মহুয়া পর্ব -০৫

#মহুয়া
#শার‌মিন_আক্তার_সাথী
পর্ব: ৫

৬!!
বাচ্চাটা‌কে বাঁচা‌নো গেল না। আট সপ্তাহ, চার দি‌নের ভ্রুনটা প্রিয়‌তির গ‌র্ভ থেকে বিদায় নিল। পৃ‌থিবীর মুখ, পৃ‌থিবীর আলো তার দেখা হল না। দেখা হল না বাবা মা প‌রিবার‌কে। অনুভব করা হল না সুন্দর ধরনীর নির্মল, বাতাস গন্ধ। ভ্রুন‌টির মা‌ঝে কেবল হৃদস্পন্দ‌নের সঞ্চার হ‌য়ে‌ছিল কিন্তু সে হৃদস্প‌ন্দের টিপ টিপ শব্দ কেউ শুন‌তে পেল না। তার আগেই বিদায় নিল। ডাক্তার আল্ট্রা‌স্নোগ্রাফী করে বল‌লেন বাচ্চাটা নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে। রিদু কেমন রিয়াক্ট কর‌বে তা ঠিক বুঝ‌তে পারল না। হতবাগ হ‌য়ে ডাক্তা‌রের দিকে তা‌কি‌য়ে বলল,
_” কিন্তু ডাক্তার প্রিয়‌তি তো বলল ওর পে‌টে কো‌নো আঘাত লা‌গে‌নি।

ডাক্তার মৃদু স্ব‌রে বল‌লেন,
_” ‌দেখুন হৃদয় সা‌হেব পে‌টে আঘাত লাগ‌লেই যে বাচ্চা নষ্ট হ‌বে, বা আঘাত না লাগ‌লে যে বাচ্চা ঠিক থাক‌বে, তেমন কথা কিন্তু নেই। আঘাত তার পে‌টে না লাগ‌লেও সে যখন প‌ড়ে গি‌য়ে মাথায় আঘাত পায় তখন তার সারা শরী‌রে প্রচন্ড একটা ঝাকু‌নি লা‌গে। আর এটা নিশ্চয়ই জা‌নেন কন‌সিভ করার শুরুর তিনমাস সামান্য সামান্য কার‌ণে মিসক্যা‌রেজ হয়। এমন‌কি কন‌সিভ করার পর প্রথম দি‌কে সামান্য জ্ব‌রে, হালকা স্লিপ কাট‌লে বা বেশ ভয় পে‌লেও বাচ্চা নষ্ট হয়। এখা‌নে উনি তো প‌ড়ে গি‌য়েছেন, পু‌রো শরী‌র বেশ বড় বড় ধাক্কার সম্মুখীন হ‌য়েছেন, মাথায় প্রচন্ড আঘাত পে‌য়ে‌ছেন। প্রচুর ব্ল্যাড লস হ‌য়ে‌ছে। রক্ত দি‌তে হ‌চ্ছে তা‌কে।

