মেয়ে তো আমাদের পছন্দ না-ও হতে পারে।”
“এটা তোর বাপকে কে বোঝাবে?”
“তুমি বোঝাবে? উনার পছন্দই তো সব না।”
“তোর বাপকে বোঝানোর ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেননি। উনাকে বোঝানোর সাধ্য কারো নেই।”
মুবিন চিন্তিত হয়ে গেল। বাবার পছন্দ করা মেয়ে মীরা হবে না। এটা সম্ভবই না।
“ভাইয়া কি মেয়ে পছন্দ করেছে? ভাইয়া বিয়ে করবে বলেছে?”
“জানি না। কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করিস না। ঘরে যা।”
….
আজ বাড়িতে মিটিং বসেছে। মিটিংয়ের বিষয়বস্তু তনি আবিরের বিয়ে। এই মাসের শেষের দিকে বিয়ে হবে। হাতে খুব বেশি সময় নেই। অল্প সময়ের ভেতরে কীভাবে আয়োজন সম্পূর্ণ করা যায় সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। তনির খুশি দেখে মীরা ভাবছে জায়িনের সাথে যেদিন তার বিয়ে ঠিক হবে সেদিন সে-ও এরকমই খুশি হবে। বরং খুশিতে নাচবে। তাতে সবাই নির্লজ্জ বললে বলুক।
ইভা ওদের লাভ স্টোরি শোনার জন্য তনিকে চেপে ধরল।
“তোমার ভাইয়ের কাছে যতদূর শুনেছি, তোমরা একে অপরকে সহ্যই করতে পারতে না। দু’জন শত্রুর মতো আচরণ করতে। সেখান থেকে ভালোবাসা হলো কীভাবে?”
“কীভাবে হলো সেটা কি বলা যায় ভাবী?”
“আচ্ছা আগে কে বুঝেছিলে? মানে কার মনে আগে অনুভূতি জন্ম নিয়েছিল?”
“ওই গাধার মনে। স্কুল থেকেই হাজার হাজার মেয়েকে প্রপোজ করত। লটরপটর চরিত্র ছিল। কলেজে কত মেয়ের সাথেই সিরিয়াস টাইপ প্রেম হয়েছে। কিন্তু কোনটাই টেকেনি। কিছু ব্রেকআপ সে করেছে। কিন্তু মেয়েরা। প্রতিবারই ব্রেকআপের পর আমার কাছে এসে সে কী কান্নাকাটি! ওমা, ভার্সিটির প্রথম বছরে গাধাটা আমাকেই প্রপোজ করে বসল। আমি তো হতবাক। মজা ভেবে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু না, সে হার মানার পাত্র না। খাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে আমার পেছনে পড়ে গেল। আমি রাগ করেছি। কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। বাড়িতে বিচার দেওয়ার ভয় দেখিয়েছি। কিন্তু কোনভাবেই গাধাটাকে পিছু ছাড়াতে পারিনি। এক বছরের মতো ঘুরিয়ে শেষে নিজেও ফেঁসে গেছি।”
“বাহ! বাহ! আবিরকে তো ধরতে হবে। এত এত প্রেম করার পর শেষে তোমার মায়ায় আটকালো কীভাবে? কাল এলেই জানতে চাইব।”
তনির লাভ স্টোরি জেনে মীরারও জানতে ইচ্ছে করল, জায়িন কবে থেকে তাকে পছন্দ করত? সে জায়িনকে পছন্দ করার আগে থেকে? নাকি তার পছন্দ করার পরে। মাহিমা চলে যাওয়ার পরপরই মীরা রুমে এসে জায়িনকে কল লাগালো। রাত কয়টা বাজে এটা দেখল না। কয়েকবার রিং হবার পর জায়িনের ঘুম জড়ানো কন্ঠ শোনা গেল।
“বলো মীরা।”
“আপনি কবে থেকে আমাকে পছন্দ করতেন?”
“এই কথা জানার জন্য কল করেছ তুমি?”
“হ্যাঁ। জানা জরুরি।”
“কাল সকালে বলি?”
“না। এখনই জানতে হবে আমার। নইলে ঘুম আসবে না।”
“আমার ঘুম ভাঙিয়ে তুমি নিজের ঘুমের কথা ভাবছো?”
“তো? একটা জিনিস মনে এলে জানা জরুরি না?”
“কয়টা বাজে এখন দেখেছো?”
“আমার এতকিছু দেখার দরকার নেই। আপনি বলুন তো।”
“লক্ষী তোতাপাখি, আজ ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে বলবো কেমন? তাছাড়া এই বিষয়ে সামনাসামনি আলাপ হওয়াই ভালো নয় কি? ফোনে বললে তুমি মজা পাবে না। ফোন রেখে লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পড়ো।”
মীরা ভাবলো এটাও ঠিক। সামনাসামনি আলাপ হওয়াই ভালো।
“ঠিক আছে। ঘুমিয়ে পড়ুন।”
“মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়েছ তার জন্য জরিমানা বাবদ এক চুমু। আরেকটা গুড নাইট কিসি। তাড়াতাড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ো।”
“সুযোগ পেলেই ভদ্রলোকের অভদ্র সব আবদার। চুপচাপ ঘুমান।”
….
বাড়িতে বিয়ের আমেজ লেগেছে। কলেজ, ভার্সিটি না থাকায় মীরার বাড়ি থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। সেসময়ই বেরুতে নিবে কেউ না কেউ কোনো না কোন কাজ ধরিয়ে দিবে। ভাল্লাগে না। কবে যে ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। জায়িন হয়তো অপেক্ষা করছে। কিন্তু বড়মা মীরাকে রুম গোছানোর কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।
“এখন থেকে নিজের কাজ নিজে করবি। দুই দিন পর তোরও বিয়ে হবে। তনি নাহয় ফুপুর কাছে যাচ্ছে। কাজকর্ম না পারলেও কথা শুনতে হবে না। কিন্তু পরের বাড়ির মানুষ কথা না শুনিয়ে থাকবে না।”
মীরা মুখ ভোতা করে ওয়ারড্রবের এলোমেলো করে রাখা জামাকাপড় গুলো নামাতে নামাতে বলল,
“আমারও তাহলে কাছেপিঠে নিজেদের মাঝেই বিয়ে দিও।”
“তোমার জন্য তো নিজেদের মাঝে ছেলেরা বসে আছে।”
“ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে দেখো। পেলেও পেতে পারো।”
“বেশি কথা বলবি না। তোর বিয়ের এখনও অনেক দেরি।”
“বিয়ের দেরি তাহলে এখনই কাজ শিখতে বলছো কেন? এ কেমন অত্যাচার!”
