মুগ্ধতায় তুমি পর্ব ২২

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২২
#Saiyara_Hossain_Kayanat

—”আর কতদিন এভাবে পালিয়ে যাবি আমার কাছ থেকে অনন্য?”

আমি কিছু না বলে হাত ছাড়ানো চেষ্টা করছি। কিন্তু উনি ছাড়ছেন না তাই আমি পিছন না ফিরেই আমতা-আমতা করে বললাম-

—”হাত ছাড়ুন শুভ্র ভাই কেউ এসে পরবে।”

আমার কথা শুনে উনি উচ্চস্বরে হাসতে লাগলেন। আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”হাসছেন কেন আমি কি কোনো জোকস বলেছি না-কি!!”

উনি হাসি থামিয়ে আমার কানে ফিসফিস করে বললেন-

—”তোমার কি মনে হয় এই মুগ্ধ প্রেমিক লুকিয়ে লুকিয়ে তার মুগ্ধতার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!! এই শুভ্রর শহরে অলিগলিতে সবটা জুরে এই অনন্যময়ির মুগ্ধতা ছেয়ে আছে তা কি করে গোপন থাকে বল তো!!”

আমি কিছু না বলে ওনাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে আমার থেকে দূরে সরিয়ে সাথে সাথেই চলে আসলাম শুভ্র ভাইয়ের ভাইয়ের রুম থাকে। এই লোকটা এতো কাব্যিক কথা বলে কিভাবে?? ওনার কথা গুলো ভেবে আনমনেই হেসে ফেললাম।

———————

রাত আটটা বাজে রাস্তা প্রায় কেপে উঠছে বার বার এই অসভ্য গুলোর হাসির শব্দে। এতো গুলো ছেলেদের মাঝে আমি একা একটা নিস্পাপ মেয়ে। মাঝে মাঝে খুব করে একটা বোনের জন্য আফসোস করি। এতো গুলা কাজিনদের মধ্যে একটা মেয়ে হলে কি এমন দোষের হতো!! তবে এই ভাই গুলাও আমার সাথে অনেক ফ্রী।

আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে এদের হাসি দেখে। একটু পর পরই ঝংকার তুলে হেসে উঠছে এরা। আর তাদের এই হাসির একমাত্র কারন হলাম আমি। ভাইয়া ওদেরকে বলছে রাতবিরেত আমার মতো পেত্নীর সাথে বাহিরে ঘুরাঘুরি তাদের জন্য খুব বিপদজনক। আর এটা শুনেই আবির,স্মরণ, শুভ্র ভাই আর সাইফ ভাইয়া হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। একপর্যায়ে রেগেমেগে ভাইয়ের পিঠে এক থাপ্পড় দিয়ে বললাম-

—”শাকচুন্নির মতো বত্রিশ দাঁত বের করে হাসতে থাক তোরা। আমি যাবো না তোদের মতো অসভ্যদের সাথে আমি গেলাম।”

এই কথা বলেই উল্টো পথে হাটা শুরু করলাম। সাথে সাথেই সাইফ ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বললেন-

—”অনি রাগ করিস না প্লিজ আমরা তো একটু মজা করছিলাম। এই দেখ কান ধরে সরি বলছি।”

একথা বলে সাইফ ভাই বেবি ফেস করে আমার দুই কান ধরেই সরি বললেন। ওনার এরকম বাচ্চামো দেখে আমি সাথে সাথেই ফিক করে হেসে দিলাম। বাকি সবাই হাসছে তবে শুভ্র ভাই কেমন যেন গম্ভীর হয়ে আছে।

————————

সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে হাটছি৷ এমন সময় কোথা থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে সাইফ ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে নেকামো কিরে বললেন-

—”হাইই সাইফ.. কেমন আছো তুমি?”

আমরা সবাই বিস্ময়ের দৃষ্টিতে সাইফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। সাইফ ভাইয়ের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। উনি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললেন-

—”আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

মেয়েটা আবারও নেকামোর সুরে বললো-

—”তুমি এখানে কখন আসলে আমাকে বললেই আমরা এক সাথে আসতে পারতাম।”

উফফ মেয়েটার এমন নেকা নেকা কথা শুনে প্রচুর বিরক্ত লাগছে আমাদের সবার। আমি সাইফ ভাইয়ার শার্টের হাতায় একটু টান দিয়ে আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে কানে কানে জিজ্ঞেস করলাম-

—”ভাইয়া এই নেকামোর ডিব্বাটা কে?”

