#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৯
®ফিহা আহমেদ
পরশি নিজের রুমে চিন্তিত হয়ে পায়চারী করছে।
“কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছি না। জেঠুর ঘড়ি ওই লোকটা কেন চুরি করবে।লোকটাকে তো দেখে মনে হয়না লোকটা গরিব। নাকি জেঠু মিথ্যে বলেছে।নাকি জেঠুই ওই লোকটা। নাকি অন্য কেউ জেঠুকে ফাঁসাতে চাইছে। আর বাচ্চা মেয়েটা এখন কোথায়।ওই মহিলা ই বা কোথায়। রহস্য আর রহস্য। কিভাবে সব প্রশ্নের উওর পাব আমি ? (পরশি)
ইয়ানা পরশির রুমে ডুকতে ডুকতে বললো,,,,
“কি হয়েছে পরশি এমনভাবে হাঁটছিস কেন? আমার বিয়ে হবে তাই তুই চিন্তায় পড়ে গেছিস।
ইয়ানার কথায় পরশি হাঁটা বন্ধ করে দিয়ে ইয়ানার পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,,,,,
“আমার আপুর বিয়ে হবে এতে চিন্তিত হবো কেন আমি৷ আমি তো ভীষণ খুশি আপু” ।
হঠাৎ ইয়ানা পরশিকে জড়িয়ে ধরলো। ইয়ানার কাজে পরশি হতভম্ব হয়ে গেল।
“আপু আমায় জড়িয়ে ধরলে বিশ্বাস ই হচ্ছে না।আচ্ছা ভুল করে জড়িয়ে ধরলো না তো”। (পরশি মনে মনে বললো)
হঠাৎ পরশির মনে হলো পিঠে তরল কিছু পড়ছে।
“আচ্ছা আপু কি কান্না করছে ? (পরশি মনে মনে বললো)
পরশি কাঁপা কাঁপা হাতটা ইয়ানার মাথায় রাখলো। ইয়ানা এবার শব্দ করে কান্না করে দিল।এবার পরশি বিচলিত হয়ে পড়লো।
“আপু তোমার কি হয়েছে কান্না করছো কেন ? (পরশি)
“আমায় মাপ করে দে পরশি আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি”। (ইয়ানা কান্না করতে করতে বললো)
ইয়ানার কথায় পরশি যেন আকাশ থেকে পড়লো।
“আপু তুমি,,,,,
পরশি কিছু বলার আগেই ইয়ানা পরশির ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে ধরে বললো,,,,
“আজ আমি বলব আর তুই চুপ করে সব শুনবি”।
পরশির মাথায় কিছুই ডুকছে না।পরশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
“পরশি আমি আর দাদী মা ইচ্ছে করে তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করতাম না তার বিশেষ কারন ছিলো”।
ইয়ানার কথায় পরশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা বলে উঠলো,,,,
“কোনো কথা নয় চুপ করে সব শুন” ।
পরশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।কথার মাঝে দরজা ধাক্কানোর শব্দ আসলো।ইয়ানা ভয় পেয়ে গেল।
“পরশি আমি তোর রুমে লুকিয়ে পড়ছি।দাদী মা হলে বলবি আমি এইখানে।বাবা-মা হলে বলবি জানিনা। ঠিক আছে”।
“ঠিক আছে আপু” । (পরশি)
পরশি দরজা খুলতেই মিসেস লিমা বললো,,,,,
“পরশি ইয়ানা কোথায় তুই দেখেছিস?
“না জেঠী আম্মা আমি দেখিনি। আপুর রুমে গিয়ে দেখ আছে কিনা”। (পরশি)
“গিয়েছি কিন্তু পাচ্ছি না”। (মিসেস লিমা)
“তাহলে হয়তো ছাঁদে থাকতে পারে”। (পরশি)
“ঠিক আছে আমি ছাঁদে যাচ্ছি তুই কিচেনে গিয়ে রান্নাটা একটু সামলে নে”। (মিসেস লিমা)
“ঠিক আছে জেঠী আম্মা”। (পরশি)
মিসেস লিমা ছাঁদে চলে গেলেন আর পরশি কিচেনে চলে গেল। ইয়ানা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।দু’জন যেতেই ইয়ানা নিজের রুমে চলে আসলো।
_____
“মায়ের এখুনি আসতে হলো। পরশিকে সবটা বলতে পারলে শান্তি লাগতো।যাক পরে সুযোগ বুঝে পরশিকে সবটা বলবো” । (ইয়ানা)
ইয়ানা খাটের ওপর চিন্তিত হয়ে বসে আছে। তখন মিসেস শিখা ইয়ানার রুমে আসলো।
“সবকিছু বলেছিস পরশিকে ইয়ানা ? (মিসেস শিখা)
“না সব বলতে পারিনি তার আগেই মা ওইখানে চলে এসেছে” । (ইয়ানা)
“তোর মা হয়তো বুঝতে পেরে গেছে। এখন যে কাজ করবো তোর বাবা-মাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না” । (মিসেস শিখা)
ইয়ানা মিসেস শিখাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
“দাদী মা এই নরক থেকে কবে মুক্তি পাব?
