#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
পর্ব-৪
🍁🍁🍁
ফাইয়াজের পারিবারের বড়রা সবাইকে যেতে দিলেও ছোটদের যেতে দেইনি মিথিলার কাজিনরা। ফাইয়াজ চলে যেতে চাইলে ওরা যেতে দেয়নি। একপ্রকার জোর করে রেখে দিয়েছে ফাউয়াজকে।রাতে খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হতে না হতেই মিথিলাকে জোর করে লাল পাতলা শাড়ি পড়িয়ে হালকা মেকাপ করিয়ে দিলো। মিথিলার হঠাৎ কান্না পাচ্ছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারছে না।
মিথিলা গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া বিছানায় ঘোনটা টেনে বসে আছে। বাইরে থেকে কাজিনদের হাসাহাসি শুনতে পারছে। ফাইয়াজের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফাইয়াজকে রুমে ডুকতে দিলো। মিথিলা রুমে ফাইয়াজের উপস্থিতি টের পেয়ে চট করে উঠে দাড়িয়ে গেলো। লাল শাড়ির ঘোনটার আড়ালে মিথিলার চনচল। ফাইয়াজ রুমে ডুকতেই লালপরি দেখে একমুহূর্তের জন্য থমকে গেছিলো। ঘোমটার আড়ালে থাকলেও মিথিলার কৃত্রিম রংয়ের রাঙানো ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীকে দেখে ফাইয়াজ ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। ফাইয়াজ ধীরে ধীরে মিথিলার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো মিথিলা সেটা বুঝতে পেরে শাড়ির আঁচল চেপে ধরলো। মিথিলার অস্থিরতা বেড়ে যেতে লাগলো। মিথিলা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। ফাইয়াজ মিথিলার কাছে এসে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে দিতে চমকে গেলো। মিথিলার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে রাতের কৃত্রিম আলো সেটা এস্পর্ট বুঝতে পারছে। ফাইয়াজ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে অস্থির কণ্ঠে বলল ‘আর ইউ ওকে মিথু প্লিজ ডোন্ট ক্রায় বলো আমাকে কি হয়েছে তোমার’
মিথিলা ফাইয়াজের অস্থির কন্ঠ শুনে চমকালো। চোখের পানি মুছে বলল ‘না না কিছু হয়নি চোখে কি জানি পড়ছিল’
ফাইয়াজ মিথিলার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলল ‘আচ্ছা যাও চেঞ্জ করে এসে ঘুমিয়ে পড়ো’
মিথিলা কি বলবে ভেবে পেলো না। তাই মাথা নাড়িয়ে থ্রি পিস নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো। ওয়াসরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জা পেলো শাড়িটা এতোই পাতলা যে সব বোঝা যাচ্ছে। এতক্ষণ ফাইয়াজের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিল ভাবতেই লজ্জা পেয়ে দু-হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো।
মিথিলা ড্রেস চেঞ্জ করে বাইরে এসে দেখলো ফাইয়াজ হাত করে চোখের ওপরে দিয়ে শুয়ে আছে। মিথিলা বিছানার পাশে গিয়ে ভাবতে লাগলো শুবে কি শুবে না মিথিলার মধ্যে অস্থির ও জড়তা কাজ করতে লাগলো। ফাইয়াজ চট করে উঠে দাড়িয়ে গেলো। মিথিলা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ফাইয়াজের দিকে তা দেখে ফাইয়াজ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল ‘কি হয়েছে দাড়িয়ে আছো কেনো? শুয়ে পড়ো। কাল থেকে আবার পড়াশোনা শুরু করবে। পড়াশোনা নিয়ে হেলাফেলা আমি কিন্তু টলারেড করবো’
-‘জী’ (মিথিলা)
-ঘুমিয়ে পড় আজ অনেক ধকল গিয়েছে তোমার উপর দিয়ে (ফাইয়াজ)
মিথিলা বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ফাইয়াজ রুমের লাইট ওফ করে মিথিলার পাশে শুয়ে আছি। এতে মিথিলার অস্থিরতা তিরতির করে বেড়ে গেলো। এপাশ ওপাশ করতে করতে মিথিলা একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।
★★★
সকালে মিথিলা ফাইয়াজের আগে ঘুম থেকে উঠে গেলো। ফাইয়াজের বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে ঘুমিয়ে পড়া দেখে মিথিলা আনমনে হেসে দিলো। মিথিলা উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো ফাইয়াজ এখনো ঘুমাচ্ছে। মিথিলার ফাইয়াজের ঘুমটা কেনো জানি ভাঙাতে ইচ্ছে হলো না। তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতে লাগলো। এখনো ভালোভাবে দিনের আলো ফুটেনি। ঠান্ডা বাতাসে মিথিলার শীত করতে লাগলো তাও ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো বুক ভরে শ্বাস নিলো। এভাবে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর পিছন থেকে ভরাট কন্ঠে বলল ‘সকালে উঠে না তুমি পড়তে বসো? তাহলে এখানে দাড়িয়ে আছো কেনো?’
