মিস্টার সিনিয়র পর্ব -০৮

#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৮
®ফিহা আহমেদ

“আপনি ঠিক আছেন সিনিয়র? (পরশি চিন্তিত হয়ে বললো)

পরশির কথায় জোভান পরশির দিকে তাকালো।তারপর হালকা হেসে বললো,,,,,

“আমি ঠিক আছি মিস জুনিয়র” ।

পিছন থেকে নিহান বলে উঠলো,,,,

“মোটে ও তুই ভালো নেই চল হাসপাতালে নিয়ে যাব।পিঠে মারাত্মক ব্যথা পেয়েছিস তুই” ।

“সেরে যাবে নিহান” । (জোভান)

“বললেই হবে নাকি” । (নয়ন)

নয়ন আর নিহান জোভানকে ধরে উঠালো।

“আরে কি করছিস তোরা ছাড় তো আমার ব্যথা নেই।আমি হাসপাতাল যাব না” । (জোভান কিছুটা রেগে বললো)

“কিন্তু” (নিহান)

“বললাম তো যাব না” । (জোভান)

পরশি এসে জোভানের সামনে দাঁড়ালো। তারপর বললো,,,,,

“কেন যাবেন না যেতে হবে চলুন আমি ও আপনার সাথে হাসপাতালে যাব।আপনার ব্যথার চিকিৎসা নেওয়া জুরুরি” ।

পরশি কথায় জোভান আর কিছু বলতে পারলো না।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,,,,

“তুমি আমাদের সাথে হাসপাতাল গেলে তোমার ওই কুটনী দাদী তোমায় আবার মারবে” ।

“আমি বুঝে নিব। এখন চলুন” । (পরশি)

জোভান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো,,,,,

“ঠিক আছে চল সবাই” ।

_____

~ “হাসপাতালে”

ডাক্তার জোভানকে দেখার পর বললো,,,,,

“পিঠে তো হকিস্টিকের দাগ পড়ে গেছে জোভান।কেন ঝামেলায় জড়াতে গেলে। অন্য উপায়ে তাদের শায়েস্তা করতে তোমার বাবা জানতে পারলে তোমায় বকাঝকা করবে”।

জোভান ডাক্তার আয়ানের কথায় কিছু বললো না।জোভানকে চুপ থাকতে দেখে ডাক্তার আয়ান জোভানের কাঁধে হাত রেখে বললো,,,,,

“মেয়েটিকে ভালোবাস তুমি ?

ডাক্তার আয়ানের কথায় জোভান চমকে উঠলো জোভান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে মুচকি হেসে বললো,,,,,

“I don’t know but I fell in love with him” . (“আমি জানিনা কিন্তু তার মায়ার পড়ে গেছি”)

“Got it Jovan” . (“বুঝতে পেরেছি জোভান”)

ডাক্তার আয়ান চলে গেল কেবিন থেকে। ডাক্তার আয়ান যেতেই একজন সুন্দরী নার্স কেবিনে প্রবেশ করলো।নার্সের সাথে পরশি,নয়ন আর নিহান ও আসলো। নার্স জোভানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ব্যাপারটা পরশি লক্ষ্য করেছে।রাগে পরশির চোখমুখ লাল হয়ে গেল। পরশি নার্সের কাছে এসে বললো,,,,

“এখানে কি চাই আপনার ?

“ডাক্তার আয়ান বলেছে মিস্টার জোভানকে Ointment লাগিয়ে দিতে”। (নার্স)

“কিহ্” (পরশি হালকা চিৎকার করে বললো)

পরশিকে হঠাৎ চিৎকার করতে দেখে নার্স ভয় পেয়ে গেল।

“কি হয়েছে পরশি ? (নয়ন পরশির কাছে এসে বললো)

“আপু ও বলছে মিস্টার সিনিয়রের পিঠে Ointment লাগিয়ে দিবে”। (পরশি)

“নার্সের কাজ তো নার্সকে করতেই হবে তাই না। চিৎকার করার কি আছে”। (নয়ন)

জোভান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পরশি ছাড়া সবাইকে কেবিনের বাহিরে চলে যেতে বললো।পরশি ও তাদের সাথে চলে যেতে নিবে পিছন থেকে জোভান বলে উঠলো,,,,