“নাটক করলে মার খাবি কিন্তু মীরা। তোর মতো মেয়ে নিজের ঘরটাও গুছিয়ে রাখতে পারে না!”
মীরা মুখ মুচড়ে বিড়বিড় করে বলল,
“না পারে না।”
….
জায়িন রুমে আসার এক মিনিট পরই ফোন হাতে মুবিন দরজা দিয়ে ঢুকে। জায়িনকে কোনকিছু না বলে সে বেডে বসে ফোন চাপায় মনোযোগ দেয়। জায়িন শার্ট চেঞ্জ করতে করতে আড়চোখে ছোট ভাইকে দেখে। মুবিন ফোন চাপার এক ফাঁকে জায়িনের দিকে তাকায়। কিন্তু এবারও কিছু বলে না। জায়িন নিজেই জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবি?”
“হু? না। ”
“কোন কাজ ছিল?”
“না।”
এই ছেলের মতিগতি জায়িনের বোঝা দায়। তাই সে আর বেশিকিছু জিজ্ঞেস করল না। দরকার হলে নিজেই বলবে। জায়িন চেঞ্জ করে নিয়ে খেতে যাওয়ার সময়ও মুবিন উঠল না। বাধ্য হয়ে জায়িনকেই আবার বলতে হলো,
“আমার রুমেই থাকবি আজ?”
জায়িনের কথা শুনে মুবিন ফোন রেখে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল।
“থাকতে দিলে।”
“কোন দরকার থাকলে বলে বিদায় হ।”
“দরকার ছাড়া কি ভাইয়ের রুমে বসাও যাবে না?”
“বসে থাক তাহলে।”
জায়িন খেয়ে এসেও দেখল মুবিন শুয়ে শুয়ে ফোন চাপছে। সে মাথা নেড়ে বড়ো করে দম ফেলল। এত বড় সেলিব্রিটি হয়ে গেলেও এই ছেলের স্বভাবে সামান্যতম পরিবর্তন আসেনি। সুমনাকে ঘরে ঢুকতে দেখে মুবিন সোজা হয়ে বসল। এই সিন দেখার জন্যই এতক্ষণ অপেক্ষা করেছে। তলে তলে টেম্পো চালিয়ে যাচ্ছ কাউকে বলছো না। কিন্তু এবার নিজের বিয়ের কথা শুনে কোথায় যাবে? আর তো লুকাতে পারবে না।
সুমনা থমথমে মুখে ছবিটা জায়িনের হাতে দিয়ে বলল,
“তোর বাবা মেয়ে ঠিক করে ফেলেছে। বিয়ের ডেট ঠিক করলে তুই শুধু বিয়ে করতে চলে যাস।”
মা’র কথা বুঝে উঠতে জায়িনের সময় লাগল। সে একবার ছবির দিকে তাকিয়ে আরেকবার মা’র মুখের দিকে তাকাল।
“কার বিয়ে মা?”
“নাটক করিস না। তোর বিয়ে। আর কার?”
“আমার বিয়ে আমিই কিছু জানি না?”
“তুই জেনে কি করবি? শেষে তো বাপের কথাতেই নাচবি।”
“বাবা মেয়ে ঠিক করে ফেলেছে। অথচ আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করল না।”
মুবিন মাঝখান থেকে ফোঁড়ন কেটে বলে উঠল,
“বাবার সিদ্ধান্তই তো তোমার সিদ্ধান্ত। তাই জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেনি। তুমি তো আর আমার মতো অবাধ্য সন্তান না। তুমি গুড বয় টাইপ ছেলে। তাই…
জায়িনের কঠিন চাহনির দিকে তাকিয়ে মুবিন চুপ করল। কিন্তু সুমনা তো চুপ থাকার পাত্রী নন। তিনি ছেলেকেই দোষারোপ করতে লাগলেন।
” আরও বাপের কথাতে নাচ। বাবা ছেলে মিলে বিয়ে কর, মন ধরে অন্য কিছু কর। আমি কোনকিছু বলব না।”
মা রাগ করছে মানে বাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ। মা চেষ্টা করেও সেই সিদ্ধান্ত পালটাতে পারেনি। তাই বাবার রাগ তার উপর দেখাচ্ছে। জায়িন বলল,
“আমি এখন বিয়ে করব না।”
মুবিন আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করল,
“কেন, কেন?”
“আগে ঠিকঠাক মতো ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিই। তারপর বিয়ের কথা ভাববো।”
“তুমি কি তাহলে বাবাকে মানা করবে?”
মুবিন অবাক হওয়ার ভান করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়িন চিন্তায় পড়ে গেল। তার বিয়ে নিয়ে বাবা কতটা সিরিয়াস এটা না জেনে কিছু বলা যাচ্ছে না।
“ক্যারিয়ার তো গুছিয়েই নিয়েছ। ডাক্তারি করছো। বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে। আমার মনে হয় তোমার এখন বিয়ে করে নেওয়া উচিত।”
“তুই চুপ কর।”
“কেন? একমাত্র সিঙ্গেল ভাইকে জোর করে বিয়ে করানোর অধিকার আছে আমার। আমার কি চাচ্চু ডাক শুনতে ইচ্ছে করে না? বাবা এই প্রথম একটা কাজের কাজ করেছে। এ বিষয়ে আমি ভদ্রলোককে পূর্ণ সমর্থন করছি।”
জায়িন পারলে চোখ দিয়ে আগুন বের করে মুবিনকে ঝলসে দিত। বাবার পছন্দ করা মেয়েকে তার পক্ষে কোনভাবেই বিয়ে করা সম্ভব না। আবার মীরার কথাও বাবাকে বলা সহজ হবে না। বাবার মাথায় হঠাৎ তার বিয়ের ভূত কে চাপিয়েছে? নিশ্চয় মুবিনের কাজ এটা। এখনও কেমন মজা নিচ্ছে।
মুবিন মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে বলছে,
“এবার তুমি কী করবে ভাই? বাবার গুড বয় হয়ে থাকার তোমার দিন ফুরিয়ে এলো বলে। ভদ্রলোক আমাকে কথা শোনানোর একটা সুযোগও মিস দেন না। এবার উনার আদরের বাধ্য ছেলের অবাধ্য হবার পালা।”
জায়িনের ফোন বাজলেও তার সেদিকে খেয়াল নেই। মীরা ছাড়া এই সময় আর কে কল করবে? মুবিন মুচকি হেসে ভাইকে মনে করিয়ে দিয়ে বলল,
“ফোন বাজছে। কেউ হয়তো তোমাকে মনে করছে। ইম্পর্টেন্ট কল হতে পারে। বেশি দেরি হলে কেটে যাবে।”
চলবে
বিঃদ্রঃ এডিট ছাড়া পর্ব। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৬৯
মীরাদের বাড়ির কাছেই প্রতি বছর বিশাল বড়ো মেলা হয়। এবছরও হবে। মীরা সেদিন মাহিমাকে নিয়ে মেলার সাজসজ্জা দেখে এসেছে। প্রতিবার পরিবারের সাথে মেলায় এলেও এবার জায়িনের সাথে আসবে। সারাদিন ঘুরবে। অনেক অনেক খাবে। আর অনেককিছু কিনবে।
“কিন্তু আমাদের দুইটাকে একা ছাড়লে তো!”
