#মন_যাকে_চায়
#পর্ব _৮
#সুবর্ণা_আক্তার_জুথি
দিলারা জামান এসেই ডায়নাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। “তারপর বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল’ এই ডাইনি বুড়ি খবরদার আমার নাতির দিকে নজর দিবি না?”
“বেবি এই ডাইনী বুড়ি টা কি?”
অনুভব মনে মনে বলল আমি তো নিজেই জানিনা তোমাকে কি বলব তবে নানী যেভাবে কথাটা বলল, মনে হয় না এর অর্থ ভালো কিছু হতে পারে।
“আমি জানি না তুমি পরে অন্য কারো থেকে জেনে নিও।”
নানী ও আমার যাস্ট ফ্রেন্ড তাছাড়া আমাদের মধ্যে আর কোন সম্পর্ক নেই। বলে অনুভব বাইরে চলে গেল।
নানী ও রেগে রেগে চলে গেল আর যাবার আগে ডায়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল গায়ে পড়া মাইয়্যা।
অনুভব বাইরে আসতেই ঈশিতার মুখোমুখি হলো। ইশিতা লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল।
“কি হয়েছে বলতো সকাল থেকে দেখছি ব্লাশ করছো?”
কিছু না এই নাও তোমাদের কফি। অনুভব একটা মগ তুলে নিয়ে বললো ডায়না ঘরে আছে কফিটা দিয়ে ঘরে আসো জরুরি কথা আছে।
উহুম.. উহুম.. আরে ভাবী তোমাকে তো একা পাওয়া যাচ্ছে না ভাইয়া সবসময় আঠার মতো লেগে আছে। লিজা বললো।
অনুভব দ্রুত ঘরে চলে গেল।
“কি দরকার লিজা বলো আমাকে?”
দরকার আমার না রিয়ার তাই তোমাকে ডাকছে।
“আরেকটা কথা ভাবী তোমার ভাইকে কোথাও দেখছি না কোথায় গেছে?”
কেন আমার ভাইয়ের সাথে তোমার কি দরকার?
না এমনিতেই একসাথে এসেছি সবাই কোথাও যদি হারিয়ে যায় তাই বলছিলাম। হাজার হোক আমার একমাত্র বেয়াই বলে কথা।
“লিজা আমার কিন্তু লাভ ম্যারেজ কথাটা মনে রেখো তাই আমার চোখকে ফাঁকি দেয়া ওতো টা সহজ হবে না।”
আর কোনো কিছু করার আগে অবশ্যই ফ্যামেলী ম্যাটারটা মাথায় রেখো।
আচ্ছা ভাবী।আর কার জন্য কফি নিয়ে যাচ্ছো এই হাফ প্যান্ট পরা মেয়েটার জন্য।
হুম।
“আমাকে দাও আমি দিয়ে আসছি আর তুমি বরং ভাইয়ার কাছে যাও।”
দেরি হলে কখন আবার রেগে যাবে।
__________
অনুরাগ কে এই ইশিতার সাথে আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না। আপনি তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসো আংকেল।
সরি ডায়না আমার পক্ষে এখন দেশে যাওয়া সম্ভব না।দু_এক মাস সময় লাগবে। তারমধ্যে দেখ অনুরাগ কে রাজি করাতে পারো কিনা। “একটা কথা মনে রেখ, অনুভব কিন্তু অনুরাগের আপন ভাই ছিল।”
আর অনুরাগ সবকিছু জেনে গিয়েছিল তাই আমাদের উপর রাগ করে দেশে চলে গেছে।যা করবে খুব সাবধানে। “অনুরাগ কিন্তু খুব জেদী।”
“ভাইকে দেয়া কথা রাখতে গিয়ে আবার তোমাকে ছেড়ে দিতেও পারে।”
না না আমি এটা কিছুতেই হতে দেবো না। অনুরাগ শুধু আমার।”আর তাকে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে আনতে আমি সব কিছু করতে পারি।”
আচ্ছা চেষ্টা করতে থাকো। ছেলেটা আমাদের ওপর খুব রেগে আছে। দেশে যাওয়ার পর একবারও কন্টাক্ট করেনি।”ডায়না তুমি অনুরাগ কে বলে দিও আমরা সবাই ওর পথ চেয়ে আছি।”
আপনি টেনশন করবেন না আংকেল আমি অনুরাগ কে সাথে নিয়েই ফিরবো।
ফোনটা রেখে একটা পিংক কালারের থ্রিপিস পরে বাইরে চলে গেল ডায়না। অনুরাগের অনুরোধে ডায়না থ্রিপিস পরেছে।
অনুরাগের মাথায় এই কথা ইশিতা দিয়েছে।
“সবাই ডায়নাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে এটা ইশিতার পছন্দ না হাজার হলেও অনুভবের ফ্রেন্ড আর আমাদের দেশের অতিথি বলে কথা।”
বেশ ধুমধাম করে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। সবাই খুব সুন্দর করে সেজেছে শুধু ইশিতার হালকা সাজ।
তাতেই অনুভবের চোখ ধাঁধিয়ে গেছে। “সাদা চামড়ার মেয়ে হলে কি হবে ইশিতা ডায়নার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর।”
পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে অনুভবের দৃষ্টি ইশিতার দিকে সীমাবদ্ধ ছিল।ডায়না যতই তার কাছে আসার চেষ্টা করছে অনুভব ততই এড়িয়ে যাচ্ছে।
“ইশিতা কে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনুভব বললো, নাচানাচি করতে বারণ করেছি তাই বলে মুখটা ওমন গম্ভীর করে থাকতে বলিনি।”
“আচ্ছা অনুভব একটা কথা বলবো?”