মিথিলার চমকালো কন্ঠ শুনে বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা ফাইয়াজের। মিথিলা ফাইয়াজের দিকে তাকাতেই ফাইয়াজকে আদূরে দেখালো। ফাইয়াজের দিকে মিথিলাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাইয়াজ বলল ‘আমাকে দেখার জন্য পুরো জীবন পড়ে আছে এখন পড়তে বসো রেজাল্ট খারাপ হলে দেখো’
ফাইয়াজ লজ্জাজনক আর ধমকানো কথা একসাথে বলায় মিথিলা ভড়কে গেলো কি রিয়াকশন দিবে ভুলে গেছে।
.
.
মিথিলা ইংরেজিতে অনার্স ২য় বর্ষে পড়ালেখা করছে। মিথিলা মন দিয়ে পড়ছিলো তখন দরজায় নক করার আওয়াজে পড়া থামিয়ে দিলো। ফাইয়াজ বিছানায় বসে ফোন টিপছিলো। দরজার নক করায় ফাইয়াজ বলল
-তুমি পড় আমি দেখছি কে আসছে (ফাইয়াজ)
মিথিলা উত্তর দিলো না পড়লোও না। দরজার ওপাশেকে দেখার জন্য দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। ফাইয়াজ দরজা খুলতেই মিথিলার কাজিনরা দল বেঁধে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ওরা হাসিঠাট্টা করতে করতে বলল ‘কি ভাইয়া কাল তো চলে যাচ্ছিলেন আর আজ বাসররাত শেষ হয়নি বুঝি যাইহোক বাসররাত শেষ এখন বাসরদিন শুরু করেছেন বুঝি’
ওদের কথা শুনে মিথিলা ঘড়ির দিকে তাকালো ৮:৪৫ বাজে ওদের ঠোঁট কাটা কথা শুনে মিথিলার কান গরম হয়ে গেলো, লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নত করে নিলো। ফাইয়াজ ওদের মতো ঠোঁট কাটা উত্তর দিচ্ছে। মিথিলার লজ্জায় মাটিতে ডুকে যেতে ইচ্ছে করছে ওর।
.
.
সকালে নাস্তার টেবিলে মিথিলার মা আফরোজা বেগম তিন জামাইকে আপায়ন করতে ব্যাস্ত হয়ে গেছে। ফাইয়াজ সারাবছর ডায়েট করলেও শাশুড়ীর রান্না খাওয়ার জন্য ডায়েট থেকে ছুটি নিয়েছে। মিথিলা ফাইয়াজের খাওয়া দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। সকালের সবার খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করতেই। ফাইয়াজ মিথিলাকে কলেজে ড্রপ করে দিলো। গাড়িতে দু’জনের কেউই কথা বলেনি দু’জনই চুপ ছিলো। ফাইয়াজ দু একটা প্রশ্ন করলেও মিথিলা হু, হ্যা, না ছাড়া কিছু বলে নি। ফাইয়াজ মিথিলাকে কলেজে ড্রপ করে। ফাইয়াজ শুটিং স্পটে গেলো আজ ১২টার সময় সুট থাকায় তার আগেই চলে গেলো।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[