মাহিমা মুখ ভার করে কথাটা বলল। মীরাও এটাই ভাবছে। অন্তত তাদের দু’জনকে জীবনেও একা ছাড়বে না। বাড়িতে একা আসার কথা বললেই বলবে,
“মাথা খারাপ! একা মেলায় গিয়ে হারিয়ে যেতি। না না। আবিরের সাথে যা।”
তারা যেন এখনও ওয়ান টুয়ের বাচ্চা। মীরা মাথা খাটিয়েও কোন বুদ্ধি বের করতে পারছে না। মীরাকে ভাবতে দেখে মাহিমা বলল,
“ভেবেও লাভ নেই। মা, মামা, মামীরা জীবনেও রাজি হবে না।”
“কৌশলে রাজি করাতে হবে।”
“কীভাবে করাবি?”
“এখনও জানি না। তবে সময় এলে কিছু একটা বুদ্ধি বের করে নেব।”
…
মীরা ইনিয়েবিনিয়ে কতভাবে কাল একা মেলায় যাওয়ার কথাটা বলতে চাচ্ছে। কিন্তু ভয়ে বলতেই পারছে না। আজ রাতে সবাই মীরার ঘরে জড়ো হয়েছে। কাল কে কীভাবে সাজবে সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। তনি ইভাকে শাড়ি পরতে বলছে।
“কাল তুমি শাড়ি পরো ভাবী।”
“শাড়ি! অসম্ভব গো। গরমে সেদ্ধ হয়ে যাব। ঘেমে-টেমে মেকআপ উঠে যাবে।”
“আরে আমার ভাই আছে কেন? একটা মাত্র বউকে একটু বাতাস করতে পারবে না!”
মীরা তনিকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি কাল আবির ভাইয়ের সাথে যাবে?”
“প্রতিবারই তো যাই।”
“আরে এটা না। মানে আবির ভাইয়ের সাথে একা ঘুরতে যাবে?”
মীরার কথা শুনে ইভা রসিকতা করে তনিকে বলল,
“আমার শিশু ননদটা সব বুঝে। তুমি সাবালিকা হয়েও বুঝতে পারছ না। এবার কি আর প্রতিবারের মতো? হবু বউকে নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে নিশ্চয় বেচারা প্ল্যান করে ফেলেছে।”
“এত প্ল্যানের দরকার নেই। সবাই মিলে যাব ওটাই মজা হবে। একা গেলেই কোনো না কোন কারণে আমাদের ঝগড়া হবেই।”
মীরা মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলল,
“এদের প্রেম করতে কে বলে? নিজেরাও ঠিকঠাক মতো প্রেম করবে না। অন্যদেরও সুযোগ করে দিবে না। হুহ্ ঢঙ।”
মীরা মুড অফ নিয়ে জায়িনকে কল দিল। এই লোকের সাথে তার কোন কথা নেই। আবার কথা না বলেও থাকতে পারছে না। পাঁচটা দিন ধরে দেখা নেই। তবুও এই লোক একবারও দেখা করার কথা বলেনি। জায়িন মাত্রই গেট দিয়ে ঢুকেছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সে কল ধরল।
“কেমন আছো রাগী মেয়ে?”
“আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না।”
“ঠিক আছে। তাহলে তুমি কল কেন দিয়েছ?”
“আমি তো আর আপনার মত পাষাণ না। আপনি একটা পাথর।”
“একবার ভেবে দেখো, তুমি কিন্তু এই পাথরের বুকেই ফুল ফুটিয়েছ।”
“কথায় লাগিয়ে দিলে কখনও হারবেন না।”
“আমি কিন্তু তোমার মন রাখার জন্য এত কাজের চাপের মাঝেও একদিন ছুটি নিয়েছি। এখন তুমিই যদি রাগ করো তাহলে কিন্তু ছুটি ক্যান্সেল করে দেব।”
“আমি আপনার মাথা ফাটিয়ে দেব।”
ফোন কানে নিয়েই জায়িন কলিংবেল চেপেছে। সুমনা দরজা খুলে দিয়ে এত দেরি হয়েছে কেন জিজ্ঞেস করলে জায়িন ইশারায় কিছু বলে রুমে চলে গেল। কিন্তু সুমনা কিছুই বুঝতে পারল না।
“তোদের দুই ভাইকে মোবাইল ফোন গুলিতে খাইয়ে দেওয়া উচিত। সারাক্ষণ ছাতাটা নিয়ে পড়ে থাকে।”
“কাল কখন আসবে? সকালের দিকে? নাকি বিকালে?”
“সকালে, বিকালে, রাতে এলেও কোন লাভ নেই।”
“কেন?”
“আপনি এলে দূর থেকে দেখা হবে। এমনকি সামনাসামনিও হয়তো কথা হবে। কিন্তু আমি আপনার সাথে যেতে পারব না।”
“এটা কেমন কথা? তাহলে আমি ছুটি নিলাম কেন?”