“হুম বলো।”
ডায়না সত্যি তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড তো?কেন জানি না মনে হচ্ছে তোমরা অনেক আগে থেকেই পরিচিত।
ইশিতার কথা শুনে অনুভব বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ডায়না টেনে নিয়ে চলে গেল।
অনুভবের যাওয়ার পথে তাকিয়ে দেখলো ইশিতা। অনুভব বারবার পিছন ফিরে দেখছে সে যেন কিছু একটা বলতে চাই।
_________
পরের দিন সকাল বেলা ইশিতা অনুভব ঈশান লিজা আর ডায়না সবার থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।
ইশিতা আসার আগেই ডায়না এসে অনুভবের পাশের সিটে বসে পড়ে।
“অনুভব এতে খুব বিরক্ত হয় কিন্তু কিছু বলেনি।”
ইশিতা আশা করেছিল হয়তো অনুভব কিছু বলবে। ইশিতা পিছনে গিয়ে লিজার পাশে বসে। সারাটা পথ চুপচাপ বসে থাকে ইশিতা।
ঈশান আর লিজা চুপিচুপি গল্প করছে। সকালে গ্রামের দোকানে থেকে তোমার জন্য এই চুরি গুলো কিনেছি। শহরে তো এসব পাওয়া চাইনা।
“ওয়াও খুব সুন্দর লাগছে।”লাভ ইউ ঈশান।
“লাভ ইউ টু লিজা।”একই গাড়িতে বসে এস এম এসে কথা বলছে দুজনে। গাড়িতে ওঠার সময় ঈশান লিজা কে চুরির প্যাকেট দিয়েছে।
যাবার সময় ট্রেনে করে গেলেও ফিরেছে নিজেদের গাড়িতে করে। অনুভবের বাবা মা কোন কারনে কালকে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে পারে নি।এতে দিলারা জামান বেশ দুঃখ পাই। তাই তাহেরা তার মাকে কথা দিয়েছে কিছুদিন পর এসে বেরিয়ে যাবে।
“লিজা ফোনে রাজীব চৌধুরীর সাথে কথা বলার সময় ডায়নার ব্যাপারে জানায় তাই রাজীব চৌধুরী গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি ফিরে যাবার জন্য।”
তিনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন খুব বড় একটা ঝড় আসতে চলেছে।
অনুভব লুকিং গ্লাসে বারবার ইশিতা কে দেখছে। বিষয়টা ডায়নার চোখে পড়ে। তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই যেভাবেই হোক ইশিতা আর অনুরাগ কে আলাদা করেই ছাড়বে।
৪/৫ঘন্টা জার্নি করে সবাই পৌঁছে গেল। আসার পথে ঈশান কে নামিয়ে দিয়ে এসেছে। বাড়ি এসে অনুভব নিজের ঘরে চলে গেল।
ডায়নাকে দেখে তাহেরা চৌধুরী আর রাশেদা বেগম কিছুটা অবাক হল। এরকম একটা মেয়ের সাথে অনুভবের বন্ধুত্ব হওয়া নিয়ে তাদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
ডায়না অনুভবের ঘরের দিকে যেতে চাইলে ইশিতা তাকে থামিয়ে দিল আর কাজের মেয়েকে ডেকে গেস্টরুম দেখিয়ে দিতে বললো।
“ডায়না রেগে গটগট করে চলে গেল।”
ইশিতা নিজের ঘরে চলে গেল।
এভাবে আরো কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে।
রাজীব চৌধুরী অনুভবের কাছে থেকে ডায়নার কথা শুনে খুব কষ্ট পায়।আর ইশিতার জন্য চিন্তা হয়। তিনি ভেবেছিলেন অনুভবের সাথে ইশিতা ভালো থাকবে। পরিস্থিতি বুঝে একদিন সবাইকে সত্যি কথা বলবে।
রাশেদা বেগম আর লিজা ডায়নাকে দুচোখে দেখতে পারেনা। সবসময় অনুভবের সাথে লেগে থাকে।
ইশিতা আস্তে আস্তে তার শাশুড়ির মন জয় করে নিয়েছে। তাহেরা বেগম ইশিতার সাথে আর তেমন একটা খারাপ ব্যবহার করে না।
