মায়াবতী পর্ব ২১+২২+২৩+২৪

#মায়াবতী
#পর্ব_২১+২২+২৩+২৪
#সুলতানা_পারভীন
পর্দাটা বাতাসে কেঁপে উঠে এক চিলতে ভোরের আলো চোখে এসে পড়ায় ঘুমটা ছুটে গেল মায়ার। পাশ ফিরতে গিয়ে এক তিলও নড়তে পারলো না বেচারি। পিছন থেকে ওর কোমড় পেঁচিয়ে একেবারে বুকের সাথে মায়ার পিঠ ঠেকিয়ে জড়িয়ে রেখেছে দুটো হাত। হাত দুটোয় আলতো করে স্পর্শ করে মায়া একবার কেঁপে উঠলো। হাত দুটো ওর পরিচিত, তার স্পর্শটাও পরিচিত, আর এই শরীরের উষ্ণতাটাও ভিষণ ভিষণ পরিচিত। মায়ার নড়াচড়ায় হাতের বাঁধনটা একটু আলগা হতেই মানুষটার মুখের দিকে তাকালো মায়া। ভারি পর্দা ঢাকা রুমের মৃদু আলোতে মানুষটার মুখটা ভালো করে দেখতে পাচ্ছিল না মায়া। বাতাসের চোটে একটু কেঁপে কেঁপে পর্দাটা সরে যেতেই রাহাতের চেহারাটা পুরোপুরি দেখতে পেল মায়া।। এ কয়েকদিন রাহাতকে দূর থেকেই দেখেছে মায়া। ওই যে বাসার গলিটার সামনে দিয়ে গাড়ি নিয়ে সারা গলিটা চক্কর দিচ্ছে তখন। মায়ার রুমের বারান্দা থেকে বেশ দেখা যায় গলির মোড়টা। এই কয়টা দিন রাহাতের এমন ছন্নছাড়া পাগলামিগুলোর সবটাই দেখেছে ও। আজ এতো দিন পর এতো কাছ থেকে মানুষটাকে দেখতে পেয়ে ভিষণ ভালো লাগছে মেয়েটার।
আলতো করে রাহাতের ঘুমন্ত মুখে হাত রেখে মানুষটাকে দেখায় ব্যস্ত মায়া। মানুষটা ঠিক মতো যে খাওয়া দাওয়া করছে না সেটা তার চোখে মুখের ক্লান্তি দেখেই টের পাচ্ছে ও। গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো বেশ অনেকটাই বড় হয়েছে। মায়া সরে যেতেই রাহাতের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেছে দেখে মায়া হেসে ফেললো। এগিয়ে গিয়ে রাহাতের বুকে নাক মুখ ডুবিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আর প্রায় সাথে সাথেই টের পেল রাহাতের হাত জোড়া শক্ত করে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। মায়াও রাহাতের বুকে নাক ঘষে চোখ বুঝলো। মানুষটাকে এখন আর জাগাতে ইচ্ছে করছে না। বেশ রাতেই মায়াদের বাসার সামনে ঘুরে তারপর বাসায় গেছে রাহাত। এখন এতো ভোরে কি করে এলো সেটা মায়া জানে না। তবে ভালো লাগছে এভাবে মানুষটার বুকে মুখ লুকাতে পেরে।
বহুদিন পর বেশ লম্বা একটা ঘুম হল মায়ার। ঘুমটা যেন কাটতেই চাইছে না চোখ থেকে। এই আধো ঘুমেও মায়া রাহাতের স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার। রাহাত এক হাতে মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে অন্য হাতে মায়ার মুখটা তুলে ধরে সারা মুখ পাগলের মতো চুমোয় ভরিয়ে দিয়ে শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো। মায়া কোনমতে চোখ খুলতেই দেখল রাহাত অপলকে ওকেই দেখছে। মায়া রাহাতের ঘোর লাগা চাহনিটা দেখে একটু কেঁপে উঠে রাহাতের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করলো।
-কি করছেন টা কি!! সরুন—-।।
-কিছু করছি না গো–। আমার বউটাকে দেখছি—। কত দিন মায়াবতীটাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে ধরি নি—-।
-কে বউ? কিসের মায়াবতী?? এখানে কেন এসেছেন? আপনাকে তো মুক্ত করে দিয়েই এসেছি সব বন্ধন থেকে—। তবু কেন এসেছেন? মরে গেছি কিনা দেখতে—-!!?
-মায়া?? সরি তো বউটা—-।। কথা ছিল ভুল করলে শাসন করে শুধরে দিবে—। এভাবে ফেলে চলে যাওয়ার কিন্তু কথা ছিল না—-।।
-ভুল?? আপনার মনে হয় কাজগুলো ভুল ছিল??