“কী করব? সবাইকে কতভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কেউ একা ছাড়তে রাজিই হলো না। সবার সাথে আসব। সেখান থেকে আমি আপনার সাথে যাব কীভাবে?”
জায়িন শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঠোঁট কামড়ে ভাবছে। মীরা অধৈর্য হয়ে বলল,
“চুপ করে আছেন কেন?”
“ভাবছি। ঠিক আছে, তুমি সবার সাথেই আসো।”
“আমি জানতাম আপনি এই কথাই বলবেন। আমিই শুধু শুধু কতকিছু ভাবছিলাম। আপনি তো আর সিনেমার হিরো নন। কিচ্ছু করবেন না আপনি। উল্টো এই কথাই বলবেন।”
জায়িনের পুরো কথা শোনার আগেই মীরা কল কেটে দিল। কোন সন্দেহ নেই, এই মেয়ে আস্ত পাগল। রোমান্টিক ড্রামা, মুভি দেখে জীবনটাকে বাস্তবিক ভাবে নিতেই পারে না। সব বিষয় নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভুগে।
…
মীরা ইচ্ছে করে রেডি হতে দেরি করছে। যাতে তাকে ফেলে রেখেই চলে যায়। কিন্তু তার ভাইবোন গুলো তারই মতো নাছোড়বান্দা। ফেলে তো গেলই না উল্টো চোখ রাঙিয়ে, ধমকিয়ে তৈরি করালো। মীরার চেহারার বারোটা বেজে আছে দেখে তনি কঠিন ধমক লাগাল।
“একেতো নিজে দেরি করবি। তার উপর আবার কিছু বলা যাবে না। বললেই মুখ ফুলিয়ে পুলিপিঠা করে রাখবি।”
“বকো না তো তনি আপু। তার থেকে ভালো আমাকে রেখেই চলে যেতে।”
“এখন তর্ক করে সময় নষ্ট করলে লাথি খাবি।”
মীরা মুখ বাঁকাল। ছোট বলে এই অপমান। কেউ দাম দেয় না। কথায় কথায় শুধু ধমক দেয়। ইভান, আবির, ইভা, তনি, মীরা, মাহিমা একদল একসাথে বের হয়েছে। মাহিমা মীরাকে টেনে ধরে বলল,
“মুবিন ভাই পাগল করে ফেলছে। কোনভাবেই বোঝাতে পারছি না। তুই কি কোন বুদ্ধি বের করেছিস?”
এক ভাই কিছু শুনতে নারাজ। আরেক ভাই বলে, সবার সাথে যাও। এক মায়ের পেটের আপন ভাই হয়েও দু’জনের মাঝে এমন আকাশ পাতাল তফাত কেন? মীরা রাগ দেখিয়ে বলল,
“এখনও কিছু ভাবিনি।”
“কখন ভাববি তাহলে?”
“জানি না। পেঁচাল পেরে মেজাজ খারাপ করিস না তো। এমনিতেই মেজাজ যথেষ্ট খারাপ।”
মেলায় এসে কিছুক্ষণ ওদের সাথেই ঘুরলো। দুই কাপল হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। মীরা দূর থেকে জায়িনকে দেখতে পেল। শয়তান লোকটাকে ধূসর রঙের শার্টে এত সুন্দর লাগছে! মীরা আর রাগ করে থাকতে পারল না। এত সুন্দর একটা মানুষের প্রতি রাগ করে থাকা যায়? আবির দুই বোনকে খোঁচা দিয়ে বলল,
“কিরে তোরা দেখি এখনও মেলা কিনে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আবদার করছিস না। এই বছর এত ভালো হয়ে গেলি কীভাবে বল তো?”
ইভান বলল,
“এই বছর বোনেরা বড়ো হয়ে গেছে। তাই ভাইদের পকেট বাঁচাচ্ছে।”
মীরার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো। বুদ্ধিটা টেড়া বেঁকা হলেও মীরা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। মাহিমাকে টেনে ধরে ফিসফিস করে বলল,
“এত জোরে জোরে হাঁটছিস কেন? আস্তে আস্তে চল। ওদেরকে আগে চলে যেতে দে। আমরা পেছন থেকে কেটে পড়ব। মানুষ মেলায় হারিয়ে যেতেই পারে। এটা এমন কোন ব্যাপার না। কত মানুষই তো হারায়। আমরা যে হারিয়ে গেছি এটা বুঝতেই এক আধ ঘন্টা লেগে যাবে। এত মানুষের ভীড়ে জীবনেও আমাদের খোঁজা সম্ভব না। অন্তত যতক্ষণ খোঁজা খুঁজি চলবে ততক্ষণে আমরা চলে আসব। তোর সাথে ফোন আছে?”
“হ্যাঁ। কেন?”
“ফোন অফ করে রাখ। বলবি ব্যাটারি ডাউন ছিল। আমার ফোন বাড়িতে ফেলে এসেছি। এই সুযোগে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগও করতে পারবে না। আমরা কোথায় আছি জানতেও পারবে না।”
“তোর মাথা তো দেখছি শয়তানি বুদ্ধি দিয়ে ভরা।”
“প্রশংসা করলি নাকি অপমান? প্রশংসা করলে ধন্যবাদ। অপমান করলে তোর মুবিন ভাইয়ের সাথে যেতে হবে না।”
“আরে না না। অপমান করব কেন? আমরা তো ক্রাইম পার্টনার। প্রশংসা করেছি।”
“সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকাতে হয় জানিস তো? আমাদের একা ছাড়বে না। আমরা নাকি হারিয়ে যাব। এখন সবার সাথে থেকে হারিয়ে গেলে তো কেউ ধরে রাখতে পারবে না। বাড়ি গিয়ে সব দোষ ওদের নামে চালিয়ে দেব। বলব, ছোট ছোট দুইটা বাচ্চাকে রেখে ওরা কোথায় যেন চলে গেছে। ওদের খুঁজতে গিয়ে আমরা হারিয়ে গেছি। অনেক খুঁজেও কাউকে পাইনি তাই বাড়ি চলে এসেছি।”
মীরা মাহিমা সব ক’টা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে এটা ওটা দেখতে দেখতে দেরি করতে লাগল। এতে তারা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। ওরা চোখের আড়াল চলে গেলেই মীরা মাহিমা উল্টো দিকে হাঁটা ধরল। মীরা মাহিমাকে বলল,
“আমাদের কিন্তু একসাথে বাড়ি ফিরতে হবে। একা ফিরলেই বাঁশ খাব।”
“তুই তো ফোন আনিসনি। কীভাবে তোকে খুঁজে পাব।”
“মেলায় ফিরে তোর ফোন অন রাখিস। আমি জায়িন ভাইয়ের ফোন দিয়ে কল করব।”
এখান থেকে দু’জন আলাদা হয়ে গেল। জায়িন কাছেপিঠেই ছিল। মাহিমাকে চলে যেতে দেখে পেছন থেকে মীরার পাশে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ মীরা এদিকে ফিরলে ভয় পেয়ে গেল। জায়িনকে দেখে কিছুটা স্বস্তিও পেলো। জায়িনের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে যেতে বলল,
“তাড়াতাড়ি চলুন। এখানে এক মিনিটও থাকা যাবে না। এতক্ষণে হয়তো আমাদের খোঁজ পড়ে গেছে।”
আবিররা যে দিকে গেছে ওরা অন্য দিক দিয়ে মেলা থেকে বেরিয়ে গেল। মানুষ দলে দলে মেলায় আসছে কিন্তু ওরাই বেরিয়ে যাচ্ছে।
“তুমি কি পালিয়ে এসেছ?”