একমাত্র ছেলের বৌ বলে কথা। ছেলের সুখের জন্য তিনি ইশিতা কে মেনে নিয়েছেন।
তার কোনোদিনই ইশিতা কে অপছন্দ ছিল না। তবে লিজা কে নিজের ছেলের বৌ বানাতে চেয়েছিলেন।আর অনুভব তার ইচ্ছার অমতে ইশিতা কে বিয়ে করে এতে তিনি ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন।
প্রথম প্রথম ডায়নার ব্যাপারে মাথা না ঘামালেও এখন তিনি বেশ বিরক্ত হচ্ছেন।
ইশিতা আর অনুভবের মাঝে সেই দুরত্ব রয়েই গেছে। এটা নিয়ে ইশিতা কোন কথা বলেনা সেও দেখতে চাই অনুভব আসলে কি চায়?
“তবে কি সেদিনের সবকিছু খনিকের আবেগ ছিল?”
অনুভব ধীরে ধীরে ইশিতার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।ডায়নার উপস্থিতি তার কাছে অসহ্যকর হয়ে উঠেছে।
সে সবসময় ইশিতার সঙ্গ চাই।
“কিন্তু যখনই ইশিতার মুখোমুখি হয় তখনই মনে হয় সে তো সে নয় যাকে ইশিতা ভালোবাসে।”
“সে তো একজন ছদ্মবেশী।যে ক্রমাগত সবাইকে ঠকিয়ে যাচ্ছে।”
ইশিতা যেদিন সত্যি জানবে সেদিন তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে নিজের জীবন থেকে।
অনুভব নিজের অনুভূতি গুলো মনের ভিতর ধামাচাপা দিয়ে রাখে।
__________
ইশিতার ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে যাওয়ার জন্য ইশিতা আর অনুভব রেডী হয়ে নিচে যেতেই ডায়না এসে হাজির হয়।
সেও তাদের সাথে যাবে বলে বায়না ধরে।আর অনুভব কে ব্লাকমেইল করে তাকে না নিয়ে গেলে সবাই কে সত্যি কথা বলে দেবে।
তাই সবার মানা করা সত্ত্বেও তাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
পার্টিতে গিয়ে অনুভব ডায়নাকে ইগনোর করে চলে।সে ইশিতা কে সময় দেয়ার চেষ্টা করছে।
সেখানে উপস্থিত সবাইকে খুব একটা চেনে না অনুভব তবে রাজীব চৌধুরী তাকে অনুভবের ফ্রেন্ড আর ইশিতার কয়েকটা ফ্রেন্ডের ছবি দেখিয়েছেন।
“অনুভবের একটা ফ্রেন্ড ডায়নার ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো তারপর কায়দা করে তাকে অনুভবের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নিজের ওয়াইফের সাথে গল্প করতে লাগিয়ে দিলো।”
আর তার ওয়াইফ কে বলেছে সে যেন কিছুতেই ডায়নাকে না ছাড়ে।
অনুভব আর ইশিতা কে মিলিয়ে দিতে তাদের ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক সাহায্য করেছে।
“তারা কিছুতেই ওদের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তিকে আসতে দেবে না।”
ডায়না পড়েছে বিপাকে এর সাথে কথা বলা শেষ করতেই আরেক জন এসে টেনে নিয়ে যায়।সে কিছুতেই অনুভবের নাগাল পাচ্ছে না।
অনুভবের সেদিকে খেয়াল নেই।সে ইশিতা কে নিয়ে ব্যস্ত।”ইশিতার হাসি, ইশিতার কথা বলা সব তার কাছে ভালো লাগতে শুরু করেছে।”
“আগে যে নিজেই চাইতো ইশিতা কে কষ্ট দিতে সেই এখন ইশিতার কষ্টে কষ্ট পায়।”
তবে কি আমি ইশিতা কে ভালোবেসে ফেলেছি?ইশিতার উপস্থিতি আমার মনকে যতটা শান্তি দেয় তা ডায়নার বেলায় উল্টো।
“আমি তাহলে কোনদিনই ডায়নাকে ভালোবাসি নি?”