-সরি?? ভুল না পরী–। অন্যায় করে ফেলেছি—। মাফ করে দাও প্লিজ?? আর কখনো এমন করবো না তো—।। পাক্কা—-।।
————————-
-ও মায়াবতী?? সরি তো??
-আপনার সরি আমাকে আমার সেই মানুষটাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে যাকে আমি পাগলের মতো বিশ্বাস করেছি?? যাকে একদিন আমি পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম —!!??
-বাহ!! এখন আর ভালোবাসো না??
-না—। বাসি না বাসি না বাসি না।।
-বুকে মুখ লুকিয়ে ভালোবাসি না বলছো??
-সরুন?—ছাড়ুন—??
-আমার বুকে যখন মাথা রেখেছিলে তখন আমি কিছু বলেছি?? তো এখন কেন আমি জড়িয়ে ধরেছি বলে এমন করছ??
-ছাড়ুন—-।।
-উহু—-।। কথা ছিল তুমি রাগ করলে আমার উষ্ণ স্পর্শে তোমার রাগ ভাঙাবো–। অভিমান করলে তোমার নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে—-।।
-ছাড়ুন—।।
-বাহ!! ছাড়ব কেন!! রাগ আর অভিমান দুটোই হয়েছে আমার মায়াবতীর—।। সেটা আগে ভাঙাই—।।
-সরুন–। এন্ড ডোন্ট টাচ মি–। অধিকার ফলাতে আসবেন না একদম–। সমস্ত অধিকার ডিভোর্স লেটারটার সাথে শেষ হয়ে গেছে–।
-তাই??
রাহাত মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে আরো নিবিড় করে বুকে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে রাখলো। মায়া সরে আসার চেষ্টা করতেই মায়ার ঠোঁটটা আলতো করে কামড়ে ধরে রইলো। বেশ অনেকক্ষণ ছোটার জন্য ছটফট করে শেষে মায়াও রাহাতের মাঝে হারিয়ে গেল। রাহাত হেসে মায়ার মুখটা দুহাতে তুলে ধরে কপালে, চোখে, মুখে আলতো আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
-মায়াবতী?? জানি রাগটা সহজে নামবে না—। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে ছাড়া সত্যিই মরে যাব–। অন্যায়টা কখনো শুধরে নিতে পারব কিনা জানি না—। তবে বিশ্বাস করো– তোমার জন্য এবার সত্যি নিজেকে বদলাতে চাই আমি—।।
————–আপনি আমার রুমে এলেন কি করে!!
-আমার পরীটা তো আমাকে আগেই বলেছিল-তার রুমের লাগোয়া বারান্দাটা দিয়ে চাইলেই টুপ করে পরীর রুমে উঠে আসা যায়—। তোমার না ইচ্ছে ছিল তুমি বরের সাথে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে এলে তোমার বরটা চুরি করে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বারান্দা টপকে তোমার কাছে আসবে—?
-তুমি!!! বারান্দা টপকে এসেছ!! পড়ে গেলে কি হত!! আর কেউ চোর ভেবে—–?
-কি আর হতো!! বউয়ের মান ভাঙাতে এসে ধোলাই খেয়ে ভূত হতাম—-।। কার কি এসে যেত–।
-ভালোই হত—–।।
-হুম–। সেটাই—-। মায়াবতী?? ও মায়াবতী?? ফিরে চলো না প্লিজ?
-কোথায় ফিরব?
-আমার মায়াবতীর স্বপ্নের রাজ্যে–।
-সব কিছু থেকে তোমাকে মুক্ত করে দিয়ে নিজেও মুক্ত হয়ে এসেছি—।
-মায়া??
রাহাত মায়াকে বুকে জাপটে ধরে একেবারে বুকের ভিতরে জড়িয়ে নিলো।
-মায়াবতী–। রাগ করে থাকো- যতদিন ইচ্ছে রাগ করে ফিরো না-। সবটা মাথা পেতে মেনে নিব–। কিন্তু এই কথাগুলো বলো না প্লিজ—। মরে যাব আমি—।।
-ছাড়ো——।।
-পরীটার রাগ ভাঙিয়ে বাড়ি ফিরব। সমস্যা নেই। কিন্তু আর একটা সেকেন্ডও আমার মায়াবতীর থেকে দূরে থাকতে পারব না আমি—-।
-এভাবে বারান্দা টপকে রাত বিরেতে লোকে আপনাকে আসতে দেখলে আমার নামেই বাজে কথা বলবে–। আপনার তাতে হয়তো কিছু এসে যাবে না——।।
-আচ্ছা বাবা–। বারান্দা টপকানো বাদ—। এবার থেকে সবার সামনে নিয়ে মাথা উঁচু করে বউয়ের কাছে আসবো—–।। ওকে মায়াবতী??