” তা নয়তো সবার সামনে থেকে আমাকে নিয়ে আসার সাহস আছে আপনার?”
“একবার বলেই দেখো সাহস আছে কি-না।”
“বাদ দেন। মুখেই শুধু বড় বড় কথা।”
….
তনি পেছনে ফিরে মীরাকে দেখল না। মাহিমাও তাদের সাথে নেই। এই দুইটা আবার কোথায় রয়ে গেল।
“মীরা মাহিমা কোথায়?”
ইভাও ওদের খুঁজছে। সত্যিই তো কোথায় ওরা?
“মনে হয় পেছনে রয়ে গেছে।”
“এই দুইটাকে লাথি দেওয়া উচিত।”
আবির বলল,
“আমি দেখে আসি।”
আবির চলে গেলে ইভান পেছন থেকে ডেকে বলল,
“আমরা এখানেই আছি।”
এখান থেকেই দু’জনের খোঁজ পড়ে গেল। আবির ওদের খুঁজে না পেয়ে ফিরে এসেছে। মেয়ে দুইটা কোথায় গেল? নিশ্চয় একা একা অন্য কোনদিকে ঘুরছে। কিন্তু ওদের ঘুরার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ওদের ছাড়া একা বাড়ি গেলে খবর আছে। আবির, ইভান বোনদের খুঁজতে লাগল।
মীরা জায়িনকে নিয়ে রিকশায় চড়ে বসেছে। জায়িন বলল,
“ওরা তোমাদের খুঁজবে না?”
“ঠিক আছে। আমি ফিরে যাচ্ছি। মামা রিকশা থামান তো।”
“রাগ করছো কেন?”
“আপনি আমার থেকে বেশি ওদের কথা ভাবছেন। আমি রাগ না করে নাচব?”
“এজন্য ভাবছি কারণ ওরা টেনশন করবে।”
মীরা ভীষণ রেগে বলল,
“মামা আপনি রিকশা থামাবেন? নাকি আমি চলন্ত রিকশা থেকেই নেমে যাব।”
জায়িন মীরাকে শক্ত করে ধরে রেখে বলল,
“রিকশা থামাবেন না মামা। আমার বউটার মাথায় সামান্য গণ্ডগোল আছে। ওর কোন কথা শোনার দরকার নেই।”
“আমি আপনার বউ? বিয়ে কবে হলো?”
“প্রেম যখন করছি বিয়ে না করে তো ছাড়ছি না।”
“কিন্তু এখন কেন মিথ্যা বলছেন।”
“রিকশাওয়ালা মামা যাতে আমাদের সন্দেহ না করে।”
“করলে করুক। তাতে কার কী?”
“আমার অনেক কিছু। তোমাকে নিয়ে কেউ ভুল কিছু ভাবলে আমার ভালো লাগবে না।”
মীরা মনে মনে গলে গিয়ে বলল, হায় কত্ত ভালোবাসা! মিষ্টি মিষ্টি কথার জালে ফাঁসিয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে।” কিন্তু জায়িনকে বুঝতে না দিয়ে মুখের ভাব গম্ভীর করে বসে থাকল।
…
মীরা ঝালমুড়ি চিবোতে চিবোতে বলল,
“আপনি কিন্তু এখনও আমার ওই প্রশটার উত্তর দিননি?”
“কোন প্রশ্ন?”
মীরা থেমে গেল। নাক ফুলিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে জায়িনের দিকে তাকাল।
“প্রশ্নটাও ভুলে বসে আছেন?”
“স্মরণশক্তি দূর্বল। তুমি একটু মনে করিয়ে দাও।”
“বলেছিলেন সামনাসামনি দেখা হলে বলবেন।”
জায়িন কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর মনে পড়লে বলল,
“ওহ। এখনই বলতে হবে?”
“হ্যাঁ। আমি জানব না আপনি কবে থেকে আমাকে পছন্দ করেন। আমার তো মনে হয় আমি আপনাকে আগে পছন্দ করেছি।”
“উঁহু।”
“তাহলে বলুন আপনি আমাকে কবে, কোথায় দেখেছিলেন? পছন্দের শুরুই বা হলো কবে থেকে? আমি যে আবির ভাইয়ার বোন এটা জানতেন?”
“জানতাম।”
“দূর। এরকম এক শব্দ করে বলছেন কেন? ডিটেইলসে বলুন।”
“সময়টা শীতকাল ছিল। শীতের সকালে এমনিতেই হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। তখনও রোদ উঠেনি। কুয়াশায় ঢাকা দিন ছিল। পথে আবিরের সাথে দেখা হয়ে গেল। আবির একটা মেয়েকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছে। আমাকে দেখে ও দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। কিছুক্ষণ পর সামনে থেকে কিছু পড়ার শব্দ ও মেয়েটার চিৎকার শোনা গেল। নিজে নিজে সাইকেল চালাতে গিয়ে রাস্তার নিচে পড়ে গেছে। আবিরের সাথে আমিও ছুটে গেলাম। গিয়ে দেখলাম মেয়েটা সাইকেলের নিচে পড়ে আছে। চোখ ভেজা কান্না করছে।”
চলবে
#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
৭০
দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মীরা বিরক্তি নিয়ে তাদের কথা শুনছে। আবির ভাই তাকে সাইকেল চালানো শেখাতে এনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বন্ধুর সাথে রসের আলাপ জুড়ে দিয়েছে।
“কবে এসেছিস শালা?”
