মহব্বত পর্ব -০৫

#তাসনিম_তামান্না
#মহব্বত
পর্ব-৫

🍁🍁🍁

দেখতে দেখতে চারদিন কেটে গেলো সেদিন মিথিলাকে কলেজে রেখে আসার পর ফাইয়াজের আর দেখা মেলে নি। মিথিলা সেদিন কলেজ ছুটির পর বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে আধঘণ্টা দাড়িয়ে ছিলো ফাইয়াজ আসবে ভেবে কিন্তু ফাইয়াজ আসেনি। মিথিলা প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় আসার সময় মনে হয় ফাইয়াজ আসবে কিন্তু আসে না। মিথিলা ফোন নিয়ে বসে থাকে যদি ফাইয়াজ ফোন দেই কিন্তুু দেয় না এমন না মিথিলার কাছে নম্বার না আছে কিন্তুু ফোন দিতে কোথায় যেন বাধে মিথিলা। মিথিলার মনে ফাইয়াজের জন্য অভিমানের পাহার তৈরি হয়েছে। মিথিলা ঠিক মতো খাইয়া পড়াশোনায় ও মন বসে না সবকিছুতেই অনিহা তৈরি হয়ে গিয়েছে যেনো। মিথিলাকে বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে।

মিথিলা আজ কলেজ অফডে বাসায়ও কেউ নাই মিথিলার মা-বাবা মিথিলার নানুবাসায় গিয়েছে। মিথিলার নানুবাসা আর দাদুবাসা বেশিদূর না হওয়ায় সহজে যাওয়া আসা করে। মিথিলাকে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু মিথিলা পড়াশোনার ব্যাস্ত দেখিয়ে আর গেলো না। মিথিলার দুবোন তাদের শশুড় বাড়িতে।

মিথিলা বাসায় একা চুপচাপ শুয়ে আছে দুপুরের খাবারটাও খাইনি ফোন টিপতে বা বই পড়তে কোনো কিছুই ভালো লাগছে না ওর। অন্যদিন মিথিলা বাসায় একা হলে গল্পের বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতো,ফোনে ফেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতো। মিথিলা কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে কফি বানালো এই দুপুরে ওর মন কফি খেতে মন চেলো হঠাৎ কফি বানিয়ে রুমে এসে ফোনে স্লো-মোশনে গান ছেড়ে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের ‘অপেক্ষা’ বইটা নিয়ে অপেক্ষা লেখায় হাতের আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে প্রথম পৃষ্ঠা উল্টালো। মিথিলা আগেও বেশ কয়েক বার পড়েছে ‘অপেক্ষা’ বইটা ভেবেছিল আর পড়বে না সব জানা তার বইয়ে কি লেখা কিন্তু হঠাৎ আজ আবার পড়তে মন চাইলো। কয়েক পৃষ্ঠা পড়তেই কলিং বেলের আওয়াজ ভেসে আসলো। মিথিলার বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করলো। এখন এই ভরদুপুরে কেউ আসবে বলে মিথিলার জানা নেই। বিরক্তি নিয়ে খালি কফির কাপটা হাতে করে নিয়ে ডাইনিং টেবিল রেখে। দরজা খুলে মিথিলা ফাইয়াজ আর ফাইজাকে দেখে চমকালো। ফাইয়াজ মাথাই হেট, চোখে সানগ্লাস, আর মুখে মাক্স পড়া মাথা নিচু করে ফোন স্ক্রল করছে এটাতেই মিথিলার ১ সেকেন্ডও চিনতে অসুবিধা হলো না মিথিলা একপলক দেখে আর তাকালো না ফাইয়াজের দিকে। ফাইজা হেসে বলল ‘সারপ্রাইজ মিথুপুইইই’

মিথিলা বিস্ময় চেপে হাসার চেষ্টা করলো।ফাইজা বলল ‘আমরা এসেছি দেখে হ্যাপি হওনি বুঝি?’

-‘এমা না না এমন কেনো ভাবছ?'(মিথিলা)

-‘এমনটা ভাববো না কেনো সেটা বলো আমাদেরকে ভিতরে ডুকতে না দিয়ে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখছ'(ফাইজা)

-‘ওহ সরি আসো ভিতরে আসো আসলে তোমাদের এখন এই সময় দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম তাই আর কি আর বলোনি তোমরা আসে সেটা'(মিথিলা)

-‘সারপ্রাইজ কি বলে দেই?'(ফাইজা)

মিথিলা মলিন হাসলো। ফাইজা ড্রাইংরুমে সোফায় বসে আবার বলল ‘আঙ্কেল আন্টি কোথায়? ঘুমাছে নাকি?’