————————-
-এই?? তুমি রহিমা খালাকে মিথ্যে বলতে শিখিয়ে দিয়েছিলে কেন!! আমি তোমাকে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম–।।আর তুমি এসব কলকাঠি নাড়ছো না??
-বেশ করেছি—-।
-বেশ করেছ না?? আমিও বেশ একটা কাজ করি তাহলে—-।।
-একদম না বলছি————।
মায়া আর কিছু বলার আগেই রাহাত মায়াকে টেনে নিজের উপরে নিয়ে ভালোবাসায় মেতে উঠলো। অনেক যুদ্ধের পর সে তার মায়াবতীটাকে পেয়েছে। এবারে আর কোন ভুল না করে আগলে রাখবে। একেবারে বুকের মাঝে লুকিয়ে আগলে রাখবে সে তার মায়াবতীটাকে।
চলবে
,
#মায়াবতী♥♥♥♥♥
#পর্ব_২২
#সুলতানা_পারভীন
বেলা ১১ টার দিকে ঘুমটা ভাঙলে প্রায় লাফিয়ে বিছানায় উঠে বসলো মায়া। চারপাশে তাকিয়ে রাহাতকে দেখতে পেল না৷ বারান্দার দরজাটা বন্ধ করা। আর বাদ বাকি সবই রাতের যেমন ছিল তেমনই আছে। মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নামলো। রাহাত আসলে এসেছে নাকি স্বপ্নে দেখেছে পুরো ব্যাপারটা-কিছুই বুঝতে পারছে না মায়া। মানুষটার প্রত্যেকটা স্পর্শ অনুভব করতে পেরেছে মায়া। আর তার ঘ্রাণটাও যেন এখনো রুমের বাতাসে, বিছানায় মিশে আছে। তবে কি মায়া ফিরবে না বলে চলে গেছে??

ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে মুখ মুছতে মুছতেও চিন্তায় মগ্ন মায়া। মানুষটা কেন এসেছে!! নাকি আসেই নি!! এসব ভাবতে ভাবতেই গালে কারো ঠোঁটের স্পর্শে একটু কেঁপে উঠে পাশে ফিরে রাহাতকে দেখতে পেল মায়া।। রাহাত কিছু একটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
-কি সমস্যা আপনার??
-ভূত টূত ভেবে ভয় পেলে নাকি মায়াবতী!? আমি আপনার জ্বলজ্যান্ত ভূতুড়ে হাসবেন্ড—-।
-কি সব বলছেন!!
-কি ভাবছিলে!! তোমাকে রেখে চলে গেছি!! সেটা আর হচ্ছে না পরী–। তোমাকেও পালাতে দিব না কোথাও –আর আমিও এক পা ও নড়ছি না তোমার সামনে থেকে—-।।
-সরুন—–।। অনেক বেলা হয়েছে —।
-তো?? তুমিই তো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলে—-।। অবশ্য এতোক্ষণ ঘুমিয়ে ভালোই করেছ–। তোমার ঘুমন্ত মুখটা এতো মায়াবী–। দেখলেই ইচ্ছে করে আদর করে–।
-সরুন—-।।
-চা টা টেস্ট করে দেখো তো কেমন হয়েছে—।
-চা??
-বাহ!! বরের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকলে হবে!! বর যে বেড টি নিয়ে এলো তার দিকে একটু নজর দিন-।
-এটা বেড টি!!?
-একটা হলেই হল—। টেস্ট করো–।
মায়া কাপটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিতেই রাহাত মায়ার একটা হাত ধরলো।
-এই এই? মায়া?? শোনো শোনো–?
-হুম??
মায়া মুখটা তুলতেই রাহাত মায়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে চা টুকু নিজেই গিলে ফেলে মায়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে মিটিমিটি।
-এসব কি??
-মর্নিং টি উইথ মর্নিং কিস্সি–।
-অসহ্য লোক একটা—।
-আরে চা টা খেয়ে দেখো–। সেই মজা হয়েছে—।
-খাবোই না–। ধুর—–।।
-খেতে হবে না–। আরেক সিপ মুখে নাও–। বাকিটা আমি নিজেই করে নিতে পারব—-।।
মায়ার রাগী চাহনি দেখে রাহাত লুটোপুটি খেয়ে হাসার অবস্থা। এই লোকটার কাহিনী দেখে মায়া যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছে। হুট করে এভাবে এসে এভাবে ওকে জব্দ করার মানে কি! কি পেয়েছে কি উনি!?!
-মায়া????????????
-কি!!??
-আরে—?? খুদা লেগেছে তো বাবা—। চলো না??
