মনের গহীনে পর্ব ৭

#মনের_গহীনে
৬ষষ্ঠ পর্ব
লেখনীতে:নাদিয়া হোসাইন

যোহরা ও জারিফের খেলা শেষ হলে তারা প্রিয়র কাছে এলো। প্রিয় তাদের নিয়ে বেড় হওয়ার সময় খেয়াল করলো প্রাচুর্য তাদের সাথে নেই। এতোক্ষন প্রিয় খেয়ালই করেনি প্রাচুর্যকে। কিন্তু এখন কি করবে ভেবে পেলো না। যোহরা প্রিয়কে বললো, __ভাইয়া আপু কোথায়। তোমার সাথেই তো ছিলো।
আমি খেয়াল করি নি তোর আপু কোথায়। ভেবেছিলাম আশেপাশেই আছে হয়তো। দাঁড়া প্রানকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছি, ও বাসায় চলে গেলো নাকি।
প্রিয় প্রানকে ফোন দিলো প্রাচুর্য বাসায় এসেছে কি-না দেখতে। কিন্তু প্রাচুর্য বাসায় যায় নি। তাই প্রিয় প্রানকে এখানে আসতে বললো। বিশ মিনিটের মধ্যে প্রান এসে পরলো, ততক্ষণে প্রিয় আশেপাশে খুজতে শুরু করলো। কিন্তু পেলো না। প্রান আসার পর প্রিয় যোহরা আর জারিফকে প্রানের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিলো। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় প্রিয়ের খুব টেনশন হচ্ছে। বাসার কাউকে এখনো জানায়নি, প্রাচুর্যকে খুজে না পাওয়ার কথা।চারপাশে অনেক রাস্তা রয়েছে বিধায় প্রাচুর্যকে খুজতে সমস্যা হচ্ছে প্রিয়র। খুব রাগও হচ্ছে প্রাচুর্যের প্রতি। প্রায় আধ ঘন্টা পর হঠাৎ প্রিয় দেখতে পেলো রাস্তার সাইডে একটা মেয়ে বসে কাঁদছে।প্রাচুর্য দৌড়ে মেয়েটির কাছে গেলো। মেয়েটি প্রাচুর্যই ছিলো। প্রিয়র বোধগম্য হচ্ছে না যে,প্রাচুর্য এভাবে কেনো কাঁদছে। প্রাচুর্য মাথা নুইয়ে রেখেছে বিধায় তার সামনে যে প্রিয় আছে, তা দেখতে পেলো না।
প্রাচুর্য, কি হইছে!এভাবে কান্না করছো কেনো, এনিথিং রং?
হঠাৎ প্রিয়র কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠলো প্রাচুর্য। প্রিয়কে দেখে কান্না আরো বাড়িয়ে দিলো৷এতোক্ষন মনে এক ধরনের ভয় কাজ উঠেছিল। এতোক্ষণ পর প্রিয়কে দেখে মনে এক অদম্য সাহস জেগে উঠলো।
প্রিয় কিছুটা বিরক্ত হয়ে প্রাচুর্যের দিকে তাকালো। __কি হইছে তোমার,বলবা প্লিজ? দেখো অনেক দেরি হয়ে গেছে, হয়তো কি হইছে বলো আর নয়তো উঠে দাঁড়াও।
প্রাচুর্য উঠলেও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারবে না। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা প্রিয়কে বললো।
বেশ হয়েছে। কে বলেছিলো পাকনামো করতে। তুমি কি এখনো ছোট বাচ্ছা যে এসব করে বেড়াবে। প্রিয় হঠাৎ নিচে বসে পরলো। প্রাচুর্যকে বললো, __দেখি, পা টা দেখাও তো।
প্রাচুর্য কথা না বাড়িয়ে পা টা সামনে বাড়িয়ে দিলো। প্রিয় আর পায়ে হাত দিলো না। পায়ের অবস্থা বেশ বেহাল। প্রিয় গাড়িটাও নিয়ে আসেনি। কীভাবে প্রাচুর্যকে এখন বাসায় নিয়ে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই বলে, নিজের বাঁ হাতটা প্রাচুর্যের দিকে বাড়িয়ে দিলো। প্রাচুর্য প্রিয়র হাতের দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলো।
কি হলো, এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো! তোমার বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে না ই থাকতে পারে, কিন্তু আমার আছে। বাসার কেউ জানে না, তোমাকে যে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। আমার সাথে তোমার এতোক্ষণ বাইরে থাকা কেউ স্বাভাবিক নিতে না-ও পারে। তাই হাতটা ধরে উঠার ট্রাই করো। সামনে রিক্সা থাকতে পারে।
প্রাচুর্য আলতো করে প্রিয়র হাত ধরলো। যে পায়ে ব্যাথা নেই, সে পায়ের সাহায্যে উঠে দাঁড়ালো। নিঃস্তব্ধ রাতে কখনো প্রিয়র হাত ধরে এভাবে হাটতে পারবে, তা প্রাচুর্যর ভাবনার বাইরে ছিলো। পায়ের ব্যাথাটা এখন তীব্র লাগছে না, কিন্তু একটু পর পর হোঁচট খাচ্ছে ঠিকই। প্রিয় ব্যাপারটা খেয়াল করছে ঠিক-ই। কিন্তু একটা মেয়েকে একা পথে আর কোন ভাবে সাহায্য করলে তা মানানসই হবে না।প্রাচুর্যের কাছে প্রিয়র এই দিক গুলো অসাধারণ লাগে।প্রিয়র এই দিক গুলোর প্রতিই বেশি এট্রাক্টিভ প্রাচুর্য।
প্রায় পাঁচ মিনিট হাটার পর প্রিয় একটা দোকানের দেখা পেলো। সেখান থেকে একটা স্যাভলন ক্রিম ছাড়া আর কিছুই পেলো না প্রিয়। স্যাভলন ক্রিমটা প্রাচুর্যের দিকে এগিয়ে দিলো। প্রাচুর্য এক কোনায় বসে পায়ে ক্রিমটা লাগিয়ে নিলো। খুব জ্বলছে প্রাচুর্যের পা।কিন্তু কিছু করার নেই। প্রিয় তার জন্য যেটুকু করেছে, তা-ই তার কাছে বেশি।
প্রাচুর্য আর প্রিয় এক রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে। দু’জন বেশ দূরত্ব রেখেই বসেছে। আজ যা হচ্ছে, তা প্রাচুর্যের স্বপ্নের মতোই লাগছে। বাতাশে প্রিয়র চুপ ছুলো বারবার কপালে এসে পরছে, তাতে প্রিয়কে আরো মোহনীয় লাগছে। বিশ মিনিট পর দুজনে বাসায় পৌছাল। প্রাচুর্যের হাত আবার ধরতে হবে বলে প্রিয় আগে থেকেই মিসেস শান্তাকে কল দিয়ে বাসার নিচে আসতে বললো। প্রাচুর্যের মনটা খারাপ হয়ে এলো। যার কি-না হাত ধরতেই এতো সমস্যা, সেই মানুষটার মনের গহীনে একটুখানি যায়গা পাওয়াও অনেক বড় কিছু।প্রিয় মিসেস শান্তাকে সব বুঝিয়ে দিলো আর বাসায় নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে বলে নিজ রুমে চলে এলো।