হতেও তো পারে শুধুমাত্র বাবার ইচ্ছেকে সমর্থন করে যাচ্ছিলাম।বাবাই তো চেয়েছিল তার বিজনেস পার্টনারের মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে।
“তাই আমি ডায়নাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো ভালোবাসা ছিল না। ছিল শুধু সমঝোতা।”
“না না আমি নিজের মনের সাথে আর যুদ্ধ করতে পারছিনা আমার ইশিতা কেই চায়।”
আমি জেনে গেছি আমার #মন_যাকে_চায় সে ইশিতা।
“আমার ইশিতা আমার ভালোবাসা।”
আজকে বাড়ি ফিরে আমি ইশিতা কে আমার মনের কথা বলে দেবো আর তার সাথে আমার আসল পরিচয় জানিয়ে দেবো।
কেক কাটার পর সবাই মিলে অনুরোধ করলো ইশিতা আর অনুভব কে গান গাওয়ার জন্য। অনুভব ইশিতার হাত ধরে গান গাইতে শুরু করলো ইশিতা অনুভবের কন্ঠে এতো সুন্দর গান শুনে অবাক হলো তবে কিছু না বলে তার সাথে তাল মেলাতে লাগলো।
————–
“শোন বলি তোমায় না বলা কথা গুলো আজ বলে দিতে চাই,
বলো কি বলতে চাও সারাটা জীবন ধরে শুনে যেতে চাই।”
“ভালো বাসি আমি যে তোমায় এই কথাটাই ছিল শুধু বলার,
ভালোবাসি আমিও তোমায় সব কথা কি মুখে বলে দিতে হয়।”
“আকাশের এই নীল ঠিকানায় মেঘেরা সাদা ডানা ছড়ায়,
ওদের সেই ভালোবাসা এই মনে আজ পেয়েছে ঠাঁই।”
“জড়াবো আদরে তোমাকে অনুভবে, আকাশের চেয়ে বেশি তোমাকে ভালোবাসি।”
“ভালো বাসি আমি যে তোমায় এই কথাটাই ছিল শুধু বলার,
ভালোবাসি আমিও তোমায় সব কথা কি মুখে বলে দিতে হয়।”
—————-
ওয়াও বন্ধু কবে থেকে এতো সুন্দর করে গান গাইতে শুরু করলি? আমরা তো সবাই মজা করে তোকে গাইতে বলেছিলাম। ইশিতা বরাবরই ভালো গায় সেটা আমরা সবাই জানি।
কিন্তু তোর গলা যে এত ভালো তা জানা ছিল না। তুই তো আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়েছিস।
অনুভব যে গান গাইতে পারতো না অনুরাগের জানা ছিল না।ইশিতার চোখের দিকে তাকিয়ে অনুরাগের গলা শুকিয়ে গেল।সে এভাবে ধরা পড়তে চাইনি ইশিতার কাছে!!!
।
।
।#মন_যাকে_চায়
#পর্ব_৯
#সুবর্ণা_আক্তার_জুথি
“এই যা এবার কি উত্তর দেব?”
ইশিতার প্রেমে পড়ে আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি।
ইশিতা আর ডায়না ছাড়া সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। “ইশিতা আমি আসলে তোমাকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম, আমতা আমতা করে বলল অনুভব।”
ইদানিং তুমি আমাকে খুব বেশিই চমকে দিচ্ছ অনুভব। ভীড় ঠেলে বের হয়ে এসে ডায়না বললো, “সেকি ইশিতা তোমার হাজব্যান্ড এতো ভালো গান করে সেটা তুমিই জানতে না?”
