#মনের_গভীরে_তুমি❤
#পর্ব_০৫
#M_Marufa_Yasmin
টিপ আর আরাভ গাড়িতে বসে।এখনও মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।দুজনে পুরো ভিজে গেছে।টিপ অন্য দিকে মুখ করে বসে আছে।আরাভ আপনমনে ড্রাইভ করছে।টিপ শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলল….
—“এভাবে চুপ তোকে মানায় না টিপ।মেরা শাযতানি দিমাগ মে এক তুফানি আইডিয়া আয়া।
হাহা ।
টিপ আমতা আমতা করে বলল ….
—“স্যার আপনার কি নাফিসার সাথে বিয়ের করার ইচ্ছা ছিল না?
টিপের কথা শুনে ব্রেক কষে অবাক হয়ে তাকায় আরাভ কি বলবে বুঝতে পারছে ন।
তাও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে টিপের দিকে তাকিয়ে বলল ….
—“হঠাত এই প্রশ্ন?
—“না মানে জানতে ইচ্ছে করলো ।আপনি তো বেশ খুশিই আছেন বিয়ে ভাঙ্গার কষ্ট তো আপনার
মধ্যে দেখতে পাই না।মানে কারো বিয়ে ভেঙ্গে গেলে তার তো কষ্ট হওয়ার কথা কিন্তু আপনাকে দেখে কেও বলবে যে আপনার বউ আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে ।হাহা।
—“আমার বিয়ে কে ভেঙ্গেছে একটা রাক্ষসী । আর সেই রাক্ষসী এখন আমার ঘাড়ে এসে বসেছে। কি আর করবো কপালে লেখা ছিলো আস্ত একটা শাকচুন্নি আমার বউ হবে তাই তো জুটেছ তুমি ।
—“কিহহ আমি শাকচুন্নি।
—” না তো কে আমি?
—“আপনি একটা আপনি একটা ছাগল ।
—“তোমার মতো ঝগড়াটে না ।
—“কিহহ আমি ঝগড়াটে 😐 আপনি ঝগড়াটে।রাক্ষস কোথাকার আফ্রিকার গন্ডার।
আরাভ বিড়বিড় করে বলল
—“এই মেয়ের মাথায় সত্যি একটা তার কাটা আছে না হলে এইরকম হয় ।আল্লাহ এটা কবে আমার ঘাড় থেকে নামবে ।
টিপ কথাটা শুনতে পেয়ে বলল..
—“কিহ আমার মাথার তার কাটা তবে রে ।
বলেই আরাভের হাতটা ধরে কামড়ে ধরে।আরাভ চেঁচিয়ে ওঠে
—“আহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহ ছাড়োওওওওওওওওওওওওওওওওওও লাগছেএএএএএএএএএএএএএএএ।
বেশ কিছুক্ষন পর ছাড়লো হাতে দাঁতের দাগ বসে গেছে।আরাভ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে ।আরাভ এবার টিপের চুল গুলো ধরে নেয় আর চুল ধরে জোরে টানতে থাকে টিপ চেঁচিয়ে ওঠে
—“আলাহহহ গোওওওওওও বাঁচাওওওওও।মরে গেলামমমমমমমমমম ।ছাড়ুনননননননন স্যার লাগছেএএএএএএ ।
আরাভ ভেংচি দিয়ে বলল …
—“কেমন লাগল ?
—“আপনি! আপনি আস্ত একটা শয়তান আমার চুল গুলো কি হলো হাই আল্লাহ।শয়তান লোক একটা।হু হু ।
—“এইভাবে ঝগড়া করবে না কি যাবে?