“সব ঠিক হয়ে যাবে ইয়ানা” । (মিসেস শিখা ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো)
_____
পরশি আনমনে রান্না করছে।পোড়া কিছুর গন্ধ নাকে আসতেই পরশি তাড়াতাড়ি গ্যাস বন্ধ করে দিল।
“কি হলো আমার সবকিছু এমন উল্টাপাল্টা হচ্ছে কেন? জোভান ভাইয়ার শরীর ঠিক আছে তো। ওনার মোবাইল নম্বর আমার কাছে নেই যে খবর নিব” ।
“পরশি আজ-কাল মন কোথায় থাকে তোর তরকারি তো পুড়িয়ে ফেলেছিস” । (মিসেস লিমা কিচেনে প্রবেশ করে বললো)
“আ,,,,আসলে জ,,,,জেঠী আম্মা,,,,, (পরশি)
পরশি আর কিছু বলার আগেই মিসেস লিমা পরশির গালে থাপ্পড় মারলো।পরশি স্তব্ধ হয়ে গেল মিসেস লিমার কাজে।পরশির বিশ্বাস ই হচ্ছে না তার জেঠী আম্মা তাকে থাপ্পড় মারলো।মা মরার পর কোনোদিন জেঠী আম্মা আমায় মারেননি। আর আজ একটু ভুল হতেই জেঠী আম্মা আমায় মারলো। পরশির চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।
“বের হ্ কিচেন থেকে অপয়া মেয়ে একটা।আমার মেয়ের বিয়েতে কোনো অঘটন না হলেই হলো।মেয়েটার বিয়ে হোক তারপর তোকে এ বাড়ি থেকে বিদায় করব। শুধু ওনার জন্য তোকে সহ্য করছি না হলে কবেই তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।আমার সামনে থেকে যা তোর মুখ দেখতে চাই না আমি। (মিসেস লিমা রেগে বললো)
বলে মিসেস লিমা পরশিকে কিচেন রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল।
এতোদিন পরশি সবকিছু সহ্য করলে ও আজকের ঘটনাটা পরশির সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। যাকে মায়ের জায়গায় বসিয়েছিল সে ও তাকে কষ্ট দিলো।পরশি ধীরে ধীরে নিজের রুমে আসলো।পরশি মনের দিক থেকে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। পরশির এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার জেঠী আম্মা আসলে তাকে ভালোই বাসেনি তাহলে এতদিন ভালোবাসার নাটক করলো কেন আমার সাথে। পরশি এইসব ভেবে কান্না করতে থাকে।
মোবাইল বাজার শব্দে পরশি নড়েচড়ে ওঠে মেবাইল খুঁজতে লাগলো।তারপর বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করলো।
“অপরিচিত নম্বর” । (পরশি)
ফোন রিসিভ করবে কিনা ভাবছে।বার বার ফোন আসছে একই নম্বর থেকে। পরশি ফোন রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে বলে উঠলো,,,,
“মিস জুনিয়র একটু বাড়ির বাহিরে আসো আমি দাঁড়িয়ে আছি” ।
“মিস্টার সিনিয়র আপনি” । (পরশি অবাক হয়ে বললো)
“আমার হাতে সময় বেশি নেই নিচে আসো দ্রুত” । (জোভান)
“ঠিক আছে আসছি” । (পরশি)
পরশি দ্রুত বাড়ির গেইটের সামনে আসলো।জোভান, নয়ন, নিহান আর জিহা দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সবাইকে দেখে পরশি কিছুটা অবাক হলো।
“আপনারা” (পরশি)
“চলো” (জিহা পরশির হাত ধরে বললো)
“এই সন্ধ্যাবেলা কোথায় যাব ? (পরশি আশ্চর্য হয়ে বললো)
“আমাদের সাথে গেলেই বুঝতে পারবে” । (জোভান)
জিহা পরশির হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে গেল। পরশি ও বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসলো। এক ঘন্টা গাড়ি ড্রাইভ করার পর একটা বড় বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।
‘
চলবে…..
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
‘
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না বলে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।পাঠক-পাঠিকাদের ভালো রেসপন্স ফেলে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]