মহুয়া পর্ব -০৪

#মহুয়া
#শার‌মিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ৪

‌রিদু সময় না নি‌য়ে বা‌ড়ি থে‌কে বের হ‌তে নিল। ওর মা দিলারা বেগম ওকে তাড়াহু‌ড়ো বের হ‌তে দেখে জি‌জ্ঞেস কর‌লেন,
_” কি‌রে হৃদয় এত তাড়াহু‌ড়োয় কোথায় যা‌চ্ছিস?
_” প্রিয়‌তি না‌কি প‌ড়ে গি‌য়ে মাথা ফে‌টে গে‌ছে।
‌দিলারা বেগম ‌বিচ‌লিত হয়ে বল‌লেন,
_” কী ব‌লিস? কিভা‌বে হ‌লো?
‌রিদু প্রেমার কথাটা চে‌পে গেল, বলল,
_” স‌ঠিক জা‌নি না। গি‌য়ে জান‌তে পারব।
‌দিলারা বেগম বল‌লেন,
_” চল আমিও যাব।
_” তু‌মি কেন শুধু শুধু কষ্ট কর‌বে মা?
_” কি যা তা বল‌ছিস? মে‌য়েটার মাথা ফে‌ঁটে‌ছে, হস‌পিটা‌লে আর আমি যাব না? ওর সা‌থে তো আমা‌দের কো‌নো ঝা‌মেলা নেই। নেহাৎ তোর বাবার খাম‌খেয়া‌লির কার‌ণে মে‌য়েটা ওখা‌নে প‌ড়ে আছে, নয়ত আমার ছে‌লের বউ কেন মা‌সের পর মাস বা‌পের বা‌ড়ি থাক‌বে! সে যা হোক ঝা‌মেলা পা‌রিবা‌রিক সেটা পা‌রিবা‌রিক ভা‌বে সমাধান হ‌বে। ত‌বে আমি যেমন তোর আর হৃ‌দিতার (হৃদ‌য়ের ছোট বোন) মা তেম‌নি প্রিয়‌তিরও মা। তুই পাঁচ মি‌নিট বস আমি বোরকাটা প‌রেই আস‌ছি।

‌রিদু ওর মা‌কে নি‌য়েই হস‌পিটা‌লে গে‌লো। তি‌থির কাছ থে‌কে আগেই কোথায় কি আছে বিস্তা‌রিত জে‌নে নি‌য়ে‌ছে। কারণ রিদু জা‌নে ও কল কর‌লে প্রিয়‌তির বাবা ফোন রি‌সিভ কর‌বেন না বা সঠিক ক‌রে ওকে কিছু বল‌বেন না। তাই তি‌থির কাছ থে‌কে আগে জে‌নে নি‌য়ে‌ছে। রিদু আর ওর মা যখন পৌঁছাল তখন প্রিয়‌তিকে মাথায় স্কান করা‌নোর জন্য ভিত‌রে ঢুকা‌নো হ‌য়ে‌ছে। মাথায় আঘাত কতটা গভীর তা স্কান না ক‌রে বলা মুশ‌কিল। রিদু‌কে দে‌খে প্রিয়‌তির বাবা পলাশ খান বল‌লেন,
_” তোমরা এখা‌নে কেন? কি চাই এখা‌নে?
‌রিদু কিছু না বল‌লেও দিলারা বেগম বল‌লেন,
_” আমার ঘ‌রের বউ অসুস্থ তা‌কে দেখ‌তে আসব না?
পলাশ খান বেশ আক্রোশ নি‌য়ে বল‌লেন,
_” বা‌ড়ি থে‌কে ‌বের ক‌রে দেয়ার সময় ম‌নে ছিল না যে, ঘ‌রের বউ?
‌দিলারা বেগম শান্ত ভ‌ঙ্গি‌তেই বল‌লেন,
_” ভু‌লে যা‌চ্ছেন আপ‌নি নি‌জেই ঝা‌মেলা পা‌কি‌য়ে প্রিয়তিকে নি‌য়ে এসে‌ছেন। আপনার ত্যাড়া কথায় হৃদ‌য়ের বাবা রাগ ক‌রে ব‌লে‌ছেন ত‌বে নি‌য়ে যান আপনা‌দের মে‌য়ে‌কে। মূল দোষটা কিন্তু আপনা‌দের।