—“চলুন ।
—“আগে খাবো কিছু ।
—“ওকে ।
আরাভ একটা বড়ো রেসটুরেন্টে টিপ কে নিয়ে ঢুকলো। একটা টেবিলের কাছে গিয়ে আরাভ টিপকে বলল” বসো”টিপ বসলো আরাভ খাবার অর্ডার দিল।খাবারের লিস্ট গুলো দেখছে।
চুল গুলো থেকে এখনও টপ টপ করে এক ফোঁটা দুই ফোটা জল ঝরে পরছে। বিন্দু বিন্দু জল আরাভের ফর্সা গালে আর চাপ দাঁড়িতে লেগে আছে।। আরাভ টিপ কে জিজ্ঞেস করলো” কি খাবে “?টিপ ভেবে বলল
—” আপনার যেটা ভালো লাগে।
—“ওকে । বাবা আজ এত ভালো মেয়ে হয়ে গেলে কেনো 😯।
—“কেনো আমি কি খারাপ? 😐
—“না না তুমি তো লক্ষী মেয়ে ।
দুজনে হাসতে লাগে ।
পাঁচ ছয়টা টেবিল পেরিয়ে একটা মেয়ে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে।কাঁটা চামচ টা থালা তে খোঁচাছে।আর শয়তানি হাসি হাসছে।
মনে মনে বলছে।
—“বেশ খুশি আছো মনে হচ্ছে।ভেবেছিলাম আমি তোমার লাইফ থেকে চলে গিয়ে তোমাকে কষ্ট দেবো কিন্তু না তুমি বেশ সুখেই আছো দেখছি।
তবে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমার লাইফটাকে কষ্টে ভরে দেবো আরাভ। আমি জানি তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো। সেইদিন নাটকটা ওখানে শেষ করা ঠিক হয়নি আমার ।তোমার কাছাকাছি থেকে তোমাকে কষ্ট দিতে হতো।কিন্তু আর সেই ভুল করবো না । তোমাকে কষ্ট না দিলে আমার যে শান্তি নেয়। আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসতে। i came back to your life
Just wait and watch
________________
—“এই তো নাও খাবার এসে গেছে ।
টিপ খেতে শুরু করে আরাভ গালে হাত দিয়ে টিপের খাওয়া দেখছে
টিপ সেটা খেয়াল করে বলল …
—“স্যার কি দেখছেন?
—” কিছু না খাও ।
—“আপনি খাবেন না?
—“হুম এই তো খাচ্ছি ।
টিপ হঠাত খেতে খেতে বললো…
—“স্যার একটা বলব ?
—“হুম বলো?
—“আসলে আমি অফিসে যেতে চাই।কাজটা করতে চাই ।
—“বেশ ভালো কথা ।কাল থেকে যাবে ।
—“thank you sir.
—“এবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও ।
খাওয়া দাওয়া করে আরাভ বিল দিয়ে বেরিয়ে এলো এতক্ষনে বৃষ্টি থেমে গেছে আকাশ পরিষ্কার।মনে হচ্ছে আকাশ খিলখিল করে হাসছে । সূর্য ঝলমল করছে।টিপ আর আরাভ গাড়িতে বসে ।
কিছুক্ষন পর বাড়ি আসে। … রনিত ,ইশরা আর কেয়া সোফায় বসে আছে।
ইমরান খান বাড়িতে নেয় অফিসে গেছে ।আর মিসেস চৌধুরী রান্না ঘরে। দুজন কে ঢুকতে দেখে কেয়া ফোনটা রেখে বলল …
—“বাহ আজ কাল বাড়ির কাওকে না জানিয়ে যে যখন পারছে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
তা ভাই কোথায় গিয়েছিলি?
রনিত রেগে বলল ..