-হুম?? হুম–এসো—-।।
চায়ের কাপে আরেকবার চুমুক দিয়ে মুখ তুলতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। রাহাত ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে মায়ার চা খাওয়া দেখছে। আর মায়া পারছে না গরম চা টা একেবারে গিলে ফেলতে। রাহাতের চাহনিগুলো বেচারিকে বারেবারে বিষম খাইয়ে দিচ্ছে। ছোট্ট ডাইনিং টেবিলে এসে মায়া আরো হা হয়ে গেল। মা আর রহিমা খালা বেশ অনেক রকমের নাস্তা বানিয়ে টেবিল ভরিয়ে ফেলেছে। মায়া এসব খেয়াল করতেই মায়ের দিকে নজর পড়লো।
-মা??!
-এসে গেছিস মায়া মা? জামাই রাতে এসেছে ডাকবি না একবার??
-মা!!!
-আরে ছেলেটাকে খেতে দে–। কেমন চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে—। বসো বাবা—।
-জি মা—। আপনারাও বসুন—। খালা আপনিও বসুন-??
-না না সাহেব—। আপনেরা নাস্তা করেন–। আমি করসি—।।
-এই মায়া?? এসো না?? বসো??
খেতে খেতে বেশ অনেকক্ষণ সবার সাথে কথা হলো রাহাতের। বুঝতে পারলো মায়া রাগ করে বাসা থেকে চলে এসেছে এটা বাসায় বলে নি৷ আর পরের সপ্তাহে মিহানের বিয়ে তাই বাসায় কেউ কিছু সন্দেহও করে নি। মিহানের বিয়ের খবরটা শুনে রাহাত ভিষণ খুশি হলো। মায়ার রাগ কমানোর জন্য কিছু একটা করতে হবে। সেটা ভেবে একটু একটু মনে জোর পাচ্ছে রাহাত।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাহাত রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো। গত একটা সপ্তাহ শান্তিতে এক দন্ড ঘুম হয় নি। ক্লান্ত শরীর থেকে থেকে ঘুমের কোলে গা এলিয়ে দিয়েছে ঠিকই তখনও সেই ক্লান্তির মধ্যেও মায়ার কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বারবার। এতদিন পর মায়াকে বুকে পেয়েও ঘুম হয় নি। এক সপ্তাহ না দেখার তেষ্টা সারাটা রাত অপলকে দেখেই কাটিয়ে দিয়েছে রাহাত। এখন দু চোখ জুড়ে ঘুম নামছে রাহাতের। এই মূহুর্তে মায়াকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারলে বেশ আরামের একটা ঘুম হত। কথাটা চিন্তা করেই গলা ফাটিয়ে মায়াকে ডাকতে শুরু করলো রাহাত।
রাহাতের ডাক শুনেই বিরক্ত হয়ে অন্য কাজে মন দেয়ার চেষ্টা করলো মায়া। কিন্তু এই লোকের গলা মাশাল্লাহ!! একেবারে পাড়া সুদ্ধ মাথায় তুলে ফেললো চেঁচিয়ে। মায়া মুখ তুলতেই দেখলো মা আর রহিমা খালা মুখ টিপে হাসছে। দেখেই রাহাতের উপরে মেজাজটা আরো বেশি খারাপ হলো মায়ার। এটা কোন কথা!! এভাবে পাগলের মতো চেঁচাচ্ছে কেন লোকটা!!
-মায়া? দেখ গিয়ে জামাইয়ের কিছু লাগবে কি না–।
-মা–এদিকে অনেক কাজ পড়ে আছে—।
-পাজি মেয়ে–। আমাকে কাজ দেখাস না–। এদিকটা আমরা দুজনে সামলে নিব–। তুই এখন রুমে যা–। না পারলে তোকে ডেকে নিব খন—। যা এখন–।
মায়া রাগে লাল হয়ে রুমে আসতেই দেখল রাহাত শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে এখনো চেঁচিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। মায়া একটু জোরে দরজাটা বন্ধ করে খাটের সামনে এসে কটমট করে রাহাতের দিকে তাকালো। এই লোকের আজকে খবর আছে। এসব ভাবছে তার মাঝেই রাহাত মায়ার একটা হাত টেনে একেবারে বিছানায় ফেলে আষ্টেপৃষ্টে মায়াকে বুকে জড়িয়ে নিলো। মায়া পুরো থতমত খেয়ে গেল রাহাতের এমন কাজে।।
-কি শুরু করেছেন??
-ঘুমাবো–। ঘুম পাচ্ছে—–।
-তো ঘুমান না?? এতো চেঁচাচ্ছেন কেন??