অথচ দেখ আমি কিন্তু অনেক দিন আগে থেকেই জানি।
ডায়নার কথা শুনে ইশিতা খুব কষ্ট পেলো আর কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে গেল। অনুভব ইশিতার পিছুপিছু যেতে চাইলে ডায়না তার হাত চেপে ধরে।
ডায়নার কথা শুনে এমনিতেই অনুভব রেগে গেছিল তার উপর আবার ইশিতা কে কাঁদতে দেখে আরো রেগে গেল।
ডায়নার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “খবরদার আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না তাহলে এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।”
অনুভব দৌড়ে বাইরে চলে গেল। বাইরে গিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ইশিতা কে খুঁজতে লাগলো।
ডায়না রাগে অপমানে ভাংচুর করতে শুরু করলো।
–এক্সকিউজ মি, মিস ডায়না এটা আপনার বাপের সম্পত্তি নয় যে এভাবে ভাংচুর করবেন। ভাংচুর করার ইচ্ছা হলে নিজের বাড়িতে গিয়ে করুন।(ইশিতার ফ্রেন্ড)
আরেকজন বললো, ডায়না বেবি তুমি অনুভবের আশা ছেড়ে দাও।”তার চেয়ে বরং আমাদের মধ্যে থেকে একজন সিঙ্গেল ছেলেকে বেছে নাও।”
নয়তো অনুভব আর ইশিতার জীবন থেকে দূরে সরে যাও। “কারণ তোমার পক্ষে ওদের দুজনকে আলাদা করা সম্ভব নয়।”
সবাই মিলে হাসাহাসি শুরু করলো।ডায়না তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে গেল।
___________
“ইশিতা, ইশিতা কোথায় তুমি?”
“প্লিজ ফিরে এসো। তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি ইশিতা। আমার এতদিনের ব্যবহারের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।”কোথায় হারিয়ে গেলে?”
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।
ইশিতা আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ ইশিতা। রাস্তার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো একনাগাড়ে বলে চলেছে অনুভব।
পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে চারিদিকে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পাইনি ইশিতা কে। এমনকি ফোনও তুলছে না ইশিতা।
ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শে অনুভব উঠে দাঁড়ালো, তারপর সামনে থাকা মানুষটাকে জড়িয়ে ধরল।
“তুমি কোথায় চলে গেছিলে?”
“একমূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।”
তারপর ইশিতার দু গালে আলতো করে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
আই এম সরি ইশিতা আমি তোমার থেকে অনেক কিছু গোপন করেছি তবে আমি এবার তোমাকে সব সত্যি কথা বলতে চাই। তারপর তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মেনে নেবো।
তবে তার আগে আমি একটা কথা বলতে চায়।
সেটা হলো আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। তোমার এই মিষ্টি হাসি আমাকে পাগল করে দেয়। তোমার স্পর্শে আমি সুখ খুঁজে পায়। তোমার উপস্থিতি আমাকে শান্তি দেয়।
তোমার কান্না আমাকে কষ্ট দেয়। তোমার আনন্দে আমার হৃদয়ে সুখের অনুভূতি জেগে ওঠে।
আরে থামো থামো তুমি তো দেখছি গায়ক হওয়ার সাথে সাথে কবি হয়ে গেছ।
অনুভব ইশিতার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো আমাকে বাধা দিও না প্রেয়সী। আমার হৃদয়ের কথা গুলো তোমাকে আজ শোনাতে চাই।
আরে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে এসব কি হচ্ছে?