—“ওরা কোথায় যাবে না যাবে সব তোমাকে বলে যাবে নাকি । সব সময়ই কুটনৈতি বন্ধ করো ।
তোমার এইসব আর সহ্য করা যাচ্ছে না ।
—“কিহহ তুমি আমার বাড়িতে থেকে আমাকে কথা শোনায় তোমার সাহস কি করে হয়।কেয়া চৌধুরী কে অপমান করার ।
—“যে মেয়ে নিজের স্বামী কে সম্মান করে না সে অন্য কাউকে কিছু সম্মান করবে।আমি চলে যাচ্ছি। তোমার মতো মেয়ের সাথে আমি থাকবোনা ।আমি আমার বৃদ্ধ বাবা কাছে গেলাম।
রনিত চলে গেলো আরাভ আর টিপ হা করে সব দেখছিল।আরাভ ইচ্ছে করেই রনিত কে আটকালো না কারন । রনিত বাড়ি থেকে চলে গেছে এবার কেয়া বুঝতে পারবে ।ওর বোঝা খুব দরকার ছিল। পরিবার কি হয় এটা ওর জানার দরকার ছিল ।
টিপ কে নিয়ে ওপরে চলে গেলো আরাভ ।
আরাভ দৌড়ে আগে ফ্রেশ হতে ঢুকে গেলো।টিপ হা করে তাকিয়ে থেকে হেসে দিল।
অনেকক্ষন পরে আরাভ বের হলো।টিপ কোমরে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে।আরাভ মাথা মুছতে মুছতে টিপের দিকে তাকাতেই কিছুটা পেছনে সরে গিয়ে বলল
—“আরে এত রেগে আছো কেনো?
—“এতক্ষন লাগে আপনার?
—“😁
—“😐সরুন।
টিপ ফ্রেশ হতে ঢুকে কিছুক্ষন পর বাথরুম থেকে টিপের চিৎকার আসে ….
—“আআআআআআআআআআ।
আরাভ শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলল
—“কাজ হয়েছে 😈।
টিপ দরজা খুলে বাইরে আসে।আরাভ ওকে দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানায় পুরো চুলে গোবর এ ভর্তি।টিপের চুল গুলোতে গোবর লেগে ।
টিপ রেগে আরাভ এর দিকে তাকিয়ে আছে।আরাভ দাঁত বের করে হিহি করছে টিপ আরো রাগে জ্বলে উঠে।আরাভ দিকে এক পা এক পা করে এগোচ্ছে।আরাভ টিপ কে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলো।টিপ প্রচুর রেগে গেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।টিপ আরাভের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের চুলে থেকে গোবর নিয়ে আরাভ এর মুখে ছুড়ে মারলো গোবর গিয়ে আরাভের মুখে ভর্তি।
আরাভ ও খুব রেগে গেছে মনে হচ্ছে কোনো ষাঁড় কে লাল কাপড় দেখালে যেমন রাগে ঠিক তেমনি।
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ লাল করে।দুজনের মুখে গোবরে ভর্তি ছি।
হঠাত ইশরা রুমে আসে ।সে এসে চেঁচিয়ে দিল ।।
—“এএএএএএএএ তোরা! কি অবস্থা করেছিস নিজেদের আর রুমের ছি ছি কি গন্ধ ।ছি।
টিপ চেঁচিয়ে বলল …
—“সব তোমার ভাই এর দোষ ।ও প্রথমে আমাকে গোবর মাখালো।
আরাভ ও ভেংচি দিয়ে বলল
—“আমি করেছি তার প্রমাণ কি দেখাও?
—“প্রমাণ মানে এই তো প্রমাণ আমার গামছা তে গোবর তো আপনি দিয়েছেন আপনি না দিলে কে দেবে এই রুমে তো আর কেও নাই 😐।
—” তুমি কি ছেড়ে দিলে তুমি ও তো আমার মুখে গোবর ছুড়ে দিলে মা গো আমার বমি পাচ্ছে ।
—“বমি পাচ্ছে তাই না ।
টিপ এসে আরাভ এর চুল ধরে নেয়।আরাভ ও কিসে কম আরাভ ও টিপের চুল ধরে নিলো দুজনে চুল ধরে মারামারি। ইশরা ওদের কান্ড দেখে বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বলল …..