-তুমি তো আসছিলে না—।। তোমাকে ছাড়া ঘুম আসবে না–।।
-উফফফ—–।। বিরক্তিকর একটা লোক—-।।
-এখন কোন দুষ্টুমি না–। বুঝসো?? আমি ঘুমাই–। তুমি চুলে বিলি কেটে দাও।
-কাজ নেই আমার আর—-।।
-অতো কাজ থাকতে হবে না—। ঘুমের ডিস্টার্ব করলে মজা টের পাবে—। সো জাস্ট লেট মি স্লিপ–। ওকে জান??
—————————
মায়ার চুপ থাকা দেখে রাহাত হেসে মায়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মায়ার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজলো। একটু পর টের পেল মায়াও আলতো হাতে ওর চুলে হাত বুলাচ্ছে। রাহাতের ঠোঁটের কোণের হাসিটা আরো চওড়া হলো। এভাবে একটু একটু করে সে তার মায়াবতীর মনের কোণে জমা সবটুকু অভিমানের বরফ গলিয়ে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে একদিন।।
চলবে
,
#মায়াবতী♥♥♥♥♥
#পর্ব_২৩
#সুলতানা_পারভীন
পরের চারটা দিন শ্বশুরবাড়িতে বেশ ভালোই কেটেছে রাহাতের। সারাদিন এটা ওটা নিয়ে মায়ার পিছনে খুনসুটিতে লেগে আছে রাহাত। আর রাতে?? রাতে মায়াকে জ্বালাতন করছে। মায়া না পারে রাহাতকে বাধা দিতে, না পারে নিজের মনের খচখচানি ভুলতে। রাহাতও সেটা বেশ বুঝতে পারে। তাই নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে তার মায়াবতীর মনের সবটুকু ভয় ভুলিয়ে নতুন করে নিজের জায়গাটা দখল করতে।
মায়ার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে গত চারটা দিনের কথা ভাবছে রাহাত। মেয়েটা ওর বুকে চুপ করে শুয়ে আছে। এখন আর একটুও ছোটার জন্য ছটফট করছে না। শান্ত হয়ে বুকে মুখ ডুবিয়ে নিজের মতো করে কি যেন ভাবছে। রাহাত ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে মায়াকে দেখছে। কি মনে হতেই মায়াকে আরো নিবিড় করে বুকে চেপে ধরলো রাহাত। মায়া রাহাতের মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে এই লোকের মনে নতুন কি দুষ্টুমি খেলা করছে।
-মায়াবতী??
-কি??
-বিয়েটা হলো দুটো বছর পেরিয়ে গেছে না?
—————————
-এখনো তো তুমি নিজে থেকে আমার কাছে ধরা দিলে না?? কাহিনী কি??
-কিসের কাহিনী?? আর শুনুন বিয়ের যেমন দুই বছর পার হয়ে গেছে তেমনি আপনার সাথে সেই বিয়েটা শেষ হওয়ারও দশটা দিন পেরিয়ে গেছে—-।।
-কি সব বলছ?? তোমার আমার বিয়ের বাঁধনটা কি এতই ঠুনকো মায়াবতী যে বললেই সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে? নাকি আমরা কাঁচা বয়সী প্রেমিক প্রেমিকা? আর তুমি রাগ করে ব্রেকআপ বলে দিলেই সব একেবারের জন্য শেষ হয়ে যাবে?? পাগলি আমাদের সম্পর্কটা যতখানি ভালোবাসার ঠিক ততখানি স্বামী-স্ত্রীর–। এই জীবনে এই বন্ধনটা কখনো ভাঙবে না গো মায়াবতী–।
-যে সম্পর্কের বাঁধনের এতো বড় বড় কথা বলছেন সেটার ভাঙনের দলিল হিসেবে ডিভোর্স পেপারে তো সাইনটা করে মুক্তি দিয়ে এসেছি আপনাকে। কোন রকম বাঁধনে আর আপনাকে বাঁধা থাকতে হবে না—-।।
রাহাত মায়ার রাগী মুখটা দেখে হেসে হাত দুটোর বাঁধনটা আলগা করে দিল। মায়াও উঠে বসে রাহাতের দিকে পিঠ করে খাটে পা ঝুলিয়ে বসে চোখের পানিটা মুছে নিল। রাহাত মায়ার পিঠের আলতো কাঁপন দেখে বুঝতে পারছে মেয়েটা কাঁদছে৷ মেয়েটা ভাঙবে তবু মচকাবে না। এতো জেদ ধরে বসে থাকলে চলে? অবশ্য দোষটা যেহেতু রাহাতের তাই সেটা ঠিক করার দায়টাও তার৷ সেটা ভেবে রাহাত খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসলো। আলতো করে মায়ার কাঁধে হাত রাখলো।
-একটা সাইন তোমার আমার সম্পর্কটা বদলে দিতে পারে না মায়া। আর মুক্তি তুমিও চাও না। আমিও চাই না। তবে জেদ করছ কেন? যতটা না ঘৃণা করো তার চেয়েও হাজার লক্ষ গুণ তো বেশি ভালোবাসো পাগলি–। সেটা কি আমি বুঝি না??