ও তাহলে চলো বাড়িতে চলে যায়। তারপর ঘরে গিয়ে বলে ইশিতার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিল অনুভব।
ইশিতার বেশ লজ্জা লাগছে তাই যেনতেন ভাবে অনুভবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
তারপর বললো আজকে আমি অনেক খুশি।প্রায় দুই মাস পর আমি আবার আমার আগের অনুভব কে দেখতে পাচ্ছি।যে তার ইশিতার জন্য পাগল ছিল।
একটা কথা বলল অনুভব।
হুম বলো ইশিতা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
কেন জানি না মনে হচ্ছে তুমি আজকেই প্রথম আমাকে তোমার অনুভূতি প্রকাশ করলে। এমন কেন মনে হলো অনুভব যেখানে আমরা টানা ৫বছর প্রেম করেছি। তুমি তো এরআগে অনেক বার অনেক রকম ভাবে আমাকে নিজের মনের কথা বলেছো।
তবুও আজকে তোমার বলা কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে তুমি আজকেই প্রথম আমাকে আই লাভ ইউ বলছো।
ইশিতা আজকে আমি বুঝতে পারছি তোমার আর অনুভবের ভালোবাসা কতোটা গভীর ছিল।যার কারণে তুমি সব বুঝতে পেরে যাচ্ছ।
তবে আমিও তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসা দেবো। জানিনা সত্যি জানার পর তোমার সিদ্ধান্ত কি হবে।
তবে যায় হোক না কেন আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
ভয় পেয়ে গেলে তো তুমি আমাকে এতো চমকে দিচ্ছ তাই আমিও তোমাকে একটু চমকে দিলাম।
অনুভব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর ইশিতার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
আড়ালে দাঁড়িয়ে এসব দেখে ডায়না প্রচন্ড রেগে যায়। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে যেভাবেই হোক অনুরাগ কে ইশিতার কাছে থেকে ছিনিয়ে নেবে। প্রয়োজনে সে আজই ইশিতা কে সব সত্যি বলে দেবে।
____________
হসপিটালে O.T সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশিতা, অনুভব, রাজীব চৌধুরী, লিজা, রাশেদা চৌধুরী। ইশিতা তার মাকে সামলাতে ব্যস্ত সাথে লিজাও আছে। আনিসুল হকের চোখে মুখে অনুশোচনার ছাপ।
এতো দিন ধরে যাকে অবহেলা করে এসেছে সেই আজকে তার জীবন বাঁচিয়েছে। কি এমন চেয়েছিল ছেলেটা শুধুমাত্র বাবার ভালোবাসা। আর বাবা ডাকার অধিকার।
আনোয়ারা বেগমের শরীর খারাপ তাই তাকে কিছু জানানো হয়নি।
রাস্তা ক্রস করার সময় আনিসুল হক গাড়ি চাপা পড়তে যাচ্ছিল। পাশেই ঈশানের ভার্সিটি। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে বাবাকে দেখতে পেয়ে বাঁচাতে ছুটে আসে ঈশান তারপরেই ঘটে দুর্ঘটনাটি।
শায়লা হক যে সবসময় চুপ থাকে সে আজকে আনিসুল হকের সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আপনার তো খুশি হওয়ার কথা।
একটা কথা মনে রাখবেন আমরা মা ছেলে অনেক সহ্য করেছি। আপনার জন্য আমার ছেলেটার আজকে এই অবস্থা।”ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না।”
আমার ছেলেটা সুস্থ হয়ে গেলে আমরা দুজনই আপনাকে মুক্তি দিয়ে চলে যাবো।
আনিসুল হক নির্বাক হয়ে গেছে।কান্না গুলো গলা পর্যন্ত এসে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে তার।
তাহেরা বেগম এসে তাকে শান্তনা দিতে লাগল। ইশিতা কে কাঁদতে দেখে অনুরাগের খুব কষ্ট হচ্ছে। অনুভবের কথা মনে পড়ছে তার। অনুভবের বলা শেষ কথা গুলো মনে পড়ছে।
ইশিতা অনুভবের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। অনুভব তাকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।”বেচারি লিজা সবার সামনে নিজের আবেগ অনুভূতি গুলো প্রকাশ করতে পারছে না।” বুকের ভিতর চাপা আর্তনাদ নিয়ে এককোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
হি ইজ আউট অফ ডেন্জার।ডক্টরের মুখে এই কথা শুনে আনিসুল হক প্রান ফিরে পেলেন। সবার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠল।
সবার আগে আনিসুল হক বললেন আমি কি আমার ছেলের সাথে দেখা করতে পারি ডক্টর?