“তিন চার দিন হলো।”
“তবুও দেখা করলি না! ডাক্তার হওয়ার আগেই দাম বেড়ে গেছে তোর। পুরোপুরি ডাক্তার হলে তো বন্ধুদের চিনবিই না।”
“তুই কী করছিস?”
মীরা আর এদের ঢঙের কথাবার্তা শুনতে পারল না। অধৈর্য হয়ে সে নিজে নিজেই শেখার চেষ্টা করতে লাগল। মীরা যে নিঃশব্দে চলে গেছে এটা আবির খেয়াল করল না।
“বোনকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছি। শীতের সকালে কোথায় কম্বল মুড়িয়ে ঘুমাব তা না। ধরে বেঁধে সাইকেল চালানো শেখাতে নিয়ে এসেছে। বাতাসে চাপাচোপা জমে গেছে।”
“তোর বোন?”
“মামাতো বোন। জেএসসিতে গোল্ডেন এপ্লাস পাওয়ায় বাপের থেকে সাইকেল নিয়েছে। এখন চালানো শেখানোর দায়িত্ব আমার উপর পড়েছে।”
ওদের কথাবার্তার এপর্যায়ে মীরার চিৎকার শোনা গেল। আবির দেখল মীরা পাশে নেই। কিছুটা দূরে চোখ গেলে মীরাকে সাইকেল নিয়ে রাস্তার নিচে পড়ে থাকতে দেখল। আবির ছুটে মীরার কাছে চলে গেল। ওর পেছনে জায়িনও এসেছে। আবির তাড়াহুড়ো করে মীরার উপর থেকে সাইকেল সরিয়ে নিল। উদ্বিগ্ন হয়ে মীরার পাশে বসে বলল,
“ব্যথা পেয়েছিস?”
মীরা দু’হাতে পা ধরে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমার পা ভেঙে গেছে আবির ভাই। আমি আর কোনদিন সাইকেল চালাতে পারব না।”
“ব্যথা পেয়েছিস নাকি সেটা বল। সাইকেল চালাতে পারবে না ভেবে কাঁদছে। গাধা!”
“আমি হাঁটব কীভাবে? কে আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে? আমি কি বাকি জীবন ল্যাংড়া হয়ে বাঁচব?”
“এক চড় দেব। সামান্য ব্যথাতে কেউ ল্যাংড়া হয় না।”
“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি ল্যাংড়া হয়ে গেছি। দেখো, হাঁটতে পারছি না। দাঁড়াতেও পারছি না।”
“তোকে একা একা কে সাইকেল চালাতে বলেছে? পুরোপুরি না শিখেই পণ্ডিতি করতে হবে।”
“তুমি তো কথা বলছিলে। কতক্ষণ অপেক্ষা করতাম? তোমাদের গল্প শেষই হচ্ছে না। আমি কি করব? তুমি আবার আমাকেই বকছো?”
কান্নারত সেই মেয়েটার দিক থেকে কোনভাবেই চোখ সরাতে পারল না জায়িন। হাতমোজা পরা হাতে গাল বেয়ে পড়া চোখের জল মুছছে। শীতেই হোক বা কান্নার কারণে নাকের ডগাটা পাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। ভেজা চোখের পাপড়ি মিটমিট করে তার দিকে তাকাল একবার। সাথে সাথেই আবার চোখ সরিয়ে নিল। কিন্তু সেই একটু চাওয়াই জায়িনের জীবনে শীতকালেও বসন্ত এনে দিয়েছিল।
মরিচে কামড় লেগে গেলে মীরা দু-হাত ঝেড়ে সমানে ফোঁপাতে লাগল। ঝালের চোটে কথা বলা যাচ্ছে না। তবুুও বলল,
“ওরে আল্লাহ! আমি ক্লাস নাইনে থাকতেই আপনি আমাকে চেনেন! তখন থেকেই পছন্দ করতেন?”
মীরা বিস্ময় ধরে রাখতে পারছে না। ঝাল লাগায় তার চোখে পানি এসে গেছে। জায়িন দ্রুত দোকান থেকে পানি কিনে এনে মুখ খুলে মীরাকে দিল। মীরা পানি খেয়ে কিছুটা ঝাল কমিয়ে আবার প্রশ্ন করতে লাগল।
“তাহলে আমি মুবিন ভাইয়ের কাছে পড়ার সময় আপনি এমন ভাব করতেন কেন যে আপনি আমাকে চেনেন না? আমাকে আপনাদের বাড়িতে দেখে আপনার তো আরও খুশিতে নাচা উচিত ছিল। পছন্দের মানুষটাকে রোজ দেখতে পারবেন। আপনি তো খুশি হলেনই না। উল্টো আমাকে দেখেই কেমন মুখ কালো করে রাখতেন। কেন? আমি আরও আপনার ভয়ে মুবিন ভাইয়ের কাছে পড়া ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। আপনারা বাড়িতে থাকলে জোরে কথাও বলতাম না। কী বাজে লোক আপনি দেখেছেন? আমাকে দেখে মনে মনে ঠিকই লাড্ডু ফুটতো। কিন্তু আমার সামনে হুতুমপেঁচার মতো মুখ বানিয়ে আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দিতেন। আপনার সাথে তো আমার প্রেম করাই উচিত হয়নি।”
মীরা ছেলেমানুষি রাগ দেখে জায়িন হাসছে। ওকে হাসতে দেখে মীরা আরও রেগে বলল,
“একদম হাসবেন না। আপনার মনে হয় আমাকে ভয় দেখিয়ে আপনি খুব সোওয়াবের কাজ করেছেন?”
“আমি কি কোনদিন তোমাকে কিছু বলেছি? নাকি তোমাকে বকেছি। তাহলে কীভাবে ভয় দেখালাম?”