-হারিয়ে বুঝে কোন লাভ হয় না মিস্টার রাহাত। আর তো কয়টা দিন মাত্র—-।।
-কিসের কয়টা দিন??!
-কিছু না—। আপনি প্লিজ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবেন–।। এভাবে অহেতুক একটা বাঁধন শিকলের মতো গলায় ঝুলিয়ে রেখে আর কি করবেন?? ভয় নেই অর্ধেক সম্পত্তি ক্লেইম করতে কোর্টে কেস ফাইল করব না–। হাজার হোক– ছয়মাস হলেও আপনার চাকরি করেছি-দু বছর সংসার করেছি–।
-মায়া??
রাহাত এবারে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না৷ মায়াকে পিছন থেকে জাপটে ধরে পাগলের মতো কেঁদে ফেললো৷ এই মেয়েটার সমস্ত অবহেলা সে সহ্য করতে পারবে ঠিকই। কিন্তু এই একটা কথা সে কিছুতেই মানতে পারবে না। শুনতেও পারবে না।
-কেন বলছ এসব?? সরি তো বউ?? জানি আমার দোষেই তোমাকে এতোটা পাথর হতে হয়েছে–। কিন্তু একবার বিশ্বাস করো প্লিজ?? আর কখনো——–।।
-বিশ্বাস?? এই শব্দটা আমার জীবন থেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে রাহাত। তুমি হাজার চেষ্টা করলেও বিশ্বাস আর তোমাকে কখনো করতে পারব বলে মনে হয় না। আর এক বুক অবিশ্বাস নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।
-আচ্ছা যাও–। বিশ্বাসও করতে হবে না। জাস্ট একটা সুযোগ দাও আমাকে প্লিজ?? একটা বার আমাকে শোধরানোর সুযোগটা দাও প্লিজ??
-ঠিক আছে দিলাম—। এখন সরুন—।। ছাড়ুন—। কাল বাদে পরশু ভাইয়ার গায়ে হলুদ–। বহু কাজ আছে সকালে—।
-হুম—-।।
মায়ার থেকে সরে এসে চোখ মুছে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো রাহাত। মায়াও রাহাতের পাশে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো। এতো কাছে থেকেও রাহাতের মায়াকে বুকে টেনে নিতে ইচ্ছে করলেও কোন এক অদৃশ্য অপরাধবোধ তাকে কাজটা করতে দিচ্ছে না। মায়া বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে চলে গেল। মায়ার বিছানা ছেড়ে চলে যাওয়া টের পেয়ে রাহাতও উঠে বসলো। মেয়েটা এখন এতো রাতে কোথায় গেল? ভাবতেই চোখ পড়ল খোলা বারান্দার দরজার বাইরে। খাটে বসে থেকেও মায়ার আবছা অবয়বটা দেখতে পাচ্ছে রাহাত। হালকা ফুরফুরে বাতাসে মায়ার শাড়ির আঁচল উড়ছে, চুল উড়ছে। ব্যাপারটা একেবারে জাদুর মতো টানছে রাহাতকে মায়ার দিকে।
ধীরে ধীরে বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে মায়াকে পিছন থেকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাহাত। তারপর আলতো করে মায়ার চুলে মুখ ডুবালো। মায়া একটু কেঁপে উঠলেও কিছু বললো না। বাইরের অন্ধকার পৃথিবী দেখায় মন দিলো।
-মায়া??
-হুম??
-একটা গান শুনবে??
