#মায়াবতী
#পর্ব_১৪
#সুলতানা_পারভীন
রাত ১২ টার দিকে রাহাত সব কাজ সেরে রুমে এসে একেবারে হা হয়ে গেল। রাহাতের রুমটা ফুলের গন্ধে মো মো করছে। সারা রুমটা কাঠবেলি আর গোলাপ দিয়ে সাজানো। আর রুমের মাঝামাঝিতে থাকা খাটটাও ফুলে ফুলে ভরা। কাঠ বেলী, বেলী আর গোলাপের ছড়াছড়ি। ফুলের লম্বা লম্বা শিকল করে সেটা দিয়ে ওদের বাসরের খাট সাজানো হয়েছে। খাটের মাঝামাঝিতে গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আঁকা। আর সেই ভালোবাসার চিহ্নের একটু সামনে মাথা নিচু করে ঘোমটা মাথায় জবুথবু হয়ে বসে আছে একটা লাল টুকটুকে পরী।
রাহাত ঘোরের মাঝেই দরজাটা বন্ধ করলো। দরজা বন্ধের শব্দে মায়ার কেঁপে ওঠাও দেখলো। কোনমতে খাটের সামনে এস দাঁড়ালো৷ মায়াও খাট থেকে গুটিগুটি পায়ে নেমে রাহাতের সামনে দাঁড়ালো। ঝুঁকে পায়ে হাত দেয়ার আগেই রাহাত মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে এক পাঁক নিজেও ঘুরলো৷ রাহাতের হুট করে এমন কাজে মায়া খেঁই হারিয়েই রাহাতের গলা জড়িয়ে ধরলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে মায়াকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে পাশে বসলো রাহাত। কোন কথা হচ্ছে না দুজনের। চুপ করে একে অপরের শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ গুনছে যেন।
একটু পরে স্বাভাবিক হয়ে মায়ার মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরালো রাহাত। তার মায়াবতীকে এতোগুলো দিন পর দেখে বার বার অন্য একটা ঘোরে চলে যাচ্ছে রাহাত। তাও আবার এই বিয়ের সাজে যখন মায়াবতীকে লাল পরীর চেয়ে কোন অংশে কম লাগছে না। পরীটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে রাহাতের। বেশি কিছু না ভেবেই এগিয়ে এসে আলতো করে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-মায়াবতী? সত্যিই কি তোমাকে আমি পেয়েছি? নাকি এখনো স্বপ্ন দেখছি?
মায়া মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। আবার রাহাতের দিকে চোখ পড়তেই চোখাচোখি হলো দুজনের।
-পরী? একটা কথা বলি?
-হুম——।
-কখনো ফেলে যাবে না বলো? যত ভুল করি অধিকারের শাসন দিয়ে শুধরে দিও–। রাগ করে দূরে ঠেলে দিও না কখনো—।
-হুম—–।
-আর ম্যাডাম? সারাদিন আপনি যেখানে ইচ্ছে যান, যা ইচ্ছে করেন, বেড়ান– আমার সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতি রাতে আমার মায়াবতীটা আমার বুকে থাকা চাই—-।
——————————
-লজ্জা পেয়ে লাভ নেই—। বিয়ের পরে কোলবালিশের দায়িত্ব শেষ–। বউকে চাই প্রতিদিন—–।
-বারে—। মায়ের কাছে যাব না আমি?
-যাবে না কেন! অবশ্যই যাবে–। তবে আমার ঘুমের সময়ের আগে তোমাকে বুকে চাই–। এখন সেটা কি করে করবে সেটা তুমি জানো—।
-আচ্ছা——–।
-মায়াবতী? বউ সেজে এত্তোগুলা আদুরে লাগছে পরীটাকে–। কিন্তু এতো ভারি মেকাপে আর বেশিক্ষণ থাকলে তো স্কিনের ক্ষতি হবে সোনা–। এখন যাও–। ফ্রেশ হয়ে নাও—।
-আচ্ছা——–।
মায়াকে লাগেজ থেকে শাড়ি বের করায় হেল্প করে নিজেও ওয়ারড্রপ থেকে একটা প্যাকেট নিলো রাহাত। মায়া ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়েছে।
-মায়াবতী?
-হুম?
-এটা তোমার জন্য—। যখন আমার কাছে পরীটা ধরা দিতে চাইবে তখন যেন এটা পড়ে।। বলতে হবে না কিছু আর। আমি বুঝে নিব বাকিটা—–।
-মানে!