এত বড় আঘা‌তে বাচ্চা টেকার চান্স মাত্র ২০% ও না। তাও য‌দি উনি তিন মা‌স প্লাস হত ত‌বে বলা যেত যে বাচ্চা টিক‌তে পা‌রে। বাট এখন আপনার বাচ্চার হার্ট‌াবিট নেই। অনেক্ষণ আমরা পর্য‌বেক্ষণ ক‌রেও বাচ্চার হার্ট‌বিট পাই‌নি। তাছাড়া মাথা ফাটার কার‌ণে আপনার ওয়াইফ‌কে এখন হাই ডো‌জের ইনজেকশন প্লাস ঔষধ দি‌তে হ‌বে। তা‌তে বাচ্চা এম‌নিও মিসক্যা‌রেজ হত। এত হাই ডোজের মে‌ডি‌সিন প্রেগে‌নেন্ট ম‌হিলারা নি‌তে পা‌রে না। আপ‌নি জা‌নেন সামান্য মাথা ব্যথার ঔষধে পর্যন্ত বাচ্চা নষ্ট হয়! সেখা‌নে তো ওনার মাথা ফে‌টে গে‌ছে। বেশ ক‌য়েকটা সেলাই লে‌গে‌ছে। আমরা য‌দি না‌ জানতাম উনি প্রেগ‌নেন্ট ত‌বে ঐসব ওষ‌ুধের ফ‌লে উনি পে‌টে ভয়াবহ যন্ত্রনার স্বীকার হ‌তেন। প্রচুর ভুগ‌তে হত তা‌কে। এখন ওনা‌কে যে‌ ওষুধ দি‌য়ে‌ছি তা‌তে মৃত ভ্রুনটা নি‌জে নি‌জে প‌ড়ে যা‌বে। তারপর য‌দি ভিত‌রে ময়লা বা অবশিষ্ট কিছু থা‌কে ত‌বে ডি এন সি ক‌রে প‌রিষ্কার কর‌তে হ‌বে। আপাতত আপনার ওয়াইফের জ্ঞান নেই। ফির‌তেও সময় লাগ‌বে। আমরা তো এটা ভে‌বে অবাক হ‌চ্ছি এত আঘাত পাবার পর, এত ব্ল্যাড লস হবার পরও কিভা‌বে বেশ ক্ষ‌া‌নিকক্ষণ হু‌সে ছিল, আর আপনা‌দের এত কথা কিভা‌বে বলল? যাই হোক হয়ত ওনার ম‌নের জোর অনেক। ত‌বে সে জোরও আপনা‌দের অনাগত সন্তান‌কে বাঁচা‌তে পা‌রে‌নি। এখন সৃ‌ষ্টিকর্তা‌কে ডাকুন। আমরা অল‌রে‌ডি তার চি‌কিৎসা শুরু ক‌রে দি‌য়ে‌ছি।

ডাক্তা‌রের কথ‌াগু‌লো একধ্যা‌নে শুন‌ছিল হৃদয়। আজ বলার মত সব ভাষা ও হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছে। আজই তো জান‌তে পারল ও বাবা হ‌বে আর আজই নি‌জের সন্তান‌কে হারাল। এমন হতভাগ্য মানুষ বোধ হয় পৃ‌থিবী‌তে দ্বিতীয় আরেকটা নেই। রিদুর চোখ দু‌টো ভি‌জে আস‌তে চাই‌ছে কিন্তু বেশ ক‌ষ্টে দাঁ‌তে দাঁত চে‌পে নি‌জের চো‌খের জল আটকা‌চ্ছে। ডাক্তা‌রের চেম্বার থে‌কে বের হ‌তেই দেখল ওর বাবা আর বোনও হস‌পিটা‌লে এসেছে। রিদু‌কে দে‌খে দিলারা বেগম বল‌লেন,
_” কী হ‌লো হৃদয়? ডাক্তার কী বল‌লেন?

‌রিদু কেন জা‌নি এবার নি‌জে‌কে সামলা‌তে পারল না। ওর মা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না কর‌তে লাগল। কান্না কর‌তে কর‌তে বলল,
_” মা আমার বাচ্চাটা‌কে বাঁচাতে পারল না। আমার বাচ্চাটা পৃ‌থিবী‌তে আসার আগেই বিদায় নিল মা। সব শেষ মা, সব শেষ।
‌দিলারা বেগম ছে‌লেকে শান্তনা দি‌তে দি‌তে বল‌লেন,
_” সব শেষ কিভাবে? আল্লাহ সব ঠিক ক‌রে দি‌বেন। প্রিয়‌তি সুস্থ হ‌লে, আল্লাহ চাই‌লে তোরা আবার বাবা মা হ‌তে পার‌বি। কান্না ক‌রিস না বাবা। আল্লাহ সব ঠিক করে দি‌বেন। তা প্রিয়‌তি কেমন আছে?
_” ওর অবস্থাও তেমন ভা‌লো না। ডাক্তার বল‌ছেন আল্লাহর নাম নি‌তে। চি‌কিৎসা চল‌ছে।
হারুন সা‌হেব বললেন,
_” চিন্তা ক‌রিস না। প্রিয়‌তির কিছু হ‌বে না।
‌রিদু খানিক রে‌গেই বলল,
_” এখন কেন আসছ বাবা? আমার সন্তান তো আর আসবে না। আমার স্ত্রীর অবস্থাও ভা‌লো না। কিন্তু তোমার সন্তান তো ঠিকই বেঁ‌চে আছে। সে‌দিন য‌দি প্রিয়‌তি‌কে নি‌য়ে যে‌তে না দি‌তে ত‌বে আমার সন্তান আজ বেঁ‌চে থাকত।
হারুন সা‌হেব মাথা নিচু ক‌রে রই‌লেন। হৃ‌দিতা রিদু‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
_” ভাই শান্ত হ। ভাবীর কিছু হ‌বে না। আল্লাহ সব ঠিক কর‌বেন।