-শোনাও—-।।
রাহাত আলতো করে মায়ার চুলে চুমো খেয়ে হালকা গলায় গান ধরলো।
-“চলনা দুজন আজ নীলিমা ছুয়ে ভালবাসি
বৃষ্টি ধারার মত জোছনা নিয়ে নীরবে কাছে আসি
বলনা তুমি সেই না বলা কথা গানে গানে
ওই নীল আকাশ ওই দখিনা বাতাস
আমাকে কাছে টানে
অভিমানী ভালবাসা চায় যে হারাতে
ওই দূর অজানাতে
তুমি আমি ভেসে যাব মেঘলা বাতাসে
এই হাত রেখে হাতে…
চাঁদ কি জানে তুমি চাঁদের ই মত
মন জানে না মন ছুয়েছো কত
বললে তুমি আর কবিতা হলো
যায় হারিয়ে তুমি যে পথে চল
এসোনা হৃদয়ে তুমি
অচেনা শ্রাবনে আমি
অভিমানী ভালবাসা চায় যে হারাতে
ওই দূর অজানাতে
তুমি আমি ভেসে যাব মেঘলা বাতাসে
এই হাত রেখে হাতে…
মেঘলা চোখে আমি তাকিয়ে রব
স্বপ্ন হয়ে আজ তোমাকে ছোব
বৃষ্টি গুলো আজ তোমারি ছবি
পথ ভুলেছি আর ভুলেছি সব ই
এসোনা হৃদয়ে তুমি
অচেনা শ্রাবনে আমি
অভিমানী ভালবাসা চায় যে হারাতে
ওই দূর অজানাতে
তুমি আমি ভেসে যাব মেঘলা বাতাসে
এই হাত রেখে হাতে…”
মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গানের প্রত্যেকটা শব্দ গাইছে রাহাত। মায়ারও চোখের পানিরা বাঁধ ভাঙছে। গানটা শেষ হওয়ার পরও দুজনে সেভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কোন কথা হলো না দুজনের। শুধু চুপচাপ একে অন্যকে অনুভব করতে লাগলো।
চলবে
,
#মায়াবতী♥♥♥♥♥
#পর্ব_২৪
#সুলতানা_পারভীন
সকালে মোবাইলটা সশব্দে বেজে উঠে রাহাতের ঘুমটা ভেঙে দিল। তড়িঘড়ি করে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে মায়ার দিকে তাকালো রাহাত। মেয়েটা গুটিসুটি মেরে একেবারে রাহাতের বুকের ভিতরে সেঁধিয়ে ঘুমাচ্ছে। রাহাত হেসে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। অনেক রাত পর্যন্ত জেগেছিল ওরা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের নিশুতি রাতের নিস্তব্ধতার সাথে একে অপরকে অনুভব করেছে নিরবে। শেষ রাতের দিকে রাহাত যখন মায়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিয়েছে তখনও একদম চুপ ছিল মায়া। মায়ার এই নিরবতা বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে রাহাতকে। মেয়েটা আবার কি প্ল্যানিং করছে কে জানে!! এবার আর মায়াবতীটাকে কিছুতেই হারাতে দিবে না রাহাত। প্রয়োজনে সব ছেড়ে ছুঁড়ে মায়ার সামনেই বসে থাকবে সারাক্ষণ। ভাবতেই হাসি পেল রাহাতের।
এসব ভাবছে এর মধ্যে রাহাত খেয়াল করলো আবার কল আসছে। দিহান এতোবার কেন কল করছে বুঝতে পারছে না রাহাত। মায়াকে আস্তে করে বালিশে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো রাহাত। কলটা রিসিভ করে কানে লাগালো মোবাইল।
-হ্যাঁ দিহান?? বলো??
-স্যার?? আপনি কোথায় এখন??
-শ্বশুরবাড়িতে—।।
-ম্যামের রাগ কমেছে স্যার??
—- কমে নি। তবে আমি চেষ্টা করছি—-।।
-স্যার—। একটা কথা ছিল–।
-হুম—। বলো??
-স্যার—। আজকে সন্ধ্যা ছয়টায় এন. আর. পি. ইন্ডাস্ট্রির সাথে আপনার প্রজেক্টটা নিয়ে একটা মিটিং ছিল—।
-হোয়াট!!!! আজকে!!!
-জি স্যার–। এ্যাকচুয়েলি উনারা কনফার্মেশনের জন্য মেইল করেছিল–। আমি সেটা দেখে লিজাকে জিজ্ঞেস করায় ও বললো—।
-শিট শিট শিট!!!
-জি!! কি হয়েছে স্যার?? এনি প্রবলেম??
-মিটিংটা অনেক আর্জেন্ট ছিল–। মাসখানেক আগেই ডেট ফিক্স করা হয়েছিল—। শিট—।
-স্যার–মিটিংয়ে এখনো অনেক দেরি–। সবে ১০ টা বাজে–।
-কোম্পানিটা এখানে ঢাকায় না দিহান—। চট্টগ্রামে—-।।
-স্যার–। ফ্ল্যাইটে চলে যাবেন–।। ৪০-৫০ মিনিট লাগবে হয়তো বড় জোর। আমি টিকিট ম্যানেজ করছি–। ম্যামকে নিয়ে ঘুরেও আসলেন—মিটিংও সেরে ফেললেন–।
-পসিবল না রে ভাই–।। আগামীকাল মায়ার ভাইয়ের গায়ে হলুদ–। পরশু বিয়ে—। আহ—-।। শিট—।
-স্যার?? রিল্যাক্স—-।। প্লিজ?