“ভালো করে কথা না বলে। কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। আপনি তো আমার জোরে কথা বলাও পছন্দ করতেন না।”
“যেদিন তোমাকে প্রথম আমাদের বাড়িতে দেখেছি সেদিনের ধাক্কাটা সত্যিই অনেক বড়ো ছিল। আমি খুশি হবো নাকি অবাক হবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। দুনিয়ায় এত মানুষ থাকতে তোমাকে আমার ভাইয়ের কাছেই পড়তে আসতে হলো! বাড়িতে থাকা দিনগুলো আমি ভীষণ ভাবে উপভোগ করতে লাগলাম। পড়তে এসে মা’র সাথে তোমার অর্থহীন সব গল্প ঘরে বসে আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। আনমনে হেসেও ফেলতাম। মুবিনের সাথে তোমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে আমি খুশি হতে পারতাম না। আশ্চর্যের কথা, না? নিজের ভাইয়ের উপরও জেলাস হতাম। তোমার মনে আছে একদিন গলিতে কয়েকটা কুকুরের জন্য তুমি যেতে ভয় পাচ্ছিলে। আমি ব্যালকনি থেকে দেখে সাথে সাথে নেমে গেলাম। সরাসরি তোমাকে সাহায্যের কথা বলতে পারলাম না। কিন্তু তোমার সামনে দিয়েই গেলাম যেন তুমি আমার সাথে সাথে আসতে পারো। এই ঘটনার কথা তোমার নিশ্চয় মনে আছে।
তুমি পায়ের নখ উলটে গেটের সামনে বসে কাঁদতে লাগলে। সেদিনও তোমার কান্না দেখেই আমি তোমার কাছে গিয়েছিলাম। তোমার পা থেকে রক্ত পড়ছে দেখে আমার কী হলো বুঝতে পারলাম না। তুমি কী ভাববে সেটা না ভেবেই কোলে নিয়ে ফ্ল্যাটে চলে এলাম। আমি পা ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার সময় চোরা চোখে সংকোচ নিয়ে বারবার তুমি আমাকে দেখছিলে। রিমুর জন্মদিনে শাড়ি পরে যাওয়া। তোমার চোখা হিল দিয়ে আমার পা আহত করা। এরকম আরও অসংখ্য ঘটনা আছে। যেগুলো তোমার হয়তো মনে নেই। কিন্তু আমার সব মনে আছে।”
মীরা কী বলবে বুঝতে পারছে না। সে কথা হারিয়ে ফেলেছে। শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে জায়িনের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা কোনদিনও তাকে বুঝতেই দেয়নি। এত সুন্দর করে অনুভূতি গুলোকে নিজের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে।
“তখনই আমাকে কেন বলেননি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।”
“ভালোবাসতাম না। পছন্দ করতাম। সেই পছন্দই ধীরে ধীরে ভালোবাসার রুপ নিয়েছে।”
“পছন্দের কথাই কেন বলেননি?”
জায়িন মীরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। এই প্রশ্নের সৎ উত্তর সে কোনদিন দিতে পারবে না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
“আমি চাইনি এই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হোক মীরা। যতটা সম্ভব নিজেকে তোমার থেকে দূরে রাখতে চেয়েছি। তোমাকে ভালোবাসা আমার হাতে ছিল না। আবার তোমাকে ভালোবাসা থেকে নিজেকে আটকানোর ক্ষমতাও আমার ছিল না।”
মীরা এখনও অপেক্ষা করছে।
“কী হলো বলুন। ভালো লাগার কথা তখন বলেননি কেন?”
“কারণ তখন তুমি ছোট ছিলে। নাইন টেনে পড়ুয়া কোন পিচ্চি মেয়ের সাথে আমি প্রেম করতে চাচ্ছিলাম না।”
“যাহ! নাইন টেনে পড়ুয়া মেয়েকে আপনার কাছে পিচ্চি মনে হয়?”
“অবশ্যই। তুমি নিজেকে অনেক বড় মনে করলেও আমার কাছে তোমাকে এখনও পিচ্চিই মনে হয়।”
“আপনি আমাকে পিচ্চি বলছেন? খোঁজ নিয়ে দেখেন। আপনার দাদী আমার বয়সেই আপনার বাবার মা হয়েছিল। হুহ্!”
মীরা কথাটা সহজভাবে বললেও জায়িন সেটার অন্য মানে করে মীরার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। একটু ঝুঁকে কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“এখন তুমিও কি এই বয়সে আমার বাচ্চার মা হতে চাও?”
মীরার কান ঝাঁঝাঁ করে উঠল। যেন কানে গরম কিছুর ছ্যাঁকা লেগেছে। জায়িন কোনদিনও এসব কথা বলে না। আজকে ওর এমন কথা শুনে বেচারি লজ্জায় আধমরা হয়ে গেল। কোনভাবেই আর জায়িনের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারল না।
….
অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাহিমা হয়তো এতক্ষণে তাকে ছাড়াই বাড়ি ফিরে গেছে। আজ কপালে শনি আছে। এত সাহস দেখানোও উচিত হয়নি। মীরাকে অতিরিক্ত টেনশন করতে দেখে জায়িন বলল,
“আচ্ছা তুমি টেনশন করো না। আমরা এক্ষুনি ফিরে যাব। রিকশা পেয়ে গেলে পাঁচ মিনিটও লাগবে না।”
“রিকশাই তো নেই।”
এমনিতেই সময়ের খেয়াল ছিল না। তার উপর রাস্তায় একটাও খালি রিকশা নেই। যতগুলো আসছে উপরনিচ বোঝাই করা মানুষ। আজকের মতো দুঃসাহস মীরা জীবনে কখনও দেখায়নি। বাড়িতে গিয়ে কী জবাব দিবে এটা ভেবেই হাতপা কাঁপছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে মীরার দুঃশ্চিতার পাল্লা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল। আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটা নেই। ঝলমলে রোদের মাঝেও বড়বড় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়তে লাগল। মীরা অসময়ের এই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজকে আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
একটু দাঁড়ানোর পর একটা রিকশা পেলেও লোকটা বৃষ্টির জন্য নিয়মিত ভাড়া থেকেও দ্বিগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। মীরার মেজাজ আগে থেকেই বিগড়ে ছিল। লোকটার এই লোভী মনোভাব দেখে বলল,
“আপনি তো ভীষণ বাজে লোক। বৃষ্টি শুরু হয়েছে এখনও দু’দিনও হয়নি। এর মধ্যেই আপনার ভাড়া বেড়ে গেছে! এই বৃষ্টি এক্ষুনি থেমে যাবে। কিন্তু আপনার চরিত্র সবসময়ই এখন থাকবে।”
“না পুষাইলে যাইবেন না। আমি তো জোর করমি না। এত কথা কইতাছেন কেন?”