সাইফ ভাই ফিসফিস করে বললেন-

—”আর বলিস না অনি এই লুচু মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে খায়। বার বার রিজেক্ট করার পরেও পিছু ছাড়ে না। তুই কিছু একটা করে আমাকে বাচিয়ে দে বোন।”

আমি কিছুটা ভেবে ওনার কাধে হাত রেখে আস্বস্ত করলাম।

মেয়েটা আমাদেরকে এভাবে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলো-

—”এই পিচ্ছি মেয়েটা কে৷ সাইফ?”

আমি সাইফ ভাইয়ার এক হাত জরিয়ে ধরে বললাম-

—”ওনার বউ”

আমার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আর সাইফ ভাইয়া তো বিষম খেয়ে কাশছেন। আমি কিছুটা আমতা-আমতা করে বললাম-

—”না মানে আসলে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে এখন প্রেম করছি। তাই আপনি আর ওনাকে ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ। কিরে ভাইয়া কিছু বল তুই তোর বোনের জামাইকে এভাবে বিরক্ত করা কি ঠিক হচ্ছে?”

ভাইয়া কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে জোরালো কন্ঠে বললো-

—”নাহ একদমই ঠিক না।”

মেয়েটা আমাদের কথায় গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ করে শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো-

—”আপনি কি সিঙ্গেল ভাইয়া?”

শুভ্র ভাই চোয়াল শক্ত করে দাতঁ কিরমির করে বললেন-

—”নাহ আপু আমি বিবাহিত আমার ছোট একটা বউ আছে।”

ওনার কথা শুনে আমরা সবাই মিটমিট করে হাসছি। মেয়েটা এবার ভাইয়া, আবির আর স্মরনের দিকে তাকিয়ে বললো-

—”আপনারা….. ”

মেয়েটার পুরো কথা শেষ করার আগেই ওরা তিন জন চিৎকার দিয়ে এক সাথে বলে উঠলো-

—”আরে সাইফ ভাই তাড়াতাড়ি চলেন আমাদের বউ বাসায় অপেক্ষা করছে।”

এই কথা বলেই আমরা সবাই উল্টো পথে হাটা শুরু করলাম। কিছু দূর যেতেই আমরা থেমে গেলাম একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে সবাই এক সাথে হাসিতে ফেটে পরলাম। কিন্তু শুভ্র কেমন যেন গম্ভীর হয়ে আছে এখনও। স্মরণ এবার সাইফ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল-

—”ভাই এই সাংঘাতিক রকমের লুচু মেয়ে তুমি কই থেকে পাও?”

—”আরে আর বলিস না কতবার তদের ভাবির কথা বলেছি তবুও পিছু ছাড়ে না। আজ আমার অনি আমাকে বাচিয়েছে এই মেয়ের থেকে।”

লাস্ট কথাটা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন। শুভ্র ভাই কিছুটা অবাক হয়ে বললেন-

—”ভাবি মানে?”

আমি বললাম-

—”আরে ভাবি মানে ওনার হবু বউ। কেন আপনি জানেন না সাইফ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অনেক আগে থেকে।”

শুভ্র ভাই একটা অমায়িক হাসি দিয়ে বললেন-

—”বাহহ খুব ভালো কথা। কই আমাকে তো কেউ আগে বলেনি।”

———————

সকাল সকাল ছাদে উঠে দাড়িয়ে আছি ঠান্ডা বাতাস বইছে। সময় যেন এই বাতাসের মতোই একটূ ছূয়ে দিয়েই চলে যায়। আজ দশদিন হয়ে গেল শুভ্র ভাই বাসায় নেই কাজের জন্য ঢাকার বাহিরে গেছেন। যতই ব্যস্ত থাকুক দিনে একবার হলেও আমাকে ফোন দিয়ে ধমকিয়েছে। আমাকে না ধমকালে নাকি ওনার দিন ভালো যায় না। তবে ওনাকে না দেখে যেন আমার দিনই যাচ্ছে না। দিনে একবার ওনার ধমক খেয়েই যেন আমার মনে একটু শান্তির ছোয়া লাগে। এই মানুষটা যেন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

চলবে…

(গল্পটা আর ২-৩ পর্বের মধ্যেই শেষ করে দিব। গল্পটা নিয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে জানানোর অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here