-আম—। বাদ দাও দিহান–। মিটিংটা ক্যানসেল করে দাও—।
-বাট স্যার?? ওটা নাকি আপনার ড্রিম প্রজেক্ট ছিল—।
-ছিল রে ভাই—-। প্রজেক্টটা অন্য কেউ হেন্ডেল করলে হয়তো এতো ভাবতে হতো না–। গেলে আমাকেই যেতে হবে–। আর এই মূহুর্তে আমি কিছুতেই যেতে পারব না–। অসম্ভব–।
-স্যার?? বড় স্যার সামাল দিতে পারবেন না ব্যাপারটা?? বা লিজা? বা অন্য কেউ—-।
-না দিহান –। প্রজেক্টটা আমি প্রায় একাই করেছি–। অন্য কেউ উনাদের ক্লিয়ার করে প্রেজেন্ট করতেই পারবে না—। বাদ দাও–।
-স্যার??
-বাদ দাও—। মন খারাপ করো না দিহান–। অন্য কোন কোম্পানিতে ট্রাই করব পরে–।
রাহাত এতোটা অন্যমনস্ক হয়ে কথা বলছিল বলে যে পিছনে আরেকজনের উপস্থিতি টেরই পায় নি। তাই পেছন থেকে মোবাইলটা কেউ টেনে নিতেই রাহাত চমকে উঠে পিছনে তাকালো। মায়াকে দেখে অবাক হয়ে গেল। মায়া মোবাইলটা কানে লাগালো।
-মায়া???
-হ্যালো?? আসসালামু আলাইকুম। দিহান সাহেব আপনি টিকেট বুক করুন–। উনি যাবেন—।
-আসসালামু আলাইকুম ম্যাম–।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।।
মায়া কল কেটে মোবাইলটা রাহাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেল। রাহাতও মায়ার পিছন পিছন রুমে এসে মায়াকে টেনে ধরে খাটে বসিয়ে দিয়ে নিজে মায়ার সামনে ফ্লোরে বসে হাত ধরলো মায়ার।
-পাগল হলে?? আমার যাওয়া পসিবল না আজকে—।
-কেন?? এটা তো তোমার ড্রিম প্রজেক্ট–। এতোগুলো দিন তুমি এই প্রজেক্টে কাজ করার জন্য ওয়েট করেছ রাহাত–। সব ছেড়ে ছুঁড়ে দিয়ে—।।
-মায়া?? কেন বুঝতে পারছ না??
-কি সমস্যা বলো আমাকে!! বুঝাও শুনি—।
-মায়া–। মিনিমাম তিনদিনের কাজ ওখানে—। এখন কিছুতেই–।
-রাহাত?? ভাইয়ার বিয়েতে তুমি না থাকলে হয়তো মনটা খারাপ হবে একটু–। কিন্তু তুমি তোমার ড্রিম প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করতে পারলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব আমি—।
-মায়া???
-প্লিজ?? না করো না—।
————————-
-তুমি না ফিরা পর্যন্ত সত্যি কোথাও যাব না—। প্রমিস—।
-মানে!! ফিরলে কোথায় যাবে??
-উফফফফ—। বললাম তো ভয় নেই–। কাজটা কমপ্লিট করে এসে আমাকে দেখতে পাবে–। চিন্তা করো না।।
-ভয় করছে মায়া—। তোমার থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও দূর হতে মন টানছে না—। মনে হচ্ছে আবার যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি—-!!
-এতো ভেব না প্লিজ?? আমি আছি তো—। তুমি কাজ সেরে জলদি চলে এসো—-।।
-হুম—-।।
-এখন যাও–। প্যাকিং করা লাগবে না?? বাড়ি যাও—-।।
-আরে ধুর—–। এতো প্যাকিং করা লাগে?? চট্টগ্রামে বহু শপিং মল আছে–। ওখান থেকে কিনে নেয়া যাবে—-।।
-তোমার ফাইল-প্রেজেন্টেশন–। এগুলো নিশ্চয়ই কিনতে পাওয়া যাবে না–। বাসায় যেতেই হবে–। তাই না??
-তুমি তো যাবে না–। আমি গিয়ে কি করবো বলো???
—————————
-তোমার এই চুপটি করে থাকা বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে আমাকে মায়াবতী–। যত ইচ্ছে বকো–। ঝগড়া করো–। তবুও প্লিজ কথা বলো??
-ফিরে এসো তাড়াতাড়ি–। আমি অপেক্ষা করব তোমার ফিরার–।।
রাহাত, দিহান আর লিজা তিনজনের একটা টিম করে চট্টগ্রামে গেল। মিটিং প্রেজেন্টেশনের কাজ শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে এলো রাহাত। এতো তাড়াহুড়ো করেও রাহাতের কাজ শেষ হতে হতে আর ফিরতে ফিরতে বিয়ের দিন সন্ধ্যা হয়ে গেল। বিয়ের ভ্যেনুতে এসেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল রাহাত।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here