—“আআআআআআআহহহহ তোরা থাম প্লিজ stop ।
দুজনে থেমে গেলো।একে অপরের থেকে দূরে সরে গিয়ে নিচে দিকে মুখ করে নেয়।ইশরা রাগি কন্ঠে বলল …
—“কি শুরু করেছিস তোরা ?বাচ্চা তোরা? নিজেদের অবস্থা দেখেছিস উফফ তোদের নিয়ে আর পারি না । যা ফ্রেশ হয়ে আয় ।
দুজনে এক সাথে যেতে নেয় ওমনি ইশারা রেগে বলল ..
—“এখন কি দুজনেই এক সাথে বাথরুমে ঢুকবি যে কেও একজন ঢুক।
টিপ বলল
—“আগে আমি ।
আরাভ বলল
—“না আগে আমি ।
—“বলছি তো আমি ।
—“না আমার বাথরুম তাই আগে আমি ।
—“আমার বরের বাথরুম তাই আগে আমি।
—“তোমার বরটা কে? আমি তাই আগে আমি ঢুকবো ।
ইশরা রেগে হুংকার দিয়ে বলল
—“আবার শুরু করলি তোরা তোদের নিয়ে আর পারিনা।ভাবি আগে তুমি যাও ।
আরাভ মুখ ভার করে বলল
—“কিন্তু, ,,,
ইশরা চোখ দেখিয়ে বলল
—“দা তুই চুপচাপ বস।
—“ওকে।
টিপ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আরাভ কে ভেংচি দিলো । আরাভ ফ্রেশ হতে ঢুকে পড়ে।
সন্ধ্যা বেলা আরাভ রুমে ঢুকে দেখে টিপ আবার রুমে নেয়। আরাভ খোঁজাখুঁজি করছে বাথরুমে সবাই জায়গায় দেখলো কোথাও নেয় হঠাত বারান্দায় কারো ছায়া পাই।আরাভ যেতেই কেও চেঁচিয়ে উঠল ।
—“আআআআআআআআআ।
আরাভ বারান্দায় গিয়ে দেখে কেও নেয় ও স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে ওটা টিপ এর গলার আওয়াজ ।কিন্তু টিপ কই আরাভ চেঁচিয়ে বলল …
—“টিপ কোথায় তুমি টিপ? দেখো একদম এইসব মজা ভালো লাগে না ।কোথায় তুমি?
জোরে একটা শব্দ ভেসে আসলো ।
—“আমি এখানে ।
—“কই কোথায় ?আমি দেখতে পাচ্ছি না ।
—“অন্ধ কোথাকার নিচে তাকান আমি নিচে।
আরাভ নিচে ঝুঁকে দেখে টিপ কার্নিশ ধরে ঝুলছে আরাভ বড়ো বড়ো চোখ করে জিজ্ঞেস করলো
—“তুমি ওখানে কি করছো?
—“আসলে আমি না এখানে হাওয়া খেতে এসেছি
—“তুমি হাওয়া খেতে ওখানে গেছো তুমি কি পাগল।তুমি আমাকে বলতে আমি তোমাকে ফ্যান এনে দিতাম।
—“আপনি কি আমাকে তুলবেন নাকি শুভক্ষণের অপেক্ষা করবেন ?
—“তুলছি ।
আরাভ নিচে গিয়ে কার্নিশ এ একটা মই লাগাল তারপর টিপ কে নামালো।
—“এবার বলো ওখানে কেনো গিয়েছিলে?
—“আমি ওখানে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলাম আর ওখানে পানি পরে ছিলো আপনি আমাকে ডাকছিলেন তাই পেছন ফিরতে গিয়ে পানিতে পিছলে পরে যায় ।ভাগ্যিস কার্নিশ টা ঠিক সময়ে ধরে নিয়েছিলাম ।
আরাভ হাসবে কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
আরাভ হাসতে লাগে ।টিপ আরাভের হাসি দেখে রেগে ওর বুকে মারতে লাগে ।আরাভ ছুটতে লাগে টিপ ও ওর পেছনে ছুটছে।আরাভ ছুটতে ছুটতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো ।
*
*
*
*
বাকি
(ভুল হলে ক্ষমা করিবেন দয়া করিয়া )