“তোমায় যেতে বলেছি মিস জুনিয়র” ।

“আমি এখানে কি করব? (পরশি আমতাআমতা করে বললো)

“তোমায় আমি বসিয়ে রাখার জন্য থাকতে বলিনি।আমার কাছে আসো” । (জোভান)

পরশি ধীরে পায়ে হেঁটে জোভানের কাছে এসে দাঁড়ালো।জোভান পরশির হাতে Ointment দিয়ে পরশির দিকে পিঠ দিয়ে বললো,,,,,

“লাগিয়ে দেও” ।

জোভানের কথায় পরশি কিছুটা চমকালো সাথে লজ্জা ও পেল।

“আ,,,,আমি দিতে পারব না” । (পরশি)

পরশির কথায় জোভান পরশির দিকে ফিরলো। তারপর বললো,,,,,

“তাহলে আর কি ওই সুন্দরী নার্সকে ডেকে দেও নার্স লাগিয়ে দিবে। তুমি যেতে পারো” ।

জোভানের কথা শুনে পরশির মনে মনে রাগ হলো। পরশি হালকা রাগ দেখিয়ে আমতাআমতা করে বললো,,,,,

“আ,,,,আমি লাগিয়ে দিব” ।

“তুমি না বললে পারবে না” । (জোভান কোনোরকমে হাসি আঁটকে রেখে কথাটি বললো)

জোভান ইচ্ছে করে কথাটি বলেছে পরশিকে রাগানোর জন্য।

“এ,,,,,এমনি মজা করে বলেছি” । (পরশি)

“তাহলে ঠিক আছে লাগিয়ে দেও” । (জোভান)

বলে জোভান আবার পিঠ দিল পরশির সামনে।পরশি কাঁপা কাঁপা হাতে Ointment লাগানো শুরু করলো।ক্ষতস্থানে Ointment লাগতেই জোভান হালকা চিৎকার দিয়ে বললো,,,,,

“আহ্”

“আপনি ঠিক আছেন বেশি জ্বালা হচ্ছে”। (পরশি বিচলিত হয়ে বললো)

“না ঠিক আছে” । (জোভান)

পরশি ফুঁ দিয়ে দিয়ে Ointment লাগিয়ে দিচ্ছে জোভানের পিঠে।আর জোভান চোখ বন্ধ করে মুহূর্তটি অনুভব করছে।

“হয়ে গেছে এবার আমি যাই। দেরি হলে দাদী অনেক বকবে” । (পরশি)

জোভান পরশির দিকে কয়েক মিনিট তাকিয়ে থেকে বললো,,,,,

“যাও। সাবধানে বাড়ি যেও মিস জুনিয়র” ।

পরশি মুচকি হেসে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

_____

পরশি বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই দেখলো মেহমান বসে আছে ড্রয়িং রুমে।

“মেহমান আসবে দাদী যে আমায় কিছু বললো না।তার মানে জেঠী আম্মা ও আজ বাড়িতে” । (পরশি মনে মনে বললো)

পরশি নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে যেতে নিবে তখন পিছন থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো,,,,

“তুমি কে মা?

মহিলার কথায় পরশি পিছনে তাকালো। পরশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস শিখা বলে উঠলো,,,,,

“ও তো ইয়ানার বান্ধবী পরশি” ।

মিসেস শিখার কথায় পরশি অবাক হলো।

“ওর কি বিয়ে হয়ে গেছে?

“হ্যাঁ ওর বিয়ে হয়ে গেছে আর দু’বছরের একটা বাচ্চা ও আছে” । (মিসেস শিখা হেসে হেসে মহিলাটিকে বললেন)

আর পরশি অবাক হয়ে দেখছে নিজের দাদীকে কিন্তু কিছু ই বললো না।সোজা নিজের রুমে চলে গেল।

(ইয়ানাকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে সকাল এগারোটায়। ছেলেপক্ষের ইয়ানাকে পছন্দ হয়েছে। সবকিছু ঠিক করতে করতে দুপুর দুটা বেজে গেছে। তখন পরশি ও বাড়ি আসলো।ইয়ানার বিয়ে যেন না ভেঙ্গে যায় পরশির কারনে তার জন্য মিসেস শিখা পাএের মাকে মিথ্যা কথা বলেছে)