জায়িন লোকটার ব্যবহারে রেগে গেলেও এখানে ঝামেলা করতে চাইল না। সে গলার স্বর শান্ত রেখে বলল,
“আমরা যাব না। আপনি চলে যান।”
“দেখলেন বৃষ্টির দিনে রিকশাওয়ালা গুলো কেমন ডাকাত হয়ে যায়। এতটুকু পথ দেড়শো টাকা ভাড়া চাচ্ছে। টাকা কি গাছে ধরে? তার উপর আবার ব্যবহার দেখেছেন!”
“আচ্ছা তুমি রাগ করো না।”
বৃষ্টি থামার কোন নাম নেই। এতক্ষণ আকাশে সূর্য ছিল। এখন পুরো আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়ে শীতল বাতাস দিচ্ছে। ভাগ্য করে একটা সিএনজি পেয়ে গেল। এখন রিকশায় গেলে ভিজতে হবে। তাই জায়িন মীরাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে পড়ল।
“আপনার ফোনটা দিন তো।”
জায়িন পকেট থেকে ফোন বের করে দিল। মীরা অভ্যস্ত হাতে নিজের নামের অক্ষর গুলো তুলে লক খুলে ফেলল। মাহিমার নাম্বারে কল করলে মাহিমা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“কোথায় তুই? তোর জন্য কি আমিও মরব? কখন গেছিস? আমি আর এক মিনিটও দাঁড়াব না।”
” বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমি কী করব? ইচ্ছে করে কি দেরি করছি? পৌঁছে গেছি একটু দাঁড়া। আমি মেলার গেটের সামনে। তুই কোথায়?”
“কোথায় থাকব? বৃষ্টিতে ভিজছিলাম তাই একটা দোকানে দাঁড়িয়েছি। তুই তাড়াতাড়ি আয় মীরা। আমার ভীষণ ভয় করছে। আজকের কাজটা আমাদের মোটেও ঠিক হয়নি। এভাবে সবাইকে টেনশন দেওয়া উচিত হয়নি। বাড়িতে হয়তো এতক্ষণে মরাকান্না লেগে গেছে। মামা, ভাইয়ারা পুলিশের কাছে চলে গেলেও অবাক হবো না। সব তোর জন্য হয়েছে। তুই এই বুদ্ধিটা না দিলে আমি জীবনেও এমন করতাম না।”
“হ্যাঁ এখন সব দোষ আমার। তুমি তো সাধু। আমি যখন বুদ্ধিটা দিয়েছিলাম তখন নেচে নেচে রাজি হয়ে গিয়েছিলি কেন? না করতে পারলি না।”
মীরা ঝগড়ায় ব্যস্ত ছিল তখন জায়িন সিএনজি থেকে নেমে নিয়েছিল। একটু পরেই সে ছাতা মাথায় ফিরে এলো। জায়িন ছাতা কিনতেই গিযেছিল। সিএনজি থেকে নেমে দোকানে যেতে যেতেই সে অনেকটা ভিজে গেছে। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা শার্টে লেগে এখন শার্ট গায়ের সাথে লেপটে আছে। মীরা আজ সাদা রঙের একটা সুতির শাড়ি পরেছে। শাড়িটা অত বেশি পাতলা না হলেও ভিজে গেলে নিশ্চয় গা দেখা যাবে। জায়িন সেটা চাচ্ছে না। তাই নিজে ভিজে ছাতা কিনে এনেছে। মীরা এতক্ষণে মাহিমার সাথে ঝগড়া শেষ করে জায়িনের জন্য অপেক্ষা করছিল। জায়িন ফিরে আসতেই মীরা অসন্তুষ্ট গলায় বলল,
“আপনি ছাতা কিনতে গিয়েছিলেন! এখন ছাতা কেনা জরুরি লাগল?”
“অবশ্যই। নেমে এসো।”
মীরা জায়িন এক ছাতার নিচে দাঁড়াল। মীরা ভিজে যাবে এই আশঙ্কায় জায়িন ছাতাটা বেশি করে মীরার দিকে ধরল। সে নিজে একপাশ ভিজে যাচ্ছে। তাতে সমস্যা নেই।”
“আপনি তো ভিজেই যাচ্ছেন। আরেকটু ভেতরে আসেন।”
“মাহিমা কোথায় জানা আছে?”
“কোন দোকানে নাকি দাঁড়িয়েছে। আবার কল করে দেখি।”
“দাঁড়াও।”
জায়িন ফোন বের করার সময় মীরা এক কাজ করল সে পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে জায়িনের সামনে চলে এলো। তার পিঠ জায়িনের ভেজা বুকের সাথে লেগে আছে। এক মুহূর্তের জন্য জায়িনের হাত থেমে গিয়েছিল। সে মাথা নিচু করে দেখতে চাইলে মীরার মাথায় চুলই দেখল। নিঃশব্দে হাসল সে। ফোন বের করে মাহিমাকে কল করল। মীরা অপেক্ষা করছিল মাহিমাকে কখন খুঁজে পাবে। কখন এই ছাতার বৃষ্টি থামবে। আর কখন সে বাড়ি যাবে। বাড়ি যাবার কথা মনে হতেই গলা শুকিয়ে গেল। আজ শুধু বকা না মারও খেতে পারে। কেউ বাঁচাতে পারবে না। জায়িন কানে ফোন ধরে রেখেছে। রিং হচ্ছে। কী যেন হলো, হঠাৎ মীরা ঝট করে এদিকে ফিরে জায়িনের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল। মীরার এমন কাজে জায়িন যথারীতিই চমকেছে। তাৎক্ষণাৎ বেচারা জিজ্ঞেসও করতে পারল না কী হয়েছে। মীরা নিজে নিজেই বিড়বিড় করছে। জায়িন বিস্ময়ের ধাক্কা সামলিয়ে গলায় জোর এনে জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে মীরা?”
“আবির ভাই!”
চলবে
(