#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ২৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat
ভয়ংকর রকমের বিরক্তি নিয়ে বসে আছি সামনে বসে থাকা এই অসহ্যকর মানুষটার দিকে তাকিয়ে। যখন থেকেই শুনেছে আমার বিয়ের কথা তখন থেকেই গাল ফুলিয়ে আফসোসের সাগরে ডুব দিয়ে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে গালের মধ্যে দুইটা লাড্ডু ঢুকিয়ে বসে আছে। এভাবে আর থাকতে না পেরে ভিষণ বিরক্তি নিয়ে বললাম-
—”জানিস মিমশি এই মুহূর্তে তোকে আমার একদমই সহ্য হচ্ছে না। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছি তোর এরকম গাল ফুলিয়ে বসে থাকা দেখে।”
মিমশি আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বেশ আফসোসের সাথে বললো-
—”একে তো আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললি আর এখন আমাকে এভাবে কথা শোনাচ্ছিস!!
আমি কিছু বললাম না প্রচুর বিরক্ত লাগছে ওর কথা শুনতে। ইচ্ছে করছিল কয়েকটা থাপ্পড় দেই কিন্তু মনের ইচ্ছেটা পূরণ করালাম না এই মুহূর্তে। মিমশি আবার কাঁদোকাঁদো চেহারা করে বলল-
—”জানিস তোর কাছে কাল রাতের সব কথা শুনে আমার কতটা আফসোস হচ্ছে!! তোর কাছে শুনেই কত ইন্টারেস্টিং বিয়ে মনে হচ্ছে। কত ইউনিক ভাবে হয়েছে তোর বিয়ে অথচ তোর একমাত্র বেস্টি হয়েও আমিই ছিলাম না বিয়েতে।”
এবার আমি জ্বলন্ত চোখে মিমশির দিকে তাকিয়ে কঠোর গলায় বললাম-
—”আমার বিয়ে হবে সেটা তো আমি নিজেই জানতাম না তুই কোথাকার কোন প্রধানমন্ত্রী যে তুই জানবি!!”
মিমশি এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো-
—”আচ্ছা তা না হয় বুঝলাম এখন বল বাসর রাত….. ”
মিমশিকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই রাগী কন্ঠে বললাম-
—”খবরদার মিমশি এই কথাটা মুখ দিয়ে বের করবি তো ঠাটিয়ে এক চড় খাবি। আমি আবারও বলছি আমাদের কাবিননায় সাইন হয়েছে বিয়ে এখনও হয়নি।”
মিমশি মুখ গোমড়া করে বললো-
—”হুহ্ বুঝেছি।”
———————
এক একটা দিন যেন কচ্ছপের গতিতে যাচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময় ছাদেই কাটিয়ে দেই আর শুভ্র ভাইয়ের সাদা গোলাপের গাছটাকে যত্ন করে।
—”কিরে মা কি করছিস এখানে?”
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম পেছন থেকে আব্বুর কন্ঠ ভেসে আসতেই পেছন ফিরে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম-
—”কিছু না আব্বু এমনিতেই দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এখানে কিছু লাগবে তোমার!!”
আব্বু বারান্দার দোলনায় বসে আমাকে পাশে বসতে ইশারা করলেন। আমিও আব্বুর পাশে গিয়ে বসলাম। আব্বু আমার মাথায় হাত রেখে বললেন-
—”এটা কেমন কথা বললি অনু আমি কি তোর কাছে দরকার ছাড়া আসতে পারি না!!”
—”আরে না আব্বু আমি এটা বলতে চাই নি।”
—”আচ্ছা চল বাহির থেকে একটু ঘুরে আসি মন ভালো হবে।”
আমার আব্বু কিভাবে যেন আমার মন খারাপ বুঝে যায়। হুটহাট করে মাঝে মধ্যে এসে বলবে-
—”চল ঘুরে আসি। শুধু আমরা দুজন আর কাউকে নিব না সাথে।”
তারপর আমাকে নিয়ে নদীর পাড়ে চলে যায়। বাদাম কিনে আমার সাথে হাটঁতে খাবে। আর এটাই আমার মন ভালো করার ওষুধ হয়ে যায়। সব সময়ের মতো আজও চলে গেলাম আব্বুর সাথে মন ভালো করার জায়গায়।
———————
শুভ্র সাদা শাড়ির মধ্যে হাল্কা হলুদ আর গোল্ডেনের কাজ করা খুবই সুন্দর একটা শাড়ি পরে এই মেঘলা বিকেলে দাঁড়িয়ে আছি ছাদে। বাতাসে এলোমেলো করা খোলা চুল গুলো ঠিক করেতেই হাতের সাদা আর হলুদের কাচের চুড়ি গুলো বার বার ঝনঝন শব্দে বেজে উঠছে। প্রচন্ডরকমের মন খারাপ ঝেঁকে বসেছে আমার মনে। তার সাথে সাথে মনে হচ্ছে আকাশেরও মন খারাপ হয়েছে তা-ই তো কালো মেঘে ঢেকে আছে আকাশ। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো মন খারাপ গুলো বৃষ্টির পানি হয়ে ঝরে পরবে।
আজ পাঁচদিন হলো আমাদের বিয়ের। শুভ্র ভাইয়ের কথা মতো ওনার দেওয়া জিনিস গুলোই পরেছি এই মুহূর্তে কারণ আজ ওনাকে বড্ড বেশিই মনে পরছে। আমাদের বিয়ে হলেও সব কিছু ঠিক আগের মতোই আছে। আজ সকালেও কথা হয়েছে ওনার সাথে তবুও এই মুহুর্তে ওনাকে প্রচন্ড মনে পরছে। দেখতে ইচ্ছে করছে খুব কিন্তু কেন আমি জানি না।