‌রে‌হেনা রা‌গে বেগম চোখ মুখ লাল ক‌রে বল‌লেন,
_” কী বলতে চান?
‌দিলারা বেগম হাত তু‌লে বল‌লেন,
_” থাক বেয়ান। এটা হস‌পিটাল। ঝা‌মেলা না ক‌রি। নি‌জে‌দের প‌রিবা‌রের কথা পাব‌লিক প্লে‌সে ব‌লে নি‌জের সম্মান হা‌নি না ক‌রি। তার চে‌য়ে বরং প্রিয়‌তির জন্য দোয়া ক‌রি। মে‌য়েটার যে‌নো কো‌নো ক্ষ‌তি না হয়।
‌রে‌হেনা বেগম চুপ হ‌য়ে গে‌লেন। তখন দিলারা বেগম বল‌লেন,
_” প্রিয়‌তি প‌ড়ে গেল কিভা‌বে?
‌রে‌হেনা বেগম বল‌লেন,
_” সি‌ড়ি দি‌য়ে প‌ড়ে গে‌ছে।
‌রিদুর মাথাটা চট ক‌রে গরম হ‌য়ে গেল। বেশ রাগ ক‌রেই বলল,
_” লজ্জা ক‌রে না বয়ষ্ক মানুষ হ‌য়ে মিথ্যা কথা বল‌তে? আপ‌নি না মা? মে‌য়ে তো দু‌টোই আপনার গ‌র্ভের। ত‌বে এক মে‌য়েকে কষ্ট দি‌য়ে অন্য মে‌য়ের দোষ কেন ঢাক‌ছেন?
‌রে‌হেনা নিচু স্ব‌রে বল‌লেন,
_” কী বল‌তে চাও?
_” প্রিয়‌তি‌কে যে প্রেমা ধাক্কা মে‌রে ফে‌লে‌ছে তা আমি শু‌নে‌ছি। এখন হস‌পিটা‌লে ব‌লে চুপ আছি। আগে প্রিয়‌তি‌কে দে‌খি তারপর বা‌কিটা বলব।

‌কিছুক্ষণ পর ‌প্রিয়‌তি‌কে হুইল চেয়া‌রে ব‌সি‌য়ে বাইরে ‌নি‌য়ে আসা হ‌লো। প্রিয়‌তি রিদু‌কে দে‌খে যে‌নো ওর প্রা‌ণে প্রাণ ফিরল। প্রিয়‌তি ভেতর থেকে বের হ‌তেই রে‌হেনা প্রিয়‌তি‌কে ধ‌রে বলল,
_” এখন ডাক্তার দে‌খি‌য়েই তো‌কে বাড়ি নি‌য়ে‌ যাব।
‌প্রিয়‌তি ওর মা‌য়ের হাতটা ছিট‌কে বলল,
_” যা‌তে তোমার ছোট মে‌য়ে আমার সন্তান‌কে আব‌ার মারার চেষ্টা কর‌তে পা‌রে, সে জন্য বাড়ি নি‌য়ে যা‌বে?
‌রিদু আর দিলারা বেগম অনেক অবাক হ‌লেন। রিদু অবাক হ‌য়ে বলল,
_” সন্তান মা‌নে?
‌প্রিয়তির কান্নায় চোখ ভ‌রে আসল। তারপর বলল,
_” সন্ত‌ান মা‌নে আমা‌দের অনাগত সন্তান। তোমার সন্তান যে আমার পে‌টে বে‌ড়ে উঠ‌ছে।
‌রিদু প্রিয়‌তির হাত ধ‌রে, হাঁটু গে‌রে ওর সাম‌নে ব‌সে বলল,
_” মা‌নে?

‌প্রিয়‌তি চোখ মু‌ছে বলল,
_” আজ সকা‌লে তু‌মি যাবার পর আমি প্রেগ‌নে‌ন্সি টেস্ট কিট দি‌য়ে ইউরিন টেস্ট ক‌রি। কারণ গত মা‌সে আমার পি‌রিয়ড হয়‌নি। এ মা‌সেও পি‌রিয়ড ডেট চল‌ছে কিন্তু পি‌রিয়ড হবার কো‌নো লক্ষণ দেখ‌ছি না। বরং ক‌দিন যাবত আমার শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে। সন্দেহ হ‌লো যে কন‌সিভ ক‌রেছি কিনা! সে কারণে গতকাল ফা‌র্মে‌সি থে‌কে টেস্ট‌কিট কিনে এনে‌ছিলাম। আজ বাসায় ব‌সে টেস্ট করা‌তেই রেজাল্ট প‌জে‌টিভ পেলাম। ভাবলাম হস‌পিটালে এসে টেস্ট ক‌রে ১০০% শিওর হ‌য়ে তোমা‌কে জানাব। কিন্তু তার আগে প্রেমা আজ সকা‌লে বেশ হাঙ্গামা ক‌রে‌ছে, মন খারাপ ছিল ভীষণ। দুপু‌রে ও আমার রু‌মের বাথরু‌মে গোসল কর‌তে গি‌য়ে টেস্ট কিটটা পে‌য়ে আমা‌কে জি‌জ্ঞেস ক‌রে
_” প্রিয়‌তি এটা কি? তুই প্রেগ‌নেন্ট?
আ‌মি বললাম,
_” যখন বুঝ‌তে পার‌ছিস তখন জি‌জ্ঞেস কেন কর‌ছিস!
‌প্রেমা প্রচন্ড রে‌গে অকথ্য ভাষায় আমা‌কে গালাগাল করল। তারপর বলল,
_” ঐ লম্পট ছাগটার বাচ্চা তুই পে‌টে বাঁধা‌লি কি‌ ক‌রে? ও বং‌শের কো‌নো চিন্হ আ‌মি এ ঘ‌রে রাখব না। এ পাপটা‌কে আমি লা‌ত্থি মে‌রে পেট থে‌কে ফে‌লে দিব। প্রেমা স‌ত্যি স‌ত্যি আমার পে‌টে লা‌ত্থি মার‌তে নি‌লে আমি ঘু‌রে যাই লা‌থিটা আমার পা‌য়ে লা‌গে। নি‌জে‌কে সামলা‌তে না পে‌রে প‌ড়ে গি‌য়ে দেয়া‌লের সা‌থে মাথায় আঘাত লা‌গে। মাথা থে‌কে ফিন‌কি দি‌য়ে রক্ত বে‌রো‌তে দে‌খে প্রেমা ঘাবড়ে যায়। আল্লাহ মে‌হেরবান যে পে‌টে তেমন কো‌নো আঘাত লা‌গে‌নি। আমার বাচ্চাটা হয়ত সুস্থ আছে! কিন্তু তবুও পে‌টে চিন‌চিনে ব্যথা হ‌চ্ছে। ভয় কর‌ছে খুব। রিদু তু‌মি ডাক্তার‌কে ব‌লো আমা‌কে আল্ট্রাস্নো করা‌তে। আমা‌কে যখন এখা‌নে আনা হ‌য়ে‌ছে তখন আমার হুস তেমন ছিল না বিধায় ডাক্তার‌কে বল‌তে পা‌রি‌নি। আমাদের বাচ্চাটা ঠিক আছে কিনা তা দেখ‌তে হ‌বে। প্লিজ রিদু।