_____

পরশি মিসেস শিখার কথাগুলো বার বার মনে করছে আর হেসে যাচ্ছে নিজের রুমে এসে।

“বাহ্ ভালোই অভিনয় করতে পারো দাদী।তুমি তো অভিনয়ে যোগ দিতে পার। যাক তা ও যেন ইয়ানা আপুর বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে যায়।আমি সবকিছু দূরে থাকাই ভালো। পরে কিছু হলে সব আমার ঘাড়ে এসে পড়বে”। (পরশি)

পরশির ভীষণ ইচ্ছে করছিল মিসেস লিমা সিকদারের সাথে দেখা করার।অনেকদিন তার জেঠী আম্মাকে জড়িয়ে ধরেনি পরশি। কিন্তু নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে পরশি বোরখা খুলে হাওয়া খেতে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে জোভানের সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করলো।

“আপনি কি আপনার মিষ্টি পরীকে ভুলে গেলেন জোভান ভাইয়া। কি এমন হয়েছিল সেদিন এক্সিডেন্টের পর যে আঙ্কেল – আন্টি ও আমার খোঁজ নিলো না”।

হঠাৎ করেই পরশির মনটা খারাপ হয়ে গেল। পরশি রুমে এসে খাটের ওপর বসতেই পড়ার টেবিলের ওপর চোখ পড়লো।

টেবিলের ওপর চোখ পড়তেই পরশির কালকের ঘটনাটা মনে পড়লো।পরশি পড়ার টেবিলের ওপর থেকে ঘড়িটি হাতে নিল।ঘড়িটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে মনে করার চেষ্টা করছে ঘড়িটা সে কোথায় দেখেছে। ঠিক তখনই আহাদ সিকদার পরশির রুম ডুকতে ডুকতে বললো,,,,

“পরশি মা আমার ঘড়ি তোর কাছে কেন ?

পরশি চমকে উঠলো আহাদ সিকদারের কথায়।ভয়ে পরশির পুরো শরীর কাঁপা শুরু করলো।

আহাদ সিকদার পরশির হাত থেকে ঘড়িটি নিয়ে পরশির পাশে বসলো। তার পর বললো,,,,

“জানিস এই ঘড়িটি তোর দাদা আমার জন্মদিনে গিফট করেছিল।কিছুদিন আগে ঘড়িটি আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তুই কোথায় ফেলি আমার ঘড়ি? (আহাদ সিকদার অবাক হয়ে বললো)

পরশি ভয় পেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,,,,,

“র,,,,রাস্তায়”

আহাদ সিকদার আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস লিমা পরশির রুমে ডুকতে ডুকতে বললো,,,,,

“পরশি মা নিচে চল সবার সাথে খাবার খাবি”৷

পরশি কিছু না বলে চুপ করে বসে আছে। আহাদ সিকদার বসা থেকে ওঠে বললেন,,,,

“আমি যাচ্ছি তুমি পরশিকে নিচে নিয়ে এসো”।

“ঠিক আছে যাও” । (মিসেস লিমা)

“চুপ করে বসে আছিস যে চল নিচে যাবি”৷ (মিসেস লিমা)

“জেঠী মা আমি কেন্টিন থেকে খেয়ে এসেছি। আসলে অনেক ক্ষুধা লেগেছিল তো তাই” । (পরশি)

“আবার খেতে হবে। চল”। (মিসেস লিমা)

মিসেস লিমা জোর করে পরশিকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসলো।

“এই হলো আমাদের,,,,,

মিসেস লিমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস শিখা বলে উঠলো,,,,,

“ইয়ানার বান্ধবী পরশি”। খেতে বসো তোমার জন্যই বসে আছি আমরা”।

মিসেস শিখার কথায় মিসেস লিমা আর আহাদ সিকদার অবাক হলো। তারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস শিখা তাদের দিকে রাগী চোখ তাকালো।তারা দু’জন চুপ হয়ে গেল। তারপর সবাই একসাথে খাবার খেল।সবাই মেহমানদের বিদায় দিল। আগামী শুক্রবার ইয়ানার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

চলবে…..
_____

(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না বলে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।পাঠক-পাঠিকাদের ভালো রেসপন্স ফেলে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here