পরদিন সকালে প্রাচুর্যরা বনশ্রীতে চলে এলো সামায়ার এনগেজমেন্টের জন্য। শান্তার হাজবেন্ড জাহিদ চৌধুরী বাড়িতে প্রথম এসেছে বলে তার জন্য নানা রকম জামাই আদর রাখা হলো।শান্তার বিয়ে তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু বিয়ের আগের দিন শান্তা জাহিদের হাত ধরে চলে যায়। সুবহান সালেহ কখনো প্রেম, ভালোবাসা তেমন পছন্দ করতেন না।শান্তার এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে আসায় বেশ সম্মানহানী হতে হয়েছিলো তার। সেই রাগ থেকে তিনি শান্তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলো। আজ তিনিও বোনের জামাই আসার আমেজে মেতে উঠেছে।

প্রাচুর্যের অনেক ইচ্ছে ছিলো, তাদের সাথে যেনো প্রিয়ও আসে। কিন্তু প্রিয় বা তার বাবা-মা, ভাই কেউই আসবে না।তারা সবাই জানে যে প্রিয় সামায়াকে কতোটা ভালোবাসে। নিজের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে ছেলের কষ্ট, কিন্তু কিছু করতে পারছে না।

সুবহান সালেহ এসবের কিছুই জানে না, তাই শান্তাকে জিজ্ঞেস করলো, __ কীরে তোর ভাসুর আর তার পরিবার কেনো আসলো না?তাদেরকে কি বলিস নি আসতে!
শান্তা কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো,__ভাবির মায়ের শরীর কিছুটা খারাপ। তাই তারা সবাই সেখানে যাবে। ভাবি রা বিয়েতে আসবে নে সময় করে।
আচ্ছা সমস্যা নেই। তখন আমি নিজে গিয়ে তাদের দাওয়াত দিয়ে আসবো। সেই সাথে বোনের সংসারও দেখা হয়ে যাবে।
শান্তা মুচকি হাসলো। সুবহান সালেহকে সে অনেক বেশিই ভালোবাসে, যা এতোদিন অভিমানে ঢাকা ছিলো। আজ তার কাছে সব পূর্ণ লাগছে।

প্রিয় ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তার আজ সামায়াকে ফোন দিতে বেশ ইচ্ছে করছে। ছোট থেকে সামায়ার সাথে তার বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো৷ সেখান থেকেই তার সামায়ার প্রতি ভালোবাসা এসেছে। সামায়ার বাবা সরকারি চাকরি করে, তাই দুই বছর আগে সম্পূর্ণ পরিবার নিয়ে সুনামগঞ্জ চলে যায়। তার পর থেকে সামায়ার সাথে প্রিয়র আর দেখা হয়নি, কিন্তু ভালোবেসে এসেছে নীরবে। ততোদিনে কথাও অনেক কমে গিয়েছিলো তাদের।আজ প্রিয়র মনে এক অদম্য ইচ্ছা জাগলো, নিজের ভালোবাসাটা সামায়ার কাছে রপ্ত করার। তাই সে অনেক আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে সামায়াকে কল দিলো, তাতে যা হয় দেখা যাবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here