-হুট করে পরীটাকে ধরে নিয়ে এলাম–। একটু সময় তো দেয়াই যায়—।
মায়া লাজুক হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। রাহাতের দেয়া প্যাকেটটা বুকে জাপটে ধরে নিজেকে আয়নায় দেখলো একবার। প্যাকেটটা খুলেই মায়ার হার্ট বিট ডাবল হয়ে গেল। হালকা গোলাপি রঙা একটা নাইটি। হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত পোঁছবে লম্বায়। তার উপরে টু পিসের নাইটিটা যথেষ্ট পাতলা ফিনফিনে রকমের। দেখামাত্রই মায়ার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এটা পড়ে কখনো রাহাতের সামনে দাঁড়াতে হবে! ভাবতেই বেচারি লজ্জায় পারছে না মাটির সাথে মিশে যেতে। প্যাকেটে নাইটিটা রেখে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো মায়া। গায়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে প্যাকেটটা আবার হাতে নিয়ে দেখলো মায়া। কি করবে বুঝতেই পারছে না। লজ্জায় পড়তে পারছে না। আবার না পড়লে মানুষটা কষ্ট পাবে কিনা সেটাও বুঝতে পারছে না। এর মধ্যেই দরজায় নক করলো রাহাত।
-এই যে মায়াবতী? শাওয়ার নিতে নিতে ঘুমিয়ে গেলে নাকি?
-নাহ—-। মানে——।
-আরে পাগলী? এখন ওটা পড়তে হবে না–। তুমি তোমার মতো করে সময় নাও—-।
——————————
-তাড়াতাড়ি এসো না?
মায়া শাড়ি পড়ে চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বেরিয়ে এলো। হাতে রাহাতের দেয়া প্যাকেট আর গায়ের গয়নাগাটি। জিনিসগুলো রেখে টাওয়ালটা চুল থেকে খুলে চুল মোছায় মন দিলো মায়া। এদিকে রাহাত হা করে মায়াকে দেখছে। লাল বেনারসি বদলে একটা নতুন পাটভাঙা তাঁতের শাড়ি পড়েছে মায়া। লাল রঙা শাড়িটার সোনালি পাড়ে দেয়া। মুখে কোন সাজ নেই। নেই গায়ে কোন গয়না। তবুও মেয়েটার মুখটা দেখে এতো মায়াবী লাগছে!
রাহাত এগিয়ে এসে মায়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে হাতের টাওয়ালটা নিল। মায়া এবারও লজ্জা পেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আলতো করে মায়ার কানে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো রাহাত।
-মায়াবতী? গিফ্ট পছন্দ হয়েছে?
মায়া লাজুক হেসে মাথা নাড়লো। রাহাতও মায়ার চুল মোছার ফাঁকে ফাঁকে দুষ্টুমিতে মাতলো। চুল মোছা শেষ হলে টাওয়ালটা রেখে মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। বিছানায় মায়াকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়লো। মায়াবতীর সাথে দুষ্টুমি করতে করতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল রাহাত।
সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই রাহাত টের পেল মায়া ওর হাতটা সরিয়ে উঠে যাচ্ছে। জাপটে ধরার আগেই মায়া বিছানা থেকে নেমে পড়লো। রাহাত চোখ না খুলেই মায়ার অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। একটু একটু করে এক পা দু পা করে সরে যাচ্ছে মেয়েটা।
-এই মায়াবতী? কই যাও? কাছে এসো?
-উহু——।
-আমি উঠে ধরতে পারলে খবর আছে কিন্তু—।
-আচ্ছা? ধরে দেখাও—-। আমি ধরা না দিলে কখনো ধরতে পারবে তুমি?
-তাই নাকি?
-বিশ্বাস না হলে ধরো? এসো?
চোখ দুটো কোনমতেই খুলতে পারছে না রাহাত। যেন একে অন্যকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে আবেশে। আর এদিকে মায়াটাও ধীরে ধীরে দূর থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে। কেন যেন রাহাতের মনে হচ্ছে মেয়েটা হারিয়ে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে। ডাকতে গিয়েও গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো না এবার রাহাতের। তবু শেষ একবার চেষ্টা করলো শক্তি দিয়ে।
-মায়া?
চলবে