হঠাৎই পেছনে কারও উপস্থিতি অনুভব করলাম। পিছন ঘুরে তাকাতেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল… নোনাজলে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে চোখ দুটো। মনে হচ্ছে এখনই গড়িয়ে পরবে। প্রকৃতিও আজ আমার সাথেই তাল মিলিয়ে চলছে। কালো মেঘের হাল্কা গর্জনের সাথে সাথেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পানি পরা শুরু হয়েছে।
—”সাবধান অনন্য চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি পরলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিচ্ছি। এই মুহূর্তে চোখের পানি ফেলের মতো কোনো কিছু এখন হয়নি। আমার অনুমতি ছাড়া চোখ থেকে এক ফোটা পানিও যেন না পরে। জানিস চোখের পানি কতটা মূল্যবান!! এইসব সামান্য কারনে এই মূল্যবান জিনিসটা নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।”
খুব গম্ভীর গলায় কথা গুলো বললেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা। হ্যাঁ সামনের মানুষটা আর কেউ না আমার মুগ্ধ প্রেমিক। এই মুগ্ধতার মুগ্ধ প্রেমিক। ওনার কথা গুলোর তোয়াক্কা করেই চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা নোনাজল। এই মুহূর্তে ওনাকে দেখতে পারবো ভাবিনি। শুভ্র ভাই আমার খানিকটা কাছে এসে দু’হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে নরম গলায় বললেন-
—”খুব বেশিই কষ্ট দিয়েছি তোমাকে এই কয়দিন তাই না অনন্যময়ি!! দেখো তুমি আমাকে মনে মনে দেখতে চেয়েছো আর আমি সাথে সাথেই চলে আসলাম। এই মুগ্ধতা তার মুগ্ধ প্রেমিককে দেখতে চেয়েছে আর মুগ্ধ প্রেমিক আসবে না তা কি করে হয় বল!!”
এই কথা বলে উনি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন-
—”বউয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে না পারলে কি বউ আমাকে ভালোবাসবে না-কি!!”
শুভ্র ভাইয়ের মুখে বউ ডাকটা শোনার এক সেকেন্ডের মধ্যেই কতো গুলো ভয়ংকর অসভ্য লজ্জা এসে আমাকে আক্রমণ করলো। আর এই লজ্জার আক্রমণেই লাল-নীল রঙে রঙিন হচ্ছি আর নুয়ে পরছি এই লজ্জা ভারে। খুব কি দরকার ছিল এখন আমার সামনে এই কথাটা বলার!! এই লোকটা সব সময় আমাকে লজ্জায় ফেলে। আমাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য হয়তো জন্মের সময় শপথ করেছিলেন এই অসভ্য লোকটা।
শুভ্র ভাই আমার হাত ধরে টেনে ছাদের দরজা দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললেন-
—”তোকে বারণ করেছিলাম আমার সামনে লজ্জা পেতে। তোর এই লাল হয়ে যাওয়া গাল গুলো দেখলে নিজেকে তখন ক্ষুধার্ত ভ্যাম্পায়ার মনে হয়। ইচ্ছে করে সাথে সাথেই তোর গাল গুলো খেয়ে ফেলি ভালো হবে তখন!! তাই বলি লজ্জা পাবি না আমার সামনে।”
আমি রাগী কন্ঠে বললাম-
—”আপনিই তো ইচ্ছে করে বার বার লজ্জা দেন আমাকে।”
দরজার কাছে এসে দাড় করিয়ে হাত দিয়ে আমার চুল গুলো হাল্কা ঝাড়া দিয়ে বললেন-
—”আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই তো পুরো ভিজে একাকার হয়ে যেতি চল নিচে চল।”
নিচে নেমে ফ্ল্যাটের দরজা খুলবো তখনই পেছন থেকে শুভ্র ভাই গম্ভীর গলায় আমাকে বললেন-
—”অনন্য একটু দাড়া একটা সিরিয়াস কথা ছিল।”
আমি পিছন ফিরে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
—”কি সিরিয়াস কথা শুভ্র ভাই?”
শুভ্র ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে ঝুঁকে আমার কানে ফিসফিস করে বললেন-
—”এই শুভ্র রঙের সাজে তোমাকে একদম শুভ্রর বউ লাগছে।”
এই কথা বলেই উনি উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে ওনাদের ফ্ল্যাটে চলে গেলেন আর আমি থমকে দাঁড়িয়ে রইলাম। বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার পানে। এটা ছিল ওনার সিরিয়াস কথা?? লোকটা খুব সাংঘাতিক রকমের অসভ্য। তবে এই অসভ্য লোকটাই তো আমার।
চলবে…..
(অনেক দিন হয়ে গেল নদীর পাড়ে যাওয়া হয় না সময়ের অভাবে।
রিচেক করা হয়নি ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️)