-‘না আব্বু আম্মু বাসায় নাই নানুবাসায় গিয়েছে সন্ধ্যার দিকে চলে আসবে'(মিথিলা)

-‘তার মানে তুমি বাসায় একা?'(ফাইজা)

-‘হ্যাঁ'(মিথিলা)

-‘ও তোমার ভয় করেনি?'(ফাইজ)

-‘না কিসের ভয়?'(মিথিলা)

ফাইয়াজ ফাইজার ওপর বিরক্ত হয়ে বলল ‘সবাই কি তোর মতো বলদ যে দিনের বেলায়ও ভয় পাবে’

ফাইয়াজের কথায় ফাইজা রেগে গিয়ে বলল ‘আমার আর আপুর মধ্যে কথা হচ্ছে তোর বাঁশের মতো ফাটা নাকটা না ডুকালে হলো না’

ফাইয়াজ ফাইজার কথায় রেগে কিন্তু কিছু বলল না রাগটা দমিয়ে নিলো। ফাইজা বলল ‘আপুই ওর কথা বাদ দাও তো চলো রেডি হয়ে নাও’

-‘কেনো কোথায় যাবো?'(মিথিলা)

-‘শপিংয়ে যাবো ভাইয়া ট্রিড দিবে'(ফাইজা)

মিথিলা কি বলবে খুঁজে পেলো না। মুখের ওপর না ও বলতে পারছে না। মোট কথা মিথিলার যেতে ইচ্ছে করছে না। ফাইজা মিথিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জোর করে রেডি করিয়ে দিলো।
.
আমাদের কিছু কিছু কাজ নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে করতে হয় তাতে যদি অন্য কেউ খুশি হয় বা এতে যদি কারোর ভালো হয় তাহলে জোর করে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়ায় শ্রেয়।🥀

✍️~তাসনিম তামান্না
.
শপিংমলের সামনে এসে ফাইজা গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে মলে চলে গেলো। মিথিলা মানতে গেলে ফাইয়াজ মিথিলার হাত টেনে ধরলো। মিথিলা থমকালো গা শিরশির করে উঠলো। ওভাবেই থাকলো ফাইয়াজের দিকে তাকালোও না। ফাইয়াজ বলে উঠলো ‘ম্যাডামের কি বেশিই অভিমান হয়ে গেছে? যে সে আমার দিকে একবারের জন্যও তাকাছে না’

-‘স্যারের কি খোঁজ নেওয়ার সময় আছে নাকি সে তো বিজি'(মিথিলা)

-‘উহুম শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। এখন অবশ্য সে একান্তই আমার! শুধু আমার প্রণয় প্রকাশের সঠিক সময়ের অপেক্ষা’

-‘প্রণয়?’

-‘হুম তো তার অভিমান ভাঙানোর জন্য কি অাইসক্রিম দরকার?’

-‘হুম’

ফাইয়াজ মিথিলার হাত ছেড়ে নেমে পড়লো। ফাইয়াজ যেতেই মিথিলার জ্ঞান হলো কি বললো এতোক্ষণ ও চমকালো! থমকালো! বিস্ময় নিয়ে লজ্জায় মিয়িয়ে গিয়ে দু-হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো।
.
.
ফাইজা উরাধুরা শপিং করছে। মিথিলা শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছে কি নিবে ভেবে পাচ্ছে না যা দেখছে কিছু ভালো লাগছে না এতো বড় শপিংমলে শুধু বিরক্তি আসছে। কান্না পাচ্ছে, পেটে মধ্যে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে এটা দুপুরে না খাওয়ার ফল। পেটে খুদা থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না মিথিলা সেটার প্রমান হারে হারে পাচ্ছে সাথে পা ব্যাথা ফ্রী।

একটুপর ফাইয়াজ কোথা থেকে এসে ফাইজার কানে কানে কিছু বলতেই ফাইজা মিথিলাকে নিয়ে শপিংমলের ক্যাফেতে চলে গেলো। ফাইয়াজ ও পিছনে পিছনে আসলো। ফাইজা খাবার অডার করলো মিথিলা কিছু বললো না পেটে জ্বালা করছে ওর পেট চেপে বসে রইলো ও এর মাঝেই খেয়াল করলো ফাইয়াজের তীর্যক চোখের চাহুনি কিন্তু মিথিলা এইসময় সেটা বিশেষ পাত্তা দিলো না।

খাওয়া শেষ হতেই। আবার শপিং করতে লাগলো ফাইজা। শপিং শেষ করে। বাসার দিকে রওনা দিলো ওরা মিথিলাকে ফাইজা শপিং করতে বলছিল কিন্তু মিথিলা করে নি। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। মিথিলার মা-বাবারা বাসায় ফিরেছে। ফাইয়াজ অবশ্য মিথিলাকে আনার সময়ই মিথিলার বাবা-মা’কে ফোন করে বলে দিয়ে ছিলো তাই তারা কিছু বলেন নি। বাসায় ফিরার সময় ফাইয়াজ গাড়ি থামিয়ে আইসক্রিম পালার থেকে মিথিলা আর ফাইজার জন্য দুবক্স আইসক্রিম কিনে দিয়েছে। ফাইয়াজ মিথিলাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেওয়ার সময় ওর হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ দিয়ে মিথিলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো।

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here