‌রিদু আর দিলারা বেগম হতভম্ব হ‌য়ে প্রিয়‌তির কথা শুন‌ছিল। রে‌হেনা আর পলাশ খানও যে বেশ অব‌াক তা তা‌দের মুখ দে‌খে বোঝা যা‌চ্ছে। রিদু প্রিয়‌তির হুইল চেয়ার ধ‌রে ওর মা‌য়ের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
_” মা সব শু‌নে তু‌মি কি বল‌বে?
‌রে‌হেনা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বল‌লেন,
_” প্রিয়‌তি আমা‌দের সা‌থে যা‌বে। তোর বাবা‌কে আমি সাম‌লে নিব।
রিদু বলল,
_” হ্য‌াঁ। আগে ডাক্তার দেখাই তি‌নি কী ব‌লেন তা দে‌খে তারপর ওকে বাড়িতে ‌নি‌য়ে যাব।
‌রে‌হেনা তখনও বেশ রে‌গে বলল,
_” অসম্ভব। আমার মে‌য়ে আমা‌দের অনুম‌তি ছাড়া কোথাও যা‌বে না।
‌দিলারা বেগম বল‌লেন,
_” আপনার মে‌য়ে ছিল। এখন আমার ছে‌লের স্ত্রী। আর একটা বিবা‌হিত মে‌য়ের বি‌য়ের পর তার স্বামী এবং শ্বশুর বা‌ড়িই প্রথম। বাবার বা‌ড়ি তখন পর হ‌য়ে যায়। তার উপর তার স্বামীর অধিকার সব‌চে‌য়ে বে‌শি থা‌কে।

‌রে‌হেনা প্রিয়‌তির দি‌কে কড়া চো‌খে তা‌কি‌য়ে বলল,
_” তুই কি আবার ঐ বা‌ড়ি‌তে যা‌বি যেখা‌নে আমা‌দের এত অপমান হ‌তে হ‌য়ে‌ছে?
‌প্রিয়‌তি মাথা চেপে ধ‌রে‌ছে। ওর মাথা প্রচন্ড ব্যথা কর‌ছে। হয়ত যখন তখন জ্ঞান হারাবে। সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগ‌ছে ওর। দুই হা‌তে মাথা চে‌পে ধ‌রে বলল,
_” মা বে‌শি কথা বলব না। ত‌বে এতটু‌কো ব‌লি আমি আমার সন্তা‌নের জীবন বিপন্ন কর‌তে পারব না। সমস্যা তোমাদের আদ‌রের মে‌য়ের কার‌ণে হ‌য়ে‌ছে। আমি কেন ——–।
‌প্রিয়‌তি আর তেমন কিছু বল‌তে পারল না। বা যা বলল তা কেউ বুঝল না। রিদু প্রিয়‌তি‌কে হুইল চেয়ার থে‌কে তু‌লে কো‌লে নি‌য়ে স্টেচারে শুই‌য়ে দিল। দিলারা বেগম গে‌লেন ডাক্তার ডাকতে।
ডাক্তার এসে টেস্ট ক‌রে বল‌বেন রিদু আর প্রিয়‌তির বাচ্চা সুস্থ আছে কিনা? না‌কি বাচ্চাটা পৃ‌থিবী‌তে আসার আগেই বিদায় নি‌বে।

চল‌বে________

ভুলত্রু‌টি শুধরে দি‌লে উপকৃত হব।

#‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here