সবাই তার দিকে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
হ্যা অবশ্যই। তবে ঈশানের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। আমরা একটু পরে ঈশান কে বেডে শিফট করে দেবো তারপর আপনারা একে একে দেখা করতে পারবেন।
আনিসুল হক ঈশানের হাত ধরে কাঁদছে।
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে সব দেখছে শায়লা হক আর ইশিতা।
সবার আড়ালে আরো দুটি চোখ ঈশান কে দেখছে। লিজার খুব ইচ্ছে করছে ঈশান কে কাছে থেকে দেখতে। কেমন আছে তা জানতে চাইতে।
ইশিতা তার মাকে বললো মা তুমি বাবার উপর রাগ করে থেকো না। বাবা তার ভুল বুঝতে পেরেছে। দেখবে এবার বাবা ঈশান কে মেনে নেবে।
মা তুমি ও বাবার সাথে সবকিছু মিটিয়ে নিও।
ইশিতার কথায় শায়লা হক ভরসা পেলেন।
এক সপ্তাহ পর।।।।।
ঈশান এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ হয়ে গেছে। আনিসুল হক ঈশানের কাছে আর শায়লা হকের সাথে সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছেন।
সবার সামনে ঈশান কে নিজের ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছেন। রাশেদা চৌধুরীর সাথে লিজা গিয়েছিল ঈশান কে দেখতে। কিন্তু একা কথা বলার সুযোগ হয়নি।
অনুভব আর ইশিতার সম্পর্ক আগের চেয়ে আরো গভীর হয়েছে। অনুভব আরো আগেই ইশিতা কে সব বলে দিতে চেয়েছিল কিন্তু ঈশানের ব্যাপার নিয়ে ইশিতা অনেক আপসেট ছিল তাই আর কিছু বলেনি।
ডায়না তাকে প্রতিনিয়ত ব্লাকমেইল করে ইশিতা কে সত্যি বলে দেয়ার হুমকি দেয়।
অনুভব চাই ইশিতা সত্যি জানুক তবে অন্যের কাছে থেকে নয়।সে নিজে বলতে চাই।
অনুরাগ কে ব্লাকমেইল করে ডায়না খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারছে না।ইশিতার শশুর বাড়ির সবাই ইশিতা কে সাপোর্ট করে।আর ডায়নার সাথে কেউ ঠিক করে কথা পর্যন্ত বলে না।
লিজা তো মুখের ওপর বলেই দিয়েছে আর কতদিন অন্যের বাড়িতে থাকবে মিস ডায়না?
কিন্তু ডায়না অনুভব কে ব্লাকমেইল করে তাই অনুভব যেনতেন ভাবে ডায়নার যাওয়া আটকাই।আর সবাই কে বলেছে ডায়না যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকবে ওর থাকা নিয়ে কেউ কোন কথা বলবে না।
রাজীব চৌধুরী বিষয়টা জানে কিন্তু অনুরাগের অনুরোধে চুপ থাকেন।
__________
নাহ এভাবে আর চলতে দেয়া যাবে না।ডায়না এখানে থাকলে আমার আর ইশিতার মধ্যে দুরত্ব আরো বাড়বে। এমনিতেই ডায়নাকে নিয়ে বাড়ির সবাই বিরক্ত এমনকি ইশিতা ও। কিন্তু অনুভবের খারাপ লাগবে তাই কিছু বলেনা।
তাই অনুভব ঠিক করলো আজকেই ইশিতা কে সে সবকিছু বলে দেবে।
এই কথা রাজীব চৌধুরীকে ও জানালো তিনি সম্মতি প্রদান করলেন আর আসন্ন বিপদের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলো।
আড়ি পেতে সব শুনে নিলো ডায়না।আর সেও প্ল্যান করলো আজকেই তোমার আর ইশিতার সম্পর্কের ইতি টানবো অনুরাগ।
তারপর তুমি শুধু আমার হবে।
ডায়নার কাছে কল করলেন রায়হান খান (অনুরাগের পালক বাবা)
আজকে সে আর তার স্ত্রী শিলা খান দেশে আসছেন এই খবর শুনে ডায়না ভীষণ খুশি হলো।
তার কাজটা আরও সহজ হয়ে গেল।
বিকেলে অনুভব ইশিতার জন্য একটা চিরকুট লিখে রেখে বেরিয়ে গেল।
ঘরে এসে চিরকুট পেল ইশিতা।
সেখানে লেখা ছিল সন্ধ্যায় তৈরি থেকো তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। তোমার অনুভব।
আজকে তাদের বিয়ের দুমাস পূর্ণ হবে।এই দুমাসে অনুভব ইশিতা কে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায়নি। “আজকে নিজে থেকে যেতে চাইছে তাই ইশিতা ভীষণ খুশি হলো।”
বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডায়না ইশিতার হাসি দেখে বলল” “এটাই তোমার শেষ হাসি ইশিতা তুমি নিজেও জানো না আজকে তোমার সাথে ঠিক কি হতে চলেছে।”
।
।
।
।
#
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
।
#চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।