পলাশ আর রে‌হেনা বেগম মাথা নিচু ক‌রে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছেন। তারাও যে‌নো বাকরুদ্ধ এমন ঘটনায়।

৭!!

প্রেমা ঘ‌রে পায়চা‌রি কর‌ছে। তখন রা‌গের মাথায় যে কান্ডটা ক‌রে বসল তারপর থে‌কে মাথা কাজ কর‌ছে না। এদি‌কে ওর বাবা মাও ফোন তু‌লছে না। রাগটা যে‌নো আরও বাড়‌ছে তা‌তে। তি‌থি প্রেমার রু‌মের পাশ দি‌য়ে যা‌চ্ছিল। তি‌থি‌কে দে‌খে প্রেমা জো‌রে ডাকল।
_” তি‌থি!
‌তি‌থি এম‌নি প্রেমা‌কে প্রচন্ড ভয় পায়। তার উপর আর প্রেমার যা মেজাজ, দেখা যা‌বে রা‌গের ব‌শে তি‌থি‌কে দু চারটার চড় দি‌য়ে বস‌বে। তি‌থি বেশ কেঁ‌পে কেঁ‌পে প্রেমার রু‌মে ঢু‌কে বলল,
_” আপু কিছু বল‌বে?
_” আমার বাবা মা‌য়ের সা‌থে কথা হ‌য়ে‌ছে?
_” না।
_” ছোট চা‌চির? (তি‌তির মা)
_” জা‌নি না।

‌প্রেমা রা‌গি গলায় বলল,
_” ত‌বে ‌কি জা‌নিস আমার মাথা? যা এখান থে‌কে।
‌তি‌থি রুম থে‌কে বের হয়ে কিছুটা আড়া‌লে গিয়ে, ওর হা‌তে থাকা পানির বোতল থে‌কে কিছুটা পা‌নি প্রেমার রু‌মের সাম‌নে ঢে‌লে দিল। আর ম‌নে ম‌নে বলল,
_” কু‌ত্তি প্রেমা তুই যে‌নো এখা‌নে পিছলা খে‌য়ে প‌ড়িস। তোর মাথা ফে‌টে যে‌নো তোর মাথার ম‌ধ্যের সব শয়তানগুলা বের হ‌য়ে যায়। প্রিয়‌তি আপু একা কেন কষ্ট পা‌বে? তোর মত ইব‌লি‌সের কষ্ট পাওয়া উচিত। এক‌দিন সু‌যোগ বু‌ঝে তোর সব জামায় বিলাই চিমটা, বিচু‌টি পাতা দিব। যা‌তে চুলকাতে চুলা‌কাতে ম‌রিস। শালী শয়তা‌নের না‌নি। আল্লাহ এত লোক দমন ক‌রে তো‌রে কেন চো‌খে দে‌খে না। বেচারা আমার মা‌টির মত প্রিয়‌তি আপু।
‌প্রিয়তির কথা ম‌নে হ‌তেই তি‌থি ফোনটা হা‌তে নি‌য়ে রিদু‌কে কল করল।

চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here